Monday, July 20, 2015

আত্মসন্তুষ্টি এবং ডারুইন

  পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতি থেকে চাকরি-সবকিছুই প্রায় বাঙালদের দখলে।  নৃতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় দিক দিয়ে ঘটি বাঙালের পার্থক্য মাইক্রোস্কোপিক- ফলত পশ্চিম বঙ্গে বাঙাল খেদাও আন্দোলন হয় নি। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে উদবাস্তু ভিটেহারা সর্বহারা বাঙালরা, কি করে তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল সমৃদ্ধ ঘটিদের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিল ?

 কারন সেই দার্শনিক ম্যাক্সিম। বাঙালদের যে জীবন সংগ্রাম করতে হয়েছে ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে, সেই সংগ্রামের আগুনে পুড়েই তারা স্টিলের মতন শক্ত এবং শার্দুলের মতন চোখ পেয়েছেন। প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে গিয়েই তারা সারভাইভাল অব ফিটেস্টের লড়াই এ আরো বেশী দক্ষ।

   ম্যাথ ওলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ছেলেরা ভারতের থেকে ভাল ফল করাতে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা কি করে হল। বাংলাদেশের মতন একটা অনুন্নত মৌলবাদি দেশের ছেলেরা কি করে ভারতকে টেক্কা দিচ্ছে? অনেকেই এটাকে স্যাম্পলিং এর ভুল ইত্যাদি বলে চালাচ্ছেন বটে-কিন্ত বাস্তব হচ্ছে গণিতে ভারতের সেরা ছেলেরাই ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গেছে।  আসলে এদেশের বাঙালীরা মানতে নারাজ  স্কুল লেভেলে, বাংলাদেশের ছেলেরা গণিত এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় এগিয়ে গেছে তাদের থেকে!

 ১৯৯১ সালে আমি যখন আই আই টিতে ঢুকি, তখন বাংলাদেশের সেরা ছেলে মেয়েরা আই আই টি খরগপুরে পড়তে আসত সার্ক কোটাতে। তখন বাংলাদেশের শিক্ষার মান ভারতের থেকে অনেক নীচে ছিল-ওই সব ছেলেমেয়েগুলি আই আই টিতে খুব বাজে রেজাল্ট করত। এরপরে গত দুই দশকে বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষার মান উন্নত হয়েছে-আর ভারতে ক্রমাগত নেমেছে। এর মূল কারন ভারতে আই টি শিল্পে সহজ চাকরি। যার জন্য গরু গাধা সবাই ভালো মাইনের চাকরিতে ঢুকে যায় টিসিএস ইনফোসিসে। স্কুলে , কলেজে কিছু না শিখলেও চলে। ফলে শিক্ষার সব জায়গাতেই একটা গয়ংগচ্ছ ভাব।

  আমাদের সময়ে  "সাবজেক্ট ম্যাটার" ভাল করে শেখার একটা চল ছিল। সফটোয়ারের সহজ চাকরি সব ধ্বংস করে দেয় মাত্র এক দশকে।  ভাল করার জন্য যে স্ট্রাগল করার দরকারটা ছিল নেহেরুভাইট অর্থনীতির যুগে-কারন ভুরি ভুরি ভাল চাকরি ছিল না-সেটা ভারতে সম্পূর্ন ধ্বংশ হয় আই টি শিল্পের উত্তোরনের সাথে সাথে।
 
 ভাল করে সাবজেকক্ট ম্যাটার এক্সপার্টাইজ এর দরকার নেই-ফলে তার জন্য সংগ্রাম ও নেই! এই জন্য ভারতে শিক্ষার মান ক্রমাগত নেমেছে। কেও ক্লাসের তোয়াক্কা করে নি-কারন চাকরির অভাব হয় নি শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারদের। আমার এক বন্ধু যিনি আই আই টিতে ম্যাথ পড়ান-তার আক্ষেপ-এর থেকে স্কুলের ম্যাথ টিচার হওয়া ভাল ছিল। কারন স্কুলে এটলিস্ট আই আই টি এন্ট্রান্স ক্লিয়ার করার জন্য ম্যাথটা শিখত!! এখন এরা কিছুই শিখতে চায় না। কারন ইনফি টিসিস বেঞ্চ শুদ্ধ তুলে নিয়ে যাচ্ছে!!

 এদের অধিকাংশই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে।  ছোটবেলা থেকে সাত থেকে আটজন টিউটর। স্বাধীন ভাবে চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা নেই-কিন্ত তবুও এরা আই টি ইকোনমিতে ভালোই করে খাচ্ছে কারন-এই অর্থনীতির দরকার ছিল গ্লোরিফায়েড ক্লার্ক ।

 সামনের সেদিন কিন্ত এদের জন্য সুখের না। আই টিতে ব্যপক হারে অটোমেশন ঢুকে গেছে। ইনফি টিসিস আর অত ছেলে নিচ্ছে না। খাতায় কলমে আগের মতন ফ্রেশার তুলছে, কিন্ত ট্রেনিং এ ১০-২০% ছেঁকে নিয়ে বাকী ৮০% তাড়িয়ে দিচ্ছে।  ন্যাসকমের দেওয়া তথ্যেই দেখছি ২০১২ সালের পর থেকে আউটসোর্সিং এর জন্য ম্যান পাওয়ারের ডিম্যান্ড কমতির দিকে। অথচ হাই এন্ড স্কিলের ডিমান্ড উর্ধমুখী। সেখানে লোক নেই। বা যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

ভারত এবং পশ্চিম বঙ্গে রাজনীতি নিয়ে এত কথা শুনি- শিক্ষার মানের অবনতি নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না। অথচ শিক্ষাই জাতির ভবিষ্যত।  আমেরিকাতে কিন্ত ওবামা বারবার এই ইস্যুটা তুলেছেন-এবং আমেরিকার স্কুলগুলিতে ওবামা এডমিনিস্ট্রেশন প্রচুর চেষ্টা করছে স্টান্ডার্ড উন্নত করতে। এর কারন আমেরিকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষায়, বিশেষত গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ছে এটা একটা বড় রাজনৈতিক ইস্যু ছিল বা এখনো আছে। গত তিন বছরে আমেরিকাতে আমূল বদলেছে গণিত শিক্ষা। শিক্ষার মান জোর করে বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। কারন ওবামা পরিস্কার ভাবেই আমেরিকার ছাত্রদের বলেছেন-যদি শিক্ষার মানে তোমরা ভারতীয় বা চীনাদের থেকে এগিয়ে থাকতে না পার-তোমাদের কেউ চাকরি দেবে না এই গ্লোবালাইজড অর্থনীতিতে।

বঙ্গবাসীরা রাজনীতি নিয়ে এত আলোচনা করে-অথচ সেই আলোচনাতে শিক্ষার মানের অবনতি নিয়ে কোন আলোচনা নেই-এটাই বোঝার জন্য যথেষ্ট শিক্ষার অধোগতি কোথায় থেমেছে।





 

No comments: