Saturday, October 20, 2018

চীনকে দেখে শিখুন

আমরা যা নিয়ে সারাদিন ভাবি, সেই দিকেই গড়ায় আমাদের জীবন। যে সারাদিন ধন সম্পত্তি নিয়ে ভাবে, সে আস্তে আস্তে ধনী হয়। যে জ্ঞানের পিপাসায় ঘোরে, সে জ্ঞানী হয়ে ওঠে। অধিকাংশ মানুষই সাধারন স্তরে থেকে যায়, কারন সে নিত্যদিনের আহার নিদ্রা মৈথুন আড্ডা ফাঁকির কুম্ভিপাকের বাইরে কিছুই ভাবে না!

রাষ্ট্রের জীবন ও তাই। একটা রাষ্ট্রর "অবশেসন" কি, তাই দেখে বোঝা যাবে, সেই রাষ্ট্রের নাড়ির গতি। যেমন ধরুন, ভারত। আলোচনার শীর্ষে সবরিমালা মন্দিরে নারীর প্রবেশ। তাই নিয়ে লিব্যারাল বনাম রক্ষণশীলদের ফেসবুক কাজিয়া। ঠিক যেন ছেঁড়া জাঙ্গিয়ার বুক পকেট বাঁদিকে না ডান দিকে লাগাবে, তাই নিয়ে মারামারি। ইশ্বর আছে কি নাই, তার ঠিক নাই। থাকলেও তিনি মন্দিরে মসজিদে মানুষের মতন শীত ঘুম দ্যান কিনা, তারো ঠিক নাই। আর থাকলেও তিনি পুরুষ না নারী তাও কেহ জানে না। আর যদি তিনি পুরুষ ও হৌন মর্ত্যের মানুষদের ন্যায়, "মিট্যু" এফেক্টেড হবেন - মানে ঋতুমতী নারীদের প্রেমে কামাসক্ত হবেন সেই ভয়ে মন্দিরে কোন মেয়েকে ঢুকতে দেওয়া হবে না -সেটা হচ্ছে একটা জাতির আলোচনার অবশেসন! এবার বুঝুন একটা জাতির বুদ্ধি চেতনা কি হাস্যকর লেভেলে ঊঠলে সবরিমালা নিয়ে অবশেসন হয়। বা দুশেরার দেখতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পরে।

উল্টোদিকে চীনকে দেখুন। গত সপ্তাহে চীন থেকে আসা তিনটে খবর। এক, ওরা শহরকে আলোকিত করতে কৃত্রিম চাঁদ তৈরী করছে ২০২২ সালের মধ্যে। দুই, ওরা নতুন ধরনের বুলেট ট্রেন তৈরী করেছে, যার গতি হবে ৮০০ কিমির ওপরে। তিন, গবেষনা খাতের খরচে আমেরিকাকে ধরে ফেলেছে। ২০১২ সালে যা ছিল আমেরিকার ৩৪% , এখন তা ৮৮%।

আমি আগের সপ্তাহে, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ আই ও টির প্রয়োগ সংক্রান্ত কিছু জার্নাল পাবলিকেশনের খোঁজে ছিলাম। দেখি সব ভালো কাজই চীন থেকে। আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ, ভারত ধারে কাছেও নেই। কাজ গুলো আবার চাইনিজে লেখা ( এবসট্রাক্ট ছিল ইংরেজিতে)। যা দিনকাল এল। এবার দেখছি, আপ টু ডেট থাকতে চাইনিজটা শিখে নিতেই হবে। অতীতে অবশ্য এমনটাই ছিল। চীন ছিল জ্ঞান এবং প্রযুক্তির পীঠস্থান। ১৬০০ সাল পর্যন্ত জিডিপি, রপ্তানি, প্রযুক্তিতে চীন ছিল পৃথিবীর সেরা। যার জন্য ইতিহাসে দেখি- কি ইউরোপ, আরব বা ভারত- আমরা দেখব, নতুন কিছু প্রযুক্তি বা কার্যকরী জ্ঞান শিখতে লোকে চীনে যেত। হজরত মহম্মদ মুসলমানদের উপদেশ দিয়েছিলেন চীনে গিয়ে নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান শিখতে । সেই দিনকালই ফিরে আসছে।


আজকে চিনের এই চমকপ্রদ উন্নতির পেছনে কমিউনিজম বা ক্যাপিটালিজমের ভূত দেখতে গেলে ভুল হবে। চীন বা ভারতের মতন প্রাচীন সভ্যতার ডি এন এ বহুদিন আগেই তৈরী। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে লিডারশিপ পজিশনে থাকা চীনের কাছে নতুন কিছু না-আগেই বলেছি ইউরোপের রেনেশাসের আগে চীনই ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের নেতা । চীনই একমাত্র দেশ-যাদের দর্শন ঈশ্বর ভিত্তিক না। মানুষের কর্ম ভিত্তিক। যে সময় ভারতের অশোক রাজত্ব করছেন, সেই সময়টা চীনের ইতিহাসে ১০০ বছরের যুদ্ধের যুগ। যদিও কনফুসিয়াস বুদ্ধের সমসাময়িক, চীনের অভূতপূর্ব প্রযুক্তির উন্নতি এই "ওয়ারিং স্টেটের" সময়টা থেকেই যখন ছটি চৈনিক রাজ্য একে অপরের সাথে যুদ্ধে রত। এই যুগেই জন্মেছেন কালোত্তীর্ন চৈনিক দার্শনিকরা - সান জু, ওয়ে লিওবি। বৌদ্ধ দর্শন, কনফুসিয়াস, সান জু ইত্যাদি নানান দার্শনিকদের চিন্তার ওপরে তৈরী চৈনিক সভ্যতা- যা সম্পূর্ন ভাবেই ঈশ্বর বিহীন, মানুষের কল্যানকামী। আবার উন্নত মিলিটারী শক্তির ও পূজারী।


ভারতে প্রতিভার অভাব কোনদিনই ছিল না। ভারতের বৌদ্ধ ধর্ম , আয়ুর্বেদ, গণিত চীনে গেছে অতীতে। এবং চীনের দার্শনিক চিন্তাবিদদের হাতে তা উন্নতি প্রাপ্ত হয়েছিল। আর ভারত থেকে আস্তে আস্তে সব কিছুই হারিয়ে গিয়েছিল।
এখনো অবস্থাটা প্রায় তাই। ভারতে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্ত রাজনৈতিক সিস্টেম যেভাবে ধর্মের কাদায় পচা জল খাচ্ছে, তাতে প্রতিভাবান ভারতীয়দের হাতে বিকল্প খুব কম।



No comments: