Sunday, November 22, 2009
নাটক কলি বুলি এবং ব্রেখটের এপিক থিয়েটার
প্রবাসে বাংলা নাটক দেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে এখনো অব্দি বেশ তিক্ত। আমেরিকাতে প্রায় ৩৫ টি বাংলা নাটকের গ্রুপ আছে এবং বাংলা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে এদের প্রচেষ্ঠাকে আমি অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। কিন্ত ভাল স্ক্রিপ্ট ছাড়া যেমন হলিউডের সুপার সিনেমাটিক ডিজিটাল সিনেমাও বক্স অফিস বাঁচাতে অক্ষম , ঠিক ঠাক নাটক সিলেকশন না হলে , এপিক থিয়েটারের মতন চমকপ্রদ টেকনিকও ম্লান হতে বাধ্য।
নাটকের একটি মূল উপাদার দর্শক। ব্রেখটের এপিক থিয়েটারে তা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারন এর সব টেকনিকই দর্শকের মনে সামাজিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর জন্যে। সমাজে চলে আসা অনাচার অত্যাচার শোষনগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষনের নানা ছলা কলা কৌশল এপিক থিয়েটার নিয়ে থাকে। সুতরাং নাটকের থিমের সাথে যদি দর্শকের নাড়ির যোগ না থাকে-এপিক থিয়েটারের দিকে পা মাড়ানোই উচিত না। প্রবাসী বাঙ্গালীদের কেওই শোষিত বা অত্যাচারিত না-বরং সবাই বুর্জোয়া এলিট। তাদের জন্যে সত্তরের দশকের বামপন্থী বাতিল তত্ত্ব কি মানসিক চিন্তার খোরাক দেবে?
ব্রেখটের এপিক থিয়েটার-সাধারনত কোন ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক উপাখ্যান যার মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক বস্তবাদের দন্দগুলিকে ক্যানভাসের মতন আঁকে। এবং নাটকের মধ্যেই কুশীলবরা অপ্রত্যাশিত আচরন করেন, চরিত্র থেকে বেড়িয়ে আসেন( এলিনিয়েশন টেকনিক)-যাতে দর্শকের মনে সামাজিক দ্বন্দগুলি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই প্রশ্ন ওঠা তখনই সম্ভব, যখন দর্শক তার জীবনের ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেই দ্বন্দগুলিকে অনুভব করে। সুতরাং নাটকের থিমটা যদি আজ লে-অফ, সাব-প্রাইম ক্রাইসিস নিয়ে হত-যেখানে ওয়াল স্ট্রীটের ফ্যাইনান্সিয়াল জিনিয়াসরা হচ্ছে আজকের কংস মামা -যাদের জন্যে প্রবাসী বাঙালীদেরও সারাজীবন একটা অস্থিরতা অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়-তাহলে, অবশ্যেই কুশীলবদের প্রশ্ন দর্শকদের ভাবাত। সেসব না করে কংস-হিটলার-অত্যাচারী-স্বৈরাচারী ইত্যাদি তাত্ত্বিক ভুতের ডায়ালোগ ছুড়ে বা অদ্ভুত অঙ্গিভংগী করে ( জেস্টাস -এপিক থিয়েটারের আরেকটি টেকনিক) লোক হাঁসানো যায়-এপিক থিয়েটার ও হয়-কিন্ত এপিক থিয়েটারের আসল উদ্দেশ্য-দর্শককে ভাবিয়ে তোলা, তা কিন্ত সর্বত ভাবে ব্যার্থ হচ্ছে।
এছাড়া কিছু টেকনিক্যাল স্ন্যাগ আমার কাছে অগ্রহনযোগ্য।
প্রথমত রাধা এবং তস্য নায়িকাদের বয়স ষাটের কাছাকাছি। ব্রেখটের নাটকে স্টেজ, আলো, পোষাক পার্ফেক্ট হতে হবে বা নায়িকা রাধিকাকে অষ্টাদশী হতে হবে তার কোন মানে নেই। বরং দর্শক কনসাসলি বুঝবে একটা নাটক চলছে-সেটাই ব্রেখট চাইতেন ফোর্থ ওয়াল ভাংতে। কিন্ত ষাট বছর বয়সের ভদ্রমহিলা যদি স্টেজে অষ্টাদশী তরুনীর রোল করতে চান ( চাইতে দোষ নেই) তাহলে ত তাকে গলার টোন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ , লাস্যময়তা, মেক-আপ ঠিক করতে হবে। রাধিকার মুখঅয়বয়ে ভাবের কোন পরিবর্তনই লক্ষিত হল না-আর এদিকে ক্রমাগত সে সমাজ সংস্কারের কথা তোতাকাহিনীর মতন বলে চলেছে। রাধিকার রোলে নাটকটি সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে।
কংসের অভিণয় বেশ ভাল লাগল। সাডেন চেঞ্জগুলো বেশ সার্থক। অধিকারীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক ছিল-কিন্ত গলার স্বরে কোন মড্যুলেশন ডেপথ নেই। ওটা না থাকলে অধিকারী মানায় না। বাকী সবার ভয়েস মনোস্কেলে। মড্যুলেশন ব্যারিটনে এরা বোধ হয় বিশ্বাস করেন না। সমস্যা হচ্ছে ব্রেখটের নাটকে কুশীলবরা যদি এমন গলায় কথা বলেন যে তাতে মনে হয়, ভাষা এবং বাক্যটি তার নিজস্ব না-তাহলে এলিনিয়েশন বা দ্বন্দের সেখানেই সলিল সমাধি। কেও কেও এটা ঠিকই করেছেন-কেও কেও পারেন নি। ফলে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ভালোই ডিসপ্যারিটি পরিলক্ষিত হয়।
যাইহোক রাধিকার অভিনয় ছাড়া বাকি নাটক বসে দেখা যায়। উপভোগ্যও বটে।
ভিডিওটা এই লিংকে দিলাম।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment