Thursday, September 29, 2016

যুদ্ধং দেহী

সেটা ১৯১6। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তৃতীয় বছর। ইংল্যান্ডে যুবকদের যুদ্ধে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশজুরে দেশপ্রেমের বন্যা। কেম্বব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তৈরী হয়েছে অস্থায়ী সেনাহাঁসপাতাল।

সেই গণহিস্টারিয়ার বাজারেও বেঁকে বসলেন বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ এবং দার্শনিক বিট্রান্ড রাশেল। লাগাতার লিখতে লাগলেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে। বক্তব্য সিম্পল। এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাতে লাভবান দেশের শিল্পগোষ্ঠী- ইম্পিরিয়ালিস্ট ডিজাইনের চক্রান্তের শিকার সাধারন মানুষ।

ট্রিনিটি কলেজ থেকে বহিস্কৃত হলেন সেই বছর। ১০০ পাউন্ড ফাইন হল। বললেন ফাইন দেব না-জেলে যাব। সেটা হল না। বন্ধুরা ফাইন দিয়ে দিল। তাতেও দমলেন না-চালিয়ে গেলেন যুদ্ধবিরোধি, শান্তির পক্ষে প্রচার। এবার সত্যিই দেশোদ্রোহিতার অপরাধে ছমাসের জেল। জেলে বসেই লিখলেন তার অসমান্য বায়োগ্রাফি=

I found prison in many ways quite agreeable. I had no engagements, no difficult decisions to make, no fear of callers, no interruptions to my work. I read enormously; I wrote a book, "Introduction to Mathematical Philosophy"... and began the work for "Analysis of Mind" — The Autobiography of Bertrand Russel

ট্রিনিটিতে শান্তিকামী মানুষে পক্ষে শুধু রাশেলই ছিলেন না-ছিলেন থমাস হার্ডি। রামানুজমের মেন্টর। এই সময়টাতে যুদ্ধবিরোধি মনোভাবের জন্য ( না হার্ডি যুদ্ধ বিরোধি লেখালেখি করতেন না ) হার্ডিকে প্রায় একঘরে হতে হয় বৃটেনে। রামানুজমের ওপরে সদ্যমুক্ত সিনেমা, ম্যান হু নিউ ইনফিনিটিতে এর অসাধারন চিত্রায়ন করেছেন পরিচালক।

আরো ছিলেন আর্থার এডিংটন। আইনস্টাইন তখন শত্রু দেশের বিজ্ঞানী। জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি আবিস্কার করেছেন বছর চারেক আগে-কিন্ত সূর্য্যগ্রহণের অপেক্ষায় আছেন কখন তার তত্ত্ব প্রমানিত হবে। আগের সূর্য্যগ্রহনে কিছুই হয় নি-কারন যুদ্ধ চলছে। এডিংটন ঘোষনা করলেন-তিনিই করবেন আইনস্টাইনের তত্ত্বর পরীক্ষা। গোটা বৃটেন জুরে ঘৃণার শিকার হলেন এডিংটন -কিন্ত তিনি অনড়। ইতিহাস সৃষ্টি হল ১৯১৯ সালে। সাউথ আফ্রিকায় পূর্নগ্রাস সূর্য্যগ্রহণের তিনিই প্রথম প্রমান করলেন নক্ষত্রথেকে আসা আলোর রেখা, সূর্য্যের অভিকর্ষ বলে বেঁকে যাচ্ছে-আইনস্টাইনের সমীকরন মেনে। বিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানের ইতিহাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। এডিংটন বলেছিলেন যুদ্ধ সভ্যতার পরিপন্থি-বিজ্ঞান সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার। তাই তিনি আর্ক এনিমি জার্মানীর বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে কাজ করেই প্রমান করবেন, এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, জাতি বৈরিতার উর্ধে উঠেই বিজ্ঞানীর সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ফ্রাংকলি স্পিকিং আমি জাতিয়তাবাদ দেশপ্রেম ইত্যাদি ব্যপারে ভীত। দেশের প্রতি প্রেম ভালোবাসা নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্ত ফেসবুকে যখন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে গালাগাল ভেসে আসে, দেখি ঘৃণার বন্যা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে, তখন নিজের মনেই অজান্তে কাঁপি-এত ঘৃণা কেন? পাকিস্তান এবং পাকিস্তানি এক না। পাকিস্তান দেশটা একটা কৃত্রিম সৃষ্টি-থাকাই উচিত না। ওটা পাঁচটা স্বতন্ত্র প্রদেশে ভাগ করে দেওয়া উচিত। বালুচ, সিন্ধ ওরা স্বাধীন হৌক। পাকিস্তানি মিলিটারীর থেকে মুক্তি পাক। এসব নিয়ে আমার দ্বিমত নেই। কিন্ত পাকিস্তানি কারা? বৃটিশ চক্রান্তের ফসল পাকি মিলিটারীর হাতে ধুঁকতে থাকা ভারতীয়দের মতন সাধারন মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা কেন? কেন বৃটিশদের বিরুদ্ধে না, যারা পাকিস্তান নামে একটা কৃত্রিম দেশ তৈরী করে দিয়ে গেল যাতে ভারতকে গোদের ওপর বিষফোঁড়া নিয়ে বাঁচতে হয়।

ইরাক আক্রমনের সময়, আফগানিস্থান আক্রমনের সময় আমেরিকান টিভিতেও জনগণকে দেশপ্রেমের আবেগে ভাশানো হয়েছে। তার পরবর্তীকালে কি হয়েছে আমরা জানি। ভারতে এখন সেই ফেজ। সব মিডিয়া, সর্বত্রই দেশপ্রেমের বন্যা বইছে। সার্জিক্যাল এটাক। এটাতে অবশ্য আমার দেশ আমেরিকা হচ্ছে এক্সপার্ট।

কিন্ত যে প্রশ্নটা আমরা করি না-সেটা হচ্ছে এই যে টেররিজম, সন্ত্রাস এর মূল ত শুধু অর্থ বা অস্ত্র না। ধর্ম এবং আদর্শবাদ ও বটে। এবং খুব পরিস্কার ভাবেই এর মূলে ইসলাম যা আরব সংস্কৃতির সাম্রাজ্যবাদের ধর্মীয় মোরক। কাশ্মীরের ৮০% জনগণ হিন্দু হলে, সেখানে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্ন উঠত না-মিলিটারি ইন্টারভেনশনের দরকার ও হত না। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক ইসলামকে ডাইল্যুইট করার কোন প্রচেষ্টা নেই কেন? বরং তারক বিশ্বাসের মতন যেসব নাস্তিকরা ইসলাম সম্মন্ধে স্পেডকে স্পেড বলার সাহস রাখেন তাদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে।

সার্জিক্যাল এটাক নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরী করা হচ্ছে, তাতে বুদ্ধিভ্রংশের উজ্জ্বল উদাহরন। কজন সন্ত্রাসী মারবে ভারতের সেনা বর্ডার পেরিয়ে? ১০, ১০০, ১০০০, ১০,০০০? দশ হাজার সন্ত্রাসী মরলে এক লাখ সন্ত্রাসী তৈরী হবে পরের বছর-যদ্দিন ওই ইসলামিক আদর্শ এবং শরিয়ার মোহ থেকে মুসলমান যুবকরা মুক্ত না হতে পারছে।

ভ্রান্ত রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কি দেশে সন্ত্রাসবাদ কমবে?

Tuesday, September 27, 2016

প্রেসিডেন্টিয়াল ডিবেট ২০১৬

প্রেসিডেন্টিয়াল ডিবেট ২০১৬ঃ
*************************
কর্মসূত্রে ইস্টকোস্টের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বেল্টে এদিক ওদিক ঘুরি। আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং বেল্ট গ্রামীন এলাকাতেই বেশী। দিগন্তজোড়া সবুজ ক্ষেত। তারই মধ্যে মধ্যে ইতিউতি ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলেছে। অনেকটা যেমন হতে পারত আমাদের সিঙ্গুর। কৃষি এবং শিল্পের সহাবস্থান।

  ট্রাম্প-হিলারী ডিবেটে, ট্রাম্পের  ট্রাম্পকার্ড বুঝতে, পেনসিল্ভেনিয়া ওহায়ো ইত্যাদি ইন্ডাস্ট্রিবেল্টের হাওয়াটা বোঝা উচিত। খুব পরিস্কারভাবে ট্রাম্প এই সুইং স্টেট গুলিতে সুইপ করতে পারে। আমি গত মাসে যতবার গেছি-গ্রামাঞ্চলের আনাচে কোনাচে ট্রাম্প ভলিউন্টারদের মোবিলাইজেশন চোখে পড়েছে। পেনসিলভেনিয়ার এইসব গ্রাম-শিল্পাঞ্চলের আনাচে কোনাচে এখন ট্রাম্প প্ল্যাকার্ড -মেকিং আমেরিকা গ্রেট এগেইন। হিলারী এখানে দুশো মাইলের মধ্যে চোখে পড়বে না যতক্ষন না আপনি পেনসিলভেনিয়ার দুই মহানগরে আসছেন-ফিলাডেলফিয়া এবং পিটসবার্গ। এর বাইরে হিলারী হাওয়া।

 কিন্ত কেন?  ট্রাম্প গতকালের ডিবেটে পেনসিল্ভেনিয়া, ওহায়ো এইসব এরিয়ার ধুঁকতে থাকা ব্যবসা নিয়েই খাতা খুলেছে। কিভাবে ন্যাফটা এবং গ্যাটের ফলে আমেরিকার শিল্পাঞ্চলে এসেছে বিপর্যয়। এগুলো কিন্ত একদম ঠিকঠাক-এইসব এলাকাগুলো সত্যি সত্যিই ম্যানুফাকচারিং আউটসোর্সিং এর জন্য আজ বিপর্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার পেনসিলভেনিয়ার ওমন একটা গ্রামের রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ খাচ্ছিলাম। ওখানে পাশের টেবিলগুলোতে জোর আলোচনা-যাক এদ্দিন বাদে একজন এইসব এলাকার দূরাবস্থার কথা বলছে। এইসব এলাকাগুলো ট্রাম্প সুইপ করবে ধরে নেওয়া যায়। এবং সেটাই চিন্তার কারন। কারন এগুলি সুইং স্টেট।

 আমি গতকাল থেকে অনেক নিউজ মিডিয়া ফলো করছি-কোন সন্দেহ নেই হিলারী নিজেকে অনেক ভাল ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। এবং প্রেসিডেন্ট পদের উনিই অনেক যোগ্যতর দাবিদার। কিন্ত গ্রাউন্ড রিয়ালিটি একটু অন্য। সুইং স্টেটগুলো্তে কিন্তু ট্রাম্প হিলারীকে প্রায় ধরে ফেলেছে। এবং সেই সুইং স্টেটগুলির ভোট পাওয়ার জন্য যা দরকার, ট্রাম্প ডিবেটের প্রথম দুমিনিটেই সেই আসল কাজটা করে ফেলেছেন। বাকী নব্বই মিনিট ওই এলাকার লোকেদের জন্য অপ্রয়োজনীয়।

 ডেমোক্রাটিক পার্টি এবং বেস নানান লিব্যারালদের এলায়েন্স। প্রোলেবার, ফেমিনিস্ট, সিভিল রাইট, এনভাইরনমেন্টালিস্ট, ইউনিয়ানিস্ট, লেফটিস্টদের কোয়ালিশন ডেমোক্রাটিক পার্টি।  এর মধ্যে লেফটিস্ট পার্টটাকে বার্নি এমন মাথা খেয়েছে, তাদের অনেকেই হিলারিকে ভোট নাও দিতে পারে। এটা ডেমোক্রাটিক পার্টির ২৫% কমিটেডবেসের ৫% মতন। হিলারির লয়াল বেস ফেমিনিস্ট এবং ব্ল্যাক রাইট মুভমেন্টের লোকেরা। এখন মেক্সিকান এবং এশিয়ানরাও। যারা আরো ১০%।  এইভাবে হিলারী লয়াল বেস দাঁড়াচ্ছে ৩০% এর মতন। ্কিন্ত বাকী ৪৫% সুইং ভোট।  যাদের অধিকাংশই তরুন তরুনী। তাদের  ৩০% অন্তত হিলারীকে টানতে হবে। এই জন্যে হিলারী ছাত্রলোনের ব্যপারে ফোকাস করছেন। কারন আমেরিকার শিক্ষিত তরুন তরুনীরা এডুকেশন লোনে জর্জরিত।

 ট্রাম্পের ইকোয়েশন অন্য। ট্রাম্প জানেন আসল ব্যটল গ্রাউন্ড সুইং স্টেটগুলো যথা ওহায়ো, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা। এর মধ্যে ট্রাম্প পেনসিল্ভেনিয়া এবং ওহায়ো টানতে পারবেন হিলারীকে তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী করে। ভার্জিনিয়া জিততে গেলে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি জিততে হবে-কারন বাকি কাউন্টির অধিকাংশ এমনিতেই রিপাবলিকান। ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে এত বেশী ডেমোক্রাট , ওখানেই বাকী সব কাউন্টির রিপাবলিকান ভোট  ব্যালান্সড হয়।  ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির প্রায় ৩০% ভারতীয় এবং এশিয়ান। তাদের ৮৮% ডেমোক্রাটিক ভোটার। ফলে এদের টানতে ট্রাম্প এখন প্রোইন্ডিয়ান। এই ভারতীয়দের যেহেতু ৯৫% হিন্দু এবং মুসলমানদের ওপরে তাদের একটা জাত রাগ আছেই-সেটা কাজে লাগিয়ে, ট্রাম্প হয়ত ৫০-৬০% ভারতীয় ভোট পেলেও পেতে পারেন ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে।  তবে ভারতীয়দের আবার ৪০% ভোটার রেজিস্ট্রেশন করে না-না হলে সিটিজেনশিপ নেয় না।

আপাতত বেশ ক্লোজ ইলেকশন। ট্রাম্প যদি মেগালোম্যানিয়াক নার্সিসিস্ট না হত, এই যাত্রায় হিলারী ভরাডুবি ছিল আসন্ন। হিলারী ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ২০ গুন বেশী টাকা তুলছেন-কিন্ত তবুও দেখা যাচ্ছে হিলারী ভল্যুইন্টার মুভমেন্ট শুধু মাত্র কালো সিভিল রাইট এবং ফেমিনিস্ট এক্টিভিস্টদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেখানে ট্রাম্প কিন্ত গ্রামাঞ্চলে বিরাট ভলিউন্টিয়ার মোবিলাইজ করতে সক্ষম হয়েছেন।

 ট্রাম্প কনম্যান, মিডিয়া অভিনেতা।  ১০০% অবিশ্বাসযোগ্য।  ফলে তাকে বিশ্বাস করে যে আমেরিকাবাসী ঠকবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্ত ট্রাম্প কিছু প্রশ্ন তুলেছেন-যা অন্যান্য রাজনীতিবিদরা তোলেন নি। উচিত ছিল। এবং সাধারন মানুষের রাগের ফল কি হতে পারে অন্যান্য রিপাবলিকান নেতারা বুঝেছেন এত দিনে।  হিলারীর সেই কাতারে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্ত উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।











Thursday, September 22, 2016

হাল্লার রাজা চলেছে যুদ্ধে

ভারত-পাকিস্থানে আবার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার আবহ। প্রতিবারের ম ত এবারও! ভারতের পার্লামেন্ট আক্রমন করার পরেও যেখানে, কিস্যু হয় নি, বা ভার‍ত কিছু করে উঠতে পারে নি, কিছু সৈনিকের মৃত্যুতে কি আর হবে! দুদিন বাদে সবাই ক্রিকেট বলিউডেই ব্যাক করবে।

 পাকিস্তানের প্রতি পররাষ্ট্রনীতির ব্যপারে কংগ্রেস সম্পূর্ন ব্যর্থ। মোদিও যুদ্ধংদেহী ভাবে ভুল দিকে খেলছেন।

  সান জু, আর্ট অব ওয়ারে লিখছেন, সেই সেনাপতিই শ্রেষ্ট যিনি একটি তীর খরচ না করে, একটুও রক্তপাত না ঘটিয়ে বিজয়ে সমর্থ হৌন।

 উদাহরন ? রোনাল্ড রেগন। আমেরিকা কিভাবে জিতল ঠান্ডা যুদ্ধে? একটাও মিসাইল ছুঁড়তে হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ান ভাংতে? কিভাবে রেগান সমর্থ হলেন প্রতিদ্বন্দিকে ভেঙে দিতে?

  সবটাই প্ল্যানিং।  কমিনিউজমের প্রতি সাধারন মানুষের রাগ ত ছিলই-সেটাকে রেগান বাড়িয়ে দিলেন আমেরিকাতে কত কিছু আছে, আর সোভিয়েতের জীবনে কিছুই নেই। কমিনিউজমে সোভিয়েতের লোকেরা ভিখিরি। এমন একটা জনমত খুবই সতর্ক ভাবে তৈরী করতে সমর্থ হয় সিয়া। এর সাথে বাকী সোভিয়েত রাজ্যগুলোর স্বাধীনতার আকাঙ্খা ছিল বহুদিনের।

সোজা কথায় পাকিস্তান একটা কৃত্রিম রাষ্ট্র। এটকে একবার ভাঙা হয়েছে, আরেকবার পাঁচ টুকরো করে দিতে হবে।

 পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু-অথচ এর কোন রাজ্যের মাতৃভাষা উর্দু না। বালুচ, পুশতুন, পাঞ্জাবী, সিন্ধি-সবার ওপরেই জোর করে চাপানো হয়েছে উর্দুর অত্যাচার। এটা একটা মিলিটারী স্টেট। যে রাষ্ট্রের বাজেটের সিংহভাগ যায় মিলিটারী বাজেটে। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য খাতে ১% ও খরচ করে না পাকিস্তান। পাঞ্জাবী আর মোহাজির ( যেসব মুসলমানরা ভারত থেকে এসেছিল)  রাষ্ট্রের, সেনার মাথায় বসে আছে। বালুচ, পুস্তুন, সিন্ধ্রিরা চাকর বাকর স্বভূমিতে।

 এই মুহুর্তে আমেরিকার দরকার নেই পাকিস্তানের। ফলে আজ নইলে কাল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদি রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করবে আমেরিকা। এই মুহুর্তে পাকিস্তানের সব থেকে ভাল দোস্ত চীন। কারন চীনের কোম্পানীগুলো পাকিস্তানের সব কাজের বরাত পাচ্ছে। পাকিস্তানের খনিগুলোকে, যার অধিকাংশই বালুচিস্তানে অবাধে লুঠ করার পারমিশন পেয়েছে চীনা কোম্পানীগুলি। যারে কয় প্রোটেকশন মানি।

 ফলে পাকিস্তানকে ভাংতে এই চীনা ইন্টারেস্টকে নিউট্রিলাইজ করতে হবে। কূটনীতিতে তা সম্ভব না-কারন চীন এখন মহাশক্তিধর। একমাত্র ওয়ে আউট- বিক্ষুব্ধ,  বালুচ সিন্ধ্রিদের সাহায্য করা যাতে চৈনিক কোম্পানীগুলির বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়তে পারে এবং চৈনিক কোম্পানীগুলি ভয়ে পালায়। একবার চীন বিজনেস ইন্টারেস্ট হারালে, পাকিস্তানকে তারা লাই দেবে না। কারন পাকিস্তানের তালিবান সন্ত্রাসবাদি  চীনের জিংসাং এবং গাঙসু রাজ্যের মুসলিম সন্ত্রাসীদের মধ্যেও আছে।

 পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধদেহী ভাব একদম বর্জন করা উচিত। তাহলে দেশ হিসাবে আবার পাকিস্তানিরা ঐক্যবদ্ধ হবে। বরং ভারত থেকে বিদ্রোহি বালুচিস্তান, সিন্ধ, পুস্তুনদের প্রতি অর্থ এবং অস্ত্র দেওয়া হৌক। ওইসব দেশের এক্সাইল সরকার, ভারতে থেকেই শুরু হৌক।

 যুদ্ধ বুদ্ধিমানদের পথ না-এটাও সান জুর কথা। যুদ্ধ ছাড়াই পাকিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়ানের মতন শুইয়ে দেওয়া সম্ভব। ভারতের সেই পথেই হাঁটা উচিত।








Friday, September 9, 2016

অটোমেশন এবং আপনার শিশুর ভবিষ্যত

জীবনের প্রথম আঠারো বছরে টেলিফোন করার সুযোগ হয়েছে সম্ভবত দুই থেকে তিন বার।

না অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই ১৯৮০-৯০ সালে, স্যাম পিত্রোদার আগের জমানায় টেলিফোন মানে এলাহি ব্যপার। বড়লোক ব্যবসায়ীরাই রাখত। তখন একটা ফোন আসা মানে সারাদিনে বলার মতন ঘটনা- ট্রাঙ্ককল আসত।

ট্রাঙ্ককলটা কানেক্ট করে দিতেন টেলিফোন ওপারেটর। মানে ম্যানুয়াল সুইচিং। এই শহর থেকে অন্য শহরের এক কলের সাথে অন্যকল লাগিয়ে দিতেন টেলিকম অপারেটররা। আমার বড় মামা এবং বড় মাসী ছিলেন টেলিকম অপারেটর। উনাদের সাথে গেছি টেলিফোন অফসে মাঝে মাঝে । সারাক্ষন হ্যালে হ্যালে করছেন। আর এখান কার জ্যাক খুলে ওখানে লাগাচ্ছেন। একদম হাতে ধরে ক্রস কানেক্ট করা যাকে বলে।

রাজীব গান্ধী স্যাম পিদ্রোদাকে নিয়ে আসলেন। আস্তে আস্তে ম্যানুয়াল সুইচিং এর বদলে এল সিডটের তৈরী অটোমেটিক সুইচ বা ড্যাকস। পুরাতন কপার লাইনের বদলে মাইক্রোয়েভ লিংকে জোড়া হল শহর থেকে শহর।

রাজীব গান্ধী তদ্দিনে মারা গেছেন। কিন্ত তার আধুনিক চিন্তার সুফল পেতে শুরু করেছি আমরা। প্রথমে জেলা শহর এবং তারপরে করিমপুরের মতন প্রান্তিক শহরেও দ্রুত লাইন দেওয়া শুরু করে ডট বা ডিপার্ট্মেন্ট অব টেলিকম। তখনও ভিএসএনএল বিএসেনএল আসে নি। ফলে ১৯৯৩ সালের আগেও যেখান বাড়িতে নিয়মিত চিঠি লেখা অভ্যেস ছিল হোস্টেল থেকে- ১৯৯৪ এর পর থেকে সরাসরি এস টি ডি বুথে গিয়ে লাইন দাও। বাড়িতে ফোন কর।

অন্যদিকে পুরাতন ট্রাঙ্ককল লাইন গুলোকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই নিয়ে বড় মামা এবং মাসীর একটা চাপা টেনশন কি হয়- কি হয়। কারন অপারেটরের আর দরকার নেই। সেখানে এসে গেছে অটোমেটিক সুইচ। নেহাত সরকারি চাকরি। তবুও ভিয়ারেসের চাপ। সরকার চাপ দিচ্ছে টাকা নিয়ে অবসর নাও। ডটে প্রায় ধর্মঘট হত সেই সময়। কিন্ত ওই আদ্দিকালের ট্রাঙ্ককল ত চলার না। ফলে সামান্য রফা। টেলিফোন অপারেটেরদের কাউকে দেওয়া হল একাউন্টস দেখার কাজ-কেউ কেউ জেনারেটর তত্ত্ববধান শুরু করলেন। কম্প্রোমাইজড লাইফ। রিটারমেন্ট পর্যন্ত।

একটা সময় ছিল যখন শহরের ব্যবসায়ী মহলে বেশ খাতির পেতেন অপারেটররা। কারন ব্যবসায়ীদের ট্রাঙ্ককল তাদের হাত ঘুরেই আসত কি না! বড়মামার সাথে কালনার বাজারে গেলে টের পেতাম। কিন্ত হাইরে অটোমেশন! মেশিনের সাথে কি আর মানুষ পারে অসম প্রতি্যোগিতায়? একটা শহরে মাথা উঁচু করা চলা মানুষগুলো হঠাৎই হয়ে উঠলো প্রযুক্তির ঘোড়াতে লাথি খাওয়া কোনঠাসা বোরে।

সেই প্রথম কাছ থেকে দেখা কি করে প্রযুক্তি এবং অটোমেশন মানুষের চাকরি জীবন একদম বদলে দেয়-যে কাজ সারাজীবন ধরে তারা করতেন-পাঁচ বছরের মধ্যে ভ্যানিশ!

অটোমেশনের ফলে আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে গত ত্রিশ বছরে ৯০% শ্রমিক ভ্যানিশ। কিন্ত উৎপাদন বেড়েছে আড়াইগুন। একদম ছুমন্তর জাদু। ফলে লেবার ইউনিয়ানের সেই দাপট আর নেই আমেরিকাতে। তারা কোনঠাসা। বেশী ইউনিয়ানবাজি করলে কারখানা বন্ধ করে নতুন কারখানা খুলবে কোম্পানি-যা হবে সম্পূর্ন অটোমেটেড! ভারতেও এর ব্যতিক্রম হবে না। টাটা স্টিলে দেখেছি। ১৯৮৫ সালে ছিল ৭০,০০০ কর্মী। এখন উৎপাদন প্রায় তিনগুন, জামসেদপুর প্ল্যান্টে আছে মোটে ১১,০০০ কর্মী। তাও শুনলাম ৮০০০ উদবৃত্ত। তাদের ধরে ধরে সিকিউরিটির চাকরি দেওয়া হচ্ছে। কারন টাটারা দয়ালু। সচরাচর ছাঁটাই করেন না।

সুতরাং এইসব শ্রমিক আন্দোলন ইত্যাদি করে কিস্যু হবে না। শ্রমিকই ত উঠে যাচ্ছে। যারা টিকে যাবেন তারা স্কিল্ড, কর্মী। অনেক বেতন পান। তারা বেতন কম পেলে অন্যত্র ভাল কাজ নেবেন। তাদের ইউনিয়ানবাজি করার দরকার নেই।

সমস্যা আসলে অন্যত্র- একটা বিপুল আধা-বেকার শ্রেনী তৈরী হবে। স্কিল নেই বলে। এদের জন্য দরকার বিপুল বেকার ভাতা নইলে স্কিল ট্রেনিং। স্বাধীন ব্যবসা করার জন্য। কারন চাকরি ব্যপারটা বদলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সব চাকরিই প্রায় অনলাইন করা সম্ভব। ফলে ফ্রি ল্যান্সিং, কনসাল্টিং জনপ্রিয় হচ্ছে বেশী। পুরাতন মালিক শ্রমিক মডেল খুব অদক্ষ। আধুনিক মডেল হবে মালিক নিজেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে ফ্রি ল্যান্সার হায়ার করে ভার্চুয়াল টিম দিয়েই তার অধিকাংশ কাজ সারবে। বাকীটা রোবট, অটোমেশন।

আসলে আন্দোলনটা জরুরী দরকার স্কুল শিক্ষাটা আমূল বদলে দিতে। স্কুল থেকেই ছাত্রদের ব্যবসা ইঞ্জিনিয়ারিং আইন কোডিং শেখানো হোক। আল্টিমেটলি লাইফে অঙ্ক আর কমিউনিকেশন স্কিল ছাড়া আর কিছু লাগে না। এইসব মান্ধাতা আমলের ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান রেখে লাভ নেই। ওগুলো উইকি করলে বা একটা ইউটিউব ডকু চালালে বেটার শেখা যায়। বরং বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানোর মাধ্যমে ফিজিক্স শেখালে ছাত্ররা শিখবে অনেক ভাল। যেটা ফিনল্যান্ড করে। আমেরিকাও শুরু করেছে।

যারা শিক্ষা এবং স্কিল মিশন বাদ দিয়ে ভ্রান্ত শ্রমিক আন্দোলন এবং লাল সেলাম চালিয়ে যাচ্ছেন-তারা ইতিহাসের লিখন দেখতে পাচ্ছেন না। ৩৪ বছরের ব্যর্থতা থেকেও শেখেন নি। তাই জনগন তাদের আস্তেকুঁড়েতে ছুড়ে ফেলেছে।

আমি তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে আশা করব বামফ্রন্ট সরকারের ভুলগুলো তারা করবেন না। ধর্মঘট বিরোধি পজিশন খুবই সদর্থক তৃনমূলের। এবার বাংলাকে উন্নত করতে স্টেপ টু দরকার- সেটা হচ্ছে স্কুল শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে তাকে কর্মমূখী এবং আধুনিক করা হোক।



মনে রাখবেন-আপনার শিশু যে চাকরিটি করবে আগামী দিনে-সেই চাকরির এখনো জন্মই হয় নি।

Wednesday, September 7, 2016

বাংলার শিল্প এবং মমতা ব্যানার্জি

মমতা ব্যানার্জি জার্মানীতে ব্রান্ড বাংলাকে তুলে ধরছেন-খুব আনন্দের কথা। বাংলার বর্তমান  সরকার শিল্প বান্ধব সেটাও ঠিক। মমতা জমানা ধর্মঘট রোগ থেকে মুক্ত।  কিন্ত বঙ্গে শিল্প এর পরেও না আসতে পারে শুধু দুর্বল কাঠামোর জন্য। আশা করি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এগুলোর দিকে নজর দেবেন-যে অসুবিধাগুলো আমি গত চার বছর কোম্পানী চালিয়ে বুঝেছি -কোলকাতায়  বিদেশী কোম্পানীর এফিলিয়েট ইউনিট চালানোর অসুবিধা

 (১)  সরকারি-রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারী সার্টিফিকেশন ইত্যাদি অফিসে এখনো বাস্তঘুঘুর বাসা। সরকারি অফিসের ওয়ার্ক কালচার আগের থেকে ভাল-কিন্ত আদপে এখনো বেশ খারাপ।

   (২) কোলকাতা কাস্টম অফিস নটোরিয়াস। যেহেতু দিদি এস ই জেড করবেন না-সেহেতু  গবেষনা বা ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য কিছু পাঠালে, কাস্টম ভ্যালু দিয়ে পাঠাতে হয়। শুধু খামোকা ট্যাক্স দেওয়া না-কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে অনেক সময় লাগে। দিল্লী কাস্টমস যেখানে ২-৩ দিনে ক্লিয়াএন্স দেয়, কোলকাতায় সময় লাগে সাত আট দিন। এবং অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ভাল ফাইন চাপায়। ইনফ্যাক্ট আমরা এখন কুরিয়ার কোম্পানীকে চাপ দিয়ে দিল্লী দিয়ে কাস্টম ক্লিয়ারেন্স করায়।

   (৩) এস ই জেড না থাকার জন্য এখনে ১০০% এক্সপোর্ট বা গবেষনার জন্য কিছু কিনলেও ইম্পোর্টের ওপরে ডিউটি লাগে। এতে খরচ বাড়ে। ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড কোম্পানীর জন্য বাংলা আদর্শ স্থান না যদ্দিন না এস এই জেড হচ্ছে।


 (৪)  সিপিএম জমানার ফল আউট-সাপোর্টিং শিল্পগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। গোটা রাজ্যে একটাও আধুনিক পিসিবি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী নেই। সব অন্য রাজ্য থেকে করাতে হয়। এতে খরচ বাড়ে।  একটা ভাল আধুনিক ওয়ার্কশপ পর্যন্ত নেই। যেটা আচ্ছে সেটা সরকারি-এবং সেখানে কর্ম সংস্কৃতি সেই সরকারি।  ভাল থ্রিডি প্রিন্টিং ফেসিলিটি নেই। একমাত্র আধুনিক ওয়ার্কশপ আছে আই আই টি খরগপুরে।  হাওড়াতে অনেক ওয়ার্কশপ কিন্ত সবই পুরাতন।

(৫) ভাল প্লাস্টিক মোল্ডার নেই। ভাল মোল্ডিং করাতে পুনে বা গুরগাউ ছুটতে হয়।

 আমার মনে হয় এই মুহুর্তে বাংলাতে একটা আধুনিক ম্যানুফাকচারিং হাব করার জরুরী-   প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে। যেখানে আধুনিক পিসিবি, অত্যাধুনিক সিএন্সি, উন্নত মানের থ্রিডি প্রিন্টার, মোল্ডিং ফেসিলিটি থাকবে। ওবামা সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উন্নতির জন্য গোটা আমেরিকাতে এরকম ২০ টা সেন্টার চালু করেছিল । একটা ছিল বাল্টিমোরে। তার থেকে আমার মতন অনেকেই উপকৃত হয়েছে।

 আরেকটা সমস্যা শিক্ষার মান কমে যাওয়া। বাংলার প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মান আরো বাড়াতে হবে।  স্কুল লেভেল থেকেই অঙ্ক এবং বিজ্ঞান অন্যভাবে শেখানো হোক। স্কুলে স্কুলে প্রোগ্রামিং শেখা বাধ্যতামূলক করা হৌক। মেধাসম্পদ বাঙালীর আসল। এবং আসল মেধা তৈরী হয় স্কুল থেকে, কলেজ থেকে না।  স্কুল সিলেবাস এখনো আদ্দিকালের। এখানে ক্লাস ফাইভে আমার ছেলের সিলেবাসে স্টক মার্কেট স্টাটিস্টিক্স প্রবাবিলিটি শেখানো হচ্ছে একদম প্রাক্টিক্যাল উদাহরন দিয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোজেক্ট করানো হয়। হাইস্কুলের ছেলেদের ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ইন্টার্ন করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু শিল্পপতিদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করার চেয়ে যদি আমরা মেধাসম্পদকে উন্নত করতে পারি-শিল্প এখানে নিজে আসবে। শিল্পপতিরা মমতার কাছে ভিক্ষা করবেন।

মমতা ব্যার্নাজি বাংলার প্রথম স্বাধীন সেনাপতি। এর আগের সব মুখ্যমন্ত্রীর টিকিই বাঁধা ছিল দিল্লীর কাছে-নইতো ভ্রান্ত আদর্শের কাছে। দিদি সেসব থেকে মুক্ত এবং বাংলার জন্য এক অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। আশা করব-উনার পরিষদ বর্গ উনাকে  সঠিক পথ দেখাবেন।

Monday, September 5, 2016

মাদার টেরেসা এবং কোলকাতা

কোলকাতাকে বিশ্বের লোকেরা চেনে মাদার টেরেসার নামেই। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা। ইউরোপ আমেরিকাতে যেখানেই গেছি-কোলকাতা বললে, দেখেছি সবাই চেনে মাদারের নামেই।
  মাদারের নেম এবং ফেমের দৌলতে কোলকাতা মানেই বস্তি, গরীব, যক্ষা লেপ্রোসি। সোজা কথায় স্লাম অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। কলকাতা মানে বিশ্বের বস্তি যেখানে মাদার টেরেসা ত্রাতা! এটাই বিশ্ববাজারে কোলকাতার ব্রান্ডিং।

   অনেক কোলকাতাবাসীর তা পছন্দ না। তাদের কাছে কোলকাতা মানে অনেক কিছু-কবিতা, পেইন্টিং, গান, সিনেমা সংস্কৃতি।  সেসব বাদ দিয়ে মাদারের দৌলতে কোলকাতার এমন "গরীব ব্রান্ডিং" অনেকের নাপসন্দ।

 মাদার ভাল না খারাপ, সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। মাদারের কাছাকাছি যারা এসেছেন, যেমন আরভিন্দ কেজরিওয়াল সহ অনেকেই মাদার টেরেসার আকুন্ঠ প্রসংশা করেছেন। তারা কাছাকাছি কেউ কিন্ত মাদারের নিখাদ ভালোবাসার সমালোচনা করে নি। মাদারের সমালোচনা যারা করছেন, তাদের কেউ কোনদিন রাস্তার ভিখিরিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে খাইয়েছেন বলে জানা নেই।  দূর থেকে এত সহজে এমন ব্যক্তিত্বদের চেনা যায় না। অরভিন্দ কেজরিওয়াল মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের সাথে কাজ করেছেন এবং তার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন।  ভালোবাসার ক্ষমতার সাথে আসলে আমরা অনেকেই পরিচিত না। অধিকাংশ মানুষের মতন আমরা মূলত লোভ, ক্ষোভ, স্বার্থ দিয়েই চালিত বেশী। আমাদের হৃদয় যদ্দিন না অতটুকু প্রসারিত না হবে, যে রাস্তার ভিখিরিদের ঘরে ডেকে খাওয়াতে পারব, বা তাদের সেবার করতে পারব, তদ্দিন সম্ভব না মাদারকে বোঝা আরাম কেদারায় বসে।

 রামকৃষ্ণ মিশনের ও অনেক সমালোচনা দেখি স্যোশাল মিডিয়াতে। কিন্ত রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু কিছু সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে দেখেছি।  স্বামী সূপর্নানন্দ ( সত্যদা) যিনি এখন গোলপার্কের সেক্ট্রেটারী-যখন আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন, নিজের হাতে ঝাড়ু নিয়ে কলেজ পরিস্কার করতেন। উনি এখনো বদলান নি। কিছুদিন আগে উনার কাছে গেলাম বহুদিন বাদে। কিছু কর্মচারী ব্রেকফাস্ট রান্না করছিল। উনি নিজেই তাদের সাথে হাত লাগিয়ে,  কাজ নিজে শেষ করলেন। ওই লেভেলে আধ্যাত্মিক উত্তোরন না হলে, শুধু উনাদের মত ও পথ, কত অবৈজ্ঞানিক,  কত পুরুষতান্ত্রিক তা  নিয়ে সমালোচনা করে লাভ নেই।

বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদই আমাদের কাম্য-কিন্ত তা যদি মাদার টেরেসার মতন একটা হৃদয় তৈরী করতে না পারে, বিজ্ঞান যুক্তিবাদের সাথে সাথে মানবিকতার পাঠ কিন্ত আমাদের মাদার টেরেসা বা রামকৃষ্ণ মিশন থেকেই নিতে হবে।  সেইন্ট হুডের অলৌকিকতা অবশ্যই সমর্থন করি না-কিন্ত যদ্দিন রাস্তার গরীব দুঃস্থদের জন্য নিজে, নিজে হাতে কিছু না করতে পারছি, আমি মনে করিনা মাদারের কাজকর্ম বোঝার মতন অবস্থায় আমি আসব।  সত্যদাকে দেখে বুঝেছি সব কিছু এইসব কূটতর্ক যুক্তির আধারে হয় না-জীবনে ওদের মতন করে ভালবাসতে শেখা সত্যিই খুব দূরহ পথ। আমরাত স্বার্থের কারাগারে বন্দি ক্ষুদ্রতম মন সব।  এদের মহানুভবতা এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখলে নিজেকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র লাগে।

  অতবড় না হয়, নাই হতে পারলাম-কিন্ত এটুকু অবশ্যই সম্ভব যে আরাম চেয়ারে বসে এদের সমালোচনা করার বদভ্যেসটা ছাড়তেই পারি।  হ্যা যেদিন এদের মতন পথে নেমে আর্তের সেবা করতে পারব-সেদিন হয়ত কিছুটা সমালোচনা করার অধিকার জন্মাবে। তবে মনে হয় না সেদিন মনটা এত ছোট থাকবে, যে সমালোচনা করতে মন চাইবে!






Thursday, September 1, 2016

বন্ধ নুন্যতম মজুরী বাড়াবার কোন পন্থা না

আরেকটা সর্বনাশা বন্ধ ডেকেছে বামপন্থীরা। জানিনা এই ধরনের "ডাইনোসরাস" টাইপের পুরাতন বামপন্থার অভিশাপ আর কতদিন বইতে হবে বাংলার মানুষকে।

    প্রথমেই বলে রাখি মাসিক মাইনা নুন্যতম ১৮,০০০ টাকা করা উত্তম প্রস্তাব। কিন্ত কোলকাতার কটা ছোট ব্যবসায় মাসের শেষে মালিক নিজে ওই টাকা নিজের ঘরে নিতে পারে?

   আরো একটা প্রশ্ন তুলি। বেসরকারি স্কুল বা কলেজে সরকারি স্কেলে শিক্ষকদের মাইনে দেওয়ার কথা। কোলকাতার কটা স্কুলে এই সরকারি আইন মেনে মাইনে দেওয়া হয়? এই নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষকরা অনেক আন্দোলন করেছেন । কিন্ত আল্টিমেট ফল কি? সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও স্কুল কলেজের মালিকরা কি আইন মাফিক মাইনে দিয়েছেন?  না সিপিএম সেই চোট্টামোর বিরুদ্ধে কোনদিন কোন আন্দোলন করেছে? করেনি। কারন প্রাইভেট বেসিক বা বিএড কলেজের মালিক পক্ষের মধ্যে একটা বড় অংশই সিপিএমের লালে লাল হওয়া নেতাদের ছেলে ভাইপোরা।

   নুন্যতম বেতনের আইন এখনো আছে। কিন্ত আইন করে লাভ কি যদি আইনের এনফোর্সমেন্টই না থাকে কোথাও? নুন্যতম মজুরীর এনফোর্সমেন্ট  নিয়ে সিপিএম কোনদিন আন্দোলন করেছে? করে নি। কারন সেটা করতে গেলে কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়োবে। সিপিএমের এই ধরনের ধাপ্পাবাজি জাস্ট লিমিটলেস।

  শ্রমিকদের মাইনে ওই ভাবে আন্দোলন করে কেউ কোনদিন বাড়াতে পারে নি। যেখানেই ওইসব ট্রেড ইউনিয়ান ঢুকেছে, সেখানেই শিল্প ধ্বংশ। পেনসিলভেনিয়াতে একদা ছিল ইউ এস স্টীল।  তৎকালীন  বৃহত্তম স্টীল ফ্যাক্টরী। এখন যখন ওই ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে প্রায় ড্রাইভ করে আসতে হয়, একটা গোটা কঙ্কালসার শহর, তার পরিতক্ত বাড়িঘরদোরের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসি। এই ইউ এস স্টীল ধ্বংশ হয়েছিল শ্রমিক ধর্মঘটে।  ঘাবরাবেন না । শুধু পশ্চিম বঙ্গ না। শিল্পের ধ্বংশাবশেষ আরো বেশী দেখেছি পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে।  এবং সেখানও কারন জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ান মূলত।

আমেরিকার ইতিহাসে শ্রমিকদের মজুরী বাড়ানোর আন্দোলন সব থেকে তীব্র হয়েছে ১৮৮০-১৯১০ সালে। প্রায় ত্রিশ হাজার ধর্মঘট। মেশিনগানের গুলি থেকে বোমা-সেনা নামানো সব কিছু হয়েছে এই সময়। কিন্ত ইনফ্লেশন এডজাস্ট করলে এই ত্রিশ বছরে আমেরিকান শ্রমিকদের মাইনে বেড়েছিল মোটে ৩%। যা কিছুই না।

 কিন্ত আমেরিকান শ্রমিকদের মাইনে বহুগুন বাড়ে ১৯৪০-১৯৭০ সালের মধ্যে। এর মূল কারন দুটো। প্রথমটা হচ্ছে ব্যবসার মনোপলি ধ্বংস করা। দ্বিতীয়ত অটোমেশনের ফলে জনপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি।

 বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরে একজন গৃহকর্মী হেঁসেখেলে মাস গেলে কুড়ি হাজারটাকা উপায় করে। আর কোলকাতায় একজন এম কম পাশ একাউন্টান্ট মাসে চার হাজারটাকাও পায় না।

 কারন কোলকাতায় ব্যবসা নেই। ব্যবসা বাণিজ্য এবং মনোপলি মার্কেটের ধ্বংস করে কম্পিটিটিভ মার্কেট ছাড়া কোন আন্দোলন বা ম্যাজিকের সাহায্যে শ্রমিকদের মাইনে বাড়ানো সম্ভব না। কৃত্রিম ভাবে চাপ দিলে ব্যবসা বানিজ্য শিল্প সব ধ্বংস হবে। আমাদের সৌভাগ্য এটা বঙ্গবাসী বুঝেছে বলেই সিপিএমকে আস্তাকুঁড়েতে ফেলেছে। পরের নির্বাচনে ওই প্রাচীনপন্থী বামপন্থা সম্পূর্ন ধ্বংশ হবে।

 এছাড়া ভবিষ্যত ও দেখতে হবে। ওর্গানাইজড সেক্টর বলতে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে এখনই অটোমেশনের জন্য কাজের লোকের চাহিদা আস্তে আস্তে কমবে। সার্ভিস সেক্টরেও ব্যপক হারে অটোমেশন আসবে। সুতরাং স্কিলড  লেবারের চাহিদা ও মাইনে বাড়তেই থাকবে। তারজন্যে আন্দোলনের দরকার নেই। দরকার শিক্ষাখাতে সরকারের খরচ বাড়ানো। সরকারের তরফ থেকে অনেক বেশী স্কিল্ড মিশন চলুক।

 জুট বা চায়ের শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরী বেঁধে কিস্যু হবে না। এগুলো প্রমানিত। দরকার, তাদেরকে নতুন ট্রেনিং দেওয়া যেমন মোবাইল বা কম্পিউটার সাড়ানো।

 কমরেড জ্যোতিবোস বা অশোক মিত্র মোটেও কোন বুদ্ধিমান কেউ ছিলেন না। মধ্যমমেধার এই লোকগুলিই ছিল পশ্চিম বঙ্গের নেতা। এদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল কালিদাসি কাটারি নিয়ে মগডালে বসে নিজের মগডালটা কাটা। যারা জ্যোতিবোস বা অশোক মিত্রর মতন নির্বোধকে জাতির নেতা বানালে, যা হাল হতে পারে বাঙালি নিজে দেখেছে।

 বাংলার শ্রমিকদের মাইনে সত্যি বাড়াতে চান? তাহলে সবার আগে বাংলাকে শিল্পবান্ধব করুন।  ধর্মঘট শুন্য, ইনফ্রাস্টকাচার সমৃদ্ধ বাংলা আনুন। এখানে ভাল ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ুন। শিল্প এমনিতেই আসবে। লোকের মাইনেও বাড়বে।

 আমি আগের ভোটের আগে দ্বিধাহীন ভাষায় মমতা ব্যানার্জিকে সমর্থন জানিয়েছিলাম। এবং সেখানে পরস্কার ভাবে লিখেছিলাম, দিদিকে সর্মথন করি কারুন উনি উনার জমানায় একটাও বন্ধ হতে দেন নি যেটা বাংলায় শিল্প স্থাপনের প্রথম ধাপ।  আশা করি উনি উনার রেকর্ড বজায় রাখবেন। উনি চেষ্টা করছেন আপ্রান  দেখছি পাচ্ছি। আশা করব, বাংলার মানুষ বাংলার উন্নতিতে উনার পাশে থাকবেন। এবং বামেদের আত্মহত্যামূলক প্ররোচনায় পা দেবেন না।