Saturday, November 28, 2009
জনচেতনা মঞ্চের মত সিটিজেন ফোরাম কেন দরকার?
আমি জনচেতনা মঞ্চ নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার সময় আমার সুহৃদ রাজনৈতিক বন্ধুদের কাছ থেকে যেসব ফিডব্যাক পেলাম তা নিম্নরূপ
(১) সফিদা বা সোমনাথদা সারাজীবন ভ্যাঙ্গার্ড পার্টির ত্তত্ব ( সবার ওপর পার্টি সত্য) অনুশীলন করে জনচেতনা মঞ্চের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাস খুঁজছেন ? কারন জনচেতনা মঞ্চের বহুত্ববাদি ধারনা-অবশ্যই লেনিনের সবার ওপর পার্টি সত্য এর বিরোধি।
(২) এটা কি চা বিস্কুট খাওয়ার আড্ডা?
(৩) কেন রাজনৈতিক দল ঘোষনা না করে একটা ফোরাম ঘোষনা করা হল? একটা নতুন রাজনৈতিক দল কেন গঠন করা হল না?
তৃতীয় প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই আমি আলোচনা করব বিস্তারিত ভাবে। তার আগে প্রথম প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন। সোমনাথ চ্যাটার্জি তার লেখাতে এই উত্তর দিয়েছেন। সফিদাও এক সাক্ষাতকারে এই ব্যাপারে তার বক্তব্য জানিয়েছেন। তাও নিজের দুকথা জানিয়ে রাখি।
সবার ওপর পার্টি সত্য- এই মারাত্মক ব্যাধিটি পশ্চিম বঙ্গের কি ক্ষতি করেছে তা রাজ্যবাসী মাত্রই জানেন। নন্দীগ্রাম থেকে সিঙ্গুর-অফিস থেকে আদালত-স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-আজ কোন জায়গায় পশ্চিম বঙ্গে রাজ্যবাসীর কথা, তাদের জীবিকা সংস্থানের কথা আগে ভাবা হয়? সর্বত্রই পার্টি পার্টি পার্টি করে ব্যান্ডবাদ্যের কুনাট্য। এই কুম্ভীপাককে বধ করে, যারা পরিবর্তনের কথা বলছেন-তাদের মধ্যেও সেই প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে। যেসব বুদ্ধিজীবি তৃণমূলের সাথে, মমতা তাদের মাসোহারার ব্যাবস্থা করছেন ( নৈতিক দ্বায়িত্ব বোধ হয়) -কমিটির শীর্ষপদে বসাচ্ছেন। ঠিক যেমন করে পার্টির সব চামচা-তাবেদারবৃন্দকে পারিতোষিক পাইয়ে দিয়ে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা সহ যাবতীয় পরিকাঠামোকে উচ্ছনে পাঠিয়েছে। পরিবর্তনের সাথে সাথে সিপিএমে গুন্ডারা তৃনমূলে এসে তরী ভেড়াচ্ছে। এটা হচ্ছে আমাদের পশ্চিম বঙ্গে পরিবর্তন। পরিবর্তন আমিও চাই-কারন তা না হলে বহুত্ববাদি গণতন্ত্রই টেকে না। কিন্ত রাজা যদি আলখাল্লা বদলিয়ে সিপিএম এর বদলে তৃনমূল হয়, রাজ্যবাসীর লাভটা কি? সবার ওপর পার্টি সত্য কি মারাত্মক ব্যাধি-তা আমরা জেনেছি, দেখেছি সফিদা বা সোমনাথদার সাথে সিপিএমের সম্পর্ক বিচ্ছেদের মাধ্যমে। পার্টির সংবিধানকে দেশের সংবিধানের চেয়ে বড় বলে মানতে হবে! মামার বাড়ির দাবি নাকি? কিন্ত তাও সিপিএম এই রাজ্যে ৩৩ বছর টিকেছে-কারন বাঙালীর কূট কাচালের ধারাটাই আত্মঘাতি রাজনীতির ( এই নিয়ে অতীতে লিখেছিলাম)।
কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে নতুন রাজনৈতিক দলের বদলে কেন ফোরাম? দল ভিত্তিক রাজনীতির প্রতি কেন অনাস্থা?
এর উত্তর ভাল করে জানা দরকার। আমি যা বলছি, তা একান্ত ভাবেই আমার নিজের কথা। গণতন্ত্রের প্রতি আমার ১০০% আস্থা আছে। কিন্ত দলীয় রাজনীতির প্রতি নেই।
প্রথমত গনতন্ত্র একটি ডাইনামিক সিস্টেম-যা বিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত হয়। বিবর্তনের সুযোগ আছে বলেই সংসদীয় গণতন্ত্র বাকি সব রাজনৈতিক সিস্টেমের থেকে শ্রেষ্ঠ। এই সিস্টেমে আজকে লোকে খেতে না পেলেও কালকে পাবে-কারন সেই ক্ষুদাটা ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হতে পারে। আবার সমস্যা এখানটাতেই-গরীব মানুষের ভাষা কি পার্লামেন্টে পৌঁছাচ্ছে? উত্তরটা সরাসরি ভাবেই না। কারন তা হলে ছত্তিসগড়ের জঙ্গলগুলি যা আদিবাসিদের গত হাজার বছরের আবাসস্থল ওইভাবে সরকার কর্পরেটদের হাতে দিয়ে দিতে পারে না। তা সত্ত্বেও আমরা দেখছি এবার জাতীয় কংগ্রেস জিতে গেল-কারন তারা মুখে অন্তত ১০০ দিনের কাজের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছে বেশী-ধর্ম, জাতপাতকে অন্তত দূরে সরিয়ে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদি পার্টিগুলিকে কোনঠাসা করেছে। এর জন্যেই গণতন্ত্র শ্রেষ্ট। অর্থাৎ প্রথমেই যে কাজটা করা ভীষন ভাবে জরুরী-সেটা হচ্ছে জন সাধারনের ভয়েস, পার্লামেন্টে পৌঁছে দেওয়া। এই কাজটা কোন পার্টিই করছে না। তারা ব্যাবসায়ীদের দালাল মাত্র। আর তথাকথিত বামপন্থীরাও পার্টির ক্রীতদাস -হুইপ মেপে কথা বলেন। নতুন পার্টি খুলে অবস্থার পরিবর্তন হবে-সেই আশা ক্ষীন । কারন সব দেশের মতন এখানেও গণতন্ত্র ঠিকাদারতন্ত্রে পরিনত। ৮-১০ কোটি টাকা খরচ করে ভোটে জিতে জ়নপ্রতিনিধিদের সামনে ঠিকাদারি করা ছাড়া উপায় কি? টাকাটা উঠবে কোথা থেকে?
দ্বিতীয় সমস্যাটা পরিবেশ এবং রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে। মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক হিংসার উৎস সেই ঠিকাদারতন্ত্র। এই যে এত কোটি টাকা লাগছে নির্বাচনে জিততে-ফলে টাকাটা তুলতে পঞ্চায়েত মিউনিসিপালিটি গুলো লুটতে হবে ত। প্রমোটারদের সুবিধা করে দিতে হবে। নইলে ভোটে জেতার টাকাটা উঠবে কি করে? আজকে খানাকুলে এই মারামারি-কাটাকাটির উৎস কি? ওখানকার সবলোকই জানে এটা পঞ্চায়েতকে লুঠ করার অধিকারের জন্যে। সিপিএম এদ্দিন লুঠ করেছে-আজ তৃনমূল যেসব জায়গায় এসেছে-সেই সমস্ত জায়গায় লুঠের ভাগ নিয়ে কোন্দল। নিউজ পেপারে চোখ রাখুন। এটা বন্ধ হবে না। কারন আমাদের গনতন্ত্র এখন সত্যিকারের ঠিকাদারতন্ত্র। আবার কোলকাতার দূষন থামানোর জন্যে সিপিএম আজও সি এন জি আলা বাস বা অটো চালু করতে পারল না। কারন তৃনমূলের বিরোধিতা এবং নিজেদের ভোট হারানোর ভয়। দিল্লী কিন্ত এটা পেরেছে। বাংলা পারে নি। ঢাকাও পেরেছে। আমরা পারি নি। বি বি সির রিপোর্ট বলছে কলকাতা পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর। ৪% লোকের এখানে ক্যান্সার হবেই-৬০% লোক পঞ্চাশ পার করার আগেই কোন না কোন রোগে ভুগবে। এই হচ্ছে কলকাতার বাস্তব অবস্থা। অথচ কোন পার্টি এই নিয়ে কোন আন্দোলন করল? বুদ্ধিজীবিদের শহরের তকমাতে কি লাভ যে শহর জীবন্ত মৃত্যপুরী? কিসের বুদ্ধিজীবিতা যেখানে শহরের স্বাস্থ্য নিয়ে কোন আন্দোলন নেই? এর থেকে নিদারুন বন্ধ্যাজীবিতাও ভাল!
