জ্বালানীর একাল, সেকাল, আগামীকাল
!
(১)
ইলন
মাক্স থেকে জেফ বেজোস- সবাই মনে করেন বেঁচে থাকার জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
প্রযুক্তির কারনে এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের চারিদিক, আমাদের প্রতিদিনের রোচ
নামচা-আমাদের চাকরি- জীবিকা- এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে?
ল্যাব
থেকে মার্কেটে ঝুললেই লোকে নতুন প্রযুক্তি গ্রহন করে না। সময় লাগে। ৮০% লোক যখন
ব্যবহার করা শুরু করে সেই প্রযুক্তি- মোটামুটি বলা যেতেপারে আমাদের সভ্যতা সেই
প্রযুক্তির ওপর সম্পূর্ন নির্ভরশীল।
যদি
শুধু আমেরিকার হিসাব নিই-এই সব প্রযুক্তিগুলো ৮০% ব্যবহারে আসতে মোটামুটি সময়
নিয়েছে
টেলিফোন
- ৭০ বছর।
প্রাইভেট
কার ৬০ বছর।
সাদা
কালো টিভি -৮ বছর।
রেডিও
১৪ বছর।
স্মার্টফোন
- ৭ বছর
ইন্টারনেট
২২ বছর
স্যোশাল
মিডিয়া ৬ বছর।
হোটাসআপ/মোবাইল
মেসেঞ্জার সিস্টেম ৪ বছর।
এখানে
ট্রেন্ড থেকে দুটো জিনিস শেখার।
এক, এডাপ্টেশনের জন্য
"কস্ট" বা দাম একটা বড় ফ্যাক্টর।
দ্বিতীয়
ফ্যাক্টর-ইনফ্রাস্টচার। টেলিফোন বা ইন্টারনেটের স্লো এডপ্টেশনের কারন, সেই এলাকাতে
ইনফ্রাস্টচার না থাকা।
(২)
এবার
আসি আমাদের জীবদ্দশার সব থেকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তিতে- যা জিওপলিটিক্স
সম্পূর্ন বদলে দেবে-এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ন পরিবর্তন।
সেটা
হচ্ছে এই ডিজেল/প্রেট্রোল গাড়ি থেকে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে উত্তরোন। এমনিতে
ব্যাটারি চালিত গাড়ি বা ইভিগুলি, তেলের গাড়ির থেকে অনেক বেশী উন্নত
অনেক দিক দিয়েই। অনেক বেশী নিরাপদও। টেসলা ৫০০,০০০ মাইল সার্ভিসেও
কিছু হয় না।
কিন্ত
সমস্যা ব্যাটারির দাম এবং কার্যকারিতা নিয়ে। তবে আশার কথা ব্যাটারি ক্যাপাসিটি
দ্রুত বাড়ছে- দাম ও কমছে। ২০২০ সালের মধ্যে ইভির দাম, তেলের গাড়ির সমান হবে।
প্রশ্ন
হচ্ছে কত দ্রুত গোটা আমেরিকাতে ৮০% গাড়ি ইলেক্ট্রিক হবে? এটা ভীষনই দরকার দূষন
কমাতে। ভারতের প্রসঙ্গে পরে আসছি।
একটা
অদ্ভুত এডপ্টেশন চলছে আমেরিকাতে। যাদের পুরাতন তেলের গাড়ি আছে সবাই অপেক্ষা করছে
২০২০/২১ সালের মধ্যে কখন সস্তার ইভি বা ব্যাটারি কার আসবে। ফলত জিএমের গাড়ির
কারখানায় লক আউট। লাক্সারি কার মার্কেটে টেসলার বিক্রি জার্মান লাক্সারী কারমেকারদের
হারিয়ে দিয়েছে গত বছরই।
মোটামুটি
মনে করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই ৫০% আমেরিকান গাড়ি হবে ইলেক্ট্রিকাল। নরোয়েতে
এখনই ৫৩% গাড়ি ইলেক্ট্রিকাল বা ইভি।
চারিদিক
সত্যিই দ্রুত বদলাচ্ছে। আমি টেসলা কিনেছি মাস চারেক। যখন কিনেছিলাম রাস্তায়
হার্ডলি দু একটা চোখে পড়ত টেসলা। এখন দেখি প্রতিমাসেই আশেপাশের রাস্তায় টেসলার
সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে আমাদের পাড়ার আশেপাশে কোন সুপার চার্জিং স্টেশন নেই- বাড়িতেই
