Tuesday, August 13, 2019

আর্টিকল ৩৭০ এবং কাশ্মীরের ভারতভুক্তি- আসল ইতিহাস

আর্টিকল ৩৭০ এবং কাশ্মীরের ভারতভুক্তি- আসল ইতিহাস
*****
কাশ্মীরের মহারাজা হরিসিং ভারতভুক্তির "ডকুমেন্ট অব এক্সেশন" সাইন করেন ২৬ অক্টবর, ১৯৪৭। কাশ্মীরের ভারত ভুক্তির ডকুমেন্ট সেটাই। এবং সেই চুক্তি ভারতে আরো ৫৪০ টা প্রিন্সলি স্টেট যে ডকুমেন্ট সাইন করেছে, তার থেকে ১% ও আলাদা না। মনে রাখতে হবে, ভারতের সংবিধান চালুই হয়েছে ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারী থেকে। ২৬ শে নভেম্বর ১৯৪৯ এ এটি গৃহিত হয়। সুতরাং কাশ্মীরের ভারত ভুক্তির শর্ত সংবিধানের ৩৭০, এগুলো অজ্ঞকথন।

তাহলে আর্টিকল ৩৭০র এল কি করে?
ডকুমেন্ট অব এক্সেশন, যা ভারতের সব রাজ্যের জন্য একই ( কাশ্মীর ও সেই ডকুমেন্টই সাইন করেছে), তাতে লেখা ছিল, ভারতের ফেডারাল উনিনিয়ান মিলিটারি, ফরেন এফেয়ার্স, কমিউনিকেশন এবং কারেন্সি-এই চারটির অধিকার নেবে। রাজ্য কি ভাবে চলবে, সেটার জন্য প্রতিটা রাজ্যকে নিজেদের সংবিধান প্রনয়ন করতে হবে এবং তার জন্য প্রতিটা রাজ্যকে নিজেদের স্টেট কনস্টিউয়েন্ট এসেম্বলি বানাতে হবে।

এবার "হজপজ" ইতিহাসের কথা অনেকেই জানে না- যেটা হচ্ছে এই যে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য ৩৪৯ মেম্বার সম্বলিত কনস্টিয়েন্ট এসেম্বলি তৈরী হয় (১৯৪৬, ৬ই ডিসেম্বর) । তাতে সব রাজ্যের প্রতিনিধিরাই ছিল। কাশ্মীর থেকে ছিলেন শেখ আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লার পিতা।

এবার এই যে ৫৪০ টা প্রিন্সলি স্টেটকে বলা হল, যাও গিয়ে নিজেদের স্টেট কনস্টিউয়েন্ট এসেম্বলি বানাও-যদি নিজেদের সংবিধান চাও- এটা কিন্ত অধিকাংশ প্রিন্সলি স্টেট করতে ব্যর্থ হয়। ব্যতিক্রম গুটিকয় রাজ্য-কাশ্মীর, সৌরাষ্ট্র , ত্রিভান্দম ইত্যাদি। বাকী সব রাজ্যগুলি বললো, অত ঝামেলার দরকার নেই- ভারতের সংবিধানই সবাই গ্রহন করবে। সৌরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশীয় রাজ্যগুলো তাদের এই দেশের মধ্যে "মিনিদেশের" উচ্চাশা ত্যাগ করে, বাকীদের সাথে ভারতের সংবিধানকেই মেনে নেয়।

বাধ সাধলেন, শেখ আবদুল্লা। কিন্ত কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলি তার কথা শুনলো না। সবাই যখন ভারতের সংবিধান মানছে শেখের আপত্তি কে শুনবে?

এদিকে ২৬ শে নভেম্বর ১৯৪৯ ভারতের সংবিধান গ্রহন করার দিন। তার মাত্র দশদিন আগে শেখ আবদুল্লা নেহেরুর কাছে গিয়ে বল্লেন ভারতের অন্য ৫৪০ টা রাজ্য " হিন্দু সংবিধান" মানলেও কাশ্মীর যেহেতু মুসলিম প্রধান রাজ্য, তাদের আলাদা প্রভিশন দরকার সংবিধানে। সেই প্রপোজালই ৩৭০। নেহেরু তাকে বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাছে পাঠালেন। সংবিধান কমিটির চেয়ারম্যান তিনি। আম্বেদকর শেখ আবদুল্লার কাছে ৩৭০ এর খসরা দেখে বল্লেন, এই জিনিস ভারতের সংবিধানের তিনি রাখতে পারেন না। কারত সেক্ষেত্রে ভারতের অনেক রাজ্যই এই দাবী করতে পারে এবং তা ভারতকে দুর্বল করবে।

শেখ আবদুল্লা ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এলেন নেহেরুর কাছে। বল্লেন, ভারত যদি ৩৭০ এক্সট্রা প্রভিশন হিসাবে না মেনে নেয়, তাহলে কাশ্মীর আন্দোলনের পথে যাবে। কারন ডকুমেন্ট অব এক্সেশনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়ছে। নেহেরু তখন কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির মিটীং ডাকলেন। কারন সংবিধান কমিটির মেম্বারদের অধিকাংশই কংগ্রসী।

কিন্ত কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে প্যাটেলেরই প্রাধান্য। নেহেরুকে তারা প্রধান মন্ত্রী হিসাবে চায় নি। চেয়েছিল বল্লভ ভাই প্যাটেলকে। ওয়ার্কিং কমিটি মাত্র এক ঘন্টার মিটিং এ শেখ আবদুল্লার ৩৭০ এর প্রস্তাব নাকচ করে।

নেহেরু দেখলেন বিপদ। তিনি তখন গোটা বিশ্বে নন-আলাইন মুভমেন্টের নেতা হতে চাইছেন। আরব বিশ্বকে পাশে দরকার। এই অবস্থায় কাশ্মীরে আন্দোলন শুরু হলে, তার "বিশ্বনেতা"র ইমেজ ধাক্কা খাবে।

তিনি লন্ডন যাওয়ার আগে পটেলকে বল্লেন, সর্দারভাই- বিপদ আসন্ন, কিছু করুন! নইলে গোটা বিশ্বে ভারতের ইমেজ খারাপ হবে।

প্যাটেলের কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্ত নেহেরুকে ভাই এর মতন স্নেহ করতেন প্যাটেল। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি তার হাতে। তখন তিনি অশত্থামা হত ইতি গজর মতন করে- ৩৭০ ভারতের সংবিধানে ঢোকালেন। কিন্ত " ইতি গজ" ও এড হল-সেখানে লেখা হল, ৩৭০
সাময়িক একটা প্রভিশন। পরে তুলে দেওয়া হবে।

ইতিহাস এটাই দেখায়, আর্টিকল ৩৭০ ভারতের সংবিধানে ঢুকেছে- নেহেরুর ইচ্ছাতে। তার বিশ্বনেতা হওয়ার উচ্চাশায় বলি হয় ভারতের সংবিধান।

No comments: