Tuesday, August 13, 2019

কাশ্মীর সমস্যার মূলে যে নেহেরু, সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকাই উচিত না

কাশ্মীর সমস্যার মূলে যে নেহেরু, সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকাই উচিত না।

সংবিধান কমিটি ( কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলি), ওয়ার্কিং কমিটি এবং প্যাটেলের বিরুদ্ধে গিয়ে, শেখ আবদুল্লার জন্য আর্টিকল ৩৭০ মেনে নেওয়াটাই তার একমাত্র ভুল না।

কাশ্মীর নিয়ে নেহেরুর "ব্লান্ডার" এই ইস্যুতে যেচে ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলে গিয়ে বলা, কাশ্মীরের ভবিষ্যত হবে "প্লেবিসাইটে" -অর্থাৎ কাশ্মীরের জনগনই ঠিক করবে, তারা ভারতে , না পাকিস্তানে থাকবে না স্বাধীন হবে।

পাকিস্তান না- নেহেরুর ভারতই ইউ এন রিজোলিউশন ৩৯ এবং পরে ৪৭ এর "দাবীদার"। উহু শেখ আবদুল্লা বা পাকিস্তান না, যেচে গিয়ে ভারতের এই ক্ষতিটি উনিই করেছিলেন। যার কারনে, আজকেও প্রতিটা বিতর্কে পাকিস্তান বিশ্বকে মনে করে করায়, ভারত "কথার খেলাপ" করেছে। যেচে যেচে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পেছনে ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলের ৪৭ রিজলিউশনের বাঁশটি উনিই ঢুকিয়েছেন।

কিন্ত কেন? কি উদ্দেশ্যে?

একটা ব্যপার অবাক লাগে । পাকিস্তানি হানাদারদের ভারতের সেনারা মাত্র তিন দিনেই অনেকটা সরিয়ে দিয়েছিল। তাহলে গোটা কাশ্মীরটাই দখল করল না কেন? ইন্সট্রুমেন্ট্রশন অব এক্সেশনের জন্য ভারতের সেনার উচিত ছিল, গোটা কাশ্মীরটাই দখল করা। সব থেকে বড় কথা ভারতীয় সেনারা যখন পাকি হানাদারদের কাশ্মীর থেকে সরাচ্ছে পাকিস্তান কিন্ত ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলে যায় নি। তারা যুদ্ধই করছে। ভারত জেতা যুদ্ধ থামিয়ে নিজে নিজেই দৌড়ে ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলে গেল ! কি অদ্ভুত!

ভারতীয় সেনারা যেখানে জিতছে-আর মাত্র দুদিন পেলেই বর্তমানে যেটাকে পাকিস্তানি কাশ্মীর বলা হয়- সেটা দখল নিশ্চিত -তখন কি আক্কেলে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে মহানুভব সেজে ইউ এনে গিয়ে বললেন কাশ্মীরের সমস্যার সমাধান হবে গণভোটে! কেন?

বাংলা বা পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে এই মহানুভবতা কোথায় ছিল? বাঙালী বা পাঞ্জাবীরা গণভোটের সুবিধা পেল না কেন?

ওয়েল, এরো ইতিহাস আছে। কাশ্মীরের কতটা দখল করা সঙ্গত হবে, সেই নির্দেশ শেখ আবদুল্লা নেহেরুকে দিয়েছিলেন। কারন ওই অংশে শেখ আবদুল্লার পার্টি ন্যাশানাল কনফারেন্সের ইনফ্লয়েন্স ছিল। শেখ নেহেরুকে আশস্ত করেছিলেন যে এই টুকু অংশ ভারতের সেনারা দখল করলে, ন্যাশানাল কনফারেন্সের প্রভাব খাটিয়ে গণভোটে উনি কাশ্মীরকে ভারতের সাথে জুড়ে দেবেন। শেখের ভরসায় নেহেরু ইউ এনে যেচে গিয়ে বল্লেন, ভারত প্লেবিসাইট চাইছে! বোঝ কান্ড!

আসলে নেহেরু ভেবেছিলেন এই ভাবে এগোলে কাশ্মীরের একটা অংশ গণতান্ত্রিক ভাবে ভারতে আসবে-আফটার অল ন্যাশানাল কনফারেন্স ত তারই তৈরী। এতে গোটা বিশ্বে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সেনা দিয়ে কাশ্মীর দখল করলে, বিশ্বে তার ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে কিছুদিন বাদে হায়দ্রাবাদে সেই একই কাজটি তাকে করতে হবে। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে এত মহানুভতা কেন?

কিন্ত শেখ আবদুল্লার প্রতি নেহেরুর এত প্রেমের কারন কি?

এটা আরো চিত্তাকর্ষক। কাশ্মীরে হরি সিঙ্ঘের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুসলিম প্রজারা সংঘবদ্ধ হয় মুসলিম কনফারেন্সে নামে একটা পার্টি তৈরী করে-তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুল্লা। এরা জমিদারি প্রথার বিলোপ, ভূমি সংস্কার চাইছিলেন। ১৯৩৭ সালে শেখের সাথে নেহেরুর প্রথম সাক্ষাতকার। নেহেরু মুসলিম কনফারেন্সকে বোঝান, তাদের এই রাজনৈতিক আন্দলোন ধর্ম নিরেপেক্ষ হলে গোটা পৃথিবীতে মান্যতা পাবে। নেহেরুর কথা মেনে, মুসলিম কনফারেন্স নাম পরিবর্তন করে " ন্যাশানাল কনফারেন্সে"। এরা নেহেরুকেই রাজনৈতিক গুরু মানত-এবং নেহেরুর জন্যই ১৯৪৭ সালের ৩০শে অক্টবর হরি সিং শেখ আবদুল্লাকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব দিয়ে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হোন। ন্যাশানাল কনফারেন্স নেহেরুকে গুরু মানত, নেহেরুও কাশ্মীরে নিজের পার্টি বলতে ন্যাশানাল কনফারেন্সকেই বুঝতেন।

ন্যাশানাল কনফারেন্সের সাথে নেহেরুর এই সখ্যতাই, কাশ্মীর সমস্যার মূল কারন।

মহারাজা হরি সিং কেন ভারত ইউনিয়ানে আসতে চাইলেন না? কারন শেখ আবদুল্লা , হরি সিং এর বিরুদ্ধে যে মুসলিম প্রজাদের সংগঠিত করছিলেন- তাতে নেহেরুর প্রচ্ছন্ন মদত ছিল। সেই কারনে হরি সিং নেহেরুকে ঘৃণা করতেন। উনি জানতেন, ভারত ইউনিয়ানে তার রাজত্ব টিকবে না। তাছারা হরি সিং ছিলেন বৃটিশদের খাশ দোশ্ত। ভারতের বুকে সুইজারল্যান্ডের মতন স্বাধীন রাষ্ট্র করার প্ল্যান তার ছিল। বৃটিশ সেনার মদতে আস্বাস ও ছিল। কিন্ত পাকিস্তানের লোভ এবং তার ফলে কাশ্মীর আক্রমন, তা প্ল্যানকে নাকচ করে। তিনি যথেষ্ট ভাল সেনাবাহিনী তৈরী করতে পারেন নি। তারা হানাদারদের রুখতে ব্যর্থ হয়। হরিসিং এর সেনারা হানাদারদের রুখতে পারলে, আজকে কাশ্মীর হয়ত শ্রীলঙ্কার মতন স্বাধীন একটা দেশ হত।

যাইহোক, নেহেরুর শেখের প্রতি দুর্বলতার গল্প এখানেই শেষ না। শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরএর স্বাধীনতার জন্য গোপনে পাকিস্তানের মিলিটারি সাহায্য চান এবং সেই চক্রান্ত ধরা পড়লে, তাকে জেলে ভরা হয়। এই দেশোদ্রোহিতার শাস্তি ফাঁসি। কিন্ত মাত্র ১১ বছর জেল খাটার পর, নেহ্রু তার প্রিয়তম শিষ্যকে আবার রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেন। এক্ষেত্রে নেহেরুর যুক্তি ছিল- তিনিও নিজেও একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে অন্য একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি অত্যাচার করতে পারেন না।

মোদ্দা কথা নেহেরুর এই "গণতান্ত্রিক প্রগ্রেসিভ" মূল্যবোধের জন্য ভারতের গনতান্ত্রিক ট্রাডিশন যেমন "শক্ত" হয়েছে-বিশেষত পাকিস্থান, বাংলাদেশ, চিন, মাইনামার-মিডল ইস্ট সহ এক বিশাল এলাকাই ভারত একমাত্র "গণতান্ত্রিক" দেশ। এর পেছনে নেহেরুর অবদানকে আমরা কখনোই খাটো করতে পারি না। অন্যদিকে, তার এই প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রাটিক মনোভাবের জনই কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি।

No comments: