Thursday, September 30, 2010

অবাক অযোধ্যা, নির্বাক করলে তুমি


বহু দুঃস্বপ্নের রাতের পর, রাম জন্মভূমি বনাম বাবরি মসজিদ মামলারা রায় আমরা পেলাম। গত দুদিন গোটা ভারত ছিল থমথমে- সর্বত্র পুলিশ মিলিটারি-এস এম এসে নিশেধাজ্ঞা-সব কিছু লাফিয়ে, অযোধ্যা মামলার রায় দিল লখণৌ হাইকোর্ট।
(রায়টি অনলাইন এখান থেকে সবাই দেখে নিন।)

বিতর্কটি কি? খুব সিরিয়াসলি পলিটিক্যালি কারেক্ট ভাবে বললে ১৯৯২ সালে হিন্দুত্ববাদিদের হাতে ধ্বংশ প্রাপ্ত বাবরি মসজিদটির জমি নিয়ে গত ১৫০ বছর ধরে ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। বৃটিশরা বুদ্ধিমান জাত-তাই দাঙ্গা ঠেকাতে ১৮৫৯ সালে ফৈজাবাদের কালেক্টর মসজিদের জমিতে প্রাচীর দিয়ে হিন্দু আর মুসলিমদের উপাসনা স্থান পৃথক করেন। এই ভাবেই নিরুপদ্রব ভাবে চলেছে নব্বইটি বছর-যদিও মাঝে মাঝেই মন্দিরওয়ালা এবং মসজিদওয়ালাদের মধ্যে গন্ডোগল এবং কোর্ট কাছারি লেগেই থাকত। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আসল ঘটনা শুরু। কিছু হিন্দুত্ববাদি সংগঠন হঠাৎ করে রাতের বেলায় মসজিদের মধ্যে রামলীলা ঢুকিয়ে দিয়ে এলাহাবাদ কোর্টে মামলা করে, ঐ স্থল হিন্দুদের উপাসনার জন্যে খুলে দিতে হবে। নেহেরু এই সব উটকো ধার্মিক মালগুলোকে একদম পাত্তা দিতেন না। ফলে উনি কালেক্টরকে বললেন ঐ জায়গাটাই তালা ঝুলিয়ে দাও। কাউকেই উপাসনা করার নামে বাঁদরামো করতে দেবে না সরকার। ফলে সবাই ভুলেই গিয়েছিল বাবরি মসজিদের কথা। কিন্ত নেহেরুর নাতি রাজীব গান্ধী দাদুর মতন বিচক্ষন ছিলেন না। শাহবানু মামলায় কংগ্রেস মুসলিম মৌলবাদিদের নির্লজ্জ তোষন করাতে হিন্দুরা যখন অসন্তুষ্ট, তাদের মন টানতে ১৯৮৬ সালে উনি মসজিদের তালা খুলে দিলেন, হিন্দুদের উপাসনার জন্যে। কোন দরকার ছিল না-এই মরা সাপটিকে জ্যান্ত করার। কিন্ত রাজীবের অভিজ্ঞতা ছিল না নেহেরুর মতন-ফলে আধুনিক ভারতের সব থেকে কলঙ্কময় নদর্মার জলকে খালকেটে উনিই নিয়ে আসলেন। এবং এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত্বও করলেন-বিজেপি
১৯৮৪ সালে দুটী আসন থেকে ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ৯০ টি আসন পেল। বাঘের পিঠে চাপতে গিয়ে, বাঘই খেল রাজীবকে-উনি গদিচ্যুত হলেন। বিজেপি ক্ষমতা পেল আংশিক ভাবে। ভারতের কমিনিউস্ট-হিন্দুইস্ট সরকার একজোটে চলল ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। উত্তর প্রদেশে কন্যান সিং সরকার ক্ষমতায় এল-পরিস্কার হল বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজ। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে করসেবকরা যখন মসজিদ ভাঙছে-কল্যানের পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। তার পরেই এই জমিটা নিয়ে নিল সরকার এবং এই মামলার সূত্রপাত। এই দুই একর জমি কার?

রামের কোন ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নেই। স্পাইডার ম্যান, ফ্যান্টমের মত তিনি এক পৌরানিক সুপার ম্যান, যাকে হিন্দুরা খুব মানে। রামের জন্মস্থান অযোধ্যা বলা আর স্পাইডারম্যানের জন্মস্থান নিউয়ার্ক বলার মধ্যে পার্থক্য নেই। আমেরিকার অনেক শিশু যেমন মানে স্পাইডারম্যান ম্যানহ্যাটনে থাকেন-থাকতেই হবে-হিন্দুরাও মানে রামের জন্ম অযোধ্যায় কারন রামায়ন অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে।

এবার ধরুন কোন স্পাইডারম্যান ভক্ত দাবি করে বসল নিউইয়ার্কের এই বাড়িটিতে স্পাইডারমানের জন্ম, তাই বাড়িটি ভারা দেওয়া যাবে না, স্পাইডার ম্যান ভক্তরা সেখানে পুজো দিতে আসবেন। দাবি করলে ক্ষতি নেই-ধরুন মামলা করল। এবার কোর্ট কি করবে?

ঘাবরাবেন না। এর উত্তর ভারতের মহামান্য বিচারপতিরা গতকালই দিয়েছে-সেটা নিয়ে হাঁসাহাসি একটু পরে করব। তার আগে আমরা জানতে চাইব-হিন্দুদের অত রাগ কেন ঐ মসজিদের ওপর?

মসজিদটি কে বানিয়েছিল কেও জানে না-বাবারনামায় তার উল্লেখ নেই। কালকের রায় ও স্বীকার করেছে মসজিদটির জন্ম রহস্যর উদ্ঘাটন হয় নি। কিন্ত হিন্দুদের দাবী ওটিই ছিল রামজন্মভূমি মন্দির-অর্থাৎ ওখানেই রাম জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ঠিক ওইখানেই। এবং বাবরের সাগরেদ ঐ মন্দির ধ্বংশ করে মসজিদ স্থাপন করে। এর উৎস জেসুইট পাদ্রী জোসেফ স্টিফেন ফেলারের ভ্রুমন কাহিনী যা প্যারিসে তিনি ছাপিয়েছিলেন ১৭৬৮ সালে।

২০০৩ সালে পুরাতাত্ত্বিক খননে পরিস্কার হয় ওখানে একটি বিরাট মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। তারা যা হাইকোর্টকে জানিয়েছেন তা এই রকমঃ

Period 1000BC to 300BC:

The findings suggest that a Northern Black Polished Ware (NBPW) culture existed at the mosque site between 1000 BC and 300 BC. A round signet with a legend in Asokan Brahmi , terracotta figurines of female deities with archaic features, beads of terracotta and glass, wheels and fragments of votive tanks have been found.[6]

Sunga Period. 200 BC:

Typical terracotta mother goddess, human and animal figurines, beads, hairpin, pottery (includes black slipped, red and grey wares), and stone and brick structures of the Sunga period have been found.[6]

Kushan period. 100-300 AD:

Terracotta human and animal figurines, fragments of votive tanks, beads, bangle fragments, ceramics with red ware and large-sized structures running into twenty-two courses have been found from this level.[6]

Gupta era (400-600 AD) and post-Gupta era:

Typical terracotta figurines, a copper coin with the legend Sri Chandra (Gupta), and illustrative potsherds of the Gupta period have been found. A circular brick shrine with an entrance from the east and a provision for a water-chute on the northern wall have also been found.[6]

11th to 12th century:

A huge structure of almost fifty metres in north-south orientation have been found on this level. Only four of the fifty pillar bases belong to this level. Above this lied a structure with at least three structural phases।

কতগুলো ব্যাপার প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষনে পরিস্কারঃ

১। ওখানে নানান মন্দির ছিল খৃষ্টপূর্বাব্দ হাজার সাল থেকেই। কিন্ত কোনটাই রাম মন্দির না-বিষ্ণু শিব ইত্যাদি জনপ্রিয় হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ওখানে ছিল। সুতরাং ওখানে রাম জন্মভূমির মন্দির ছিল, এই দাবী টিকছে না।

২| যেটা পরিস্কার না-সেটা হচ্ছে মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ হয়েছে না, ধ্বংশাবশেষের ওপর মসজিদ হয়েছে। কোন প্রমান্য ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে না।

তা বিচারকরা [২] পয়েন্ট নিয়ে কি বললেন?

মুসলিম বিচারক খান সাহেব বললেন, মন্দির ভেঙে মসজিদ হয় নি। দুই হিন্দু বিচারক লিখেছেন, প্রমানাদি ঘেঁটে তারা নিশ্চিত, মন্দির ভেঙেই মসজিদ হয়েছে। বিচারকরা এত সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস হচ্ছে না? রায়টি পড়ে নিন।

যেখানে আদালাতের মহামান্য বিচারকরাই এত সাম্প্রদায়িক, সেখানে সাধারন জনগনের কাছ থেকে কোন অসাম্প্রদায়িকতা আশা করব?

এবার আসুন সব থেকে মজার ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি। আসলে সেই জন্যেই এই লেখা।

হিন্দুরা যে দাবী জানাল ঐ বাবরি মসজিদ, তাদের প্রাণপ্রিয় রামের জন্মস্থল, সেটা নিয়ে মহামান্য বিচারকদের বক্তব্য কি?
জাস্টিস ভীর শর্মার বক্তব্য শুনুনঃ

1. Whether the disputed site is the birth place of Bhagwan
Ram
?
The disputed site is the birth place of Lord Ram. Place of
birth is a juristic person and is a deity. It is personified as the
spirit of divine worshipped as birth place of Lord Rama as a
child.
Spirit of divine ever remains present every where at all
times for any one to invoke at any shape or form in accordance
with his own aspirations and it can be shapeless and formless
also.

পরিস্কার হচ্ছে না?
তাহলে উদাহরন দিচ্ছি। ধরুন স্পাইডারম্যান ফ্যান ক্লাব দাবী করল ম্যানহাটনের ওমুক স্ট্রীটে ৬৭৮ নাম্বার বাড়িটাতে স্পাইডারম্যানের জন্ম। তাহলে জাস্টিস শর্মার রায়টা এরকম-

এই দাবি না মানার কোন কারন নেই। কারন স্পাইডারম্যান সর্বভূতে বিরাজমান এবং বিশ্বাসীরা যদি সেই বাড়িটিকেই বিশ্বাস করে, তাহলে সেটিই সত্য!

আমি উনার রায়টা পড়ে হাঁসতে হাঁসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম। যদিও কোর্ট বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করে হিন্দু মুসলিম এবং এক সেবাইত সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দিচ্ছে- কারন উনারা বলছেন জমির ওপর কারুর দাবীই আইন সম্মত না। কেওই তাদের দাবী প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি-তাই মন্দের ভাল হিসাবে মিলেমিশে চল। অর্থাৎ ১৮৫৯ সালে বৃটিশদের রায়ই বজার থাকল। জামি ভাগ করে "উপভোগ" কর।

তাহলে ব্যাপারটা কেমন হল? স্পাইডারম্যান ( রাম) এবং সুপারম্যান ( আল্লা) এর ফ্যান ক্লাবরা একটা জমি নিয়ে মারামারি করছিল-যে ওই জমিতে সঙ্গত অধিকার তাদের। কোর্ট বললো, জমিতে কারুরই আইনত অধিকার নেই-তাই জমিটা ভাগ করে স্পাইডারম্যানের পূজো কর আর সুপারম্যানের জন্য নামাজ পড়। বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে বড়রা যা করে আর কি!

কিন্ত রাম আর রহিমের এই নাবালকদের ছেলেমানুষিতে মাথা হেঁট হচ্ছে ভারতের বা ভারতবাসী হিসাবে আমাদের। ভারতে পৃথিবীর সব থেকে বেশী নিরক্ষর, গরীব এবং ভিখিরী বাস করে। এর পরেও গত দুই দশকে অসংখ্য তরুন ভারতবাসীর প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং ব্যাবসাতে ভারতের অগ্রগতি অভাবনীয়-এবং বিশ্বের এই মুহুর্তে তৃতীয় শক্তিশালী দেশ হিসাবে ভারত স্বীকৃত। প্রতিটি তরুন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার যত পরিশ্রম করে এই দেশটাকে উচ্চাসনে টেনে নিয়ে চলেছে , আমাদের সুবিধাবাদি রাজনীতির ঘা খেয়ে দেশটা ততটা পেছনেও হাঁটছে। আজকের রায় তার প্রমান।

যে দেশে খাদ্যের বিশাল সংকট-পরিবেশ প্রায় ধ্বংশ -সে দেশের রাজনীতি যদি খাদ্য বা পরিবেশের বদলে স্পাইডারম্যান এবং সুপারম্যান ফ্যানক্লাবের মারামারি নিয়ে বিবর্তিত হয়, আমাদের কপালে দুঃখ আছে।

Sunday, September 26, 2010

রাজা সেনের বনাম রবীন্দ্রনাথের ল্যাবেরেটরী-সিনেমা রিভিউ


ল্যাবেরেটরি রবীন্দ্রনাথের শেষ বয়সের লেখা। ল্যাবেরেটরীর রবীন্দ্রনাথ একটু অচেনা-গল্পটিতেও একাধকি দ্বন্দের উপস্থিতিতে মূল বক্তব্য বেশ জটিল। এ গল্পটাই এমন যে দশজন পরিচালক দশটি ল্যাবেরেটরি বানালে দশটিই আলাদা সিনেমা হবে। নির্ভর করবে পরিচালক কোন রবীন্দ্রনাথকে গ্রহন করেছেন।

রাজাসেন যে এই দুর্বোধ্য অথচ চিত্তাকর্ষক গল্পটিকে চিত্রায়নের দ্বায়িত্ব নিয়েছেন, তাতে তাকে প্রথমেই সাধুবাদ জানাই। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা এবং চিত্রায়ন ও খুব ভাল। বাংলা সিনেমাতে এত উন্নত টেকনিক্যাল কাজ আগে হয় নি। রঞ্চিত মল্লিক, সব্যসাচী চ্যাটার্জী, অর্পিতা, রবীনা ট্যান্ডন চরিত্রগুলির সাথে মিশে গেছেন-সাহেব চ্যাটার্জি চরিত্রটি বুঝেছেন কি না, সেই নিয়ে একটু সমস্যা আছে। তবে খুব খারাপ কিছু না-রেবতীভূষন হিসাবে তাকে পাশ মার্কই দেব।

এবার সিনেমার প্রসঙ্গে আসি। প্রতিটি সাহিত্য সৃষ্টির একটি ঐতিহাসিক পটভূমিকা আছে। ল্যাবেরেটরির পটভূমিকা বিংশ শতাব্দির প্রথম দিকের কোলকাতা-যখন সেখানে বিজ্ঞান চর্চার জোয়ার এসেছিল। মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস, স্যার রামনদের মতন বিজ্ঞানীরা কোলকাতার ওয়ার্কশপ থেকে যন্ত্র বানিয়ে বিশ্বের বিজ্ঞানে সেরা স্থান দখল করেছিলেন। সেই বিজ্ঞান চর্চার মধ্যে পরাধীনতার গ্লানি দূর করার এক বিশাল জাতিয়তাবাদি মনোভাব কাজ করেছে। নন্দকিশোর সেই বিজ্ঞান সমাজের উজ্জ্বল প্রতিনিধি। রাজাসেনের নন্দকিশোরের সাথে রবীন্দ্রনাথের নন্দকিশোরের পার্থক্য নেই। কিন্ত সমস্যা আছে গল্পের নায়িকা সোহিনীর চিত্রায়নে।

এই সোহিনী চরিত্রটি রবীন্দ্রনাথের ইন্টেলেকচুয়াল মানস কন্যা। সে জানে ধর্ম পুরুষতান্ত্রিক-সে আমাদের লোকায়েত সংস্কৃতির পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে সজাগ-অথচ তার বিরুদ্ধে সে বিদ্রোহ করবে না। বরং দরকার হলে সেও ধর্মকে কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য সিদ্ধি করবে। এই বিধবাটির দায়বদ্ধতা তার প্রয়াত স্বামীর জীবনাদর্শের প্রতি-তার সৃষ্ট ল্যাবেরেটরী যার মূর্ত প্রতীক।
সোহিনীর চরিত্রের শেষের দিকটি রাজাসেন ঠিকই ধরেছেন-কিন্ত সমাজ সংস্কার এবং ধর্ম নিয়ে যে রবীন্দ্র সোহিনী,
তা আরো বেশী জটিল। রাজাসেন সেই জটিলতা কাটিয়ে চরিত্রটিকে কিছুটা সরল করেছেন হয়ত মার্কেটের কথা ভেবেই। বিশেষত গল্পটিতে আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতা , ধর্মের নানান রূপ নিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য ডায়ালোগ আছে-পরিচালক সেসব বিতর্ক এরিয়ে গেছেন। গিয়ে সোজা ফোকাস টেনেছেন মা বনাম মেয়ের দ্বন্দে-সেই দ্বন্দটার ভিত্তি কিন্ত একটা অযৌত্বিকতা-তা হচ্ছে সোহিনীর কাছে ঐ ল্যাবেরটরীটাই তার জীবনের একমাত্র খুঁটি। কবির কাছে এটি অস্তিত্ববাদি বনাম যুক্তিবাদি দ্বন্দ। রাজা সেন এটি সোহিনীর মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। যদিও গল্পটিতে এই ব্যাপারে অধ্যাপক মম্মথ চৌধুরীর ভূমিকা ছিল সর্বাধিক।

রবীন্দ্রনাথের গল্পে দুটো ফ্লো আছে-একটি অধ্যাপক চৌধুরী বনাম সোহিনী, অন্যটি সোহিনী বনাম নীলা। রাজাসেন দ্বিতীয়টি নিয়ে যত্নবান -প্রথমটিতে গল্পের অনেক ডায়ালোগ কেটেছেন। হয়ত সময়ের জন্যে। তবে এই জন্যে রবীন্দ্রানুরাগীরা অসন্তুষ্ট হতে পারেন।

তবে বলিউড শরৎচন্দ্রের উপন্যাস গুলোর যে ভর্ত্তা বানায় রাজা সেন তা করেন নি। এটা যথেষ্ট সিরিয়াস সিনেমা।
আমি সস্ত্রীক ভালোই উপভোগ করেছি। সিনেমাটিক লিবার্টি রাজাসেন যে খুব একটা বেশী নিয়েছেন তাও না। আসলেই গল্পটা এত জটিল অতগুলো ডাইমেনশন একটা সিনেমাতে নিলে অনেকের ভাল নাও লাগতে পারত। সেই অর্থে বাজার এবং রবীন্দ্রনাথ এই দুই ব্যালান্সিং বিমের ওপর টিপে টপে পা রেখে রাজা সেন উৎরেছেন। এবং আমার বেশ ভালোই লেগেছে।

সিনেমাটি গোটা বিশ্বের দর্শক ডিঙ্গোরাতে ( www.dingora.com) দেখতে পারেন। অনলাইন নেটফ্লিক্সের চেয়েও ভাল ভিডিও কোয়ালিটি ডিঙ্গোরাতে। বাংলা সিনেমার এত ভাল অনলাইন ভিডীও ডিঙ্গোরা দেখাচ্ছে-আমি বাঙালী হিসাবে কৃতজ্ঞ।

Friday, September 10, 2010

যাদবপুরের ছাত্র রাজনীতির কুনাট্য


পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র রাজনীতিতে আবার একটি ফলক-মাইল ফলক না হলেও একটি বিচ্ছিন্ন পালক-যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্লোস সার্কিট টিভি বসানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ, ঘেরাও, ঘেও ঘেও ইত্যাদি। এগুলো গা সওয়া জিনিস-তাই এসব নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল না। মাথা গরম হল ছাত্রদের লম্বা কুযুক্তির বহরে। কারন নাগরিকদের সুষ্ঠ সচেতন যুক্তিবাদি মনই দেশের আসল ভবিষ্যত। সেটা যদি ভুল পথে চালনা করা চলতেই থাকে, এই বঙ্গের সলিল সমাধি যেমন চলিছে, তেমন চলিবেই। সেই জন্যেই দুকলম লিখতে বসলাম।

ছাত্রদের যুক্তি যাদবপুর ক্যাম্পাসে পানীয় জলের ব্যাবস্থা নেই, সুচিকিৎসার কোন বন্দোবস্ত নেই-নেই আরো অনেক কিছু। সেব কাটিয়ে সিকিউরিটির ওপর নজর কেন? কেন লাখ লাখ টাকার সিকিউরিটি মনিটর বসানো হবে?

প্রশ্নটি আপাত দৃষ্টিতে যৌত্বিক সন্দেহ নেই। কিন্ত আসুন এবার কিছু পালটা প্রশ্ন করি

১] ভারতের অধিকাংশ গ্রামেই পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত নেই-চিকিৎসার ব্যাবস্থাও নেই। তবুও ভারতের ডিফেন্স বাজেট ত্রিশ হাজার কোটি টাকার ওপরে। যার ভগাংশ খরচেই গ্রামের উন্নতি সম্ভব ছিল। তাহলে কেন এই গণতন্ত্র মেনে নিচ্ছে ত্রিশ হাজার কোটি টাকার ডিফেন্স বাজেট?

আদর্শবাদি দৃষ্টিতে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা অপচয়। বাস্তবে কি তাই? ভারতীয় মিলিটারির জন্যেই দেশটা অখন্ড হয়ে টিকে আছে। আসলে বাজে মানুষের অভাব নেই। এবং আমাদের সবাইকেই বাঁচতে হবে আগে। এবং সেই জন্যেই খাদ্য বা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার সাথে সার্ভিলেন্স নিরাপত্তাও একটি অত্যাবশক প্রয়োজন হিসাবেই মানা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে। নিরাপত্তার দরকার নেই-কারন পৃথিবীতে কোন বাজে লোক নেই-এই ধরনের ইউটোপিয়ান চিন্তায় মানুষের হাততালি পাওয়া যেতে পারে। ঘরির কাঁটা চলে না-তাতে দম থাকে না।

২] ছাত্ররা যদি কতৃপক্ষের দ্বায়িত্ববোধের প্রশ্ন তোলে-তাহলেও প্রশ্ন উঠবে এইসব তথা কথিত ছাত্রদের প্রায় অনেকেই বিদেশে পাড়ি দেবে উন্নত জীবনের জন্যে। তারাও আগে তাদের নিজের ক্যারিয়ারের কাছে দ্বায়বদ্ধ। তাতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্ত এটাও তাহলে বুঝতে হবে কতৃপক্ষের প্রথম দ্বায়িত্ব হচ্ছে ক্যাম্পাসকে বহিরাগত উৎপাত থেকে রক্ষা করা। ওখানে যে মাওবাদিদের দৌরাত্ম তলায় তলায় অনেক বেড়েছে এব্যাপারে সন্দেহ আছে কি? কতৃপক্ষ কিংবা ছাত্রদের বাবা মায়েরাই বা কেন চাইবেন তাদের সন্তানদের মগজ ধোলাই দিয়ে জঙ্গল মহলে কেও পাঠাক? ছাত্র ছাত্রীদের প্রায় সবাই বাবা মায়ের হোটেলে
খাওয়া বিপ্লবী। জীবন সংগ্রামে তারা এখনো নামে নি।

ছাত্র জীবনে বিপ্লবী থেকে বহুজাতিক কোম্পানীর চাকুরে এই ত এদের কক্ষপথ। আজ যারা বিরোধিতা করছে, বছর দশ বাদে তারাই নিজেদের এই সব বাওয়ালী নিয়ে হাঁসাহাঁসি করবে। মধ্যেখান থেকে ক্যাম্পাসে আরো মাওবাদি ঢুকবে। এদের মধ্যে কিছু বোকা গাধা জঙ্গলমহল হয়ে পুলিশের জেল খেটে বাকি জীবনে " কিছুই হইলনা ঠিক" টাউপের এনজিও বিপ্লবী থেকে যাবে। এই ত হবে। এর বেশী কিছু ত না।

৩]
প্রযুক্তির গতিকে আটকানো যায় না। ইন্টারনেট কম্পিউটারের মতনই এখন ক্লোস সার্কিট মনিটরিং অপরিহার্য্য। নিজেদের নিরাপত্তার জন্যেই। এটা ভুক্তভোগী না হলে বোঝা যায় না। ছমাস আগে পার্কিং লটে আমার গাড়িকে পেছন থেকে কেও মেরে বিশাল ড্যামেজ করে পালিয়েছিল। সিকিউরিটি ক্যামেরা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে সেই গাড়ির নাম্বার বার করে, আমি ক্ষতিপূরন পেয়ে গিয়েছিলাম। আবার সিকিউরিটি ক্যামেরা না থাকার জন্যে আমার গাড়ি ভাংচুর হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ এসেও কিছু করতে পারে নি। আমি অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রথম এবং প্রধান স্তম্ভ মোটেও পুলিস না। এই সব টিভি ক্যামেরাগুলিই বর্তমানে সব থেকে বেশী নিরাপত্তা দানে সক্ষম। সভ্যতার গতি সেই দিকেই। টিভি ক্যামেরা না বসানো মানে প্রায় দাবি করা আমাদের সমাজে পুলিশ লাগবে না। কারন নিরাপত্তার জন্যে পুলিশের থেকে ক্যামেরা অনেক বেশী কার্যকরী। পুলিশ ঘুঁশ খায়। ক্যামেরা খায় না। আসলে অভিজ্ঞতা ছারা এগুলো বোঝানো মুশকিল। আমেরিকাতে সর্বত্র পাবলিক প্লেসে ক্লোস সার্কিট টিভি থাকে। সুতরাং মাওবাদিদের প্রভাবিত একটি ক্যাম্পাসে এটির দরকার ছিল আরো বেশী।

৪]
ছাত্ররা এ প্রশ্নও তুলেছে, তাদের সাথে আলোচনা না করে কি করে কতৃপক্ষ টিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিল?
এটাও ঠিক বুঝলাম না। আমাদের আই আই টিতে সেনেটে ছাত্র মেম্বার থাকত। আমিও ছিলাম সেনেটে কিছুদিন। সব সিদ্ধান্ত ছাত্র প্রতিনিধিদের সামনেই নেওয়া হত ( সম্মতিতে না)। তবে নিরাপত্তার মতন একটা বিষয়ে কেন ছাত্রদের মত নিতে হবে সেই যুক্তি আমার কাছে ক্লিয়ার না যখন খুব নিশ্চিত ভাবেই ক্যাম্পাসে মাওবাদিরা ঢুকেছে এবং সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের সিকিউরিটির ক্ষেত্রে রাজ্যবাসীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিও জড়িত।

যাইহোক পশ্চিম বঙ্গের ছাত্র রাজনীতি বহুদিন ধরেই পুতুল নাচের ইতিকথা। পুতুলের সুতোগুলো থাকে রাজনৈতিক পার্টির দাদাদের কাছে। এক্ষেত্রে সামান্য ব্যাতিক্রম হচ্ছে, এদের নাচাচ্ছে কিছু মাওবাদি সহানুভূতিশীল সুশীল-যারা নিজেদের আখেরটি ঠিকই গুছিয়ে কিছু ছেলের ভবিষ্যত ধ্বংশ করতে উদ্যত।

ছাত্র বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ কিছু মাওবাদি ঘেঁসা সুশীলের এই সব হুজুগে প্ররোচনায় পা দেবেন না। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কেন-পৃথিবীর সব ক্ষেত্রেই কতৃপক্ষের সাথে মতের বিরোধ থাকবে-কতৃপক্ষও ক্ষমতা দেখানোর জন্যে অবিচার করবে-এসবই আমাদের পাওয়ার স্ট্রাকচারে বাস্তব। কারন আসল গণতন্ত্র এখনো আসে নি। কিন্ত সময় বদলাচ্ছে। উন্নততর মিডিয়া এবং প্রযুক্তির জন্যেই গণতন্ত্রের উন্নততর বিবর্তন সর্বত্র হচ্ছে। এই ভাবেই আস্তে আস্তে কতৃপক্ষ নামক অতীতটি আস্তাকুঁড়েতে নিক্ষেপিত হবে। কিন্ত তার জন্যে এখন থেকে কিছু মাওবাদিদের হাতের জিম্মি হওয়াটা আমার কাছে অর্থহীন বলেই মনে হয়। শোষনহীন উন্নততর সমাজ চাইলে নিজেকে আরো প্রস্তুত করতে হবে-অন্যলোকের কথায় নাচলে ভবিষ্যতে "কিছুই হইলো না ঠিক টাইপের" পস্তানো ছারা কিছুই পাবে না।

Wednesday, September 8, 2010

৯/১১ - কোরান পোড়ানোর স্বাধীনতা বনাম অসভ্যতা


আমেরিকা এবং ইসলাম। কেমেস্ট্রি অব রিলেশন।

গ্রাউন্ড জিরো বিতর্কের মধ্যেই আরেকটি সিভিল বিতর্কে উত্তাল হচ্ছে আমেরিকা। এবার
ডিবেট আরো চমকপ্রদ। ফ্লোরিডার রেভারেন্ড টেরি জোন্স 9/11 এর প্রতিবাদ জানাতে চান কোরান পুড়িয়ে। ব্যাস গোটা বিশ্ব উত্তাল। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্থানে মুসলিমরা উত্তাল ক্ষোভে-হিলারী ক্লিনটন কাতর আমেরিকার টলারেন্স ইমেজে ( কি সুন্দর বললেন মাত্র ৫০ জনের চার্চের জন্যে বদনাম হবে ত্রিশ কোটি আমেরিকানের!)। আর আফগানিস্তানে আমেরিকার জেনারেল ডেভিড পেট্রাস চিন্তিত আমেরিকান সৈন্যদের নিরাপত্তা নিয়ে। আফগানিস্তানের এক মোল্লা রাজনৈতিক পার্থী জানিয়ে দিয়েছে আমেরকাতে কোরান পোড়ালে সব জায়গায় তারা আমেরিকান মারবে। কিছু যায় আসে না যদি ৫০ জন আমেরিকান কোরান পোড়ায় এবং বাকীরা তার বিরোধিতা করে! গ্রাউন্ড জিরো মসজিদ বিতর্কে যিনি মুসলমানদের সমর্থন করেছিলেন, সেই নিউ ইয়ার্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ও কোরান পোড়ানোর বিরোধিতা করছেন না। কারন আমেরিকার সংবিধানের প্রথম ও মূল বক্তব্য-ব্যাক্তিগত স্বাধীনতাতে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

আমেরিকা তার ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট এতটাই মেনে চলে, আমেরিকান সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত মানতে বাধ্য হয়েছে, কেও ব্যাক্তিগত সম্পত্তিতে আমেরিকান পতাকা পোড়ালে, রাষ্ট্রের কিছু করার নেই। কারন তা ব্যাক্তিস্বাধীনতার বিপক্ষে যাবে। বিতর্কিত পাদ্রী টেরি জোন্সও স্বীকার করেছেন কোন মুসলিম তার প্রাইভেট এলাকাতে বাইবেল পোড়ালে তার কোন বক্তব্য নেই।

টেরিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যতই ধমকি দিক-তার যুক্তিও অখন্ডিত। সে যদি মনে করে কোরান এভিল এবং তার জন্যে সে কোরান পোড়াবে-সেই স্বাধীনতা আমেরিকান সংবিধান দিয়ে থাকে। ঠিক যে আইনে মুসলিমরা আমেরিকাতে ইসলাম পালনের স্বাধীনতা পাচ্ছে, ঠিক একই আইনে আমেরিকাতে আরেকজনের ইসলামের মুন্ডপাত করার ও স্বাধীনতা আছে।

এবার আসি মূল বিতর্কে কি ভাবে দেখবো এই কোরান পোড়ানো খেলা?

ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি পান্ডুলিপি পোড়ানো যায় না। একটা বই পোড়ানোর অর্থ আমার কাছে পরিস্কার না। কোরান পোড়ালে কি আয়াতগুলো নষ্ট হবে?

সুতরাং টেরি দেখাতে চাইছেন, ইসলামকে তিনি ঘৃণা করেন। কারন বইটা নাকি অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণায় ভর্ত্তি। সেটা যদি হয়েও থাকে আমি পরিস্কার ভাবেই বলব ঘৃণা দিয়ে ঘৃণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায় না। ইসলামে অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা এবং হিংস্রতাকে কেও যদি সভ্যতার শত্রু বা অসভ্যতা বলে মনে করে-এবং সেটি প্রকাশ করার জন্যে নিজে অসভ্যতা এবং ঘৃণার আশ্রয় নেয়- তার উদ্দেশ্য ও পন্থা ভুল। অন্যের অসভ্যতা ধরাতে নিজেদের সভ্য হতে হয়। অন্যের ঘৃণাটা দেখাতে নিজেকে ভালোবাসা দেখাতে হয়। অনেকে বলবেন-সেটাকে মুসলমানরা অমুসলমানদের দুর্বলতা বলে মনে করে এবং ইউরোপের মতন পেয়ে বসবে। আমি কিন্ত মনে করি ইউরোপ মুসলমানদের কখনোই ভাই হিসাবে মেনে নেয় নি-তারা ঘৃণা এবং বৈষম্যেই পেয়েছে। তাই তারাও ঘৃণাই উগরে দিয়েছে জাতিদাঙ্গাতে। বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গের দেভাঙ্গাতে গত দু দিন ধরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লেগেছে। তাতে মিলিটারি নামাতে হয়েছে পুরো এক ব্যাটেলিয়ান। বেশ কিছু হিন্দু দোকান ভাংচুর হয়েছে মুসলিম প্রধান দেভাঙ্গাতে। আশে পাশে সবাই ফিস ফাস করছে, যেখানেই মুসলমান সেখানেই দাঙ্গা।

কিন্ত সত্যিই কি তাই ? এর পেছনে বস্তুবাদি কারন খুব সিম্পল। মুসলিমদের মধ্যে জন সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ে-কারন তারা অশিক্ষার কারনে ধর্মের মাদকে জন্ম নিয়ন্ত্রন করে না। ফলে একটা লিমিটেড রিসোর্স শেয়ার করার জন্যে সর্বত্র একটা কঠিন পরিস্থিতে তাদের বাঁচতে হয়। এমন পরিবেশে তারা বড় হয় তাদের বঞ্চনার জন্যে অন্যদের দোষ বিক্রি করা সহজ। তারপরে সেই অন্যদের চোখে যখন ঘৃণা ছারা কিছু দেখে না-তখন তারা আরো বড় মৌলবাদি হয়ে ওঠে।

শুধু কিছু মিডিয়া এটেনশন টেনে অন্য ধর্মকে অপমান করে কি লাভ আছে আমি জানি না। কোরান যদি কেও এভিল বলে মনে করে, সে সেটা যুক্তি দিয়ে প্রমান করলেই সব থেকে ভাল করবে। অনেকেই তাই করছে। এবং তার বিরুদ্ধে মুসলমানরাও যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। এই দ্বন্দটাই কাম্য। কারন দ্বন্দের ফলেই উন্নতি বা অগ্রসরতা আসে।

বহুদিন ধরে ইসলাম এবং তার রাষ্ট্রীয় রক্ষকরা ধর্মের সমালোচনার এই স্বাধীনতা দেয় নি। আজ ইন্টারনেটের যুগে যখন সেন্সরশিপ অচল-সেখানে তাদের যুক্তিবুদ্ধি দিয়েই ইসলামকে ডিফেন্ড করতে হচ্ছে। এটা খুব ভাল। কারন সেক্ষেত্রে অবস্থার তাগিদেই তারা কোরানের উন্নততর ব্যাখ্যাগুলি আনতে সমর্থ হবে। ভারতে হাজার হাজার বছর আগে উপনিষদিক চিন্তা এই ভাবেই এসেছিল। বৌদ্ধদের চ্যালেঞ্জ খেয়ে, বেদকে বাঁচাতে বেদান্তের বা উপনিষদের জন্ম হয়। যা সেই বেদের উন্নততর ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়েই এসেছে।

সুতরাং ধর্মের সমালোচনা পুরো মাত্রায় চলুক। কিন্ত ধর্মের বিরুদ্ধে আমার অবস্থানটাকে যেহেতু আমি অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তোরন-অসভ্যতা থেকে সভ্যতায় যাত্রা বলে মনে করি-সেহেতু ধর্মের সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি মোটেও অসভ্যতাকে সমর্থন করতে পারি না। সদালাপ বলে একটি মুসলিম মৌলবাদি সাইট যুক্তিবাদিদের বিরুদ্ধে যে অসভ্যতা করে-তাতে আমাদের বক্তব্য আরো জোরালো হয় যে-ধর্ম আসলেই লোকেদের অসভ্য করে। কিন্ত যুক্তিবাদিরা বা সভ্যতার দাবিদার কেও যদি, সেই অসভ্যতাই করে, তাহলে পার্থক্যটা কোথায় রইল?

Sunday, September 5, 2010

পাকিস্তানের বেটিং কেলেঙ্কারী এবং কিছু কথা


পাকিস্তান দেশটি এখন বর্তমান পৃথিবীর অপার বিষ্ময়! সোজা কথায় এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি! সমস্ত কুকীর্তিতেই তারা বিশ্বচ্যাম্পিয়ান। সন্ত্রাস, কালোটাকা, মাফিয়রাজ, দুর্নীতি, হোমমেড পর্ণ, মাদক পাচার-পৃথিবীয় যাবতীয় যতকিছু আবর্জনা আছে-সব কিছুরই এখন চ্যাম্পিয়ান পাকিস্তান। সেদিন ই পড়ছিলাম ইন্টারনেট পর্নের উৎপাদনে পাকিস্তান আমেরিকা এবং ইউরোপকে হারাচ্ছে! বেনিয়মটাই এখানে নিয়ম। তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এককালে মিঃ ১০% ছিলেন-সামরিক খাতে আসা সব টাকা ভাগাভাগি হয় সেনা অফিসারদের মধ্যে-তাদের সেনা অফিসাররদের প্রায় প্রত্যেকেই কোটিপতি।

ভারতের গর্ভ থেকে যার জন্ম, সেই দেশটার এমন দুর্গতি কেন হল, সেই বিশ্লেষন দরকার। এমন নয়, ভারতে সন্ত্রাসী নেই বা কালোটাকার সমস্যা নেই-খুব ভাল মাত্রায় আছে। কিন্ত সেটা এখনো ব্যাতিক্রমই-নিয়ম না। ভারতের আজাহারুদ্দিন, মনোজ প্রভাকর এবং অজয় জাদেজাদের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বেটিং কেলেঙ্কারির জন্যে। সেটা একদশক আগের ঘটনা। তারপরে সৌরভের জমানাতে এবং পরে ধোনির নেতৃত্বে এই ধরনের বেটিং করার সাহস কারুর হয় নি। কারন ভারতীয় বোর্ড আজাহার, জাদেজার মতন আজীবন নির্বাসনে পাঠাত। অবশ্য তাতে এদের ক্ষতি হয় নি। আজাহার এখন এম পি।
আর জাদেজা একজন জনপ্রিয় ধারাভাস্যকার। মানুষের স্মৃতি দুর্বল। কিন্ত পাকিস্তানি ক্রিকেটে বেটিং বন্ধ হয় নি-যা এখন জানা যাচ্ছে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে বেটিংটা ব্রেকফাস্টের ডিমের মতন জনপ্রিয়।

সালমন বাট, মহম্মদ আমির এবং মহম্মদ আসিফ-প্রশ্নাতীত ভাবে যে তিনজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার অভিযুক্ত-তাদেরকে পাকিস্তানি বোর্ড বাঁচাতে চাইছে। অনুমান করি শর্ষের মধ্যেই আছে ভুত। যদিও পাকিস্তানে এদের প্রতি ক্ষোভ বিশাল -কিন্ত এই তিন পাকিরত্নের প্রতি পাকবোর্ডের স্নেহসুলভ আচরনে খুব ভাল ভাবেই প্রমানিত, বেটিং থেকে আসা টাকার একটি অংশ বোর্ডের কর্তাদের পকেটেও যেত। আবার সেই টাকার একটা অংশ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পকেটে যেতে কি না জানি না-কিন্ত গেলেও কেও অবাক হবার কথা না। এ এমন দেশ, যেখানে সবই সম্ভব।

ঘৃণা এবং ধর্ম যখন একটা দেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হয়-সেই দেশটার কি হাল হতে পারে-পাকিস্তান তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বি এন পির আমলে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত , ঘৃণা ও ধর্মকে হাল করে বাংলাদেশকেও পাকিস্তান বানানোর একটা পাঁয়তারা ছিল। সৌভাগ্যের কথা, বাংলাদেশের সুশীল জনগণ বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা থেকে আটকেছেন।

পাকিস্তান ক্রিকেটে দুর্নীতি বরাবরই ছিল। ওয়াসিম ভাই থেকে মালিক ভাই-কেওই যে খুব ক্লীন তা নন। ইমরান খানের পরে পাকিস্তান ক্রিকেটে সেভাবে আর কোন নেতা উঠে আসে নি-যিনি পাক ক্রিকেটের এই অসৎ যাত্রাকে আটকাতে পারবেন। সব থেকে বড় কথা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ধর্ম নিরপেক্ষ আচরন ও ইদানিং উঠে গিয়েছিল। ক্রিকেটারদের নাকি নামাজ পড়ার ধুম ও বেড়েছিল-বেড়েছিল তবলীগ হবার জিগিরও। আর ধর্মযে চোরেদের বর্ম সেটা বোধ হয় আমরা জানি। নিজেদের বেটিং অপরাধ ঢাকতেই ওরা ড্রেসিং রুমে ধর্মের আমদানি করে। এটা আমার মত।

যাইহোক আফ্রিদির জন্যে আগাম শুভকামনা রইল। কালকে ইংল্যান্ডের সাথে হারলেও, আশা করি তারা ঘুরে দাঁড়াবেন।

Friday, September 3, 2010

জঙ্গল মহলে সিপিএমের অস্ত্র এবং ভারতীয় সংবিধান


জঙ্গল মহলের সশস্ত্র পুনঃদখল থেকে আমার এই বৃত্তীয় ভাবনার সূত্রপাত।

সিপিএম গরবেতা স্টাইলে একদম বন্দুক দিয়েই আবার দখল করে নিচ্ছে তাদের মাটি। কুশীলব সেই সুশীল মন্ত্রী সুশান্ত। পার্টির ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অপার আর্শীবাদে তিনি আশ্রিত। রাজ্য সরকার মদত দিচ্ছে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থানে-যেমন তারা আগেও দিয়েছে গরবেতা থেকে নন্দীগ্রামে। পশ্চিম বঙ্গে ভারতীয় সংবিধান আছে কি নেই-সেই যুক্তির অবতারনা এখন অর্থহীন-আমার ধারনা সিপিএমের গত চৌত্রিশ বছরের শাসন কালেও, তা অর্থহীনই ছিল। তাই নতুন করে সিপিএমকে শাপান্ত করতে এই লেখা না।

সিপিএমের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে মাওবাদিদের সাথে হাত মিলিয়ে এই জেলাগুলি থেকে সিপিএমকে উচ্ছেদ করতে মাওবাদি-তৃণমূল ষড়যন্ত্রও অসাংবিধানিক। কারন তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ-আবার তারাই মদত দিচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধি সন্ত্রাসী শক্তিকে। মাওবাদিদের বন্দুকের নলে সিপিমের পোড়া মাটিও এখন থকথকে কাদা। তাতেই ফুটছে ঘাসফুল। সুতরাং কাস্তে হাতে সাবাড় কর সেই ফুল!

এর মধ্যে আছে রাজ্যবাসীরা। সেই সমাজ, যার মধ্যে সিপিএম এবং সিপিএম বিরোধি পোলারাইজেশন তীব্র। অথবা এমনই রাজনীতি এই রাজ্যের-যে এই সুতীব্র বিভেদকে বাঁচিয়ে রেখেই টিকে থাকতে চাইছে সিপিএম বা তার বিরোধী শক্তি তৃণমূল। এমন এক দুর্ভাগা রাজ্য, যেখানে উন্নয়ন বা দুর্নীতি রাজনীতির মূলবৃত্তের বাইরে। এখানে রাজনৈতিক টাইফুনের এপিসেন্টার হত্যা-আরো বেশী রাজনৈতিক হত্যা।

খুব সরল ভাষায় ব্যাপারটা এই রকম। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসে সিপিএম এবং সাথে সাথেই তারা এক পার্টি ভিত্তিক সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে থাকে পশ্চিম বঙ্গে। বিরোধিদের দুর্বলতার সুযোগে সরকার, পুলিশ, শিক্ষা-সব কিছুতেই সরকারের ওপরে কতৃত্ব থাকে পার্টির-যা সাবেকি কমিনিউস্ট শাসিত দেশগুলিতে ছিল সাংবিধানিক আইন। কিন্ত ভারতের সংবিধানেত সরকারের ওপরে পার্টির স্থান না-সুতরাং পার্টি বনাম ভারতীয় সংবিধানের বিভেদটা পশ্চিম বঙ্গে সিপিএমের শাসন কালে নিত্যদিনের ঘটনা। এ্ররাজ্যে বহুদিন থেকেই পার্টির ফয়সালার ওজন আদালতের থেকে বেশী।

তৃণমূলের জন্ম সময়ের নিয়ম মেনে। এ রাজ্যে পুলিশ সিপিএমের গা ছোঁবে না এটা সবাই জানে বলেই-বিরোধি পক্ষ বন্দুক ছারা কথা বলে না। বাঁচতে ত হবে আগে। সুতরাং লালগড় থেকে নন্দীগ্রামে সিপিএমকে তাড়াতে বন্দুক লেগেছে-ব্যালটে ব্যাপারটা প্রতিফলিত হয়েছে পরবর্ত্তীকালে। ব্যালটের জোর বুলেটের থেকে বেশী। তেমনটা হইয়াও হইতেছে না-কারন ক্ষমতার খেলায় কেও কেও টি-২০ স্টাইলে ছক্কা মারা বেশী পছন্দ করে। মাওবাদিদের বন্দুক তৃণমূলের সামনে সেই ললিপপ ঝুলিয়ে দেয়-ফলত তৃণমূল মাওবাদি একটি অদৃশ্য সিম্বায়োসিসের ট্রপিজ সার্কাস আমরা গত দুবছর থেকেই দেখছি।

তাহলে গত চোত্রিশ বছরের আসল খেলাটা আমরা কি দেখলাম? সিপিএম কিছু স্বার্থান্বেশী ক্ষমতালোভি পকেট তৈরী করল-যারা কংগ্রেসের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি থেকে ক্ষমতা হাতিয়ে নিজেদের পারিবারিক তালুকদারি চালু করে দিল।
রাজনৈতিক ক্ষমতাই ছিল এদের নব্য অর্থের উৎস-ফলে ক্ষমতা টেকাতে এরা খুন, রাহাজানি, ব্যালট ছিনতাই মিডিয়াতে অপপ্রচার-সব কুকীর্তিই করেছে। অবশ্য ক্ষমতা হচ্ছে জ্যোষ্ঠের উত্তাপ-যাতে এঁচোর ও পাকে। সিপিএমের পচন ছিল কালের বিধি বা ইতিহাসের অমোঘ গতি। পাকা আমে যেমন মাছি ভন ভন করে-সিপিএমের চারিদিকে থিক থিক করত মাছিরা।

সমস্যা হচ্ছে মাছিদের সম্পর্ক পাকা আমের সাথে, আমের বীজের সাথে না। ফলে যেখানে আম পাকবে-মাছি সেখানে বসবেই। এটাই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের নিয়ম। ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র যদ্দিন থাকবে-ক্ষমতার জন্যে এই সার্কাস এবং রাজনৈতিক মৃত্যুলীলাও চলবে। আমেরিকাতে বা উন্নত দেশের গণতন্ত্রের রাজনীতিতে এমন হত্যালীলা বিরল-কারন রিসোর্স ক্রাইসিস নেই। ফলে এ গণতন্ত্রে ল্যাং চলে, লাঠি না। আর আমাদের দেশটা হচ্ছে আদি অকৃত্রিম-ডারুইনিয়ান জঙ্গল। বর্ধিত জনজংখ্যার চাপই এর কারন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে হত্যালীলা, বন্দুকবাজি বা সংবিধানকে বৃদ্ধাষ্ঠুঙ্গ দেখানো সব কিছুই ইতিহাসে আমরা সর্বত্র দেখি-কিন্ত একটা দেশের উন্নতির সাথে এটা কমে এসে আস্তে আস্তে যুদ্ধটা মিডিয়া বা প্রচার যুদ্ধে পরিণত হয়। সেটা এখানেও হচ্ছে-কিন্ত রাজনৈতিক হত্যা কমার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। রাজনীতিতে বাহুবলীদের জয়জয়াকার। বুদ্ধ বিমান মমতা সবাই তাদের ওপরই বেশী নির্ভর করেন। প্রকাশ্যেই সবাই সেটাই দেখছে। আবার কেও কিছু বলতেও সাহস করছে না। কারন হাসপাতাল থেকে শিক্ষা-সব কিছুতেই পার্টির 'ফেবার
লাগে।

ফলে কে বাঁধিবে সেই ঘন্টা এই বঙ্গে?