এখানেই সিটিজেন ফোরামগুলি পৃথিবীর সবদেশে দুর্দান্ত কাজ করে চলেছে। কারন ব্যাবসায়ী-রাজনীতি চক্র ভাংতে এর থেকে ভাল কোন উপায় নেই। আমেরিকাতে আমার অভিজ্ঞতা খুব ভাল। দুটো গল্প বলি। ২০০২ সালে নিউজার্সির মিডলটাউনের ডেমোক্রাট মেয়র ঘোষনা করেন শহরের মাঝখানে, যা ছিল ছোট খাট কিছু দোকানের সমষ্টি সেখানে বৃহৎ মল হবে-মিনি ম্যানহাটন গড়ে উঠবে। শহরের সিটিজেন ফোরাম এর বিরুদ্ধে প্রতি শনিবার-রবিবার সেখানে জনসভা করেছে।। মেয়রকে কয়েক মাসের মধ্যেই পিছু হটতে হয়। সেই আন্দোলন কিন্ত রিপাবলিকান পার্টি করে নি-কারন তারাও ব্যাবসায়ীদের দালাল ছাড়া কিছু না। দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা লং বীচে। ২০০৭। দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার অত্যন্ত সুন্দর মনোরম শহর-পাঁচ লাখ লোকের বাস। কিন্ত বিচ গুলো ও সমুদ্রের জল সেখানে সাংঘাতিক ভাবে দূষিত হচ্ছিল। কারন মেয়র এবং কং গ্রেস ম্যানটা সমুদ্রের ধারে ঢালাও কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্সে অনুমোদন দিচ্ছিলেন। টাকার খেলা এখানেও চলে। এগুলির পেছনে ছিল ডেমোক্রাটিক পার্টি। এখানেও রিপবলিকান পার্টি কিছুই করে নি-কারন তাদের টিকিও ব্যাবসায়িদের কাছে বাঁধা। পরিবেশ সচেতন লোকেরা সেখানে ফোরাম তৈরী করে, সেখানকার কংগ্রেসম্যানকে ভোটে হারায় নিজেদের ক্যান্ডিডেট দিয়ে। আমি ওদের হয়ে কিছু কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি-সব দেশেই গনতন্ত্রের সাথে ঠিকাদারদের যোগসাযোগ এত দৃঢ়-এটা থামাতে সিটিজেন ফোরামের কোন বিকল্প নেই। যারা এই ফোরামে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন-তাদের অনেকেই ডেমোক্রাটিক বা রিপাবলিক্যান পার্টির কার্ড হোল্ডার। কিন্ত তবুও ওরা জানতেন, ওদের পার্টি এসব ব্যাপারে কিছু করবে না। ফোরামের মাধ্যমেই এগোতে হবে।
তাই আমি আমার সমস্ত রাজনৈতিক বন্ধুদের অনুরোধ করব-জনচেতনা মঞ্চ সফল করার কাজে এগিয়ে আসুন। আপনাদের পার্টি অনেক কিছুই করতে পারবে না-কারন তাদের টিক ব্যাবসায়িদের কাছে বাঁধা আছে। যা এই ফোরাম পারবে। এটা পার্টির সমর্থকরা যত শীঘ্র বুঝবেন-ততই মঙ্গল।
তাই তাদের অনুরোধ করছি এই লিংকে ক্লিক করে জনচেতনা মঞ্ছে যোগ দিন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment