আপনাকে লেখা এই চিঠি-কেও কোন দিন আপনার হাতে পৌঁছে দেবে -সেই আশাটুকু রেখেই দুই কলম লিখছি। আমি পেশাদার কলমচী নই-লেখা আমার নেশা। নিজগুণে ত্রুটি মাফ করবেন।
আমি আজই আনন্দবাজারে দেখলাম, আপনার জন্যে সুমন পদত্যাগ করছেন না। তার জন্যে এই চিঠি না। এই চিঠি লিখছি আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে যেখানে আপনি সুমনকে লিখেছেন বা বলেছেন ২০১১ সালে সিপিএমকে তাড়ানো খুব জরুরী-এবং সেই জন্যে তৃণমূলের বাস্তবতাকে স্বীকার করে "এমন কিছু না করতে যাতে সিপিএমের সুবিধা হয়"।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, আমি নিজেও পরিবর্তনের পক্ষে। তাই আমাকে শত্রুপক্ষের লোক বা হার্মাদদের দোশর ভাবলে ভুল করবেন।
কিন্ত আপনি যে যুক্তিতে সুমনের পদত্যাগ আটকাচ্ছেন-সেটা নিয়ে কি গভীরে ভেবেছেন?
২০১১ সালে সিপিএমের অপসরন জরুরী বলে আপনি মানেন। আমিও মানি। কিন্ত তার মানে কি এই-সুমন বা তৃণমূলের একজন কর্মী তৃণমূলের সমালোচনা করতে পারবে না? তাতে সিপিএমের সুবিধা হবে?
আচ্ছা সিপিএমটা কি বলুন ত মহেশ্বতা দেবী? একটা পার্টি না পার্টি কেন্দ্রীকতার রোগ ?
আপনি একবার ও কি ভেবেছেন, সিপিএম বা তৃণমূল বাঙালীরাই করে-যারা একই পরিবেশে -একই স্কুলে বড় হয়েছে। আজ সিপিএম সিঙ্গুরে নন্দীগ্রামে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে নি বলে আপনি মাঠে নেমেছিলেন। কিন্ত এ কথা আপনি নিজেও জানেন তৃণমূলেও জমির দালাল কিছু কম নেই-বৈদিক কান্ডেই তা প্রমাণিত।
তাহলে রোগ না রুগী-কোনটা সারানো উচিত বলে আপনার মনে হয়? আজকে যে কারনে সিপিএমের নেতা এবং সমর্থকগুলো বিবেকরহিত নামানুষে পরিণত হয়েছে-সেটার কারন ও কিন্ত পার্টিকে সমালোচনা করার জন্যে যে প্রকাশ্য গণতন্ত্রের দরকার ছিল তার অভাব। সবার ওপর পার্টি সত্য-তাই পার্টির সমালোচনা জনসাধারনের কাছে করা চলবে না-দরজায় খিল দিয়ে করতে হবে-এই ধরনের ভুঁয়ো আদর্শবাদই আজ সিপিএমকে পথে বসিয়েছে। রোগের আসল উৎপত্তি গণতান্ত্রিক সমালোচনার পরিবেশ না তৈরী করা। আজ সিপিএমের মধ্যে এই জনগণতান্ত্রিক ব্যাপারটা থাকলে, তাদের পার্টির লোকদের অনেকেই পার্টিকে সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের ভুল থেকে বাঁচাতে পারত। কিন্ত গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার ঢপবাজি যেমন স্টালিনের জন্ম দিয়েছিল-ঠিক তেমনি আমাদের রাজ্যে তা দু এক পিস লক্ষন শেঠ বা তরিৎ তরফদারের মতন মাফিয়ার জন্ম দিয়েছে।
সেই রোগের একটাই উপশম আছে। সেটা হচ্ছে গণতন্ত্রকে, প্রতিটা পার্টির গণতন্ত্রকে আরো বেশী মজবুত করা। আপনি মমতার ভক্ত-কিন্ত আপনি একবার ও কি সমালোচনা করেছেন কেন তৃণমূলে গঠনতান্ত্রিক নির্বাচন হয় না? -ওপর থেকে নেতা চাপানো হয়? তাপস পাল, শতাব্দী রায়কে স্থানীয় তৃনমূল কর্মীদের মাথার ওপর চাপানো হয়? তাপস পাল যেখানের এম পি, সেটাত আমার চেনা জায়গা-যেখানে লোকেদের প্রথম দাবী ছিল, রেল লাইনের জন্যে। সেটাত অনেক দূর অস্ত- উনাকে ভোটের পর সেখানে আর কেও কোনদিন দেখেছে বলে জানি না। তিনি নিশ্চিন্তে শীতের যাত্রাপালাতে ব্যাস্ত ছিলেন বলেই জানি। এসব নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যেই স্থানীয় স্তরে অনেক ক্ষোভ। কিন্ত সিপিএমের যেমন সবার ওপর পার্টি সত্য রোগ ছিল-তৃণমূলের সবার ওপর দিদি সত্য রোগ। কারন তৃণমূলের ত কোন পার্টি সংবিধান নেই। দিদির কথাই হচ্ছে সংবিধান।
আর আপনাদের মতন সুশীলরা সেই "সবার ওপর দিদি সত্য" কেই পার্টি এবং কর্মীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। সিপিএমের কর্মীরা যেমন পার্টির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ বা পার্টির জন্যে তাদের গঠনমূলক সমালোচনাগুলোকে প্রকাশ্যে আনার সুযোগ পায় নি-ঠিক তেমনি তৃনমূলের কর্মীরাও তাদের হতাশা বা গঠনমূলক সমালোচনা করার জায়গাটা হারাচ্ছেন-কারন আপনাদের মতন সবাই তাদেরকে ২০১১ সালের সিপিএম জুজু দেখাচ্ছে। ঠিক যে ভাবে সিপিএম শ্রেনী শত্রু মজুতদার কংগ্রেসী ইত্যাদির জুজু দেখিয়ে, পার্টিকর্মীদের প্রকাশ্যে সমালোচনা থেকে আটকে রেখেছে।
তা আপনার কি মনে হয় গণতন্ত্রটা জুজুবুড়ির ভয় দেখিয়ে লোকেদের ব্রেইন ওয়াশ করার যাত্রাপালা? এই জুজুবুড়ির যাত্রাপালাতেই কিন্ত হার্মাদদের জন্ম হয়েছে-যারা পার্টির প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য দেখাতে গিয়ে নিজেদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে নামানুষে পরিণত। আপনার আন্দোলন কিন্তু সেই সব নামানুষদের বিরুদ্ধেই। কিন্ত দেখা যাচ্ছে আপনি নিজেও তৃণমূলে সবার ওপর দিদি সত্য নামানুষ ভাই তৈরী করার কাজেই মাঠে নেমেছেন।
প্রকাশ্যে সমালোচনাকে ভয় পাওয়াটা আমাদের গণতন্ত্রের সব থেকে বড় রোগ। কিন্ত সমালোচনা, বিবেকের তাড়নায় মানুষের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই গণতন্ত্রের চালিকা শক্তি। সেই শক্তিটাকে সিপিএমের লাল ফ্যাসিবাদ নষ্ট করে দিয়েছিল-আর পরিবর্তনের নামে আপনাদের মতন সুশীলরা তার থেকে ভাল কিছু করছে না।
আমার কথাগুলো ভেবে দেখলেও দেখতে পারেন। এই ধরনের মমতাময়ী সাইকোফ্যান্সি সৃষ্টি করে রাজ্য, দেশ, জনগণ বা মমতাদেবীর ও কি উপকার হবে?
No comments:
Post a Comment