Saturday, January 25, 2014

বাবা সাহেব আম্বেদকর

বাবা সাহেব আম্বেদকর। ভারতীয় সংবিধানের স্রষ্টা।  নেহেরু, নেতাজি, গান্ধীর পাশে তিনি ছিলেন। বইএর পাতায়। জানার চেষ্টা করেছি নেহেরু, গান্ধী, নেতাজিকে। বাবা সাহেব সম্মন্ধে কনামাত্র উৎসাহও আমার ছিল না। শুধু মনে হত এই লোকটাই সংরক্ষণের ঘোটলাটা পাকিয়েছে। সংরক্ষন হওয়া উচিত ছিল গরীব এবং গ্রামাঞ্ছলের ছেলে মেয়েদের জন্য।
 
 গত কয়েকদিন আম্বেদকরের কিছু লেখা পড়ে বুঝলাম সংরক্ষনের ব্যাপারে আমার অবস্থান তার থেকে আলাদা কিছু ছিল না। সব থেকে বড় কথা রাষ্ট্রনীতি এবং সমাজ দর্শনে তার চিন্তাধারা নেতাজি, নেহেরু বা গান্ধীর থেকে অনেক বেশী আধুনিক এবং এগিয়েই ছিল।  মোদ্দা কথা আম্বেদকর সম্মন্ধে ভাল করে না পড়াশোনা না করে,  একটা মহা ভুল করেছি। সেটা হচ্ছে আজকে ভারতে যে সব আপাত বৈপীরত্য এবং সাংবিধানিক সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে, সেটা তিনি সংবিধানটা নামিয়ে সেই ১৯৫১ সালেই ভবিষয়তবাণী করে গিয়েছিলেন।

  যেমন সংবিধানটা নামিয়েই উনি কোটি টাকার একটা উক্তি করেছিলেন-সেটা হচ্ছে ১৯৫১ সাল থেকে দুটো ভারতের অস্তিত্ব থাকবে। একটা সাংবিধানিক ভারত-যা মানুষের সমানাধিকার  এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা দান করে। আরেকটা হচ্ছে ধর্মীয় সামন্ততান্ত্রিক ভারত-যার অবস্থান ভারতের সংবিধানের বিপরীতে। তিনি এটাও বলেছিলেন, এই ভয়ংকর স্ববিরোধিতা, জাতি বা দেশ হিসাবে ভারতের উত্থানের পথের সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

 সব থেকে বড় কথা, ধর্মের বিরুদ্ধে উনার অবস্থান নেতাজি, নেহেরু বা গান্ধীর থেকে অনেক বেশী স্বচ্ছ ছিল। বাবাসাহেব বলেছিলেন, ভারতের সংবিধানের সার্বভোমত্ব রক্ষা করতে গেলে,  ধর্মের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করত হবেই। কারন ভারতের সংবিধান আধুনিক-ধর্মীয় সংবিধান মধ্যযুগীয়।  ধর্ম ভাল, ধর্মর স্বার্থ রক্ষা করতে হবে আবার ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করে হবে-এই দুটো একসাথে হবে না তা বাবা সাহেব  অনেকদিন আগেই বলে গেছেন।

  নেহেরু বাবা সাহেবের সর্তকতা স্বত্ত্বেও মুসলিমদের জন্য শরিয়া আইনের বন্দোবস্ত করেন। মুসলমানদের শরিয়া আইন অবশ্যই ভারতের সংবিধান এর স্পিরিটের বিরোধি কারন এই আইনে মুসলিম মেয়েদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক করে রাখে। যা অবশ্যই সংবিধান বিরোধি।

 বাবা সাহেব সংবিধানে এক আধুনিক ভারত চেয়েছিলেন, যা ধর্মের ওপরে উঠে একটি আধুনি জাতির প্রতিষ্ঠা করবে। উনি খুব পরিস্কার ভাবে বলেছিলেন, ভারতে যদ্দিন ধর্মের দৌরাত্ব থাকবে, তা ভারতীয় জাতিয়তাবাদের বিরোধি সত্ত্বা হিসাবে কাজ করবে।

 বাংলাদেশ ও বাবাসাহেবের লেখা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ধর্ম এবং আধুনিক সংবিধান একটা রাষ্ট্রএ একসাথে চলতে পারে না।  এই ধরনের গোঁজামিল রাষ্ট্র একটি অস্থির ব্যর্থ রাষ্ট্রর জন্ম দেবে। এটাও উনার কথা। আমি সম্পূর্ন একমত। এই জন্যেই উনি নেহেরু, নেতাজি বা গান্ধীর থেকে অনেক এগিয়ে-কারন এরা ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করতে পারেন নি। গান্ধী ধর্ম ছারা রাষ্ট্র ভাবতেই পারতেন না। নেতাজি মনে  করতেন ধর্মের সাথে আধুনিক ভারতের বিরোধ নেই-শুধু ধর্মটা আধ্যাত্মিক গন্ডীতেই আটকে রাখলেই হল। নেহেরু অবশ্যই আধুনিক চিন্তানায়ক-কিন্ত ভোটের বাজারে ক্ষমতার লোভে মুসলমান মেয়েদের সর্বনাশটা উনিই করেছেন শরিয়াকে বৈধ করে। এখানে বাবা সাহেবে বক্তব্য বেশ পরিস্কার- হিন্দু ধর্ম ঠিক, ইসলাম ঠিক আবার ভারতীয় সংবিধানও ঠিক এই গোঁজামিল বেশীদিন চলতে পারে না।

Monday, January 20, 2014

মমতা কি কি করলেন?

 মমতা কি কি করলেন?
   -বাংলাদেশের জামাতের সাথে সংপৃক্ত এবং ঘনিষ্ঠ এক সম্পাদককে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছেন। মনে রাখবেন, জামাত হচ্ছে সেই পার্টি, যারা বাংলাদেশে হিন্দুদের ঘরবাড়ি এখনো জ্বলাচ্ছে।  যেন পশ্চিম বঙ্গে আর কোন ভাল সংখ্যালঘু ছিল না। কেন নজরুলের মতন সৎ মুসলিমদের বাংলা থেকে  সিপিএম বা তৃণমূল কেওই পাঠায় না?
   ইয়েস ম্যান দরকার।
   ইয়েস ম্যান কারা হয় জানেন ত?

-এর পরে কি ডি সিং। এলকেমিকে সেবি অনেক নোটিশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১২ সালের  নির্দেশ-এলকেমি একটা অবৈধ সংস্থা। এলকেমি এই দেশের আইনের সুযোগ নিয়ে মামলা করে এসব ডিলে করাচ্ছে। যেমন সুব্রত রায় ও চেষ্টা করছে।
  সব থেকে বড় কথা আইন যদি বাদ ও দিই-গণিতের নিয়মেই কোন চিট ফান্ডের ব্যবসা সৎ হতে পারে না।  ওই লাভ কোন ব্যবসাতেই নেই যে এজেন্টদের ২০% দিয়ে, গ্রাহকদের ২০% সুদ দেওয়া যায়।
  তারপরেও কেডি সিং তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য। এক সারদা কান্ডেও এদের শিক্ষা হয় নি!

 -কোলকাতা সহ গোটা রাজ্যের গণধর্ষনের কথা ছেড়েই দিলাম। কেঁচো খুড়তে গিয়ে অনেক সাপ বেড়োতে পারে। কিন্ত এটা সত্য সিপিএম আমলে এত ধর্ষন হত না। কারন পুলিশের শাসন না থাকলেও পার্টির শাসন ছিল। সেটার বাজে দিক অবশ্যই ছিল। কিন্ত ভালদিক ছিল এইটা যে পুলিশের হাত থেকে বাঁচলেও, পার্টির হাত থেকে বাঁচা ছিল অসম্ভব। পার্টির সমান্তরাল ইন্টেলিজেন্স ছিল শক্তিশালী। আজ সেটা নেই।

দিদির পপুলিস্ট গাঁটামোতে বাস পরিবহন অগাধ ভূপতিতলে।   এরপরে মুকুল রায়, মদনমিত্র এরা কি সবাই জানেন। সরকারি প্যানেল কিভাবে তৈরী হচ্ছে, সেটাও সবাই দেখছেন।

 তারপরেও বিরোধি শুন্য পশ্চিম বঙ্গ।  ৩৫ বছর সিপিএম শাসনে সব থেকে বাজে দিকটা বোধ হয় এখন বোঝা যাচ্ছে। জনগণ এত কিছুর পরেও তৃণমূল বিরোধি হয়ে উঠতেই পারে-কিন্ত সিপিএমের দিকে যাবে না।

 এ হচ্ছে জলে কুমির ডাঙায় বাঘের গল্প।

 দেখা যাক পশ্চিম বঙ্গে আম আদমি পার্টি কিছু করতে পারে কি না। তবে তাদের নেতা দরকার।
বাংলার বুদ্ধিজীবি এবং বেশ্যাজীবিরা ত আবার পার্টির প্রাসাদ ছারা ভেক বদল করেন না। হাজার হলেও তারা পেশাদার।

Saturday, January 18, 2014

জল চাই জল চাইগো!

( স্যাটায়ারটা বেড়িয়েছে কাফিলাতে, সত্যসাগর বলে এক ব্লগার লিখেছে। আমি ওর লেখাটাতে নিজের মশলা ঢেলেই লিখলাম)


-কমরেড-লোকটা জল চাইছে। ঠেকে গেছে-তৃষ্ণার্ত।  তৃষ্ণার্ত লোককে জল দেওয়ার পার্টি লাইন কি কমরেড?

 মোবাইলের অন্য লাইনে ক্ষণিকের নীরবতা।  পার্টির মহান তাত্ত্বিক কহিলেন

- ওটা শোধনবাদি কার্যক্রম।  তাকে বল আমরা শ্রেনী বিপ্লবের জন্য জীবন দিতে রাজী। কিন্ত তৃষ্ণার্তকে জল দেওয়ার মধ্যে একটা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সুলভ ধর্মীয় লেবাস আছে যা প্রতিক্রিয়াশীলতার নামান্তর"

 -এখুনি জল না দিলে, লোকটা কিন্ত পার্টি অফিসের দরজাতেই অক্কা তুলবে, কমরেড। বুর্জোয়া মিডিয়ার চেঁচামেচি তখন সামলাতে পারবেন?

-ঠিক।  মিডিয়া আমাদের শত্রু। কিন্ত ওদের ঠিক ঠাক কভারেজ না পেলে, জনগণের কাছে পার্টি নিয়ে ভুল সংকেত যাবে।  আচ্ছা এক কাজ কর-লোকটাকে জিজ্ঞেস কর ও জল সাপ্লাই এর প্রাইভেটাইজেশনের বিরোধি কি না।

-কমরেড লোকটা বলছে,  ও প্রাইভেট আর পাবলিক জলের পার্থক্য বোঝে না। কারন পাবলিক সাপ্লাই এ জল নেই-আর প্রাইভেট সাপ্লাই এর দামী জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। ওর কাছে দুটোই সমান কমরেড।

-হুম। ঠিক। আচ্ছা ওকে জিজ্ঞেস কর ও এই জল না পাওয়ার জন্য আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের দোশর গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে রাজি কি না?

- কমরেড পেটে ভাত নেই, জল নেই। খুব দুর্বল। কথা বলার ক্ষমতাই নেই-তো শ্লোগান।

-বুঝলাম। এক কাজ কর। জিজ্ঞেস কর লোকটা সেকুলার কিনা। বা মার্কেট নিয়ে ওর দৃষ্টি ভংগী কি।  বুঝতেই পারছ, না বুঝে শুনে ত জল দেওয়া যায় না। যদি কালকে জানা যায় লোকটা সংঘের লোক, তাহলে কান কাটা গেল আর কি।

- লোকটা ভগবানে বিশ্বাস করে। তবে ভগবান ভ্যাকেশনে গেছে-সুরাহা হয় নি । না খেতে পেয়ে মরছে। তাই পার্টি অফিসে এসেছে কমরেড।

- আমি এই ভয়টাই করছিলাম। মানে প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিতে আগে ছিল। এখন এখানে ঢোকার চেষ্টা করছে। সুবিধাবাদি। ব্যপারটা নিয়ে পলিটবুরোতে আলোচনা দরকার।

 - পলিটবুরোর মিটিং কখন হবে কমরেড?

-   অর্ধেক মেম্বার ছুটিতে। জি এস এখন ইংল্যান্ডে তার শিক্ষক অধ্যাপক ডুরান্ড সাহেবের কাছে নিও ইম্পিরিয়ালিজম নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনাতে ব্যস্ত। ঠিক বলতে পারছি না কবে মিটিং ডাকা যেতে পারে।

- কমরেড, লোকটা বলছে, ওর সময় নষ্ট না করতে। জল না দিতে চাইলে যেন আমরা সাফ সাফ বলে দিই। ওই নতুন একটা আম আদমি পার্টি হয়েছে, সেখানে জয়েন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ওরা নাকি এত কিছু প্রশ্ন ছাড়াই জল দিচ্ছে।

- নতুন পার্টি? কি ধরনের? নিও লিবারালিজম, সাম্রাজ্যবাদ বা ধর জাতীয় ইস্যুগুলিতে এদের পজিশন কি?

- ওই পার্টির কোন পজিশন নেই স্যার। ওরা শুধু তৃষ্ণার্তকে জল দিচ্ছে।

-  তাহলে আবার ওটা কোন পার্টি হল নাকি।

- ওরা বলছে-আসলে এই ইস্যু ভিত্তিক স্টান্ডিংটা খতরনাক। মানে একেবারে স্টান্ডিং পজিশনে ঠাঁই দাঁড় করিয়ে রাখে। মুভমেন্ট হয় না। তাই ওরা স্টান্ডিং না করে, প্রতিটা ইস্যুতে জনগনের কাছে মুভ করছে ।

- জনগন? কমরেড ভুলিও না ১৯১৭ সালের অক্টবর মাসে লেনিন কনস্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলি ধ্বংশ করেছিলেন। কমরেড লেনিন লিখেছিলেন জনগণ একটা ইল্যুউশনের মধ্যে থাকে-তাছারা অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজ নিয়ে নিজেদের ভাল বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে পার্টিই জনগণের জন্য ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।  জনগনের জন্য জনগণের সিদ্ধান্ত এনার্কিজম। তুমি মার্কস বনাম বাকুনীন বিতর্ক ভালোই জান। ১৮৬৫ সালে মার্কস বাকুনীনপন্থীদের এই জনগন ভিত্তিক মহল্লাসভার বিরুদ্ধে যে পেপারটা লিখেছিলেন পড়ে নিও। তাহলেই বুঝবে যে এইসব নৈরাজ্যবাদিরা আসলেই শ্রেনী বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

- কমরেড লোকটা মারা গেছে।

-ওর লাশ লালপতাকায় মুরে মিছিল বার কর। মিছিলে স্লোগান তোল আর দেখাও নিওলিবারলিজম এবং সাম্রাজ্যবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কিভাবে জল না পেয়ে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষরা মারা যাচ্ছে।


-কমরেড, লাশ নিয়ে মিছিল আপনি আর আপনার পলিটবুড়োরা করুক। আমি আম আদমি পার্টিতে চল্লাম।  এটলিস্ট সেখানে তৃষ্ণার্ত লোকেদের জন্য একটু জলের ব্যবস্থা ত আছে।

সুচিত্রা সেন ও আমাদের ছেলেবেলা!

সুচিত্রা সেন ও আমাদের ছেলেবেলা!
   
       বাঙালী হিন্দু মধ্যবিত্ত পরিবারে ধর্ম হেঁসেলে না ঢুকলেও, জীবন প্রবাহের পদে পদে স্বতঃসিদ্ধ। নব্বইএর দশকে সেই রাজীব জমানায়, আমাদের চারিদিকে নানান সব না না এর  পর্দা খুলে একটু মিঠে রোদ। কোলকাতা দূরদর্শন শনিবার বিকেল পাঁচটায় পুরানো বাংলা সিনেমা দেখাত।  তখনো কেবল টিভির জন্ম হয় নি। ডিডির ছেঁড়া গেঞ্জি জাঙ্গিয়া আমাদের একমাত্র এন্টারটেইনমেইন্ট। আমি ক্লাস সেভেন এইটে পড়ি। কিশোর ভারতী, আনন্দমেলা, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে আস্তে আস্তে দেখতে শিখলাম উত্তম সুচিত্রা। মাসিমা, কাকিমারা হাঁ করে গিলত। মধ্য বয়স্ক মহিলাদের কাছে ওই রোমান্স ছিল শেষ পাতে চাটনি চাটা। তাদের জীবনে কখনো আসে নি  বিপাশা বা রিনা ব্রাউনের দুর্ধস্ব সব রোমান্স। সেই যুগে মাইক্রোওয়েভ, ফ্রিজ ঢোকেনি। হেঁসেলের আগুনে, ছেলে মেয়ে মানুষ করার চাপে, অধিকাংশ মহিলাদের নারীত্ব ছিল অবদমিত। উত্তম সুচিত্রার রোমান্স সেই ধিক ধিক করা রিক্ত সাদা কাঠ কয়লায় জলন্ত অঙ্গার। উনারা কেমন হিপটোনাইজড ছিলেন উত্তম সুচিত্রায় তা সিনেমা ভাঙার  পর ওদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যেত।

      আর আমাদের মতন কিশোরদের কাছে, তিনি  স্বপ্নের সেই রাজকন্যা।  রক্ষণশীল সমাজে  আশেপাশে কোনকিশোরী নেই যার সাথে গুনগুনিয়ে অন স্ক্রীন রোমান্স এর শিক্ষাটা রোল প্লে করা যায়। সেক্স, কিসি এসব অনেক দূর, কথা বলা যায় এমন কিশোরী নেই জীবনে। ছেলে প্রেম করছে, করতে পারে, এই নিয়ে সেকালে বাবা মায়েদের দুশ্চিন্তা থাকত শুধু একটাই কারনে। প্রেম করতে গিয়ে পড়াশোনাটা না গাড্ডায় যায়। জয়েন্টে মোটে ১০০০টা সিট। ছেলে ওই লিস্টে নিজের নাম না ঢোকাতে পারলে, গেল ওর জীবনটা!!  সেটা সেই সময় যখন ভারতে টিসিএস, ইনফি এসব আসে নি। মাইক্রোসফট, এপল এদের আমেরিকাতেই কেও চেনে না। চাকরি বলতে স্কুল কলেজে শিক্ষকতা আর সরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার।  ফলে ওই এক হাজারটার মধ্যে লিস্টে নাম না তুলতে পারলে তুমি বেনামী।  আর বাবা মার সারাক্ষনের ভয় প্রেমের পিচ্ছিল পাড়ে পা পিছলোলেই শ্যাওলা পুকুরে সলিল সমাধি।

       উত্তম সুচিত্রার সিনেমা দেখার পরই আবার পড়ার টেবলে ফিরতে হত শনিবার রাতে।  এদিকে মন ত উসখুশ উদাস। টেবলের সামনে ক্যালেন্ডারের মধ্যে দিয়ে আমি তখন সুচিত্রার স্বপ্ন জগতে! অহ যদি জীবনে একটু দাঁড়াতে পারি আর-আর বিপাশার মতন কোন মেয়ে যদি আমাকে বলে, "আমার কথা কি তোমার একবার ও মনে পরে না"- কি বলবো-কিভাবে উত্তর দেব-সেই নিয়ে উত্তাল সুইট ভাবনা। আমি কেন আমার মতন অনেক কিশোরই তখন ডস্টভয়েস্কির আর্কাডি ডলগুর্কি। টিনিশ রেভরি বা কৈশরের দিবাস্বপ্ন অনাগত রোমান্স, রেভোল্যুশন আর রেস্টিকশনের মধ্যে খাবি খাচ্ছে। সুচিত্রা, মার্কস, লেনিন, নেতাজি, বিবেকানন্দ নিয়ে ঘেঁটে ঘ। দুর্ভাগ্য এটাই- অনেক বাঙালীই দেখেছি এই সব লক্ষণরেখা থেকে এখনো বেড়তে পারেন নি। এবং আজন্ম এই বৃত্তেই দুর্বার অভিকেন্দ্র বলেই ঘেঁটে থাকেন।

