Thursday, October 27, 2016

বুড়িমার চকলেট বোম -অন্নপূর্ণা দাস ঃ বাঙালীর ব্যবসায়িক মানসিকতার ব্যবচ্ছেদ

বুড়িমার চকলেট বোম ছাড়া কালীপূজো, দূর্গোপূজো ?    আমরা মতন যারা আট বা নয়ের দশকে বেড়ে উঠেছি, পূজোতে বুড়িমার বোম ছিল সব থেকে বড় ব্র্যান্ড।  এই বুড়িমা কে নিয়ে কৌতুহল অনেকদিনের  -কিন্ত কোনদিন উনাকে নিয়ে কোন লেখা চোখে পড়ে নি। আজ প্রথম জানলাম উনার জীবন।  উনার সংগ্রাম। অদ্ভুত, অভূতপূর্ব বললে কম বলা হয়।

   উনার আদি বাড়ি ফরিদপুরে। অন্নপূর্ণা দাস।  ১৯৪৮ সালে উদবাস্তু হয়ে উত্তর দিনাজপুরে যখন ক্যাম্পে উঠলেন সাথে দুই ছেলে মেয়ে। স্বামী নেই। শাক সব্জি, ঘটি বাটি যা পারেন, তাই বেচে কোন রকমে সংসার চালিয়েছেন। অভুক্ত থেকেছেন অধিকাংশ সময়।

     সেই কঠিন পরিশ্রমের মধ্যেই বিড়ি বাঁধা শিখলেন সনাতন মন্ডলের কাছে। অভাবের চাপেই শিখেছিলেন কিভাবে বেচতে হয়। আস্তে আস্তে গড়ে তুললেন বিড়ি বাঁধার কারখানা।

   এরপরে বেলুড়ে মেয়ে জামাই এর কাছে এসে,  হরকুসুম গাঙ্গুলীর কাছ থেকে শিখলেন আলতা সিঁদুর বানানোর কাজ। আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা আলতা সিঁদুর ব্রান্ড ও তৈরী হল।

     অবশ্যই তার রাজ্যজোড়া খ্যাতি বুড়িমার চকলেট ব্রান্ডে।  এখানে তার গুরু বাজি বিশেষজ্ঞ আকবর আলি। পেয়ারীমোহন মুখুজ্যে রোডে তার তৈরী বাজির কারখানা এখন শিবকাশির বাজির সাথে পাল্লা দিচ্ছে। উনি শিবকাশিতেও কাটিয়েছেন বহুদিন বাজি তৈরী শেখার জন্য।

   যে ব্যবসাতে হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। না তার আই আই টি, আই আই এমের কোন ডিগ্রি ছিল না। ম্যাট্রিক পাশ ও না উনি। ব্যবসায়িক পরিবারে জন্ম-তাও না। নেহাত অন্ন সংস্থানের চাপে ফেরি করা শুরু। তাহলে কোন জাদুবলে সফল বুড়ি মা?

 যে কারন বিল গেটস বা মার্ক জুকারবার্গ সফল-ঠিক সেই কারনেই সফল বুড়ি মা। সোজা কোথায় ১০০% হ্যান্ডস অন। যা কিছু করেছেন-সেই তৈরী করা থেকে বেচা-নিজের হাতে। আজকাল কিছু কিছু আধুনিক ডিগ্রি সজ্জিত বাঙালী আন্তারপ্রেনারের সাথে সাক্ষাত হয়। তাদেরকে যখন তাদের নিজেদের প্রোডাক্ট নিয়েই জিজ্ঞেস করি -প্রযুক্তি থেকে বেচা-সব ব্যাপারেই দেখি, তারা কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল। এরা বেশীদূর এগোবে না বলাই বাহুল্য।

 সাথে সাথে আরো একটা কথা না বললেই না। বাংলাতে "প্রোডিউসার ক্লাস" টির কোন সন্মান নেই। এই বাংলাতেই আইরন ওয়ার্ক্সের জন্য বিখ্যাত ছিল কর্মকাররা। তাঁতি, কুমোর, কর্মকার-একদা এদের দক্ষতায় বাংলার প্রোডাক্ট বিক্রি হত অন্য দেশে, অন্য রাজ্যে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, আধুনিক টেক্সটাইল কল, প্ল্যাস্টিকের উদ্ভব  এবং সাথে সাথে ক্যালকেশিয়ানদের কলোনিয়াল ক্যঙ্গোভারের দৌলতে, বাংলায় প্রডিউসার ক্লাসটিকে ইতিহাস এবং সমাজ নেহাতই অন্ত্যজ শ্রেনী হিসাবে অন্ধকূপে ফেলেছে। ফলে একজন কামার, বা কুমোর সে নিজের পেশাতে খুব সফল হলেও, তার ছেলেমেয়েকে সে নিজের পেশাতে না দিয়ে, চাকুরিজীবি করে তোলে। আমেরিকাতে গ্রামে গ্রামে এইসব প্রোডিউসার ক্লাসের লোকেরা একদা ছোট ছোট ফ্যাক্টরি গড়েছেন। চীনের হাতে মার খাওয়ার আগে, এইসব ছোট ছোট ফ্যাক্টরীগুলোই ছিল, ম্যানুফাকচারিং এর নার্ভ সেন্টার। এই ট্রান্সফর্মেশনটা পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রেও কিছুটা দেখেছি। কিন্ত জমিদারিপ্রথা, আঁতেলেকচুয়াল এবং বামপন্থী মনোভাবের কুম্ভীপাকে ্বাঙালী প্রোডিউসার ক্লাশ প্রায় অন্তর্জলি যাত্রায়।

 ফলে বিখ্যাত বাঙালীর লিস্টে অন্নপূর্না দাসের স্থান হবে না কোথাও। সেখানে জ্বলজ্বল করবেন কথা ভেজে  খাওয়া, মাথায় আদর্শবাদি টুপি পড়া  শাসক শ্রেনীর হেগোপোঁদ চাটা বাঙালীকুশীলবরা। ঠিক সেই কারনেই বাঙালীর ভিখারিত্ব এবং মারোয়ারি শ্রেনীর দাসত্ব থেকেও মুক্তি নেই।







Saturday, October 22, 2016

বৈবাহিক জীবনের একঘেঁয়েমি-মনোগ্যামিশ সম্পর্ক

                                                                          (১)

ধরুন আপনি জানলেন, প্লেন ক্র্যাশের সম্ভাবনা ৫০%। তাহলে কি আপনি প্লেনে চড়বেন?

      কিন্ত আপনি বিয়ে করবেন-এটা জেনেও বর্তমানে যেকোন বিবাহে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশী। আর সব ব্যর্থতাই যে ডীভোর্সে  গড়াচ্ছে- তাও না। অধিকাংশ ব্যর্থ বিবাহই রিফিউজি নিচ্ছে সেক্সলেস ম্যারেজ-অথবা ম্যারেজ অব কনভেনিয়েন্সে। শুধু ছেলেমেয়েকে মানুষ করার কারনে স্বামী স্ত্রী হিসাবে অভিনয় করে টিকে আছে অসংখ্য দম্পতি।

       এই অসুখ নতুন না। নেনা ওনিল এবং জর্জ ওনিল ১৯৭২ সালে তাদের বেস্ট সেলার "ওপেন ম্যারেজ" বইতে,  বিবাহ নামক অসুখের ব্যবচ্ছেদ করেন আদ্যপান্ত। তারা সিদ্ধান্তে আসেন-বিয়েটা সমস্যা না। মূল সমস্যা এই মনোগ্যামাস ম্যারেজের মনোটনাস  কমিটমেন্টে। উনাদের উপস্থাপনা ছিল এই যে বিবাহ বহির্ভুত যৌন জীবন মোটেও বৈবাহিক জীবনের অন্তরায় না। বরং স্বামী স্ত্রী উভয়েই যদি সজ্ঞানে তাদের পার্টনারদের নিজস্ব স্পেস দেন-তাহলে বরং অনেক বিয়ে বেঁচে যায়।  এই স্পেস দেওয়া মানে, মেনে নেওয়া  যে বৈবাহিক একঘেঁয়েমি কাটাতে তাদের পার্টনাররা "লিমিটেড" পরকিয়াতে লিপ্ত হবেন-কিন্ত সেটা তারা করবেন সংসারের প্রতি কোন অবহেলা না করেই!

    তবে ওনিল দম্পতির ওপেন ম্যারেজের ধারনা ধোপে টেকে নি-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল বুঝে ওপেন ম্যারেজ বলতে লোকেরা বুঝতে থাকে, এর মানে স্বামী স্ত্রী একজন থাকবে বটে-কিন্ত সেটা নেহাত সামাজিক কমিটমেন্ট। সেক্সের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন নন-কমিটেড লাইফ স্টাইল। খুল্লাম খুল্লা পরকীয়া।

     ওপেন ম্যারেজেরও অনেক শ্রেনীবিভাগ সম্ভব। যেমন সুইঙ্গার লাইফ স্টাইল।  যেক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই সম্মতি ক্রমে পার্টনার পাল্টায় যৌন উত্তেজনার খোঁজে।  আরেক ধরনের ওপেন ম্যারেজে,  স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই জানেন, তাদের পার্টনারের একাধিক যৌন সঙ্গী বা সঙ্গীনী আছেন-কিন্ত তারা সেই নিয়ে মাথা ঘামান না। দুজনেই দুজনকে স্পেস দিতে পছন্দ করেন।

 প্রশ্ন উঠবে যৌন উত্তেজনা বা যৌনতার মাধ্যমেই যখন সুখ খোঁজা হচ্ছে -তাহলে একসাথেই বা থাকা কেন?   এর মূল কারন অবশ্যই সন্তান পালন।  ছেলেমেয়ে মানুষ করার জন্য-কমিটেড পার্টনারশিপ দরকার। কিন্ত তার মানে কি যৌনতার ক্ষেত্রেও কমিটটেড পার্টনার হয়ে থাকতে হবে? ইমোশোনাল কমিটমেন্ট এবং সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট কি একই সূত্রে বাঁধা?



                                                                     (২)


ওপেন ম্যারেজের ধারনা আমেরিকাতে গত অর্ধ দশক ধরে চললেও, তা মোটেও ব্যর্থ ক্লান্ত বৈবাহিক জীবনের সমাধান হয়ে উঠতে পারে নি। আমেরিকাতে খুব বেশী হলে ১-৫% নরনারী কোন না কোন সময়ে ওপেন ম্যারেজে ছিলেন। ওপেন ম্যারজে তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখী ছিল-তাই নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্ত সমস্যা এই যে -জেলাসি বা ঈর্ষার চক্করে প্রচুর পারিবারিক সমস্যা তৈরী হয়েছে-যার পরিণতি ডিভোর্স।

   এর সমাধানে সেক্সোলজিস্ট ড্যান  স্যাভেজ মনোগ্যামিশ ম্যারেজ বলে একটি নতুন ধারনা দেন ২০১০ সালে। উনি একজন সেক্সোলজিস্ট এবং সেই সূত্রে  দেখেন যে অনেক  ক্ষেত্রেই সাইক্রিয়াটিস্টরা একটু  আধটু  ম্যারিটাল ইনফিডালিটি বা পরকিয়া তার পেশেন্টদের জন্য রেকোমেন্ড করেন । ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াটিস্ট মহলে, বহুদিন থেকেই কনসেনসাস এই যে  আসল সমস্যাটা মনে। দেহে অতটা না। অর্থাৎ একজন নারীর যে একাধিক যৌনসঙ্গী দরকার-সেই চাহিদাটা নেহাৎ ই মানসিক। অতটা দৈহিক না। সুতরাং বিবাহ বর্হিভুত  একটু আধটু ফ্লার্টিং, প্রেমালাপ-বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্যই দরকার।  কিন্ত দৈহিক সম্পর্কে জড়ালে, তা অবশ্যই সুখী যৌন জীবন দেবে -কিন্ত ডিভোর্সের চান্স ও বাড়বে যা ওপেন ম্যারেজের ক্ষেত্রে প্রমানিত।

 মনোগ্যামিশ ব্যপারটা এখন অনেক ম্যারেজ কাউন্সিলর রেকোমেন্ড করছেন দম্পতিদের। যারা সেক্সলেস  ম্যারেজ  ওই টাইপের ঝুলে থাকা সংসার ধর্মের বলদ হয়ে টিকে আছেন কোন রকমে।

                                                            (৩)

এবার আসল সমস্যাতে আসা যাক। বিয়ে করাটা কি প্রাসঙ্গিক ? রাষ্ট্রের দরকার সন্তান।  তার জন্যে দরকার বিবাহের। সেই কারনেই সন্তান মানুষের জন্য বাবা-মাকে একসাথে থাকতে বাধ্য করে সমাজ। সেটাকে বলে বিবাহ। ফ্রান্স বা আমেরিকাতেও একসাথে থাকা যেকোন দম্পতিকে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ দম্পতির সমান বলেই গণ্য করা হয়।  সন্তান মানুষ করা ছাড়া, দুজন নারী পুরুষের একসাথে থাকার কোন দরকার নেই। সিঙ্গল থাকলেই বরং তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখের হবে।

 কিন্ত সন্তান মানুষ করার জন্য-এই বাবা-মায়ের কনসেপ্টটাই বা এলো কোত্থেকে? রাষ্ট্র, বা সমাজ বা পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে  কেন সন্তানের পালন পোষন সম্ভব না?

  ইনফ্যাক্ট এই চেষ্টা প্রথম হয় সোভিয়েত ইউনিউয়ানে-যার প্রথম আইডিয়া ছিল লেনিনের। লেনিন মনে করতেন, আইডিয়াল কমিউনিস্ট স্টেট এবং নারীর সমানাধিকারের জন্য "কমিউনিটি পেরেন্টহুড" জরুরী।  ১৯১৭-২২ এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে অনাধ ছেলে মেয়ের সংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষ। এর একটা কারন অবশ্যই গৃহযুদ্ধ -অন্যকারন এই যে নভেম্বর বিপ্লবের আগুনে বিবাহ নামক পুরুষতান্ত্রিক প্রথাকেও পোড়ানো হয়।  এখন বিয়েকে উড়িয়ে দেওয়া সহজ-কিন্ত যৌন কামনাকে ত আর ওই ভাবে রিভোলোউশনারী হ্যান্ডল মেরে হস্তমৈথুনে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। ফলে ওই পিরিয়ডে প্রায় কুড়ি লক্ষ  পরিতক্ত্য সন্তানের জন্ম হয়েছে কুমারী মায়ের গর্ভে-কারন নতুন বিপ্লবী রাষ্ট্র বিয়েটাই তুলে দিতে চাইছিল।  এই সকল অনাথ সন্তানদের বলা হত Besprizornye বা বাস্টার্ড শব্দটির রাশিয়ান।

লেনিন এদের দ্বায়িত্ব নিতে চাইলেন-ফলে তৈরী হয় পৃথিবীর প্রথম কমিউনিটি অরফানেজ। কিন্ত প্রতিটা কমিউনিস্ট দেশে যা হয়-এখানেও তাই হল। প্রায় ৫ লাখ শিশু সন্তান এইসব অর্ফানেজে প্রথম দু বছরে মারা যায়। কারন না ছিল রিসোর্স-না ছিল কর্মীদের সদিচ্ছা। এর মধ্যে স্টালিন ক্ষমতায় এসেছেন। উনি লেনিনের মত  তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন না । উনার পা ছিল মাটিতে। ফলে এইসব কমিউনিটি অরফানেজ বাতিল করে এই সব সন্তানদের দত্তক নিতে বাধ্য করেন স্টালিন। শুধু তাই না-১৯৩৭ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হয়-আবর্শন করতে গেলে স্পেশাল পারমিশন লাগত-এবং ডিভোর্স আইন ও কঠোর করা হয়। মোদ্দা কথা লেনিনের কমিউনিটি ভিত্তিক বিবাহ এবং সন্তান পালনের বৈপ্লবিক কর্মসূচীকে কবরে পাঠান স্টালিন যেহেতু তা অসংখ্য শিশু মৃত্যুর কারনে, রাষ্ট্রের ভিত টলিয়ে দিচ্ছিল। 

এর পরে আর কোন রাষ্ট্র কমিউনিটি পারেন্টিং নিয়ে পরীক্ষা চালায় নি। শুধু চালিয়েছিলেন গুরু রজনীশ-তার ওরেগাঁও আশ্রমে। যেখানে প্রায় ৭০০ শিশু, ওশো কমিউনিটিতে মানুষ হত। যাতে তাদের বাবা-মারা মুক্ত যৌন জীবন জাপন করতে পারে। কিন্ত সেখানেও ঈর্ষার কারনে, না তাদের ওপেন ম্যারেজ সিস্টেম সফল, না সফল হয়েছে কমিউনিটি পারেন্টিং। 

 ফলে আমরা যে তিমিরে -সেখানেই। মনোগ্যামিশ ম্যারেজই একমাত্র ভরসা!









Thursday, October 20, 2016

মমতার দ্বিতীয় টার্ম

কিছু কিছু বিপ্লব ঘটে নিঃশব্দে। যেমন এবারের রাজ্যসভা নির্বাচন। মমতার দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া, বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ন টার্নিং পয়েন্ট।  কারন এই নির্বাচনে, তৃনমূলের বিরুদ্ধে থাকা সব রাজনৈতিক বিরোধিতা কার্যত শেষ। সিপিএম সখ্যাত সলিলে । কংগ্রেস বহুদিন আগেও প্রান্তিক পার্টি ছিল-এখনো তাই। রাহুলের নেতৃত্বে বিশেষ কিছু হবার না-যদি না তারা প্রশান্ত কিশোরের মতন পেশাদার কাউকে নিয়ে আসে। কিন্ত সেখানেও গেরো-শোনা যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোর দিদির জন্যই কাজ করতে বেশী আগ্রহী এবং দিদিও সেটাই চান! বাংলার বিজেপি একটা বিজে-মানে বিগ জোকস। লেট দেম বি!

  এই নিঃশব্দ বিপ্লব এই জন্যেই যে গত ছমাসে বাংলায় "রাজনৈতিক" ঘটনা, সংঘর্ষ বেশ কম। উস্কানিমূলক রায়োট লাগানোর চেষ্টা অব্যাহত। আমি জুলাই আগষ্টমাসে যখন কোলকাতায় ছিলাম এবং রাজারহাট, নিউটাউনে নতুন অফিস স্পেস খুঁজেছি-দেখলাম বহুপ্রজেক্ট দ্রুত গতিতে শেষ করার দিকে প্রমোটাররা অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছেন কোলকাতায় এবার বহু কোম্পানী আসবে। পশ্চিম বঙ্গে গত চল্লিশ বছরে অনেক শিল্পগোষ্টিই কোন ম্যানুফাকচারিং বাড়ান নি। কারন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ অনূকূলে ছিল না। এখন তাদের অনেকেই বাংলায় এক্সপ্যানশনে আগ্রহী। কারন ম্যানপাওয়ার এখানে এখনো সস্তা।  পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অন্য যেকোন রাজ্যের থেকে অনেক বেশী স্থিতিশীল।  বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত। অনেকগুলো ওভার ব্রিজ হওয়াতে ট্রাফিকেও গতি বেশী।  তুলনামূলক ভাবে ব্যাঙ্গালোর শহরের অবস্থা দিনে দিনে আরো খারাপ হয়েছে।  ভারতের বন্ধ ক্যাপিটাল এখন ব্যাঙ্গালোর। কোলকাতা ভারত বন্ধের দিনেও বিন্দাস খোলা ছিল।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটা রাজ্যকে বদলে দিতে পারে। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে তামিলরা যেভাবে তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের মাধ্যমে তামিলনাডুর প্রভূত উন্নতি করেছে, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বাঙালী জাতিয়তাবাদের উত্থানের মাধ্যমে বাংলাও সেই দিকে এগোচ্ছে।  বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী যারা না-যথা সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-দিল্লীমুখী সব পার্টিকেই বাংলার লোকজন প্রত্যাখান করছে। এটা বহুদিন আগেই হওয়া দরকার ছিল।

  এর মধ্যেও চোরাগোপ্তা সাম্প্রদায়িক শ্রোত আছে-উস্কানি আছে উগ্র উর্দুভাষী মুসলমান এবং উত্তরভারত থেকে আগত হিন্দুদের কাছ থেকে।  এরাই দাঙ্গা বাধায়। দরকার হলে এদেরকে পার্শেল করে বিহারে পাঠানো হোক।



Thursday, October 6, 2016

সিভি রামনের পর ভারতে বিজ্ঞানে কোন নোবেল নেই

প্রতিবার এই নোবেলপক্ষে চাতকের মতন চেয়ে থাকি-কে কে জিতল-তাদের গবেষনার বিষয়টা কি-
বলতে বাধা নেই, প্রতিবারই আবিস্কার করি বিজ্ঞানের জগতে কতকিছু নতুন আবিস্কার হয়ে চলেছে-অনেক কিছুই খোঁজ রাখি নি। এবারের ফিজিক্সের নোবেল টপোলজিক্যাল ফেজ ট্রান্সিশনের ওপরে। এটা অবশ্য আমার এক অধ্যাপক বন্ধুর কাজের দৌলতে গত বছরই জেনেছিলাম। কিন্ত কেমিস্ট্রির নোবেল- আনবিক মোটরের ওপরে-এটা একদম অজানা বিষয়। পড়ে একদম হাঁ থেকে হাম্বল। কিভাবে অনু-পরমানু-ইলেকট্রনগুলি বিশ্বনাচের ছন্দে আমাদের শরীরে কোটি কোটি মোটর গড়ে তুলেছে-যার প্রভাবে কত শতকোটী শরীরবৃত্তীয় কাজ গুলি হয়ে চলেছে দিনরাত অবিরত।

প্রতিবার অপেক্ষা করি ভারত থেকে বিজ্ঞানে অন্তত কেউ নোবেল পাক। অলিম্পিকে ভারত গোল্ডমেডেল পায় না-কারন জেনেটিক গঠন, খাওয়া দাওয়া ঠিক না। বাবা-মায়েদের উৎসাহ নেই। কাঠামো নেই। জেনুইন কারন।

কিন্ত হারে--ভারতে হাইস্কুলে ত অঙ্ক, ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রিতে উৎসাহি ছেলের অভাব নেই। ভাল ভাল শিক্ষক প্রচুর। আই এস সি ব্যঙ্গালোর, টি আই এফ আরের মতন এত ভাল গবেষনাগার আছে। অধ্যাপকদের মাইনেও ত প্রচুর। তবুও কেন সিভি রমনের পরে, কোন নোবেল নেই ভারত থেকে? পরিকাঠামো, যথেষ্ট ভাল শিক্ষক-ছাত্র। তাহলে কি নেই ভারতে?

আমার সাথে অনেকেই একমত হবে না। কিন্ত আমি যেটা দেখছি এর কারন ভারতের স্কুলিং। বিজ্ঞানের আবিস্কার প্রবলেম সলভ করা যতটা, প্রবলেম খুজে পাওয়াও ততটা। ভারতের ছাত্ররা প্রবলেম সলভ করার ক্ষেত্রে এগিয়ে। কিন্ত প্রবলেম খুঁজে পাওয়াটার ক্ষেত্রে যোজন পিছিয়ে। এর মূল কারন ক্রিয়েটিভিটির অভাব।

ক্রিয়েটিভিটি শুধু বিজ্ঞান, অঙ্ক দিয়ে হয় না। কবিতা, আঁকা, গান, লেখা-এগুলোর মধ্যে যে সৌন্দর্য্য আছে, সেই একই সৌন্দর্য্যের সন্ধান খোঁজা এবং উপলদ্ধি প্রকৃতির মধ্যে-একজন সফল বিজ্ঞানীর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার তিনটে জিনিসের জন্য, ভারতের ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ লেভেলে ক্রিয়েটিভিটির অভাব থেকে যাচ্ছে

(১) হিউম্যানিটির সাবজেক্টগুলো গভীরে এবং গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হচ্ছে না-ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি যথা গান, অঙ্কন , গল্প লেখা-যাতে সৃজনশীলটা বাড়ে তাতে গুরুত্ব নেই।

(২) বিজ্ঞানের টিচিং হ্যান্ডসঅন না। ফলে শেখাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক। এই জন্য রিয়ালিটির ( বাস্তবতা) অনুধাবন এবং সমাধানের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য থাকছে

(৩) শুধু শেখা ভালো লাগে বলে শেখা উঠে যাচ্ছে। এবারের ফিজিক্সের নোবেল উইনিয়ার হ্যালডেন টপোলজি শিখেছিলেন, শুধু অঙ্ক করতে ভালবাসেন বলে। কৃষ্টালের ম্যাগনেটিজমের অন্যান্য মডেলগুলো দেখে বুঝেছিলেন-এখানে টপোলজির কেরামতি কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু নতুন মডেল তৈরী করা যাবে। এই যে একটা সেলফ লার্নিং-কারন এই সাবজেক্টটা ভালো লাগে বলে শিখছি। এসব নেই আজকের অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মধ্যে। সবাই পেপার পাবলিকেশনে ব্যস্ত। পেপার পাবলিশ করে কি আর ফান্ডামেন্টাল কাজ হয়?

ভাবা যায়। স্যার রমন নোবেল জিতেছিলেন ১৯৩০ সালে। তখন তার রিসার্চ বরাদ্দ ছিল শুন্য। মাইনের টাকায় ইনস্ট্রুমেন্ট "বানাতে" হত হাওড়ার ওয়ার্কশপে । তার সাগরেদ কে এস কৃষ্ণানের কোন রিসার্চ ফেলোশিপ ছিল না। টিউশনি করে খরচ তুলতেন। হয়ত এসব অনেক কিছুই ছিল না বলে ছিল বিজ্ঞানের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি তীব্র ভালোবাসা। অজানাকে জানার আনন্দ। আর কেনা জানে আনন্দই সৃষ্টির উৎস। এই নিয়ে আমার আগে একটা লেখা আছে (https://mukto-mona.com/Articles/biplab_pal/cv_raman.htm)

আর এখনকার বিজ্ঞানীরা? সবাই পেপার পাবলিকেশনের ইঁদুর দৌড়ে। এতে কি আর বিজ্ঞানের প্রতি তীব্র প্যাশন আসে!!

তবুও আশা রাখি আই এস সি ব্যঙ্গালোর বা টি ওয়াই এফ আর থেকে কোন না কোন দিন কোন ভারতীয় নোবেল পাবে। আর যদি কোন বন্ধু বিজ্ঞানী পেয়ে থাকে ( দুজনের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে) , নাথিং লাইক দ্যাট! আশা ত করাই যায়।

Sunday, October 2, 2016

নিউক্লিয়ার যুদ্ধ-ভয়টা কোথায়?

                                                                   (১)
২৭ শে অক্টবর ১৯৬২। কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস চূড়ান্ত লগ্নে। আমেরিকার ৪০ টি ডেস্ট্র্যয়ার এবং ৪ টি ক্যারিয়ার ঘিরে রেখেছে গোটা কিউবাকে। নেভাল ব্লকেড।  খাবার এবং মেডিসিন ছাড়া অন্যকোন জাহাজকে কিউবাতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্রশ্চেভ মস্কো রেডিওতে বলছেন কেনেডি নেভাল ব্লকেডের মাধ্যমে কমিনিউস্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। অন্যদিকে আমেরিকা বলছে সোভিয়েত ইউনিয়ান কিউবাতে এস এস -৪ ইন্টারমিডিয়েট নিউক্লিয়ার ব্যালাস্টিক মিসাইল স্মাগল করে বসিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি টার্গেট এখন মস্কোর বাটন থেকে দশ মিনিট দূরে। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ানকে কিউবা থেকে নিউক্লিয়ার মিসাইল তুলতে হবে আগে। নইলে আমেরিকান নেভি সম্পূর্ন প্রস্তুত কিউবা আক্রমন করতে। আর তার জন্য যদি সোভিয়েত ইউনিয়ান নিউক্লিয়ার যুদ্ধে যায়-আমেরিকাও পালটা মার দিতে রেডি। বিশেষত তার হাতে ৫০০০ নিউক্লিয়ার ব্যালাস্টিক মিসাইল যেখানে সোভিয়েতের হাতে সেই ৬২ সালে মোটে শ তিনেক মিশাইল । এবং তাদের লক্ষ্যভেদের ক্ষমতাও দুর্বল।

 কিউবার পতন প্রায় আসন্ন। সেই দিনই ফিদেল ক্যাস্ত্রো ক্রসচেভের কাছে নিবেদন পাঠিয়েছেন,  কিউবাতে জমা করা নিউক্লিয়ার মিসাইলগুলি দিয়ে ক্যাপিটালিজমের পিতৃভূমি আমেরিকা ধ্বংস করুক।

I believe the imperialists' aggressiveness is extremely dangerous and if they actually carry out the brutal act of invading Cuba in violation of international law and morality, that would be the moment to eliminate such danger forever through an act of clear legitimate defense, however harsh and terrible the solution would be,--Castro  ,  Telegram to Khruschev , Oct 26

কিউবার প্রতিটি সক্ষম নাগরিককে অস্ত্র তুলে দেওয়া হল কাস্ত্রোর নির্দেশে। আমেরিকান নৌবহর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে কিউবার দিকে। কিউবার দাবী তত প্রবল হচ্ছে যাতে সোভিয়েত ইউনিয়ান নিউক্লিয়ার মিশাইল ছুঁড়ে প্রতিহত করে, বাঁচিয়ে রাখে এই নবীন কমিনিউস্ট রাষ্ট্রকে

Direct aggression against Cuba would mean nuclear war. The Americans speak about such aggression as if they did not know or did not want to accept this fact. I have no doubt they would lose such a war. —Ernesto "Che" Guevara, October 1962

নিউক্লিয়ার যুদ্ধে আসন্ন ধরে নিয়ে আমেরিকার স্কুল কলেজে নিউক্লিয়ার এটাক হলে কি কি করতে হবে তার মহড়া শুরু গোটা আমেরিকা জুরে। কেনেডি বারংবার ভাষন দিচ্ছেন কিভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ান গোটা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ানে ক্রশ্চেভের হোলদোল নেই। তারকাছে ফিদেল এবং কিউবা তার মাস্টার চালের বোরে। কিউবাতে নিউক্লিয়ার মিশাইল পাচার করার  একটাই উদ্দেশ্য। কিউবাকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার সাথে দরাদরি করা-যাতে ইটালি এবং তুরস্কে বসানো আমেরিকান মিসাইল তুলে নিতে বাধ্য করা যায়।

যুদ্ধ প্রায় শুরু, এমন অবস্থায় চারটে সোভিয়েত সাবমেরিনের উদয় হল ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে। এগুলো ডিজেল সাবমেরিন, কিন্ত সাথে নিউক্লিয়ার টর্পেডো। উদ্দেশ্য, যুদ্ধ শুরু হলে, আমেরিকার নেভাল ব্লকেডকে আক্রমন করা।

 কিন্ত ডিজেল সাবমেরিন লুকিয়ে রাখা মুশকিল বিশেষত যেখানে আমেরিকার ১১ টি ডেস্ট্রয়ার সাবমেরিনগুলোকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ডিজেল প্রযুক্তির সমস্যা এই যে, সাবমেরিনগুলোর ব্যাটারি চার্জ করার জন্য জলের ওপরে তিনদিনে একবার উঠতেই হয়। এই নয় যে সোভিয়েত ইউনিয়ানের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ছিল না তখন। কিন্ত কিছু দিন আগেই তাদের প্রথম প্রজন্মের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কে-১৯ এ ঘটেছে বিপুল এক্সিডেন্ট। নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর ব্ল্যাস্ট হওয়া থেকে বেঁচে গেছে। কিন্ত নিয়ে গেছে ৩০ টি সাবমেরিনার সেনার প্রাণ। ফলে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তখন কিছুদিনের জন্য ডিকমিশনড। 

 ওই চারটি সাবমেরিনের একটি বি-৫৯।  দুদিন জলের তিনশো ফুট নিচে। অসহ্য গরম। এই সাবমেরিনগুলো আর্টিক সাগরের প্রবল ঠান্ডায় অভ্যস্থ। ফলে এদের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম বাজে। দুদিন ধরে জলের তলায় প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগেড তাপমাত্রায় ভাজা হচ্ছেন সাবমেরিন সেনারা। জলের রেশন শেষ হয়ে আসছে। কিন্ত ওপরে উঠলেই ধরা পরে যাবে আমেরিকার নেভির কাছে। এদিকে ব্যাটারি চার্জ মাত্র ২০% বাকি। 

আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারগুলো ক্রমাগত ডেপথ চার্জ করে চলেছে। এর যেকোন একটা লাগলেই পঞ্চাশজন সেলরের  সলিল সমাধি নিশ্চিত।

আমেরিকান নেভির হাতে মৃত্যু নিশ্চিত-সাবের ভেতরে সাব হিউমান কন্ডিশন, এমন অবস্থায় সাবের ক্যাপ্টেন ঠিক করলেন, এবার নিউক্লিয়ার টর্পেডো ছাড়া উপায় নেই।  সোভিয়েত প্রোটোকল অনুযায়ী নিউক্লিয়ার মিশাইল সাব থেকে ছাড়ার জন্য তিনজনের সহমত দরকার--ক্যাপ্টেন, পলিটিক্যাল অফিসার এবং সেকন্ড অফিসার ভ্যাসিলি আর্কিপভ। ভ্যাসি আর্কিপভ সেকন্ড অফিসার হলেও, গোটা ফ্লিটের সর্বাধিনায়ক-এবং সেই সূত্রে তিনি ক্যাপ্টেনের বস। 

ক্যাপ্টেন এবং পলিটিক্যাল অফিসার একমত-এত যখন ডেপথ চার্জ মারছে আমেরিকান নেভি, যুদ্ধ নিশ্চয় শুরু হয়ে গেছে। ফলে নিউক্লিয়ার মিসাইল ছাড়া যাক।

ভ্যাসিলি একমত হলেন না। নিউক্লিয়ার পাওয়ার এবং রেডিয়েশন কি ভয়ংকর হতে পারে, তা সাক্ষাত দেখেছেন ভ্যাসিলি কে-১৯ বিস্ফোরনে-যাতে হারিয়েছেন ৩০জন কমরেড।  মস্কোর সাথে  কথা না বলে, নিউক্লিয়ার ট্রিগারে হাত দিতে চাইলেন না ভ্যাসিলি।

 এবং পৃথিবী বেঁচে গেল এক মহাযুদ্ধ থেকে, যার ফলে পৃথিবীর মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত ছিল। 

কিন্ত নিউক্লিয়ার টেনশন শুরু হলে সর্বত্র পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য ভ্যাসিলি আর্কিপভ থাকবেন না । বরং ফিদেল, চে বা রুজভেল্টের মতন রাজনৈতিক লোকজনই ক্ষমতায় সর্বত্র-যারা তাদের রাজনৈতিক গোলকে মানুষের জীবনের থেকেও বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটা ইম্পিয়ারিলিস্টিক,  কমিনিউস্ট, হিন্দু এবং ইসলামিক রাজনীতির হলমার্ক। এবং সেইজন্যই নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আবহ শুরু হওয়া বেশ ভয়ংকর।

                                   (২)


অনেকেই দেখছি লেখা লেখি করছে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে, ভারতে খুব বেশী হলে কিছু লোক মারা যাবে, কিন্ত পাকিস্তান সম্পূর্ন ধ্বংস হবে।

          খুব ভুল ভাবছেন জনগণ। পাকিস্তান নিজেও জানে নিউক্লিয়ার যুদ্ধে তাদের এডভ্যান্টেজ নেই। এবং নেই বলেই এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা বেশ ভয়ংকর -বিশেষত শক্র রাষ্ট্রের নাম যদি হয় পাকিস্তান।

  এর কারন স্যুটকেস নিউক। নিউক্লিয়ার মিশাইল ছুঁড়বে না পাকিস্তান-কারন তাতে তাদের নিজের দেশই ধ্বংস হবে। ভারতের হাতে কোনঠাসা হলে পাকিস্তান নিউক্লিয়ার সন্ত্রাসবাদকে কাজে লাগাবে।

   সুটকেস নিউক বহু পুরাতন প্রযুক্তি।  এটোমিক ডিমোলিশন মিউনিশন বলে মিনি এট্মিক বম্ব প্রযুক্তি নিয়ে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান কোল্ড ওয়ারের সময় বহু আকারে ছোট ছোট এটমিক বম্ব বানিয়েছিল। এর মধ্যে সব থেকে ভয়ংকর সোভিয়েতের তৈরী সুটকেস বম্ব । এগুলোর ওজন মোটে ত্রিশ কিলো-একটা ২০ বাই ২০ ইঞ্চির স্যুটকেস বা ল্যাপটপের সমান সাইজ।  ১ কিলোটনের কাছাকাছি ক্ষমতা। ব্ল্যাস্ট রেডিয়াস তিনশো ফুট। 

  এগুলো শহরের মধ্যে ফাটালে সঙ্গে সঙ্গে ১০০ মিটারের বিল্ডিং ধ্বসে যাবে। এক স্কোয়ার কিলোমিটারের মতন জায়গা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। ধরুন এটা নিউমার্কেট বা হাওড়া স্টেশনে ফাটল। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক লাখ লোকের মৃত্যু অবধারিত। এবং এই বোম ফাটানো কোন ব্যাপার না। কারন একটা হ্যান্ড সুটকেস স্মাগল করা এক দেশ থেকে অন্যদেশে খুবই সহজ।

 যার জন্য ২০০৮ সালে ইউ এনএর ভাষনে এটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান এল বারাদি জানিয়েছিলেন, নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রায় নেই। কিন্ত নিউক্লিয়ার টেটরিজম সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়, তা নিউক্লিয়ার টেটরিজম দিয়েই হবে।

কতটা বাস্তব স্যুটকেস নিউক?  আমেরিকাতে ১৫ টা এমার্জেন্সি কোড আছে। যেমন সাইক্লোন, প্লেগ এপিডেমিক ইত্যাদি। এর মধ্যে নাম্বার -১ কোড নিউক্লিয়ার টেটরিজম। আমেরিকা এই নিয়ে একটা ইন্টালিজেন্স কমিটি বসিয়েছিল। তারা জানিয়েছে স্যুটকেস নিউক স্মাগল আটকানো কঠিন। ফলে স্যুটকেস নিউক কোন না কোন দিন টেররিস্টরা ফাটাবে এটা ধরে নিয়েই, আমেরিকা প্রস্তুতি নিয়েছে। 

ভারতের এই ধরনের কোন প্রস্তুতি নেই। ভারত বিপুল খরচ করেছে মিসাইল ডিটারেন্টে। এগুলো ফালতু খরচ। পাকিস্তান মিশাইল ছুঁড়বে না-কারন তাহলে তাদের মৃত্যুও নিশ্চিত। তারা স্যুটকেস নিউক বানিয়ে টেররিস্টদের দেবে। এদ্দিন দেয় নি, তার কারন সম্ভবত একটাই যে মিলিটান্টরা পাকিস্তানে তা উলটে ফাটাবে না, তার নিশ্চয়তা সম্ভবত নেই। কিন্ত কোনঠাসা হলে এসব বদলাবে। 

শান্তির কোন বিকল্প নেই। ভারত এবং পাকিস্তানের সাধারন লোকজন যাতে নিউক্লিয়ার অস্ত্র মুক্ত, ধর্মের জঞ্জাল মুক্ত , মিলিটারী মুক্ত একটা ভবিষ্যত পায়, সেটাই কাম্য হওয়া উচিত।