কলকাতা সহ বাকী মিউনিসিপাল নির্বাচনগুলিতে জোট সত্যিই তাহলে হল না। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ভঙ্গুর। বিধানসভায় জোট হইবে বলিলেই জোট হইবে না। জোট রাজনীতিত আর রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প না, যে "কথা দুকান না হইলে প্রজাপতির দুটি পাখা এক হইবে কেন" টাইপের ডায়ালোগ দিয়ে বরকর্ত্তা "প্রণব বাবু" ম্যানেজ করবেন।
রাজনীতি গেম থিওরীর স্ট্রাটেজিক খেলা। যে খেলতে পারে, সেই সফল রাজনীতিবিদ। এইজন্যেই কমিনিউস্ট আদর্শবাদের ১৮০ ডিগ্রি বিপক্ষে থেকেও, আমি স্বীকার করি, লেনিন আমার জানা সর্বাধিক সফল রাজনীতিবিদ। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে লেনিন যখন রাশিয়াতে ফিরলেন, তখন বলশেভিক পার্টি প্রায় শেষ-অথচ, তার স্ট্রাটেজির গুণে অক্টবর মাসের মধ্যেই বলশেভিকরা প্রবল শক্তিরূপের আবির্ভুত হয়। কেন? ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে লেনিন যখন আসেন নি-স্ট্যালিন কেমেনকভ এরা সবে পার্টির মুখপত্র প্রাভদাকে চালানো চেষ্টা করছেন-তখন বলশেভিকদের মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়ার প্রভিন্সিয়িয়াল সরকারের সমর্থক ছিলেন যেহেতু নীতিগত ভাবে সেই সরকারও বামপন্থীই ছিল। স্টালিন কেরেনাস্কির সমর্থনে সম্পাদকীয়ও লিখেছিলেন। লেনিন প্রথমে এসেই সেই সমঝোতার লাইন বাতিল করে দেন। উনি দেখলেন কেরেনাস্কির সাথে থাকলে, আস্তে আস্তে বলশেভিক পার্টিটাই উঠে যাবে-কারন ক্ষমতায় থাকার জন্যে কেরেনাস্কির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক বিদ্রোহ হবেই। এবং শুধু বামপন্থী বলে কেরেনাস্কির পাশে থাকলে, সরকার বিরোধি সেই হাওয়াতে দক্ষিনপন্থীরা নৌকা ভাসাবে। ফলে লেনিন বলশেভিক পার্টিকে সম্পূর্নভাবে বিরোধি পার্টির ভূমিকাতে নিয়ে আসেন দ্রুত জমি দখল করার জন্যে।
প্রশ্ন তুলবেন, আমি ধান ভাংতে কেন শিবের গীত গাইছি? আসলে মিউনিসিপাল নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভূমিকা দেখে অনেকের মতন আমিও হতাশ কারন এদের সবাই ক্ষমতার ক্কীরভোগ খেতে চাইছে। কেওই সুষ্ঠ বিরোধি রাজনীতির মধ্যে দিয়ে জমি দখলের লড়াই এ বিশ্বাস করে না। কথাটা কংগ্রেসের নেতাদের জন্যেই আমি বেশী বলবো। তৃণমূলের বক্তব্য এই তরমুজি কংগ্রেসীগুলোর জন্যে পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম এতদিন রাজত্ব করেছে। কথাটা খুব মিথ্যে না। এক কথা যেকোন কংগ্রেসীই স্বীকার করবেন। কিন্ত এটাও ঠিক উত্তরবঙ্গে সিপিএমকে কোনঠাসা করে রেখেছিল কংগ্রেসই। সুতরাং ব্যার্থতা আসলে কংগ্রেসের দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের এবং ব্যার্থতার জন্যে দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের কি হলো তাই নিয়ে জনগণের মাথা ব্যাথাও নেই। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূল যা চেয়েছিল-সেটা দিয়ে দিলে কোন ক্ষতি হত না কংগ্রেসের। কারন তারা মেয়র পরিশদে না বসে তৃণমূলের বিরোধি পক্ষে যেতে পারতেন মিউনিসিপালিটিতে। সেটাই হত জমি দখলের উৎকৃষ্ট লড়াই। কারন তৃণমূলের নেতৃত্বের যা কোয়ালিটি এরা ক্ষমতায় আসলে ছড়াবেই-এবং তৃণমূল বিরোধিতা সম্পূর্ন সিপিএমের হাতে সেই দিন ছেড়ে দিলে কংগ্রেস আরো ডুবে যাবে।
কংগ্রেস জাতীয় পার্টি। যে পার্টির উর্দ্ধে সোনিয়া গান্ধীর মতন বিচক্ষণ নেত্রী - মনমোহন, চিদাম্বরম এবং প্রনব বাবুর মতন দক্ষ নেতারা সরকার চালান, সেই ১২০ বছরের পার্টি, মাত্র কটা আসন ছাড়ার জন্যে মাটি হারাত না। তৃণমূলকে আজকে যারা ভোট দিচ্ছে তাদের ৫% ও তৃনমূলের ডাই-হার্ড সমর্থক না। তারা গোঁড়া সিপিএম বিরোধি। কালকে সরকার চালাতে গিয়ে তৃণমূল যখন অপ্রিয় হত সেই ভোটগুলো কংগ্রেসেই আসত। শুধু ধৈর্য্য ধরে জনগণের পাশে থেকে বুঝতে হত তৃণমূল এবং সিপিএম বিরোধিতার জায়গাটা । মাঝখান থেকে এইভাবে পার্থী দেওয়ার জন্যে কংগ্রেসের সিপিএম বিরোধিতার সদিচ্ছাটাই ধাক্কা খেল।
তৃণমূল বিধানসভা, মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে বেশী আসন চাইলে নিক। কংগ্রেস সেটা মেনে নিক-কেন্দ্রে যাদের হাতে ক্ষমতা তাদের কি সমস্যা আছে একট নির্বাচনে জমি ছেড়ে দিতে? ক্ষমতার আলিন্দ থেকে সিপিএমের দ্বীপ যেদিন র্নিবাপিত হবে, তৃণমূলের বিরোধি দলের ভুমিকাটাই এই রাজ্যের সব থেকে বড় জমি হবে। সেখানে সিপিএমকে চাষাবাদ করতে দিলে, ২০১৬ সালে আবার সেই সিপিএম ফিরবে।লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে বাধ্য -কারন কংগ্রেসের সাথে না থাকলে মুসলিমরা একটি ভোটও তৃণমূলকে দেবে না।
সুতরাং কংগ্রেসের কোন নেতাই স্ট্রাটেজিতে বিশ্বাস না করে, পাড়ার দাদাগিরিতে বেশী আস্থা রাখছেন। এতে কংগ্রেসের সংগঠন এই রাজ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদের কারুর দূরদৃষ্টি নেই-কেও কেও হয়ত সিপিএম থেকে সুবিধাও খাচ্ছেন। সবই হতে পারে। এদের বোঝা উচিত এই রাজ্যে কংগ্রেসী রাজনীতি বলে কিছু নেই-আছে সিপিএম এবং এন্টিসিপিএম ভোট। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে ২০১১ সালে-তদ্দিন পর্যন্ত তৃণমূলকে না মানলে , খরকুটোর মতন উড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
২০১১ সালের পর কংগ্রেস তৃনমূল বিরোধিতার পথে গেলে, সেটা হবে স্ট্রাটেজি-আর এখন গেলে, তা হবে আত্মহত্যা।
No comments:
Post a Comment