Monday, November 12, 2012

ওবামার জয় পরাজয়

-বিপ্লব

  সব জয়ের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের পরাজয়।  সব বিজয় উৎসবই আনন্দমুখর -আবার একই সাথে আগামী দুর্যোগের আভাস!

   ওবামার জয় যে নিশ্চিত সেটা আমি আগের প্রবন্ধে লিখেছিলাম।  প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটেই জিতলেন। ১০ টা সুইং স্টেটের ৮ টাই তার সাথে এল।  কিন্ত তার সাথে সাথে আমেরিকান সমাজের জাতি বিভাজন সাংঘাতিক ভাবে সামনে এল-যা আমার মতে অশনি সংকেত।

  সাদা আমেরিকান পুরুষদের মধ্যে ওবামা ২৩% মাত্র ভোট পেয়েছেন!  একজন সামান্য কর্মচারী বা শিক্ষক যখন শুধু ধর্ম বা সাদা চামড়ার জন্য রমনিকে ভোট দেন, সেটা নিসঃন্দেহে চিন্তার রেখা।


                    তবে আশা রেখেছেন মেয়েরা। দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মধ্যে ৫৪% ভোট পেয়েছেন ওবামা। আবার সেটা যদি অবিবাহিত নারীদের মধ্যে দেখা যায়, দেখা যাবে, ওবামা পেয়েছেন ৭০% এর বেশি ভোট।  আর বিবাহিত মেয়েদের মধ্যে ওবামা ডাউন-সেখানে ওবামা পেয়েছেন ৪৫% এর মতন।  এই ঘটনা বিবাহিত মেয়েদের স্বার্থপরতার সূচক। কেন সেটা বলি।  অধিকাংশ অবিবাহিত বা সিঙ্গল মেয়েরা ওবামাকে ভোট দেবেন এটা স্বাভাবিক । এর কারন রিপাবলিকানরা গর্ভনিরোধের এবং তজ্জন্যে রাষ্ট্রের খরচের ঘোর বিরোধি।  আমেরিকাতে সিঙ্গল মেয়েদের জন্য গর্ভনিরোধকের ব্যবস্থা খুবী প্রয়োজনীয়-কারন তারা ত আমাদের রক্ষণশীল সমাজের অবিবাহিত বা ডিভোর্সি মেয়েদের মতন লক্ষী হয়ে ঘরে বসে হাহুতাস করে না। তাদের এক বা একাধিক পুরুষ বন্ধু আছে এবং অসংযত সহবাসের কারনে গর্ভধারন করাটা এদের নিত্য দুর্ভোগ। কিন্ত এর পরে রাষ্ট্র যদি প্ল্যান্ড পেরেন্ঠুড বা গর্ভনিরোধক সংস্থাগুলিকে বন্ধ করার পরিকল্পনা  নেয়, যা দুর্ভাগ্যবশত রিপাবলিকানদের এজেন্ডা খুব স্বাভাবিক কারনে সিঙ্গল মেয়েরা, ওবামাকে ভোট দিতে বাধ্য। এতে আশ্চর্য্য কিছু নেই। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে বিবাহিত মেয়েদের মধ্যে ওবামা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না কেন?  এর একটাই কারন থাকতে পারে। সেটা হচ্ছে বিবাহিত মেয়েরা গর্ভনিরোধক ক্লিনিক গুলোর অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত না-যেহেতু, তাদের জীবনে জন্যে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন কি করে তারা চাকরি রাখবেন বা ফ্যামিলির উপায়ের প্রশ্ন বড় ছিল। আর চাকরির প্রশ্নে ওবামা রমনির চেয়ে একটু পিছিয়েই ছিলেন। অর্থাৎ  দেখা যাচ্ছে বিবাহিত মেয়েরা ফেমিনিস্ট এজেন্ডা দিয়ে চালিত হন না। তাদের জন্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ন পরিবারের অর্থনীতি।

   এবার দেখা যাচ্ছে ওবামা ল্যাটিনোদের ৭৭% আর কালোদের ৯১% ভোট পেয়েছেন।  ল্যাটিনো কমিউনিটি সরাসরি ডেমোক্রাটদের হাতে এখন। বুশের আমলে এমন ছিল না।  এর মূল কারন রিপাবলিকানরা ড্রিম আক্টের বিরোধি যা আমেরিকাতে জন্মানো অবৈধ ল্যাটিনো সন্তানদের সিটিজেনশিপ দিত।  খুব স্বাভাবিক কারনেই ল্যাটীনোরা রিপাবলিকানদের ওপর খাপ্পা।  এশিয়ানদের মধ্যেও ওবামা ৬৫%।

  অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সাদা আমেরিকান বনাম বাকীদের মধ্যে পার্থক্য তৈরী হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক। কারন সাদা আমেরিকান বলেত কিছু নেই। সবাই এসেছে জার্মানী, ইটালি, আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশ থেকে। এদেশটাই অভিবাসিদের দেশ। এখানে গায়ের চামড়ার রঙে দেশটা ভাগ হবে এমনটা দুর্ভাগ্য জনক। যেসব সাদারা ওবামাকে ভোট দিয়েছেন, তারা উচ্চশিক্ষিত, লিব্যারাল এবং শহুরে। এখানে গ্রামে সাদাদের বাস বেশি। সেখানে প্রায় ৯০% গ্রামে ওবামা হেরেছেন।  ওবামা কৃষকদের শত্রু এমন না। বরং গত কয়েক বছর চাষীদের ইনকাম বেড়েছে আমেরিকাতে। কিন্ত কি অদ্ভুত-দেখা যাচ্ছে ওবামাকে শত্রু ভাবা হল শুধু গায়ের রঙের জন্য! এ ধরনের বর্ণবিদ্বেশ একবিংশ শতকের আমেরিকাতে অনভিপ্রেত!

   এমনিতে আমি থাকি মেরীল্যান্ডের মতন লিব্যারাল স্টেটে।  এখানে বর্ণ বিদ্বেশের ছাপ নেই। কিন্ত কিছু কিছু রাজ্যে ওবামা ২০% এর কম ভোট পেয়েছেন!  এই সব রাজ্যে জন কেরির বা বিল ক্লিণটন ৪০% পেতেন।  এই সব রাজ্যগুলিকে এখানে রেড নেক বলে। এরা সাদা চামড়ার উৎকৃষ্টতার গল্পে গর্বিত।

  ওবামার বিরুদ্ধে প্রচুর নেগেটিভ প্রচার ছিল আমেরিকার ইনসিউরান্স, হেলথকেয়ার, এনার্জি কোম্পানীগুলির।  সারাক্ষন টিভিতে এদের লবির ওবামা বিরোধি প্রচার। এরা হচ্ছে সাদা কলারের আমেরিকারন চোর ডাকাত। সরকার এবং আম আদমিকে লুঠ করে এরা পয়সা বানাতো। ওবামার নতুন হেলথকেয়ার আইন এবং এনার্জি পলিসির জন্য, এদের  অবাধ লুঠের ব্যাবসায় ঘন্টা বাজছে।  আর সেই লুঠকে বৈধ করার জন্য এরা জাতি, গায়ের রং এবং ধর্মের তাস খেলে।  আমেরিকার হেলথকেয়ার হচ্ছে ক্রনি ক্যাপিটালিজমের নিকৃষ্ট উদাহরন যে কিভাবে বৃহৎ ব্যবসার লুঠ তরাজ চালানোর জন্য মানুষের মনে যে জাতিগত বা ধর্মগত সুরসুড়ি আছে তাকে কাজে লাগানো হয়।  শেষমেশ ওবামা এদের প্রতিহত করতে পারলেও, আমেরিকান পার্লামেন্ট বা যা আমেরিকান কংগ্রেস ( হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ)  নামে খ্যাত সেখানে কিন্ত রিপাবলিকানরা আবার ব্যাপক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছেন। হাউসের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের থেকে কম কিছু না। তারাই বিল বানায়।  ডেমোক্ত্রাটদের এই হারের কারন তারা নিজেরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডেমোক্রাট পার্থীদের মধ্যে দুঃশ্চরিত্র এবং অসৎ লোকেদের বেশি সমাহার। আমি নিজে লিব্যারাল হলেও অসৎ লিবারাল পার্থীদের ত কেও ভোট দেবে না। আর আমেরিকানদের মধ্যে সেই ডেমোক্রাট এবং রিপাবলিকান হার্ড সাপোর্টার ব্যাপারটাও হারিয়ে যাচ্ছে। বরং অধিকাংশ লোকই দুই পার্টির ওপর খাপ্পা।

 যাইহোক ওবামা স্বস্তিতে থাকবেন না। এখন আমেরিকান রাজনীতি ধণতন্ত্র বনাম মধ্যপন্থীদের যুদ্ধক্ষেত্র।  কেওই শেষ কথা বলবেন না-কারন সেরকম হলে, আমেরিকার অর্থনীতিই শেষ কথা বলে দেবে। 

No comments: