Sunday, June 17, 2012

শিক্ষার বেসরকারীকরন অথবা ধ্বংস প্রক্রিয়া


৬/১৭/১২
 -বিপ্লব পাল

কয়েকদিন আগে বোনের সাথে কথা হচ্ছিল ব্যাঙ্গালোরের স্কুল নিয়ে। সেখানে এখন ব্যাঙের ছাতার মতন ইন্টারন্যাশানাল স্কুল।  কিন্ত সব স্কুলের স্টান্ডার্ড তথৈবচ। সব টাকা খেঁচার ধান্দা। ব্যাঙ্গালোরে এখনো ভাল স্কুল বলতে হ্যাল বা মিলিটারীর হাতে থাকা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলো। বাকী নামকরা প্রাইভেট স্কুলগুলোতে বার্ষিক ২-৫ লাখ টাকা টিঊশন ফি দিয়েও কোন ভাল শিক্ষক পাওয়া যায় না। যাওয়ার কথাও না। কারন প্রাইভেট স্কুলগুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন সরকারী স্কুলের ২৫%।  সে স্কুলের নাম যাইহোক না কেন। ভারতের বাকী শহরগুলিতেও এক অবস্থা। সমস্ত সরকারি স্কুলগুলিকে ধ্বংশ করা হচ্ছে। ব্যাঙের ছাতার মতন গজাচ্ছে বেসরকারী স্কুল।

  প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবস্থা আরো বাজে। সেখানেও শুনেছি ইউ জি সি স্কেলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধ্যাপকদের  হাতে অনেক কমটাকা ধরানো হয় অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই।  ল্যাব নেই অধিকাংশ কলেজে। ফল এই যে সব পঙ্গু ইঞ্জিনিয়ার বেড়োচ্ছে, তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞান শুন্যের কোঠায়।  এগুলো অনুমান না। আমি আমাদের কোলকাতা অফিসের জন্যে এই সব প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলি থেকেই ছেলে নিতে বাধ্য হই। কারন সরকারি কলেজের ভাল ছাত্ররা আমাদের মতন অনামী কোম্পানীতে আসবে না। ফলে এদের নিয়েই কাজ চালাতে হয়। কাজ চলে না।  এদের দিয়ে আদৌ কি কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করানো সম্ভব? সেটা আমার মনে হচ্ছে না। চার বছর ধরে কোন পড়াশোনা এই সব কলেজগুলোতে হয় বলে মনে হয় না। এগুলো শুধু ডিগ্রি দেওয়ার আখড়া।  এমন বাজে অবস্থা যে ইলেক্ট্রনিক্সে বিটেক করা ছেলে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বা পি সিবির নাম শোনে নি।  এদের ডিগ্রী থাকা না থাকা সমান।

বেসরকারি শিক্ষা পৃথিবীর কোথাও সফল হয় নি। আমেরিকাতেও না। এখানেও ভাল স্কুলিং সম্পূর্ন ভাবেই সরকারি। চীনেও সরকারি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই শক্তিশালী মানব সম্পদ তৈরী করেছে। ব্যবসার জন্যে আমাকে চীনাদের সাথে কাজ ও করতে হয়, প্রতিদ্বন্দিতাও করতে হয়। নতুন প্রজন্মের চীনা ছেলে মেয়েরা আমাদের ছেলে মেয়েদের থেকে অনেক বেশী শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর মূল কারন ওদের শক্তশালী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা।  ইনফোসিস, টিসিএস করে খাচ্ছে শ্রেফ এই জন্যে যে চীনারা এখনো ইংরেজি রপ্ত করতে পারে নি। যেদিন ওরা সেটাও পারবে, ভারতে এই যে অর্ধশিক্ষিতের দল টিসিএস আর ইনফোসিসের গোয়াল ভর্তি করছে-সেসব মায়া হয়ে যাবে।  
ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারীকরনের রমরমায় আমি আতঙ্কিত। এদেরকে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে চিনের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে খেতে হবে। না পারলে, হারিয়ে যাবে।  শিক্ষায় বেসরকারি করন এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় টিউশনির রমরমা, ভারতীয় ছাত্রদের মেরুদন্দ ভেঙে দিচ্ছে।  ভারতের যেসব ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদয়ের আমি প্রতিদিন দেখছি, তাদের অঙ্ক, ভাষা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানে আমি রীতিমত আতঙ্কিত যে এখনি কিছু না করলে, দেশ হিসবে ভারত অনেক পিছিয়ে যাবে।
বেসরকারি শিক্ষা-বিশেষত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে পৃথিবীতে কোথাও সফল হয় নি। এগুলো জ্ঞাত তথ্য।  সুতরাং চোখ কান বন্ধ করে শিক্ষা বাজেট আরো বাড়ানো হোক। বন্ধ হোক ডিফেন্সের পেছনে ফালতু খরচ। চীনারা যদি শিক্ষার বাজিমাত করে বিশ্বের বাজার দখল করে, কি হবে নিধিরাম সর্দার সেজে কুড়ি বছরের পুরানো প্রযুক্তির কামান নিয়ে অরুনাচলে বসে থেকে?  স্কুল লেভেলে এবং আন্ডারগ্রাজুয়েশনে সম্পূর্ন বন্ধ হোক বেসরকারি স্কুল কলেজ গুলি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষাতে যেখানে মার্কেটের সাথে যোগ আছে সেখানে বেসরকারিকরন চলতে পারে-কারন এসব ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি নিজের প্রয়োজন মেটাতে নিজেরাই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে।  সরকারি কলেজগুলিকে যেভাবে টাকার অভাব দেখিয়ে পঙ্গু করা হচ্ছে, তাও বন্ধ করা দরকার। এগুলো জাতির লাইফ লাইন।  এইভাবে ব্যবসায়ীদের হাতে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংশ হতে দেওয়া যায় না।


শিক্ষার বেসরকারীকরনের মূল কারন সব দেশেই, সব রাজ্যেই এক। রাজস্ব ঘাটতি।  দেখা যাচ্ছে সব দেশে একই ট্রেন্ড। ডিফেন্সের ফালতু খরচে হাত দেওয়া যাবে না-তাই শিক্ষক ছাঁটাই কর। স্কুল তৈরী করা বন্ধ কর। এই ব্যাপারে আমেরিকা-ভারত-বাংলাদেশ সব সমান। ঘাটতি বাজেট থাকলে লোক্যাল ট্যাক্স বসিয়ে স্কুল চালানোর পয়সা জোটানো হোক। যেটা আমেরিকাতে অনেক কাউন্টি করে।  ২-৩% অতিরিক্ত লোকাল শিক্ষা ট্যাক্স বসালে, তাতে সবার লাভ। কারন ভাল স্কুলের জন্যে বাড়ির দাম ও বাড়ে।  এর জন্যে শিক্ষার মধ্যে বাণিজ্য আনা অনুচিত।  শিক্ষায় বেসরকারীকরন কোন বিকল্প হতে পারে না।   
     

1 comment:

Bidyut Malakar said...

Had your logic been correct, then MIT and Standford University, both of which are private institutions would not have been the epitiome of excellence.