Tuesday, April 27, 2010
বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমার ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা-এটা কি ঠিক হল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রক বাংলাদেশের সিনেমাহল গুলিকে বাঁচাতে ভারতীয় সিনেমার আমদানি বৈধ করেছিলেন। এতে বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলি বাঁচত। তার সাথে সাথে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিন্ত সেসব আশা অঙ্কুরেই বিলুপ্তি। ঢাকার চলচ্চিত্রশিল্পী সংগঠনগুলির যৌথ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সেই নিশেধাজ্ঞা আবার ফিরিয়ে এনেছেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের শিল্পীরা আগেপিছু না ভেবে, ক্ষণস্থায়ী লাভের কথা ভেবে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়লেন।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্ভভৌম রাষ্ট্র-তারা তাদের জনগনের কথা শুনে আইন প্রণয়ন করবেন-সেটাই কাম্য। তাছারা এক্ষেত্রে সরকার নিশেধাজ্ঞা তুলেই দিয়েছিলেন। শিল্পী সংগঠনগুলির চাপে শেখ হাসিনা পিছু হটলেন। সুতরাং আমার অভিযোগটা বাংলাদেশ সরকারের দিকে নয়। একটা গণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণের কথা শুনতেই হয়। শেখ হাসিনা সেই অর্থে ঠিকই করেছেন-জনমতকে মর্যদা দিয়েছেন। কিন্ত আমার এই লেখার উদ্দেশ্য সেই শিল্পীদের উদ্দেশ্যে যারা না বুঝে নিজেদের ভবিষ্যতকে এবং তার সাথে সাথে বাংলা সিনেমার ভবিষ্যতকে বেশ চাপে ফেললেন।
বিবর্তনই জগতের নিয়ম। আমাদের সমাজ, শিল্প, প্রযুক্তি-মার্কেট-লোকজনের চাহিদা সব কিছু পরিবর্তনশীল। সেই পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন না হলে মৃত্যু অনিবার্য্য। দুবছর আগে বাংলাদেশের বিখ্যাত পরিচালক তনভীর মোকাম্মেলের সাথে ইন্টারভিউ সুত্রে জেনেছিলাম বাংলাদেশের ৯০০ টা সিনেমা হলের মধ্যে ৬০০ টাই বন্ধ। কোন ভদ্রলোকে সিনেমা দেখে না। গোটা ইন্ডাস্ট্রি চলে কালোটাকায়-মাফিয়ারাজ। ভালশিল্পীরা টিভি নাটক আর সিরিয়াল করে পেট চালাচ্ছে। ভাল সিনেমা করার পরিবেশটাই নেই।
অথচ ভারতীয় সিনেমাকে আটকে কি সেটা ভাল হবে? না বাংলাদেশের সিনেমার বাজারকে ভারতে প্রসারিত করলে বাংলাদেশী সিনেমা বেঁচে যেত ? ভারতে উন্নত বাংলা সিনেমা অবাঙালীরাও দেখেন। সত্যজিত রায়ের প্রায় প্রতিটি সিনেমা আমি দেখেছি আমার জানা প্রতিটি ভারতীয় দেখেছে। শুধু তাই না। এখন বলিউডে হুর হুর করে হলিউডের টাকা ঢুকছে। বলিউডের পরিচালকরা টাকাতে না পেরে আঞ্চলিক সিনেমাতে টাকা ঢালতে আসছেন এবং এই ব্যাপারে বাংলা সিনেমা তাদের প্রথম পছন্দ। এর কারন অনেক। প্রথম কারন অবশ্যই এই যে বলিউডে প্রচুর বিখ্যাত বাঙালী নায়ক নায়িকা আছেন এবং বাংলাতে প্রচুর ভাল পরিচালক আছে। ফলে বাংলা সিনেমা ভারতীয় মার্কেটে চলবে ভাল। আছে সমৃদ্ধ সাহিত্য, সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র ত শুধু বাঙালীর নন। ভারতে সব থেকে বেশী হিন্দি সিরিয়াল হয়েছে শরৎ সাহিত্য দিয়ে। অন্য কেও ধারে কাছেও নেই। এই দক্ষিন এশিয়াতে হিন্দির পরেই বাংলাভাষী বেশী আছে। এসব কারনেই বাংলা সিনেমা শিল্পে আস্তে আস্তে টাকা আসা শুরু হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াতেই বাংলাদেশের সিনেমাও যুক্ত হতে পারত। হলিউড আজ বলিউডে এসে সিনেমা বানাচ্ছে কারন, ভারত হলিউডের সিনেমা এবং শিল্পকে স্বাগত করেছে। লোকে হলিউড বলিউড দুটো সিনেমাই দেখে। কারন টেস্ট আলাদা। মাংস খেলে মাছ খেতে হবে না এমন নিয়ম আছে না কি? আর বাংলা সিনেমার টেস্ট এদের থেকেও আলাদা।
সুতরাং ভারতের থেকে বিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের কি লাভ হবে? খোদ বাংলা সিনেমাকেই, আমেরিকার ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার ( ডেটাবাজার গ্রুপের মিডিয়া) বিশ্বের বাজারে বিনপন করছে। নেটফ্লিক্স, ব্লকবাস্টার, আই টিউনস সহ সব আমেরিকান রিটেল চ্যানেলেই বাংলা সিনেমা এই বছর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ঠিক ঠাক এগোলে এই আন্তর্জাতিক বাজার বিশাল। মনে রাখবেন ঋত্বিক ঘটকের মেঘেঢাকা তারা এবং সত্যজিতের পথের পাঁচালী পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০০ টি সিনেমার মধ্যে স্থান পেয়েছে এবং আজও এর অনেক ডিভিডি বিক্রি হয় গোটা বিশ্বেই। আর বলিউডের অনেক সিনেমাই আজকাল শুধু আন্তর্জাতিক মার্কেটের কথা ভেবেই তৈরী হচ্ছে-যেমন ফক্সের মাই নেম ইজ খান।
শুধু তাই না। আমার সাথে জার্মান এবং স্প্যানিশ প্রযোজকদের ও যোগাযোগ আছে। তারাও আজকাল গোটা বিশ্বের কথাই ভাবছেন। কারন জার্মান বা ইটালিয়ানরা শুধু হলিউডের সিনেমাই দেখছেন। এর সমাধান হলিউডকে জার্মানি বা ইটালিতে আটকানো না। এর বিকল্প হিসাবে জার্মান বা ইটালিয়ান পরিচালকরা গোটা বিশ্বের মার্কেটের কথা ভেবে স্ক্রিপ্ট লিখছেন। চে গুয়েভেরার মোটর সাইকেল ডাইরী স্প্যানিশের থেকে দশগুন টাকা তুলেছে ইংরেজিতে। লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা-নোবেল জয়ী সাহিত্যিক মার্কোয়েজের এই স্প্যানিশ উপন্যাসটির ইংরেজি সিনেমাই সব থেকে বেশী লাভ করেছে!
গোটা সিনেমা শিল্পে যখন বিশ্বায়নের পরিবেশ, তখন সেই বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে নিজেদের আরো উন্নত করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। এতে বাণিজ্যিক লাভ ও বেশী। তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে সিনেমা শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে কি? সব থেকে বড় কথা সব ভারতীয় সিনেমার পাইরেটেড ডিভিডিই বাংলাদেশে ঢালাও বিক্রি হয়।
অথচ বাংলাদেশে প্রতিভার কোন অভাব নেই। হুমায়ুন আহমেদের গল্পের ওপর করা নাটকগুলি বেশ আন্তর্জাতিক মানের। গোটা উপমহাদেশে গড়পরতাই বাংলাদেশীরাই সব থেকে বেশী সংস্কৃতি প্রবণ এবং তারা সাংস্কৃতিক পরিবেশেই বড় হন। অথচ বাংলাদেশী প্রতিভার বিশ্বায়ন নিয়ে না ভেবে, কিভাবে ভারতীয় ছবি আটকানো যায় সেটা নিয়ে ভাবলে কার লাভ? হলিউডের ছবি মেক্সিকো আটকায় কি? মোটেও না। বরং মেক্সিকোর অনেক পরিচালকই হলিউডে সিনেমা বানাতে আসেন-স্প্যানিশ ও ইংরেজিতে একই সাথে সিনেমা হয়। যেমন এখন অনেক সিনেমাই বাংলা এবং হিন্দিতে হচ্ছে। বড় মার্কেট ছাড়া বাজেট আসবে কি করে? তনভীর মোকাম্মেলের লালন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি-সিনেমাটা গোটা বিশ্বে বিরাট মার্কেট পেত। অথচ পশ্চিম বঙ্গের বাঙালীরাই জানেন না, লালন বলে একটি অসাধারন সিনেমার অস্তিত্ব আছে! মাটির ময়না সিনেমাটা বেশ কিছু আমেরিকান দেখে থাকলেও দেখতে পারেন-কিন্ত কোন ভারতীয় বাঙালী দেখেছে বলে আজ পর্যন্ত শুনি নি। এটা ত কাম্য না। মাটির ময়নার মতন দুর্দান্ত সিনেমার সব থেকে বড় বাজারত ভারতেই ছিল। যেকোন বলিউড হাউস ওই সিনেমাটা নিতে চাইত।
বাংলাদেশ এবং ভারতীয় বাঙালীকে একত্রিত করে বাংলা সিনেমার মার্কেট না বানালে, বাংলাদেশী পরিচালকেদের পেছনে বেশী টাকা কে লগ্নী দেবে? আর টাকা ছাড়া আজকের দিনে ভাল সিনেমা বানানো কি সম্ভব?
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জন্যে বাংলাদেশের শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা অমূলক ধারনা। এটা কেন তারা ভাবছেন না, বাংলাদেশে অনেক বেশী বাঙালী থাকে। এবং সেই মার্কেট ধরতে কলকাতার সিনেমা শিল্পে অনেক বাংলাদেশী নায়ক নায়িকা নিতে হবে। যা কিছুদিন হল যৌথ পরিচালনার সিনেমাগুলোতে চালু ছিল।
দেশ ভাগে বাংলা সংস্কৃতির মার্কেট ভাগ হওয়ায় সমগ্র বাংলা জাতির সর্বনাশ হয়েছে। এবং এই ভাগটা রাখলে ক্ষতি বাড়বে । কমবে না। বাংলাদেশের শিল্পীরা নিজেদের এবং বাংলা সিনেমা শিল্পের বিশাল ক্ষতি করলেন। আমি অনুরোধ করব-আপনারা আরো বিতর্কের মধ্যে দিয়ে একটা সঠিক সমাধান খুঁজুন।
Monday, April 19, 2010
বাম ভাবধারার জন্যেই পশ্চিম বঙ্গ রসাতলে যাচ্ছে
যে মানসিকতার জন্যে বাংলা উচ্ছন্নে গেছে, তার নাম, "আমার চাই"-চাই কিন্ত কি দিতে হবে বিনিময়ে সেটা নিয়ে কারুর হুঁস নেই।
এটি বামেদের আবিস্কার। আমি শোষিত, আমি নির্যাতিত-তাই আমি চাই। কি চাই সেটাও আমি জানি না-দু চারটে বাস পোড়ানো, অর্কুটে মহিলাদের প্রকাশ্যে ধর্ষনের ইচ্ছা করার বামবিপ্লব-ইত্যাদি সবই অধিকার। জন্মপ্রদত্ত। কারন বামবাঙালী মনে করে জন্ম হইতে সে পুজিপতি এবং বুর্জোয়া ভূতেদের দ্বারা বঞ্চিত হইয়াছে। লেনিনবাদ নামক যাবতীয় আধভৌতিক তত্ত্ব, যা ভারতীয় পুরাণগাথার সমতুল্য-তাই দিয়ে সমাজের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা - সমস্যাটার ১% না বুঝেই- আমাকে সত্যিই অবাক করে।
পৃথিবীর নানান দেশের সংস্কৃতি এবং নানান মানুষের সংস্পর্ষে আসার পরে, পরিস্কার করেই বলি-করণিক, শিল্পী, কবি, দাবা, তাস এবং খাদ্য রসনা- এই কটি ক্ষেত্রে বাঙালী অসাধারন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক ভাবেই সেরা।
কিন্ত রাজনীতি, দর্শন এবং বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় বাঙালী ব্যার্থ।
যে ব্যাপারটা আমাকে অবাক করে-সেটা হচ্ছে এই-পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার কোথায় এগিয়ে গেছে, আর এই বাম বাঙালীরা এখনো সব এঙ্গেলেস এবং লেনিনের রূপকথা চর্চা করতে ভালোবাসেন। সেই নিয়ে আগে অনেক লিখেওছি-সমাজবিজ্ঞানে কত শত আবিষ্কার হয়ে চলেছে-পৃথিবী কত দ্রুত বদলাচ্ছে-এরা এসব কিছু জানেও না -বোঝেও না। পশ্চিম বঙ্গে যারা বাম রাজনীতির চর্চা করে তাদের মতন মাথামোটা এবং আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে অজ্ঞ পৃথিবীতে অতুলনীয়। প্রভাত পট্টনায়েকের মতন দর্শন শাস্ত্রের একজন বিরাট গোল যাদের শীর্ষ তাত্ত্বিক-তাদের নিয়ে হাসাহাসি করা ছাড়া আমার উপায় নেই। সিপিআই এম এল সাইট তাও মন্দের ভাল- ওদের একটা লাইন আছে, যা আনকম্প্রোমাইজিং। ওদের সমাধানে ভুল আছে, অবজারভেশনে ভুল নেই। ভারতীয় গণতন্ত্রে ওই সমস্যাগুলো নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলই মাথা ঘামায় না। নক্সালপন্থী দলগুলির প্রতি আমার শ্রদ্ধা এই জন্যেই আছে যে বাকীদলগুলি যেখানে দালালরা চালাচ্ছে-এবং যার জন্যে জনগণের সমস্যাটা উঠে আসছে না-সেখানে ওরা ফোকাস করতে পেরেছে। ওদের সমাধান ভুলভাল-কিন্ত এই সমস্যাগুলো কেন গণতন্ত্রে উঠে আসবে না?
কেন প্রতিটা পার্টি ব্যাবসায়ীদের দালালে পরিণত হবে?
রাজনীতিতে সবার প্রভাব থাকবে-সেটাই সার্থক নীতি। ছোট বড় সব ব্যাবসা, শিক্ষক, চাষী, শ্রমিক সবার স্বার্থ দেখার জন্যেই গণতন্ত্র।
যে গণতন্ত্র আমরা পেলাম তা স্বার্থ দেখে সরকারী চাকুরে আর বড় ব্যাবসায়ীদের। তাদেরই সব 'সে'। বাকী ছোট ব্যাবসায়ী চাষি লেবার এই গণতন্ত্রে কেও না!!! চাকুরেদের 'সে' আছে কারন, তারা সব পার্টির শীর্ষ পদগুলো দখল করে বসে আছে। আর ব্যাবসায়ী দের আছে কারন তারাই টাকা দিয়ে দল চালাচ্ছে। বাকীদের জন্যে এই গণতন্ত্র কিছু রাখে নি।
এমন নয় যে এটা কেও বোঝে না। রাহুল গান্ধী অনেক বার এই কথা বলেছেন। নক্সালরা বাদ দিয়ে বাকী পার্টিগুলো এই নিয়ে ভাবার সময় ও পায় না। তারা মস্তান আর টাকা নামিয়ে ভোট গুণতেই ব্যাস্ত। কিন্ত এইভাবে কতদিন একটা বৃহত্তর অংশকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র চলবে?
কিন্ত এর জন্যে বাম বা ডান কোন পন্থী আন্দোলনেরই দরকার নেই। দরকার ছিল গণতন্ত্রের খোল বদলানো। সেটা নিয়ে কারুর কোন ভাবনা নেই।
এটি বামেদের আবিস্কার। আমি শোষিত, আমি নির্যাতিত-তাই আমি চাই। কি চাই সেটাও আমি জানি না-দু চারটে বাস পোড়ানো, অর্কুটে মহিলাদের প্রকাশ্যে ধর্ষনের ইচ্ছা করার বামবিপ্লব-ইত্যাদি সবই অধিকার। জন্মপ্রদত্ত। কারন বামবাঙালী মনে করে জন্ম হইতে সে পুজিপতি এবং বুর্জোয়া ভূতেদের দ্বারা বঞ্চিত হইয়াছে। লেনিনবাদ নামক যাবতীয় আধভৌতিক তত্ত্ব, যা ভারতীয় পুরাণগাথার সমতুল্য-তাই দিয়ে সমাজের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা - সমস্যাটার ১% না বুঝেই- আমাকে সত্যিই অবাক করে।
পৃথিবীর নানান দেশের সংস্কৃতি এবং নানান মানুষের সংস্পর্ষে আসার পরে, পরিস্কার করেই বলি-করণিক, শিল্পী, কবি, দাবা, তাস এবং খাদ্য রসনা- এই কটি ক্ষেত্রে বাঙালী অসাধারন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক ভাবেই সেরা।
কিন্ত রাজনীতি, দর্শন এবং বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় বাঙালী ব্যার্থ।
যে ব্যাপারটা আমাকে অবাক করে-সেটা হচ্ছে এই-পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার কোথায় এগিয়ে গেছে, আর এই বাম বাঙালীরা এখনো সব এঙ্গেলেস এবং লেনিনের রূপকথা চর্চা করতে ভালোবাসেন। সেই নিয়ে আগে অনেক লিখেওছি-সমাজবিজ্ঞানে কত শত আবিষ্কার হয়ে চলেছে-পৃথিবী কত দ্রুত বদলাচ্ছে-এরা এসব কিছু জানেও না -বোঝেও না। পশ্চিম বঙ্গে যারা বাম রাজনীতির চর্চা করে তাদের মতন মাথামোটা এবং আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে অজ্ঞ পৃথিবীতে অতুলনীয়। প্রভাত পট্টনায়েকের মতন দর্শন শাস্ত্রের একজন বিরাট গোল যাদের শীর্ষ তাত্ত্বিক-তাদের নিয়ে হাসাহাসি করা ছাড়া আমার উপায় নেই। সিপিআই এম এল সাইট তাও মন্দের ভাল- ওদের একটা লাইন আছে, যা আনকম্প্রোমাইজিং। ওদের সমাধানে ভুল আছে, অবজারভেশনে ভুল নেই। ভারতীয় গণতন্ত্রে ওই সমস্যাগুলো নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলই মাথা ঘামায় না। নক্সালপন্থী দলগুলির প্রতি আমার শ্রদ্ধা এই জন্যেই আছে যে বাকীদলগুলি যেখানে দালালরা চালাচ্ছে-এবং যার জন্যে জনগণের সমস্যাটা উঠে আসছে না-সেখানে ওরা ফোকাস করতে পেরেছে। ওদের সমাধান ভুলভাল-কিন্ত এই সমস্যাগুলো কেন গণতন্ত্রে উঠে আসবে না?
কেন প্রতিটা পার্টি ব্যাবসায়ীদের দালালে পরিণত হবে?
রাজনীতিতে সবার প্রভাব থাকবে-সেটাই সার্থক নীতি। ছোট বড় সব ব্যাবসা, শিক্ষক, চাষী, শ্রমিক সবার স্বার্থ দেখার জন্যেই গণতন্ত্র।
যে গণতন্ত্র আমরা পেলাম তা স্বার্থ দেখে সরকারী চাকুরে আর বড় ব্যাবসায়ীদের। তাদেরই সব 'সে'। বাকী ছোট ব্যাবসায়ী চাষি লেবার এই গণতন্ত্রে কেও না!!! চাকুরেদের 'সে' আছে কারন, তারা সব পার্টির শীর্ষ পদগুলো দখল করে বসে আছে। আর ব্যাবসায়ী দের আছে কারন তারাই টাকা দিয়ে দল চালাচ্ছে। বাকীদের জন্যে এই গণতন্ত্র কিছু রাখে নি।
এমন নয় যে এটা কেও বোঝে না। রাহুল গান্ধী অনেক বার এই কথা বলেছেন। নক্সালরা বাদ দিয়ে বাকী পার্টিগুলো এই নিয়ে ভাবার সময় ও পায় না। তারা মস্তান আর টাকা নামিয়ে ভোট গুণতেই ব্যাস্ত। কিন্ত এইভাবে কতদিন একটা বৃহত্তর অংশকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র চলবে?
কিন্ত এর জন্যে বাম বা ডান কোন পন্থী আন্দোলনেরই দরকার নেই। দরকার ছিল গণতন্ত্রের খোল বদলানো। সেটা নিয়ে কারুর কোন ভাবনা নেই।
Wednesday, April 14, 2010
শুভ নববর্ষ - নতুন দিনের সন্ধানে : বাংলা সিনেমা শিল্পকে সাহায্য করুন
প্রিয় বাঙালী বন্ধুরা
আপনাদের সবাইকে ১৪১৭ সালে স্বাগত জানাই।
এই বছর থেকেই আমরা প্রথম প্রবাসী বাংলা সংবাদঃ www.vnnbangla.com চালু করেছি। আপনাদের সংগঠনের সব সংবাদ এখানে আপনারা নিজেরাই প্রকাশ করতে পারবেন। পিডিএফ, টেক্সট, ইউটিউব-সব ফর্মাটেই এখানে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শুধু রেজিস্টার করে আপলোড নিউজ বাটন ক্লিক করলেই একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। সেটির মধ্যে আপনাদের সংবাদটি কাট পেস্ট করলেই প্রকাশ করতে পারবেন। যদি আরো নির্দেশের দরকার হয়, এখানে দেখে নিতে পারেন।
এছাড়াও আপনাদের সংগঠনে যারা লেখালেখির সাথে জড়িত, তারা তাদের লেখা এখানে প্রকাশ করলে আমরা সবাই উপকৃত হই। ফেসবুকে আমাদের গ্রুপে ৩০০০ পাঠক আছে যাদের কাছে তারা তাদের লেখাকে অনায়াসে ভি এন এন বাংলার পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
আমরা বাংলা ভাষায় প্রথম সোশাল মিডিয়া-জনগণের কথা জনগণ বলবে-এই ভাবেই আমাদের মিডিয়া চলে। আপনারা আপনাদের সংগঠনের যাবতীয় সংবাদ বা নোটিশ এখানের প্রবাসী বাঙালী পেজ়ে ছাপালে, কোথায় কবে বাংলা অনুষ্ঠান হচ্ছে সবাই জানতে পারবে। ইংরেজিতে সংবাদ ছাপালেও কোন অসুবিধা নেই।
বাংলা সিনেমা শিল্পকে প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে জনপ্রিয় করার জন্যে আমাদের বিশেষ প্রচেষ্টা রয়েছে। এই ব্যাপারে ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চার ( যা আরেক বাঙালী অনি শীলের তৈরী ডেটাবাজার গ্রুপের মিডিয়া ভেঞ্চার) সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত নতুন বাংলা সিনেমাকে প্রবাসী বাঙালীদের কাছে পৌছে দেওয়ার যে ব্যাবস্থা করেছে, তাতে আমরা সহযোগিতা করছি। নানান কারনে প্রবাসী বাঙালী বাংলা সিনেমা দেখতেই ভুলে গেছে। আসুন আমরা আবার সবাই মিলে চেষ্টা করে দেখি বাংলা সিনেমার হাল ফেরানো যায় কি না। ডেটাবাজারের দৌলতে বাংলা সিনেমা এখন আই টিউনেও দেখতে পাবেন। বাঙ্গালী হিসাবে সেই উদ্যোগে
আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি। বাংলা ফিল্ম রিভিউ বলে আমাদের আরেকটি গ্রুপ আছে-যেখানে সদ্যমুক্তি প্রাপ্ত বাংলা সিনেমার যাবতীয় খবর এবং রিভিউ আপনারা পাবেন।
এই বিশ্বায়নের যুগে বাঙলা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন কাজ। আমরা চেষ্টা করছি। আপনারাও সহযোগিতা করুন।
এবং সবথেকে ভাল সহযোগিতা হচ্ছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে বা ভিন এন এন বাংলাতে সংবাদ দিন।
নববর্ষের শুভেচ্ছা সহঃ
ভিন এন এন বাংলা টিমঃ
www.vnnbangla.com
( self publishing system for Global Bengali )
Saturday, April 3, 2010
বাম না ডান? আপনি কোন দিকে?
All ideologies are idiotic, whether religious or political, for it is conceptual thinking, the conceptual word, which has so unfortunately divided man.
Jiddu Krishnamurti
বাংলা সংস্কৃতি এবং চিন্তার তিনটি প্রধান ধারা বর্তমানে খুব সুষ্পষ্ট। ধর্মীয় দক্ষিনপন্থী, বামপন্থী এবং সহজিয়া মানবতাবাদ। বিভাজন রেখা যে সব সময় খুব সুস্পষ্ট না-বরং তা ধুম্রজালিপ্ত।
গত তিন দশকে দুই বাংলাতেই শক্তিশালী ধর্মীয় রক্ষনশীল রাজনৈতিক সমর্থক শ্রেণীর উদ্ভব বাঙালি সমাজের করুন বাস্তবতা। পশ্চিম বাংলাতে তারা ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু সংখ্যার দিক দিয়ে তারা মোটেও নগণ্য না। আর বাংলাদেশেত তারা ক্ষমতায় ছিল দীর্ঘদিন। বাংলার বামপন্থী শক্তিগুলির সর্বান্তিক ব্যার্থতা দক্ষিনপন্থী শক্তির উথানের জন্যে দায়ী। অবশ্য এই ব্যার্থতার পেছনে বাম নেতৃত্বের দুষনকে গালাগাল দেওয়াটাও আমাদের অভ্যেস। কিন্তু ভুলটা আমাদের চিন্তাধারাতেই।
এর বাইরে বাঙালীর বিশাল অংশ আজকেও সহজিয়া। যার প্রতিনিধিত্ব করেছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং লালন ফকির। এটাই বাংলার মূলশ্রোত। মার্ক্স, মহম্মদ এবং মনু যে বাঙ্গালীর একটা বড় অংশেরই বদ হজম হয়েছে এবং তা বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ন বেমানান-তার জন্যে পাশের বাড়ির দিকে তাকালেই হবে। খুব বেশী গবেষনা করার দরকার নেই।
এবার মূল প্রশ্নে ফিরে আসি। এই ভাবে আমরা যে নিজেদের মধ্যে বাম ডান বিভাজন টানি-এটা কি ঠিক?
প্রতিটি ধর্মের উত্থানই কিন্ত তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক বামপন্থী শক্তি হিসাবে। ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি যেমন মিশরের দাশ বিদ্রোহ থেকে, ঠিক তেমনই ইসলামের উত্থান তৎকালীন আরবের গরীবগুর্বোদের মক্কার ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্রেনী বিদ্রোহ হিসাবে। ভারতের বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের উত্থান ও নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সাপেক্ষে অবশ্যই বামপন্থী চিন্তা। প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিবাদি আন্দোলনের সাথেই সাম্য এবং নতুন চিন্তার জোয়ার এসেছে। তাতে অবশ্য মানব মুক্তি আসে নি। বরং ইসলাম বা খ্রীষ্ঠান ধর্মের ঘারে চেপেই সব থেকে বেশী মানব শোষন অব্যাহত। ভারতেও হিন্দুত্বের ঘারে চেপে ঠিকই একই ব্যাপারটাই চলছে। মার্ক্সবাদ তথা কমিনিউমের ইতিহাসও আলাদা কিছু না। মানব মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানবতার সব থেকে বড় দলন কমিনিউস্টরাই করেছেন। প্রতিবাদি আন্দোলনগুলি কেন মানবমুক্তির জন্যে ব্যার্থ হল সেই নিয়ে আগেই বিস্তারিত লিখেছি।
এমন নয় যে মার্ক্সবাদিরা ওপরে লাইনগুলো জানেন না। কিন্ত তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, তারাও দেখতে পাচ্ছেন না, কেন এক সময়ের প্রতিবাদি আন্দোনগুলি বর্তমানে প্রতিক্রীয়াশীল শক্তিতে রূপান্তরিত। এটা ঠিক করে দেখতে পেলেই, উনারা নিজেদের ভুলটা সবার আগে বুঝতেন। আর সেটা হল এই-জ্ঞান, বিজ্ঞান উন্নতির সাথে সাথে শোষন এবং শোষক শ্রেনীর বিবর্তন হয়।
উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনই সমাজ এবং সামাজিক শক্তিগুলির পুনঃবিন্যাস করে। ফলে প্রতিবাদি আন্দোলনের ধারাটাও বদলে যেতে ব্যার্থ। এসব কথা মার্ক্সসাহেব অনেক দিন আগে থেকেই বলে গেছেন-কিন্ত তথাকথিত বাঙালী মার্ক্সবাদিরা মাছভাত আর মার্ক্সবাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন বলে আমার কোন দিনই মনে হয় নি। ফলে বাঙালী বামপন্থী আন্দোলন এখন কোমাতে উঠে গেছে।
বাঙালী বামপন্থীদের চিন্তাশক্তির দৈন্যতা খুঁজতে জিডু কৃষ্ণমুর্তির কিছু কিছু কথা খুবই প্রাণিধানযোগ্য। এগুলো যারা দক্ষিন পন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তারা যদিও বা কিছুটা বোঝেন, বামপন্থীরা এই দিক গুলি নিয়ে একবারেই অবুঝ।
এক্ষেত্রেও একটু ভেবে দেখলে দেখবেন, কমিনিউস্টদের চিন্তাধারার পেছনেও মর্গানের নৃতত্ত্বের রূপকথা বা ফ্রেডরিক এঞ্জেলেসের সামাজিক বিবর্তনের আষাঢ়ে গল্পই কাজ করছে, যা শতবর্ষ আগেই এক্যাডেমিক সার্কলে পরিতক্ত্য। সুতরাং আসলে, তারাও একধরনের রূপকথাতেই বিশ্বাস করছেন।
আসল সত্য হল, হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্ট বা কমিনিউস্টরা সবাই এক গোয়ালের গরু-শুধু এদের সময়কাল আলাদা। কেও ব্রজের বৃন্দাবনে বাঁশীর সুরে সামাজিক কংস বধের স্বপ্ন দেখে-কেওবা সপ্তম শতকের আরবে উটের দুধ খেতে খেতে আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর-আর কমিনিউস্টরা বলশেভিক বিপ্লবের ন্যায় এক গণতন্ত্র হত্যাকারী প্রতিবিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার সোপান বলে বিশ্বাস করে বসে আছে।
এদের মানসিক রোগটা একই গোত্রের। সেটা হল আধুনিক বিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্রে সম্পূর্ন অজ্ঞানতা।
The constant assertion of belief is an indication of fear.
Jiddu Krishnamurti
Jiddu Krishnamurti
বাংলা সংস্কৃতি এবং চিন্তার তিনটি প্রধান ধারা বর্তমানে খুব সুষ্পষ্ট। ধর্মীয় দক্ষিনপন্থী, বামপন্থী এবং সহজিয়া মানবতাবাদ। বিভাজন রেখা যে সব সময় খুব সুস্পষ্ট না-বরং তা ধুম্রজালিপ্ত।
গত তিন দশকে দুই বাংলাতেই শক্তিশালী ধর্মীয় রক্ষনশীল রাজনৈতিক সমর্থক শ্রেণীর উদ্ভব বাঙালি সমাজের করুন বাস্তবতা। পশ্চিম বাংলাতে তারা ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু সংখ্যার দিক দিয়ে তারা মোটেও নগণ্য না। আর বাংলাদেশেত তারা ক্ষমতায় ছিল দীর্ঘদিন। বাংলার বামপন্থী শক্তিগুলির সর্বান্তিক ব্যার্থতা দক্ষিনপন্থী শক্তির উথানের জন্যে দায়ী। অবশ্য এই ব্যার্থতার পেছনে বাম নেতৃত্বের দুষনকে গালাগাল দেওয়াটাও আমাদের অভ্যেস। কিন্তু ভুলটা আমাদের চিন্তাধারাতেই।
এর বাইরে বাঙালীর বিশাল অংশ আজকেও সহজিয়া। যার প্রতিনিধিত্ব করেছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং লালন ফকির। এটাই বাংলার মূলশ্রোত। মার্ক্স, মহম্মদ এবং মনু যে বাঙ্গালীর একটা বড় অংশেরই বদ হজম হয়েছে এবং তা বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ন বেমানান-তার জন্যে পাশের বাড়ির দিকে তাকালেই হবে। খুব বেশী গবেষনা করার দরকার নেই।
এবার মূল প্রশ্নে ফিরে আসি। এই ভাবে আমরা যে নিজেদের মধ্যে বাম ডান বিভাজন টানি-এটা কি ঠিক?
প্রতিটি ধর্মের উত্থানই কিন্ত তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক বামপন্থী শক্তি হিসাবে। ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি যেমন মিশরের দাশ বিদ্রোহ থেকে, ঠিক তেমনই ইসলামের উত্থান তৎকালীন আরবের গরীবগুর্বোদের মক্কার ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্রেনী বিদ্রোহ হিসাবে। ভারতের বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের উত্থান ও নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সাপেক্ষে অবশ্যই বামপন্থী চিন্তা। প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিবাদি আন্দোলনের সাথেই সাম্য এবং নতুন চিন্তার জোয়ার এসেছে। তাতে অবশ্য মানব মুক্তি আসে নি। বরং ইসলাম বা খ্রীষ্ঠান ধর্মের ঘারে চেপেই সব থেকে বেশী মানব শোষন অব্যাহত। ভারতেও হিন্দুত্বের ঘারে চেপে ঠিকই একই ব্যাপারটাই চলছে। মার্ক্সবাদ তথা কমিনিউমের ইতিহাসও আলাদা কিছু না। মানব মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানবতার সব থেকে বড় দলন কমিনিউস্টরাই করেছেন। প্রতিবাদি আন্দোলনগুলি কেন মানবমুক্তির জন্যে ব্যার্থ হল সেই নিয়ে আগেই বিস্তারিত লিখেছি।
এমন নয় যে মার্ক্সবাদিরা ওপরে লাইনগুলো জানেন না। কিন্ত তাদের মূল সমস্যা হচ্ছে, তারাও দেখতে পাচ্ছেন না, কেন এক সময়ের প্রতিবাদি আন্দোনগুলি বর্তমানে প্রতিক্রীয়াশীল শক্তিতে রূপান্তরিত। এটা ঠিক করে দেখতে পেলেই, উনারা নিজেদের ভুলটা সবার আগে বুঝতেন। আর সেটা হল এই-জ্ঞান, বিজ্ঞান উন্নতির সাথে সাথে শোষন এবং শোষক শ্রেনীর বিবর্তন হয়।
উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনই সমাজ এবং সামাজিক শক্তিগুলির পুনঃবিন্যাস করে। ফলে প্রতিবাদি আন্দোলনের ধারাটাও বদলে যেতে ব্যার্থ। এসব কথা মার্ক্সসাহেব অনেক দিন আগে থেকেই বলে গেছেন-কিন্ত তথাকথিত বাঙালী মার্ক্সবাদিরা মাছভাত আর মার্ক্সবাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন বলে আমার কোন দিনই মনে হয় নি। ফলে বাঙালী বামপন্থী আন্দোলন এখন কোমাতে উঠে গেছে।
বাঙালী বামপন্থীদের চিন্তাশক্তির দৈন্যতা খুঁজতে জিডু কৃষ্ণমুর্তির কিছু কিছু কথা খুবই প্রাণিধানযোগ্য। এগুলো যারা দক্ষিন পন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তারা যদিও বা কিছুটা বোঝেন, বামপন্থীরা এই দিক গুলি নিয়ে একবারেই অবুঝ।
- যার চিন্তায় স্ববিরোধিতা নেই-সে আসলে কোন চিন্তা করতেই জানে না। আমাদের মনের দ্বন্দগুলিই, মানসিক বিবর্তনের একমাত্র কারন। ইসলাম, হিন্দুত্ববাদি, কমিনিউস্টদের অধিকাংশই নিজেদের মত এবং পথকে এতটাই সঠিক বলে মনে করে-নিজেদের মনের মধ্যে যে দ্বন্দগুলির উৎপত্তি হয়-সেগুলিকে তারা গুরুত্ব দিতে নারাজ। অথচ, নিজেদের মনের দ্বন্দগুলি নিয়ে তারা যদি যথেষ্ঠ অনুসন্ধান করত-তাহলেই তারা নিজেদের স্বআরোপিত বন্দিত্ব দশা থেকে মুক্তি পেত।
- দ্বিতীয় যে সমস্যাটা আমি আলোচনা করতে চাই-সেটা হচ্ছে সামাজিক সমস্যা বোঝার আগেই, তাহা বাইবেল, কোরান বা দাশ ক্যাপিটালে আছে, এই জাতীয় ভ্রান্ত চিন্তাধারা। ইসলামিস্ট, হিন্দুত্ববাদি এবং কমিনিউস্টদের সব থেকে বড় মিলন দৃশ্য ইহাই। আমাদের সবারই এটাই করুন অভিজ্ঞতা। যেকোন সমস্যার ব্যাপারে এদের সাথে আলোচনা করতে গেলে, দেখবন এরা ১০০% কনভিন্সড-তাদের রচিত ইসলামিক, হিন্দু বা কমিনিউস্ট স্বর্গে এই ধরনের সমস্যা থাকবে না! কেন এমন হয়? সমস্যাটাকে গভীরে বোঝার আগেই, নিজেদের রচিত মূর্খের এরা স্বর্গে সমাধান খোঁজে। আমি একটা সাম্প্রতিক উদাহরন টানি। ভারতে খাদ্যের দামের উর্দ্ধগতি এবং ঘাটতি ভীশন রকমের একটি বাস্তব সমস্যা। এটা নিয়ে বামেরা জেল ভরার আন্দোলন থেকে শুরু করে ইত্যাদি নাচুনি কুদুনি সব সব ধরনের সস্তার রাজনৈতিক পথ নাটিকা করে বেড়ালেন। অথচ এই ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্যে যে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াটি শুরু করার দরকার ছিল-সেটি নিয়ে কোন বামনেতৃত্বই ভাবলেন না। সামান্য হলেও কংগ্রেসের প্রণব বাবু সমস্যাটির রাজনৈতিক সমাধান না খুঁজে বিশেষজ্ঞ কমিটি বসিয়ে খাল বিল সংস্কার থেকে কৃষিগবেষনাতে টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নেন। সমাধানের জন্যে এই তীব্র আবেগ-আসলেই সমস্যাকে তীব্রতর করে-সমাধানের পথে নিয়ে যায় না। যেকোন সমস্যাকে গভীরে গিয়ে বিশ্লেষন করাই সমাধানের প্রথম এবং একমাত্র পথ।
- আদর্শবাদ দিয়ে কোন সত্যেই পৌছানো যায় না। হিন্দুত্ব, ইসলাম, কমিনিউজম-মানুষকে কোন সত্যের পথে দেখাতে পারে না-কারন ওই ধরনের পরম সত্যের আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই। বাস্তব এটাই প্রতিটা মানুষের জীবনে অনেক প্রশ্নেরই কোন উত্তর থাকবে না। এই অপূর্ণতা নিয়েই আমাদের জন্ম এবং মৃত্যু। অথচ যেকোন হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট বা কমিনিউস্টদের মধ্যে যে মিলন দৃশ্যটি আপনি সবার আগে পাবেন-সেটি হচ্ছে এদের অগাধ আত্ম বিশ্বাস-এরা জীবনের প্রশ্নগুলির উত্তর পেয়ে গেছেন! এগুলো শ্রেফ অজ্ঞানতা এবং অগভীর চিন্তার মূর্খামি।
- ইসলামিস্ট, কমিনিউস্ট এবং হিন্দুত্ববাদিদের মধ্যে আরো একটি সাদৃশ্য -ঐতিহ্য নিয়ে এদের সহমত। বামেরা বাম ঐতিহ্যে, ডানেরা ডান ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। কেন? এর উত্তর সমাজ বিজ্ঞানে পাওয়া যায়। সবাই ক্লাব মেম্বারশিপ ভালো বাসে। কোন একটি প্রথাগত ধারায় বিশ্বাস করলে, সমর্থক এবং সহযাত্রী জোটে অনেক-যা মানুষের সামাজিক মুল্যবৃদ্ধির সহায়ক। টাকা পয়সার মতন এটাও একটি লোভ । রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের জন্যে আমরা সবাই "সমাজে নিজেদের কে ফিট করানোর চেষ্টা করি"। নিজেকে হিন্দু বলে জাহির করে যেমন আপনি একটা ক্লাবে ফিট করবেন, ঠিক তেমনই "সিপিমের সমর্থক" বা "আওয়ামী লীগের সমর্থক' বললে আরেকটা ক্লাব মেম্বারশিপ আপনি পাবেন, যা নিজেদের সামাজিক মুল্যবৃদ্ধির জন্যে লোভনীয়। ট্রাডিশনের সাথে নিজেকে 'ফিট' করানোর এই চেষ্টা আসলে একধরনের মানসিক নিরাপত্তার জন্ম দেয়। কিন্ত এর একটা মারাত্মক কুঃপ্রভাব আছে। মনের বিবর্তনের জন্যে ক্লাব মেম্বারশিপের মাধ্যমে মানসিক নিরাপত্তার সন্ধান-আসলেই মানসিক উন্নতির অন্তঃরায়।
এক্ষেত্রেও একটু ভেবে দেখলে দেখবেন, কমিনিউস্টদের চিন্তাধারার পেছনেও মর্গানের নৃতত্ত্বের রূপকথা বা ফ্রেডরিক এঞ্জেলেসের সামাজিক বিবর্তনের আষাঢ়ে গল্পই কাজ করছে, যা শতবর্ষ আগেই এক্যাডেমিক সার্কলে পরিতক্ত্য। সুতরাং আসলে, তারাও একধরনের রূপকথাতেই বিশ্বাস করছেন।
আসল সত্য হল, হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্ট বা কমিনিউস্টরা সবাই এক গোয়ালের গরু-শুধু এদের সময়কাল আলাদা। কেও ব্রজের বৃন্দাবনে বাঁশীর সুরে সামাজিক কংস বধের স্বপ্ন দেখে-কেওবা সপ্তম শতকের আরবে উটের দুধ খেতে খেতে আদর্শ ইসলামিক রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর-আর কমিনিউস্টরা বলশেভিক বিপ্লবের ন্যায় এক গণতন্ত্র হত্যাকারী প্রতিবিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার সোপান বলে বিশ্বাস করে বসে আছে।
এদের মানসিক রোগটা একই গোত্রের। সেটা হল আধুনিক বিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্রে সম্পূর্ন অজ্ঞানতা।
The constant assertion of belief is an indication of fear.
Jiddu Krishnamurti
Subscribe to:
Posts (Atom)