মাওবাদিদের কোলকাতার মুখপাত্র শ্রী গৌর চক্কোত্তি মহাশয় গ্রেফতার হইলেন।
এতদিন কেন লাগিল এই প্রশ্ন যেমন জনসাধারন করিতেছে-ঠিক ইহার উলটোদিকে কিছু বামপন্থী গণতন্ত্রপ্রেমী গৌর চক্কোত্তির গ্রেফতারে গণতন্ত্রের অবমাননা, আপমান এবং বিপর্যয় দেখিতে পাইতেছেন। ইহারা ইরানের গণতন্ত্রপ্রেমীদের আন্দোলনে সিয়ার স্ট্যাম্প দেখিতে পান। ইরানের শত শত তরুণ তরুণী গণতন্ত্রের দাবিতে সেই দেশের কুখ্যাত মোল্লাতন্ত্রের মিলিটারীর হাতে প্রাণ হারাইতেছে-তাহাতেও ইনাদের বিবেক 'রক সলিড' রহিয়াছে। হুগো শাভেজ গত এক দশকে ভেনেজুয়েলার বিরোধি মিডিয়াকে শুলে চড়াইয়াছেন-ইহাতেও তাহাদের আপত্তি নাই কারন, তাহারা সিয়ার ডলার ফুয়েলে শাভেজের বিরোধিতা করিতেছিল, তাই শাভেজের ক্রাকডাউনে সাতখুন মাপ।
লেনিন ইহাদের পূজনীয় দেবতা-কারন তিনি রাশিয়ার প্রথম নির্বাচনে হারিয়া বিরোধি খুন করিয়া ক্ষমতা দখলের বিপ্লব ঘটাইয়াছিলেন।
কাজেই ইহারা যখন গণতন্ত্রের দোহাই পারিয়া গৌর চক্রবর্ত্তীর ন্যায় খুনে রাজনীতির হোতাদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করিবার ডাক দেন, ভিরমি খাইতে থাকি! ফ্ল্যাশবাকে দেখিতে ইচ্ছা করে, ইহারা গণতন্ত্র বলিতে নিশ্চিত ভাবেই স্ট্যালিনের মৃত্যুপরীর কবরখানার কঙ্কালগুলিকে বিদ্রুপ করিতেছেন।
(১) প্রথমেই তাত্ত্বিক প্রশ্নটি করিতে হইব। পরম স্বাধীনতা বস্তুটি অলীক-তাহা হইলে গণতন্ত্রে ব্যাক্তিস্বাধীনতার লিমিটটি কি হইবে? জন স্টুয়ার্ট মিল, যার দর্শন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনের ভিত্তিভূমি, তাহার বক্তব্য (On Liberty ) অনুযায়ী ব্যাক্তি স্বাধীনতা রাষ্ট্র কখনোই খর্ব করিতে পারে না। শুধু একটি শর্তেই রাষ্ট্র ব্যাক্তিস্বাধীনতা খর্ব করিয়া ব্যাক্তির ওপর 'পুলিশগিরি' করিতে পারে। সেই শর্তটি হইতেছে, সেই ব্যাক্তি যখন রাষ্ট্রের অন্য নাগরিকের জন্যে 'বিপজ্জনক'-অর্থাৎ খুনী বা গুন্ডাদের এই স্বাধীনতা থাকিতে পারে না।
প্রশ্ন উঠিবে ইহাতে নতুনত্ব কিছু নাই। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যে, দরিদ্রের মুখে খাদ্য জোগাইবার বিপ্লবের জন্যে খুনী বা গুন্ডা হইলে, গণতন্ত্র কেন তাহাকে মাফ করিবে না?
আপাত দৃষ্টিতে ইতিহাস না জানিলে এই বক্তব্যের মোহ এবং আবেদন দুর্দম। দরিদ্রনারায়ণের সেবা করিবার নাম করিয়া, গত বিংশ শতাব্দীতে কমিনিউস্টরা যত খুন করিয়াছে, চেঙ্গিস খান, বৃটিশ, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ সব একত্রিত করিলেও, তাহার সমগোত্রে আসিতে পারিবে না। এই জন্যেই স্যার কার্ল পপার বলিতেন এই পৃথিবীতে স্বর্গ স্থাপন করিবার নামেই যাবতীয় নারকীয় কান্ডগুলি সংগঠিত হইয়াছে।
এ কথা ভুলিলে চলিবে না হিটলারের নাজি পার্টির উত্থানের পশ্চাতেও সেই একই গরীব দরদী কান্না। হিটলার মেইন ক্যাম্পের অধিকাংশ স্থলে জার্মানীর দরিদ্রসাধারন কেমন দুঃখ কষ্টে কাটাইতেছে এবং জাতীয়তাবাদি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে কেমন করিয়া তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে জার্মানীর সবাইকে সাম্যবাদে দিক্ষিত করিবেন, তাহা প্রচার করিয়াছিলেন। মুশোলিনীও সেই একই প্রতিশ্রুতি শুনাইয়াছিলেন। তাহার ব্যার্থ হইয়াছিলেন তাহা বলিব কি? বস্তুত ১৯৩৩-১৯৪৩ এই দশ বছরে জার্মানী যত বস্তুবাদি উন্নতি করিয়াছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেহ দেখাইতে পারে নাই।
গরীবের বস্তুবাদি উন্নতিই যদি শেষ গন্তব্যস্থল হইবে, তাহা হইলে আমরা হিটলার বা মুসোলিনীর পথ লইতেছি না কেন? ইতিহাস অনুযায়ী গরীবদের বস্তবাদি উন্নয়নে হিটলারের সাফল্য স্ট্যালিনের শতগুন। হিটলারের জার্মানীতে খাদ্যাভাব হইত না-কিন্ত স্ট্যালিনের সোভিয়েত [১৯২৩-৫৩] সাংঘাতিক ভাবেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল যাহাতে নূন্যতম ছকোটি লোক প্রান বিসর্জন দিতে বাধ্য হইয়াছে।
তাহা হইলে দেখা যাইতেছে গরীবের বস্তুবাদি উন্নয়ন আমাদের আশু কার্য্য বটে-কিন্ত তাহা অমানবিক পথে, রক্তের পথে কাম্য না। কেন না তাহা হইলে হিটলার কি দোষ করিল? এই কারনেই স্যার পপার ইতিহাসকে সাক্ষ্য করিয়া বলিতেন, লোক মারিয়া, রক্তপাত ঘটাইয়া, লাখে লাখে জনসাধারনকে দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলিয়া বিপ্লবী স্বর্গরাজ্যের প্রতিশ্রুতি একধরনের নরক যাত্রা। জনসাধারনের সাম্য এবং বস্তবাদি উন্নতি আমাদের সবার কাম্য এবং তাহা গণতন্ত্রের পথে ধাপে ধাপেই করিতে হইবে।
ইহা না করিয়া সাম্যবাদের নামে রক্তাত্ব বিপ্লব ঘটাইবার চেষ্টা করিলে মাওবাদিদের দশা হইবে। যাহারা তোলাবাজি হইতে লস্কর-ই-তৈবা, আই এস আই হইতে হুজি, জাল নোট হইতে আফিঙের ব্যাবসা, যাবতীয় রাষ্ট্রবিরোধি, জনবিরোধি কুর্কম করিয়া জন সাধারনের চক্ষে সন্ত্রাসবাদি এবং ঘৃণ্য।
[২] জন বিপ্লব আসলেই এক ধরনের রোম্যান্টিক গল্প। ইতিহাস খুব গভীরে ঘাঁটিলে দেখা যাইবে ফরাসী বিপ্লবের ফলে ফরাসী জনগণের বিশেষ কিছু পরিবর্ত্তন হয় নাই। ষোড়শ লুই এর বদলের আরো স্বৈরাচারী সম্রাট নেপোলিয়ান সিংহাসনে বসিয়া ছিল। বলশেভিক বিপ্লবের ফলে জারের পরিবর্ত্তে শতগুন স্বৈরাচারী শাসক স্ট্যালিনের এক নায়কতন্ত্র আসিয়াছিল। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে বৃটেনে যে গণতান্ত্রিক পরিবর্ত্তন সুচীত হয়, তাহার ফল গোটা পৃথিবী আজও ভোগ করিতেছে। ওবামা যে গণবিপ্লব ঘটাইলেন, তাহাতে বন্দুকের প্রয়োজন হয় নাই। ফেসবুক, মাইস্পেসের আধুনিক প্রযুক্তিই তাহাকে জনবিপ্লবের চাবিকাঠি প্রদান করিয়াছে। ওবামা ইহা মুক্ত চিত্তে স্বীকার করিয়াছেন।
ইতিহাসের ধোঁয়াশা সরাইলে দেখা যাইবে জন বিপ্লবের ইতিহাস আসলেই অতি রঞ্জিত। প্রযুক্তি বিপ্লব ব্যাতিত - অর্থাৎ উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্ত্তন না হইলে সমাজের বিবর্তন -তাহা রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক যাহাই হৌক না কেন-সম্পূর্ন ভাবেই অসম্ভব। সুতরাং সেই জনবিপ্লবের আফিঙ খাইয়া যাহারা মানুষ খুন করিতে চাহিতেছেন, তাহাদের কোন সুস্থ সমাজেই স্থান হইতে পারে না। তাহাদের নির্দিষ্ট স্থান কারাগারে। কেবল, স্যালেটাইট মিডিয়া আসিয়া গত ১০ বছরে ভারতে যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটাইয়াছে, -- নক্সালরা ১০০ বছর বন্দুক লইয়া গেছো মাওবাদি অবতারে ত্রিশঙ্কুর ন্যায় ঝুলিয়া থাকিয়া, তাহার ১% বিপ্লব ঘটাইতে অক্ষম। ইহাই ইতিহাসের প্রকৃত শিক্ষা, এবং প্রকৃত মার্ক্সবাদি বিশ্লেষন।
[৩] গণতন্ত্রকে ফ্যাসিজমে বিশ্বাসী যাবতীয় শক্তি হইতে রক্ষা করিতে হইবে। ফ্যসিজমের রঙ লাল ( কমিউনিউজম ), সবুজ (ইসলাম) বা গেরুয়া ( হিন্দু) যাহাই হোক না কেন ইহাদের কার্যকলাপে পার্থক্য নাই। রাজ ঠাকরের সাথে কিশানজির পার্থক্য কোথায়? ইহারা সবাই ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু এবং নিজের মত অন্যের ওপরে চাপাইবার জন্যে বিরোধিদের খুন করিতে পিছপা হন না। গরীব মারাঠাদের জীবিকার জন্যে আন্দোলন শিবসেনাও অনেকদিন হইতেই করিতেছে। বরং শিব সেনা জালনোট, আফিঙ পাচার বা লস্করের সাথে জড়াইয়া ভারত বিরোধি কার্যকলাপ করিবে না। তাহাদের দেশদ্রোহী কার্যকলাপ বিহারী বিতড়নেই সীমাবদ্ধ। লস্করের সাথেই বা মাওবাদিদের পার্থক্য কোথায়?? আফিঙের ব্যাবসা আর আই এস আই এর সাথে মৌতাত-দরিদ্র নারায়নের তরে একবাটি কাঁটিলে স্থলন হইবে কি?
লস্কর হইতে মাওবাদি-সর্বত্র এই কুকর্ম দরিদ্র নারায়নের সেবার নামেই চালনা করা হয় ( মনে রাখিবেন, ইসলামের অপর নাম দ্বীন-অর্থাৎ গরীবের ধর্ম)। লস্করের যাবতীয় কর্ম এবং কুর্কম- পাকিস্থানের প্রান্তিক দরিদ্র লোকদের জন্যেই পরিচালিত।
অর্থাৎ একজন লস্করের জঙ্গী যতটা ভারত বিরোধি, এই গৌরও ঠিক দেশের জন্যে ততটাই বিপজ্জনক। নিজেদের রাষ্ট্রদোহী লোকজন বিদেশী জঙ্গীদের থেকে আরো বেশী ভয়ঙ্কর। সুতরাং কঠোর শাস্তিই তার প্রাপ্য।
গরীব বন্ধু এমন ধোঁয়াশা মনে না থাকাই ভাল। কারন ফ্যাসিজম ( লাল, সবুজ বা গেরুয়া) গরীবের বন্ধু সেজেই আসে। ইতিহাসের কঠোর এবং বাস্তব শিক্ষা সেটাই।
এতদিন কেন লাগিল এই প্রশ্ন যেমন জনসাধারন করিতেছে-ঠিক ইহার উলটোদিকে কিছু বামপন্থী গণতন্ত্রপ্রেমী গৌর চক্কোত্তির গ্রেফতারে গণতন্ত্রের অবমাননা, আপমান এবং বিপর্যয় দেখিতে পাইতেছেন। ইহারা ইরানের গণতন্ত্রপ্রেমীদের আন্দোলনে সিয়ার স্ট্যাম্প দেখিতে পান। ইরানের শত শত তরুণ তরুণী গণতন্ত্রের দাবিতে সেই দেশের কুখ্যাত মোল্লাতন্ত্রের মিলিটারীর হাতে প্রাণ হারাইতেছে-তাহাতেও ইনাদের বিবেক 'রক সলিড' রহিয়াছে। হুগো শাভেজ গত এক দশকে ভেনেজুয়েলার বিরোধি মিডিয়াকে শুলে চড়াইয়াছেন-ইহাতেও তাহাদের আপত্তি নাই কারন, তাহারা সিয়ার ডলার ফুয়েলে শাভেজের বিরোধিতা করিতেছিল, তাই শাভেজের ক্রাকডাউনে সাতখুন মাপ।
লেনিন ইহাদের পূজনীয় দেবতা-কারন তিনি রাশিয়ার প্রথম নির্বাচনে হারিয়া বিরোধি খুন করিয়া ক্ষমতা দখলের বিপ্লব ঘটাইয়াছিলেন।
কাজেই ইহারা যখন গণতন্ত্রের দোহাই পারিয়া গৌর চক্রবর্ত্তীর ন্যায় খুনে রাজনীতির হোতাদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করিবার ডাক দেন, ভিরমি খাইতে থাকি! ফ্ল্যাশবাকে দেখিতে ইচ্ছা করে, ইহারা গণতন্ত্র বলিতে নিশ্চিত ভাবেই স্ট্যালিনের মৃত্যুপরীর কবরখানার কঙ্কালগুলিকে বিদ্রুপ করিতেছেন।
(১) প্রথমেই তাত্ত্বিক প্রশ্নটি করিতে হইব। পরম স্বাধীনতা বস্তুটি অলীক-তাহা হইলে গণতন্ত্রে ব্যাক্তিস্বাধীনতার লিমিটটি কি হইবে? জন স্টুয়ার্ট মিল, যার দর্শন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনের ভিত্তিভূমি, তাহার বক্তব্য (On Liberty ) অনুযায়ী ব্যাক্তি স্বাধীনতা রাষ্ট্র কখনোই খর্ব করিতে পারে না। শুধু একটি শর্তেই রাষ্ট্র ব্যাক্তিস্বাধীনতা খর্ব করিয়া ব্যাক্তির ওপর 'পুলিশগিরি' করিতে পারে। সেই শর্তটি হইতেছে, সেই ব্যাক্তি যখন রাষ্ট্রের অন্য নাগরিকের জন্যে 'বিপজ্জনক'-অর্থাৎ খুনী বা গুন্ডাদের এই স্বাধীনতা থাকিতে পারে না।
প্রশ্ন উঠিবে ইহাতে নতুনত্ব কিছু নাই। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যে, দরিদ্রের মুখে খাদ্য জোগাইবার বিপ্লবের জন্যে খুনী বা গুন্ডা হইলে, গণতন্ত্র কেন তাহাকে মাফ করিবে না?
আপাত দৃষ্টিতে ইতিহাস না জানিলে এই বক্তব্যের মোহ এবং আবেদন দুর্দম। দরিদ্রনারায়ণের সেবা করিবার নাম করিয়া, গত বিংশ শতাব্দীতে কমিনিউস্টরা যত খুন করিয়াছে, চেঙ্গিস খান, বৃটিশ, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ সব একত্রিত করিলেও, তাহার সমগোত্রে আসিতে পারিবে না। এই জন্যেই স্যার কার্ল পপার বলিতেন এই পৃথিবীতে স্বর্গ স্থাপন করিবার নামেই যাবতীয় নারকীয় কান্ডগুলি সংগঠিত হইয়াছে।
এ কথা ভুলিলে চলিবে না হিটলারের নাজি পার্টির উত্থানের পশ্চাতেও সেই একই গরীব দরদী কান্না। হিটলার মেইন ক্যাম্পের অধিকাংশ স্থলে জার্মানীর দরিদ্রসাধারন কেমন দুঃখ কষ্টে কাটাইতেছে এবং জাতীয়তাবাদি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে কেমন করিয়া তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে জার্মানীর সবাইকে সাম্যবাদে দিক্ষিত করিবেন, তাহা প্রচার করিয়াছিলেন। মুশোলিনীও সেই একই প্রতিশ্রুতি শুনাইয়াছিলেন। তাহার ব্যার্থ হইয়াছিলেন তাহা বলিব কি? বস্তুত ১৯৩৩-১৯৪৩ এই দশ বছরে জার্মানী যত বস্তুবাদি উন্নতি করিয়াছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেহ দেখাইতে পারে নাই।
গরীবের বস্তুবাদি উন্নতিই যদি শেষ গন্তব্যস্থল হইবে, তাহা হইলে আমরা হিটলার বা মুসোলিনীর পথ লইতেছি না কেন? ইতিহাস অনুযায়ী গরীবদের বস্তবাদি উন্নয়নে হিটলারের সাফল্য স্ট্যালিনের শতগুন। হিটলারের জার্মানীতে খাদ্যাভাব হইত না-কিন্ত স্ট্যালিনের সোভিয়েত [১৯২৩-৫৩] সাংঘাতিক ভাবেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল যাহাতে নূন্যতম ছকোটি লোক প্রান বিসর্জন দিতে বাধ্য হইয়াছে।
তাহা হইলে দেখা যাইতেছে গরীবের বস্তুবাদি উন্নয়ন আমাদের আশু কার্য্য বটে-কিন্ত তাহা অমানবিক পথে, রক্তের পথে কাম্য না। কেন না তাহা হইলে হিটলার কি দোষ করিল? এই কারনেই স্যার পপার ইতিহাসকে সাক্ষ্য করিয়া বলিতেন, লোক মারিয়া, রক্তপাত ঘটাইয়া, লাখে লাখে জনসাধারনকে দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলিয়া বিপ্লবী স্বর্গরাজ্যের প্রতিশ্রুতি একধরনের নরক যাত্রা। জনসাধারনের সাম্য এবং বস্তবাদি উন্নতি আমাদের সবার কাম্য এবং তাহা গণতন্ত্রের পথে ধাপে ধাপেই করিতে হইবে।
ইহা না করিয়া সাম্যবাদের নামে রক্তাত্ব বিপ্লব ঘটাইবার চেষ্টা করিলে মাওবাদিদের দশা হইবে। যাহারা তোলাবাজি হইতে লস্কর-ই-তৈবা, আই এস আই হইতে হুজি, জাল নোট হইতে আফিঙের ব্যাবসা, যাবতীয় রাষ্ট্রবিরোধি, জনবিরোধি কুর্কম করিয়া জন সাধারনের চক্ষে সন্ত্রাসবাদি এবং ঘৃণ্য।
[২] জন বিপ্লব আসলেই এক ধরনের রোম্যান্টিক গল্প। ইতিহাস খুব গভীরে ঘাঁটিলে দেখা যাইবে ফরাসী বিপ্লবের ফলে ফরাসী জনগণের বিশেষ কিছু পরিবর্ত্তন হয় নাই। ষোড়শ লুই এর বদলের আরো স্বৈরাচারী সম্রাট নেপোলিয়ান সিংহাসনে বসিয়া ছিল। বলশেভিক বিপ্লবের ফলে জারের পরিবর্ত্তে শতগুন স্বৈরাচারী শাসক স্ট্যালিনের এক নায়কতন্ত্র আসিয়াছিল। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে বৃটেনে যে গণতান্ত্রিক পরিবর্ত্তন সুচীত হয়, তাহার ফল গোটা পৃথিবী আজও ভোগ করিতেছে। ওবামা যে গণবিপ্লব ঘটাইলেন, তাহাতে বন্দুকের প্রয়োজন হয় নাই। ফেসবুক, মাইস্পেসের আধুনিক প্রযুক্তিই তাহাকে জনবিপ্লবের চাবিকাঠি প্রদান করিয়াছে। ওবামা ইহা মুক্ত চিত্তে স্বীকার করিয়াছেন।
ইতিহাসের ধোঁয়াশা সরাইলে দেখা যাইবে জন বিপ্লবের ইতিহাস আসলেই অতি রঞ্জিত। প্রযুক্তি বিপ্লব ব্যাতিত - অর্থাৎ উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্ত্তন না হইলে সমাজের বিবর্তন -তাহা রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক যাহাই হৌক না কেন-সম্পূর্ন ভাবেই অসম্ভব। সুতরাং সেই জনবিপ্লবের আফিঙ খাইয়া যাহারা মানুষ খুন করিতে চাহিতেছেন, তাহাদের কোন সুস্থ সমাজেই স্থান হইতে পারে না। তাহাদের নির্দিষ্ট স্থান কারাগারে। কেবল, স্যালেটাইট মিডিয়া আসিয়া গত ১০ বছরে ভারতে যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটাইয়াছে, -- নক্সালরা ১০০ বছর বন্দুক লইয়া গেছো মাওবাদি অবতারে ত্রিশঙ্কুর ন্যায় ঝুলিয়া থাকিয়া, তাহার ১% বিপ্লব ঘটাইতে অক্ষম। ইহাই ইতিহাসের প্রকৃত শিক্ষা, এবং প্রকৃত মার্ক্সবাদি বিশ্লেষন।
[৩] গণতন্ত্রকে ফ্যাসিজমে বিশ্বাসী যাবতীয় শক্তি হইতে রক্ষা করিতে হইবে। ফ্যসিজমের রঙ লাল ( কমিউনিউজম ), সবুজ (ইসলাম) বা গেরুয়া ( হিন্দু) যাহাই হোক না কেন ইহাদের কার্যকলাপে পার্থক্য নাই। রাজ ঠাকরের সাথে কিশানজির পার্থক্য কোথায়? ইহারা সবাই ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু এবং নিজের মত অন্যের ওপরে চাপাইবার জন্যে বিরোধিদের খুন করিতে পিছপা হন না। গরীব মারাঠাদের জীবিকার জন্যে আন্দোলন শিবসেনাও অনেকদিন হইতেই করিতেছে। বরং শিব সেনা জালনোট, আফিঙ পাচার বা লস্করের সাথে জড়াইয়া ভারত বিরোধি কার্যকলাপ করিবে না। তাহাদের দেশদ্রোহী কার্যকলাপ বিহারী বিতড়নেই সীমাবদ্ধ। লস্করের সাথেই বা মাওবাদিদের পার্থক্য কোথায়?? আফিঙের ব্যাবসা আর আই এস আই এর সাথে মৌতাত-দরিদ্র নারায়নের তরে একবাটি কাঁটিলে স্থলন হইবে কি?
লস্কর হইতে মাওবাদি-সর্বত্র এই কুকর্ম দরিদ্র নারায়নের সেবার নামেই চালনা করা হয় ( মনে রাখিবেন, ইসলামের অপর নাম দ্বীন-অর্থাৎ গরীবের ধর্ম)। লস্করের যাবতীয় কর্ম এবং কুর্কম- পাকিস্থানের প্রান্তিক দরিদ্র লোকদের জন্যেই পরিচালিত।
অর্থাৎ একজন লস্করের জঙ্গী যতটা ভারত বিরোধি, এই গৌরও ঠিক দেশের জন্যে ততটাই বিপজ্জনক। নিজেদের রাষ্ট্রদোহী লোকজন বিদেশী জঙ্গীদের থেকে আরো বেশী ভয়ঙ্কর। সুতরাং কঠোর শাস্তিই তার প্রাপ্য।
গরীব বন্ধু এমন ধোঁয়াশা মনে না থাকাই ভাল। কারন ফ্যাসিজম ( লাল, সবুজ বা গেরুয়া) গরীবের বন্ধু সেজেই আসে। ইতিহাসের কঠোর এবং বাস্তব শিক্ষা সেটাই।
No comments:
Post a Comment