ভারতে খাবারের দামে আগুন নেভানো যাচ্ছে না। অনেক কারন আছে-জলবায়ু এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাবারের দামের উর্দ্ধগতি তার অন্যতম। আনন্দবাজার সেটাই লিখেছে।
এমনটা হবে আমি ২০০৭ সালের এক প্রবন্ধেই ব্যাখা করেছিলাম।
সমস্যা হচ্ছে ভারতে সমস্যা সমাধানের জন্যে আমরা প্রযুক্তির দিকে না তাকিয়ে-রাজনৈতিক দলাদলি করি বেশী। একদিকে সুবিধাবাদি দক্ষিনপন্থী ঘুঘু, অন্যদিকে নির্বোধ বামপন্থী-আর মধ্যেখানে নিধিরাম সর্দার কংগ্রেস। ২০-২০ ম্যাচ খেলছে। লংটার্ম কোন প্ল্যানিং নেই! অথচ প্রযুক্তি ছাড়া, স্ট্রাটেজি ছাড়া ভারতীয় কৃষিকে বাঁচাবে কার সাধ্য?
ভেবে দেখুন
(১) কৃষিক্ষেত্র থেকে ফসল আর আগের মতন হচ্ছে না। অজৈব চাষ করে মাটি শেষ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর আরো বেশী জল, সার লাগছে।
(২) ব্যাপক নগরায়নের জন্যে চাষযোগ্য জমিও ক্রমহ্রাসমান।
(৩) অথচ লোক সংখ্যা বেড়েই চলেছে-যেখানে সবাইকে পেট পুরে খেতে দিতে হলে, এমনিতেই ভারতে খাদ্যাভাব থাকে। গুদামে গম পচার কথা না।
(৪) ভূর্গভস্থ জল কমে চলেছে। আর চাষে আরো বেশি করে জল লাগছে। ফলটা কি হবে? সেচের খরচ সাংঘাতিক! ফলে উৎপাদিত শষ্যের দাম বেশী হবেই!
এসব আমরা সবাই জানি! তাহলে ব্যাবস্থা নিচ্ছি না কেন?
(১) কেন ইস্রায়েল থেকে শিখছি না কি করে শুধু আদ্রতা রেখে চাষে জলের ব্যাবহার ৯০% কমানো যায়?
(২) কেন সেচে সোলার বিদ্যুত ব্যাবহার করা হচ্ছে না? এতে খরচ অনেক কমত।
(৩) সমবায় গড়ে তুলতে কোন পার্টির কোন আগ্রহ নাই।
(৪) খাদ্য সংরক্ষনের জন্যে সোলার চালিত আধুনিক হিমঘর কোথায়?
(৫) দেশের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিনপনের ও দুরাবস্থা। একটু বেশী উৎপাদন করলেই আলু ২ টাকা কিলোদরে রাস্তায় পচে! চাষিরাই বা নিজেদের আত্মহত্যার পথা কেন চওড়া করে খুলবে?
আসল ব্যাপারটা কি? গণতান্ত্রিক কোন কাঠামোতে ভোট নিয়ে ফোকাসটাই মুখ্য। টি-২০ গেম। জনগনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনা নেই। খাবারের দামের যে বিষ্ফোরন হবে ভারতে বহুদিন থেকে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। আমি ত দুবছর আগে আমেরিকাতে প্রকাশিত প্রবন্ধের ভিত্তিতে এই নিয়ে লিখেও ছিলাম। গনতন্ত্র বিশেষজ্ঞদের কথা শোনে নি কেন? আমার দেখলে হাঁসি পায় যেখানে রোগ এত গভীরে এই ইউ সি আই এই নিয়ে বন্ধ ডাকছে!
রুগী মুমুর্ষ। দরকার চিকিৎসা। প্রযুক্তি আর স্ট্রাটেজি। সেই নিয়ে কারুর হুঁস নেই। সবাই সবাইকে দোষারোপ করতেই ব্যাস্ত।
কেন এমন হয়? আমেরিকাতে ২০০৭ সালে খাবারের দাম বাড়তেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গবেষনা শুরু করে-এবং তার ভিত্তিতে কিছু আসু পরিবর্তন ও আসে আমেরিকার কৃষিক্ষেত্রে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কি শুধু ডিগ্রি দেওয়ার জন্যে আছে? তারা কি আদৌ দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে গবেষনা করে? সেসব না করলে চেতনাটাই বা আসবে কি করে?
সমাধানের আসল পথ হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং গবেষনা। স্বাধীনতার ৬০ বছর বাদেও এই বোধটাই আমাদের জন্মালো না। শুধু খাদ্য আন্দোলনের রোমমন্থন-নইলে রাজনীতি।
এই ভাবে একবিংশ শতাব্দিতে কোন দেশ চালানো যায় না।
No comments:
Post a Comment