চার্জ করতে হয়। কিন্ত পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি, দিনকাল বদলাচ্ছে দ্রুত।
( ৩)
২০২৩-২৫
সাল থেকেই মিডল ইস্ট সম্পূর্ন দেউলিয়া হয়ে যাবে। কারন ওই সময় তেলের চাহিদা দৈনিক
এক মিলিয়ান ব্যারেল কমবে। আমেরিকাত ২০১৫ থেকেই তেল আমদানি বন্ধ করেছে। কারন
আমেরিকাতে আগে তেল রিসার্ভে রাখা হত- এখন বোঝা গেছে সব কিছুই ইলেক্ট্রিকাল হয় গেলে, রিসার্ভে রেখে লাভ নেই।
বেচে দাও। মধ্য প্রাচ্যের তেল খায় এখন ভারত আর চীন। চীন পরিবেশ দূষন থেকে বাঁচতে
সব বাস এখনই ইলেকট্রিক করে দিয়েছে। ব্যাটারিও সস্তা চীনে। ফলে ২০২৫ সালের পরে চীন
তেল আমদানি বন্ধ করে দেবে।
পরে
রইল ভারত। ভারতের রাস্তায় এখনো ইভি দেখা যায় না। কিন্ত
আগামি
চার বছরে দ্রুত পরিবর্তন হবে। টাটা, সুজুকি-এরা সবাই কিছু
না কিছু ইভি মডেল আনছে। এখন দাম বেশী। ২০২২ সালের মধ্যে দামেও কম হবে। এবং এসব
মডেলের দাম কমে গেলে, ভারতেও
আমেরিকার দশা আমরা দেখব। সবাই নতুন গাড়ি কেনার জন্য ইভিই কিনবে। ভারতে ইভি আরো
কার্যকরী বেশী হবে। কারন সিটি ড্রাইভিং এর জন্য পিকআপ এবং ব্রেইক, ইভিতে অনেক বেশী ভাল।
মোদ্দা
কথা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের অর্থনীতি ধ্বংশ হতে চলেছে আগামী দশ বছরেই। এদিকে ওদের জন
সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। সুতরাং গৃহযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য আরো অশান্ত হবে। আমেরিকার ও
তেল নিয়ে কোন ইন্টারেস্ট থাকবে না। ফলে ওই দেশগুলো মারামারি করবে- ফয়দা তুলবে ইসরায়েল।
তেলের
এবং তেলের গাড়ির অর্থনীতির সাথে যারা যুক্ত-তাদের এখন থেকেই কেরিয়ার চেঞ্জ প্ল্যান
করা উচিত।
(৪)
হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল-ভবিষ্যতের জ্বালানী?
গাড়ির
জন্য ছোট ব্যাটারী হলেও চলে-কিন্ত "হেভি" ট্রান্সপোর্ট যেমন ট্রাক, জাহাজ, প্লেন- এদের কি হবে? জাহাজের তেলের দূষনে মেরিন লাইফের ক্ষতি প্রশ্নাতীত। সমুদ্রের ক্ষতি এতটাই হচ্ছে, জাহাজের ফুয়েলের ওপরে এখনই অনেক বাধানিষেধ। বিশেষত এই তেল থেকে যে সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, তার থেকে সারফিউরাস আসিড জলে মিশে যাচ্ছে।
প্লেনে ব্যবহৃত হয় এভিয়েশন ফুয়েল। এটি কেরোসিন/পেট্রোল মিক্স-অনেক বেশী এনার্জি এফিশিয়েন্ট সাধারন পেট্রোলের তুলনায়। কিন্ত প্লেনের সমস্যা অন্যত্র। লং ডিস্টান্স প্লেনের ক্ষেত্রে তেলের ওজন প্যাসেঞ্জারের ওজনের থেকে বেশী হয়ে যায়। যার নিটফল, প্যাসেঞ্জারের সংখ্যা কমে যাওয়া। যেমন ধরুন বোয়িং ৭৩৭। মোটামুটি প্রতি ১০০ কিমিতে প্যাসেঞ্জারপ্রতি এর পেট্রোল লাগে ৩-৪ লিটারের মধ্যে। মানে কলকাতা -ব্যাঙ্গালোর [ ২০০০ কিমি ডিস্টান্স] বোয়িং ৭৩৭ এ গেলে, প্যাসেঞ্জারপ্রতি তেল লাগে ৭০ লিটার-যার ওজন প্রায় ৫০-৬০ কিলোর সমান। অর্থাৎ প্যাসেঞ্জার প্রতি যা তেল লাগে তা প্যাসেঞ্জারের ওজনের সমান। কোলকাতা দুবাই -যা ৩৫০০ কিমির মত, তাতে তেলের ওজন প্যাসেঞ্জারের ওজনের থেকে বেশী লাগে।
প্লেন এবং জাহাজ দুটি ক্ষেত্রেই ডিজেল/পেট্রোল মোটেও ঠিক জ্বালানি না- দূষন এবং এদের এনার্জি এফিসিয়েন্সি-কোনটাই সুবিধার না।
মুশকিল হচ্ছে, এই দুটিক্ষেত্রে ব্যাটারি সমাধান না। কারন ব্যাটারি এনার্জি ডেনসিটি-বা প্রতি কিলোতে এনার্জি দেওয়ার ক্ষমতা পেট্রোলের থেকে অনেক অনেক কম। টেসলার ব্যাটারি প্রতি কিলোতে এনার্জি স্টোর করে মোটে ২৭৭ ওয়াট- সেখানে পেট্রোলে প্রতি কিলোতে অনায়াসেই ১৫ কিলোওয়াটের বেশী এনার্জি থাকে। যা ব্যাটারির প্রায় ৫০-৬০ গুন।
অর্থাৎ প্লেন এবং জাহাজে ব্যাটারি চালিত প্রযুক্তি আনতে গেলে, ব্যাটারির যা ওজন হবে, তাতেই সব শ্যাষ! প্লেন বা জাহাজ ছেড়ে দিন। টেসলার ট্রাকের ব্যাটারির ওজনই ৬ টন!
ঠিক সেই কারনেই জাহাজ এবং প্লেনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের জ্বালানি হিসাবে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের কথা ভাবা হচ্ছে। লিকুইড হাইড্রোজেন সেলের এনার্জি ডেনসিটি সব থেকে বেশী। পেট্রোলের চারগুন। অর্থাৎ আপনার গাড়ির ট্যাঙ্ক ফুল ভর্তি করলে এখন যদি ৩০০ কিমি যান, হাইড্রোজেন ফুয়েল ভর্তি করলে, সেই গাড়ি যাবে ১২০০ কিমি। এবং কোন দূষন নেই। কারন হাইড্রোজেন অক্সিজেন পুড়ে তৈরী হয় জল।
হাইড্রোজেন ফুয়েল কোন নতুন আইডিয়া না। বাজারে তিনটি মডেল এখুনি কিনতে পাওয়া যায়- টয়োটা মিরাই [ লঞ্চ ২০১৫[, হুন্ডাই নেক্সো, হন্ডা ক্ল্যারিটি। জাপান এই ব্যপারে অগ্রনী। তারা মনে করে জ্বালানীর ভবিষ্যত হাইড্রোজেন।
কিন্ত সমস্যা তরল হাইড্রোজেন তৈরী করা এবং তার ট্রান্সপোর্ট। জলের ইলেক্ত্রোলিসিস করে হাইড্রোজেন তৈরী করা সহজ-কিন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে বিদ্যুতের মাধ্যমে হাইড্রোজেন বানিয়ে, তাকে ৭০০ঃ ১ রেশিওতে কম্প্রেস করে তরল বানিয়ে, ট্রাকে বা পাইপ লাইনে পুরে দিয়ে গ্যাস স্টেশন বা পেট্রোল পাম্পে নিয়ে আসা বেশ সমস্যার কাজ এবং এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের ৮০% নষ্ট হয়। সেখানে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে বিদ্যুৎ নষ্ট হয় মোটে ১৫%। অর্থাৎ হাইড্রোজেন গাড়িগুলির থেকে ইভি বা ব্যাটারি চালিত গাড়ি চালানোর খরচ ২৫%। এই জন্যে গাড়ির মার্কেটে হাইড্রোজেনের ভবিষ্যত নেই।
কিন্ত জাহাজ বা প্লেনের মার্কেটে হাইড্রোজেন ফুয়েলই খুব সম্ভাব্য ভবিষ্যত। কারন এই দুই ক্ষেত্রে ফুয়েলের ওজন কমানো জরুরী।
জাহাজের ক্ষেত্রে আরেকটা আলটারনেটিভ নিউক্লিয়ার পাওয়ার। বর্তমানে আমেরিকান নতুন এয়ার ক্রাফট কেরিয়ার গুলো সব নিউক্লিয়ার পাওয়ারড। আইস ব্রেকার শিপগুলোও বর্তমানে নিউক্লিয়ার পাওয়াড়।
কিন্ত বড় কার্গো ভেসেলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার?
1962 সালে আমেরিকা তৈরী করে এন এস সাভান্স। জার্মানী, ফ্রান্স, জাপান- সবাই ১৯৭০সালের মধ্যে পরীক্ষামুলক ভাবে নিউক্লিয়ার শিপ তৈরী করে। কিন্ত এর চালানো, মেইন্ট্রেনান্স এত বেশী ছিল কর্মার্শিয়ালি চালানো সম্ভব হয় নি।
২০০৮ সাল থেকে আবার নিউক্লিয়ার
পাওয়ার কার্গোর কথা ভাবা হচ্ছে। নতুন ডিজাইন। আমেরিকাতে জেন ৪ বলে একটা স্টার্টাপ
৭০ মেগাওয়াটের ছোট নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর প্ল্যান্ট তৈরী করছে, যা জাহাজের উপযুক্ত। ২৫ বছর জাহাজকে ফুয়েলিং করতে হবে না। রেগুলেটরি
ফ্রেমওয়ার্ক নিয়েও ভাবা হচ্ছে। নিউক্লিয়ার ফুয়েল ভিত্তিক কার্গো- ২০৩০ সালের মধ্যে
অনেকগুলোই দেখা যাবে।
অন্যদিকে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল
ভিত্তিক জাহাজ ২০০ সাল থেকেই তৈরী হচ্ছে। বর্তমানে হাইড্রোজেন ফুয়েল ভিত্তিক যেসব
জাহাজ আছে, তারা সাইজে ছোট। কারন লিকুইড
হাইড্রোজেনের দাম এখনো খুব বেশী।
প্লেন মার্কেট ১৯৯০ সাল থেকেই হাইড্রোজেন ফুয়েল ভিত্তিক প্রটোটাইপ বাজারে এসেছে। কিন্ত কর্মার্শিয়ালি ভায়াবল মডেল নেই। ২০১৬ সালে জার্মানীর তৈরী ৪ সিটার হাই-৪ প্রথম হাইড্রোজেন ফুয়েল ভিত্তিক প্লেন। বোয়িং, এয়ারবাস এরা পরীক্ষা চালাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ প্রথম হাইড্রোজেন ফুয়েল ভিত্তিক বড় প্যাসেঞ্জার প্লেন আসবে। কিন্ত লিকুইড হাইড্রোজেন জ্বালানীর ব্যবহার না বাড়লে এসব স্বপ্নই থেকে যাবে।
(৫)
এবার আসি ভবিষ্যতের ব্যাটারি প্রসঙ্গে।
আসলে আমরা যে খাবার খাচ্ছি-সেটাও ব্যাটারির আরেক রুপ। স্যোলার এনার্জি খাবারে কেমিক্যাল এনার্জি
হিসাবে “স্টোর হচ্ছে”। আমাদের মেটাবলিজম পদ্ধতিতে
তা আবার ফিরে আসছে।
চারিদিকে এত এত সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে, উইন্ড এনার্জি তৈরী হচ্ছে।
কিন্ত রোদ
এবং বাতাস নিয়মের দাস না। অনিয়মই তাদের নিয়ম।
যখন
বাতাস বা রোদ বেশী তখন যে বেশী বিদ্যুৎ তৈরী হচ্ছে, তা যদি ব্যাটারিতে ধরে রাখা না
যায়, পুরোটাই লস! কারন যখন রোদ ঝড় নেই, তখন
বিদ্যুৎ কে দেবে? কিন্ত লাও ব্যাটারি বললেই ত হল না। এই কাজে যে বড় ব্যাটারি
লাগবে, তার দাম সোলার প্যানেল বা উইন্ড
মিলের থেকে অনেক বেশী। তাহলে উপায়?
ব্যাটারির গোড়ার কথায় আসি।
ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাটারিগুলোকে তিনটে ক্লাসে ভাঙা যায়।
সেন্সর, ইলেকট্রনিক্স, স্মার্টফোন এগুলোর জন্য
কম ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি । মোটামুটি ১-১০০ ওয়াট-ঘন্টা ক্যাপাসিটি। এখানে ৭০% ই লিথিয়াম ব্যাটারি। কিন্ত সুপার ক্যাপাসিটর,
থার্মাল সেল, রেডিওএক্টিভ ফটোভল্টেয়িক অনেক নতুন প্রযুক্তি বাজারে আসছে। ২৫ বছর
চার্জ থাকবে এমন ব্যাটারি চাইলে বিটা( রেডিওএক্টিভ)ফটোভোল্টিক ব্যাটারি ব্যবহার করতে
হবে। আবার দ্রুত চার্জ ডিসচার্জ দরকার হলে সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ান সুপার ক্যাপাসিটর।
সেকেন্ড ক্যাটেগরিতে থাকবে গাড়ি এবং বাড়ির বিদ্যুৎ
চাহিদা মেটাতে পারে এমন ব্যাটারি। এর
জন্যে দরকার ২৫ কিলোওয়াটঘন্টা থেকে ১০০ কিলোওয়াট ঘন্টার স্টোরেজ । এই ক্যাটেগরিতেও লিথিয়াম এখন চ্যাম্পিয়ান। কার্সি
ইলন মাস্ক এবং টেসলা। কিন্ত আগেই লিখেছি
লিথিয়ামের এনার্জি ডেনসিটি কম। ফলে ৭৫ কিলোওয়াট-ঘন্টার ব্যাটারির ওজন প্রায় একটন। সুতরাং
প্রতিদ্বন্দীর খোঁজ আছে। এলুমিনিয়াম অক্সাইডের
এনার্জি ডেনসিটি সব থেকে বেশী। যে সাইজের
লিথিয়াম ব্যাটারি মাত্র ২৫ কিলোওয়াট-ঘন্টা দেয়, তার থেকে অনেক ছোট এলুমিনিয়াম
ব্যাটারি মেগাওয়াট ঘন্টা এনার্জি স্টোর করতে পারে। কিন্ত এর এনোড এবং ক্যাথোডের
দাম বেশী, মেইন্টেনান্স ও খুব বেশী লাগে। ফলে এখনো মার্কেটে আসে নি।
আরেক
প্রতিদ্বন্দি রেডক্স ব্যাটারি। রেডক্স ফুয়েল সেলের সুবিধা, এখানে একটা বড় পাত্রে ইলেক্ট্রোলাইট
দিলেও কোন অসুবিধে নেই। জার্মানীতে দুটো গুহার মধ্যে প্রায় ৭৫০০ গ্যালনের
ইলেক্ট্রলাইট দিয়ে ৭৫ মেগাওয়াট-ঘন্টা স্টোর করে। আমেরিকার একটা স্টার্টাপ মোটামুটি মাইক্ত্রোয়েভ
ওভেন সাইজের রেডক্স ব্যাটারি বানাচ্ছে যা ১০-২০ কিলোয়াট ঘন্টা স্টোর করতে পারবে।
সব থেকে বড় সুবিধা, এটি লিথিয়ামের থেকে অনেক বেশী সস্তা।
এবার আসি আরো বড় ব্যাটারির কথায়। যা
মাইক্রোগ্রিডের এনার্জি বা বড় বড় সোলার
প্ল্যান্ট বা উইন্ড মিলের এনার্জি স্টোর করতে পারবে। এদের ক্যাপাসিটি ১০-১০০ মেগাওয়াট- ঘন্টায়। যা
মোটামুটি একটা ১০০,০০০ লোকের শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা ধরে রাখতে পারবে।
এই ব্যাপার এখন সবাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্ল্যান্টের
জলাধার বা ড্যাম গুলোকে ব্যবহার করতে চাইছে। নরোয়েতে এই ব্যাপারে সাফল্য মিলেছে
যেহেতু নরওয়ের ৭০% জল বিদ্যুৎ। নরোয়ের উইন্ড পাওয়ার এখন ড্যামে জমা হয়। কি ভাবে? খুব
সহজ। যখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তখন সেই বিদ্যুৎ দিয়ে মটোর চালিয়ে ড্যামে জল তুলে দেওয়া হচ্ছে। যখন বিদ্যুৎ দরকার
তখন ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর প্রায় সব জলবিদ্যুৎ
কেন্দ্রগুলিকেই ব্যাটারি হিসাবে ব্যবহার করা
সম্ভব। চেষ্টা চলছে আমেরিকার সব থেকে বড় ড্যাম হুবার ড্যামকে ব্যাটারি হিসাবে ব্যবহার
করার। হুবার ড্যামে যে এনার্জি সঞ্চয় করা
সম্ভব তা দিয়ে গোটা ক্যালিফোর্নিয়ার সোলার
এবং উইন্ড পাওয়ার স্টোর করা সম্ভব।
তেল
গ্যাসের দিন গেল। এটা ব্যাটারির যুগ। যারা ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে,
তাদের জন্য ভবিষ্যত বেশ উজ্জ্বল।