পূজোর কটাদিন ভাবসাব দেখে মনে হয় বাংলা সংস্কৃতি শত পুস্পে বিকশিত। কিন্ত বাস্তব এটাই পশ্চিম বাংলার বাংলা সংস্কৃতি এখন বিপন্ন। ইসলামিক, উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন এবং কমিনিউস্টদের দৌড়াত্মে, আমাদের শত শত বছরের পুরাতন বাংলা সংস্কৃতি- যা বৌদ্ধ, চৈতন্য, লালন , রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের উদার আবহে বটবৃক্ষের মতন ছড়াচ্ছিল, তার বিপন্ন জরাজীর্ন হাল।
আসল সমস্যা বাঙালী জাতির অলস্যে। যে জাতি কঠিন এবং সৎ পরিশ্রমে বিশ্বাস রাখে না। এই জাতি আস্থা রাখে চিট ফান্ডে, বিট কয়েনে। একবার ও বোঝে না, অর্থনীতির নিয়মেই সস্তায় না খেটে বড় লোক হওয়া যায় না, ভাল থাক যায় না। ঠিক এই ধরনের অলস চিন্তা ধরেই বাংলার এক বিশাল অংশের তরুন বিপথে- তাদের ধারনা কমিনিউজম, হিন্দুত্ববাদ বা ইসলাম তাদের সমাজ এবং দেশকে উদ্ধার করবে। বিভিন্ন রকমের হতাশা থেকেই তাদের এই বিপথযাত্রা। কিন্ত বটম লাইন সেই এক- সৎ ভাবে খেটে , সৎ ব্যবসা, আন্তারপ্রেনারশিপের মাধ্যমে বাংলার পরিবর্তন হবে-এই বিশ্বাস বা দৃঢ়তা আমি বাংলার নতুন প্রজন্মে দেখছি না। শুধু দেখা যাবে বিজাতীয় আদর্শবাদের প্রতি ঝোঁক।
পেট্রো ডলার ঢুকিয়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে মাদ্রাসার চাষ করে, বাঙালী মুসলিমদের বাংলার মূল শ্রোত থেকে সরানোর কাজ ভাল ভাবেই সম্পন্ন। তাদেরকে ভাবানো হচ্ছে তারা বাঙালী না মুসলমান। ফল হাতে হাতে টের পাচ্ছেন মীর বা নূরের মতন বাঙালী মুসলিম অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ফেসবুকে দূর্গাপূজোর শুভেচ্ছা যদি কোন মুসলিম অভিনেতা অভিনেত্রী জানাচ্ছেন মৌমাছির ছাঁকের মতন দাঁড়িয়ালা মুসলিমরা ভন ভন করছে। অথচ, দূর্গাপূজো, ঈদে পারস্পারিক শুভেচ্ছা জানানো বাঙালীর শত শত বছরের ঐতিহ্য। এই সব বাঙালী মোল্লারা হঠাৎ করে আবিস্কার করেছে, বাঙালী না তাদের পিউর এবং আন ডাইল্যুটেড মুসলমান হতে হবে। তারা তাদেরকে আর বাঙালী মনে করে না-তাদের অস্তিত্বে এখন আন্তর্জাতিক ইসলামিক ব্রাদারহুড! এবং এর পেছনে প্যাট্রোনাইজেশন আছে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের।
ইসলামিক মৌলবাদের উত্থান ঠেকাতে বাঙালী বুদ্ধিজীবি সমাজ কিস্যু করে নি। ফলে ভীত একদল বাঙালী হিন্দু যুবক- উত্তর ভারতের হিন্দুত্বের আশ্রয় চাইছে। পশ্চিম বাংলায় রাম নবমী, ধণতরেশ, হনুমান চল্লিশা-এসব ছিল না। কিন্ত দ্রুত ঢুকছে। নীরব প্রশয় এক বিশাল অংশের বাঙালী হিন্দুদের। এসবই ইসলামিক মৌলবাদের উত্থানের রিয়াকশন -কিন্ত ফল এই যে বাংলার উদার সংস্কৃতি এখন বিপন্ন উত্তর ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে। ফলে এই যে বাংলাকে আরো দাঙ্গা দেখতে হবে আগামী সময়ে।
এবার আসি বাংলার বাম বুদ্ধিজীবি এবংহরেক রকমের কমিনিউস্টদের নিয়ে। এদের কাছে বিদ্যাসাগর কলোনিস্ট এবং বু্জোয়া। রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া কবি। স্টালিন, লেনিন, মাওএর মতন কুখ্যাত খুনীরা এদের আরাধ্য দেবতা আজো। এদের ৩৪ বছরের শাসনের তান্ডবে বাংলা ছাড়া হয়েছে বাংলার সব কৃতী সন্তান। যাদের কেউ আজকেও ঘরে ফিরতে চাইছে না। ফলে বাংলায় একটা বিরাট ক্রাইসিস ইন্টেলেকচুয়াল লিডারশিপের। বাংলায় যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবি বলে দাবী করে তাদের কারুর কোন আইডিয়াই নেই কিভাবে প্রযুক্তি পালটে দিচ্ছে বা দিচ্ছে গোটা পৃথিবী। তারা স্বপ্নের রাজনীতি ফেরি করে ( সেটা সোভিয়েত কমিনিউস্ট সমাজই হোক বা শরিয়াই হোক ), বাঙালী যুবকদের বোকা বানায়। কারন বাঙালী যুবকরা একে অলস-তারপরে হতাশ। ফলে সস্তায় রাজনৈতিক বাজিমাতের ভাল ভাল কথা শুনে এরা আকৃষ্ট।
বাংলার বুদ্ধিজীবীদের কাউকে বলতে শুনিনি যে একটা জাতির উন্নতির একটাই উপায়। পরিশ্রম এবং সৎ ব্যবসা । প্রকৃত কারিগড়ি শিক্ষা। তারা নিজেরা গর্দ্ভব এবং আরো কিছু গর্দ্ভভ অনুসারী পেয়ে কলা ঝোলাচ্ছে কখনো কমিনিউস্ট স্বর্গের, কখনো বৈদিক সমাজের , কখনো খিলাফতের। এই ভিসিয়াস সাইকল থেকে বাঙালী বেড়োতে না পারলে বাংলা সংস্কৃতির ভবিষ্যত নেই।
এখন দরকার একটা বাঙালী জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের। যেখানে নতুন করে মুল্যায়ন করা হৌক বিদ্যাসাগর , প্রফুল্ল চন্দ্র এবং স্যার রাজেন মুখার্জিকে। কারন বাংলার ইতিহাসে এই গুটিকয় ব্যক্তিকেই আমি পেয়েছি, যাদের চরিত্র ছিল ইস্পাত সম। ব্যবসায়িক বুদ্ধি এবং আন্তারপ্রেনারশিপকে যারা গুরুত্ব দিয়েছিলেন জীবন দিয়ে। বিদ্যাসাগর বলতেন পথে বসে আলু পটলের দোকান দেবেন, কিন্ত বৃটিশদের অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবেন না। আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রসায়নকে ল্যাবে আটকে রাখলেন না। বাড়ির বারন্দায় তৈরী করলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল। স্যার রাজেন মুখার্জি দেখিয়েছেন বাঙালীরাও পারে আন্তর্জাতিক মানের ইঞ্জিনিয়িরিং বিজনেস। শুধু দরকার সদিচ্ছা এবং পরশ্রমের।
No comments:
Post a Comment