Thursday, June 17, 2010

রাষ্ট্রদ্রোহি-আরেকটি তিন পয়সার পুলিশ-মিডিয়া পালা


সিরামিক বিজ্ঞানী নিশা বিশ্বাস, লেখক মানিক মন্ডল এবং অধ্যাপক কনিষ্ক চৌধুরী।

রাষ্ট্রদ্রোহিতা-মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন শালবনী থেকে। তার থেকেও মারাত্মক খবর তাদের জামিন হয় নি-চোদ্দদিনের জেলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে মেদিনীপুরের জেলা কোর্ট। এরা নাকি মাওবাদি এবং জনগণের কমিটিকে সহযোগিতা করছিলেন! কিভাবে করছিলেন? সরকারি কৌন্সুলী মতে ইনারা মাওবাদি এবং জনগণের কমিটির সাথে বৈঠক করেছেন! এতেব তারা সহযোগিতা করেছিলেন। যদিও তাদের সাথে তিনজন সাংবাদিককে তারা নিয়ে গিয়েছিলেন-যাতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং হয় । তারাও জানতেন সিপিএমের পুলিশ তাদেরকে কেস খাওয়াবে-সেই জন্যেই সাক্ষী হিসাবে সাংবাদিকদের সাথে করে নিয়ে ছিলেন তারা। কিন্ত তাতেও শেষ রক্ষে হয় নি। বুদ্ধের পুলিশের অপার মহিমা- এই তিনজন বুদ্ধিজীবিকে জেলে পুরে দিল। রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারায় এমন কেস খাওয়াল-এখন আগামী পনেরদিন ইঁদুরের সাথে ভাত ভাগ করে খেতে হবে ইনাদের।

প্রিয় পাঠক ভেবে দেখুন। দৃশ্যটি মানসপটে কল্পনা করুন। ওরা তিনজন মাওবাদিদের সহযোগিতা করতে চলেছেন সাংবাদিক সহযোগে-নিজেদের ঢাকঢোল পিটিয়ে। সব থেকে বড়কথা ওদের ইতিহাসও বলছে না ওরা কমিনিউস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন অতীতে। খুব জলের মতন পরিস্কার-ইনারা মানবতাবাদি-আদিবাসিদের আসল অবস্থাটা মানবাধিকার সংস্থা থেকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের কাছে বন্দুক গুলি বিপ্লবী সাহিত্য-যা কিছুকে রাষ্ট্র ভয় করে-কিছুই পাওয়া যায় নি! তাও এরা রাষ্ট্রদ্রোহি!

কারন ইনারা আদিবাসিদের সাথে কথা বলেছেন!

বুঝুন অবস্থা! এরা মানবাধিকার কর্মী-এরা কি জঙ্গলমহলের গাছের সাথে কথা বলতে ওখানে গেছেন নিজেদের চাকরি ছেরে? পুলিশ না হয় তার সিপিএম প্রভুকে খুশী করতে কেস দিল- তারা প্রভুর কথামত সব সিপিএম বিরোধিকেই হেনস্থা করার জন্যে দিয়ে থাকে-কিন্ত কোর্টের আক্কেলটা কি?

অবশ্য ভারতীয় কোর্টে প্রেসিডেন্টের নামেও গ্রেফতারী পরোয়ানা বার করা যায় মাত্র ৪০,০০০ টাকায়। এই যখন দেশের আইন-বিচারের অবস্থা-সেই দেশে ভূপাল গ্যাস ট্রেজেডির লোকেরাও ইনসাফ পাবেন না। মিডিয়া এন্ডারসন নামে স্কেপগোট খুঁজে আসল সমস্যা থেকে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবে।

কাল যে ৮ জন মাওবাদি কিশোর কিশোরী মারা গেল-তাদের মৃতদেহ শুঁ য়োরের মতন ঝুলিয়ে জঙ্গল থেকে বার করা হল-আর পরের দিন চারিদিকে মিডিয়াতে জওয়ানী জয়ধ্বনি। সব থেকে বেশী উল্লাসিত দেখলাম "বামপন্থী আজকাল"! কোন কাগজ়ে কোন বিশ্লেষন নেই কি করে এই বাচ্চাগুলো মাওবাদি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? ওদের সমস্যাটা কি? আর নিশাদেবী মানিকবাবুর মতন যারা সেই আসল কাজটা করতে যাচ্ছেন, তাদের ধরে জেলে ভরা হচ্ছে। সাথে আদিবাসিদের রাগপ্রশমন করতে দুটাকা কিলোদরে চাল! রাষ্ট্রীয় ফর্মুলা-অভুক্ত পেটই বিদ্রোহের ধাত্রীগৃহ কি না!

অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিশেষত সিপিএমের তরফ থেকে সিগন্যালটা পরিস্কার। ওরা জানে আদিবাসিদের আসল খবরটা বেড়িয়ে পড়লে ওখানে ওদের ঠিকেদারি আর চলবে না। আদিবাসিদের উন্নতিখাতে আসা কোটি কোটি টাকা যারা মেরেছে, সেই সিপিএম পার্টির লোকজন এতদিনের মৌরসীপাট্টা ছারবে কেন? বিশেষত হাতে যখন আছে পুলিশ! সুতরাং যারাই মাওদের পক্ষে কথা বলতে যাবে, তারাই রাষ্ট্রদ্রোহি! আমি ফেসবুকে একবার জনগণের কমিটির হয়ে সওয়াল করেছিলাম-সিপিএম পার্টির এক নব্য বুদ্ধিজীবিনী ( যিনি পার্টির টাকায় ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছেন) আমাকে শাসিয়ে গিয়েছিলেন এসব লিখলে পুলিশ নাকি আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ধরবে! নেহাত আমি দেশের বাইরে থাকি। ভেবে দেখুন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে আমার থেকে বেশী কেও লিখেছে বলে জানা নেই-তবুও যদি আমি আদিবাসিদের দাবী নিয়ে, জনগণের কমিটির হয়ে কথা বলতে যায়, ওরা-সিপিএমের ভাগারের দল আমাকেও মাওবাদি বানিয়ে দেবে!

অর্থাৎ সিপিএম চাইছে না আদিবাসিদের অবস্থার আসল সত্যটা সামনে আসুক। তাদের শোষন যন্ত্রের রূপটা ধরা পড়ুক। তাই পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যারা এই সত্যকে উদ্ঘাটন করতে চান।

রাষ্ট্র কিভাবে পুলিশের সাহায্যে শোষন অব্যাহত রাখে-সেটাত কমিনিউস্টরাই পৃথিবীকে শিখিয়েছে। খুব সম্ভবত মার্ক্স সাহেব কবর থেকে সিপিএমকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, তার তত্ত্বের লাইভ ডেমো দিতে। আমি দেখতে পাচ্ছি মার্ক্স সাহেব বুদ্ধকে কানে কানে বলছেন-গত ত্রেত্রিশ বছর ধরে আমার নামে অনেক ছরিয়েছ-এবার পুলিশ দিয়ে শোষন অব্যাহত রেখে আমার তত্ত্বকে পশ্চিম বঙ্গে সামান্য প্রতিষ্ঠা দাও। তোমার পুলিশের অত্যাচারের মাধ্যেমেই লোকে অন্তত জানুক, আমি কিছু কিছু ঠিক কথাও বলেছিলাম।

1 comment:

nitigataray said...

এ যে কার দালালি করে বোঝা শক্ত
১) মমতার
২) মাওবাদীদের
৩) মাইক্রোসফ্টের
৪) রিলায়েন্সের