Sunday, March 17, 2019

অভিনন্দনকে ঘিরে ভারতের গণআবেগ

অভিনন্দনকে ঘিরে ভারতের গণআবেগ দেখে গণতন্ত্রের প্রতি গভীর বিশ্বাস ফিরে আসছে। একমাত্র গণতন্ত্রেই একজন সাধারন সৈনিক দেশের  হিরো হওয়ার সুযোগ পান। স্বৈরতন্ত্রে সৈনিকেরা শুধুই বোরে,
 দেশের মিডিয়া, প্রচার মেশিন গৌরব গাথা প্রচার করে শুধুই  ডিক্টেটরের।  ইতিহাসে এটাই দেখি বারংবার।

 পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র এথেন্স যুদ্ধে গেছে বারো বার।  এর মধ্যে ম্যারাথন এবং থ্যালামিসের যুদ্ধ ছিল পারশিয়ান সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ।  এই যুদ্ধের ফলেই উঠে আসেন এথেনিয়ান হিরো থেমিস্টকলস। কোন অভিজাত সন্তান না-সাধারন ঘর থেকে উঠে আসা এক এথেনিয়ান সেনানায়ক হৌন এথেন্সের হিরো।  সমসাময়িক কোন রাজতন্ত্রেই কোন সেনা বা সেনা নায়ক হিরো হতে পারতেন না- কারন তাহলে রাজার বিরুদ্ধে পাওয়ার সেন্টার তৈরীর সুযোগ ছিল!

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়ান বিজয়ী। আমেরিকান হিরো আইজেনআওয়ার, জেনারেল প্যাটন।  রেড আর্মির নেতা জর্জি জুকভ।  এই সেই জুকভ- যার হাতে স্টালিন যুদ্ধভার ছেড়েছিলেন সম্পূর্ন যখন জার্মান সেনা মস্কো থেকে কুড়ি মেইল দূরে।
যুদ্ধ নেতৃত্ব নিয়ে সম্পূর্ন ছড়িয়েছিলেন স্টালিন।  সেখান থেকেই যুদ্ধটাকে ঘুরিয়েছিলেন জেনারাল জুকভ। ফলে জার্মানীর আত্মসমর্পন যখন সম্পূর্ন, জুকভ একজন সোভিয়েত হিরো। 

 স্টালিন রাজা, আর একজন সৈনিক জুকভ যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব পাবেন তাই কখনো হয়? ফলে  মাত্র কয়েক মাস বাদেই সেনাবাহিনীর মাথা থেকে জুকভকে ছেঁটে ফেললেন স্টালিন। জার্মানীর হারানোর কৃতিত্বটাও পকেট ঢোকালেন ভাল ভাবে। এখনো অশিক্ষিত কমিনিউস্টরা জানে জার্মানীর বিরুদ্ধে স্টালিনই ছিলেন হিরো। আসল সত্য হচ্ছে ১৯৪২ সালে জার্মানীর হাতে মার খেতে খেতে ( কারন ভুল যুদ্ধ স্ট্রাটেজি) স্টালিন যখন নিজের ওপর বিশ্বাস হারান, তখনই যুদ্ধের দ্বায়িত্ব তুলে দেন জুকভের হাতে। এরপরে কি হয়েছিল সবাই জানেন। অথচ জুকভ যখন যুদ্ধ জিতে গেলেন, ইতিহাসকে অন্য ভাবে লিখলেন স্টালিন- তিনি নিজেকে প্রজেক্ট করলেন আসল হিরো হিসাবে। জুকভকে কিছু পুরস্কার দিলেন। ব্যস।

অন্যদিকে আমেরিকান হিরো আইজেনআওয়ার, যিনি নিজেও ছিলেন কমরেড জুকভের গুনমুগ্ধ ফ্যান,  তিনি তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ৩৪ তম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।

গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রে এটাই পার্থক্য।

 কার্গিল যুদ্ধেও আমরা দেখেছি ভারতীয় গণতন্ত্রে শহীদ জওয়ানরা হিরো। আর পাকিস্থান তাদের গোপন সৈনিকদের দেহ পর্যন্ত তাদের ফ্যামিলির হাতে তুলে দিতে পারে নি। কারন পরিচয় অস্বীকার করতে হয়েছে।

 ফ্যালকনের পাইলট শাহনাওয়াজ, অভিনন্দন এর মতন ভাগ্যবান নন। দুজনা দুজনের প্লেট হিট করেছেন- কিন্ত শাহনাওয়াজের মৃত্যু হয়েছে কাশ্মীরি জনতার হাতে। ভারতীয় পাইলট ভেবে জনগণ তাকে পিটিয়ে মেরেছে।  পাকিস্তানের তাকে অস্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই। কারন এফ-১৬ বিমান ভারতের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে না পাকিস্তান।

 একই যাত্রা, একই বীরত্বে দুই পরিনতি। একজন গণতন্ত্রের জন্য লড়ছিলেন, তাই জনগণ তাকে নিয়ে উদ্বেলিত। অন্যজন  পাকিস্তানের অবৈধ মিলিটারি এস্টাব্লিশমেন্টের সন্তান - পাকিস্তানে সেই সন্মান পেলেন না।

পন্ডিতরা বলছেন এই জন্যেই এথসেন্সের গণতন্ত্র সেকালের সেরা মিলিটারি শক্তিও হয়ে ওঠে। কারন সাধারন ঘরের ছেলেদের দেশের হিরো হওয়ার সুযোগ ছিল। যা রাজতন্ত্রে হয় না- সেখানে সেনা মানে শুধুই মরার জন্য বেতন পাওয়া।

 ভারত, আমেরিকাতেও সেটাই দেখি।

" গণতন্ত্র" ই দিনের শেষে সেরা মিলিটারি শক্তির জন্ম দেবে।  হ্যা ভারতের অস্ত্র গবেষনা দুর্বল -কিন্ত গণতন্ত্রের চাপেই তা বদলাবে।

No comments: