তীব্র কোভিড প্যান্ডেমিকের মধ্যে ছবছরের পুরাতন নারদা স্টিং কেলেঙ্কারির প্যান্ডোরা বাক্স খুলে আবার গ্রেফতারি-তাও তৃনমূলের নেতাদের সিলেক্টিভ গ্রেফতারি -সবার প্রথমেই যে প্রশ্নকে সামনে আনবে-- ভারতে সংবিধান বলে কিছু আছে? নাকি বিজেপিই তা উঠিয়ে দিয়েছে? নাকি সংবিধানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই বিজেপি সিবিয়াইকে পোষাকুত্তার মতন বিরোধিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে??
কেসটা যদি শুধু এই হত যে বিজেপি তার রাজনৈতিক চাল হিসাবে বিরোধিদের হ্যারাস করতে নেমেছে-বাংলায় ৩৫৬ নামাতে চাইছে-তাহলে আমার এত মাথব্যাথা হত না। কারন বাংলায় বিজেপির এখনো কোন শক্ত বেস নেই। এই ধরনের হনুমানের লেজে আগুন দিয়ে লাফাতে থাকলে, তাদের ৭৫ টা সিট , সিপিএমের মতন পরের নির্বাচনে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। আমার চিন্তা হচ্ছে এই কারনে যে ভারতের সংবিধান এতই দুর্বল, যে তাদিয়ে দিল্লী একটি প্রদেশিক সরকারকে এতটা হেনস্থা করতে পারে। বিজেপি চাইলেও মুসোলিনী বা হাসিনা লেভেলের স্বৈরতন্ত্রও ভারতে কায়েম করতে পারবে না। কারন বিজেপির স্টিয়ারিং হুইল আছে ক্যাপিটালিস্টদের হাতে। ভারতের ক্যাপিটালিস্ট ক্লাস নিজেদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থেই , বিরোধি বাঁচিয়ে রাখবে। নইলে পলিটিক্যাল ক্লাসের কাছে তাদের নিজেদের মৃত্যু অবধারিত-যেটা চীনে তারা দেখছে। সুতরাং বিজেপির ফ্যাসিজিম একটা লিমিট পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্ত এই যদি সিপিএম বা অন্যকোন কমিনিউস্ট পার্টি ক্ষমতায় আসত, তাহলে ভারতের সংবিধানকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই একপার্টিতন্ত্র চালু করতে পারে। এটা আরো বেশী ভয়ের।
তাহলে প্রথম থেকেই দেখুন। ভারতের এম এল এ, এম পিদের বিরুদ্ধে ক্রিমিন্যাল কেস আনতে গেলে সংবিধান কি বলে? যে কাউকে বলুন। সবাই বলবে কেন? সংবিধানের ১০৫ নাম্বার আর্টিকেলের তিনটে অনুচ্ছেদে তা লেখা আছে! ভাল, আসুন আমরা দেখি ভারতের সংবিধান কি বলেছে
105. Powers, privileges, etc of the Houses of Parliament and of the members and committees thereof
(1) Subject to the provisions of this constitution and the rules and standing orders regulating the procedure of Parliament, there shall be freedom of speech in Parliament
(2) No member of Parliament shall be liable to any proceedings in any court in respect of anything said or any vote given by him in Parliament or any committee thereof, and no person shall be so liable in respect of the publication by or under the authority of either House of Parliament of any report, paper, votes or proceedings
(3) In other respects, the powers, privileges and immunities of each House of Parliament, and of the members and the committees of each House, shall be such as may from time to time be defined by Parliament by law, and, until so defined shall be those of that House and of its members and committees immediately before the coming into force of Section 15 of the Constitution (Forty fourth Amendment) Act 1978
(4) The provisions of clauses ( 1 ), ( 2 ) and ( 3 ) shall apply in relation to persons who by virtue of this constitution have the right to speak in, and otherwise to take part in the proceedings of, a House of Parliament or any committee thereof as they apply in relation to members of Parliament"
এগুলি এত জটিল ভাবে লেখা, এদের জন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ লাগে। কিন্ত দুচারবার রিডিং দিলেই জিস্টটা বুঝতে পারবেন
(১) এম এল এ বা এম পিদের সুরক্ষা আলাদা কিছু নেই -সবাই একই আর্টিকলে সুরক্ষিত
(২) এই সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে পলিটিক্যাল এক্টিভিটির জন্য- স্পিচ, রাইটিং, ভোটিং। মোটেও কোন ক্রিমিন্যাল কেসে সুরক্ষা দেওয়া হয় নি। নারদার কেস একটা প্রেটি ক্রিমিন্যাল কেস। এই কেসে মোটেও কোন আইনি সুরক্ষা কোন এম এল এ এম পি দের নেই। সুতরাং তৃনমূলের দাবী যে সি বি আই বিধান সভার স্পিকারের অনুমতি নেয় নি, তা কোর্টে টিকবে না। আবার বিজেপির দাবীযে সিবিয়াই শুভেন্দুকে বা মুকুলকে গ্রেফতার করতে পারে নি তার কারন, রাজ্যসভা বা লোকসভার স্পীকারের অনুমতি লাগবে, তাও বুলশিট। সিধা কথা হচ্ছে সিবিয়াই বা রাজ্যের পুলিশ ইচ্ছা করলেই এদের সবাইকেই গ্রেফতার করতে পারে ইনভেস্টিগেশনের জন্য। ইনফ্যাক্ট সংবিধান অনুসারে রাজ্য পুলিশের আরো বেশী ক্ষমতা আছে এই গ্রেফতারি করার জন্য। সিবিয়াই এর যা নেই। সুতরাং রাজ্য পুলিশ যদি পালটা হিসাবে শুভেন্দু বা মুকুলকে গ্রেফতার করে, তাও সংবিধান সম্মত।
(৩) আরো কিছু বিশেষ সুবিধা চাইলে, ভারতের পার্লামেন্ট তা আইন করে আনতে পারে। মুশকিল হচ্ছে ১৯৭৮ সালে এমন শুধু একটাই এমেন্ডমেন্ট হয়েছে- যাতে করে যদি কোন মেম্বার ঘুশ খেয়ে ভোট দেয়-তাহলে তার বিরুদ্ধে স্পিকার ক্রিমিন্যাল প্রসিডিং শুরু করতে পারে-তার পদ বাতিল করতে পারে। এর বেশী কোন সুবিধা ভারতের কোন এম এল এ বা এম পিকে দেওয়া হয় নি। স্পিকারের অনুমতি শুধু ওই একটি ক্রিমিন্যাল একশনের জন্যেই লাগে!
ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্ট এম এল এ , এম পিদের গ্রেফতারের সময় বারে বারে এই ১০৫ এর ইন্টারপ্রেটেশনেই এসেছেন।
এবার দেখুন ভারতের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড ঃ মধুসুধন রাও, এই আর্টিকল ১০৫ নিয়ে কি বলছেন। উনার এই পেপারটা পড়লে আপনারা ১০৫ আর্টিকলের নানান প্রয়োগ নিয়ে ডিটেলসে জানতে পারবেন
তাহলে রাজ্যপালের অনুমতি? ওটা টোটাল সিবিয়াই আইওয়াশ বুলশিট- যাতে শুভেন্দু এবং মুকুলকে গ্রেফতারি কেন করে নি তার জন্য একটা এক্সকিউজ হাজির করা যায়! কোন ক্রিমিন্যাল কেসে এম এল এ এম পিদের গ্রেফতার করতে রাজ্য পুলিশ বা সিবিয়াই এর কারুর পারমিশন দরকার নেই০সেটা আর্টিকল ১০৫ এবং এখনো পর্যন্ত এই নিয়ে যত সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্টের রায় এসেছে তাতেই স্পষ্ট!
তাহলে বুধবারে হাইকোর্টে কি হবে? কেস দু তিন মাস ঝুলে যাবে।
টাকা নিলেই ক্রাইম প্রমান হয় না। প্রিভেনশন অব কোরাপশন এক্টে -টাকা নিয়ে কোরাপ্টশনটাও করতে হয়। এখানে এক্ট অব কোরাপশন অব্দি কেস গড়ায় নি। এক্ট অব ক্রাইম শুধু টাকা নিলেই হয় না- এটা আইনের খুব সাধারন বেসিক। সুতরাং শুধু শুধু ইচ্ছাকৃত ভাবে কোলকাতাকে বাংলাকে জ্বালানোর জন্য বিজেপির সি বি আই এই শো দিচ্ছে। যাতে তৃনমূলের লোকজন আইন শৃঙ্খলা ভাংলে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করার সুযোগ পায়। সেটা আল্টিমেট স্টুপিডিটি-কারন তার পরের নির্বাচনে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মাঝখান থেকে লস সাধারন মানুষের। মদন মিত্র একমাত্র লোক যিনি বেসরকারি হাসপাতালের ডাকাতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। ফিরহাদ হাকিম এই কোভিড পরিস্থিতিতে কোলকাতাকে হৃদয়হীন দিল্লী হতে দেন নি। শোভন বাবু রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বান্ধবীর সাথে নিভৃতে সময় কাটাচ্ছিলেন। উনি বহুদিন থেকেই প্রেমে আছেন, রাজনীতিতে নেই। তাকেও বেড্রুম থেকে খামোকা জেলে টানা হল। জনগণ সবই দেখছে। আমি খুব অবাক হব না, বিজেপির একগাদা এম এল এ, নেতা এই ঘটনায় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৃনমূলে না জয়েন করে। তারাও বুঝতে পারছে, দিল্লীর ভরসায় থাকলে, তাদের পলিটিক্যাল কেরিয়ার মায়ের ভোগে!
দিল্লী থেকে রাজ্য শাসন করার খোয়াব গান্ধী ফ্যামিলির ছিল। ইন্দিরা গান্ধী নেহেরু এসব আগে করেছেন। কিন্ত তা সফল হয় নি। কারন ভারত বহুভাষা বহুসংস্কৃতির দেশ। ঐতিহাসিক ভাবে বাংলা, তামিলনাডু এগুলো ইউরোপের মতন আলাদা দেশ হওয়ার কথা। হয় নি কারন বৃটিশরাজ এবং তাদের কলোনিয়াল শাসন। দুর্ভাগ্য এই যে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় সেই কলোনিয়াল শাসনের কাঠামো ১০০% অক্ষত রেখেছে- যার উদাহরন গর্ভনর, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি। যে কোন গণতন্ত্রে ওই পোষ্টগুলো স্থানীয় ভোটে নির্বাচিত হওয়া উচিত-দিল্লী থেকে চাপালে, সেখানে দিল্লীর উপনিবেশিক শাসনের দিনই ফিরে আসবে। এবং সেই ক্যান্সারই আস্তে আস্তে বাড়ছে। রাজনৈতিক সংস্কার করে, এই পদগুলি, আমেরিকার মতন নির্বাচন ভিত্তিক করে দেওয়া হোক। দিল্লীর ইচ্ছা গর্ভনরের মাধ্যমে জোর করে চাপালে, প্রতিরোধ হবেই- মমতা ব্যানার্জির মতন প্রতিবাদি শক্তি উঠে আসবেই।
কিন্ত তারও আগে সিবিয়াই এবং রাজ্যপুলিশের সংস্কার দরকার। এদের এটর্নি জেনারেলের হাতে দেওয়া হোক। যেমন সব উন্নত গণতন্ত্রে হয়। ভারত ব্যতিক্রম এবং বৃটিশ কলোনিয়াল পুলিশ আইন এখনো চলছে। যা তৈরী হয়েছিল ভারতকে শোষন এং দমন করতে। ১৯০৯ সালের পুলিশ আইন এখনো কোন নেতা, কোন পার্টি সংস্কার করতে ইচ্ছুক না। কেন? কেননা এই বৃটিশ পুলিশ আইনই নেতাদের ক্ষমতা এবং দুর্নীতির উৎস। কে আর নিজেদের ডানা ছাঁটতে চাইবে? অত বোকা লোকেরা রাজনীতিতে আসে না।
No comments:
Post a Comment