Saturday, August 10, 2013

রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা-পর্ব ৪ ( খ্রীষ্ঠান ধর্মের সাম্রাজ্যবাদ)

আমরা আগের পর্বে দেখেছি কিভাবে আরবের আর্থসামাজিক আন্দোলনের একজন নেতা, দুশো বছরের বিবর্তনে ক্রমশ এক রূপকথার প্রফেট চরিত্রে উত্তীর্ণ  হলেন। কিভাবে ইসলামের মতনএকটি প্রগতিশীল  আন্দোলন ক্রমশ শাসক শ্রেনীর যন্ত্রে পরিণত হয়ে, চূরান্ত প্রতিক্রিয়াশীল একটি ধর্মরূপে বিবর্তিত হল।

 যেকোন ধর্মের জন্মর নাড়ি বাঁধা থাকে সমকালীন ইতিহাস এবং ভূগোলে। খ্রীষ্ঠ ধর্মের নড়ি বাঁধা প্রায় দুহাজার খৃষ্ঠপূর্বাব্দ ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্যের ধর্ম আন্দোলনের সাথে। ক্যানানাইট, পার্সিয়ান, গ্রীস, সিরিয়ান এবং ইহুদি ধর্মের ধারা এবং মিথগুলি (রূপকথা) একসাথে মিশে তৈরী হল খ্রীষ্ঠান ধর্ম।

 তাহলে খ্রীষ্ঠধর্ম মহান ঈশ্বরের সন্তান জিশুর প্রচারিত ধর্ম না? একদম ই না। ইসলাম যেমন মহম্মদ প্রচলিত ধর্ম বলে তার মৃত্যুর দুশো বছর বাদে চালানো হল ( তৃতীয় পর্ব দেখুন ), যীশু খ্রীষ্ট্রের ধর্ম বলতে যা আজকে আমরা জানি-সেটাও  যীশুর জন্মের দুহাজার বছর আগে থেকে চলে আসে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় রূপকথাগুলির সংকলন ছাড়া কিছু না । এবং চালানোর কৃতিত্ব মোটেও যীশুর না -তা প্রাপ্য রোম সম্রাট কনস্টানটাইনের (৩০৬-৩৩৭)।

    মূলত তিনিই রোমান সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে খ্রীষ্ঠান ধর্মের বর্তমান রূপের প্রবর্তক। যীশু সেই রোমান সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে জন্মানো  ধর্মের এক কেন্দ্রীয় মিথিক্যাল চরিত্র।

          যীশু বলে কি কেও ছিলেন? যীশু বলে একজনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জুডাইয়ার শাসক পন্টিয়াস পিলেট  ৩৩ খৃষ্ঠাব্দে শুলে চড়িয়েছিলেন এটা রোমান ঐতিহাসিকরা লিখে গেছেন। এই যীশু ইহুদি শিক্ষক বা  রাব্বাই ছিলেন। এই টুকুই শুধু ইতিহাস {[1] Van Voorst, Robert E. (2000). Jesus Outside the New Testament: An Introduction to the Ancient Evidence. Wm. B. Eer
খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রচলক কনস্টান্টাইন
dmans Publishing Co.. ISBN 0-8028-4368-9 pages 65-68}
                                                    যীশু সম্পূর্ন এক কাল্পনিক চরিত্র
                                    হোরাস-মিশরের দিনের দেবতা যিনি সব মধ্যপ্রাচ্যের প্রফেটদের পূর্বসূরী

  বাকী ২৫শে ডিসেম্বর কুমারী মাতার গর্ভে জন্ম, ছুতোর পরিবারের যীশু, গরীবের বন্ধু যীশু,  অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি যীশু-এর কোন কিছুর কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই। কিন্ত মিশরীয়, গ্রীস এবং পার্শিয়ান রূপকথা ঘাঁটলে দেখা যাবে, যীশু নামে যে রূপকথার পয়গম্বরকে আমরা জানি, সেই প্রফেট চরিত্র আসলেই মিশরের হোরাস,  গ্রীকদের এটিস এবং পারস্যের জথুরাষ্ট্র [  ইরানের সূর্য উপাসক ধর্মের প্রফেট]  , এই তিন চরিত্রের সংশ্লেষন। এবং সেই সংশ্লেষন কাল যীশুর জম্মের তিনশো বছর বাদে কনস্টানটাইনের রাজত্বকালে {[২]  Peter Brown, The Rise of Christendom 2nd edition (Oxford, Blackwell Publishing, 2003) }

  কেন এমন সিদ্ধান্তে এলেন, ঐতিহাসিকরা?

   যীশুর মিথিক্যাল চরিত্রের সব থেকে কাছাকাছি মিশরের দেবতা হোরাস {[3]http://proud-a.blogspot.com/2012/09/jesus-vs-horus.htm  /http://www.andrew.cmu.edu/user/jksadegh/A%20Good%20Atheist%20Secularist%20Skeptical%20Book%20Collection/Parallels_between_Jesus_and_Horus_an_Egyptian_God.pdfl}।


   হোরাসের জন্ম ২৫ শে ডিসেম্বর।  কেন ২৫ শে ডিসেম্বর?

   হোরাস ছিলেন দিনের দেবতা । মিশরের লোকজন মনে করতে দিন রাত হয়- হোরাস নামে দিনের দেবতা আর অসিরিস নামে রাতের দেবতার যুদ্ধে। সকালে হোরাস জিতলে দিন ,  সন্ধ্যাবেলায় অরিসিস জিতে রাত নামে।  হোরাস মিশর শুধু না-গ্রীক এবং রোমান যুগেও প্রভাবশালী  দিনের দেবতা হিসাবে টিকে গেছেন। তবে রোমে হোরাসে নাম হয়  এর পর থেকে মধ্য প্রাচ্যে যত প্রফেট এসেছে-সে আব্রাহাম ই হৌক বা জথুরাষ্ট্র  হৌন, সবার ওপর হোরাসের পৌরানিক চরিত্রের প্রভাব অসীম।

কিন্ত ২৫ শে ডিসেম্বরে মধ্য প্রাচ্যের সব প্রফেটরা পাইকেরি হারে জন্মালেন কেন?

কারন সেই হোরাস।  ২২ শে ডিসেম্বর দিন সব থেকে ছোট হয়। এরপর ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে দিন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এটা মিশরীয়রা জানত-এবং তাদের থেকে গ্রীক-রোমানরাও শেখে। ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিন হচ্ছে হোরাসে্র জন্মদিন। কারন সে দিনের দেবতা-আর ঐ দিন থেকে দিন বড় হতে থাকে বলে, মিশরীয়রা বহুদিন থেকে ২৫ শে ডিসেম্বরকে হোরাসের  জন্মদিন বা পবিত্রদিন হিসাবে পালন করত। হোরাস যেহেতু গ্রীক-রোমান সভ্যতায় দেবতা হিসাবে ঢুকে পড়ে, সেহেতু মধ্যপ্রাচ্য, রোম এবং গ্রীসে খ্রীষ্ঠ জন্মের বহুদিন আগে থেকেই বড়দিন হচ্ছে সব থেকে পবিত্র দিন। রোমে ঐ দিন পালন করা হত ব্রুমালিয়া উৎসব হিসাবে [http://en.wikipedia.org/wiki/Brumalia] ।

   তাহলে, যীশু ২৫ শে ডিসেম্বর জন্মালেন কি করে?  এই মিথটার ইতিহাস সুলিপিবদ্ধ।  যীশুর জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর পালন করা শুরু হয় তার জন্মের ৩০০ বছর বাদে। প্রথম খ্রীষ্ঠান সম্রাট কনস্টানটাইন, ২৫ শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্মদিন বলে চালিয়ে দিলেন । কিন্ত কেন ?

 কনস্টানটাইন খ্রীষ্ঠান ধর্ম নিয়েছিলেন সাম্রাজ্যের স্বার্থে, নিজে ছিলেন ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ।  আসলে বড়দিন  রোমান সম্রাজ্যের একটা বড় প্যাগান উৎসব -ব্রুমালিয়ার দিন।  কনস্টানটাইন ওইদিনটাতেই যীশুর জন্মদিন হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য রোমান  প্যাগানরা যাতে সেই উৎসবে যোগ দিতে পারে । এমনিতেই রোমান প্যাগানরা তার খ্রীষ্ঠ ধর্মগ্রহনে বা চার্চের পেছনে রাজানুগ্রহে খুশী ছিল না । গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন,  ২৫ শে ডিসেম্বরের বড়দিনের উৎসব বাতিল করলে রোমান সম্রাজ্যে কনস্টানটাইনের জনপ্রিয়তা আরো নামত । ফলে যা ছিল দিনের দেবতার জন্মদিনের উৎসব -তা যীশু জন্মদিন হিসাবে রাজানুগ্রহে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যীশু নামে এক ধর্মপ্রচারকের মিথ, তার জন্মের তিনশো বছর বাদে বিবর্তিত হয়েছে।

 এবার আসল প্রশ্নে আসা যাক।  কিভাবে খ্রীষ্ঠান ধর্ম মধ্যযুগের রাজনীতিতে নির্নায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হল। কেন কন্সটানটাইন রোমান জাতীয়তাবাদ ছেড়ে খ্রীষ্ঠান জাতিয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদে এলেন? কি দরকার ছিল ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদে? কেন রোমান সাম্রাজ্যবাদের থেকে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হল কনস্টানটাইনের?

 এটা বুঝতে আমরা বর্তমানের কিছু উদাহরনের দিকে তাকাতে পারি। ভারত বা বাংলাদেশের মুসলমানদের একটা বৃহত্তর অংশ, ইসলামের পালন বলতে বোঝে বোরখা পড়া, আরো লম্বা দাড়ি,  আরবের প্রচলিত শরিয়া আইন, রমজান মাসে উপবাস ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রাক ইসলামিক ইতিহাসের ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে বোরখা পড়া থেকে রমজান মাসে উপবাস-এসব কিছুই আরবে ইসলামের পূর্বেও ছিল। যেহেতু ইসলামের জন্ম আরবে, সময়ের সাথে সাথে তা ইসলামিক সংস্কৃতি বা ধর্মীয় সংস্কৃতি হিসাবে ঢুকে গেছে।

     কিন্ত মজার ব্যপার হচ্ছে,   এই মধ্যযুগীয় আরবীয় সংস্কৃতিকে ভারত বা বাংলাদেশের  ধর্মভীরু মুসলিমরা "ইসলামিক সংস্কৃতি ভেবে"  নিজেদের দেশের, নিজের মাটির সংস্কৃতি ছেড়ে গ্রহণ করতে চাইছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে কাফির বা বিধর্মী সংস্কৃতি ভাবা শিখছে।

 কি আজব চিজ দেখুন!  আরবদের একটুও যুদ্ধ বিগ্রহ করতে হচ্ছে না বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যেকোন মুসলিম দেশে!! অথচ বিশ্বাসের ভাইরাস তারা এমনভাবে ইসলামের মধ্যে ঢুকিয়েছে- ইসলামের মধ্যে দিয়ে আরব সংস্কৃতি পৃথিবীর প্রতিটা মুসলিমপ্রধান দেশ গ্রহণ করছে। অর্থাৎ দেশগুলি আরবের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ হয়ে গেছে বা হতে চাইছে!!  মুসলিম দেশগুলি নিজেদের দেশের হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে  "কাফির" বা বিধর্মী সংস্কৃতি বলে ঘোষনা করতে চাইছে!! এর থেকে একটি সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বড় বিজয় আর কি হতে পারে ?

 ইসলামের মধ্য দিয়ে এই সফল আরব সাম্রাজ্যবাদ বোঝা বেশ সহজ। এবং সেটা থেকে বোঝা যাবে কেন কনস্টানটাইন রোমান জাতিয়তাবাদ ছেরে খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদের প্রচলন করলেন। কেন "রোম মহান" থেকে "খ্রীষ্ঠ ধর্ম মহান" তার সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হল।

  সাম্রাজ্যবাদ মানে শুধু যুদ্ধে দেশ জেতা না । সেই দেশে শোষন বজায় রাখতে, ভৃত্য প্রভুর সম্পর্কটা সবল করার দরকার হয়েছে সব সময়। অর্থাৎ বিজিত দেশগুলি থেকে লাভ করতে হলে, সেই দেশে, এমন একটা শ্রেণী তৈরী করতে হবে-যারা হবে বিজয়ী দেশের তাবেদার। তারা যেন বোঝে বিজয়ীদেশ উন্নত এক সভ্যতা-তারা নিজেরা আসলেই অনুন্নত জাতি। এবং তাদের উন্নতির জন্য, বিজয়ী জাতির প্রভুত্ব বা অনুকরন মানা দরকার। ভারতের ইতিহাসে এটা আমরা বিশেষ ভাবে দেখেছি। জমিদার,  ভারতীয় রাজন্যবর্গ, এবং তার সাথে আমাদের স্বনামধন্য রেনেসাস চরিত্ররা ( যার মধ্যে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ , স্যার সৈয়দ আহমেদ সবাই ছিলেন) বরাবর মনে করতেন, ভারতে বৃটিশ শাসন আর্শীবাদ। অভিশাপ না । এই "তাবেদার"  শ্রেনীর নির্মান হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদি শক্তির সব থেকে বড় সফলতা ।

 খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদ গ্রহণ করার আগে, রোম কিভাবে এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ ( যে রোমান শাসন হচ্ছে আর্শীবাদ-তা উন্নত সভ্যতার শাসন ) চালাতে সক্ষম হত? কি ছিল তাদের সাম্রাজ্যবাদি নিয়ন্ত্রনের ম্যাজিক গল, গথ, ভিসিগথ, জার্মেনিয়া, চেরোকি ইত্যাদি ইউরোপিয়ান আদিবাসিদের ওপর?

 শুধু মিলিটারি দিয়ে এটা সম্ভব না । রোমানরা তা জানত বিলক্ষণ । যেসব আদিবাসি গ্রুপদের ওরা যুদ্ধে হারাত বা যারা রোমের বশ্যতা স্বীকার করত, রোমানরা এক অদ্ভুত "রোমানাইজেশন" প্রথা চালু করে তাদের জন্য। এইসব আদিবাসিদের নেতাদের সন্তানদের দশ বছর বয়সে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাওয়া হত রোমে । আদিবাসি নেতাদের বাধ্য করা হত তাদের সন্তানদের রোমের অভিজাত মিলিটারি স্কুলে পাঠাতে।

     উদ্দেশ্য? যাতে এই সব অভিজাত সন্তানরা তাদের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রোমান অভিজাত মিলিটারি লিডার হিসাবে বড় হয় ।  রোমে এদের শিক্ষার অঙ্গ হচ্ছে-সেই তাবেদারি শ্রেনী তৈরী- রোম  সভ্যতার সূর্য্য। আর এই অভিজাত সন্তানদল রোমান  সভ্যতাকে রক্ষা সৈন্য হিসাবে নিবেদিত প্রাণ। তাদের নিজেদের জাতি হচ্ছে বর্বর ।  তবে তারা রোমান ! এরপর এরা রোমের সেনাবাহিনীর অঙ্গ হিসাবে যুদ্ধ করে নিজেদের প্রতিভা প্রতিষ্ঠা করার সু্যোগ পেত। রোমান বশ্যতা প্রদর্শনের নিরঙ্কুশ প্রমাণের পর - জন্মস্থানে রোমের গর্ভনর বা সহকারী গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হত এই আদিবাসি রাজপুত্রের দল ।  তারা এসে তাদের স্বজাতিকে বোঝাত- রোম মহান-রোমের প্রতিবিশ্বস্ত থাকলে, তাদের উন্নতি। যেভাবে ভারতের রাজন্য এবং মধ্যবিত্ত বর্গ বৃটিশ শাসন নিয়ে বহুদিন আপ্লুত ছিল। আসলে এটাই সাম্রাজ্যবাদের চিরচারিত ট্যাকটিস এবং সব থেকে শক্তিশালী পিলার। বিজিত দেশের লোকেদের মধ্যে একটা অনুগামী শ্রেনীর সৃষ্টি। আমরা এটাই দেখব, এই শ্রেনীর সৃষ্টি ধর্মের মাদকে যত সফল ভাবে সম্ভব-অন্য কোন রাজনৈতিক ফর্মুলাতে তা অসম্ভব!!

কিন্ত নিয়ন্ত্রনের এই পদ্ধতি খুব যে ভাল কাজ করত তা না । উদাহরন জার্মেনিয়া বা জার্মানির আদি আদিবাসী গোষ্ঠি  চাট্টিদের বাটাভি বিদ্রোহ (৬৯-৭০ খৃষ্টাব্দ)।

 এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে এক "পরিবর্তিত রোমান" গায়াস জুলিয়াস সিভিলিস। যিনি ছিলেন বাটাভি রাজপরিবারের সন্তান । কিন্ত ছোটবেলায় তাকে রোমে মিলিটারী স্কুলে নিয়ে গিয়ে রোমান অভিজাত বানানো হয়।  বয়স যখন ত্রিশ, রোমান গর্ভনর মামিয়াস লুপেক্রাসের সহকারি হিসাবে তিনি নিজের জন্মস্থান চাট্টিতে ফিরে আসেন। কিন্ত ফিরে এসে সিভিলিস দেখলেন, রোমান আইন আসলেই তাদের আইনের থেকে অমানবিক। রোমান সৈন্যরা, সমৃদ্ধ চাট্টিদের কাছ থেকে ট্যাক্সের নামে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে।  চাট্টি আইনে  চুরি ডাকাতির জন্য মৃত্যদন্ড ছিল না- রোমানরা শুধু রুটি চুরির জন্য, চাট্টিদের শুলে চড়াত।  সিভিলিস বুঝলেন শুধু রোমান চাকচিক্য থাকলেই সভ্য হয় না । চাট্টি আদিবাসিদের আইন, রোমান আইনের থেকে অনেক বেশি মানবিক এবং উন্নত । জার্মেনিয়ার আদিবাসি নেতারা কখনোই বুভুক্ষদের  থেকে তাদের শেষ খাবারটা ট্যাক্সের নামে ছিনিয়ে নেয় না ।


     জুলিয়াস সিভিলিস রোমের সৈন্যদল ত্যাগ করে চাট্টি বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিলেন। সিভিলিস রোমানদের যুদ্ধ কৌশল জানতেন। ফলে সম্মুখ সমরে না নেমে গেরিলা আক্রমনে মামিয়াস লুপেক্রাসের তিন লিজিয়ন  সেনাবাহিনীকে ( প্রায় কুড়ি হাজার সেনা) সম্পূর্ন ধ্বংস করেন। এই মামিয়াস লুপেক্রাস ছিল, তার পালিত পিতার মতন । কিন্ত যিনি সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ একবার বুঝেছেন এবং স্বজাতির দুঃখকে অনুভব করেছেন, তিনি তার পালিত রোমান পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বাধ্য হলেন। জুলিয়াস সিভিলিস আজও জার্মানির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল চরিত্র। জার্মান জাতিয়তাবাদ জুলিয়াস সিভিলিসে মগ্ন ।যিনি জার্মানীকে রোমের কাছ থেকে স্বাধীন করেছিলেন।

                     সাম্রাজ্যবাদের সব থেকে বড় খেলাটা হচ্ছে কিভাবে বোঝানো যায় বিজিত জাতির সংস্কৃতি, আইন নিম্নমানের। যেমন বাংলাদেশ সহ সব মুসলিম দেশের ইসলামিস্টরা শরিয়া আইন চাইছে নিজেদের দেশে। শরিয়া আইনের সাথে কোরানের বিশেষ সম্পর্ক নেই। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এই আইনের উৎপত্তি আসলেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আইনের ধারা থেকে-যার মধ্যে ক্যানানাইট, সিরিয়ান থেকে আরবের ইসলামপূর্ব আইন ও অনেক আছে।  অর্থাৎ শরিয়া বলে যা চালানো হচ্ছে তা আসলে মধ্যযুগীয় আরব আইন। কি যুক্তি শরিয়া প্রেমীদের?  সেটা এই-বাংলাদেশের আইন হচ্ছে মানুষের তৈরী আইন। আর শরিয়া হচ্ছে আল্লার আইন (!) সুতরাং শরিয়া আইন শ্রেষ্ঠতর -এবং তা বাংলাদেশ ধর্ষনপূর্বক চালাতেই হবে!!!

 শুধু কি তাই! অধিকাংশ ভারতীয় এবং বাংলাদেশী মুসলিমদের ধারনা, ভারতে মুসলিম আক্রমনের আগে এই দেশ ছিল বর্বর !! এই ধরনের হাস্যকর ধারনা প্রতিটি বিজয়ী সংস্কৃতির মধ্যেই থাকে।  বাস্তব সত্য হচ্ছে বিজয়ী জাতিগুলি ছিল বর্বর -এবং বিজিতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেক বেশি মানবিক উন্নত সভ্যতার অধিকারি ছিল। এটা রোম, স্পেইন, ইসলাম থেকে আর্য্য-সব বিজয়ীদের ইতিহাসে সত্য। এই সামরিক শক্তিগুলি আসলেই বর্বর লুটেরা শক্তি ছাড়া কিছু ছিল না । এরা উন্নততর সভ্যতাগুলিকে ধ্বংস করেছে -এবং বিজিতদের বর্বর আখ্যা দিয়েছে।

 প্রিয় পাঠক এবার একবার ভাবুন। ভাবুন এই শরিয়া আইন, যা আসলেই আরবীয় আইন ছাড়া কিছু না -তা যদি আরবের লোকেরা বাংলাদেশের ওপর  অস্ত্রের জোরে " আরবের আইন " বলে বলবৎ করত, তাহলে ফলটা কি দাঁড়াত?  বাংলাভাষি প্রেমী মানুষরা নিসন্দেহেই আরবের আইন শুনলে হা রে রে করে তেড়ে এদের বিদায় করতেন!!

               কিন্ত সেই আরবের আইনকে আল্লার আইন বলেতেই ধর্মভীরু মুসলিমদের মনে ঢুকছে ভয়।  তারা ভাবছে, শরিয়া আইনে সাত পাঁচ ব্যাঙ ঘোঁড়া যা খুশি থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ। কারন তা আল্লার আইন-আল্লার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া!!

                    অর্থাৎ নিজেদের আইনটাকে যদি  "রোমান আইন" বলে না  চালিয়ে, মামিয়াস লুপেক্রাস ঈশ্বরের আইন বলে চালাত- এই ধরনের আদিবাসি বিদ্রোহ হত না।  কিন্ত শুধু ঈশ্বরের আইন বললেই হবে না । সেই ঈশ্বর আদিবাসিদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও হতে হবে।  শরিয়া আইন কৃষ্ণের আইন বলে চালালে হবে না-তা আল্লার আইন বলেই চালাতে হবে!! কারন বাংলাদেশের মানুষ আল্লাকেই একমাত্র আসল ঈশ্বর বলে মানে।  নইলে কে ঔ মধ্যযুগীয় আরব আইনের হেফাজত করবে?

  সুতরাং কনস্টানস্টাইন প্রথম শ্লোগান তুললেন এক সাম্রাজ্য-এক ঈশ্বর । সে হচ্ছে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বর। হ্যা সবাই যদি খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে একমাত্র সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানে, তাহলে খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরের আইনের নামে, ইউরোপের সব বিদ্রোহী আদিবাসিদের মধ্যে রোমান আইনের প্রচলন সম্ভব। রোমের আইন বললে কেও মানবে না । রোমের আইন লোকে তখন ই মানে যখন রোমান সেনাদের তারা ভয় পায়। কিন্ত রোমের তখন ক্ষয়িষ্ণু সেনাবল। শুধু সেনাবলের ভয়ে, আর রোমান সাম্রাজ্য টেকানো যাবে না  এটা বুঝতেন কনস্টানস্টাইন।  ফলে দরকার হল একেশ্বরবাদের ঈশ্বর বা আল্লার ভয়। ঈশ্বর বা আল্লা নামক সুপার মাফিয়ার ভয় টেকাতে কোন লজিস্টিক লাগে না । বিশ্বাসের ভাইরাসের মতন এই ভয় মানুষের মনে, সমাজের মনে একবার গেঁথে গেলেই হল। ব্যাস!  এই মহান ঈশ্বর বা আল্লার নামে তখন নিজেদের আইন বলবৎ করতে সক্ষম হয় বিজয়ী জাতি। কনস্টানটাইন ঠিক সেটাই করলেন। রোমান সংস্কৃতি এবং আইন, আস্তে আস্তে খ্রীষ্ঠান আইনে রূপান্তরিত হল । খ্রীষ্ঠান সংস্কৃতি বলতে আজ আমরা যা বুঝি বা দেখি, তা আসলে রোমান সংস্কৃতি।

 কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্মকে বা খ্রীষ্ঠান ঈশ্বরকে  কেন এক মাত্র সত্য ঈশ্বর হিসাবে চালাতে চাইলেন কনস্টানস্টাইন? সেটা কি খ্রীষ্ঠধর্ম প্রীতি?
 
  কনস্টাইনের মা হেলেনা ছিলেন খ্রীষ্ঠান-কিন্ত  খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট কনস্টানটাইন মোটেও ধার্মিক টাইপের লোক ছিলেন না। ছিলেন বুদ্ধিমান রাজনীতিবিদ। রোমের অধিকাংশ লোক তখন ও প্যাগান।  তাদের চটানোর উদ্দেশ্য কোন কালেই তার ছিল না। সম্রাটের রোমের  সেনেটে যারা ছিল, তারা প্রায় সবাই প্যাগান।

 তাহলে কেন গরীবদরদি ধর্মকে সাম্রাজ্যবাদের ধর্মে রুপান্তরিত করন?

  সামাজ্যবাদের ধর্মকে গরীব দরদি হতেই হবে। কারন অধিকাংশ লোকের মধ্যে এই ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা না এলে তারা এই ধর্মর ঈশ্বরকে সত্যিকারের ঈশ্বর বলে মানবে কেন?  আমার ঈশ্বর সত্য, তোমার মিথ্যে-এটাই ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের আসল চাবিকাঠি।

   প্যাগান ধর্ম কোন কালেই আর্থ রাজনৈতিক না । হিন্দু জমিদাররা পূজো করে। গরীব প্রজারা দুদিন আনন্দ করে।  আনন্দ আমোদ আহ্লাদ হচ্ছে প্যাগান ধর্ম।  রোমেও প্যাগান ধর্ম বলতে সেই আনন্দ স্ফূর্তি। আর উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বলি দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মধ্যে সেই "সার্বজনীন" আবেদন কোথায় যা সবার , সব দেশের সব শ্রেনীর গরীব মানুষের নিজের ধর্ম হয়ে উঠবে? যার জন্য তারা, সেই ধর্মের ঈশ্বরকে সত্যকারের ঈশ্বর বলে মানবে?  দেবী দূর্গাকে আদিবাসিদের মধ্যে দেবতা  বলে চালানো কঠিন-কিন্ত যিশুকে সত্যকারের ঈশ্বরপুত্র বলে আদিবাসিদের মধ্যে চালানো অনেক সহজ। কারন খ্রীষ্ঠান মিথগুলি দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে এই ঈশ্বরপুত্র গরীবদের, নির্যাতিতদের সেবা করেছেন-অত্যাচার থেকে বাঁচাতে।  জমিদারদের বিলাস ব্যসনের বৈভবের দেবী দূর্গার মধ্যে কি খুঁজে পাবে আদিবাসিরা যাতে তারা দূর্গাপূজাতে অনুপ্রাণিত হবে?  রোমেও সেকালে সমস্যা ছিল এক। রোমাণ প্যাগান দেবতারা রোমান অভিজাতদের আমোদ স্ফূর্তির দেবতা -তারা কোনকালে ইউরোপে আদিবাসিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয় নি।

 সেই জন্য খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামের নির্মানে একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান- "আমরা শত্রু দ্বারা নির্যাতিত অপমানিত" ।

 গোটা খ্রীষ্ঠান ধর্মটা দাঁড়িয়ে আছে সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের ওপর । এটি হচ্ছে ধর্মীয় একতার মূল নির্যাস। আমরা ভাল মানুষ, আমরা নির্দোষ, আমাদের শত্রুরা আমাদের ওপর নির্যাতন করে। ফলে এক সত্য ঈশ্বরের তলে এক হও!  যীশুর ক্রসবিদ্ধ হওয়া থেকে পুরাতন টেস্টামেন্টের গল্পের সেই এক সুর-আমাদের ধর্মের লোকেদের ওপর অত্যাচার এবং অবিচার!!

         আজকে গোটা বিশ্ব জুরে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের মূল নির্যাস ও এটাই। চেচেনিয়া, প্যালেস্টাইন, কাশ্মিরে মুসলিমদের পেটানো হচ্ছে-তাই সমস্ত ইসলামি ভাতৃত্ববোধ উছলে পড়ছে। অথচ এই কাষ্মীরেই, কাশ্মীরি পন্ডিতদের সম্পূর্ন ভাবে তাড়িয়েছে মুসলিমরা। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ ইতিহাসের ধারাবাহিক পক্রিয়া।  পাকিস্তানে মাত্র ২% হিন্দু টিকে আছে-যা দেশভাগের সময় ছিল ২২%।
 এসব মডারেট মুসলিমদের ও চোখে পড়ে না -চোখে পড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে অন্যদেশের মুসলিমদের দুর্ভোগ। এটাই আসল শক্তি সেই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের। যা সব থেকে বেশি কাজে লাগিয়েছে খ্রীষ্ঠানরা।


কনস্টানস্টাইন যখন রোমের সম্রাট হলেন -বিশাল রোম সম্রাজ্য টিকিয়ে রাখায় মহাদায়। চারিদিকে ইউরোপের আদিবাসিরা বিদ্রোহ করছে পাইকেরি হারে। তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে  অবতীর্ন।  সুতরাং রোম সেরা বলে সেই সাম্রাজ্য টেকানোর দিন শেষ। উনি দেখলেন খ্রীষ্ঠান ধর্মে সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশন কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় সেই ভাতৃত্ববোধ যা দিয়ে একটি সাম্রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায়। আদিবাসিদের বশে আনা সম্ভব।


 শুধু ইসলাম বা খ্রীষ্ঠানরা কেন?  আজকের ভারতের হিন্দুত্ববাদিরাও সেই "সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন" কেই কাজে লাগাচ্ছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের প্রচারের মূল হাতিয়ার বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, পাকিস্তানে হিন্দু মেয়েদের বলাৎকার আর কাশ্মীরে পন্ডিত বিতাড়ন।  ঘরের পাশের মুসলিমটি যে আর্থ সামাজিক কারনে আরো বাজে অবস্থায় আছে-সে ব্যাপারে তার হুঁস নেই। তাহলে সেন্স অব ভিক্তিমাইজেশন বা হিন্দু ভাতৃত্ববোধ কাজ করবে না ।  আর এই ধর্মীয় ভাতৃত্ববোধ হচ্ছে ধর্মীয় রাজনীতির মূল শক্তি-যার উৎপত্তি খ্রীষ্ঠান ধর্ম থেকে। ইসলামে সেই ভাতৃত্ববোধ আর সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের আর্টটা আরো উন্নত, আরো বেশী রাজনৈতিক।  এই ব্যপারে লিখছি পরের পর্বে।

 

 



Sunday, August 4, 2013

গোপাল পাঁঠার পুনরুত্থান,বামেদের গোরস্থান

শেষে এদিনও এল। কোলকাতা, বাম বাঙালীর গর্বস্থানে গোপাল পাঁঠার জন্মদিন পালন হবে মহাসমারোহে-আর ইলামিত্র, যিনি আদিবাসি আন্দোলনের প্রবাদ প্রতিম নেত্রী, তার জন্মদিন ত দূরের কথা, বামপন্থী ছেলেগুলো, তার নাম জানে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

কোন সন্দেহ নেই বাম স্যোশাল মিডিয়া হিন্দুত্ববাদিদের দখলে চলে গেছে। তার মানে বিজেপির দিকে ভোট গেছে তা না -অনেক হিন্দুত্ববাদি মোমোকেই ভোট দেয়-চাল ডাল চাকরি রেশনের সমস্যা। তবে সেই জন্য লিখছি না -স্যোশাল মিডিয়াতে বামেরা একদম ধরাশায়ী। সেরকম গুনী মানী বাম লেখক, চিন্তাবিদ স্যোশাল মিডিয়াতে কোথায়? যারা আছে তারা হয় খিস্তিবাজ নইলে বামতোতা- পৃথিবী ধ্বংস হলেও, সেই একই দুনিয়া কাঁপান ১০ দিনের রূপকথাকে সত্য জেনে ধুপধূনো দেয়। আর এদিকে, লালশালুমোড়া বামপন্থায় মস জমতে জমতে ভারতের রাজনীতিতে বামেদের ভোট ৪% থেকে নেমে ২ এর কাছাকাছি চলে আসে। মমতা না ছড়ালে ওটা কেরালাতেই সীমাবদ্ধ থাকত ।

বামেদের হিন্দুবিরোধি কিন্ত মুসলিম মৌলবাদের প্রতি মৌনতা যে উঠতি হিন্দু যুবকদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেবে, সেটা আমি ৪ বছর আজ্ঞে একটা প্রবন্ধে লিখেছিলাম। ওরা তখন পাত্তা দেয় নি-কারন সেই চাল ডাল চাকরির লোভে এই সব চাপা হিন্দুত্ববাদিরা এস এফ আই এ নাম লিখিয়েছিল। তাই বোঝে নি। আজ যখন সেই চাল ডাল চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেয়-দেখা যাচ্ছে দলে দলে উঠতি হিন্দু বাঙালী যুবকরা দক্ষিন পন্থি হিন্দুত্ববাদে নাম লেখাচ্ছে। এটা যে হবে আমি পাঁচ বছর আগে লিখেছিলাম।


[সোমক ফেসবুকে একটা ভাল পোষ্ট দিয়েছে। দেখুন দুরাবস্থাটাঃ সোমকের পোষ্ট থেকে
-------------------------------------
বামপন্থার পতন এর পক্ষে
সিপিআই+সিপিএম ভোট% এবং আসন
১৯৫১- ৩.২৯(১৬)
১৯৫৭- ৮.৯২(২৭)
১৯৬২- ৯.৯৪(২৯)
১৯৬৭- ৯.৩৯(৪২) (সেই বার প্রথম সিপিএম আলাদা লড়ে যাই হক আমি সিপিএম এবং আই দের ভোট যোগ করে লিখছি)
১৯৭১- ৯.৮৬(৪৮)
১৯৭৭- ৭.১২(২৯)
১৯৮০- ৮.৭৩(৪৭)
১৯৮৪- ৮.৫৮(২৮)
১৯৮৯- ৯.১২(৪৫)
১৯৯১- ৮.৬২(৪৯)
১৯৯৬- ৮.০৯(৪৪)
১৯৯৮- ৭.১৫(৪১)
১৯৯৯- ৬.৮৮(৩৭)
২০০৪- ৭.১০(৫৩)
২০০৯- ৬.৭৬(২০)
কাজেই এই হিসেব দেখে কি বুঝলেন? একসময় এর প্রায় ১০% ভোট থেকে কমে আজ আপনারা ৬-৭ এর গণ্ডীতে খাবি খাচ্ছেন যাই হক একটা জিনিস নিশ্চয়ই দেখবেন যে ভোট কমা সত্ত্বেও ১৯৮৪ বাদ দিয়ে ১৯৮০-২০০৪ বামরা প্রত্যেক বার ৪০ এর বেশি আসন পেয়েছে। কেন জানেন? অই সময় গোটা দেশে যখন আপনারা উবে যাচ্ছিলেন তখন পশ্চিমবঙ্গ আপনাদের দরাজ হস্তে ৪২ এর ভেতর ৩০-৩২ টা করে আসন দিচ্ছিল। তাই আসন কমেনি কিন্তু গোটা দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট কমেছে। আপনাদের মোট আসনের ৬০-৭০% জুটিয়েছিল বাংলা। আগে কিন্তু এমন ছিল না মোটামুটি গোটা দেশে বামরা লড়তেন এবং সব রাজ্যেই অন্তত একটা দুটো বিধানসভা বা লোক সভা জেতার ক্ষমতা আপনাদের ছিল। তাই বাংলার পতন হতেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আপনারা উবে গেলেন ভোট তো আগেই গেছিল আসন সংখ্যাও গেল। বাংলা পুনরুদ্ধার না করতে পারলে আপনারা মোদ্দা কথায় ফিনিস
_______________________

Somnath Roy ৫১ থেকে ৫৭র মধ্যে ভোটটা বেড়েছিল কেন?
_____________

Somak Chaudhury কয়েকটা রাজ্যে আগে বাম কি ছিল এখন কি হয়েছে-
বিহার- বিহারে সিপিএম এর থেকে সিপিআই বরাবর বেশি শক্তিশালি। সিপি আই বিহারে একসময় নিজের শক্তি তে ৩০ টা বিধানসভা একা লরেও জিতেছে। প্রতিবার ৫-৬ টা করে লোক সভা আসন জিতত আজ? সিপি আই এর বিহারে বিধায়ক-১ ভোট ২% সাংসদ-০
সিপিএম ২-৩ টে করে লোকসভা আসন জিতত। ভাগলপুর এ অনেক বার জিতেছে। পুরনিয়ার অজিত সরকার বিখ্যাত বিধায়ক ছিলেন।
বেগুসরাই ছিল নাকি বিহারের লেনিনগ্রাড। আজ বিহারে সিপিএম ০
আসাম- আসামে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সিপিএমের বিশাল প্রভাব ছিল। শিলচর এবং বরপেতা লোকসভা আসনে বামেরা অনেকবার জিতেছে। সিপিএম ২-৩ জন করে সাংসদ পেত এককালে ওখান থেকে। আর আজ???? আসামে বামেদের সাংসদ ছেড়ে দিন মোট বিধায়ক???? রসগোল্লা শিলচরে জামানত জব্দ হয় তাদের
মহারাষ্ট্র- জানেন একসময় বাল ঠাকরের উত্থানের আগে মুম্বই তেও বামেরা লোক সভা আসন জিতেছে? অবাক??? ঢপ? আজ্ঞে না সত্যি জিতেছে একসময় মহারাষ্ট্রে ২০ টা বিধানসভা জেতার ক্ষমতা ছিল বামদের আর আজ? সবেধন নীলমণি একজন সিপিএম বিধায়ক পড়ে আছেন তিনিও মনে হয় ২০১৪ এ হেরে যাবেন তবে আসামের মত এখানেও ষোল কলা পূর্ণ হবে।
অন্ধ্র- একসময় তেলেঙ্গনায় কংগ্রেস এর মুল প্রতিপক্ষ ছিল বামরা অন্ধ্র থেকে বহু বিখ্যাত বাম নেতা উঠে এসেছেন। একা লড়ে ২-৩ টে লোকসভা আসন জেতার ক্ষমতা তাদের ছিল। অন্ধ্র বিধানসভায় ১০ এর কম বিধায়ক বামরা কখনও পাঠায় নি। আর আজ? ক্রমাগত তেলেগু দেশম এর সাথে জোট করে বামদের নিজেদের ভোট ব্যাংক ই কমে গেছে ১৯৯৯ এ একা লড়ে সব কেন্দ্রে জামানত হারায় বামরা। তারপর বুদ্ধি খোলে একবার কংগ্রেস একবার টিডিপি র সাথে বামরা জোট করে লড়ে (এরা আবার আদর্শর কথা বলে? ) তাও জোট করেও আগের লোকসভায় একটাও জেতেনি। বিধানসভায় ৫ টা বিধায়ক পড়ে আছে।
আর কত উদাহরন দেব? তামিলনারুতে বামরা একবার করুনা আর একবার জয়ার ঘাড়ে চেপে ২-৩ টে আসন পায়... উত্তর প্রদেশে মুছে গেছে... সেখানে এলাহাবাদেও সিপিআই এককালে লোকসভা জিতেছে জানেন!!!! কাশ্মীরে একটা বিধায়ক পড়ে আছে। মধ্যপ্রদেশে অনেক দিন অব্দি ১ টা ছিল ২০০৯ এ সেও হেরে গেছে। গোটা দেশ থেকেই আজ বামরা অবলুপ্ত হতে চলেছে। পাঞ্জাবেও বাম রা আজ ০। গুজরাটে আহমেদাবাদে জ্যোতি বসু সিটুর বড় সভা করে গেছেন এখন ওখানে বামরা ১ টা আসনে কোনমতে প্রার্থী দেয় আর তারও জামানত জব্দ হয়।
ইসস অনেক সত্যি কথা বলে ফেললাম সরি




]

এই মুহুর্তে দুটো জিনিস না করলে বামেরা তরুন শ্রেনীর কাছ থেকে ধুয়ে মুছে যাবে.

(১) লেনিনবাদ-স্টালিনবাদ ত্যাগ করে ল্যাটিন আমেরিকার মাটির কাছাকাছি প্রকৃতিবাদি বামপন্থাকে গ্রহণ করা- আজকের ইন্টারনেটের যুগে ওই দুই বিশ্ববিখ্যাত ক্রিমিন্যালের নামে কমিনিউস্ট রূপকথাগুলোকে বিশ্বাস করার মতন কেও নেই। এটা বুঝতে হবে। ইকুয়েডের প্রেসিডেন্টের মতন কেও ত বলুক নতুন বামপন্থা শুরু হোক পরিবেশকে বাঁচাতে-এইসব শ্রেনীতত্ত্ব, বিপ্লব, শ্রেনী সংগ্রামের ফাজি লজিকের দুনিয়া ছাড়িয়ে ল্যাটিন আমেরিকাতে বামেরা কোয়াপরেটিভ মার্কেট এবং কমিউনিটি ব্যাবসা, ব্যাঙ্কিং এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমেরিকাতেও বামেরা কমিউনিটি ব্যাঙ্কিং, কমিউনিটি শিক্ষা ও স্বাথ্যর ওপর জোর দিচ্ছেন। সেখানে কিন্ত ধনতন্ত্রের ভাল দিকগুলি যথা বাজার, প্রতিযোগিতা, উৎপাদন ব্যাঙ্কিং ইত্যাদির মাধ্যমেই বামপন্থাকে খোঁজা হচ্ছে। সেখানে মালিকানা বদল করে কমিউনিটির হাতে মালিকানা তুলে দিয়ে বা কমিউনিটিকে ঋণ দিয়ে কমিউনিটির ক্ষমতায়নের মাধ্যমে, জনগনের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। ল্যাটিন আমেরকাতে রাফেল করিয়া লেনিন, স্টালিন শ্রেনী তত্ত্ব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যেভাবে ধণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে কমিউনিটিকে এনে সাধারন মানুষের উৎপাদনশীলটা, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং পরিবেশ রক্ষা করছেন। সেখানে শ্রমিক ধর্মঘটের প্রয়োজন হয় না শ্রমিকের ক্ষমতায়নের জন্য।

কিন্ত হায়-কাদের জন্য এ কথা- বাংলার বামেরা কেও বামপন্থী না -সব বামতোতা। এদের মধ্যে নেতা আর কে বেঁচে আছে, যার মধ্যে থেকে একজন হুগো শাভেজ বা রাফেল করিয়া বেড়বে?

বিমান বোস সূর্য্য কান্ত বুদ্ধদেব এরা তোতাকাহিনীর নামগোত্রহীন তোতা-এদের মুখ থেকে শুধু খসখসে কাগজ খাওয়ার শব্দ বের হয়। এদের দিয়ে কোন যুবকশ্রেনীকে উৎসাহিত করা সম্ভব না 

(২) ইসলামিক এবং হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে সমান শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে- শুধু হিন্দুত্ববাদিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, সেটা রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ছাড়া অন্য কিছু না। এই রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জন্য ইউরোপের রাজনীতি বামেদের হাত থেকে ইসলাম বিরোধি দক্ষিনপন্থী শক্তিগুলির হাতে চলে যাচ্ছে বা গেছে। এটা পশ্চিম বঙ্গে সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যেভাবে বাম আমলে মুসলিমদের মধ্যে প্রগতীশীলতার বদলে লুঙি,বোরখা, মাদ্রাসা আর হজের চাষ হয়েছে, তাতে কোন সুস্থ মাথার হিন্দু পরিবারের ছেলে এই বিশ্বাস রাখে না যে এইসব বামেরা ইসলামিক মৌলবাদের থেকে তাদের বাঁচাতে সমর্থ হবে। এবং ইসলামিক মৌলবাদের সমস্যাটা বাংলাদেশ পাশে হওয়ার কারনে পশ্চিম বঙ্গে বেশ বাস্তব। এই নিয়ে আমি আগে লিখেও ছিলাম।

http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=353

guruchandali te ei niye alochona:
https://www.facebook.com/groups/guruchandali/permalink/629547337063216/