Friday, February 26, 2010

ধন্যবাদ প্রণব মুখার্জিঃ খাদ্যদ্রব্যের দাম আটকাতে সঠিক পদক্ষেপ

খাদ্যদ্রব্যের রকেটচুম্বী দাম নিয়ে বিরোধিরা যাখন ভোট-ফুটবলে লাথি মারা শুরু করেছিল, আমি বার বার লিখে এসেছি, কৃষিতে উৎপাদন না বাড়ালে এবং কৃষজ উৎপাদনের খরচ না কমালে খাদ্য দ্রব্যের দাম কমানো অসম্ভব। এর সাথে দরকার সুষম বন্টন এবং অধিক উৎপাদনের জন্যে স্টোরেজ।

প্রণব মুখার্জি এবারের বাজেটে এর প্রতিটা দিকের ওপর নিখুঁত গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রথমেই সেচের কথাতে আসি। কৃষির খরচের একটা বিশাল অংশ সেচ জনিত-এং ভূর্গভস্থ জল ক্রমশ কমতে থাকায় সেই খরচ বেড়েই চলেছিল। অথচ আবাহমানকাল থেকে ভারতে কৃষিকাজ হয়েছে নদী-আল বিলের জলে। এটা আমরা ভুলতে বসেছিলাম। আমার নিজের জেলাতেই দেখেছি, অগুন্তি নদীনালা, যারা আগে সেচের জল দিত, তারা শুকিয়ে যাচ্ছে সংস্কারের অভাবে। এই নিয়ে আমি একটি ডকুমেন্টারীও বানিয়েছিলাম। রাজনৈতিক পার্টিগুলি নানান দাবী নিয়ে ওপর ওপর আন্দোলন এত করেছে-অথচ সেচের জলের জন্যে শুকিয়ে যাওয় নদী-বিল গুলিকে বাঁচাতে কোন আন্দোলন করে নি।

প্রণববাবুকে অসংখ্য ধন্যবাদ উনি কৃষির উন্নতির জন্যে নদী এবং আল-বিলগুলিকে সংস্কার করতে চাইছেন। এবং সেই খাতে বিপুল টাকা বরাদ্দ করেছেন। অবশ্য রাজ্যে আমাদের অপদার্থ বামপন্থী সরকার থাকাতে
আশাবাদি হতে পারলাম না। প্রণববাবুর নদী সংস্কারের টাকা আবার দিল্লী ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী
যেমন এর আগে বার বার হয়েছে।

এছাড়াও প্রণব বাবু জোর দিয়েছেন ওয়াটার শেড ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়াটার হারভেস্টিং প্রযুক্তির ব্যাপক রূপায়নে। এর জন্যে তিনি গবেষনার বরাদ্দও বাড়িয়েছেন। সেচের জলের ৯০% ই ভারতীয় কৃষিতে নষ্ট হয়। ইস্রায়েল ভারতের কৃষিপদ্ধতির ১০% জল ব্যাবহার করে অধিক উৎপাদন করে। সুতরাং এই দিকটাতে আমাদের ভীষন ভাবে জোর দিতে হবে শুধু খাদ্যের দাম কমানোর জন্যেই না। ভূর্গভের জলের ব্যাবহার কমানোর জন্যেও এটা দরকার। এটা না হলে সেচের জন্যে জলের স্তর কমে গেলে আর্সেনিক এবং নাইট্রেট বিষে ধ্বংশ হবে আমাদের গ্রামের চাষিরা।

অর্থমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ উনি বহুপ্রতিক্ষিত কিছু পদক্ষেপ নিলেন, যা ভারতীয় কৃষির জন্যে খুব দরকারী ছিল। আরো ধন্যবাদ এই জন্যে যে উনি সমস্যার সমাধানের জন্যে বিশেষজ্ঞদের কথায় চলেছেন, রাজনীতির আলিন্দে সমাধান খোঁজেন নি। যা ভারতের অন্য পার্টিগুলি করে থাকে জনমোহিনী ভাষা ডায়ালোগ মেরে। এবং তাদের চালাকি খুব সহজেই ধরা পড়ে। কারন উৎপাদন না বাড়লে এবং উৎপাদনের ব্যয় না কমালে, কেও মূল্যবৃদ্ধি থেকে ভারতবাসীদের বাঁচাতে পারবে না। কমিনিউস্টরা সেটা পারে-তবে লোককে অভুক্ত রেখে, দুর্ভিক্ষে কোটি কোটি লোককে মেরে ফেলে। কমিনিউজমের সেই কালো ইতিহাস ত আর গণতন্ত্রে সম্ভব না!

অর্থাৎ আমি যেটা দেখছি-সেটা খুব সাধারন একটা সত্য। বিজেপি, সিপিএম তথা বাকি পার্টিগুলির মধ্যে গভীরে গিয়ে ভাবনা চিন্তাকরার মতন লোক নেই। যা প্রণব-চিদাম্বরম-সিংজীর টিমের আছে। এই সত্যটা ভারতের লোকেরা বোঝে বলেই কংগ্রেস আরো বেশী ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে। যদি সিপিএম-বিজেপি নিজেদের কংগ্রেসের উপযুক্ত প্রতিপক্ষ হিসাবে জনগনের কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক হয়-তাহলে ফাঁকিবাজির ডায়ালোগ ছেড়ে-দেশের উন্নতির জন্যে গভীর চিন্তাভাবনার সাক্ষর জনগনের সামনে রাখুক, যা প্রণব বাবু এই বাজেটে রেখেছেন। গণতন্ত্রে আমরা সেই চিন্তাকে স্বাগতম জানাব-কিন্ত বিমানবাবু বালখিল্যসুলভ বিরোধিতাকে নয়।

Tuesday, February 23, 2010

দালাল বনাম দৈত্যঃ আপনি কার দিকে?

মাওবাদের সাথে ভারতের বর্তমান গনতন্ত্রের লড়াইকে এই ভাবে একলাইনে সামারাইজ করলাম। বর্তমান কাঠামোতে কোন সন্দেহ নেই-রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশই ব্যাবসার দালালি করে-কিন্ত মনমোহন বা রাহুল গান্ধীর মতন কয়েকজন অবশ্যই উন্নত ভবিষ্যতও চিন্তা করেন। সব থেকে বড় কথা এই সিস্টমে রাজনীতিবিদরা দালালির মাত্রা ছাড়ালে-তাদের পরিবর্তবনের ব্যাবস্থা আছে। এবং জনগন তাদের শাস্তিও দিয়ে থাকেন। কর্পরেট আদিবাসিদের জমি কাড়ছে-এটা প্রচারে অন্তত ভারতে বাধা নেই। অরুন্ধুতি সরকারের বিরুদ্ধে মিডিয়াতে মুখ দেখাতে পারেন। আমাদের নকুকুল খুনী মাওবাদিদের সাফাই গাইতেই পারে। মাওবাদিদের সমর্থনে [ আদিবাসিদের বকলমে] জমায়েত সব শহরে হতে পারে। এতে আমি গর্বিত। কারন গণতন্ত্রে এটা না হলেই কর্পরেট জাঁকিয়ে বসত। অরুন্ধুতি রায়রা আছেন-তাদের নাটক দেখে আমি নিশ্চিত হয়, আমাদের গণতন্ত্র কাজ করছে।

কিন্ত মাওবাদিরা যে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চাইছেন সেটা কেমন হবে?

কিউবাতে ইন্টারনেট সার্ফ করতে লাইসেন্স লাগে। অনুমতি না নিয়ে কেও ইন্টারনেটে ঢুকলে সে দেশে জেলাদেশ হয়। চীনে সোশাল মিডিয়া প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জমায়েত, মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে অরুন্ধুতির সরকারি বিরোধি নাটক-এসব কোন দিন চীন বা কিউবা করতে দেবে?? স্টালিন রাশিয়ার ৫০০ আদিবাসি সম্প্রদায়কে নিজেদের বাসভূমি থেকে সম্পূর্ন উচ্ছেদ করে সাইবেরিয়াতে পাঠিয়েছিলেন-কারন মধ্য এশিয়াতে তার তেলের দরকার ছিল। ওখানে রাষ্ট্রের দরকার ছিল-এখানে কর্পরেটদের দরকার। ওখানে ওরা প্রতিবাদ করেছিল বলে আদিবাসি গোষ্টি গুলিকে চিরতরে নির্বাসিত করেন স্টালিন। চীনেও উন্নতির নামে প্রতিদিন আদিবাসিদের উচ্ছেদ হচ্ছে। মিডিয়াতে চীনের কোন খবর আসে? আছে কোন অরুন্ধুতি রায় চীনে??

সুতরাং গনতন্ত্রে যতই দালাল থাক, তা কমিনিউস্ট খুনী দৈত্যদের থেকে শতগুনে ভাল। অনেকেই মাওবাদিদের প্রতি সহানুভুতিশীল কারন তারা আদিবাসিদের অধিকার রক্ষা করতে চাইছেন। সেটা ভাল কি? চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ানে কমিনিউস্ট জমানাতে আদিবাসিদের কি হাল হয়েছিল বা হচ্ছে জেনে নিন। তাহলেই মাওবাদিরা আদিবাসিদের অধিকার রক্ষা করবে-এমন ভাঁও সুলভ স্বপ্ন থেকে মুক্ত হবেন।

আদিবাসিদের অধিকার রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। কিন্ত তা গণতান্ত্রিক এবং আইনের পথেই করা সম্ভব। তাতেই আন্দোলনের জনভিত্তি বাড়বে। এর জন্যে দৈত্যদের ডেকে লাভ কি?