Friday, September 10, 2010

যাদবপুরের ছাত্র রাজনীতির কুনাট্য


পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র রাজনীতিতে আবার একটি ফলক-মাইল ফলক না হলেও একটি বিচ্ছিন্ন পালক-যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্লোস সার্কিট টিভি বসানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ, ঘেরাও, ঘেও ঘেও ইত্যাদি। এগুলো গা সওয়া জিনিস-তাই এসব নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল না। মাথা গরম হল ছাত্রদের লম্বা কুযুক্তির বহরে। কারন নাগরিকদের সুষ্ঠ সচেতন যুক্তিবাদি মনই দেশের আসল ভবিষ্যত। সেটা যদি ভুল পথে চালনা করা চলতেই থাকে, এই বঙ্গের সলিল সমাধি যেমন চলিছে, তেমন চলিবেই। সেই জন্যেই দুকলম লিখতে বসলাম।

ছাত্রদের যুক্তি যাদবপুর ক্যাম্পাসে পানীয় জলের ব্যাবস্থা নেই, সুচিকিৎসার কোন বন্দোবস্ত নেই-নেই আরো অনেক কিছু। সেব কাটিয়ে সিকিউরিটির ওপর নজর কেন? কেন লাখ লাখ টাকার সিকিউরিটি মনিটর বসানো হবে?

প্রশ্নটি আপাত দৃষ্টিতে যৌত্বিক সন্দেহ নেই। কিন্ত আসুন এবার কিছু পালটা প্রশ্ন করি

১] ভারতের অধিকাংশ গ্রামেই পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত নেই-চিকিৎসার ব্যাবস্থাও নেই। তবুও ভারতের ডিফেন্স বাজেট ত্রিশ হাজার কোটি টাকার ওপরে। যার ভগাংশ খরচেই গ্রামের উন্নতি সম্ভব ছিল। তাহলে কেন এই গণতন্ত্র মেনে নিচ্ছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার ডিফেন্স বাজেট?

আদর্শবাদি দৃষ্টিতে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা অপচয়। বাস্তবে কি তাই? ভারতীয় মিলিটারির জন্যেই দেশটা অখন্ড হয়ে টিকে আছে। আসলে বাজে মানুষের অভাব নেই। এবং আমাদের সবাইকেই বাঁচতে হবে আগে। এবং সেই জন্যেই খাদ্য বা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সাথে সার্ভিলেন্স নিরাপত্তাও একটি অত্যাবশক প্রয়োজন হিসাবেই মানা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে। নিরাপত্তার দরকার নেই-কারন পৃথিবীতে কোন বাজে লোক নেই-এই ধরনের ইউটোপিয়ান চিন্তায় মানুষের হাততালি পাওয়া যেতে পারে। ঘরির কাঁটা চলে না-তাতে দম থাকে না।

২] ছাত্ররা যদি কতৃপক্ষের দ্বায়িত্ববোধের প্রশ্ন তোলে-তাহলেও প্রশ্ন উঠবে এইসব তথা কথিত ছাত্রদের প্রায় অনেকেই বিদেশে পাড়ি দেবে উন্নত জীবনের জন্যে। তারাও আগে তাদের নিজের ক্যারিয়ারের কাছে দ্বায়বদ্ধ। তাতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্ত এটাও তাহলে বুঝতে হবে কতৃপক্ষের প্রথম দ্বায়িত্ব হচ্ছে ক্যাম্পাসকে বহিরাগত উৎপাত থেকে রক্ষা করা। ওখানে যে মাওবাদিদের দৌরাত্ম তলায় তলায় অনেক বেড়েছে এব্যাপারে সন্দেহ আছে কি? কতৃপক্ষ কিংবা ছাত্রদের বাবা মায়েরাই বা কেন চাইবেন তাদের সন্তানদের মগজ ধোলাই দিয়ে জঙ্গল মহলে কেও পাঠাক? ছাত্র ছাত্রীদের প্রায় সবাই বাবা মায়ের হোটেলে
খাওয়া বিপ্লবী। জীবন সংগ্রামে তারা এখনো নামে নি।

ছাত্র জীবনে বিপ্লবী থেকে বহুজাতিক কোম্পানীর চাকুরে এই ত এদের কক্ষপথ। আজ যারা বিরোধিতা করছে, বছর দশ বাদে তারাই নিজেদের এই সব বাওয়ালী নিয়ে হাঁসাহাঁসি করবে। মধ্যেখান থেকে ক্যাম্পাসে আরো মাওবাদি ঢুকবে। এদের মধ্যে কিছু বোকা গাধা জঙ্গলমহল হয়ে পুলিশের জেল খেটে বাকি জীবনে " কিছুই হইলনা ঠিক" টাউপের এনজিও বিপ্লবী থেকে যাবে। এই ত হবে। এর বেশী কিছু ত না।

৩]
প্রযুক্তির গতিকে আটকানো যায় না। ইন্টারনেট কম্পিউটারের মতনই এখন ক্লোস সার্কিট মনিটরিং অপরিহার্য্য। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যেই। এটা ভুক্তভোগী না হলে বোঝা যায় না। ছমাস আগে পার্কিং লটে আমার গাড়িকে পেছন থেকে কেও মেরে বিশাল ড্যামেজ করে পালিয়েছিল। সিকিউরিটি ক্যামেরা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে সেই গাড়ির নাম্বার বার করে, আমি ক্ষতিপূরন পেয়ে গিয়েছিলাম। আবার সিকিউরিটি ক্যামেরা না থাকার জন্যে আমার গাড়ি ভাংচুর হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ এসেও কিছু করতে পারে নি। আমি অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রথম এবং প্রধান স্তম্ভ মোটেও পুলিস না। এই সব টিভি ক্যামেরাগুলিই বর্তমানে সব থেকে বেশী নিরাপত্তা দানে সক্ষম। সভ্যতার গতি সেই দিকেই। টিভি ক্যামেরা না বসানো মানে প্রায় দাবি করা আমাদের সমাজে পুলিশ লাগবে না। কারন নিরাপত্তার জন্যে পুলিশের থেকে ক্যামেরা অনেক বেশী কার্যকরী। পুলিশ ঘুঁশ খায়। ক্যামেরা খায় না। আসলে অভিজ্ঞতা ছারা এগুলো বোঝানো মুশকিল। আমেরিকাতে সর্বত্র পাবলিক প্লেসে ক্লোস সার্কিট টিভি থাকে। সুতরাং মাওবাদিদের প্রভাবিত একটি ক্যাম্পাসে এটির দরকার ছিল আরো বেশী।

৪]
ছাত্ররা এ প্রশ্নও তুলেছে, তাদের সাথে আলোচনা না করে কি করে কতৃপক্ষ টিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিল?
এটাও ঠিক বুঝলাম না। আমাদের আই আই টিতে সেনেটে ছাত্র মেম্বার থাকত। আমিও ছিলাম সেনেটে কিছুদিন। সব সিদ্ধান্ত ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনেই নেওয়া হত ( সম্মতিতে না)। তবে নিরাপত্তার মতন একটা বিষয়ে কেন ছাত্রদের মত নিতে হবে সেই যুক্তি আমার কাছে ক্লিয়ার না যখন খুব নিশ্চিত ভাবেই ক্যাম্পাসে মাওবাদিরা ঢুকেছে এবং সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের সিকিউরিটির ক্ষেত্রে রাজ্যবাসীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িত।

যাইহোক পশ্চিম বঙ্গের ছাত্র রাজনীতি বহুদিন ধরেই পুতুল নাচের ইতিকথা। পুতুলের সুতোগুলো থাকে রাজনৈতিক পার্টির দাদাদের কাছে। এক্ষেত্রে সামান্য ব্যাতিক্রম হচ্ছে, এদের নাচাচ্ছে কিছু মাওবাদি সহানুভূতিশীল সুশীল-যারা নিজেদের আখেরটি ঠিকই গুছিয়ে কিছু ছেলের ভবিষ্যত ধ্বংশ করতে উদ্যত।

ছাত্র বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ কিছু মাওবাদি ঘেঁসা সুশীলের এই সব হুজুগে প্ররোচনায় পা দেবেন না। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কেন-পৃথিবীর সব ক্ষেত্রেই কতৃপক্ষের সাথে মতের বিরোধ থাকবে-কতৃপক্ষও ক্ষমতা দেখানোর জন্যে অবিচার করবে-এসবই আমাদের পাওয়ার স্ট্রাকচারে বাস্তব। কারন আসল গণতন্ত্র এখনো আসে নি। কিন্ত সময় বদলাচ্ছে। উন্নততর মিডিয়া এবং প্রযুক্তির জন্যেই গণতন্ত্রের উন্নততর বিবর্তন সর্বত্র হচ্ছে। এই ভাবেই আস্তে আস্তে কতৃপক্ষ নামক অতীতটি আস্তাকুঁড়েতে নিক্ষেপিত হবে। কিন্ত তার জন্যে এখন থেকে কিছু মাওবাদিদের হাতের জিম্মি হওয়াটা আমার কাছে অর্থহীন বলেই মনে হয়। শোষনহীন উন্নততর সমাজ চাইলে নিজেকে আরো প্রস্তুত করতে হবে-অন্যলোকের কথায় নাচলে ভবিষ্যতে "কিছুই হইলো না ঠিক টাইপের" পস্তানো ছারা কিছুই পাবে না।

No comments: