প্রথমেই আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই এই সদার্থক আলোচনা চক্রের জন্যে। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আমেরিকাতে বহু আলোচিতও বটে।
এই মুহূর্তে কি আমেরিকাতে কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন আছে? এই নিয়ে অসংখ্য খবর প্রায় প্রতিদিনই আসছে এবং তার থেকে আমরা কতগুলি প্রারম্ভিক তথ্য ঝালিয়ে নিতে পারিঃ
- সরকারি মতে আমেরিকাতে কৃষি শ্রমিকদের সংখ্যা ৮৫০,০০০। অন্যদিকে ডিপার্টমেন্ট অব লেবার বলছে প্রায় ৭০০,০০০ শ্রমিক এইচ টু ভিসা বা কৃষি শ্রমিক ভিসাতে কাজ করে। বেসরকারী মতে নূন্যতম ১ মিলিয়ান অবৈধ কৃষক আমেরিকাতে আছে। অর্থাৎ সরকারী হিসাবের সাথে বাস্তবের বিরাট ফারাক।
- সরকার কৃষি শ্রমিক ভিসার আইন আগের থেকে অনেক বেশী কঠিন করে দিয়েছে। আগে মাত্র ৪৫ দিন আমেরিকান শ্রমিক নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এখন সেটা ৭৫ দিন করা হয়েছে। সেই কোটা পূরন করলে তবেই বাকি দিনের জন্যে বিদেশী কৃষক নেওয়া যায়।
- কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব কৃষি ইমিগ্রেশন নীতি। আমি একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। নিউ ইয়ার্কে এলবা শহরকে আমেরিকার পেঁয়াজ রাজধানী বলে। মাত্র ৯০০০ লোকের বাস-এত ঠান্ডাতে কেও থাকতেই চাই না। সেখানে মৌরিন টরী বলে ১১ জেনারশনের এক কৃষকের ১১,০০০ একর জমি চাষ করার জন্যে গ্রীষ্ণে ৩৫০ জন লেবার লাগে। তিনি সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, এই ৩৫০জনের স্থলে তিনি ২০০ জনকে নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হৌন। তাও এই ২০০ জনের মধ্যে অধিকাংশই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তারা রেইডের কারনে কাজে আসতেই ভয় পায়। এইসব কারনে তার পেঁয়াজের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ৯০০০ জনসংখ্যার একটি শহরে-একটি ফার্মেরই যদি ৩৫০জন শ্রমিক লাগে, তাহলে একথা অনায়াসেই অনুমান করা যায়, আমেরিকার কৃষি শহরগুলিতে পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই।
- কিন্তু তবুও আমেরিকার কৃষি শ্রমিকদের ভোটের কারনে সরকার, তাদের সন্তষ্ট করতে একের পর এক এমন ইমিগ্রেশন পলিশি নিচ্ছে যাতে মালিকরা আর বিদেশ থেকে কৃষক আনতে না পারেন। ফলে অবৈধ মেক্সিকান অনুপ্রবেশকারীরাই একমাত্র ভরসা-বলতে গেলে কেও কেও বলছে আমেরিকান কৃষিতে ৮০% শ্রমিকই অবৈধ শ্রমিক। এতে আমেরিকা এবং কৃষিউৎপাদন-এই দুই এরই ক্ষতি হচ্ছে।
অথচ ভারত এবং বাংলাদেশে কৃষি শ্রমিক সাংঘাতিক ভাবে উদবৃত্ত। কারন কৃষকদের অধিক সংখ্যায় বাচ্চা হওয়ার কারনে এবং সেই অনুপাতে কৃষি জমি হ্রাস পাওয়ায়, আজ কৃষক প্রতি বাংলাদেশে গড় জমির পরিমান এখন ১/২ হেক্টর। ৭০% কৃষক ভূমিহীন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ছিল ৫৭%- এখন ৭০%। সরকার ভুমি সংস্কার করে নি। এই সামান্য জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আনলে বড়জোর তারা নিজেরা দুবেলা খাবার জোটাতে পারবে। এখন প্রযুক্তির অভাবে সেটাও পারে না। আর এত ছোট জমি হলে প্রযুক্তি আনবেই বা কোথা থেকে? তাছারা অজৈব কৃষির কারনে, কৃষিকাজের খরচ এখন আকাশ ছোঁয়া। ফলে আমাদের দক্ষিন এশিয়াতে অর্ধেকের বেশী কৃষক অভুক্ত। তারা আমেরিকার এই কৃষি শ্রমিকের অভাব অনায়াসেই মেটাতে পারে যদি আমেরিকান সরকার একটি বাস্তবমুখী ইমিগ্রেশন পলিশি নিয়ে দক্ষিন এশিয়া থেকে কৃষক আনার পদক্ষেপ নেন। এতে আমেরিকা এবং দক্ষিন এশিয়ার মঙ্গল। কারন এতে আমেরিকার কৃষিজ উৎপাদন হ্রাস পাবে না। আবার দক্ষিন এশিয়ার কৃষকরাও নিজদের অবস্থার উন্নতি করতে সক্ষম হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এই অনুষ্ঠানে আসার জন্যে। আমাকে জরুরী পারিপারিক প্রয়োজনে আজকে সকালেই লস এঞ্জেলেস থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে উড়ে যেতে হচ্ছে-নাহলে আমি আপনাদের সাথে আজকে এই ব্যাপারে মত বিনিময় করতে খুবই আগ্রহী ছিলাম।
No comments:
Post a Comment