Saturday, February 26, 2022

একি সত্য না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রিপ্লে?

 মনে হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রিপ্লে দেখছি টিভিতে!

১৫ই মার্চ, ১৯৩৯। জার্মান ভেহেরমার্ক চেকোস্লোভাকিয়া দখল করতে ঢুকে গেল। তার এক বছর আগে চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতানল্যান্ডে জার্মানরা বসবাস করে বলে, আগেই সেখানকার জার্মান সেপারিটিস্ট পার্টিকে দিয়ে, চেকোস্লোভাকিয়ার পশ্চিমদিকটা জার্মান প্রভাবিত অঞ্চল করে রেখেছিলেন হিটলার। ঠিক যেমন ইউক্রেনের পূর্বে রাশিয়ান সেপারিস্টদের দিয়ে ডনবাস্ক এবং লুহ্যান্সকে নিজের কব্জায় আগেই এনে ফেলেছেন পুতিন। এরপর যখন চেকোস্লোভেকিয়ায় জার্মান সৈন্য মিউনিক চুক্তি অগ্রাহ্য করে ঢুকে গেল - ফ্রান্স, বৃটেন লিপ সার্ভিস দিচ্ছিল। ঠিক এখন যেমন আমেরিকা, বৃটেন, জার্মানরা ইউক্রেনকে "মরাল" সাপোর্ট দিচ্ছেন- অথচ বুদাপেস্ট চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করতে পারে না! ইউক্রেন আক্রান্ত হলে আমেরিকা এবং বৃটেনের ইউক্রেনকে সাহায্য করার কথ! কিন্ত কিয়েভ আস্তে আস্তে রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে চলে যাচ্ছে! ঠিক যেভাবে চেকোস্লোভাকিয়া হিটলারের তলপেটে চলে গেছিল---

একদম ওয়ান টু ওয়ান রিপ্লে!

মনে রাখতে হবে ১৯৯১ সালে যখন ইউক্রেন তার নিউক্লিয়ার সম্ভার রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়-তখন চুক্তি ছিল (বুদাপেস্ট মেমোরান্ডাম) , রাশিয়া কোনদিন ইউক্রেন আক্রমন করবে না। আর যদি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করে আমেরিকা, বৃটেন ইউক্রেনকে সাহায্য করবে। ইউক্রেনে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ৩০০০ নিউক্লিয়ার মিশাইল ছিল, যা ইউক্রেন আমেরিকা এবং রাশিয়ার গ্যারান্টি পেয়ে, রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছিল!

"আগে একসাথে ছিলাম তাই অন্যকোন শক্তির সাথে মিত্রতা চলবে না- এই যুক্তিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমন বৈধতা পেলে----

চীনের তাইওয়ান দখল ও বৈধতা পাবে--

ভারত স্বাচ্ছন্দ্যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দখল করতে পারে---

মোদ্দা কথা এর শেষ কোথায়? সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও নেটোতে যোগ দিতে চাইবে এবার-এরাও রাশিয়ার বর্ডারে। পুতিন কিভাবে তার বর্ডারে নেটোকে আটকাবেন? সুতরাং বর্ডারে নেটো-একটা ছেঁদো যুক্তি! ১৯৯৫ সালে রাশিয়া নিজেই নেটোতে যোগ দিতে চেয়েছিল!

  পুতিনের ভরসা আগ্রাসী চীন। আগে যেমন হিটলার জার্মান সহদর হিসাবে আগ্রাসী জাপানকে পেয়েছিল, এখন পুতিন চীনকে পাশে পাচ্ছেন। সাথে, ইরান, কিউবা, ভেনেজুয়েলার মতন কিছু স্বৈরতৈন্ত্রী রাষ্ট্র। মুশকিল হচ্ছে বর্তমানের চীন , চল্লিশের জাপান না! তাদের বেস সেই জাপানের থেকে অনেক বেশী-লোকবল, সৈন্যবল, শিল্পবল সব কিছুই অনেক অনেক বেশী--

বেসিক্যালি, পুতিন সফল হলে সব থেকে বড় ব্যথা তাইওয়ানের। চীন যেকোন দিন তাইওয়ান দখল করে নিতে পারে। চীন অরুনাচল প্রদেশ, লাদাখ দখল করতে পারে। কাশ্মীর দখল করে পাকিস্তানকে দিয়ে দিতে পারে। এসব কিছুই বৈধতা পেয়ে যাবে!

আর এসবের মানেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

ইউক্রেনে পুতিনের সৈন্যদের সম্পূর্ন পরাজয় না হলে, গোটা বিশ্বজুরে যুদ্ধ লাগবে। গায়ের জোর যদি আন্তর্জাতিক লজিক হয়, বিশ্বযুদ্ধ কেই আটকাতে পারবে না।





Thursday, February 24, 2022

ইউক্রেন এবং বঙ্গদেশ ঃ আপনা মাংসে হরিণা বৈরী

ইউক্রেনের ইতিহাসের সাথে আমাদের বঙ্গদেশের ইতিহাসের অনেক মিল। ঐতিহাসিক ভাবে আমরা যেমন ভারত ভূখন্ডের অংশ, ইউক্রেন ও সেই ভাবে রাশিয়া ভূখন্ডের অংশ।  ঐতিহাসিক ভাবে যেমন বাংলা দিল্লী থেকে শাসিত হয়েছে ১৬-শ শতক থেকে- ইউক্রেন ও রাশিয়ার জার শাসিত প্রায় সম সাময়িক ভাবে। ইউক্রেন এবং বঙ্গদেশ উভয়ই কৃষি, শিল্প এবং প্রযুক্তিতে প্রভূত উন্নত ছিল। ফলে পাশাপাশি উঠতি সাম্রাজ্যগুলি সব সময় ইউক্রেন দখল  করেছে। প্রথমে মঙ্গোল, তারপর লুথেনিয়া, অস্ট্রোহাংগেরিয়ান , অটোমান- শেষে রাশিয়ান জার। ইউক্রেন সব সময় হাত বদল হয়েছে বৃহত্তর শক্তির ভলিবল হিসাবে।  বলশেভিক বিপ্লবের সময়ে জারের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথম স্বাধীন ইউক্রেন তৈরী হয় ১৯১৭ সালেই। সেই ইউক্রেন ছিল গণতান্ত্রিক। কিন্ত কমিউনিস্ট রেড আর্মি সেনা পাঠিয়ে সেই গণতান্ত্রিক সরকারকে ধ্বংস করে, ইউক্রেনকে সোভিয়েতে ঢোকায় ১৯১৮ সালে। 

 সোভিয়েত ইউনিয়ানের কমিনিউস্টদের  হাতে ইউক্রেনিয়ানরা সব থেকে বেশী ভুগেছে। পৃথিবীর বৃহত্তম মানব হত্যা ইক্রেনেই হয়েছে। প্রায় ২ কোটি লোক ১৯৩১-৩৪ সালের মধ্যে ইউক্রেনে না খেয়ে মারা গেছে!  সেই ইউক্রেন যা কিনা ইউরোপের রুটির ঝুড়ি! কেন না মহামতি স্টালিন তখন জোর করে ইউক্রেনের কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্য কেড়ে নিয়ে, এক্সপোর্ট করছিলেন- জোর কদমে রাশিয়ার ভারী শিল্প তৈরী হচ্ছিল।   তারজন্য প্রচুর ইম্পোর্টের দরকার ছিল-যা সম্ভব ছিল ইউক্রেনে খাদ্য বেচে।  স্টালিন ২ কোটি ইউক্রেনিয়ান মেরে রাশিয়ার শিল্পায়ন ঘটিয়েছিলেন! এই কুখ্যাত ঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাস জানে হলডোমার নামে।  এর পরে যখন চেরোনোবিল বিষ্ফোরন হয়, তার রেডিয়েশনে মরার জন্য ইউক্রেনবাসীকে ছেড়ে দিয়েছিল রাশিয়া। ফলে ইউক্রেনের সংখ্যাধিক্য লোক রাশিয়া বিরোধি।   জার্মান আক্রমনের সময় প্রচুর ইউক্রেনিয়ান নাৎসিদের সাথে যোগ দেয়। কিন্ত নাৎসিরাও সেই একই অত্যাচার শুরু করলে, তারা আবার রাশিয়ার কোলেই ফিরে যায়! দীর্ঘদিন রাশিয়ান ফেডারেশনে থাকায়, ইউক্রেনে প্রচুর রাশিয়ান আছে। যেমন ভারত ভূখন্ডের অংশরাজ্য হওয়ার জন্য, পশ্চিম বাংলাতে প্রচুর অবাঙালীও আছে। ফলে ইউক্রেনের একটা অংশ আবার রাশিয়ার পক্ষেও। এরা ইউক্রেনের পূর্ব প্রদেশগুলিতে থাকে। 

 বাংলার সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেন রাজাদের আমল থেকে ভূমিপূত্রদের হাতে নেই! তবুও সেনেরা, বাংলার সুলতানেরা বাংলা থেকেই বাংলা চালাতেন-সুতরাং সেটাকে  আর যা হোক কলোনিয়াল শাসন বলা যাবে না। বাংলা দিল্লীর হাতে পদানত হয় আকবরের আমলে। বাংলার বৌদ্ধিক এবং অর্থনৈতিক পতনের শুরু সেখান থেকেই। বেসিক্যালি বাংলার লোকেদের থেকে শোষিত অর্থেই মুঘল এবং বৃটিশদের মিলিটারি চলত। এদিকে বাংলার লোকেরা না খেয়ে থাকত। এই কারনে, বাংলা কৃষিতে ভারতের সব থেকে এগিয়ে থাকা অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মুঘল আমলে প্রায় ৩ টি দুর্ভিক্ষ হয়েছে- আর বৃটিশ শোষনে  ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং বিয়াল্লিশের দুর্ভিক্ষ -দুটোই প্রায় ইউক্রেনের হলডোমারের প্রতিচ্ছবি।  একটা সমৃদ্ধ অঞ্চলের লোকেদের খাবার খেড়ে নিয়ে, সেই এলাকার লোকেদের মেরে ফেলা হয়েছিল-কারন তারা ছিল সামরিক ভাবে পদানত।  এই জন্য ইউক্রেনের ইতিহাস যত পড়ি, বাংলার ইতিহাস সবার থেকে আগে মাথায় আসে। 

পুতিন আজ ইউক্রেন আক্রমন করে যা করলেন তা ১৯১৮ সালের পুনরাবৃত্তি। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তৃতীয় ইউনিভার্সালে ইউক্রেনের জনগন নিজেদের রাশিয়া থেকে সম্পূর্ন স্বাধীন বলে ঘোষনা করে এবং ২৬ শে জানুয়ারী, ১৯১৮ সালে চতুর্থ উইনিভার্সালে ইউক্রেন নিজেদের বলশেভিক বিপ্লব থেকে সম্পূর্ন আলাদা করে। কিন্ত এতটা লেনিনের পেটে সহ্য হয় নি।  ৯ই ফেব্রুয়ারী রেড আর্মি সেই স্বাধীন ইউক্রেন সরকারকে হঠাতে রেড আর্মি পাঠায় এবং ইউক্রেন আবার  রাশিয়ার হাতে আসে। যদিও ইউক্রেন বাসী রেড আর্মি এবং কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে আরো তিন বছর যুদ্ধ চালু রেখেছিল! 

 ইউক্রেনবাসী নতুন রাশিয়ান জার পুতিনের বিরুদ্ধে কদিন যুদ্ধ চালাতে সক্ষম দেখা যাক। তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় তিন বছর রেড আর্মিকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন (১৯১৮-২১)।   এবার কিন্ত ইউক্রেনের সরকার তার জনগনকে আগে থেকেই অস্ত্র দিয়ে রেখেছে।  কারন রাশিয়ান প্লেন বা ট্যাঙ্ক থামানোর ক্ষমতা তাদের মিলিটারির নেই! জনগণের আর্মিই ইউক্রেনের ভরসা।