  তারপরে অনেক বছর কেটে গেছে। আই আই টিতে ঢোকার পর, বাবা মারা যখন নিশ্চিত হলেন, এবার ছেলের সদগতি হল- তখন বড়দের কাছ থেকে জানলাম রোমান্স শিখতে গেলে নাকি উত্তম সুচিত্রা দেখা মাস্ট!! তবে ওই  ১০ ; ১ রেশিওতে যেখানে মেয়ে পাওয়া যায়, সেখানে রোমান্স নামানোর চেয়ে চেকভ, টলস্টয় পড়া অধিক চিত্তাকর্ষক। আনরোম্যান্টিক মহিলাশুন্য ছাত্র জীবনের পর রিসার্চ লাইফে রোমান্স এল বটে-তবে বুঝুলুম বিপাশা আর রীনা ব্রাউনরা সিলভার স্ক্রীনের প্রেমিকা। বাস্তবে যা জোটে সেটা লিখতে গেলে, মহিলা পাঠকবৃন্দ আমাকে মিজোগাইনিস্ট বলে ঠেঙাবে। আর আমরাই বা উত্তমের মতন সুইট রোম্যান্টিক হতে পারলাম  কই?

   কয়েক মাস আগে আমার প্রবল ইচ্ছা জাগল উত্তম-সুচিত্রার সাফল্যের পেছনে  গণিতিক রহস্যটা কি?  আমার মাথায় পোকাটা নড়িয়েছিল হলিউডের এক ভারতীয় প্রোডিউসার। আসলে প্রেডিকশন টেকনোলজী নিয়ে কাজ করি শুনে বললো-আছা স্ক্রিপ্ট, এক্টর, ডিরেক্টর এসব দেখে আগে থেকে কি বলা যার সিনেমাটা হিট করবে কি না??

    আসলেই কিছুটা যায়। সেসব গণিতিক ব্যপারে পরে আসব। এবার ক্ষীরটা বলি। আমি লক্ষ্য করেছি উত্তম সুচিত্রার হিটের পেছনে আছে ভাল স্ক্রীপ্ট। সেই প্রেমে উত্থাল পাথাল-বাধা-মিলনের চেনা ছক।  যে থিম চিরনবীন। ইউরোপে নায়কের সাথে মিলন হত না, তাকে যুদ্ধে যেতে হত। সেখান থেকে সে ফিরত না বা আহত হয়ে ফিরত। ভেতো বাঙালী প্রেমিক উত্তমকে যুদ্ধে যেতে হত না। তাহলে প্রেমে চ্যালেঞ্জ? বিরহ? সেটার ইজি ভিলেন আমাদের বর্ণবাদি, ধর্মীয় সমাজ। একটু ঘাঁটলেই দেখা যাবে এই ছকে সেরা মাস্টার শরৎ চাটুজ্জে। আর সেই শরৎ লাইনেই এসেছ উত্তম সুচিত্রার সাফল্য।

Monday, January 6, 2014

আম আদমি পার্টি

আম আদমি পার্টির এই উত্থানের দিনে ১৯৭৭-৮০ সালের সিপিএমের উত্থান এবং গনজাগরণের কথা মনে পড়েছে। কিসব ছিল সেই দিনগুলো। আজ যেমন সবাই ভাবছে আআপ ভারতের বুকে অন্যরাজনীতির সূচনা দেবে, তাদের নেতারা থাকবে কুঁড়ে ঘরে, সর্বত্যাগী-ইত্যাদি ইত্যাদি সব আশা নিয়ে বসে ছিল পশ্চিম বঙ্গের মানুষও। আমরা বাড়ি ঘর পাড়ায় শুনতাম গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা। সিপিএম নতুন দিনের সূচনা দেবে খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য। আজ আপকে নিয়ে যেমন প্রবল আবেগ সাধারন মানুষের-সেই দিন সিপিএমকে নিয়ে, জ্যোতি বসুকে নিয়েও ছিল সেই প্রবল প্রত্যাশা। কমিনিউস্টদের জীবনধারা ছিল আপের থেকেও সাধারন। বাই দি ওয়ে, সিপিএম এবং আআপের ম্যানিফেস্টোর মধ্যে খুব বেশী পার্থক্য নেই আজও। সাধারন জনতার হাতে ক্ষমতা দেওয়ার প্রক্রিয়াটা সিপিএমই শুরু করে-যদিও সেই সাধারন মানুষগুলিই ক্রমশ শাসক এবং শোষক গোষ্ঠির সহায়ক হয়ে ওঠে ক্রমশ।

তারপর সিপিএমের কি হয়েছে, কেন তারা আজ ইতিহাসের পথে আমরা সবাই জানি। সিপিএমের কেও না মানলেও বাস্তব হচ্ছে এই সিপিএম এই সমাজ এবং রাষ্ট্রকে কোন উন্নততর উৎপাদন ধারার জন্ম দিতে পারে নি। কৃষিতে অপারেশন বর্গার জন্য প্রথম দশ বছর কিছু উন্নত উৎপাদন এসেছে-কিন্ত শিল্পে পশ্চিম বঙ্গ ডুবেছে আরো বেশী। দেশের সব থেকে বেশী শিক্ষিত বেকার পশ্চিম বঙ্গে। ১৯৭৭ সালে সে রাজ্যটা শিল্প উৎপাদনে ছিল ৪ নাম্বারে ( মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং তামিলনাডুর পরেই) , ১৯৯০ শেষ হতে না হতেই সেই রাজ্যের সাথে তুলনা শুরু হয় বিহারের!! প্রথমের দিকে সিপিএম অবশ্য চেষ্টা করেছে- তন্তুজ, বেনেফিস ইত্যাদি নানান স্টেট কোয়াপরেটিভের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্ত পার্টি এবং রাজনীতির চাপে আস্তে আস্তে এই সংস্থাগুলি অসুস্থ হয়ে ওঠে। কেরালাতে কমরেডরা অবশ্য কোয়াপরেটিভ আন্দোলনে অনেক বেশী সফল। কোয়াপরেটিভ আন্দোলনের ব্য্ররথতা সিপিএমকে বাধ্য করে ভারতের ধনী বণিক গোষ্ঠিগুলিকে পশ্চিম বঙ্গে শিল্প স্থাপনে ডাকতে। ফলে সিপিএমের সাথে ভারতের অন্যান্য বুর্জোয়া পার্টিগুলির পার্থক্য এখন আর নেই।

সিপিএমের ম্যানিফেস্টো এবং অসম্পূর্ন কাজ এখন আম আদমি পার্টির হাতে। কিন্ত আম আদমি পার্টির ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট দিশা নেই। সিপিএমের তাও কোয়াপরেটিভের একটা দিশা ছিল বিকল্প উৎপাদন ব্যবস্থা হিসাবে। উৎপাদন ব্যবস্থার যদি পরিবর্তন না হয়, আম আদমি পার্টি খুব বড়জোর আমেরিকার ডেমোক্রাটির পার্টির মতন সেন্টার-লেফট পার্টি বা ভারতের কংগ্রেস মাইনাস গান্ধী পার্টির মতন আরেকটা পার্টি হবে। যাতে ভারতের কোন মৌলিক পরিবর্তন আশা সম্ভব নয়। মৌলিক পরিবর্তন আসে যদি উৎপাদন কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন হয়।

তবুও যদি আম আদমি পার্টি ভারতের রাজনীতির সংস্কার সাধন করে পার্টি প্রাইমারি চালু করার প্রথা শুরু করে, ভারত আরো ভাল গণতন্ত্র পেতে পারে.