জনসাধারনের ধারনা, পাব্লিক সিস্টেম মানেই বাজে। সরকারী স্কুলের শিক্ষকরা দ্বায়িত্বশীল না-সরকারী বাসের টাইম থাকে না! এয়ার ইন্ডিয়াতে দিল্লী থেকে কোলকাতায় আসতে মশা ভর্ত্তি প্লেনে আসতে হয় ( গল্প না সত্যি-আমি নিজেই ভুক্তভোগী। এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে সিট নাম্বার পর্যন্ত নাও থাকতে পারে!) । সরকারী ব্যাঙ্কের কর্মীরা পেঙ্গুইনতুল্য। ইত্যাদি ইত্যাদি। লিস্টটা লম্বা। এবং সর্বজ্ঞাত।
কিন্তু প্রশ্ন এখানেই। দোষটা কার?
অনেকেরই ধারনা সরকারি কর্মীরা কাজ করতে অপরাগ। রাইটার্সে যারা দুদিন ঘুরেছে, তারা বিলক্ষন অবগত-সরকারী কর্মীদের দ্বায়িত্ববোধ বস্তুটা কি। কিন্তু সেটাই কি আসল চেহারা?
আসল রোগ অনেক গভীরে। ভারতীয় রেল দেখুন লাল্লুর কৃপায় কি দ্রুত লাভ করে বসল। এবং আগের থেকে অনেক ভাল পরিশেবা দিয়ে। অন্যদিকে দেখুন ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স কিভাবে অত্যাধিক লসে ডুবে যাচ্ছে। এটা মন্ত্রীমহোদয় প্রফুল্ল পটেলের দোষ না কর্মীদের?
যারা জানেন না, তাদের জন্যে এবার কিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য সামনে আনি। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সব থেকে লাভজনক রুট ছিল কোলকাতা-হায়দ্রাবাদ, হায়দ্রাবাদ-দিল্লী, বিশাখাপত্তনম-দিল্লী। বিজয় মাল্লার কিংফিশার এয়ারলাইন্স, এই রুট গুলোই সবার আগে পেল। শুধু কি তাই- প্রাইম টাইম সকাল ছটা-আটটার স্লট-যা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ব্যাবহার করত-সেটাও গিললো মাল্লার কিং-ফিশার এয়ার লাইন্স। যারা এখনো ইন্ডীয়ান ওয়েলকে ৩০০০ টাকা বকেয়া মেটায় নি। ফলে গোল্লায় গেল ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স-কারন তাদের ফ্লাইট এখন ছাড়ে সকাল দশটায়-যে সময়ে যাওয়া মানে একটি কর্ম দিবস নষ্ট। তাদের টাইম স্লটে এখন চলে কিং ফিশার!
কি করে এসব হয়? বিমান মন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল, মাল্লার জেটেই চলাফেরা করেন আজকাল। কারন প্রবাদ -মাল্লার জেটে সুরা এবং নারী-একই সাথে পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্মীদের কাছেই শুনেছি -কিভাবে পটেল তাদের ওপর জোর করে যাত্রীতথ্য বার করেছে এবং লাভজনক রুট ও সময়কে তাপ্পি দেওয়া ডাটা দিয়ে, সময় বদলেছে যাতে কিংফিসারের সুবিধা হয়। বিনিময়ে কতকোটি টাকা পটেল সাব লুটেছেন-বলার দরকার নেই। কিন্ত প্রশ্ন তোলার আছে-আমাদের সৎ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন কি কিছু এসব জানেন না? এয়ার ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের প্রতিটা কর্মীরা যা জানে? সেই একই প্রশ্ন আদবানীকেও করা যায়-ওরাও জানতেন না প্রমোদ মহাজন দুহাতে টাকা লোটে আর পোষাকের চেয়েও দ্রুত নারী সঙ্গী বদলায়? সিপিএমের দিকেও দেখুন-বিমান বাবু কি জানেন না লক্ষন শেঠের বৈভবের কথা? কিন্তু এইসব মহান নেতাদের প্রফুল্ল পটেল বা প্রমোদ মহাজন বা একটা লক্ষন শেঠ গিলতে হয়। নইলে ভোটের বাজারে টাকা দেবে কে?
কলকাতা এয়ারপোর্ট এখনো সরকারি এয়ারপোর্ট অথোরিটি অব ইন্ডিয়ার (এ এ আই) এর হাতে আছে। এটাকে এখনো প্রফুল্ল পটেল গিলতে পারেন নি। কিন্তু ইন্টারন্যাশাল টার্মিনালের কি দুরাবস্থা। যাত্রীদের বসার জায়গায় এয়ার কন্ডিশন কাজ করে না। বাথরুমের অবস্থা আরো খারাপ। ফলে প্রায় সমস্ত ইন্টারন্যাশানাল এয়ারলাইন্স কলকাতা থেকে পালিয়েছে। দোষটা কার? কর্মীরা কাজ করে নি?
নাহ, আমি অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। এখানেও সর্ষের মধ্যে ভুত। ইচ্ছা করেই ঠিক করা হচ্ছে না। যাতে অভিযোগের পাহাড় জমে ওঠে কলকাতা এয়ারপোর্টের বিরুদ্ধে এবং প্রফুল মালটি মোটা টাকার বিনিময়ে এটাকেও প্রাইভেট বানাতে পারেন।
প্রতিটা এয়ারপোর্টেই কর্মীরা নিজেদের কাজ খুব ভালো ভাবেই করেন। কিন্তু যখন শর্ষের মধ্য ভুত-তখন পতন ঠেকাবে কে? ঠিক একই কারনে কোলকাতার সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলো লাটে উঠছে। এগুলো লাটে না উঠেল সিপিএমের কনট্রাক্টরদের চালিত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক কনভেন্ট স্কুলগুলোতে কে পড়বে?
এগুলো সবই গণতান্ত্রিক কাঠামোর দুর্বলতা। এবং নির্বাচন সংস্কার ছাড়া, মোটেও ঠিক করা অসম্ভব। সরকারী সংস্থাগুলোকে লস খাইয়ে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে বাম-ডান সবাই সিদ্ধ হস্ত-সেটা আমরা পশ্চিম বঙ্গের অভিজ্ঞতা থেকেই বিলক্ষন বুঝেছি। আলখাল্লাটা বাম বা ডান, যাই পড়ুক না কেন-লোকটাত আসলেই বাঙালী বা ভারতীয়! বাম বা ডানদিকে মোড় নিলেই ত আর জৈবিক মানুষটার মৃত্যু হয় না!
সুতরাং গণতন্ত্রের পথে সমাজতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হলে নির্বাচনী পক্রিয়াটির সংস্কার দরকার আগে। এবং সাথে সাথে প্রতিটা নাগরিকের মধ্যে সমাজ এবং জাতির জন্যে দ্বায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার প্রবণতাও আনতে হবে। শুধু মাইনে পাই- তাই কাজ করি আর ক্রিকেট দেখি-বাকী বিশ্ব ব্ল্যাকহোলে বা ম্যানহোলে যাক -কিছু যায় আসে না-এই গয়ং গচ্ছ অসামাজিক, ব্যাক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে আমাদের মুক্ত হতেই হবে। সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ থেকেই প্রকৃত সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়। এর সাথে সাথে অবশ্য ব্যাপক হারে উদবৃত্ত্ব উৎপাদনও সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর সাফল্যের পূর্ব শর্ত-তবে সেটা প্রযুক্তির পথেই দ্রুত এগিয়ে আসছে।
No comments:
Post a Comment