Sunday, March 17, 2019

পার্টিটার ভবিষ্যত

চারিদিকে  ফেসবুক ওয়ালে লেখা, সিপিএমের আজকের বিগ্রেড সমাবেশের ওপর নাকি পার্টিটার ভবিষ্যত অনেক কিছু নির্ভর করছে!

ভোট আদায়, আর মার্কেটে প্রোডাক্ট বেচা একই ব্যপার। এবং মার্কেটে প্রোডাক্ট যখন চলে না, তখন কোম্পানীগুলো দুটো কাজ করে - মার্কেট সার্ভে করে রিস্কোপিং করা এবং নতুন প্রোডাক্ট মার্কেটে  ছাড়া। এসব না করে যেসব কোম্পানী আগের মার্কেট আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং পুরাতন প্রোডাক্ট জোর করে বেচার চেষ্টা করে - তাদের দ্রুত পতন অবিশম্ভাবী।  মার্কেটিং, রোড শো বাড়িয়ে সেই পতন আটকায় না।

 সিপিএমের মতন অবস্থায় এলে- যেখানে এখনো ১০% ভোট ব্যাঙ্ক অটুট কিন্ত সাধারন জনগণ নিচ্ছে না- যে কোন  কোম্পানী কি করত?

  ভাল করে মার্কেট সার্ভে করে দেখে নিত মার্কেটে গ্যাপ কি। এক্ষেত্রে কনটেক্সটা হবে জনগনের কোন কোন অসন্তোষ, রাগ-অন্য কোন পার্টি এড্রেস করছে না।  বা করলেও সেখানে অন্যকে সরিয়ে নিজের প্রোডাক্ট ব্যান্ডটা ঢোকানোর স্কোপ আছে কি না।

 সিপিএমের একটা লয়াল ১০% ভোট ব্যাঙ্ক আছে। বিজেপির আছে ১৪% মতন। কং গ্রেসের ৮%। তৃনমূলের ১৬% ।  ৪৮% পশ্চিম বঙ্গের কমিটেড ভোট ব্যাঙ্ক। বাকী ৫২% , যারা সাধারনত নিরেপেক্ষ, আম জনতা- তাদের ৩০-৪০% তৃনমূল পেয়ে থাকে।

 এই ৫২% নিরেপেক্ষ ভোটারবেস যা আজ তৃনমূলের দখলে মূলত, তার স্কোপিং করতে না পারলে, সিপিএম ১০০ টা বিগ্রেড করার পরেও  হারতে হারতে সুসির থেকে ছোট পার্টিতে পরিনত হবে।

 এই ৫২% বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে চিন্তিত না। যারা বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে চিন্তিত তারা হয় মুসলমান। না হলে  হার্ড বাম। তারা আলরেডি কংগ্রেস, বাম এবং তৃনমূলের লয়াল বেসের অন্তভুক্ত।

 এই ৫২% নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছেলে মেয়ের কাজের সুবিধা-আইন, নিরাপত্তা, ভাল শিক্ষা, ভাল স্বাস্থ্য, ভাল রাস্তা ইত্যাদি দেখে ভোট দেয়। আমেরিকা ভেনেজুয়েলা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই।  তৃনমূলকে নিয়ে এদের অভিযোগ অনেক- যেমন সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, আই টি শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ডাকাতি।

 কিন্ত এরা এই সবের জন্য তৃনমূল ছেড়ে সিপিএমকে বিশ্বাস করবে কেন? সিপিমে এখনো সর্বনাশা বন্ধের রাজনীতিতে অন্ধবিশ্বাস রাখে। সুতরাং এখন যাও বা আস্তে আস্তে শিল্প আসছে, সিপিএম আসলে সব বন্ধ হবে। এটা কিন্ত এই ৫২% এর বিশ্বাস।  এবং তা সত্য।  স্বাস্থ্যর ক্ষেত্রেও মমতা ব্যনার্জি সিপিএম আমলের থেকেও অনেক ভাল কাজ করেছেন।  সুতরাং এই ৫২% এর মধ্যে যারা তৃনমূলকে অবিশ্বাস করে, তারা বিজেপিকে ভোট দেয়।  বাকীটা কিন্ত তৃনমূলকেই ভোট দিচ্ছেন-কারন তারা মনে করেন দিদি চিকিৎসা জীবিকার জন্য কিছু না কিছু করেছেন তাদের জন্য।

 অর্থাৎ সিপিএম যদি নিজেদের নতুন সিপিএম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে- তাহলেই চান্স আছে। না হলে লোকসভা বা বিধান সভাতে ওদের একটা সিট পাওয়ারো চান্স নেই।-যে নতুন সিপিএম বন্ধে বিশ্বাস করে না, কাজে বিশ্বাস করে। শ্রমিকদের রিস্কিলিং এর কথা বলে। শ্রমিক কোয়াপরেটিভ তৈরী করে ডিম দুধ তৈরীর ব্যবসা আনে ( হাসবেন না। কেরলে সিপিএমের বেস হচ্ছে কোয়াপরেটিভ। তাই ওখানে সিপিমকে হঠানো কঠিন। )  শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মাইনের চেয়ে সরকারি শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে-যা আপ করে দেখিয়েছে। পার্টির এই নতুন রিমডেলিং না হলে, ওই লয়াল ১০% এর বাইরে ওদের কেউ বিশ্বাস করবে না।

 এই ৫২% এর কাছে সিপিএম মানে কতগুলো অপদার্থ কিন্ত সৎ ভালো লোকের পার্টি- কিন্ত  ভ্রান্ত লাল আদর্শের কারনে তাদের ব্যবসার ক্ষতি, চাকরির প্রসপেক্টের ক্ষতি হবে এটা সবাই জানে। এই খানটাই আটকে আছে সিপিএম। এবং এর পরেও এরা যখন বন্ধ ডাকে, তখন এই ৫২% এর কাছে এরা  বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় সম্পূর্নভাবে।

 আজ বিগ্রেডে এক লাখ এল না দশ লাখ এল তাই দিয়ে কিস্যু হবে না। কারন বিগ্রেডে যারা আসবে তারা ওই লয়াল ১০%। ৫২% কে টানার কোন কর্মসূচী বা দিশা সিপিএমের নেই।  আসলে পার্টিটাতে কোন নেতা আজ নেই। যারা  ৫২%  আম সাধারনকে বোঝে। এখানেই তৃনমূলের সাফল্য।

No comments: