(১)
যদিও কোলকাতায় আসি বছরে বেশ কয়েকবার, কাজের চাপে, গ্রাম বাংলা বা কোলকাতা কোনটাই ঘোরা হয়ে ওঠে না। বহুবছর বাদে, এবার বেশ প্ল্যান করেই এসেছিলাম-ক্রিসমাসের সময়টা গ্রাম মফঃশহরে ঘুরবো। তৃনমূল জমানায়, বাংলার লোকজন কেমন আছে, জানার চেষ্টা করব।
শীতের ওই দিনগুলো এমনিতেই উৎসবের পালা পর্বন। তারপরে দিদির নির্দেশে এই সময়টাতে ব্লকে ব্লকে উৎসব। পিঠেপুলি, ভ্রমন, চুনোমাছ। দিদি আক্ষরিক অর্থেই বাংলাকে উৎসবমুখর করেছেন। রাস্তায় যেতে যেতে কতশত উৎসবের পোষ্টার, ফেস্টুন। এর মধ্যে কালনার পর্যটন উৎসবে নিজে গেলাম একরাত। রাত বারোটার সময়ও দশহাজার ছেলেমেয়েরা নিরাপদে উৎসবের ইমেজে গানবাজনা উপভোগ করছে। মোদ্দা কথা দিদির বাংলায় ছেলেপুলেরাযে উৎসবের আমেজে আছে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্ত শব্দদূষনের সমস্যা আছে। যত্রতত্র যখনখুশি পিকনিক হচ্ছে। সেটা আনন্দের কথা। কিন্ত ইদানিং পিকনিকের সাথে জেনারেটর চালিয়ে হাজার ওয়াটের স্পিকার বসিয়ে নাচাগানা হয় সর্বত্র। এই একটা দৃশ্য কালনা, করিমপুর, ফলতা সর্বত্র চোখে এল। লোকজন বিরক্ত । রাতে শোয়া দায়। কিন্ত কারুর সাহস নেই এদের বিরুদ্ধে বলার। তৃনমূলের নেতা বিধায়কদেরএই দ্বায়িত্বটাও নিতে হবে। উৎসব অবশ্যই ভাল-কিন্ত তার জন্য হাজার ওয়াটের স্পিকার বসিয়ে লোকজনকে উত্তক্ত করার মানে হয় কি?
পাশাপাশি সব শহরেই দেখলাম নাট্যউৎসব চলছে। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এখন অনেক মুক্ত। সেইসব উৎসবে লোকও হচ্ছে অনেক।
(২)
রাস্তাঘাটের অবস্থা গ্রামের দিকে বেশ ভাল। রাজ্য সরকগুলির এখন তখন ( সিপিএম জমানা) মনে করলে, স্বর্গ নরকের তুলনা হয়। করিমপুর কৃষ্ণনগর, কৃষ্ণনগর কালনার রাস্তাগুলোতে অনায়াসে এখন একশো কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চালানো যায়। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা এবং ট্রাকের সংখ্যা এখন অনেক অনেক বেশী। ফলে রাস্তা ভাল থাকা স্বত্বেও রাত ছাড়া স্পীডে চালানো যায় না। এবং ছোট ছোট শহরগুলোতে টোটোর এত দৌড়াত্ব, এই শহরগুলোতে বাইপাস না থাকলে, একটা ছোট শহর ক্রস করতেও গাড়ীগুলো আধঘন্টা টোটো ট্রাফিকে আটকাচ্ছে। এই সরকারের নেক্সট স্টেপ হওয়া উচিত, বড় বড় শহরগুলোতে বাইপাস বা ওভারব্রিজের ব্যবস্থা করা-যাতে এক্সপ্রেস ট্রাফিক শহরের বাইরে দিয়ে চলে যেতে পারে। আমেরিকাতে এটা বহুদিন ধরে আছে। এক্সপ্রেস ট্রাফিক শহরের বাইরে দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে বার করে দেওয়া হয়। আশা করব, দিদি যখন এতটাই করেছেন, এই নেক্সট স্টেপটাও আগামী দশ বছরে আসতে চলছে।
এবার আসি টোটোর কথায়। গ্রাম এবং জেলাশহরগুলিতে এখন টোটো হচ্ছে ডিফল্ট ট্রান্সপোর্টেশন। ব্যাটারি চালিত রিক্সা। ফলে শব্দ দূষন, বায়ুদূষন নেই। অনেক বেকাররা করে খাচ্ছে। সিম্পল টারিফ সিস্টেম-চড়লেই দশটাকা-যেকোন দুটো পয়েন্টের মধ্যে। টোটোগুলো সারাদিনে ৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করছে। ব্যাটারি মেইন্টেনেন্সের দরকার ছমাসে একবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকই মালিক। মাসে দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা রোজগার।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে টোটোর সংখ্যা বেড়েছে অসম্ভব। রাস্তায় হাঁটা দায়। কোন রেগুলেটরি অথোরিটি নেই। তবে দূষনমুক্ত এই নিঃশব্দ বিপ্লবকে স্বাগত। আমি মনে করি প্রযুক্তিই মুক্তির আসল উপায়। কিন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা দরকার।
(৩)
সিপিমের ভবিষ্যত পশ্চিম বঙ্গে শুন্য। অধিকাংশ পার্টি অফিস খুলছেই না। তালাবন্ধ। শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ, কঅর্ডিনেশন কমিটি সব মৃত। নেতার মুখ বন্ধ করে বসে আছেন-কারন মুখ খুললেই ট্রান্সফার হবে আরামের শহর থেকে অনেক দূরে। জনগণ এদের বহুদিন আগেই রিজেক্ট করেছিল-শুধু হার্মাদদের দিয়ে ভোট করিয়ে ভাবত জনগন এদের সাথে। এখন পরিস্কার জনগন খুব পরিস্কার ভাবেই বুঝেছে, সিপিএম আদতে কর্মনন্য নেতাদের আখরা। সিপিএমের নেতারা তুলনামূলক ভাবে সৎ হতে পারে কিন্ত সিপিএমের আমলে আডমিনিস্ট্রেশনকে যেভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছিল, তার ফল দেখেছে রাজ্যবাসী।
প্রথমে স্কুলের কথা আসি। আমি দুজনের সাথে কথা বল্লাম। একজন হাইস্কুলের হেডমাস্টার, অন্যজন প্রাইমারী স্কুলের। জন্ম ইস্তক এদের দেখে আসছি। সিপিএম ফ্যামিলি। ডিএ নিয়ে খুশী না হলেও শিক্ষার জন্য, তৃনমূল যা করছে, তার জন্য তারা খুশী।
প্রথমে প্রাইমারী স্কুলের কথায় আসি। আগে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা বারোভূতে খেত। এখন ঠিক ঠাক খরচ হচ্ছে। আমি যে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম, সেখানে ছিল তিনটে ঘর, বাকি গাছের তলায় আমাদের পড়াশোনা হত। সিপিএম আমলে শিক্ষকদের বেতন বাড়ছিল, কিন্ত স্কুলের কোন উন্নতি হয় নি। ফলে গ্রামের দিকেও প্রাইমারী স্কুলে ছেলে মেয়েদের না পাঠিয়ে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা শুরু হয় সিপিএম জমানাতে। এখন আস্তে আস্তে সেটা বদলাচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকাতে টাইলস বসানো বাথরুম। পানীয় জলের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ঘর, চেয়ার টেবল সব কিছুই হয়েছে। এগুলো নিজের চোখেই দেখলাম। সরকার পাঠ্যপুস্তকগুলোও অনেক ভাল করেছে। রিপোর্টিং কম্পুটারাইজড । ফলে আস্তে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে আবার সরকারি প্রাইমারী স্কুলের ওপরে ভরসা বাড়ছে। সিপিএম সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ন ধ্বংস করে দিয়েছিল। শুধু শিক্ষকদের মাইনে বাড়িয়ে স্কুলগুলো বাঁচানো যেত না। দরকার ছিল পরিকাঠামো। সেই খাতে সিপিএম একদম খরচ করে নি। মমতা ব্যার্নার্জি আস্তে আস্তে সরকারি স্কুলগুলোকে পথে আনছেন।
হাইস্কুলের অবস্থা এখন অনেক ভাল। সিপিএমের আমলে গ্রামের স্কুলের শহরের শিক্ষকরা সপ্তাহে দুদিনের বেশী স্কুলে যেতেন না। শিক্ষিকারা আবার আসতেনই না প্রায়! এবিটিএর কাছে নাকখঁত করা হেডমাস্টারমশাইরা কিছু বলার সাহসই পেতেন না। এখন স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সপ্তাহে ছদিনই দেখা যাচ্ছে। কারন স্কুল কমিটিগুলোই এখন স্কুল চালাচ্ছে-যেখানে অভিভাবকদের কথাই শেষ। হতে পারে তারা তৃনমূলের লোক। কিন্ত অভিভাবক ত বটে। সিপিএম আমলে পিটিএ বা স্কুল পরিচালন পর্ষদ ছিল ছুঁচোজগন্নাথ। শিক্ষকরা এবিটিএর শিল্ডিং পেত। এখন তা আর নেই। তৃনমূলের লোকজনের চাপেই এটা হয়েছে। অনেকেই বলছেন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। কিন্ত কি লাভ হত শিক্ষক নিয়ে যারা স্কুলেই আসতেন না? বা স্কুল বিল্ডিং এর এত দূরাবস্থা ছিল, সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠাত ছাত্রদের ? স্কুল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ না করে, শিক্ষক নিয়োগ করে কিই বা লাভ হয় জনগনের যেসব শিক্ষকরা স্কুলেই আসেন না? এছাড়া এখন সব বই সরকার দিচ্ছে। ফলে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সিপিএম আমলে যে বিশাল ব্যবসা হত, তা বন্ধ এখন।
স্কুল ছাত্রদের সাইকেল নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম ফেসবুকে। অনেক ছাত্র ছাত্রীদের সাথে দেখা হল। নাহ, সেসব সাইকেল চলে এবং ছেলেমেয়েরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে না মোটেও । স্কুল ছাত্রছাত্রীদের সাইকেলটা একটা নিঃশব্দ বিপ্লব।
বিডিও এবং ব্লক পরিচালন অফিসারদের ও এখন চেয়ারে পাওয়া যায় ঠিক সময়ে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটা নিয়মানুবর্তিতা এসেছে-যা আগে ছিল অনুপস্থিত। কলকাতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েও কাজ করানো কঠিন। পশ্চিম বঙ্গের ওয়ার্ক কালচার এতটাই খারাপ করে ছেড়েছিল সিপিএম। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা মমতা ব্যানার্জির সব থেকে বড় সাফল্য। কোলকাতায় লোকজনদের দিয়ে কাজ করানো কি কঠিন-সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি। সেখানে মমতা ব্যানার্জি সরকারি কর্মচারিদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন-সেটাযে কত কঠিন কাজ তা আন্দাজ করতে পারি।
মোদ্দা কথা যা দেখলাম, তাতে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আশা করা যায়। যা সিপিএম আমলে প্রায় সম্পূর্ন ধ্বংসের পথে ছিল।
(৩)
তবে বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। সেটা অবশ্য পরিকাঠামোর জন্য। বাচ্চদের খেলার গা ঘামানোর জায়গা নেই। খাচ্চে দাচ্ছে, মোটা হচ্ছে, পাঁচটা সাতটা করে প্রাইভেট টিঊটর। খেলাধূলা না করার জন্য সামান্য পড়াশোনার চাপও নিতে পারছে না। অনেকের সাথেই দেখা হল, মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই নার্ভাস ব্রেকডাউনে। আগামি দিনের নাগরিকরা শৈশবেই মানসিক বৈকল্যের কবলে পড়লে, আগামী প্রজন্মের কি হবে?
ছোটবেলায় যেখানে সেখানে একছটাক মাঠ ছিল-এখন সেখানে বহুতল। গোটা ভারত জুরেই প্রায় এক অবস্থা। একমাত্র যারা ধনী-ক্লাবের মেম্বার-তাদের জন্য টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট আছে। জায়গার অভাবে নিদেন পক্ষে যোগ ব্যায়াম অন্তত চলুক।
কোলকাতায় একমাত্র সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন এরিয়া প্ল্যান্ড সিটি। সেখানে মোটামুটি ভাল পার্ক, হাঁটার জায়গা আছে। সাউথ কোলকাতায় লেকের ধারে ছাড়া হাঁটার জায়গা কোথাও নেই।
এর সাথে জুড়ুন মাত্রারিক্ত শব্দ এবং বায়ুদূষন। উবের ওলার দৌলতে ইয়োলো টাক্সির সংখ্যা কিছু কমেছে। সেটা ভালর দিক। কোলকাতায় অটোবন্ধ করে ইলেক্টিক অটো বা টোটো চলুক। বাসগুলোও ইলেক্ট্রিকবাস হোক আস্তে আস্তে। জ্বালানী পোড়ানো বন্ধহৌক। সবার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে নিশ্চয় হবে।
কোলকাতা এখন রাতে অনেক সুন্দর। রাস্তার দুধারে মায়াবী নীল আলোতে সুন্দরী কলকাতা যেন সত্তরের দশকের বলিউডি হেলেন। এটলিস্ট একটা ভদ্র আধুনিক শহর বলে মনে হয়। সাথে সাথে যদি পরিবেশটাও পরিস্কার রাখা যায়, কোলকাতা এগোবে আরো বেশী।
(৪)
সাম্প্রদায়িকতা বিশাক্ত সাপের মতন ফনা তুলছে। প্রতিটা হিন্দু ফ্যামিলিতে ধূলাগড় নিয়ে আলোচনা। কতশত লাশ নাকি রাস্তায় পড়ে আছে। অবশ্য এক্সাক্টলি কি করে কেউ এসব জানল, সেটা নিতে প্রশ্ন করলে, উত্তর নেই। সাম্প্রদায়িক গুজবের ফানুস বাতাসে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র আবেগে তৃণমূল সিপিএম বিজেপি ভেদাভেদ নেই। মুসলমান বিরোধিতার ভোটটা শুধু বিজেপির বাক্সে পড়ছে না-কারন বিজেপির নেতা নেই। তাছাড়া ওটা এখনো উত্তরভারতীয় গোবলয়ের পার্টি বাঙালীদের কাছে। ফলে বিজেপি এখনো মমতার কাছে সেই অর্থে কোন থ্রেট না। কিন্ত বিজেপির উত্থানের সব মশালা প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু ভাল নেতার। "স" মার্কা দিলীপ ঘোষ মার্কা নেতা দিয়ে বঙ্গ বিজয় হবে না। অন্তত একজন ভাল বাঙালী নেতার দরকার বিজেপিতে-যা তাদের নেই এই মুহুর্তে।
মমতা ব্যানার্জির সব ভাল কাজ জলে যাবে যদি না তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে কড়া হাতে দমন করতে ব্যর্থ হন। অপারেশন বর্গার ফলে অনেক সম্পন্ন হিন্দু পরিবার মুসলমান ভাগচাষিদের কাছে জমি বেচতে বাধ্য হয়েছিল। সেই রাগটা ছিলই। এখন নানান গুজবে, প্রচারে সাম্প্রদায়িকতার বিশাক্ত সাপ ফোঁস ফোঁস করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার যা চিরকাল ধরেই হয়ে এসেছে-ফেসবুকের কল্যানে এখন তা ঘরে ঘরে। এর সাথে মুসলমা জঙ্গি, আইসিসিস ইত্যাদির হাত ধরে পোলারাইজেশন খুব বাজে জায়গায়। আগে হিন্দুদের একটা অংশ মুসলমানদের দেখতে পারত না। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধি প্রচুর হিন্দু ছিল। যাদের অধিকাংশই ছিল সিপিএম। এখন প্রায় পুরো অংশটাই মুসলমান বিরোধি। এদের অনেকেই আদি সিপিএম। বিজেপির খাতায় নাম লেখাতে বাকী আছে শুধু।
সিপিএমের ভাঙন অব্যহত থাকলে হিন্দু ভোট আস্তে আস্তে বিজেপিতে জড় হবে-যদিও সেটা কঠিন করে তুলেছে, বিজেপি নিজেই-যাদের ক্যাডাররা ভীষন ভাবেই অসন্তুষ্ট দিল্লীর ওপরে।
এই পোলারাইজেশনটা আজ না হলে কাল হতই। এখন বেশ দাঙ্গার আবহে বিরাট আকার নিয়েছে, যদিও এই ধরনের হিন্দুরা ভোট টা এখনো মমতা ব্যানার্জিকেই দিচ্ছেন। কারন আর যাইহোক দিদি কাজ করবেন এই আস্থাটা এখনো আছে। কিন্ত সিপিএম সম্পূর্ন ধ্বংশ হলে আখেরে লাভ বেশী বিজেপির, ক্ষতি তৃনমূলের।
সিপিএম যে সম্পূর্ন অপদার্থ ছিল, সেটা দিদি হাতে নাতে করে দেখিয়েছেন। কিন্তু সেটাই না আবার তৃণমূলের কাল হয়। কারন সিপিএম ধ্বংশ হলে, সেই ভোট টার অধিকাংশ যাবে বিজেপিতে। আমি শুনলাম সেটা নাকি তৃনমূল বুঝেছে। তাই তারাই তাগদা দিচ্ছে সিপিএমের লোকেদের পার্টি অফিস খুলতে। অহ, এই দিনটা আসতই।
যদিও কোলকাতায় আসি বছরে বেশ কয়েকবার, কাজের চাপে, গ্রাম বাংলা বা কোলকাতা কোনটাই ঘোরা হয়ে ওঠে না। বহুবছর বাদে, এবার বেশ প্ল্যান করেই এসেছিলাম-ক্রিসমাসের সময়টা গ্রাম মফঃশহরে ঘুরবো। তৃনমূল জমানায়, বাংলার লোকজন কেমন আছে, জানার চেষ্টা করব।
শীতের ওই দিনগুলো এমনিতেই উৎসবের পালা পর্বন। তারপরে দিদির নির্দেশে এই সময়টাতে ব্লকে ব্লকে উৎসব। পিঠেপুলি, ভ্রমন, চুনোমাছ। দিদি আক্ষরিক অর্থেই বাংলাকে উৎসবমুখর করেছেন। রাস্তায় যেতে যেতে কতশত উৎসবের পোষ্টার, ফেস্টুন। এর মধ্যে কালনার পর্যটন উৎসবে নিজে গেলাম একরাত। রাত বারোটার সময়ও দশহাজার ছেলেমেয়েরা নিরাপদে উৎসবের ইমেজে গানবাজনা উপভোগ করছে। মোদ্দা কথা দিদির বাংলায় ছেলেপুলেরাযে উৎসবের আমেজে আছে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্ত শব্দদূষনের সমস্যা আছে। যত্রতত্র যখনখুশি পিকনিক হচ্ছে। সেটা আনন্দের কথা। কিন্ত ইদানিং পিকনিকের সাথে জেনারেটর চালিয়ে হাজার ওয়াটের স্পিকার বসিয়ে নাচাগানা হয় সর্বত্র। এই একটা দৃশ্য কালনা, করিমপুর, ফলতা সর্বত্র চোখে এল। লোকজন বিরক্ত । রাতে শোয়া দায়। কিন্ত কারুর সাহস নেই এদের বিরুদ্ধে বলার। তৃনমূলের নেতা বিধায়কদেরএই দ্বায়িত্বটাও নিতে হবে। উৎসব অবশ্যই ভাল-কিন্ত তার জন্য হাজার ওয়াটের স্পিকার বসিয়ে লোকজনকে উত্তক্ত করার মানে হয় কি?
পাশাপাশি সব শহরেই দেখলাম নাট্যউৎসব চলছে। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল এখন অনেক মুক্ত। সেইসব উৎসবে লোকও হচ্ছে অনেক।
(২)
রাস্তাঘাটের অবস্থা গ্রামের দিকে বেশ ভাল। রাজ্য সরকগুলির এখন তখন ( সিপিএম জমানা) মনে করলে, স্বর্গ নরকের তুলনা হয়। করিমপুর কৃষ্ণনগর, কৃষ্ণনগর কালনার রাস্তাগুলোতে অনায়াসে এখন একশো কিলোমিটার স্পিডে গাড়ি চালানো যায়। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা এবং ট্রাকের সংখ্যা এখন অনেক অনেক বেশী। ফলে রাস্তা ভাল থাকা স্বত্বেও রাত ছাড়া স্পীডে চালানো যায় না। এবং ছোট ছোট শহরগুলোতে টোটোর এত দৌড়াত্ব, এই শহরগুলোতে বাইপাস না থাকলে, একটা ছোট শহর ক্রস করতেও গাড়ীগুলো আধঘন্টা টোটো ট্রাফিকে আটকাচ্ছে। এই সরকারের নেক্সট স্টেপ হওয়া উচিত, বড় বড় শহরগুলোতে বাইপাস বা ওভারব্রিজের ব্যবস্থা করা-যাতে এক্সপ্রেস ট্রাফিক শহরের বাইরে দিয়ে চলে যেতে পারে। আমেরিকাতে এটা বহুদিন ধরে আছে। এক্সপ্রেস ট্রাফিক শহরের বাইরে দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে বার করে দেওয়া হয়। আশা করব, দিদি যখন এতটাই করেছেন, এই নেক্সট স্টেপটাও আগামী দশ বছরে আসতে চলছে।
এবার আসি টোটোর কথায়। গ্রাম এবং জেলাশহরগুলিতে এখন টোটো হচ্ছে ডিফল্ট ট্রান্সপোর্টেশন। ব্যাটারি চালিত রিক্সা। ফলে শব্দ দূষন, বায়ুদূষন নেই। অনেক বেকাররা করে খাচ্ছে। সিম্পল টারিফ সিস্টেম-চড়লেই দশটাকা-যেকোন দুটো পয়েন্টের মধ্যে। টোটোগুলো সারাদিনে ৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করছে। ব্যাটারি মেইন্টেনেন্সের দরকার ছমাসে একবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকই মালিক। মাসে দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার টাকা রোজগার।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে টোটোর সংখ্যা বেড়েছে অসম্ভব। রাস্তায় হাঁটা দায়। কোন রেগুলেটরি অথোরিটি নেই। তবে দূষনমুক্ত এই নিঃশব্দ বিপ্লবকে স্বাগত। আমি মনে করি প্রযুক্তিই মুক্তির আসল উপায়। কিন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা দরকার।
(৩)
সিপিমের ভবিষ্যত পশ্চিম বঙ্গে শুন্য। অধিকাংশ পার্টি অফিস খুলছেই না। তালাবন্ধ। শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ, কঅর্ডিনেশন কমিটি সব মৃত। নেতার মুখ বন্ধ করে বসে আছেন-কারন মুখ খুললেই ট্রান্সফার হবে আরামের শহর থেকে অনেক দূরে। জনগণ এদের বহুদিন আগেই রিজেক্ট করেছিল-শুধু হার্মাদদের দিয়ে ভোট করিয়ে ভাবত জনগন এদের সাথে। এখন পরিস্কার জনগন খুব পরিস্কার ভাবেই বুঝেছে, সিপিএম আদতে কর্মনন্য নেতাদের আখরা। সিপিএমের নেতারা তুলনামূলক ভাবে সৎ হতে পারে কিন্ত সিপিএমের আমলে আডমিনিস্ট্রেশনকে যেভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছিল, তার ফল দেখেছে রাজ্যবাসী।
প্রথমে স্কুলের কথা আসি। আমি দুজনের সাথে কথা বল্লাম। একজন হাইস্কুলের হেডমাস্টার, অন্যজন প্রাইমারী স্কুলের। জন্ম ইস্তক এদের দেখে আসছি। সিপিএম ফ্যামিলি। ডিএ নিয়ে খুশী না হলেও শিক্ষার জন্য, তৃনমূল যা করছে, তার জন্য তারা খুশী।
প্রথমে প্রাইমারী স্কুলের কথায় আসি। আগে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা বারোভূতে খেত। এখন ঠিক ঠাক খরচ হচ্ছে। আমি যে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম, সেখানে ছিল তিনটে ঘর, বাকি গাছের তলায় আমাদের পড়াশোনা হত। সিপিএম আমলে শিক্ষকদের বেতন বাড়ছিল, কিন্ত স্কুলের কোন উন্নতি হয় নি। ফলে গ্রামের দিকেও প্রাইমারী স্কুলে ছেলে মেয়েদের না পাঠিয়ে প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা শুরু হয় সিপিএম জমানাতে। এখন আস্তে আস্তে সেটা বদলাচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকাতে টাইলস বসানো বাথরুম। পানীয় জলের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ঘর, চেয়ার টেবল সব কিছুই হয়েছে। এগুলো নিজের চোখেই দেখলাম। সরকার পাঠ্যপুস্তকগুলোও অনেক ভাল করেছে। রিপোর্টিং কম্পুটারাইজড । ফলে আস্তে ইংলিশ মিডিয়াম থেকে আবার সরকারি প্রাইমারী স্কুলের ওপরে ভরসা বাড়ছে। সিপিএম সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ন ধ্বংস করে দিয়েছিল। শুধু শিক্ষকদের মাইনে বাড়িয়ে স্কুলগুলো বাঁচানো যেত না। দরকার ছিল পরিকাঠামো। সেই খাতে সিপিএম একদম খরচ করে নি। মমতা ব্যার্নার্জি আস্তে আস্তে সরকারি স্কুলগুলোকে পথে আনছেন।
হাইস্কুলের অবস্থা এখন অনেক ভাল। সিপিএমের আমলে গ্রামের স্কুলের শহরের শিক্ষকরা সপ্তাহে দুদিনের বেশী স্কুলে যেতেন না। শিক্ষিকারা আবার আসতেনই না প্রায়! এবিটিএর কাছে নাকখঁত করা হেডমাস্টারমশাইরা কিছু বলার সাহসই পেতেন না। এখন স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সপ্তাহে ছদিনই দেখা যাচ্ছে। কারন স্কুল কমিটিগুলোই এখন স্কুল চালাচ্ছে-যেখানে অভিভাবকদের কথাই শেষ। হতে পারে তারা তৃনমূলের লোক। কিন্ত অভিভাবক ত বটে। সিপিএম আমলে পিটিএ বা স্কুল পরিচালন পর্ষদ ছিল ছুঁচোজগন্নাথ। শিক্ষকরা এবিটিএর শিল্ডিং পেত। এখন তা আর নেই। তৃনমূলের লোকজনের চাপেই এটা হয়েছে। অনেকেই বলছেন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। কিন্ত কি লাভ হত শিক্ষক নিয়ে যারা স্কুলেই আসতেন না? বা স্কুল বিল্ডিং এর এত দূরাবস্থা ছিল, সবাই ইংলিশ মিডিয়ামে পাঠাত ছাত্রদের ? স্কুল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ না করে, শিক্ষক নিয়োগ করে কিই বা লাভ হয় জনগনের যেসব শিক্ষকরা স্কুলেই আসেন না? এছাড়া এখন সব বই সরকার দিচ্ছে। ফলে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সিপিএম আমলে যে বিশাল ব্যবসা হত, তা বন্ধ এখন।
স্কুল ছাত্রদের সাইকেল নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম ফেসবুকে। অনেক ছাত্র ছাত্রীদের সাথে দেখা হল। নাহ, সেসব সাইকেল চলে এবং ছেলেমেয়েরা সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে না মোটেও । স্কুল ছাত্রছাত্রীদের সাইকেলটা একটা নিঃশব্দ বিপ্লব।
বিডিও এবং ব্লক পরিচালন অফিসারদের ও এখন চেয়ারে পাওয়া যায় ঠিক সময়ে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটা নিয়মানুবর্তিতা এসেছে-যা আগে ছিল অনুপস্থিত। কলকাতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েও কাজ করানো কঠিন। পশ্চিম বঙ্গের ওয়ার্ক কালচার এতটাই খারাপ করে ছেড়েছিল সিপিএম। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা মমতা ব্যানার্জির সব থেকে বড় সাফল্য। কোলকাতায় লোকজনদের দিয়ে কাজ করানো কি কঠিন-সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি। সেখানে মমতা ব্যানার্জি সরকারি কর্মচারিদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন-সেটাযে কত কঠিন কাজ তা আন্দাজ করতে পারি।
মোদ্দা কথা যা দেখলাম, তাতে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আশা করা যায়। যা সিপিএম আমলে প্রায় সম্পূর্ন ধ্বংসের পথে ছিল।
(৩)
তবে বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। সেটা অবশ্য পরিকাঠামোর জন্য। বাচ্চদের খেলার গা ঘামানোর জায়গা নেই। খাচ্চে দাচ্ছে, মোটা হচ্ছে, পাঁচটা সাতটা করে প্রাইভেট টিঊটর। খেলাধূলা না করার জন্য সামান্য পড়াশোনার চাপও নিতে পারছে না। অনেকের সাথেই দেখা হল, মাধ্যমিক দেওয়ার আগেই নার্ভাস ব্রেকডাউনে। আগামি দিনের নাগরিকরা শৈশবেই মানসিক বৈকল্যের কবলে পড়লে, আগামী প্রজন্মের কি হবে?
ছোটবেলায় যেখানে সেখানে একছটাক মাঠ ছিল-এখন সেখানে বহুতল। গোটা ভারত জুরেই প্রায় এক অবস্থা। একমাত্র যারা ধনী-ক্লাবের মেম্বার-তাদের জন্য টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট আছে। জায়গার অভাবে নিদেন পক্ষে যোগ ব্যায়াম অন্তত চলুক।
কোলকাতায় একমাত্র সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন এরিয়া প্ল্যান্ড সিটি। সেখানে মোটামুটি ভাল পার্ক, হাঁটার জায়গা আছে। সাউথ কোলকাতায় লেকের ধারে ছাড়া হাঁটার জায়গা কোথাও নেই।
এর সাথে জুড়ুন মাত্রারিক্ত শব্দ এবং বায়ুদূষন। উবের ওলার দৌলতে ইয়োলো টাক্সির সংখ্যা কিছু কমেছে। সেটা ভালর দিক। কোলকাতায় অটোবন্ধ করে ইলেক্টিক অটো বা টোটো চলুক। বাসগুলোও ইলেক্ট্রিকবাস হোক আস্তে আস্তে। জ্বালানী পোড়ানো বন্ধহৌক। সবার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে নিশ্চয় হবে।
কোলকাতা এখন রাতে অনেক সুন্দর। রাস্তার দুধারে মায়াবী নীল আলোতে সুন্দরী কলকাতা যেন সত্তরের দশকের বলিউডি হেলেন। এটলিস্ট একটা ভদ্র আধুনিক শহর বলে মনে হয়। সাথে সাথে যদি পরিবেশটাও পরিস্কার রাখা যায়, কোলকাতা এগোবে আরো বেশী।
(৪)
সাম্প্রদায়িকতা বিশাক্ত সাপের মতন ফনা তুলছে। প্রতিটা হিন্দু ফ্যামিলিতে ধূলাগড় নিয়ে আলোচনা। কতশত লাশ নাকি রাস্তায় পড়ে আছে। অবশ্য এক্সাক্টলি কি করে কেউ এসব জানল, সেটা নিতে প্রশ্ন করলে, উত্তর নেই। সাম্প্রদায়িক গুজবের ফানুস বাতাসে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র আবেগে তৃণমূল সিপিএম বিজেপি ভেদাভেদ নেই। মুসলমান বিরোধিতার ভোটটা শুধু বিজেপির বাক্সে পড়ছে না-কারন বিজেপির নেতা নেই। তাছাড়া ওটা এখনো উত্তরভারতীয় গোবলয়ের পার্টি বাঙালীদের কাছে। ফলে বিজেপি এখনো মমতার কাছে সেই অর্থে কোন থ্রেট না। কিন্ত বিজেপির উত্থানের সব মশালা প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু ভাল নেতার। "স" মার্কা দিলীপ ঘোষ মার্কা নেতা দিয়ে বঙ্গ বিজয় হবে না। অন্তত একজন ভাল বাঙালী নেতার দরকার বিজেপিতে-যা তাদের নেই এই মুহুর্তে।
মমতা ব্যানার্জির সব ভাল কাজ জলে যাবে যদি না তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে কড়া হাতে দমন করতে ব্যর্থ হন। অপারেশন বর্গার ফলে অনেক সম্পন্ন হিন্দু পরিবার মুসলমান ভাগচাষিদের কাছে জমি বেচতে বাধ্য হয়েছিল। সেই রাগটা ছিলই। এখন নানান গুজবে, প্রচারে সাম্প্রদায়িকতার বিশাক্ত সাপ ফোঁস ফোঁস করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার যা চিরকাল ধরেই হয়ে এসেছে-ফেসবুকের কল্যানে এখন তা ঘরে ঘরে। এর সাথে মুসলমা জঙ্গি, আইসিসিস ইত্যাদির হাত ধরে পোলারাইজেশন খুব বাজে জায়গায়। আগে হিন্দুদের একটা অংশ মুসলমানদের দেখতে পারত না। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধি প্রচুর হিন্দু ছিল। যাদের অধিকাংশই ছিল সিপিএম। এখন প্রায় পুরো অংশটাই মুসলমান বিরোধি। এদের অনেকেই আদি সিপিএম। বিজেপির খাতায় নাম লেখাতে বাকী আছে শুধু।
সিপিএমের ভাঙন অব্যহত থাকলে হিন্দু ভোট আস্তে আস্তে বিজেপিতে জড় হবে-যদিও সেটা কঠিন করে তুলেছে, বিজেপি নিজেই-যাদের ক্যাডাররা ভীষন ভাবেই অসন্তুষ্ট দিল্লীর ওপরে।
এই পোলারাইজেশনটা আজ না হলে কাল হতই। এখন বেশ দাঙ্গার আবহে বিরাট আকার নিয়েছে, যদিও এই ধরনের হিন্দুরা ভোট টা এখনো মমতা ব্যানার্জিকেই দিচ্ছেন। কারন আর যাইহোক দিদি কাজ করবেন এই আস্থাটা এখনো আছে। কিন্ত সিপিএম সম্পূর্ন ধ্বংশ হলে আখেরে লাভ বেশী বিজেপির, ক্ষতি তৃনমূলের।
সিপিএম যে সম্পূর্ন অপদার্থ ছিল, সেটা দিদি হাতে নাতে করে দেখিয়েছেন। কিন্তু সেটাই না আবার তৃণমূলের কাল হয়। কারন সিপিএম ধ্বংশ হলে, সেই ভোট টার অধিকাংশ যাবে বিজেপিতে। আমি শুনলাম সেটা নাকি তৃনমূল বুঝেছে। তাই তারাই তাগদা দিচ্ছে সিপিএমের লোকেদের পার্টি অফিস খুলতে। অহ, এই দিনটা আসতই।