Sunday, October 14, 2018

হিন্দু ধর্মীয় উৎসব এবং গণতন্ত্র

পূজা এবং উৎসব-এর শিকড় এবং আকর বেশ গভীরে। অতীতের এমন কোন সভ্যতা পাওয়া যায় নি, যাদের ধর্মীয় উৎসব ছিল না।

প্যাগান ধর্মাচারন সর্বদাই উৎসব কেন্দ্রিক। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে যৌনতা, ভাল ফসল ও যুদ্ধ ।

ধর্মীয় উৎসবের প্রথম লিখিত প্রমান সুমেরিয়ানদের। তাদের ছিল জল ( নামু ) , আকাশ (আন), বাতাস (এনকি), পৃথিবীর ( কি) দেবতা। সেই নগর সভ্যতায় পুরোহিতরাই ছিল শাসক-কারন তারাই নাকি পুজোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করতে পারত প্রকৃতি (!) । আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে, তাদের সেই উৎসবে, বাজত একশো আশি বাদ্য যন্ত্র!

পরবর্তীকালে যত প্যাগান ধর্মের উৎপত্তি- তাদের অনেকের ভিত্তিই এই আদিম সুমেরিয় সভ্যতা। মিশর, গ্রীস, রোমান, ভারতীয় আর্য্য সভ্যতা- এদের পুরোহিত, মন্দির, মূর্তিপূজো, সৃষ্টি এবং ধ্বংসের পুরান , এগুলোর অনেক কিছু উপাদানই সুমেরিয় প্যান্থেয়িজমে পাওয়া যাবে।

গণতন্ত্রের সাথে প্যাগানিজমের একটা সম্পর্ক আছে। সুমেরিয় প্যাগানিজমের ভিত্তি সুমেরিয়া সিটি স্টেটগুলোর স্বতন্ত্রতা। গ্রীক এবং রোমান গণতন্ত্রের ভিত্তির অনেকটাই নির্ভর ছিল এই প্যাগান উৎসবের। এর একটা বড় কারন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠির (ট্রাইব ) ছিল আলাদা আলাদা দেব দেবী। একটা রাষ্ট্রে তার সমস্ত জনগোষ্ঠির সমান সন্মান দিতে সব দেব দেবীর পুজো, সব উৎসব চালু থাকত।

ঠিক এই কারনেই রোমান সম্রাট কনস্টানস্টাইন প্যাগানিজম ছেড়ে রোমের রাষ্ট্র ধর্ম খ্রীষ্ঠান বানালেন। কারন প্যাগানিজমে সম্রাটের ক্ষমতা একছত্র করার সমস্যা ছিল অনেক- যেহেতু সমস্ত দেব দেবীর পুরোহিতদের হাতেও ক্ষমতা ছিল। রোমান সেনেটকে, যা ছিল রোমের গণতন্ত্রের প্রতীক, তা নির্মূল করতে রোমের প্যাগানিজম ধ্বংশ করতেই হত কনস্টানটাইনকে। খ্রীষ্ঠান ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম বানানোর সাথে সাথেই রোমান গণতন্ত্রের প্রতীক সেনেটকেও ধ্বংশ করেন সম্রাট কনস্টানস্টাইন।

একেশ্বরবাদ -যথা ইহুদি, খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামের জন্মই হয়েছে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের সাধনে। জন্মের সময় সেই উদ্দেশ্য না থাকলেও ঐতিহাসিক ভাবে স্বৈরাচারী একনায়ক তন্ত্র সিদ্ধ করতেই একেশ্বরবাদের উদ্ভব। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই ব্যপারটা পরিস্কার হবে।

