Wednesday, February 21, 2018

আমরি বাংলা ভাষা

ভাষাদিবসে বাংলায় ভাসে ফেসবুক,
ভাষার সতীত্ব সহমরনের ডাকে ছোটে কিছু উজবুক।

ভুল বানান, ভুল ভাষা, ভুল ব্যাকারন, ভুল উচ্চারন
এদের কাছে বাংলা মানে ভাব নয়, ভালোবাসা নয়
শুধুই কবার খসেছে পান থেকে চুন!

হিন্দুত্বের আঁশটে গন্ধ যাদের কাছে চন্দন সুবাস,
তারা বলে বাংলাদেশের ম্লেচ্ছরা ছেঁড়ে বাংলা ভাষার অন্তর্বাস!
আরবী যেন অয়ে অজগঢ়, আসছে ধেয়ে
হিন্দুয়ানী সংস্কৃত শব্দ লাশকাটা ঘরে শুয়ে!

ঈশ্বরচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, বঙ্গিমচন্দ্রের ব্রাহ্মন বাংলা আজ ফসিল
হিন্দি আরবী ইংরেজি তালগোলে সে ভাষা আজ ত্রিশকোটির দিল!

আসুক বাংলিশ, বলুক ভোজপুরী, চলুক আরবী
জমুক আড্ডা ক্যাম্পাস লিঙ্গোয়
গালাগালিটা তবুও দিস বাংলায় ভাই
প্রেমের ভাষা বাংলায় কি যথেষ্ট রস কষ নাই?

এভাষাও শেষ হবে একদিন
একশো, দুশো, তিনশো -
কত বছর জানা নেই
শুধু জানি সব ভাষাই একদিন শুয়ে রবে কবরে।
চিন্তা তরঙ্গ আলফা বিটা গামার মড্যুলেশন ...
ভাব ভালোবাসা সেইদিন শুধুই নিউরোট্রান্সমিশন !

কবির কাব্যিক কচুরীপনা
রাজনীতির রঙ্গ
সঙ্গীতের সঙ্গম
সেদিন সব্বাই ভার্চুয়াল রিয়ালিটি
জাদুঘরে শুয়ে
বাংলা আরবী ফার্সী ইংরেজী শব্দরা
আর দাবী করে না স্পেশাল গ্রাচুইটি!



Saturday, February 10, 2018

নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড !

ডস্টভয়েস্কির "নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড" -খুব সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম অস্তিত্ববাদি উপন্যাস।

প্রসঙ্গত অস্তিত্ববাদি দর্শন দুলাইনে বোঝানোর চেষ্টা করি। অস্তিত্ববাদের মূল ভিত্তি- জীবনের পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু হতে পারে না ( কারন মৃত্যু অবধারিত, যাইকিছু করনা কেন, এই শরীর, মন, কীর্তি-একদিন না একদিন শেষ হবেই। ) আবার জীবনের উদ্দেশ্য না থাকলে, বাঁচার ইচ্ছাও থাকে না!  সুতরাং এই আমার এই অস্তিত্বটাই আসল! আমি কেন বাঁচছি, কিসের জন্য বাঁচছি, এই নিরন্তর জীবন সংগ্রাম-এসব কিছুই মায়া। সুতরাং যদি এটা আমরা জেনেই করি যে যা কিছু করছি, যেসব সাফল্যের জন্য এত লাফাচ্ছি-তার সব কিছুই মায়া, তাহলে, বেশ লিল্যাক্সড করেই জীবনকে উপভোগ করা যায়।  সেক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নে জীবনকে না বেঁধে ( এই যে এটা করা ঠিক, এটা বেঠিক-এসব ল্যাঠার মধ্যে না গিয়ে ), অনেকটা স্বাধীন ভাবেই জীবনের গুটিগুলো সাজানো সম্ভব।

 ফরাসী দার্শনিক আলবার্ট কামুস- ডস্টভয়েস্কির প্রায় এক শতক বাদে অস্তিত্ববাদি দর্শনের আরেকটি ধারা শুরু করেন-যেটাকে এখন আমরা এবসার্ডিজিম বলে জানি।  অর্থাৎ বেঁচে থাকার চেষ্টাটাই এবসার্ড-কারন সারা জীবন  ধরে একটা মানুষ বেঁচে থাকার পরম উদ্দেশ্য খুঁজছে-কিন্ত পাচ্ছে না।

 ধার্মিক লোকেদের কথা আলাদা। গোটা ধর্মটাতত্বই আসলে অস্তিত্ববাদের একটা শাখা।  ধর্মগুরুরা মানুষের এই এবসার্ডিজমকে এক্সপ্লয়েট করে।  ধর্মগুরু/ প্রফেটরা জানে প্রতিটা মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজছে-কিন্ত পাবে না- কারন সেই এবসার্ডিজম ! এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা দাবী করে, ভগবান তাদের কানে ফিস ফিস করে জীবনের উদ্দেশ্য কি বলে গেছে!  এতেব হে বোকা পাঁঠার দল, সব কিছু ত্যাগ করে আমার স্বরণে এস! মানুষও পিল পিল করে দৌঁড়ায়-কারন মানুষ মাত্রই সবাই এত জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত, এবসার্ডিজম বোঝার মতন ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষের নেই। ফলে তারা নিজের মধ্যের স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশকে ধ্বংশ করে - ধর্মানুরাগী ধর্মভীরু মানুষ হিসাবে "এবসার্ডিজমের" ধারে কাছে যেতে ভয় পায়।

 বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মে ঈশ্বর নেই।  জীবনের উদ্দেশ্য সেখানে পুনঃজন্মে।

তবে ইন্টারেস্টিং হলেও এটা ঠিক, উপনিষদে বা বৈদিক দর্শনে এবসার্ডিজম এসেছে "মায়া" র রূপে। বেঁচে থাকার জগত, এই আমরা যে বাস্তবতায় বাস করে আহার মৈথুনে ব্যস্ত -তা যেসবটাই মায়া!  হিন্দু দর্শনে মায়ার বহু ইন্টারপ্রেটেশন বা স্কুল থাকলেও, আদি শঙ্করের ত্রৈত্রীয় উপনিষদ ভাষ্যে "এবসার্ডিজমের" প্রশ্নটি আলবার্ট কামুর বহু শতক আগে, শঙ্করই তুলে ছিলেন তার ভাষ্যে এই রূপে -" নিজেকে জানার বা জীবনের পরম উদ্দেশ্য ( ব্রহ্ম  )  জানার  চেষ্টা করাটা আবসার্ড"। এর পরেই অবশ্য কামুর সাথে শঙ্করের বা ভারতীয় ভাষ্যের বিচ্ছেদ। কারন অই কিছু নাই, বলে ছেড়ে দিলে সাধারনে খাবে না। তাই শঙ্করভাষ্যে এটাও ঢোকে নিজেকে বাস্তবতার, প্রতিদিনের জ্ঞান দিয়ে বোঝার চেষ্টা বৃথা , আবসার্ড কারন "আসল" জ্ঞান "মায়ার" কম্বলে ঢাকা!  ভারতীয় দর্শন এখানেই "এনালাইটিক বা র‍্যাশানাল" ডোমেন ছেরে আধ্যাত্মিক ডোমেনে ঢুকেছে ! সেখানে পাশ্চাত্য অস্তিত্ববাদের ক্ষেত্রে ডস্টভয়েস্কি, কিয়ার্ডগার্ড, সাত্রে বা কামু-এরা সবাই " এনালাইটিক" ডোমেনেই থেকেছেন- ভাবের জগতে ডোবেন নি।  ফলে অস্তিত্ববাদি পাশ্চাত্য দার্শনিকরা -যেমন নিৎসে বা সাত্রে বা কামু-সবাই এই অস্তিত্ববাদের সংকটকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মন এবং মরালকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

 আমি আবার নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ডে ফিরে আসি।  এই জন্যেই এত কথা লিখলাম, অনেকেই দর্শন চর্চা সময়ের অপচয় বলে মনে করেন। কারন সেই এবসার্ডিজম! কারন এত ভেবে কি হবে? দিনের শেষে হাতে রইবে সেই পেন্সিল- এবাসার্ডিজম!

ওয়েল-এর একটা বিশাল প্রাক্টিক্যাল দিক আছে। ওই নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ডে ডস্টভয়েস্কি এই অস্তিত্ববাদের সূত্র ধরেই মানব সম্প্রদায়কে বিরাট সাবধানবানী শুনিয়েছিলেন। উনার সময়টা ইউটোপিয়ান স্যোশালিস্টদের যুগ। উনি লিখছেন এই যে মানুষের জন্য "আদর্শ সমাজের ধারনা" -যেখানে মানুষটা, সিস্টেম, সমাজ, রাজনীতিবিদ, বিচার ব্যবস্থা-সব কিছু পারফেক্ট হতে হবে-এই ধরনের যেসব আদর্শবাদ আস্তে আস্তে তখন সবে রাশিয়াতে ঢুকতে শুরু করেছে- তার ফল হবে মারাত্মক। কারন ডস্টভয়েস্কি লিখেছেন,  ধরুন মানুষ একটা অমন নিঁখুত সমাজ পেল। কিন্ত সে থাকবে কি করে? কারন সে ত সব সময় নিজেকে প্রকাশ করতে চাইছে। যদি এমন সমাজে তাকে ফেল , যেখানে এ টু জেড, তাকে গঁতে বেঁধে কথা বলতে হবে, প্রতিটা কাজ আইন মেনে করতে হবে-তার মানব সত্ত্বাই ত বিকশিত হবে না! ফলে সে বিদ্রোহ করবেই!

 উনি এটা লিখেছিলেন উনবিংশ শতকে (১৮৬৪)।  বিংশ শতকের শুরু থেকেই  নিঁখুত  "ইউটোপিয়ান পলিটিক্যাল সিস্টেম গড়ার লক্ষ্যে"  কমিউনিজিম, ফ্যাসিজম, নাজিজম ইত্যাদির জন্ম হল। এগুলো সবই স্যোশালিস্ট আন্দোলন।  বামপন্থীরা নিজেদের ইতিহাস থেকে হিটলার বা মুসোলিনীকে বাদ দিতে চান-কিন্ত চাইলেই ত হবে না। হিটলার এবং মুসোলিনী দুজনেই স্যোশালিস্ট আন্দোলনের ফসল। হিটলারের পার্টিটার নাম ন্যাশালিস্ট স্যোশালিস্ট ওয়ার্কারস পার্টি। শুধু তাই না মেইন ক্যাম্পে বেশ অসংখ্য স্থলে হিটলার আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের সমালোচনা করেছেন-পুঁজির সমালোচনা করেছেন-এবং কিভাবে পুঁজিবাদি সমাজের জন্য শ্রমিক শ্রেনী বেকারত্বের জ্বালায় ভোগে, তার সম্পূর্ন বর্ননা দিয়েছেন। মুসোলিনিও তাই। ১৯২১ সালে মুসোলিনী ছিলেন ইটালিয়ান স্যোশালিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য -লেনিনের বলশেভিক পার্টির, লেনিনের প্রশংসা করে ভাষন দিতেন ( পরে অবশ্য মার্ক্স ছেড়ে উনি নিৎসের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে বাম আন্দোলন গড়ে তোলেন)।  এগুলো আমাদের বামপন্থী ভাইরা লজ্জায় চেপে যায়।  ইতিহাস সামান্য পড়লেই বুঝবেন হিটলার এবং মুসোলিনী ছিলেন হার্ডকোর বামপন্থী । হ্যা তারা কমিনিউস্টদের হত্যা করেছেন। কিন্ত সেটা ওই বামপন্থী লাইন কার ঠিক, সেই  নিয়ে ঝামেলা। যেমন পশ্চিম বঙ্গে মাও বনাম সিপিএম। তাতে তারা দক্ষিন পন্থী হয়ে যান না।  ক্ষমতায় আসার পরে হিটলার, মুসোলিনী যেমন দক্ষিনপন্থী হয়ে ওঠেন-ঠিক তেমনই লেনিন, স্টালিনও ক্ষমতায় আসার পরে  শ্রমিক এবং প্রজাবিরোধি দক্ষিনপন্থী। কোন পার্থক্য নেই ।

 বিংশ শতাব্দিতে নাজি, ফ্যাসিবাদ এবং কমিউনিজমের স্টিমরোলারে কত মানুষকে খুন করা হয়েছে, কত গণহত্যা হয়েছে সেই প্রসঙ্গ বাদ দিচ্ছি। যেটা আমার কাছে খুব ভয়ংকর লাগে, এই একবিংশ শতাব্দিতেও  আমার আশে পাশের লোকেরাও সেই আদর্শ নিঁখুত হিন্দু রাষ্ট্র, নইলে ইসলামিক রাষ্ট্র, নইলে কমিনিউস্ট রাষ্ট্রের প্রশ্নে বিভোর।  এদের কে পড়াবে দস্তভয়েস্কির নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড? কে বোঝাবে মানুষ চাইছে স্বাধীনতা-তাকে ওই ভাবে আদর্শ কোন সিস্টেমে বাঁধা সম্ভব না!

আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি। আজকাল অধিকাংশ বাবা-মা " তার ছেলে মেয়েদের" জন্য আদর্শ নিঁখুত জীবন ভেবে রেখেছেন - ছেলে কোন স্কুলে পড়বে, কত মার্কস পেতে হবে, ইঞ্জিনিয়ারিং না ডাক্তারি পড়বে- কত মাইনে পাবে, কি টাইপের চাকরি পাবে, কি টাইপের বৌমা  ঘরে আনবে-একদম জন্ম থেকেই ভেবে রেখেছেন বাবা মায়েরা!   অনেকটা কমিনিউস্টরা যেমন দেশের গরীবদের জন্য, হিন্দুত্ববাদিরা হিন্দুদের জন্য, ইসলামিস্টরা গোটা পৃথিবীর জন্য-ইত্যাদি ইত্যাদি । আজকাল দেখি প্রতিটা বাবা মা, তাদের সন্তানের প্রতিটা মিনিট (ঘণ্টা না) নিয়ন্ত্রন করছেন। প্রতিটা গৃহই আজকের শিশুদের জন্য গুলাগ ( রাশিয়ান লেবার ক্যাম্প যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা রুটিন মেনে কাজ করতে হত )।  সে ত নিজের সত্ত্বাকে বোঝার সময়ই পাচ্ছে না!  পাবে কি করে? মানুষ নিজের সত্ত্বাকে খুঁজে পায়, যখন যে কবিতা লেখে, নইলে গান বাঁধে বা নাটক করে বা ছবি আঁকে।  আটটা টিউশুনির পরে এসব করার সময় বাচ্চাদের কোথায়? ছবি টবি আঁকলে সেই কম্পিটিশনের জন্য-নিজের জন্য কখন আঁকে?  বাড়ির আইন ভাঙাও বাচ্চাদের দরকার মাঝে সাঝে, নইলে সে চিরকাল অন্যের দাস হয়েই কাটাবে। নিজের অস্তিত্বই বিকশিত হবে না।  এই জন্যেই কৃষ্ণ বাল্যকালে নটঘট নন্দদুলাল। সেই আদিকালেও লোকজন বুঝত বাল্যে শিশুদের বেশী শাসন করতে হয় না-দৌরাত্বেই তাদের বিকাশ ঘটে দ্রুত। আর এখন ত সম্পূর্ন উল্টোরথ।

আর এর ফল?   এই সব ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে মুক্তচিন্তার মানুষ হয়ে উঠবে না। তারাও আল্টিমেটলি সেই হিন্দুত্ববাদি, না হলে ইসলামিজম বা কমিনিজম, মহিলা হলে ফেমিনিজম - আর রাজনীতি ভাল না লাগলে রবিশঙ্কর বা রামকৃষ্ণমিশন বা ইস্কন -কোন না কোন বন্ধনে বেঁধে নিজের সত্তাকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে আরো মিহিয়ে যাচ্ছে!

করুন অবস্থা হে করুণাময়!















Saturday, February 3, 2018

হিন্দু মুসলমান বিবাহ এবং অনর কিলিং

মুসলমান সাজিয়ার সাথে প্রেম করার জন্য হিন্দু অঙ্কিত সাক্সেনাকে তার প্রেমিকার ভাই এবং বাবা দিল্লীর রাস্তায় সবার সামনে কুপিয়ে খুন করেছে। লোকেরা সেই দৃশ্য মোবাইলে তুলতে ব্যস্ত ছিল-কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে বাঁচাতে। স্পষ্টতই তিন বছর আগে ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকার বুক ফেয়ারে অভিজিত রায়ের খুনের ঘটনা মনে এল। সেও খুন হয়েছিল প্রকাশ্যেই-কেউ এগিয়ে আসে নি। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে।

হিন্দু-মুসলমান প্রেমের ঘটনায় ফ্যামিলির হাতে খুন, অনার কিলিং ভারত-বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতি সপ্তাহেই ঘটে। হিন্দু -মুসলমান যুবক খুন হয়। মাঝে মাঝে মোমবাতি মিছিল হয়। হলে হবে কি? যেখানে ভারতের রাজনীতি, মিডিয়া ব্যস্ত হিন্দু-মুসলমান আলাদা সম্প্রদায় এই দ্বিজাতি তত্ত্বের পুঃনপ্রতিষ্ঠায়, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার বিশাক্ত ছোবলে অসংখ্য প্রেমিক প্রেমিকার প্রাণ যাবে-তা আর আশ্চর্য্য কি!
প্রাচীন ভারতের গোষ্ঠি অবশ্য ছিল, কিন্ত "ধর্মীয় পরিচিতির" ভিত্তিতে গোষ্ঠী -এই ধারনা ভারতে এসেছে ইসলামের মাধ্যমে। বৃটিশ আমলে তা পরিপোক্ত ধারনা নেয়। প্রাচীন ভারতে "ধর্ম" মানে মানুষের ব্যক্তিগত উত্তরোনের জায়গা। ধর্মের মাধ্যমে গোষ্ঠি বানানো ব্যপারটা মধ্যপ্রাচ্যের-প্রথমে ইহুদি, পরে খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক অভিলাষের মধ্যে দিয়ে বিজয়ী গোষ্ঠিগুলির রাজনৈতিক এবং সামাজিক নীতি একেশ্বরবাদি ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। বিজিত জনগণ অবশ্য সেই গোষ্ঠিবাজির ধর্মকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সুপ্রীম ইচ্ছা বলেই আফিম সেবনে রত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অধিক পাকে কোকেন হিরোয়িন হয়ে সন্ত্রাসবাদির ও জন্ম দেয়।

মেয়ের বিয়ে নিয়ে গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে সংঘর্ষ ইতিহাস জুরে। প্রাচীন ভারতের রীতিনীতির প্রামান্য যদি মহাভারত হয়, তাহলে কিন্ত পরিস্কার প্রাচীন ভারতে, মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল না।

মহাভারতে পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কন্যাহরণ করে বিয়ের উদাহরন অনেকগুলো- এর মধ্যে বিখ্যাত দুটি অবশ্য কৃষ্ণের রুক্কিনী হরন এবং অর্জুনের সুভদ্রাহরণ। এই দুই ইলোপ এপিসোড মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেললে দেখা যাবে, প্রাচীন ভারতে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের ইচ্ছাকে সর্বদাই গুরুত্ব দেওয়ার রীতি ছিল।

এই দুটি বিখ্যাত ইলোপের ঘটনার সাথে জড়িত দ্বারকা রাজ্য এবং তার দুই রাজকুমার বলরাম এবং বাসুদেভ কৃষ্ণ। দ্বারকা একই সাথে বন্দর এবং নগর রাষ্ট্র। বন্দর নগররাষ্ট্রগুলি পৃথিবীর ইতিহাসে শুধুই মালামালের আমদানী রপ্তানীর জন্য বিখ্যাত ছিল না- সেখানে দেশ বিদেশের বণিকেরদের মধ্যে দর্শন এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ও হত। খুব স্বাভাবিক কারনে দ্বারকাবাসীরা মভাভারতের যুগে "প্রগ্রেসিভ" এক জনগোষ্ঠি।

কৃষ্ণ রুক্ষিনীর কাছ থেকে পত্র পেলেন তার পিতা বিদর্ভরাজ ভিষ্মক , শিশুপালের সাথে তার বিবাহ স্থির করেছেন-কিন্ত রুক্কিনী ভালোবাসেন কৃষ্ণকেই। সুতরাং কৃষ্ণ যেন তাকে উদ্ধার করেন।

রুক্ষিনীকে নিয়ে বিদর্ভ থেকে পালানো সহজ ছিল না। রুক্কিনীর সাথে শিশুপালের সম্মন্ধ নিয়ে বিদর্ভরাজের কাছে এসেছেন স্বয়ং জরাসন্ধ্র । মগধরাজ জরাসন্ধ্র তখন গোটা ভারতের রাজচক্রবর্ত্তী সম্রাট হওয়ার অভিলাসী। ছেদির যুবরাজ শিশুপাল জরাসন্ধ্রের ডানহাত। সেই যুগে অন্য রাজ্যকে, স্বীয় ক্ষমতার ছত্রতলে আনার দুটোর উপায় ছিল- যুদ্ধ অথবা বিবাহ। রাজকন্যারা ছিলেন রাজনীতির বোরে। জরাসন্ধ্র তখন সব থেকে শক্তিশালী সম্রাট এবং তিনি বিদর্ভকে নিজের ক্ষমতার বৃত্তে আনার জন্য শিশুপাল ও রুক্কিনীর বিয়ে ঠিক করলেন। সেই রাজনৈতিক বিয়ে ভেঙে কেউ যদি রুক্কিনীকে হরণ করে, তার ব্যাকলাশ কিহবে, তা সহজেই অনুমেয়। জরাসন্ধ্রের রক্তচক্ষু, দ্বারকার মতন এক ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রের জন্য আপদ ত বটেই!

বলরাম সবই জানতেন। রুক্কিনীর পত্র দেখা মাত্র ঠিক করলেন তিনি বিদর্ভ আক্রমণ করবেন । ঠিক হল কৃষ্ণ রুক্কিনীকে মন্দির থেকে রথে তুলে পালাবেন। বলরাম বিদর্ভের রাজধানী অবরোধ করে রাখবে, যাতে কোন সেনা কৃষ্ণের পেছনে না আসতে পারে।

এই পর্বে বলরামের একটা উক্তি মহাভারতে খুবই উল্লেখযোগ্য- বিদর্ভরাজকে সভ্যতা সেখানো দরকার! অর্থাৎ যেসব গোষ্ঠি তাদের কন্যাকে স্বয়ংবরের সুযোগ দেয় না, তাদের অসভ্য বললেন বলরাম!

কিন্ত এই বলরামই আবার অর্জুনকে খুন করতে উদ্যোত হলেন যখন শুনলেন অর্জুন তার বোন সুভদ্রাকে নিয়ে পালিয়েছে! অর্জুন দ্বারকায় এসেছিলেন সন্নাস্যীর ছদ্মবেশে। বলরাম কৃষ্ণের ছলনা না বুঝে সুভদ্রাকে পাঠিয়েছিলেন সেই তরুন সন্ন্যাসীর পদসেবা করতে। পাশাপাশি চলছিল সুভদ্রার সাথে দুর্যোধনের বিয়ের তোরজোর। কারন দুর্যোধন ছিলেন বলরামের প্রিয়তম শিষ্য। তার সাথে হস্তিনাপুর যুবরাজ। যখন শুনলেন অর্জুন সুভদ্রাকে নিয়ে পালিয়েছে, বলরাম সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রপ্রস্থে পর্যন্ত ধাওয়া করে অর্জুন বধের হুঙ্কার দিলেন!

কি আশ্চর্য্য এই বলরাম! যিনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কন্যার বিবাহের জন্য বিদর্ভরাজকে অসভ্য বলেছিলেন, তিনিই কিনা নিজের বোনের হরনকারী অর্জুনের বিরুদ্ধে হাতিয়ার তুললেন? যদিও কৃষ্ণ বলরামকে নিরস্ত করেন!

কিন্ত এখনো অব্দি ভারতের হিন্দু মুসলমানদের আচরন সেই বলরাম লেভেলেই। যখন তাদের নিজের ধর্মের ছেলেরা অন্য ধর্ম থেকে কন্যা আনছেন-তখন সেটি সভ্যতা, উচ্চমার্গ। যখন নিজের ধর্মের মেয়েটি অন্য ধর্মে বিয়ে করতে উদ্দ্যত, তাহা লাভ জিহাদ। ত, সেই লাভ জিহাদের রাস্তাত চওড়া করে খুলে দিয়েছেন স্বয়ং বাসুদেভ কৃষ্ণ! অর্জুন যখন জানলেন সুভদ্রা তাকে ভালোবাসেন ( এবং তিনিও সুভদ্রার প্রেমে বিভোর) , কিন্ত তার বিবাহ দুর্যোধনের সাথে- কৃষ্ণের কাছে মার্গ দর্শন চাইলেন পার্থ। কৃষ্ণ বল্লেন এই ক্ষেত্রে ক্ষত্রিয় মার্গ একটিই ! সুভদ্রাকে নিয়ে পালাও! রথ পাঠিয়ে দিচ্ছি!

অদ্ভু! যতই মহাভারত এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটি-একটা ব্যপার বেশ পরিস্কার এবং স্পষ্ট। প্রাচীন ভারতে যেটুকু ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং উদারতা ছিল, বর্তমানে তা নেই। ফলে শুধু ধর্মে ধর্মেই না, অন্য জাতে, অন্য গোষ্ঠিতে বিয়ে করার জন্যও খুন হচ্ছে অসংখ্য তরুন তরুনী।