Tuesday, June 9, 2009

অপদার্থ বিদেশ মন্ত্রক এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ছাত্রদের ওপর রেসিস্ট আক্রমন


আধুনিক জৈব বিজ্ঞানীরা বলছেন বর্ণবৈষম্য মানব সমাজবিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ। সমাজবিজ্ঞানীরা অনেকেই এই দাবী নস্যাৎ করে দেখিয়েছেন, বর্নবৈষ্যমের মূল উৎস পারিবারিক শিক্ষা। আমেরিকার কয়েকটি শহরে, একই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির ( সাদা ককেশিয়ান) ওপর সমীক্ষা চালিয়ে, বিজ্ঞানীরা প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ -



  • উচ্চশিক্ষিত পরিবারের ছেলেদের মধ্যে বর্ণ বৈষ্যমের হার কম।

  • বাবা/মা দুজনেই বৈষম্যবাদি হলে, ছেলে মেয়েদের ৯০% বাবা-মায়ের মতন ঘৃণা করবে অন্য জাতিকে

  • সাধারণত ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই ছেলে/মেয়েদের চেতনাবুদ্ধি আসে-তারা বৈষম্যবাদের পথে যাবে, না উদারপন্থী হবে।

অর্থাৎ বর্ণবৈষম্যে শিক্ষা এবং পারিবারিক অবস্থান ভীষন গুরুত্বপূর্ন। একটি জাতি বা দেশকে হঠাৎ করে রেশিস্ট বলারা আগে পটভূমি জানা বিশেষ প্রয়োজন। ইদানিং প্রায় সব পেপারেই অসিদের বর্ণ বৈষম্য নিয়ে ঢালাও করে লেখা হচ্ছে-কিন্ত ডামাডোলে চাপা পরে যাচ্ছে আমাদের বিদেশ মন্ত্রকের ব্যার্থতা।


গত এক বছরে শুধু ভিক্টরিয়া প্রদেশেই ভারতীয় ছাত্রদের ওপর ১০০০ টির ও বেশী আক্রমন হয়েছে। মেলবোর্নে ভারতীয় ছাত্ররা অসি বর্ণ বিদ্বেশী গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচতে কাঊন্টার একশন টিম তৈরী করেছে, কারন তারা বুঝে গেছে পুলিশ তাদের প্রতিরক্ষা দেবে না। বা ইচ্ছাটাই নেই। তা সে প্রধান মন্ত্রী কেভিন রুড বা উপপ্রধান মন্ত্রী জুলিয়া গুলার্ড যতই দুঃখ প্রকাশ করে নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলুন না কেন। এদিকে অসি পেপারগুলো অহরাত্র প্রচার চালাচ্ছে এগুলো শ্রেফ গুন্ডামো-এর সাথে বৈষম্যের সম্পর্ক নেই! ১০০০টা আক্রমনের প্রতিটিই কাকতলীয়!


সমস্যাটা এখানেই। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ছাত্র ছিল ৭০০০, আজ তা বেড়ে ৬০,০০০। এই ছাত্রদের কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ার আয় ১৩ বিলিয়ান ডলার। অস্ট্রেলিয়ার ভারতীয় ছাত্ররা সাধারনত মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির। অধিকাংশই মধ্যমমেধার-অস্ট্রেলিয়াতেই থেকে যেতে এসেছে। উচ্চবিত্ত বা ভারতীয় মেধাবী ছাত্রদের প্রথম পছন্দ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়। আজকাল ভারতও উচ্চশিক্ষায় অস্ট্রেলিয়ার ওপরেই আছে। সুতরাং যেসব ভারতীয় যাচ্ছে, তাদের সবাই আসলে অস্ট্রেলিয়াতে কিছু ডলার উপায় করার জন্যেই আসে। এই কারনে এরা খুব সস্তার শহরতলিতে থাকতে বাধ্য হয়। কখনো একটা ঘরে ১২ জন থাকে। আর গোটা বিশ্বেই, এইসব গরীব শহরতলিগুলিতে মার-দাঙ্গা রাহাজানি বেশী। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে, এই সব মার-দাঙ্গা-রাহাজানি, ভারতীয় ছাত্রদের ওপর কেন?


কারনটা অবশ্যই সহজ। ইজি টারগেট। নতুন এসেছে। রাস্তাঘাট ভাল করে জানে না। তারপরে অসিদের তুলনায় ভারতীয়দের শরীরও খুব দুর্বল। ফলে রাহাজানি, গুন্ডামো করার জন্যে এর থেকে ভাল টার্গেট গ্রুপ কোথায় পাবে? ফলে প্রতি মাসেই শয়ে শয়ে ভারতীয় ছাত্ররা গুন্ডা দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রমনের সাথে রেশিয়াল গালাগালি, যা অসিদের ট্রেডমার্ক, তাই বা বাদ যায় কেন?


রেশিস্ট গালাগাল দিয়ে ছিনতাই, রাহাজানি করছে বলেই, অসিদের রেশিস্ট বলছি না। বা ভারতীয় ছাত্ররাও দাবি করছে না। তার বলছে অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং পরোক্ষে এতে মদত দেওয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তাদের দেশে ভারতীয় ছাত্ররা স্বাগতম না। মার খাওয়া অবস্থায় পুলিশের কাছে গেলে, পুলিশ বলছে পকেটে ডলার রাখুন। বুঝুন অবস্থা। এত সরাসরি ছিনতাইবাজ গুন্ডাদের মদত দেওয়া হচ্ছে।


প্রশ্ন হচ্ছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক কি করছে? ভাইলার রবিকে এই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে-প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কেভিন রুডের সাথে কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারকে কয়েকবার ডেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কৃষ্ণা আজই দেখলাম বলেছেন, পালটা মারের দিকে না গিয়ে, ছাত্ররা পড়াশোনাতে মন দিক। কি বিপদ! ছাত্রদের কাজ করে পেটের ভাত যোগার করতে হয়।নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থে টিউশন ফি ভর্ত্তি করে তারা। সব আক্রমন গুলো হয়েছে রাতের দিকে-যখন তারা কাজ করে ফেরে। দিনে এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়-রাতে রেষ্টুরেন্টে কাজ করে বা গাড়ী চালিয়ে পয়সা রোজগার করে। মহামান্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি একবার ও ভেবেছেন বা জানেন, তাদের কেওই আজকাল রাতে কাজ করার সাহস পাচ্ছে না? ফলে পড়াশোনাও শিকেই উঠেছে।


আমাদের একটি পোষাকি প্রবাসী ভারতীয় মন্ত্রক আছে- মন্ত্রীটির নাম ভাইলার রবি। আমি গতবার দিল্লীতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, প্রবাসীরা দেশে এত টাকা পাঠায়-আর বিদেশে মার খেলে, এম্বাসীগুলোর টিকি দেখা যায় না। উনি বল্লেন, এসব মিথ্যে অপপ্রচার।


অস্ট্রেলিয়ায় আমরা কি দেখছি? পুলিশ কিছু সাহায্য করলো না, ওরা ভারতীয় এম্বাসীতে জানালো। ব্যাস সেখানেই ইতি। তারপরে এম্বাসী দায়ছাড়া ভাবে হিস হাইনেসের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েই খালাস-একবারও স্থানীয় পুলিশ কর্ত্তা বা রাজনীতিবিদদের সাথে বসে, ছাত্রদের নিরাপত্তার দাবীটা ঠিক ঠাক করে তোলেই নি। খানা-পিনা-আর পার্টি করতে করতে প্রায় সব ভারতীয় দূতাবাসই তাদের আসল দ্বায়িত্ব ভুলে যায়। আর ভাইলার রবি বলবেন আমি আছি-আমাকে ফোন করলেই হবে! যতসব সার্কাস।


আর ভদ্র অস্ট্রেলিয়ানরা ? বাইরে অস্ট্রেলিয়ার ইমেজ নিয়ে তারাও চিন্তিতও। এবং কেও কেও ধামাচাপা দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করছেন। ঘটনা ঘটছে হাজারে হাজারে-আর দুয়েকটা ভিডিও তুলে দেখানো হচ্ছে আসলে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এই কাজ করছে।


পচা মাছ কি আর এইভাবে শাক দিয়ে ঢাকা যায়?








No comments: