Thursday, June 23, 2016

গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

বিশ্বজুরে গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ অব্যাহত। আজ বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার নির্বাচনে এবার সেন্টার থিম - প্রোটেকশনিজম। অদ্ভুত ভাবে হিলারী এবং ট্রাম্প -দুজনেই গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলছেন। যদিও এই এইচ ওয়ান বি ভিসা বিল ক্লিনটনের অবদান। অথচ এখন আমেরিকাতে প্রবল ভাবেই চীন এবং ভার‍ত বিরোধি হাওয়া। ট্রাম্পত সরাসরি বলছে ভারতীয়রা আমেরিকার চাকরি খাচ্ছে। আগে যা ছিল বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-এবার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে-সেটাই মুখ্য ইস্যু। ট্রাম্প জিতবে না-কিন্ত জিতলে ভারতের আই টিতে যারা চাকরি করে-তাদের কপালে দুঃখ আছে।

গ্লোবালাইজেশনের ফলে ভারত এবং চীন লাভবান হয়েছে এই নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত না। ভারতের হোয়াইট কলার আই টি স্যালারি সম্পূর্ন ভাবেই আমেরিকা এবং ইউরোপের বিজনেস থেকেই আসে। কিন্ত আমেরিকার লোকজন মনে করে -ওই চাকরিগুলো তাদের হতে পারত! কিন্ত বাস্তব যদিও অন্যকিছু! কারন আমেরিকাতে বছরে মোটে ৮০,০০০ ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। তাই দিয়ে আমেরিকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনফ্রাস্টাকচার টেকানো মুশকিল। আর আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকাংশই মিলিটারি এবং সরকারি চাকরিতে চলে যায় যেহেতু সেখানে সিটিজেন না হলে চলে না। তাহলে বেসরকারি ক্ষেত্রে আমরা আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ার পাব কোত্থেকে?

প্রোটেকশনিজম বনাম গ্লোবালাইজেশনের যুদ্ধটা নতুন কিছু না। সেই যবে থেকে স্টিম ইঞ্জিন আবিস্কার হয়েছে, তবে থেকেই চলছে। কার্ল মার্ক্স এবং আব্রাহাম লিঙ্কনের লেখাতে প্রচুর রেফারেন্স পাবেন-কিভাবে সেকালও বৃটেন এবং আমেরিকাতে শ্রমিকরা অন্যদেশের লো-কস্ট শ্রম নিয়ে ক্রদ্ধ ছিল। মার্ক্স গ্লোবালাইজেশনের পক্ষে ছিলেন। কারন তার বক্তব্য ছিল- গ্লোবালাইজেশন না হলে ইন্টারন্যাশানালিজম এবং ক্যাপিটালিজমের পূর্ন বিকাশ হবে না। আর সেটা না হলে সমাজতন্ত্র আসা অসম্ভব। অন্যদিকে আব্রাহাম লিঙ্কন, প্রোটেকশনিজমের পক্ষে ছিলেন। উনার আমলে ইউরোপ থেকে আসা অনেক দ্রব্যেই প্রচুর ট্যারিফ বসানো হয়। আমি অবাক হলাম, কালকে নিউ ইয়ার্কে ট্রাম্প আব্রাহাম লিঙ্কনের কোট তুলে দিলেন প্রোটেকশনিজমের পক্ষে।

মুশকিলটা অন্য জায়গায়। এই গ্লোবালাইজেশনের ফলে আমেরিকার ধনী শ্রেনী আরো ধনী হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনী সম্পূর্ন ধ্বংসের মুখে।

অন্যদিক ও আছে। অটোমেশন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দৌলতে সস্তার লেবার এখন অটোমেটশনের আওতাই। খুব অবাক শোনালেও-আমেরিকার অনেক কোম্পানী, আর এন্ডি ভারত থেকে করালেও, ম্যানুফ্যাকচারিং আমেরিকা থেকেই করাচ্ছে । কারন আর এন্ডি ম্যানপাওয়ার ইন্টেনিসভ কিন্ত ম্যানুফ্যাকচারিং এখন অটোমেটেড। চিনেও ম্যানুফাকচারিং এর ব্যপক অটোমেশন চলছে। ভারত অনেক পিছিয়ে-কিন্ত ভারতেও শ্রমিক শ্রেনী সংকুচিত হবে ক্রমশ আধুনিক যন্ত্রের কাছে।

সস্তার লেবারের জন্য যে গ্লোবালাইজেশন আমরা দেখেছি - তার গঙ্গাপ্রাপ্তি এখন নিশ্চিত । এই যে এত কল সেন্টার-এগুলো আগামী বিশ বছরে সব বন্ধ হবে-কারন উন্নত এ আই, কাস্টমার সার্ভিসের প্রশ্নের উত্তর দেবে। কিন্ত হাইস্কিল লেবারের গ্লোবালাইজেশন অব্যাহত থাকবে। সেটা আটকানো যাবে না।

Saturday, June 11, 2016

আমেরিকান নির্বাচন ২০১৬ - ডেমোক্রাটিক প্রাইমারী

আমেরিকান নির্বাচন ২০১৬ - ডেমোক্রাটিক প্রাইমারী  
                                                                                  (১)        
 ২০১২ সালে যখন ক্লিনটন স্টেট সেক্ট্রেটারী থেকে পদত্যাগ করলেন, তখনই আন্দাজ ছিল, এইচ আর সি, সম্ভবত ২০১৬ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। অবশ্য ২০০৮ সালে যখন, ওবামার হাতে প্রাইমারীতে পরাজিত হয়ে, হিলারী প্রাইমারী রেস থেকে সরে দাঁড়ালেন সেদিন অনেকেই আমরা ভেবেছিলাম, প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে হিলারী ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হওয়া আমেরিকার জন্য সব থেকে ভাল হবে।

   ২০০৮ সালের প্রাইমারীতেও আমি হিলারী ভলিউন্টিউয়ার ছিলাম। সেবার হিলারী ওবামার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কোন সন্দেহ নেই ওবামাই ছিলেন  সেরা ক্যান্ডিডেট। হিলারী এবং ওবামার টিমের সদস্যদের মিলিয়ে দেবার জন্য ২০০৮ সালের জুন মাসে ডেমোক্রাটিক পার্টির হেডকোয়াটারে একটি বিশাল সান্ধ্যপার্টির আয়োজন করেছিল পার্টি কমিটি। আমার সৌভাগ্য, ইন্ডিয়ান আউটরিচ কমিটির সদস্য হিসাবে সেদিন পার্টিতে ছিলাম।  হিলারী ভক্ত অনেকের সাথেই আলাপ হয় সেদিন। যাদের অধিকাংশই আবার ফেমিনিস্ট। আমরা সবাই আশা করেছিলাম ২০১৬ তে এই দিন আসবে যেদিন ওবামার পরে হিলারী ডেমোক্রাটিক পার্টির নমিনেশন পাবেন।

 ২০১৩ সালেই আমি প্রথম খবর পাই হিলারী ২০১৬ তে লড়ছেন। তখন ক্যাপিটালে এই ব্যপারে কানাঘুঁশো চলছে। এর মধ্যে আমাদের এক আই আই টি প্রাত্তনী খবরটা দিয়েছিলেন। উনি এখানে একজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং হিলারী ঘনিষ্ট ডোনার। ২০১৩ সালেই হিলারী তার ঘনিষ্ট ডোনারদের ডেকে নিজের সংগঠন গোপনে মজবুত করছিলেন। ২০১৫ সালে তার প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পেইন ঘোষনা ছিল সময়ের অপেক্ষা।

  ইনফ্যাক্ট বিল ক্লিনটনের থেকেও অনেক সফল আইনজীবি ছিলেন হিলারী ক্লিনটন। বিল ক্লিনটনের থেকে তার পলিটিক্যাল ট্রাক রেকর্ড ও ভাল। কিন্ত আমেরিকাতেও পলিটিক্সে মেয়েদের গ্লাস সিলিং ভাঙাটা সত্যিই আছে। আপনারা ১৯৬৯ সাল থেকে হিলারীর লেকচার শুনতে পারেন। শুনলেই বোঝা যাবে হিলারী ক্লিনটন অনেক বেশী ডিটেলড ওরিয়েন্টেড এবং চিন্তা করেই বক্তব্য রাখতে ভালবাসেন। ২০০৮ সালেই তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্ত সেই বছরেই উত্থান প্রেসিডেন্ট ওবামার। কোন সন্দেহ নেই প্রেসিডেন্ট ওবামার মতন রাজনীতিবিদ শতাব্দিতে দু একটিই জন্মায়। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন অথবা থমাস জেফারসনের লীগেই স্থান হবে বারাক ওবামার।


                         (২)

 ২০১৬ তে হিলারী নমিনেশন কেক ওয়াক হবে -এটাই ভেবেছিল আমেরিকা। আমিও ব্যতিক্রম নই।

কিন্ত বাধ সাধলেন ভার্মন্টের সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। উনি কিন্ত ডেমোক্রাট নন। ২০১৫ সালেও ডেমোক্রাটিক পার্টির সদস্য ছিলেন না। কিন্ত প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট হওয়ার জন্য ২০১৫ সালে উনি পার্টি মেম্বারশিপ নেন।

  অন্যদিকে হিলারী প্রায় ৩৫ বছর ধরে ডেমোক্রাটিক পার্টির অন্যতম মূল স্তম্ভ!  সুতরাং লড়াই হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অন্যদিকে বার্নিও ওবামার মতন হার্ভাড শিক্ষিত ক্যালিবান কেও নন। ব্যাচেলর ডিগ্রি পাশ করার পর দশ বছর চাকরি পান নি। কখনো ছুতোর মিস্ত্রির কাজ, কখনো সাংবাদিক, কখনো এটা ওটা করে সংসার চালিয়েছেন।  ট্রেলার বা বস্তির ঘরে থাকতেন। ফলে প্রথম বিয়ে টেকে নি। দশ বছর বাদে তার প্রথম স্টেবল জব, মিউনিসিপালিটির কাউন্সিলর।

 কিন্ত বার্নির এই নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র ব্যাকগ্রাউন্ডই এডভান্টেজ হয়ে দাঁড়াল।  আমেরিকাতে বড়লোকরা প্রতিদিন আরো বেশী ধন সম্পত্তির মালিক হচ্ছে, অথচ গরীবেরা আরো বেশী দারিদ্রের সম্মুখীন। মধ্যবিত্তরা আরো বেশী গরীব হচ্ছে।  এমন অবস্থা- ল কোম্পানিতে কাজ করা একজন সাধারন চাকুরিজীবি যদি এই মাসে গাড়ীর কোন জিনিস সাড়ায়, দুমাস তাকে অপেক্ষা করতে হয় ডেন্টিস্ট দেখাতে । কারন টাকা নেই। সবার সংসার চলছে টেনেটুনে। ওপরে চাকচিক্য-তলায় একদম ঘুনে খাওয়া অর্থনৈতিক অবস্থা অধিকাংশ ফ্যামিলির।

  ফলে চাপা ক্ষোভ ছিলই এস্টব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধে। সেটাকে সম্বল করে গড়ে উঠল বার্নি বা বাস্ট মুভমেন্ট। বার্নি বোঝাতে সক্ষম হলেন-এই গণতন্ত্র আসলেই ব্যবসায়ীদের কাছে চুরি হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র। যা শ্রমিকদের কথা ভাবে না। কাজ পাচার করে দেয় ভারত আর চীনে। বেকার বসে থাকে আমেরিকার দক্ষ শ্রমিক।

কিন্ত বার্নি অনেকগুলো স্ট্রাটেজিক মিসটেক করেছেন। ডেমোক্রাটিক টিকিটে লড়ার মূল সমস্য হচ্ছে না উনি , না উনার সাপোর্টারদের অনেকে ডেমোক্রাটিক পার্টির রেজিস্টারড সাপোর্টার। ডেমোক্রাটিক পার্টিতে বাম বেস ১৫-৩০%। দক্ষিনের রাজ্যগুলিতে আরো কম। যেখানে হিলারি ক্লিনটন হচ্ছেন পার্টি ডার্লিং। এক্ষেত্রে উনার উচিত ছিল কালো, ল্যাটিনো এবং এশিয়ানদের মধ্যে ঢোকা। সেটা উনি করেন নি। উনি আমেরিকাতে ইনকাম অসাম্য নিয়েই লেজার ফোকাসড ছিলেন। ফলে ছোট ছোট রাজ্যগুলি যা সাদা চামড়ার লোক অধ্যুশিত-সেগুলো বাদ দিলে কোন বড় রাজ্যগুলিতে-যেখানে এশিয়ান বা ল্যাটিনো ভোট বেশী-সেখানে গোহারা হেরেছেন বার্নি।

                                                     (3)


এখানে নানান রাজ্যে প্রাইমারীর নিয়ম আলাদা।  মূলত তিনটে টাইপের প্রাইমারী হয়-ক্লোজড, ওপেন এবং কক্কাস।  ক্লোজড প্রাইমারীতে শুধু ডেমোক্রাটিক পার্টির কার্ড হোল্ডাররাই ভোট দিতে পারেন। ওপেন প্রাইমারীর ক্ষেত্রে যারা ডেমোক্রাটিক পার্টির কার্ড হোল্ডার না, তারাও  ভোট দিতে পারেন। কক্কাসের ক্ষেত্রে সবাইকে উপস্থিত থেকে, একসাথে ভোটিং হয়। ফলে কক্কাসে সব থেকে কম টার্ন আউট।

  এখানে বার্নির সাপোর্ট বেস হচ্ছে আমেরিকান বামেরা। যাদের বাধ্য হয়ে ডেমোক্রাটিক পার্টিতে থাকতে হয়-কিন্ত পার্টির মধ্যে এদের কেউ পাত্তা দেয় না। কারন ডেমোক্রাটিক পার্টি একটি সেন্ট্রিস্ট প্রগ্রেসিভ পার্ট। এই নিয়ে আমেরিকান বামেদের বিশাল ক্ষোভ। যে তাদের কোন রাজনৈতিক ভয়েস নেই। এদিকে যে আলাদা পার্টি করবে, তার ও উপায় নেই। কারন ডেমোক্ট্রাটরাই কষ্টে শিষ্টে রিপাবলিকানদের সাথে জেতে-কংগ্রেস এবং সেনেটে রক্ষনশীল রিপাবলিকানদেরই প্রাধান্য। এর মধ্যে বামেরা যদি বেড়িয়ে আসে-আরোই কোথাও পাত্তা পাবে না।

 ফলে এবার বার্নিকে ডেমোক্রাটিক নমিনি করার জন্য আমেরিকান বামেরা অনেক খেটেছে। যদিও  তা সত্ত্বেও বার্নি ভালভাবেই হেরেছে!!  এর মূল কারন


  •                       আমেরিকাতে ত্রীস্তরীয় সিস্টেম। এখানে আইন বদলাতে গেলে কংগ্রেস এবং সেনেটের সাহায্য লাগে। সেখানে ডেমোক্রাটরা স ংখ্যলঘু। সুতরাং শুধু প্রেসিডেন্ট হলেই হবে না, আইন করতে কংগ্রেস এবং সেনেটেও জেতা দরকার। হিলারী ক্লিনটন এই ব্যপারে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। উনি উনার ক্যম্পেনের টাকা থেকে পার্টি ফান্ডে টাকা দিয়েছেন যারা সেনেট এবং কংগ্রেসে দাঁড়াচ্ছে। ফলে পার্টির সংগঠন হিলারীর পাশে ছিল। বার্নি তা করেন নি। বরং বার্নি ক্রমাগত ডিমোক্রাটিক পার্টিকেই গালাগাল করছিলেন তার হারের জন্য।  এতে বার্নি এবং ডেমোক্রাট মেশিনারীর মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। 
  •  এর ফল হয়েছে এই যে ক্লোজড প্রাইমারী যেসব রাজ্যে হয়েছে,- অর্থাৎ যেখানে শুধু ডেমোক্রাটদের ভোটাধিকার ছিল,  বার্নি শ্রেফ উড়ে গেছে। এবং এটাই বৃহৎ রাজ্যের সিস্টেম। ফলে ছোট ছোট রাজ্য যেখানে কক্কাস হয়-সেখানে প্রায় সব জিতেও বার্নির কোন লাভ হয় নি।
  •  আরেকটা অবশ্যই মেয়েদের এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোট-যা হিলারীর পক্ষে। কালো মানুষদের জন্য আইনজীবি হিলারী লড়ছেন সেই ১৯৬৯ সাল থেকে। তার ইতিহাস দীর্ঘ। সুতরাং তারা হিলারীর পক্ষে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক।
  •  অন্যদিকে ফেমিনিস্টদের ভোটও হিলারী পেয়েছেন। 
  •  বার্নির দিকে ছিল সুধু কিছু তরুন যুবক যুবতী এবং বয়স্ক সাদা পুরুষ লিব্যারালরা।
 মাঝখান থেকে যেটা হল, সেটা অনেকটা মমতার হাতে সিপিএমের ধ্বংশের মতন। ফেসবুকে, সর্বত্র বার্নি সাপোর্টাররা দাপিয়ে গেল  তাদের অতি খাজামার্কা বস্তাপচা বাম বিপ্লব নিয়ে-দেখে মনে হত হিলারির কোন সাপোর্ট বেসই নেই। রাস্তাঘাট, বাড়ি, ফেসবুক সর্বত্রই ঝড় তুলেছিলেন বার্নি সমর্থকরা। কিন্ত ভোটবাক্সে সব কটা বড় রাজ্যেই গোহারা হেরেছেন বার্নি হিলারীর কাছে।  আমি ভোট দিতে গিয়ে দেখি, ভোটকেন্দ্রে হিলারীর কোন প্ল্যাকার্ড নেই-কেউ ক্যানভাস ও করছে না। অথচ হিলারী কিন্ত মেরিল্যান্ডে বার্নির থেকে দ্বিগুন ভোটে জিতেছেন!

 বার্নির সাথে হিলারীর যেকটি বিতর্ক হয়েছে সবকটিতে বার্নি ধেরিয়েছিলেন-এবং সব প্রশ্নের উত্তরেই সেই গরুর রচনা ধণের বৈষম্যে এসে ঠেকত। এমনকি মেজর লেবার ইউনিয়ানগুলিও হিলারীকেই এনডোর্স করেছে। 

 তবে বার্নির  লাভের লাভ হচ্ছে এই যে বার্নি হিলারিকে একদম মধ্যপ ন্থা থেকে বামে ঠেলেছেন। ওয়ালস্ট্রিট, পলিটিক্যালি রিফর্ম এসব কিছুই হিলারির এজেন্ডাতে ঢুকেছে। 


                                                  (৪)

  এর মধ্যে আরেকজন বড় খেলোয়ার এলিজাবেথ ওয়ারেন, ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর। উনি আমেরিকার বাম প্রগেসিভ সেকশনের ডার্লিং। হার্ভাডের আইনের অধ্যাপক, অত্যন্ত ভাল বক্তা-প্রতিপক্ষকে কচুকাটা করতে তিনি সিদ্ধহস্ত।  অনেকেই চেয়েছিলেন, বার্নির বদলে ওয়ারেন পার্থী হোন। আসলে সেটা হলে হয়ত, হিলারী হারতেও পারতেন। কিন্ত ওয়ারেন রিক্স নেন নি। সম্ভবত লিজ ওয়ারেন জানতেন বার্নি বা হিলারী যেই জিতুক না কেন, ভিপির পোষ্টটা তিনিই পাবেন।

 এলিজাবেথ ওয়ারেন গোটা প্রাইমারীর সময় সাইডলাইনে বসে খেলা দেখলেন। বার্নির সাপোর্টবেসের পুরোটাই লিজ ওয়ারেনের ফ্যানবেস-কিন্ত তবুও তিনি বার্নির পক্ষে গেলে না। গোটা ডেমোক্রাটিক পার্টিতে উনিই একমাত্র সেনেটর যনি বার্নি-হিলারী যুদ্ধে নিরেপেক্ষ ছিলেন।

 হিলারী ক্যালিফোর্নিয়া জেতা মাত্র, যখন বার্নি সম্পূর্ন ভাবেই বিধ্বস্ত, লিজ ওয়ারেন হিলারী ক্যাম্পে যোগ দিলেন। ওই একই দিনে আমেরিকান কন্সটিউশন সোসাইটির মিটিং এ, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রায় কচুকাটা করলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ডেমোক্রাটিক বেস চাইছে লিজ ওয়ারেন ক্লিনটনের রানিং মেট হৌক। কারন তাতে বার্নির বিধ্বস্ত সমর্থকদেরকে হিলারী ক্যাম্পে টানা যাবে। সাথে সাথে ট্রাম্পকে ধ্বংস করার কাজ হিলারীকে করতে হবে না। ওটা লিজ ওয়ারেনই পারবেন ভাল।

 তবে সেই হিসাবটা ভুল। বার্নির সমর্থকদের মোটে ১/৩ ভাগ, খোদ ডেমোক্রাটিক পার্টির লোক। বাকি ২/৩ অংশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট।  ওই স্বাধীন ভোটাররা হিলারীকে ভোট দিতে রাজী না। খুব সম্ভবত ঘরে বসে থাকবে বা গ্রীন পার্টিকে ভোট দেবে। আবার এই স্বাধীনভোটারদের একাংশ আবার লিজ ওয়ারেনের ফ্যান। লিজ ওয়ারেন হিলারীর রানিং মেট হলে, এই অংশটার ভোট হিলারী পাবেন।

 কিন্ত তাতে অন্য আসুবিধা। ট্রাম্পের প্রতি ঘৃণাতে অনেক রিপাবলিকান হিলারীকে ভোট দিতে চান। জুলিয়ান কাস্ট্রোর মতন সেন্ট্রিস্ট রানিংমেট হলে, হিলারী রিপাবলিকান পার্টির ভোট ও পাবেন। লিজ ওয়ারেন হলে সেটা হবে না।  যেমন আজকেই মার্ক কিউবান বলেইদিয়েছেন লিজ ওয়ারেন রানিংমেট হলে উনি হিলারীকে ছেরে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

 তবে ডেমোক্রাটিক পার্টি থেকে লিজ ওয়ারেনকে ভিপি করার চাপ বাড়ছে। ডেমোক্রাটিক সেনেট নেতা, হ্যারি রিড পরিস্কার ভাবেই বলেছেন, লিজ ওয়ারেনকেই ভিপি করা হৌক।

 কিন্ত একই সাথেই আমেরিকার মাথায় দুজন মহিলা জনগন কেমন নেবে কেউ জানে না। সাদা পুরুষদের ২০% ভোট ও হিলারীর সাথে নেই!  তাছাড়া হিলারী বাস্তববাদি সেন্ট্রিস্ট, লিজ ওয়ারেন আদর্শবাদি বামপন্থী। তাদের দুজনের কেমিস্ট্রি কেমন খাবে কে জানে।

                       (৫)

 এবার আসি রিপাবলিকান পার্থী ট্রাম্পের প্রসঙ্গে। কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প?

    এক কথায় একজন অসৎ বিলিয়নার  ব্যবসায়ী।  কিন্ত ধুরন্ধর এবং চালাক। পালস বোঝেন। মিডিয়া বিজনেসে থাকায়, জনগণ কি খেতে চাইছে, সেটা ধরেন অনেক আগে।

 অনেকেই ট্রাম্পকে মুসলমান বিদ্বেশী বর্ণবাদি বলছেন। কিন্ত আমার ধারনা ট্রাম্প ওসব কিছুই না। পাতি মুসলমান বিদ্বেশ এবং বর্ণবাদি বিদ্বেশকে নিজের ভোটব্যাঙ্ক বানিয়েছেন।

 তবে ট্রাম্প এখন গভীর গাড্ডায়। ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয় খুলে জালি ডিগ্রি দিয়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রীর টাকা মেরেছিলেন। তারা এখন ২২০ মিলিয়ান ডলারের ক্ষতিপূরন চেয়ে মামলা করেছে। এবং সেই মামলায় একজন মেক্সিকান আমেরিকান জাজ কিউরিও-যিনি মেক্সিকান ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়াইতে একজন আমেরিকান হিরোও বটে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কেস চালাতে দিয়েছেন।  ট্রাম্পের ধারনা কিউরিও মেক্সিকান আমেরিকান বলে ইচ্ছা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। রিপাবলিকান কংগ্রেসের স্পীকার পল রায়ান পর্যন্ত এটাকে ট্রাম্পের রেসিস্ট কমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন।

 ইনফ্যাক্ট ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রাইমারী জিতেছেন বটে-কিন্ত সাথে সাথে গোটা রিপাবলিকান পার্টিকে ক্রাইসিসে ফেলেছেন।  সবাই তার থেকে দূরে থাকতে চাইছে পাছে রেসিস্ট ট্যাগ লেগে গেলে ভোট পেতে অসুবিধা হয়।

 ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই বিদ্রোহ আসন্ন বলেই আমার বিশ্বাস। আগের বারের পার্থী মিট রমনি, বুশ পত্নী লরা বুশ সবাই রিপাবলিকান পার্টিকেই দুশছেন। খুব সম্ভবত, রিপাবলিকান পার্টি, মিট রমনিকেই আবার পার্থী দাঁড় করাতে পারে যদি ডেলিগেটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলে যান ট্রাম্পের বেজনির রেসিস্ট  কার্যকলাপ এবং অসাধু ব্যবসার কারন দেখিয়ে।

 মোদ্দা কথা এমন ঘটনাবহুল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগে দেখা যায় নি। যেখানে প্রতিটা দিনেই নতুন কিছু ঘটছে। কি হবে বলা মুশকিল।









   


















Monday, June 6, 2016

রিজন র‍্যালীতে বন্যা আহমেদের কিনোট এড্রেস

রিজন র‍্যালি আমেরিকাতে সব ধরনের ধর্ম নিরেপেক্ষ এবং নাস্তিক সংগঠনদের যৌথ র‍্যালি। প্রায় চারদিন ধরে ( ২ থেকে ৫ই জুন) ক্যাপিটল হিল সংলগ্ন এলাকায়, নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে  মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য যারা লড়ে যাচ্ছেন, তারা সবাই একে অপরকে জানার সুযোগ পেলেন। সাথে সাথে প্রফেসর লরেন্স ক্রাউস, বিল নায়িই, ক্যারোলিন পোরকো, জুলিয়া সুইনি, পেন জিলেট, এন্থনি পিন, জেমস র্যন্ডি, আয়ান হ্যারিসদের সাথে সাক্ষাত দেখাও বিরল অভিজ্ঞতা অনেকের কাছে। মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই এই যে আমেরিকার রাজনীতিতে নাস্তিকদের প্রভাব বাড়ানো। আমেরিকাতে এখন ২১% লোক কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং গত দুই দশকে এই সংখ্যাটা দ্বিগুন হয়েছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে আমেরিকাতে নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু হবে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। কারন সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানির মতন উন্নত সভ্যদেশগুলিতে বহুদিন আগেই নাস্তিকরা সংখ্যাগুরু।  যে দেশগুলিতে এখনো কোন ধর্মালম্বি লোকেরা সংখ্যাগুরু-সেটা ইসলাম বা হিন্দু বা খ্রীষ্ঠান যা কিছুই হোক না কেন-সেই দেশটি  যথেষ্ট সভ্য এবং মানবিক হবে না। কারন ধর্মের রাজনীতি তাদের পেছনে টানবে। এটা আমেরিকার জন্যও সত্য। এখানকার ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল খ্রীষ্ঠানরা সর্বদাই দেশটাকে পেছনে টানতে বদ্ধপরিকর।  ইনফ্যাক্ট এটা নিয়ে সব থেকে বেশী কাজ করছে ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিওন ফাউন্ডেশন। যারা আমেরিকার সংবিধানের ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট যা একই সাথে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও ধর্ম নিরেপেক্ষতার রক্ষাকবচ ( Religion and Expression. Congress shall make no law respecting an establishment of religion, or prohibiting the free exercise thereof; or abridging the freedom of speech, or of the press; or the right of the people peaceably to assemble, and to petition the Government for a redress of grievances )।  

              আমি যতগুলো বক্তব্য শুনলাম এর মধ্যে এফ এফ আর এফের কার্যকলাপই সব থেকে বেশী উৎসাহব্যঞ্জক-যারা সংবিধানিক রক্ষাকবচ হাতে নিয়ে একাধিক রাজ্যসরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছে-যেখানেই আমেরিকার রাইট ঊইং রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রীয় বা শিক্ষাক্ষেত্রে খ্রীষ্ঠান ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করছে। এবং দরকার হলে আইনি লড়াই এ নামছে। ভারত এবং বাংলাদেশে অবশ্য সংবিধান, আইন সবই জোলো। ফলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি-সবটাই ধর্মের বিষ্ঠা সেবনেই সিদ্ধ। কিন্ত আইডিয়া পাওয়া গেল। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে, রাষ্ট্রকে ধর্ম মুক্ত করতে গেলে আইনি লড়াই এ নামতেই হবে। ভারতে এটা যদিও বা সম্ভব-বাংলাদেশে তাও না। আইনজীবিকেই মেরে দেবে।

           ডেভ সিলভ্যারম্যানের ফায়ার ব্রান্ড এথিজম বা মিলিটান্ট এথিজিম নিয়ে মারকাটারি লেকচার শোনার অভিজ্ঞতা হল। ডেভ আমেরিকান এথেইস্ট এসোশিয়ানের প্রেসিডেন্ট। উনার বক্তব্য ধর্মীয় ব্যাক্তিরা যেভাবে নিজেদের ধর্মের প্রচার করে এথিস্টদের ও উচিত, সর্বত্র নিজেদের মতাদর্শকে জাহির করা-অবশ্যি যুক্তির মাধ্যমে। ডেভকে আর কে বোঝাবে-ওসব আমেরিকাতে সম্ভব। বাংলাদেশে করলে সরাসরি চাপাতির তলায়।  ইনফ্যাক্ট আমেরিকাতেও সম্ভব কি না-তাই নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।  

   এই র‍্যালির একটা মূল থিম-আমরা যারা ধর্ম এবং ইশ্বরে বিশ্বাস করিনা-তাদের সগর্বে এটা সর্বত্র বলতে হবে-লিখতে হবে। ভয়েস মাস্ট বি হার্ড!! কারন অধিকাংশ নাস্তিকই শামুকের মতন নিজেদের লুকিয়ে রাখে -নিজের নিধার্মিক বিশ্বাসের কথা পরিবার, বন্ধু,সমাজকে জানাতে ভয় পায়। পাছে ধর্ম বিশ্বাসের জন্য বিচ্ছিন্নতায় না ভুগতে হয়। 

  এসব কিছুই ছাপিয়ে গেল বন্যার কিনোট এড্রেসে। বন্যা শুরু করলো, পাঁচই জুনে ঘটা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদি ঘটনায় -পুলিশ সুপার বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ইসলামিক জঙ্গীদের হাতে নিহত। তার অপরাধ, তার স্বামী শক্ত হাতে জঙ্গী দমন করছিলেন। বন্যা তথ্যের মাধ্যমে আমেরিকার প্রভাবশালী প্রগতিশীল শ্রোতাদের কাছে আস্তে আস্তে তুলে ধরলেন জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। সাথে সাথে এটাও জানালেন কিভাবে বর্তমান সরকার জঙ্গীদমনের বদলে প্রগতিশীল ব্লগারদেরই জেলে ভরার ব্যবস্থা করেছে। কেন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার আসলে ইসলামিক জঙ্গীদের মদতদাতা। 

  সাথে বন্যার ভাষনে আস্তে আস্তে উঠে এল কিভাবে ধর্ম, সাম্রাজ্যবাদ এবং ধনতান্ত্রিক কাঠামো একসাথে হাত ধরে কাজ করছে-মানুষের বিরুদ্ধে। ধর্মটাই শুধু সমস্যা না। সাথে সাথে পরিবেশ বিপর্যয়, সাম্রাজ্যবাদি উচ্চাশা, তেলের জন্য যুদ্ধ-এসব কিছুই উগ্র ধর্মান্ধদের সাথে যুক্ত হয়ে পৃথিবী এবং সভ্যতাকে ধ্বংশ করতে উদ্যোত।


 বন্যার ভাষন শেষে, পাঁচ মিনিট ধরে চললো স্টান্ডিং অভেশন। হল ভর্তি সবাই দাঁড়িয়ে ক্রমাগত হাততালি দিয়ে চলেছে-শ্রোতারা এতটাই বিমুগ্ধ।  এটা আমার জন্যেও বিরল অভিজ্ঞতা। বক্তব্যর শেষে বন্যার সাথে কথা বলার জন্য বিরাট লাইন লেগে গেল। সবাই ওর সাথে কথা বলতে চাইছে, নইলে সেলফি তুলতে চাইছে! যা বুঝলাম আমদের বন্যা এখন, আমেরিকাতে সাউথ এশিয়ান ভয়েস অব রিজন!! আমরা মুক্তমনার পক্ষ থেকে সবাই ওর জন্যে গর্বিত। 


 র‍্যালিতে এবং পরে ডিনারের গিয়ে পরিচয় হল ইরানিয়ান ফেমিনিস্ট মারিয়াম নামাজির সাথে।  এই হচ্ছে সেই মারিয়াম যিনি শরিয়ার প্রতিবাদে নগ্ন হয়ে নিজেদের দেহের ওপরে লিখেছিলেন "নো শরিয়া"। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন মারিয়াম। এখন শরিয়া বিরোধি ইন্টারনেট রেডিও চালান-যা ইরানের যুবতীদের মধ্যে খুব প্রিয়। 

 যা বুঝলাম বাংলাদেশ এবং ভারতের নাস্তিকদের পলিটীক্যাল প্ল্যাটফর্ম দরকার। অর্গানাইজেশন দরকার। 

            













Saturday, June 4, 2016

জীবনের উদ্দেশ্য-এবং বিধেয়---

জীবনের সবথেকে বড় রহস্য-জীবনের উদ্দেশ্য নেই-কিন্ত আবার উদ্দেশ্য বা গোল না থাকলে একটা দিন ও বাঁচা সম্ভব না। কারন আমাদের প্রতিটা একশনের পেছনেই ইঞ্জিন হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য। এটা খুব গভীরভাবে না ভাবলে লোকে বোঝে না।

জীবনের একটা গোল, এবং তারজন্য কম্পিটীশন থাকবেই। না হলে আবার জীবনটা একটা উদ্দেশ্যহীন ভবঘুরে হবে। সেটা খুব বাজে কিছু না-যদি তার থেকে কবি সাহিত্যিকের জন্ম হয়। কিন্ত বাস্তব হচ্ছে, এদের অধিকাংশরই জীবন শেষ হয় ড্রাগে এবং আত্মহত্যায়। সেটাও কাম্য না।

এই জন্য সুস্থজীবনের জন্য সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন-সামনে একটা গোল ঠিক করা। মুশকিল হচ্ছে অধিকাংশের সামনেই সেটা নেই। সবাই জানে প্রোগ্রামার থেকে সিনিয়ার প্রোগ্রামার, সেখান থেকে ডিরেক্টর, ভিপি-চাকরিতে প্রমোশন। গাড়ীর মডেল আপগ্রেড, বাড়ির সাইজ। এসব বস্তুবাদি লক্ষ্যেই ছুটে চলেছে সবাই।

বস্তুবাদি সাফল্যকে জীবনে উদ্দেশ্য করার কারন নিরাপত্তা। সবাই চাইছে খাদ্য,সেক্স, মেডিক্যাল, বাসস্থানের নিরাপত্তা। এই ক্যাপিটালিস্ট সমাজে টাকা ছাড়া কিছুইত মেলে না!!

একটা লেভেলে এই নিরাপত্তার দরকারকে অস্বীকার করি না-কিন্ত এগুলোকে জীবনের উদ্দেশ্য করলে মুশকিল। সুস্থ খাদ্যের দরকার সবারই-কিন্ত খাবার নামে দামী রেস্টুরেন্টের পেছনে টাকা ওড়ানো মানে আস্তে আস্তে জীবনের উদ্দেশ্যটাকে সেই বস্তুবাদি বস্তার বান্ডিলে ঠেলা।
যা মৃত্যুতেই শেষ। অনেক ডাক্তারই এটা জানেন। একজন লোক মরার আগে, প্রথমে সেই একটা অবিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে যায়-যে সত্যিই মরতে চলেছে? একটা প্যানিকিং লেগে থাকে মৃত্যপথযাত্রীর চোখে মুখে। আস্তে আস্তে যখন আর মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে পারে না-তখন ছেড়ে দেয়। মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে বোঝে ওটাই আসল নিয়তি! সবাইত আর রবীন্দ্রনাথ হয় না-যে গীতাঞ্জলী লিখে অপেক্ষা করে সেই নিশ্চিত নিয়তির দিকে।

বরং জীবনের উদ্দেশ্য বা গোল হোক-কে কত সমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারে-তার প্রতিযোগিতায়। কে কজন গরীব ছাত্রকে স্পনসর করতে পারল। কে কজন বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখাশোনা করতে পারল। এনজিও খুলে রাস্তা পরিস্কার করার প্রতিযোগিতা হৌক পাড়ায় পাড়ায়। কে কটা মিস্টি প্রেম করতে পারল, তার প্রতিযোগিতা হৌক।

বলবেন চ্যারিটিতেও প্রতিযোগিতা? নিশ্চয় দরকার। এই একটা প্রতিযোগিতায় যদি বন্ধু বা অন্যের কাছে হেরেও যাই-কি ভীষন ভাল লাগে বোঝাতে পারব না। এই একটাই প্রতিযোগিতা আছে-ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা-যেখানে হেরেও আনন্দ।

সৌদিতে তখন তেল পাওয়া যায়, ওটা তখনও একটা রাষ্ট্র হয় নি-নানান ট্রাইবাল গোষ্টি-নানান রাজ্যে রাজত্ব করত। এমন এক গোষ্টিসর্দারের আধুনিক ছেলে, তার সেকেলে বাবাকে বোঝাচ্ছে-কেন তেলের লিজ আমেরিকান কোম্পানীদের দেওয়া উচিত।

সর্দারপুত্র শুরু করছে এই ভাবে- এই " অমূল্য" তেল...।

ছেলে আর কিছু বলার আগেই, সর্দার তাকে কেটে দিয়ে বললো-হে পুত্র, তুমি তেলকে অমূল্য বলছ কেন? তেল ত কেনা যায়। যা কিছু কেনা যায়-তা কি করে অমূল্য হয়? ভালোবাসা, স্নেহ অমূল্য -কারন তা কেনা যায় না।

গাড়ী কেনা যায়। বাড়ী কেনা যায়। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কেনা যায়।

কিন্ত মানুষের স্নেহ আশীর্বাদ কেনা যায় না। মানুষের ভালবাসা কেনা যায় না। মানুষ অমৃতের সন্তান-তাই আমাদের লক্ষ্য বলে যদি কিছু থাকে- তা হৌক সেই অমূল্য রতনের সন্ধান। সাধারন মানুষের ভালোবাসা। যা কেনা যায় না-তাই অমূল্য ।

আমি প্রায় সাড়ে চার বছর আগে চাকরি ছেড়েছিলাম। জীবনের গোলটা বদলানোর দরকার ছিল। কর্পরেট লাইফের উদ্দেশ্যহীন অর্থহীন চাকরি করাটা মানসিক অত্যাচারেরর পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। তখন একটা গোল ঠিক করেছিলাম- ভারতে ১০০ জনের জন্য চাকরি তৈরী করব। ব্যাবসা করার থেকেও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এগিয়েছি বেশী। আমি এখন অনেক বেশী চাপে থাকি-অনেক বেশী কাজ-কিন্ত মানসিক দিয়ে অনেক বেশী সুখী।

জীবনকে উপভোগ করতে গেলে, বস্তুবাদি গোল থেকে দূরে থাকতেই হবে।













মৈনাককে কি আমরা চিনতাম ?

মৈনাককে কি আমরা  চিনতাম ?
******************

মৈনাক সরকার নামটি এখন সব আমেরিকান চেনে। খারাপ লাগলেও এটাই সত্য, যে বাঙালীকে  আমেরিকানরা চিনে গেল আধুনিক মিডিয়ার দৌলতে তিনি বিবেকানন্দও নন,  রবীন্দ্রনাথ ও নন। মৈনাক সরকার নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিভাবান ছাত্র।

 কিন্ত মৈনাককে কি আমরা চিনি ? আলবৎ ।

  ভেবে দেখুন কি ধরনের "প্রতিভাবান" কেরিয়ারিস্টদের আমরা তৈরী করি সমাজে।  ছোটবেলা থেকে তারা বাবা মা নিকট "বন্ধুরা" শেখাচ্ছে-স্বার্থপর হতে। শেয়ারিং এর কনসেপ্ট নেই। আমি যা জানি, যা শিখছি-সব আমার! কেউ যেন কেড়ে নিয়ে যেতে না পারে!!  সেখানে জ্ঞানের প্রতি প্যাশন, সৃষ্টির আনন্দের স্থান নেই।  শুধুই হিসাব, আমি এগোলাম না পেছোলাম। আর এমন বিচ্ছিরি জাঁতাকল, ষাট বছরেও শেষ হয় না। আচ্ছা রিয়াটারত করলে? কতটাকা জমাতে পারলে? কোন পজিশনে রিটায়ার করলে? কেউ বলবে ন-আর কদিনই ত আছে। খাতায় নাম উঠে গেছে-এবার নতুন কি ভাবছ?

 ইনফ্যক্ট আই আই টি খরগপুরের দীর্ঘ একদশক জীবনে এত মৈনাক দেখেছি-হলফ করে বলতে পারি ক্যাম্পাসে বন্দুক সহজলভ্য বলে, এমন ঘটনা অনেক ঘটত। হবেই না বা কেন? গান, কবিতা, চিত্রকলা-জীবনের যার কিছু সুন্দর-কিছুইত এরা শেখে না। জীবন মানে এদের কাছে ম্যারাথন-আর সার্থকতা হচ্ছে সাইডলাইনে দাঁড়ানো পরিবারের লোকেদের হাততালি-যা তুই ওর ছেলেটাকে বিট করে দিয়েছিস ম্যারাথনে!! টোট্যালি একটা সিক সমাজ এবং পারিবারিক কালচারের মধ্যে দিয়ে আসে অধিকাংশ ছাত্ররা- যেখানে জ্ঞানের পিপাসা আর সৃষ্টির আনন্দের কোন স্থান নেই।

 অনেকে বলছেন গাইড-পিএইচডি ছাত্র সমস্যা। হতে পারে। পিএইচডি গাইড ছাত্র সব থেকে কঠিন সম্পর্কের একটি। কারন এখানে ছাত্রটি সম্পূর্ন ভাবে তার শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল।  প্রচুর ছাত্র মানসিক ভারসাম্য হারায় পি এইচ ডি করতে গিয়ে। একসময় আই আই টি সেনেটে পি এই চ ডি প্রতিনিধি ছিলাম। প্রায় ৩০% ছাত্রই মানসিক সমস্যায় ভুগত গাইডের জ্বালায়। উলটো দিকে ভাল গাইড ও প্রচুর আছে।

 কিন্ত এখানেই সেই লাইভ বম্ব। পি এই চ ডিই হৌক বা চাকরি-সবর্ত্রই লোকে পেছনে লাগবে। কেউ তোমার জন্য গোলাপ নিয়ে বসে নেই।  তার মানে কি এই প্রত্যেকের পেছনে বন্দুক নিয়ে লাগতে হবে? কোন লাভ নেই।  যারা আপনার জীবনে কাঠি করছে- আপনি রেগে আছেন?  জ্বলন্ত কাঠকয়লা ধরে বসে থাকলে তাতে হাতই পোড়ে।


 গোটা জীবনটাই কুরুক্ষেত্র।  অথবা ফুটবল মাঠ। পাস দিচ্ছেন, গোল খাচ্ছেন, গোল দিচ্ছেন-লোকে ল্যাং মারছে। পাস ধরছেন, ডজ করেছেন-সব কিছু মিলিয়েই ফুটবল!  কিন্ত কোন স্কুল, কোন ফ্যামিলি শেখায় সেটা? সবাই ভাবে হেঁটে হেঁটে গোল দেবে! মাঠে নেমেছ, অথচ ল্যাং খাবে না, হয় না কি!

কিন্ত জীবনে মারাদোনা সেই হতে পারে-যে হাজার ল্যাং খেয়েও, মারমারি পালটা মার না দিয়েই ডজ করে গোলটা দিয়ে আসতে পারে!  সেই আসল প্রতিভাবান!! সেই শিক্ষাটার অভাব চারিদিকে। আর হ্যাঁ সেই মারাদোনা হতে পারে, যে সৃষ্টির আনন্দে ভেসে যেতে পেরেছে।