Friday, September 3, 2010
জঙ্গল মহলে সিপিএমের অস্ত্র এবং ভারতীয় সংবিধান
জঙ্গল মহলের সশস্ত্র পুনঃদখল থেকে আমার এই বৃত্তীয় ভাবনার সূত্রপাত।
সিপিএম গরবেতা স্টাইলে একদম বন্দুক দিয়েই আবার দখল করে নিচ্ছে তাদের মাটি। কুশীলব সেই সুশীল মন্ত্রী সুশান্ত। পার্টির ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অপার আর্শীবাদে তিনি আশ্রিত। রাজ্য সরকার মদত দিচ্ছে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থানে-যেমন তারা আগেও দিয়েছে গরবেতা থেকে নন্দীগ্রামে। পশ্চিম বঙ্গে ভারতীয় সংবিধান আছে কি নেই-সেই যুক্তির অবতারনা এখন অর্থহীন-আমার ধারনা সিপিএমের গত চৌত্রিশ বছরের শাসন কালেও, তা অর্থহীনই ছিল। তাই নতুন করে সিপিএমকে শাপান্ত করতে এই লেখা না।
সিপিএমের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে মাওবাদিদের সাথে হাত মিলিয়ে এই জেলাগুলি থেকে সিপিএমকে উচ্ছেদ করতে মাওবাদি-তৃণমূল ষড়যন্ত্রও অসাংবিধানিক। কারন তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ-আবার তারাই মদত দিচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধি সন্ত্রাসী শক্তিকে। মাওবাদিদের বন্দুকের নলে সিপিমের পোড়া মাটিও এখন থকথকে কাদা। তাতেই ফুটছে ঘাসফুল। সুতরাং কাস্তে হাতে সাবাড় কর সেই ফুল!
এর মধ্যে আছে রাজ্যবাসীরা। সেই সমাজ, যার মধ্যে সিপিএম এবং সিপিএম বিরোধি পোলারাইজেশন তীব্র। অথবা এমনই রাজনীতি এই রাজ্যের-যে এই সুতীব্র বিভেদকে বাঁচিয়ে রেখেই টিকে থাকতে চাইছে সিপিএম বা তার বিরোধী শক্তি তৃণমূল। এমন এক দুর্ভাগা রাজ্য, যেখানে উন্নয়ন বা দুর্নীতি রাজনীতির মূলবৃত্তের বাইরে। এখানে রাজনৈতিক টাইফুনের এপিসেন্টার হত্যা-আরো বেশী রাজনৈতিক হত্যা।
খুব সরল ভাষায় ব্যাপারটা এই রকম। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসে সিপিএম এবং সাথে সাথেই তারা এক পার্টি ভিত্তিক সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে থাকে পশ্চিম বঙ্গে। বিরোধিদের দুর্বলতার সুযোগে সরকার, পুলিশ, শিক্ষা-সব কিছুতেই সরকারের ওপরে কতৃত্ব থাকে পার্টির-যা সাবেকি কমিনিউস্ট শাসিত দেশগুলিতে ছিল সাংবিধানিক আইন। কিন্ত ভারতের সংবিধানেত সরকারের ওপরে পার্টির স্থান না-সুতরাং পার্টি বনাম ভারতীয় সংবিধানের বিভেদটা পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের শাসন কালে নিত্যদিনের ঘটনা। এ্ররাজ্যে বহুদিন থেকেই পার্টির ফয়সালার ওজন আদালতের থেকে বেশী।
তৃণমূলের জন্ম সময়ের নিয়ম মেনে। এ রাজ্যে পুলিশ সিপিএমের গা ছোঁবে না এটা সবাই জানে বলেই-বিরোধি পক্ষ বন্দুক ছারা কথা বলে না। বাঁচতে ত হবে আগে। সুতরাং লালগড় থেকে নন্দীগ্রামে সিপিএমকে তাড়াতে বন্দুক লেগেছে-ব্যালটে ব্যাপারটা প্রতিফলিত হয়েছে পরবর্ত্তীকালে। ব্যালটের জোর বুলেটের থেকে বেশী। তেমনটা হইয়াও হইতেছে না-কারন ক্ষমতার খেলায় কেও কেও টি-২০ স্টাইলে ছক্কা মারা বেশী পছন্দ করে। মাওবাদিদের বন্দুক তৃণমূলের সামনে সেই ললিপপ ঝুলিয়ে দেয়-ফলত তৃণমূল মাওবাদি একটি অদৃশ্য সিম্বায়োসিসের ট্রপিজ সার্কাস আমরা গত দুবছর থেকেই দেখছি।
তাহলে গত চোত্রিশ বছরের আসল খেলাটা আমরা কি দেখলাম? সিপিএম কিছু স্বার্থান্বেশী ক্ষমতালোভি পকেট তৈরী করল-যারা কংগ্রেসের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি থেকে ক্ষমতা হাতিয়ে নিজেদের পারিবারিক তালুকদারি চালু করে দিল।
রাজনৈতিক ক্ষমতাই ছিল এদের নব্য অর্থের উৎস-ফলে ক্ষমতা টেকাতে এরা খুন, রাহাজানি, ব্যালট ছিনতাই মিডিয়াতে অপপ্রচার-সব কুকীর্তিই করেছে। অবশ্য ক্ষমতা হচ্ছে জ্যোষ্ঠের উত্তাপ-যাতে এঁচোর ও পাকে। সিপিএমের পচন ছিল কালের বিধি বা ইতিহাসের অমোঘ গতি। পাকা আমে যেমন মাছি ভন ভন করে-সিপিএমের চারিদিকে থিক থিক করত মাছিরা।
সমস্যা হচ্ছে মাছিদের সম্পর্ক পাকা আমের সাথে, আমের বীজের সাথে না। ফলে যেখানে আম পাকবে-মাছি সেখানে বসবেই। এটাই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের নিয়ম। ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র যদ্দিন থাকবে-ক্ষমতার জন্যে এই সার্কাস এবং রাজনৈতিক মৃত্যুলীলাও চলবে। আমেরিকাতে বা উন্নত দেশের গণতন্ত্রের রাজনীতিতে এমন হত্যালীলা বিরল-কারন রিসোর্স ক্রাইসিস নেই। ফলে এ গণতন্ত্রে ল্যাং চলে, লাঠি না। আর আমাদের দেশটা হচ্ছে আদি অকৃত্রিম-ডারুইনিয়ান জঙ্গল। বর্ধিত জনজংখ্যার চাপই এর কারন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে হত্যালীলা, বন্দুকবাজি বা সংবিধানকে বৃদ্ধাষ্ঠুঙ্গ দেখানো সব কিছুই ইতিহাসে আমরা সর্বত্র দেখি-কিন্ত একটা দেশের উন্নতির সাথে এটা কমে এসে আস্তে আস্তে যুদ্ধটা মিডিয়া বা প্রচার যুদ্ধে পরিণত হয়। সেটা এখানেও হচ্ছে-কিন্ত রাজনৈতিক হত্যা কমার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। রাজনীতিতে বাহুবলীদের জয়জয়াকার। বুদ্ধ বিমান মমতা সবাই তাদের ওপরই বেশী নির্ভর করেন। প্রকাশ্যেই সবাই সেটাই দেখছে। আবার কেও কিছু বলতেও সাহস করছে না। কারন হাসপাতাল থেকে শিক্ষা-সব কিছুতেই পার্টির 'ফেবার
লাগে।
ফলে কে বাঁধিবে সেই ঘন্টা এই বঙ্গে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
এতটাই সহজ হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মেরুকরণের ব্যাখ্যা। এসি ঘরে বসে এই গুলতানি টা মারাই যায়। রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের যে প্রয়াস টা বামদলগুলি শুরু করেছিল তার কোন উল্লেখ না করেই সিপিএম ক্ষমতা পেয়ে গেল। মানে কংগ্রেস ক্ষমতা দিয়েদিল???? বাঃ! পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্তগুলি কি আলিমুদ্দিন থেকে লিখিত আকারে যায় নাকি? কেন এইসব মিথ্যা প্রচার???? বাজে লেখা, প্রকৃত গ্রামে গিয়ে বুঝতে হবে কিভাবে এই ক্ষমতা সিপিএম পেয়েছিল? তারপর লিখ.........।
Post a Comment