কাশ্মীর নিয়ে প্রচুর ঘোল খাওয়ানো লেখা দেখি চারিদিকে। কিছু চাড্ডিদের-কিছু উবের লিব্যারালদের। কিছু উবের লিব্যারালদের ইস্যুভিত্তিক দোস্ত ইসলামিস্ট ছাগুদের। মজা লাগে।
প্রথমত- কাশ্মীরের স্বাধীনতা কেন, ভারত সহ কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই যুক্তি আর ইতিহাস দিয়ে ব্যখ্যা করা যায় না। রাষ্ট্রের জন্ম মানেই মার্কেটটা ছোট করে দেওয়া হল। সুতরাং অর্থনৈতিক যুক্তিতে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই থাকা উচিত না-যেহেতু তা মার্কেট ছোট করে। স্বয়ত্ব শাসিত পুলিশ থাকতেই পারে-তাও মার্কেটের প্রয়োজনেই।
সুতরাং একটা ভূখন্ডের মানুষ যতক্ষন না অর্থনৈতিক কলোনিয়ালিজমের শিকার না হচ্ছে-তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে যুক্তি খোঁজা অর্থহীন। কাশ্মীরে ভারতের ট্যাক্স ইনকামের ১০% খরচ হয়-যা হওয়া উচিত ৩% ও না। সুতরাং কাশ্মীর অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে অবহেলিত, এটা বলার উপায় নেই। ঠিক এই কারনে আমি তিব্বতের স্বাধীনতার আন্দোলন ও সর্মথন করি না। কারন চীনের অধিকারের পরে, তিব্বতে অনেক আধুনিক উন্নয়ন এবং প্রগতি এসেছে। আগে তিব্বতে শিক্ষার হার ছিল নগন্য। চীনা অধিগ্রহনের ফলে গোটা তিব্বত এখন শিক্ষিত।
মূল সমস্যা -কাশ্মীরে ভারতের সৈন্যদের অত্যাচার। কিন্ত তার মূল কারন সেপারেটিস্ট জঙ্গীরা। কাশ্মীর যদি তামিলনাডু বা বাংলার মতন ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে থাকে, সেখানে সেনা থাকার কোন কারন নেই। সুতরাং ডিম আগে না মুর্গী আগে সেই তর্ক অর্থহীন।
এবার একটা এবস্ট্রাক্ট প্রশ্নে আসা যাক। একটি জনগোষ্টির স্বয়ত্ব শাসনের অধিকার। সেটাত ভারতে ফেডারাল স্ট্রাকচারে সম্ভব। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে কি ব্যতিক্রম ঘটল? ব্যাতিক্রম এই যে তা মুসলিম প্রধান রাজ্য। সুতরাং কারনটা সাম্প্রদায়িকতাঘটিত।
ব্রেক্সিটে ইউকের এক্সিটের পরে অবস্থা কি? ইনফোসিস টের পাচ্ছে ব্যঙ্ক অব স্কটল্যান্ডের কনট্যাক্ট এবং ৩০০০ লোকের বিলিং হারিয়ে। সেক্টর ফাইভে যেসব কোম্পানী ইউকের ছিল, তাদের অনেকেই ছাঁটাই করেছে। তাদের রেজুমে ভাসছে, দেখতে পাচ্ছি।
মুখে এসব স্বাধীন সত্তা ইত্যাদি ভাল জিনিস-এবং তার ভিত্তি আছে যতক্ষন পর্যন্ত তা অর্থনৈতিক বিকাশের সহায়ক। একজন কাশ্মীরি ভারতে ভালোই ব্যবসা করতে পারেন এবং ভারতের মার্কেটের পূর্ন সহযোগিতা পান। সুতরাং কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা ব্রেক্সিটের থেকেও ভয়ংকর হবে কাশ্মীরের অর্থনীতির জন্য।
আর প্রাক্টিক্যাল কারন? বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে যেহারে জঙ্গী তৈরী করেছে, ভারতের জন্য তা নিরাপদ না। পাকিস্তানের জন্য যেকোন জঙ্গীরা আজ সুটকেস নিউক ফাটাতে সক্ষম দিল্লী মুম্বাই বা কোলকাতায়। যেকোন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবেশী থাকা সিকিউরিটি রিস্ক। কারন ইসলাম সেইসব দেশের রাজনীতিতে ঢুকবেই এবং কাফের মারার জন্য জঙ্গীদল তৈরী করবেই। তারপর নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে সেটা অন্যব্যাপার।
সুতরাং কাশ্মীরকে স্বাধীনতা দিলে তা হবে ভারত বিরোধি জঙ্গীদের আরেক আখরা। বাংলাদেশকে ভারত কিছুটা আয়ত্ত্বে আনতে পেরেছে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার জন্য-কারন তিনি দিল্লীতে এসাইলাম পাওয়ার কারনে ভারতের কাছে , বিশেষত ইন্দিরা গান্ধীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ ভারতের জন্য কি মারাত্মক সিকিউরিটি রিস্ক ছিল, -ইতিহাস সাক্ষী।
কাশ্মীরের হবে পাকিস্তান টু। ওটা ভারত বিরোধি জঙ্গীদের আরো মারাত্মক ঘাঁটি হবে।
সুতরাং কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলন সমর্থন করার জন্য প্রাক্টিক্যাল, টাক্টিক্যাল বা থিওরেটিক্যাল-কোন যুক্তিই পাচ্ছি না। বামপন্থীরা অনেক যুক্তি পেয়ে থাকেন-কারন তারা অশিক্ষিত। ইতিহাসে অজ্ঞ। তারা স্টালিন লেনিনকেও সমর্থন করেন-যারা কিন্ত মধ্য এশিয়ার ১৯ টি রাষ্ট্রকে গ্রাস করে সোভিয়েত ইউনিয়ান বানিয়েছিলেন এবং সেইসব রাজ্যগুলির স্বাধীনতা আন্দোলন নির্মম ভাবে দমন করেছিলেন।
26 August 1918 – 14 September 1918 : লেনিন আজারবাইজান দখল করেন বাকুর তৈলক্ষেত্র দখলের জন্য। রেড আর্মি আজারবাইজানের ১২,০০০ মুসলমান আদিবাসি খুন করে।
15 February – 17 March 1921: লেনিন জর্জিয়া দখল করলেন, ৮০০০ জর্জিয়ান সেনা এবং সিভিলিয়ান মারা যায়
30 November 1939 – 13 March 1940--স্টালিন ফিনল্যান্ড দখল করেন-৮০,০০০ ফিনিশকে হত্যা করা হয়।
উজবেকিস্তানকে এনেক্স করা হয় ২৪ ই অক্টবর ১৯২৪। উজবেকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন চলতেই থাকে। ১৯৩৯ সালে স্টালিন , উজবেকিস্তানের কমিনিউস্ট প্রধানমন্ত্রী ফইজুল্লা খোয়াজেভকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে হত্যা করেন। কারন উনি সেন্ট্রাল কমিটিতে উজবেকিস্তানের জন্য সামান্য স্বয়ত্বশাসন চেয়েছিলেন!
তবে সোভিয়েত ইতিহাসের সব থেকে কুখ্যাত আদিবাসি নিধন মধ্য এশিয়াতে বাসমাসি বিদ্রোহ দমন। ফারগানা উপত্যকা এবং টুর্কেমিনিস্থানের মুসলমান আদিবাসীরা বহুদিন থেকেই জারের আধিপত্য মানতে চায়নি। ১৯১৭ সালে যখন বলশেভিক বিপ্লব হয়, এইসব আদিবাসিদের মনে আশার সঞ্চার হয়, যে তারা এবার রাশিয়ান আধিপত্য থেকে মুক্তি পাবে। ফলে ওক্টবর বিপ্লবের সময়, এরা রেড আর্মিকে সমর্থন করেছিল লেনিনের স্বয়ত্বশাসনের ঢপে বিশ্বাস করে। রেড আর্মি ক্ষমতা পেতেই এই আদিবাসিরা বুঝে যায়, বেসিক্যালি বলশেভিকরা জারের থেকেও বড় দানব। তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার কোন ইচ্ছা লেনিনের নেই। ফলে ইসমাইল বে এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে আদিবাসিরা। ১৯১৮ সালে কোকান্ড শহরে রেড আর্মি ২৫,০০০ কৃষক, আদিবাসি হত্যার মাধ্যমে তাদের ঋন পরিশোধ করেন। হত্যালীলা এখানেই শেষ হয় না। ১৯২৩ শাল পর্যন্ত রেড আর্মি মধ্য এশিয়ার এই উপজাতি অঞ্চলে রক্তবন্যা বইয়ে দখলে আনবে। এসব হত্যালীলার সব কিছুই হয়েছে লেনিনের নির্দেশে। শুধু তাই না। গর্ভাচেভের দিন পর্যন্তও এদের বিশ্বাস করত না রাশিয়ানরা। এদের স্থানীয় কমিনিউস্ট পার্টির মাথায় সব সময় একজন রাশিয়ানকে বসানো হত। কোথায় লাগে কাশ্মীর!
No comments:
Post a Comment