ভবিষ্যতের ব্যাটারি ঃ
এই মুহুর্তে প্রতিদিন যে বিরক্তিকর ব্যপারটা আমাদের নিত্য হজম করতে হয়- ফোনের " ব্যাটারি" নিবু নিবু অবস্থা। ভাবুন সপ্তাহে একবার মাত্র চার্জ দিলেন। তারপর যত খুশী ব্যাবহার করুন-রিচার্জের বালাই নেই?
আসবে। সেদিন আসবে। কিন্ত একটু হিসাব করে বলি। স্মার্টফোনগুলো গড় ১০ ওয়াট-ঘন্টা এনার্জি খায়। এবার দেখুন সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা চালা্তে ২৪০ ওয়াটের এর সাথে ৭ দিয়ে গুন করুন। মোটামুটি ১৫০০-২০০০ ওয়াট-ঘন্টার ব্যাটারি দরকার। এদিকে ব্যাটারি ওজন ২৫০ গ্রামের বেশী হলে সেলফোন হবে বেশ ভারী। বর্তমানে ১৫০০ ওয়াট-ঘন্টার লিথিয়াম ব্যাটারি ওজন হবে ৬ কিলোর কাছাকাছি। দাম ১২০০ ডলার বা ভারতের মুদ্রায় ৯০,০০০ টাকা!
তাহলে উপায়?
আসলে আমরা যে খাবার খাচ্ছি-সেটাও ব্যাটারির আরেক রুপ। স্যোলার এনার্জি খাবারে কেমিক্যাল এনার্জি হিসাবে “স্টোর হচ্ছে”। আমাদের মেটাবলিজম পদ্ধতিতে তা আবার ফিরে আসছে।
চারিদিকে এত এত সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে, উইন্ড এনার্জি তৈরী হচ্ছে।
কিন্ত রোদ এবং বাতাস নিয়মের দাস না। অনিয়মই তাদের নিয়ম।
যখন বাতাস বা রোদ বেশী তখন যে বেশী বিদ্যুৎ তৈরী হচ্ছে, তা যদি ব্যাটারিতে ধরে রাখা না যায়, পুরোটাই লস! কারন যখন রোদ ঝড় নেই, তখন বিদ্যুৎ কে দেবে? কিন্ত লাও ব্যাটারি বললেই ত হল না। এই কাজে যে বড় ব্যাটারি লাগবে, তার দাম সোলার প্যানেল বা উইন্ড মিলের থেকে অনেক বেশী। তাহলে উপায়?
ব্যাটারির গোড়ার কথায় আসি।
ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাটারিগুলোকে তিনটে ক্লাসে ভাঙা যায়।
সেন্সর, ইলেকট্রনিক্স, স্মার্টফোন এগুলোর জন্য কম ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি । মোটামুটি ১-১০০ ওয়াট-ঘন্টা ক্যাপাসিটি। এখানে ৭০% ই লিথিয়াম ব্যাটারি। কিন্ত সুপার ক্যাপাসিটর, থার্মাল সেল, রেডিওএক্টিভ ফটোভল্টেয়িক অনেক নতুন প্রযুক্তি বাজারে আসছে। ২৫ বছর চার্জ থাকবে এমন ব্যাটারি চাইলে বিটা( রেডিওএক্টিভ)ফটোভোল্টিক ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে। আবার দ্রুত চার্জ ডিসচার্জ দরকার হলে সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ান সুপার ক্যাপাসিটর।
সেকেন্ড ক্যাটেগরিতে থাকবে গাড়ি এবং বাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারে এমন ব্যাটারি। এর জন্যে দরকার ২৫ কিলোওয়াটঘন্টা থেকে ১০০ কিলোওয়াট ঘন্টার স্টোরেজ । এই ক্যাটেগরিতেও লিথিয়াম এখন চ্যাম্পিয়ান। কার্সি ইলন মাস্ক এবং টেসলা। কিন্ত আগেই লিখেছি লিথিয়ামের এনার্জি ডেনসিটি কম। ফলে ৭৫ কিলোওয়াট-ঘন্টার ব্যাটারির ওজন প্রায় একটন। সুতরাং প্রতিদ্বন্দীর খোঁজ আছে। এলুমিনিয়াম অক্সাইডের এনার্জি ডেনসিটি সব থেকে বেশী। যে সাইজের লিথিয়াম ব্যাটারি মাত্র ২৫ কিলোওয়াট-ঘন্টা দেয়, তার থেকে অনেক ছোট এলুমিনিয়াম ব্যাটারি মেগাওয়াট ঘন্টা এনার্জি স্টোর করতে পারে। কিন্ত এর এনোড এবং ক্যাথোডের দাম বেশী, মেইন্টেনান্স ও খুব বেশী লাগে। ফলে এখনো মার্কেটে আসে নি।
আরেক প্রতিদ্বন্দি রেডক্স ব্যাটারি। রেডক্স ফুয়েল সেলের সুবিধা, এখানে একটা বড় পাত্রে ইলেক্ট্রোলাইট দিলেও কোন অসুবিধে নেই। জার্মানীতে দুটো গুহার মধ্যে প্রায় ৭৫০০ গ্যালনের ইলেক্ট্রলাইট দিয়ে ৭৫ মেগাওয়াট-ঘন্টা স্টোর করে। আমেরিকার একটা স্টার্টাপ মোটামুটি মাইক্ত্রোয়েভ ওভেন সাইজের রেডক্স ব্যাটারি বানাচ্ছে যা ১০-২০ কিলোয়াট ঘন্টা স্টোর করতে পারবে। সব থেকে বড় সুবিধা, এটি লিথিয়ামের থেকে অনেক বেশী সস্তা।
এবার আসি আরো বড় ব্যাটারির কথায়। যা মাইক্রোগ্রিডের এনার্জি বা বড় বড় সোলার প্ল্যান্ট বা উইন্ড মিলের এনার্জি স্টোর করতে পারবে। এদের ক্যাপাসিটি ১০-১০০ মেগাওয়াট- ঘন্টায়। যা মোটামুটি একটা ১০০,০০০ লোকের শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা ধরে রাখতে পারবে।
এই ব্যাপার এখন সবাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্ল্যান্টের জলাধার বা ড্যাম গুলোকে ব্যবহার করতে চাইছে। নরোয়েতে এই ব্যাপারে সাফল্য মিলেছে যেহেতু নরওয়ের ৭০% জল বিদ্যুৎ। নরোয়ের উইন্ড পাওয়ার এখন ড্যামে জমা হয়। কি ভাবে? খুব সহজ। যখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তখন সেই বিদ্যুৎ দিয়ে মটোর চালিয়ে ড্যামে জল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যখন বিদ্যুৎ দরকার তখন ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর প্রায় সব জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকেই ব্যাটারি হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব। চেষ্টা চলছে আমেরিকার সব থেকে বড় ড্যাম হুবার ড্যামকে ব্যাটারি হিসাবে ব্যবহার করার। হুবার ড্যামে যে এনার্জি সঞ্চয় করা সম্ভব তা দিয়ে গোটা ক্যালিফোর্নিয়ার সোলার এবং উইন্ড পাওয়ার স্টোর করা সম্ভব।
তেল গ্যাসের দিন গেল। এটা ব্যাটারির যুগ। যারা ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে, তাদের জন্য ভবিষ্যত বেশ উজ্জ্বল।
আবার সেলফোনে ফিরে আসি। আমাদের দরকার এমন এক ব্যাটারি যা দুশো গ্রামে দুই কিলোওয়াট-ঘন্টা স্টোর করবে। মানে এনার্জি ডেনসিটি ২০ কিলোওয়াট প্রতি কেজি। যেখানে বর্তমানের লিথিয়াম ব্যাটারিগুলোর এনার্জি ডেনসিটি ২৫০ ওয়াট/কিলো মাত্র। মানে প্রায় ৮০ গুন বেশী উন্নতি দরকার।
এই প্রসঙ্গে লিখছি পরের ধাপে।
No comments:
Post a Comment