সর্দার প্যাটেল এবং নেতাজি বোস ঃ রাজনৈতিক দ্বন্দ এবং সত্যের সন্ধানে
****
(১)
ছোটবেলায় যখন ইতিহাস পড়তাম, সেটা স্কুলপাঠ্যই হৌক আর নেতাজির জীবনী - ছাপার অক্ষরে লেখা সেই ইতিহাসকে সত্য বলেই ধ্যানজ্ঞান করতাম। গুগল সেই সাজানো বাগান ভেঙে তছনচ করে দিয়েছে। কারন এখন একটু গুগল করলেই দেখতে পায়, কৌন ঐতিহাসিকই রাজনৈতিক নিরেপেক্ষ না। নিজেদের রাজনৈতিক মতকে প্রাধান্য দিয়ে ঐতিহাসিক সত্যকে বলিকাঠে পাঠানোটাই ভারতের ইতিহাস রচনার ঐতিহ্য।
ছোটবেলায় বাঙালী ঐতিহাসিকদের লেখা নেতাজির জীবনী যারা পড়েছেন, সর্দার প্যাটেল বনাম নেতাজীর রাজনৈতিক শত্রুতার অধ্যায় নিয়ে তারা অবগত আছেন। ইদানিং সেই দ্বন্দই আবার উঠে আসছে। কারন বিজেপি ভারতের ইতিহাসের নেহেরু-গান্ধী মুক্ত অলটারেন্টিভ ন্যারেটিভ তৈরী করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দ সর্দার প্যাটেল এবং নেতাজি বোস। সর্দার প্যাটেলের স্টাচু অব ইউনিটি এবং নেতাজিকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলে ঐতিহাসিক ঘোষনা দেওয়ার এই নতুন ন্যারেটিভের অঙ্গ।
কিন্ত রামচন্দ্র গুহর মতন বাম ঐতিহাসিকরা প্রশ্ন তুলেছেন, তেলে জলে কি মেশে? নেতাজি এবং সর্দার একে ওপরের রাজনৈতিক বিরোধি ছিলেন। সেক্ষেত্রে কি করে বিজেপি এই ন্যারেটিভ তৈরী করবে? সুতরাং প্যাটেল-বোস বিরোধিতার ইতিহাসের সত্যটা সামনে আসা জরুরী। অধিকাংশ বাঙালী ঐতিহাসিকই নেতাজি বিরোধিতার কারনে সর্দার প্যাটেলকে ভিলেন বানিয়েছেন। সুতরাং সেই সত্যও জানা দরকার যে বল্লভ ভাই প্যাটেলের প্রতি বাঙালী বাম ঐতিহাসিকরা সুবিচার করেছেন নাকি ট্রু টু বাম স্পিরিট, সবটাই সত্যের অপলাপ?
(২)
প্যাটেল-বোস বিরোধ তুঙ্গে ওঠে ১৯38-৩৯ সালের কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে। এই দ্বন্দ সঠিক ভাবে বুঝতে আরো কিছু আনুসাঙ্গিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন।
প্যাটেল কংগ্রেসের সভাপতি হৌন করাচি অধিবেশনে (১৯৩৩)। ১৯৩৮ সালে নেতাজি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেন হরিপুরা অধিবেশনে ( ১৯-২২ ফেবু) । হরিপুরা গুজরাটের এক সমৃদ্ধ গ্রাম। এই অধিবেশনে নেতাজি সভাপতি হলেন বটে- সংগঠনের দ্বায়িত্ব ছিল সম্পূর্ন প্যাটেলের হাতে। এজেন্ডা, ভেনু-সব কিছুর দ্বায়িত্বেই ছিলেন প্যাটেল।
আসলে ১৯৩৮ সাল নাগাদ, কংগ্রেসে দুটি সমান্তরাল দল। একদিকে গান্ধী, প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, কৃপালিনী। অন্যদিকে তরুন বাম বিগ্রেড নেহেরু এবং নেতাজি। মুশকিল হচ্ছে এই বাম বিগ্রেডের জনপ্রিয়তা ছিল, কিন্ত সাংগঠনিক ক্ষমতার রাশ ছিল না। সেটি ছিল সর্দার প্যাটেলের হাতে । কারন কংগ্রেস চলত দেশীয় পুঁজিপতিদের ( যেমন জেডি বিড়লা ) টাকায়। এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলার ব্যপারে প্যাটেলেই ছিলেন শেষ কথা। ফলে কংগ্রেসের সংগঠনে, কে নেতা হবেন, কে কে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন সব কিছুই ঠিক করতেন সর্দার প্যাটেল।
এটা আরো পরিস্কার হবে ১৯৪৬ সালে। বৃটিশ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অন্তর্বতী কালীন সরকার তৈরী হবে। সারা দেশে কংগ্রেসের তখন ১৩ টি প্রাদেশিক কমিটি। ১৩ টির মধ্যে ১০ টি কমিটিই , সর্দার প্যাটেলের নাম অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রস্তাব করে। নেহেরুর নাম কোন প্রদেশ কমিটি প্রস্তাব করে নি। কিন্ত গান্ধী চাইলেন নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হৌক। তিনি সর্দার প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রীর রেস থেকে সরে যেতে বল্লেন। যদিও প্রকাশ্যে বললেন, প্যাটেল এবং নেহেরু, তারা তার ডান এবং বাম হাত। নেহেরু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সামলাবেন, প্যাটেল ঘোর গোছাবেন।
এ এক বিরাট ধাঁধা। কারন সর্দার প্যাটেল গান্ধীর সব থেকে বেশী কাছের লোক। বহুদিন থেকেই। গোটা কংগ্রেস সংগঠনের ভরসা প্যাটেলে কিন্ত গান্ধী চাইছেন নেহেরুকে। এই ধাঁধার উত্তরও আমি পেয়েছি। কিন্ত আপাতত এটুকুই জানা যাক- গান্ধীর কথা মেনে, এ আই সিসি, নেহেরুকেই নির্বাচিত করে। এবং গুরুর কথা মেনে, প্যাটেলই নেহেরুর নাম প্রস্তাব করেন। অর্থাৎ অনেকগুলো সত্য এখানে সামনে আসে।
এক, কংগ্রেসে মহত্মা গান্ধীর ডিক্টেটরশিপ চলত।
দুই, গান্ধী স্বজনপোষনে বিশ্বাসী ছিলেন না। কারন প্যাটেল ছিল তার সব থেকে কাছের লোক। কিন্ত নেহেরুর ছিল জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক পান্ডিত্য। ফলে নেহেরুকেই তিনি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য যোগ্যতম মনে করেছেন। তার জন্য প্রিয় শিষ্যকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিলেন না। যেখানে গোটা কংগ্রেস চাইছিল, প্যাটেল প্রধানমন্ত্রী হৌক।
তিন, কংগ্রেস সংগঠনের শীর্ষে ছিলেন প্যাটেল, তিনিই ছিলেন কংগ্রেসীদের সব থেকে পছন্দের লোক। কংগ্রেসে সব কিছু এজেন্ডা, পার্থী- বলতে গেলে, তার কথাতেই চলত। এর বহু প্রমান আছে। ইনফ্যাক্ট ১৯৪০-৪৬, কংগ্রেসের প্রায় সব বড়সর সিদ্ধান্তেই নেহেরু-প্যাটেল মতানৈক্য ছিল। কিন্ত সব ক্ষেত্রেই প্যাটেল জয়ী-কারন সংগঠন ছিল তার পেছনে।
চার, প্যাটেল ছিলেন গান্ধীর ভাব শিষ্য। গুরুর কথায় প্রধানমন্ত্রীত্বও ছেড়ে দিলেন। গান্ধীর কথাই ছিল তার আদেশ।
এবার আমরা ফিরে আসি ১৯৩৯ সালে ত্রিপু্রি কংগ্রেসে। মার্চ মাস।
তার আগেই ডিসেম্বর মাসে বোস-প্যাটেল সম্পর্কে তিক্ততা ক্রমবর্ধমান।
কারনটা এরকম। কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিত ওয়ার্কিং কমিটি। যা বকলমে চলত গান্ধীর কথায়। আর এক্সিকিউশনে প্যাটেল। কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন পোষাকি মুখ-যিনি শুধুই "গ্লোরিফায়েড মুখপত্র"।
কিন্ত সুভাস স্বাধীনচেতা। আবার কিছুটা স্বৈরতান্ত্রিক ও বটে। ওয়ার্কিং কমিটির সাথে তার বিরোধ লাগল , বিশ্বযুদ্ধের আবহে বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন নিয়ে। কারন যুদ্ধের শুরুতে গান্ধী চাইছিলেন না বৃটিশ বিরোধি আল আউট আন্দোলন করতে। তার ভরসা ছিল, যুদ্ধে সাহায্যের বিনিময়ে, স্বাধীনতা আসবে। কিন্ত নেতাজি প্রথম থেকেই তীব্র বৃটিশ বিরোধি এবং সহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতি।
যদিও ইতিহাসের পরিহাস এটাই- ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে গান্ধী এবং প্যাটেল যে বৃটিশ বিরোধি অল আউট লাইন নিলেন, ১৯৩৯ সালে সেটাই ছিল সুভাস লাইন। নেতাজি বোস যেটা ১৯৩৯ সালে বুঝে ছিলেন, প্যাটেল গান্ধী বুঝলেন ১৯৪২ সালে।
প্যাটেলই নেপথ্য থেকে কংগ্রেসকে চালাতেন। এ আই সিসির বৈঠকে যা "সর্বজন গ্রাহ্য" সিদ্ধান্ত হত, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট যাকে বলাহত রাষ্ট্রপতি, সেই মতেই চলতেন। কিন্ত সুভাস চললেন না। গান্ধী এবং প্যাটেলকে অগ্রাহ্য করে নিজের মতে চললেন। প্যাটেল প্রথমে বোসকে দুবার সাবধান করলেন। শেষে, নেতাজির দাদা শরত বসুকে লিখলেন সুভাসকে সামলাতে।
কিন্ত সুভাসকে বাগে আনতে পারলেন না প্যাটেল। ফলে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরি কংগ্রেসের জন্য এ আই সিসি কমিটি চাইল সীতারামাইয়াকে। কিন্ত সুভাস চাইলেন নির্বাচন। তাতে আরো খচে উঠলেন প্যাটেল। কারন কংগ্রেসে বরাবর ঐক্যমতের ভিত্তিতেই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। কিন্ত সুভাস বল্লেন ওটা ঐক্যমত না, গান্ধী-প্যাটেল যাকে চাইবেন, সেটা গোটা ভারতের মত হতে পারে না। ফলে নির্বাচন হোল। প্যাটেলের বিশ্বাস ছিল সুভাষ হারবেন। কারন সংগঠন তার হাতে। কিন্ত দেখা গেল সুভাষের জনপ্রিয়তা প্যাটেল যা ভেবেছিলেন, তার থেকে অনেক বেশী।
গান্ধী সুভাষের এই জয় মেনে নিতে পারেন নি। কিন্ত প্যাটেল মেনে নিয়েছিলেন । কারন প্যাটেল প্রকৃত অর্থেই বহুমতে বিশ্বাস করতেন । গান্ধীকে ডিক্টেটর বলেছেন। গান্ধীর অগনতান্ত্রিকতা বিরুদ্ধেও বহুবার বলেছেন।
কিন্ত সমস্যা হল এই সময় নেতাজির শরীর একদম ভেঙে পরে । তিনি তখন অসুস্থ। প্যাটেল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকলেন। নেতাজি জানালেন তিনি আসতে পারবেন না, বৈঠক পেছতে হবে। বৈঠক হবে না। এতেই ঘৃতে অগ্নাহুতি হয়। কারন নেতাজির সেই টেলিগ্রামকে স্বৈ্রাচার হিসাবে দেখলেন প্যাটেল। ফলে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি ইস্তফা দিল।
নেতাজিও বুঝলেন গান্ধী-প্যাটেলের বিরোধিতা করে কংগেসে টেকা অসম্ভব। তিনিও পদত্যাগ করলেন।
আমার ব্যক্তিগত মত-প্যাটেলের ভূমিকাতে আমি ভুল কিছু দেখছি না। কারন বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনে, কংগ্রেসের নেতাদের ঐক্যবদ্ধতা দেখানো ছিল জরুরী। যার জন্য স্যোশালিজম নিয়ে মাতামাতি করার কারনে প্যাটেল নেতাজি এবং বোসকে বকে দেন ১৯৩৬ সালে। প্যাটেলের বক্তব্য ছিল সাফ- কংগ্রেসের লক্ষ্য ভারতের স্বাধীনতা। গোটা পার্টিকে সেটাকেই অর্জুনের চোখ করতে হবে। সাংগঠনিক ঐক্য ছিল, তার কাছে প্রধান। অন্যদিকে নেতাজির পাখির চোখ তার আদর্শ। ফলে এই বিরোধ মূলত রাজনৈতিক।
এবং আমি মনে করি, এই বিরোধ ভারতের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। কারন গণতন্ত্রে বহুমতের বিরোধ থাকবেই।
(৩)
কিন্ত ব্যক্তিগত লেভেলে বিরোধিতা?
এর উদাহরন হিসাবে আসে কিভাবে সর্দার প্যাটেল, বিঠলভাই এর সম্পতি থেকে নেতাজিকে বঞ্চিত করেন। কিন্ত এখানেও জল অনেক।
বিঠল ভাই প্যাটেল সর্দার প্যাটেলের দাদা। ১৯৩০ সাল নাগাদ বিঠল ভাই প্যাটেল এবং নেতাজি দুজনেই গান্ধীর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। বিঠল ভাই প্যাটেল স্বরাজ বলে একটি নতুন পার্টি তৈরী করেন।
১৯৩৩ সালে বিঠল ভাই এবং নেতাজি দুজনেই ভিয়েনা যান চিকিৎসার জন্য। নেতাজি সেরে উঠলেন, কিন্ত বিঠল ভাই এর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকল। নেতাজি ইউরোপে বিঠল ভাই এর সেবা শুশ্রয়ায় লেগে থাকলেন। বিঠল ভাই দেখলেন গান্ধী না, নেতাজিই ভারতের স্বাধীনতা আনতে পারবেন। উনি মৃত্যুর আগে ১,২০,০০০ টাকা নেতাজিকে দিয়ে যান, যে নেতাজি ভারতের উন্নতির জন্য ঐ টাকা খরচ করবেন “for the political uplift of India and preferably for publicity work on behalf of India’s cause in other countries.।
কিন্ত সুভাস যখন এই টাকা প্যটেল ফ্যামিলির কাছ থেকে দাবী করতে গেলেন, তখন উইলের ইন্টারপ্রেটেশন নিয়ে বিবাদ হয়। গান্ধী দাবী করলেন, এই টাকা কংগ্রেসের প্রাপ্য। কারন সুভাস কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে এই টাকা পেয়েছেন এবং ভারতের উন্নতির কাজের টাকা কোন ব্যক্তি পেতে পারেন না। সেই টাকা কংগ্রেসের প্রাপ্য। এই মর্মে বোম্বের হাই কোর্টে এই মামলা ওঠে। সর্দার প্যাটেল নিজে এই মামলার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন নি, যে ভুল তথ্য বাঙালী ঐতিহাসিকরা দিয়েছেন।নেতাজি নিজেও এই মামলা বেশী দিন লড়তে চান নি-কারন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়লে, কংগ্রেসে তার ভবিষ্যত নষ্ট হত।
সুতরাং এই ঘটনাতে কিছুই প্রমান হয় না।
বরং যে ঘটনার কথা বলা হয় না, ১৯৪৬ সালে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের পুনঃবাসনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় সর্দার প্যাটেলকে। এই দ্বায়িত্ব তিনি স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নেন এবং তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
ঠিক এই সময় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত জার্মানিতে অর্থ কষ্টে ভুগছিলেন নেতাজি পত্নী এমিলি শেঙ্কল এবং তার সদ্যজাত কন্যা। সর্দার প্যাটেল নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে নেতাজি ফামিলির জন্য মাসে ১০০০ টাকার মাসোহারা ঠিক করেন। যা ভিয়েনাতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে দেওয়ার কথা। কিন্ত ছমাস বাদে উনি খবর পেলেন, এমিলি শেঙ্কল সে টাকা পাচ্ছেন না। নেহেরুর কাছে সেই নিয়ে অভিযোগ জানালে, নেহেরু মাসোহারা ২৫০ টাকা করে ছমাসের প্রাপ্য ১২৫০ টাকা দূতাবাসকে পাঠাতে বলেন। এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন সর্দার প্যাটেল এবং নেহেরুকে তার সিদ্ধান্তের কথা পুনঃবিবেচনা করতে বলেছিলেন।
নেতাজির সাথে তার বিরোধ রাজনৈতিক মত এবং পথের। ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রশ্ন সেখানে ওঠে না। ১৯৪৫ সালে তার অনেক ভাসনেই নেতাজি এবং আজাদ হিন্দ ফৌজে ভূমিকা আকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন সর্দার প্যাটেল। সেখানে বামেদের কাছে নেতাজি ছিলেন তেজোর কুত্তা।
(৪)
এছাড়াও বাম ঐতিহাসিকদের অনেক অভিযোগ আছে সর্দার প্যাটেলের বিরুদ্ধে। যে উনি হিন্দুত্ববাদি, লেবার ইউনিয়ান বিরোধি, ভূমি সংস্কার বিরোধি ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোও ইতিহাস গভীরে গিয়ে না পড়ার ভুল। অন্যকোন দিন এই নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল। প্যাটেলের কাজকর্ম নিয়ে যা জেনেছি, তাতে উল্টোটাই প্রমানিত হবে।
শুধু ভারতের পার্টিশনে উনার ভূমিকাটা জানা দরকার। কেন উনি ভারত বিভাজনের প্ল্যান মানলেন। প্যাটেল ছিলেন বাস্তববাদি। খুব পরিস্কার ভাবে বলেছিলেন প্রতিটা মুসলমান লীগের সাপোর্টার। তারা পাকিস্তান চাইছে। লীগের দাবি না মানলে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা আরো বাড়বে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা হিন্দুদের অধীনে থাকতে চাইছে না, সেখানে তাদের ওপর জোর করে অখন্ড ভারত চাপাতে গেলে, গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে।
উনি বাস্তববাদি লোক। লিব্যারালদের মতন আকাশ কুসম কল্পনায় ভেসে থেকে কোটি কোটি লোকের জীবন নিয়ে খেলতে চান নি। তার জন্য তাকে কম্যুনাল আখ্যায়িত করা ভুল।
আর কেনা জানে বাস্তবতার বির্সজনতাই বামপন্থা।
বাস্তব বির্বজিত বামপন্থীরা যখন সর্দার প্যাটেলের মতন একজন কঠোর বাস্তববাদির মুল্যায়ন করবেন, তখন তা কাঁঠালের আমসত্ত্বই হবে। হিন্দুস্থান টাইমসে বামপন্থী ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহর রচনাও সেই পর্যায়ের।