Sunday, March 21, 2021

প্রতিশ্রুতি- না আসল কাজ-ভোটে জিততে কোনটা বেশী দরকার?

 প্রতিশ্রুতি- না আসল কাজ-ভোটে জিততে কোনটা বেশী দরকার?

- বিপ্লব পাল, ২২/৩/২০২১
ভারত এবং আমেরিকার রাজনীতিতে একটা মৌলিক পার্থক্য, রাজনৈতিক পার্টিগুলির গঠন এবং বিবর্তন।
ভারতের রাজনীতিতে সব পার্টিই একটা আদর্শের রূপরেখাতে চলার চেষ্টা করে- সেই আদর্শের ভিত্তিতে জনগণকে স্বপ্ন দেখায় তারা পরিবর্তন আনবে ।
এবার জনগণ সেটা বিশ্বাস করবে কি না, সেটা নির্ভর করছে, সেই পার্টিটি টেস্টেড স্পেন্ট ফোর্স না নতুন ফোর্স । যেমন ধরুন সিপিএম ইস্তাহারে যতই ভাল কথা লিখুক বা বাম রাজনীতি কেন উপাদেয় এই নিয়ে লেখালেখি করুক না কেন, তাদের কথাকে বিশ্বাস করার মতন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারন তারা যে অপদার্থ তা জনগণ গত ৩৪ বছর বুঝে নিয়েছে। কংগ্রেসের ও প্রায় তাই এক অবস্থা। তুলনামূলক ভাবে তৃনমূল এবং বিজেপি বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন ফোর্স। এর মধ্যে ১০ বছর রাজত্ব করার জন্য তৃনমূলের প্রতিশ্রুতিও অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আবার অনেকেই আছে যারা মনে করেন দিদি কথা রেখেছেন। মূলত এই পটভূমিকাতেই বিজেপির পোয়াবারো। যেহেতু বাংলায় তারা টেস্টেড ফোর্স না। অনেক বাম সমর্থকই বিজেপিকে সুযোগ দিতে চান যদি বিজেপি বাংলার জন্য ভাল কিছু করে । কিন্ত বিজেপি যেহেতু দেশের গদিতে গত সাত বছর-সেহেতু অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে যে চাইলেই বিজেপি ম্যাজিক্যালি কিছু করতে পারবে না। এবং ভারতের অর্থনীতি এখন ধুঁকছে। যারা ভারতের অর্থনীতি ভাল ভাবে চালাতে পারে নি, তারা বাংলার অর্থনীতি ঘোরাবে, এই বিশ্বাস অনেকেই হারিয়েছেন।
অর্থাৎ নতুন "আশা" এবং "দিশা" ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন। জনগণকে বোঝাতে হবে আপনি নতুন কিছুতে সক্ষম। বামেদের ব্যর্থ হওয়ার মুল কারন, তারা যতক্ষন না পর্যন্ত সব কিছু খোল নলচ বদলে নতুন ধরনের পার্টি হওয়ার প্রতিশ্রুতি না দিচ্ছে, কেউ তাদের বিশ্বাস করবে না। কিন্ত আব্বাসের হাত ধরে বা ঐশীদের নামিয়ে তারা প্রমান করেছেন, বাংলার বাম, আরো পচাগলা বামে পরিনত হচ্ছে। ফলে যেকোন গণতন্ত্রে যেখানে হেসে খেলে ২০-৩০% বাম ভোট পাওয়া যায়, তারা ৫% পাবেন কি না সন্দেহ। এবং সেটাই তৃনমূলের গলার ফাঁস এখন। কারন বামেরা তাদের ২০% ভোট ব্যাঙ্ক না রাখতে পারলে, সেটা বিজেপির কাছে যাবে।
আমেরিকার গণতন্ত্রেও এই "হোপ" বা আশা খুব গুরুত্বপূর্ন। কিন্ত সেক্ষেত্রে পার্টি না ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ন। আমেরিকার পার্টিগুলো একটি টেন্ট। সেই টেন্টে সব আদর্শের লোক থাকে। ডেমোক্রাটদের মধ্যেও বিদেন এবং বার্নির মত পথের পার্থক্য অনেকটাই-কংগ্রেস বনাম সিপিএমের সমান। এখানে সুবিধা হচ্ছে এই হোপ বা আশা দেন নতুন পার্থী। যেহেতু পার্টি পার্থীর আদর্শকে সেন্সর করে না বা করতে পারে না। সেহেতু পার্টির আদর্শ বলে কিছু হয় না। নতুন নতুন পার্থীরা নতুন আদর্শ নতুন আশার আলো দেখান।
আমি আরেকটু গভীরে ব্যখ্যা করি। আসলেই আমাদের জীবন খুব কঠিন, এবং রাফ। এই জীবন আগেও কঠিন ছিল, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। স্টয়িক দর্শনের এটাই ভিত্তি।
যদিও জীবন খুবই কঠিন, এবং সেটাই বাস্তব- সেই ভাবে ভেবে গেলে কিন্ত আবার বাঁচার ইচ্ছাটাই চলে যাবে। মানুষ সব সময় বেঁচে থাকে সামনে ভাল দিন দেখবে বলে। প্যারাডক্স এটাই, সেই ভাল দিন আর আসে না। কিন্ত অতীতের দিন গুলো যা তখন মনে হত খারাপ, কত কঠিন, তার স্মৃতি চারনেই মানুষ বোঝে সেই দিনগুলি হয়ত ভালোই ছিল।
সেইজন্যে গণতন্ত্রে স্টয়িক দর্শন চলে না। আসলে মানুষযে এত গান শোনে, সিনেমা দেখে- এর একটাই কারন। এই কঠিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য দরকার "আশা" বা "হোপ"। Light at the end of the tunnel. সেই জন্য সব গণতন্ত্রেই প্রতিটা পার্টি দাবি করে , সাধারনের দুর্দশার জন্য অন্য পার্টি দায়ী আর তারাই "হোপ"-তারাই ভবিষ্যতের আশা।
মানুষও এই ভাবেই ভাবতে ভালবাসে। ফলে ভারতের গণতন্ত্রে ক্ষমতাশীল দলগুলি বা যারা আগে ক্ষমতায় ছিল-তারা যদি নতুন মুখ, নতুন ফর্মে নিজেদের রিনোভেট না করে, তাদের প্রতিশ্রুতিতে কেউ বিশ্বাস করবে না। এখানেই বাংলার রাজনীতিতে বাম এবং কংগ্রেস ব্যর্থ সম্পূর্ন। তৃনমূল পিকে কে এনে কিছুটা রিনোভেশন করেছে। সবটা না। বিজেপির রিনোভেশনের দরকার এখনো পড়ে নি যেহেতু বাংলায় তারা নতুন এবং ডেমোগ্রাফিক এনেক্সজাইটি তাদের ফেবারে। কিন্ত আস্তে আস্তে তাদের হিন্দুত্ববাদের এপিল ও ফিকে হবে। যেমন বামেদের গরিব দরদি এপিলে এখন লোকহাঁসাহাসি ছাড়া কিছু পাওয়ার নেই।
মোদ্দা কথা স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং জনগন সেই স্বপ্নে বিশ্বাস করবে। এই ভাবেই চলে গণতন্ত্র। মোদি স্বপ্ন দেখাতে ওস্তাদ এবং তার জন্যেই ক্ষমতায়। কিন্ত যত দিন যাবে লোকে স্বপ্ন এবং স্বপ্নদোষের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হবে। এটাও সব পার্টিকেই মাথায় রাখতে হবে।
আসলে আমরা ব্যর্থ রাজনীতির ভিক্টিম- এটা ভেবে শান্তনা পাওয়া যায় যে আমাদের দুর্দশা, কঠিন জীবনের জন্য অন্য কেউ দায়ী। তাকে হটালেই স্বর্গ নেমে আসবে। এটা এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল টনিক। যা মানুষকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে । রাজনীতি সেটার প্রতিফলন মাত্র।

2 comments:

শুভ্র said...

আব্বাস না হয় বুঝলাম,কিন্তু ঐশী ঘোষ কি দোষ করলো? অন্ধ বাম বিদ্বেষ??

ভোটের রাজনীতি মাত্রই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।এটা ঠিকই।

কালনার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু যিনি টেট দুর্নীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন (নিজেই স্বীকার করেছিলেন মমতার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে, যেন উনি দুধ ভাতের শিশু, কিছুই বোঝেন না) তিনিই দলত্যাগ করে বিজেপি তে জয়েন করেন এবং অন্য কিছুর মতনই যথারীতি নির্বাচনে প্রার্থী পদ লাভ করেন। এসব যদি স্বপ্ন দেখানো হয় তাহলে এটা বুঝুন আমাদের কে কতটা মূর্খ ভাবলে এমন ক্যান্ডিডেট কে নমিনেশন দেওয়ার ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে পারে!

শুধু দেশে সাত বছর নয়,এখানে দুই বছরে বিজেপি যা খেল দেখিয়েছে( দল পরিবর্তনের) মানুষের বিশ্বাস 2019 এর আগে যা ছিল,তার থেকে অনেকটাই কমে গেছে।

আশার আলোএটাই যে অন্য দল গুলোতে যেমন চোর বাটপারি তে ভোরে গেছে সেই তুলনায় বামেদের ইয়ং ব্রিগেড এ সবাইই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির।ঐশী ঘোষও।

আপনার অনেকগুলো ক্রিটিসম দেখেছি, অনেকগুলোই ঠিক, কিন্তু অনেকগুলো বড্ড অন্ধ বিরোধিতা লেগেছে, আপনি কিছু ক্ষেত্রে বড্ড বেশি সিম্পলিফাই করে ফেলেন।অনেক দিন ধরেই লক্ষ করেছি এটা,ব্লগ রাইটিং এর ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা করতেই হয়, কিন্তু একাডেমিক স্তরে ঠিক না।

শুভ্র said...

আব্বাস সিদ্দিকীর হাত ধরে ভোটের ময়দানে সাফল্য যদি পায়ও,কিন্তু দূরবর্তী ক্ষেত্রে বামেদের এর জন্য ভুগতে হবে,পোটেন্সিয়ালিটি আছে যথেষ্ট।

আমেরিকার ক্ষেত্রে পার্টি গুলো যে টেন্ট হিসাবে বললেন সেটা আমাদের এখানে কংগ্রেস এর ক্ষেত্রে খুব ভালো ভাবেই প্রযোজ্য, কংগ্রেস একটা প্লাটফর্ম। আর কম বেশি সব পার্টি তেই হার্ড লাইনার সফট লাইনার লোক থাকে,অবশ্যই বেসিক কিছু টেনেট এক থাকবেই, বামেদের মধ্যেও কিছু কনজারভেটিভ এবং কিছুটা লিবারেল লিনিং লোক রয়েছেন।কোনো ব্যাক্তি বিশেষ কে কোন যান্ত্রিকতা মধ্যে সম্পূর্ণ রূপে আবদ্ধ করা সম্ভবও নয় ,উচিতও নয়। ডিসেন্ট,ডিফারেন্স থাকেই, কিন্তু 180 ডিগ্রি ডিফারেন্স থাকলে এক ছাতার তলায় আসাও যায় না,সেক্ষেত্রে কিছু বিশেষ খেতে সহমত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছেই। আপনি ধরে নিয়েছেন সম্ভবত যে ভারতে কোনো একটি দলে তাঁদের সবাইই হুবুহু একই কপি পেস্ট আদর্শে বিশ্বাস করে( সেটা না মনে হলে আমেরিকায় একই দলে ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের লোক থাকে এটা মেনশন করার মানে টাই বা কি!),যাই হোক তা মোটেও না,অন্তত উচ্চ পর্যায়ে অন্তত নয়,কর্মীদের মধ্যে হলেও হতে পারে কিছুটা, যেই লেভেল এ যেমন শিক্ষার প্রবেশ ঘটবে সেই লেভেল এ পার্থক্যও তেমনি চোখে ধরা পড়বে স্বাভাবিক। মতের পার্থক্য থাকে বলেই পার্টির অভ্যন্তরে তা নিয়ে আলোচনাও হয়,কখনো কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পার্টিগুলো ভেঙেও যায়,অনেকে সেই আদর্শিক সংঘর্ষে পার্টিগুলো থেকে বেরিয়েও যায়। এই মত পার্থক্য শুধু আমেরিকার বৈশিষ্ট নয় ,সব জায়গায় এটাই হয়, কোথাও ধামা চাপা দেওয়া হয়,কোথাও সেটা প্রকাশ্যে আসে, বা এটাকেই বেস বানিয়ে সিস্টেম টাকেই ডিজাইন করা হয়,যাই হোক এমন উদাহরণ,সোভিয়েত ইউনিয়ন এও পেয়ে যাবেন, গর্ভাচভ!! কমিউনিসম এ বিশ্বাসি হয়েও স্ট্যালিনের মডেল কে ব্রেক করে ছিলেন( ভালোই করেছিলেন),লিবারেল ট্রেন্ড ছিল তো,নাকি!