ইতিহাসে প্রথম একেশ্বরবাদ চালু করেন মিশরের প্রখ্যাত ফেরাও- আখেনাতেন ( ১৩৫৩-১৩৩৬ খৃঃপূঃ )। উনি দেখলেন, প্যাগান সংস্কৃতিতে ফারাওদের হাতে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। উনিই প্রথম আবিস্কার করেন, সম্রাটের ক্ষমতা একছত্র করতে, পুরোহিত ক্লাসকে ডাইলুউট করা আবশ্যক এবং সেটা করতে গেলে বহু দেবদেবীর পূজো ছেড়ে এক দেবতার পূজো চালু করতে হবে। আখেনাতেন এই উদ্দেশ্য প্রচলিত সব দেব দেবীর মন্দির ভেঙে শুধু দেব এটেন ( সূর্য্য) এর পূজা চালু করেন। এবং ফারাওকে এটেনের একমাত্র সন্তান বলে দাবী করেন। তার এই একেশ্বরবাদ বিপ্লব বেশীদিন চলে নি। তার সাম্রাজ্যের শেষের দিকে মহামারী দেখা দেয় এবং ক্ষমতাচ্যুত পুরোহিতরা বোঝাতে সমর্থ হয় দেব দেবীদের ক্রোধ এবং রাজার ভ্রান্ত ধর্মচারনই মূল কারন।

কিন্ত যে বীজ বপন করেছিলেন আখেনাতেন, তাকেই মহীরূহ করেন কনস্টানটাইন। এবং ইসলাম হচ্ছে যার সর্বাধিক পূরিপূর্ন রূপ।

যার ফলে গ্রীস-ইউরোপে খ্রীষ্ঠান ধর্মের আগমন হেতু মধ্যযুগে গণতন্ত্র সম্পূর্ন লুপ্ত হয়। এই গণতন্ত্র ফেরাতে অপেক্ষা করতে হবে সেই রেঁনেশাসের সময় পর্যন্ত। যেখানে খ্রীষ্ঠান ধর্মকে দুর্বল করেই আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা হয় ইউরোপের সিটি স্টেটগুলিতে।

এটাই কারন- কেন কোন মুসলিম দেশে গণতন্ত্র বস্তুটি ভাল চলে না। সেখানে একেশ্বরবাদের সাহায্য নিয়েই চলে স্বৈরতন্ত্র। কিন্ত ভারতের হিন্দুদের কাছে গণতন্ত্রই স্বাভাবিক। এর কারন সেই একটাই-একাধিক দেবদেবী এবং একাধিক ধর্মাচারন মানার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক ভাবের প্রসার হয়। ভিন্নমত এবং ভিন্নপথের মান্যতাই গণতন্ত্র।

সুতরাং ভারত বর্ষে যে অগনিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অসংখ্য দেব দেবী- এবং তাদের সবাইকেই সত্য বলে মেনে নেওয়ার যে প্রবনতা হিন্দু ধর্মে বিদ্যমান, তাই ভারত বর্ষের গণতন্ত্রের মূল সোপান। ভারতের গণতন্ত্রের সাফল্যের পেছনে হিন্দু ধর্মের বৈচিত্রপূর্ন আচার আচরনের ভূমিকা নেহেরুর থেকেও বেশী। ইতিহাস সাক্ষী, মহম্মদ আলি জিন্না, নেহেরুর থেকেও বেশী গণতান্ত্রিক ছিলেন। কিন্ত গণতান্ত্রিক পাকিস্তান দিয়ে যেতে পারেন নি। কারন একেশ্বরবাদ গণতন্ত্রের সাথে খাপ খায় না। হ্যা, ইসলামিক দেশগুলোতেও খ্রীষ্ঠান দেশগুলির মতন গণতন্ত্র আসতেই পারে- তবে তা ধর্মের বিষ দাঁত ভেঙেই আসতে হবে।

সুতরাং গণতন্ত্রের সাধনে এই প্যাগান উৎসবগুলির ঐতিহাসিক ভূমিকা অনস্বীকার্য্য।

2 comments:

Unknown said...

অনেক অজানা তথ্য জানলাম।

Unknown said...

Reformed hinduism is the future of Hindustan.