
ভারত বর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষার একটি ইতিহাস আছে। একমাত্র ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্থান ছাড়া, বাকি কোন দেশে এই মাদ্রাসা বস্তুটির 'ব্যাপক' প্রচলন নেই। মেকলের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা মুসললানরা গ্রহন করে নি। ফলে বিংশ শতাব্দির শুরুর দিক থেকেই 'ইসলামি' শিক্ষা ব্যাবস্থার পুনঃজীবনে সরকার কতৃক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা স্বীকৃত হয়। স্বাধীনতার পরে পাকিস্থান ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মঃপ্রকাশ করলে-ভারত এবং পাকিস্থান উভয় রাষ্ট্রেই মুসলিমদের জন্যে অলটারনেটিভ শিক্ষাব্যাবস্থা হিসাবে মাদ্রাসাতে প্রচুর সরকারি অনুদান আসতে থাকে। তবুও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে মাদ্রাসার ব্যাপক কোন রমরমা ছিল না। ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউল হক, সেকুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে, মাদ্রাসার মাশরুম চাষ শুরু করেন। যার ফল আজকের তালিবানরা। ভারতে মাদ্রাসার বাড়ন্ত এই ভাবে ছিল না। ১৯৮০ সাল থেকে তেলের দাম বাড়তে থাকায় সৌদি আরব থেকে হানিফি মাদ্রাসাগুলির জন্যে ব্যাপক অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। মধ্য প্রাচ্য থেকে অনুদান লাভের আশায় গোটা দেশেই বেয়াইনি মাদ্রাসা খুলতে থাকে প্রায় প্রতিটি গ্রামে। এর ফল হয়েছে মারাত্মক। আমি নিজেই দেখেছি আমাদের নদীয়া মুর্শিদাবাদ জেলাগুলিতে আগে মুসলমানদের মধ্যে আলাদা সংস্কৃতি বা নামাজ পড়া, রোজা রাখার চল খুব বেশী ছিল না। এই সব মাদ্রসার গুলি প্রবল ইসলামিক সংস্কৃতি ( যা আসলে মধ্যযুগীয় আরব সংস্কৃতি) প্রান্তিক গ্রাম গুলিতে চাপানোর চেষ্টা করছে। পঞ্চায়েত বসিয়ে পরকীয়ার জন্যে ফাইন, বিয়ে শাদি ভাঙা-ইত্যাদি তালিবানি যাতীয় কাজ মুর্শিবাদা জেলায় অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে গত দশ বছরে। এর পেছনে এই সব নতুন মাদ্রাসাগুলির ভুমিকা অনস্বীকার্য্য। সোজা কথায় মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবানিকরন চলছে এবং এর পেছনে মাদ্রাসা গুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য্য।
এই পটভূমিকায় সরকার বাহাদুর কি করছেন? ৪২০ টি সরকারি মাদ্রাসা আছে, তার ওপর আরো ৩০০ টি মাদ্রাসা খোলা হবে বলে আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে-পশ্চিম বঙ্গে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ২৬০০ এর মতন। আরো অন্তত ১০০০ স্কুল এখনি দরকার-কারন প্রত্যেক স্কুলেই কাঠামো বা যথেষ্ঠ শিক্ষকের অভাব আছে। কিন্ত গত ১০ বছরে রাজ্যসরকার কটা নতুন স্কুল খুলেছেন? সংখ্যাটা ৫০ ও ছাড়াবে না। অথচ ৩০০ টি মাদ্রসা খোলার মচ্ছব উনারা শুরু করলেন। কারন অবশ্যি আমরা জানি। মুসলিম ভোট মমতার দিকে চলে গেছে। এতেব
সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার জন্যে সাধারন ট্যাক্স পেয়ারদের সবটাকা উনারা শেষ করবেন। কারন ট্যাক্স পেয়ারদের টাকা কিভাবে খরচ হবে, সেটাত উনাদের হাতে!
মুসলিমরা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। একথা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং মুসলিম অধ্যুশিত এলাকা গুলিতে সরকারি স্কুল খুলুক সরকার। কেও ত আপত্তি করছে না। কিন্ত আমারই ট্যাক্সের টাকায় ইসলামিক শিক্ষা কেন? যেখন একথা খুব ভাল ভাবেই প্রমানিত এই মাদ্রাসা শিক্ষা ইসলামি মৌলবাদের ব্রিডিং গ্রাইন্ড!ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে তাহলে? আমাদের ট্যাক্সের টাকাই আমাদের ( এবং মুসলমানদেরও-কারন মানুষত কেও আলাদা নয়) সর্বনাশের পথ চওড়া করে খুলে দিচ্ছে সরকার।
মুসলিমদের দরকার আধুনিক শিক্ষা। অথচ মাদ্রাসা বানিয়ে তাদেরকে খোঁড়া করে দেওয়া হচ্ছে। নানান সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে মাদ্রাসা থেকে বেড়িয়ে তারা হয় রিক্সা টানে বা বিড়ি বাঁধে। তাহলে ট্যাক্সের টাকা খরচ করে মুসলিমদের মধ্যে কেন সরকারী স্কুল খোলা হবে না? এতে ত মুসলিম সমাজেরই সব থেকে বড় সর্বনাশ করা হচ্ছে!
আর আদর্শের কথা মুখে আনলাম না। গত বত্রিশ বছরের সিপিএমের কীর্তি-কান্ড বিচার করতে হলে, এদেরকে সার্কাস পার্টি অব ইন্ডিয়া বলে ডাকতে হয়। এরা নিজেদের ধর্ম নিরেপেক্ষ বলে দাবী করে। সরকারি স্কুল স্থাপন না করে ধর্মীয় স্কুল স্থাপন করা 'ধর্ম নিরেপেক্ষ' পার্টির কাজ? কাকে বোকা বানাতে চাই সিপিএম? এর পরের বিধান সভায় ১৫টা সিট ও পাবে না, বোকা বানানোর পুতুল নাচ এখুনি না থামালে।
সিপিএম আসলেই একটা ১০০% সাম্প্রদায়িক পার্টি। অসাম্প্রদায়িকতা মানে হল প্রতিটা সিদ্ধান্তে লোকের ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধে উঠে কাজ করা। ভারতে মুসলমানদের জন্যে আলাদা মধ্যযুগীয় শরিয়া আইন-একটা আধুনিক রাষ্ট্রের ধর্ম নিরেপেক্ষতার ওপর সব থেকে বড় কলঙ্ক। মাদ্রাসা শিক্ষাও ধর্ম নিরেপক্ষতার ওপর আরেকটা থাপ্পর। সিপিএমের অবস্থান পরিস্কার ভাবেই শরিয়া এবং মাদ্রসার পক্ষে।
ধর্ম নিরেপেক্ষতার নামে এই ধরনের জোকারগিরি থামালে হয় না? ভোটে যা হারার সিপিএম এমনিতেও এবার হারবে-সাথে সাথে নিজেদের মান সন্মান টুকুও এরা খোয়াবে। ৩০০ মাদ্রসা স্থাপনের সিদ্ধান্ত সিপিএমকে কমিনিউস্ট পার্টি না-আরেকটি সার্কাস পার্টি হিসাবেই ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা দেবে।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।