উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে পিঠোপিঠি দুই দিনে ভারতীয় গণতন্ত্রের দুই কদর্যরূপ দেখলাম আমরা।
মায়াবতী তার বিরোধী নেত্রীকে জেলে ভরলেন। রীতা বহুগুনা যা বলেছেন তা নিন্দানীয় মোটেও কিছু না। তফসিলী জাতি উপজাতিকেও উনার বক্তব্যে কোন অপমান করা হয় নি। মায়াবতীর মতন একজন দুর্নীতি পরায়ন ফ্যাসিস্ট সুবিধাবাদি নেত্রীকে যদি ততধিক সুবিধাবাদি পার্টির আরেক নেত্রী বলে থাকেন -যদ্দিন মায়াবতীকে কেও ধর্ষন না করবে, এই সুবিধাবাদি মহিলাটি, যেসব ধর্ষিত মহিলাদের নিয়ে রাজনীতি করছেন, তাদের দুঃখ তিনি বুঝবেন না। মায়াবতীকে উল্লেখ করতে উনি দলিতদের নেত্রী কথাটি ব্যাবহার করেছেন। এতে অপরাধ কি-মহাভারত কিসে অসুদ্ধ হবে তাও বুঝলাম না। কারন মায়াবতী নিজেকেত সেই অর্থেই সম্বোধন করে থাকেন! এই টুকু কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে গনতন্ত্রের তামাকু টানিয়া লাভ কি?
এবং ভারতের এই সব আদ্দিকালের আইন টাইন গুলোও অদ্ভুত। পৃথিবীর অধিকাংশ সভ্যদেশেই মানহানির মামলা বড়জোর সিভিল হতে পারে-ক্রিমিন্যাল হয় না। ভারতের আইন কানুন এত পিছিয়ে এখনো এই দেশে আপনি দশ বিশটি মানুষ খুন করে দিব্বি মন্ত্রী হতে পারেন-কিন্ত একটি বেফাঁস কথা বল্লে, এবং রাজনীতি আপনার বিপক্ষে থাকলে জেলে যাবেন। বরুণ গান্ধীর হিন্দুদের জন্যে গরম চা ঢালিলেন। হিন্দু মেয়েদের দিকে তাকালেই হাত কেট ফেলব-এই জাতীয় কিছু গরম হট ডগ জনতাকে খাওয়াতে গিয়ে উনি মাস খানেক জেলে থাকলেন! কিন্ত সমাজবাদির পার্টির মুসলিম এম পি হাজি ওয়াকব কুরেশি,
ড্যানিশ কার্টুনিস্টের মাথার ওপর কোটি টাকার ফতেয়া দিয়েও বহাল তবিয়তে ঘোরেন! তসলিমা কে যে ৫ জন মুসলিম এম এল এ আক্রমন করেছিল হায়দ্রাবাদে-তাদের একটি দিনও জেলে থাকতে হয় নি! অদ্ভুত আমার দেশ! এখানে পছন্দ সই কথা না বলিলে আপনি জেলে। কিন্ত রাজনীতি আপনার পক্ষে থাকলে-বিপক্ষকে দু ঘা মেরে আসুন-তার বাড়ি পুড়িয়ে দিন। কিস্যুই হবে না-কে ছোঁবে আপনার টিকি? মায়াবতী নিজেই এর থেকে অনেক বাজে কথা বলেছে। কিন্তু ওই যে বল্লাম। ঠিক সময়ে বললে ক্ষতি নেই। কালকে মায়াবতী রাজ্যপাট হারালে জয়ললিতে মতন জেলে যাবে। এদের লজ্জা শরমও আজকাল কিস্যুই নেই।
মঙ্গলকোটে যা হল-সেটাও সেই একই ব্যাধি। এই দেশে আইন-আদালত-পুলিশ এসব আদৌ কিছু আছে কি না-রাজ্যের মুখমন্ত্রী নিজেও জানেন না। দেদারসে দুই দিকেই লাশ পড়ছে। মন্ত্রী জুতোপেটা খাচ্ছেন-বিধায়করাও ধুতি তুলে পালাচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্যে সুসংবাদ না দুঃসংবাদ সেটাও বুঝতে পারছি না।
পুলিশের অস্তিত্ব না থাকলে কোর্টের ও থাকে না। পুলিশ বুঝে গেছে দুবছর বাদে পালা বদল হবে। ফলে এখনও সিপিএমের বশংবদ হয়ে থাকলে দুবছর বাদে ভাগ্যে শাঁসালো পোস্টিং এর বদলে পুরুলিয়াতে মাওবাদিদের হাতে পড়তে হতে পারে। আবার সিপিএমের বিরুদ্ধে গেলে, এখুনিই বিপদ। এই রাজ্যের পুলিশ ফোর্সের কাছে, তাদের চাকরি এখন শাঁখের করাত। ফলে উনারাও হাত গুটিয়ে দর্শকের ভূমিকায়। আমাদেরই মতন।
পুলিশ এবং আমাদের আইন-এর আমূল পরিবর্তন দরকার। বৃটিশ আমলে আইনজ্ঞদের যে সন্মান ছিল-আজ তা নেই। বস্তুত কোর্ট আইন-আদালত-পুলিশ-রাজনীতির এই কুম্ভীপাকের ওপর কারুর কোন বিশ্বাসই আজ নেই। গণতন্ত্রের জন্যে, রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য, এহেন অবস্থা অনভিপ্রেত। পুলিশ, আইন -এসব পুলিশ বা আইনমন্ত্রীরা হাতে না রেখে, একটি পার্লামেন্টারী কমিটির হাতে থাকুক। যাতে সব দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। আদালতেও আমেরিকার মতন জুরী ব্যাবস্থা চালু হৌক। যাতে জনগনও আদালতের রায়দানের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারে। আইনটা শুধু আইনজ্ঞ এবং বিচারকদের হাতে চললে, সেখানে টাকার ঘুগু চরবে। যা চলছেও। নইলে মাত্র ৪০ হাজারটাকা ঘুঁশ দিয়ে কেও রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট বার করতে পারে এই দেশে!
মোদ্দা কথা সরকার নামক বস্তুটা থেকে পুলিশ এবং আদালতকে আলাদা করতে হবে। এটা না করতে পারলে, পুলিশ এবং আদালতের ওপর নূন্যতম আস্থাটুকুও কারুর থাকবে না। এতে জনগন এবং আইনজ্ঞ-সবারই ক্ষতি। রাষ্ট্রের স্বার্থেই এখন সবাইকে রাজী হতে হবে, পুলিশ এবং আদালত যেন প্রকৃতভাবে জনগণের হাতে থাকে। এইটুকু রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাজলে নৈরাজ্যের আরো ঘন অমবশ্যাতে ডুবে যাবে পশ্চিম বঙ্গ।
No comments:
Post a Comment