Sunday, March 17, 2019

ব্রেন্টন হ্যারিসন

ব্রেন্টন হ্যারিসন টেরান্ট। ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে হামলা চালান এই হোয়াইট উগ্র শেতাঙ্গ জাতিয়তাবাদি।

 এর উগ্র শেতাঙ্গ রাজনৈতিক দর্শনের সাথে অনেক আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানই একমত পোশন করেন। নইলে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসত না।

শেতাঙ্গ সন্ত্রাসবাদ বা হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বা  ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রেও ব্যপারটা এক। হাতে বন্দুক তুলে নিচ্ছে গুটিকয়েক ব্যক্তি। কিন্ত পেছনে জন সমর্থন ? বিশাল। সেখানে আছে আপনার আমার ক্লাস থেকে উঠে আসা অসংখ্য মধ্যবিত্ত। যারা অহরাত্র পার্টিতে দুইদিকে চোখ রেখে, " সেফ মোমেন্ট" পেলেই বলে দেবে, মুসলমানদের জন্যেই ভারতের আজ এত সব্বোনাশ। ইসলামিক সমাজে আবার অত ঢাকারাখা নেই। বাংলাদেশের উলেমা মৌলনারা প্রকাশ্য সভাতেই হিন্দুদের মুন্ডপাত করেন। পাকিস্তান আরো অনেক এগিয়ে। জিউউর রহমানের সময়, পাকিস্তানের পাসপোর্টের লাস্ট পাতায় পরিস্কার ডিক্লেরেশন দিতে হত, আপনি আহমেদিয়া নন! সার্ভে বলছে, অধিকাংশ মুসলমান সন্ত্রাসবাদি নন এটা ঠিক-কিন্ত ভয়ের দিক হচ্ছে বাংলাদেশ পাকিস্তান তুর্কি, আরবের প্রায় সব কটা দেশেই প্রায় ৭০% লোক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একমত।  ব্রেন্টন ব্যতিক্রম না। ভোট নিলে, আমেরিকার শেতাঙ্গদের অনেকেই তার রাজনৈতিক দর্শনের সমর্থক।

 ইসলামিক দেশগুলোর মতন এত প্রকাশ্যে না হলেও, ভারতে বহুদিন মুসলিম বিদ্বেশ ছিল চোরা গোপ্তা। চার দেওয়ালে বন্দি।  ইউরোপ আমেরিকাতেও অভিবাসি বিদ্বেশ বা এশিয়ানদের প্রতি বিদ্বেশ ছিল ঘোরোয়া। কিন্ত ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে ভারতে মুসলমান বিদ্বেশ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ট্রাম্পের ক্ষমতালাভের পরে আমেরিকাতেও প্রায় তাই। এদ্দিন আমেরিকাতে আছি- রেসিজমের ঘটনা আঙুলে গুনতে পারি। কিন্ত গত দুবছরে , স্পেশালি যেবার ট্রাম্প নির্বাচিত হল, বর্ণবাদি ঘটনা মেরীল্যান্ডের মতন প্রগ্রেসিভ রাজ্যেও বহুগুন বৃদ্ধিপায়।

 মুশকিল এখানেই।  কিছু উগ্র মুসলমান যখন ইসলামি দেশগুলিতে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়-সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা চুপ থাকে।
 ভারতে  আজকে বিজেপির " মুসলিম ঘৃণার" রাজনীতির বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা চুপ।  আমেরিকাতে বরং ট্রাম্পের বর্নবাদি রাজনীতির বিরুদ্ধে তাও অনেক শেতাঙ্গই সরব।

মনে রাখবেন , মৌনতা সম্মতির লক্ষন। হিন্দু এবং মুসলমানদের দ্বিচারিতা এখানেই যে আমেরিকাতে তারা শেতাঙ্গদের বর্ণবাদের বিরোধিতা করবেন। নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হলে কিছু বলবেন না।

যাইহোক আবার ব্রেন্টনে ফিরে আসি। লোকটিকে ভাল করে স্টাডি করা দরকার। প্রথম জীবনে ছিল কমিনিউস্ট। সেখানে সঙ্গত কারনে মোহভঙ্গ হওয়াতে,হয়ে গেল শেতাঙ্গ দক্ষিনপন্থী?
 
 খুব পরিচিত শোনাচ্ছে ?  তাই না? আজকে পশ্চিম বঙ্গের বিজেপির হিন্দুত্ববাদি নেতাদের অধিকাংশই এস এফ আই এ শিকড়! 

 কেন এমন হয়? এমন যে হবে বলে গিয়েছিলেন নিৎসে। কেন হয় এমন? নিৎসের শিক্ষাকেই স্বরনে আনি-

  আসলে আজ দুশো বছর আগে, ব্যক্তি আইডেন্টি খুব স্ট্রং ছিল না। লোকে খ্রীষ্ঠান, হিন্দু, মুসলমান হয়ে জন্মাত। তাকে সমাজ চেপে ধরত - যে না তুমি হিন্দু মানে, সমস্ত হিন্দু লোকাচার পালন করবে। মুসলমান মানে  তাকে সেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জাকাত, হজ-ইত্যাদি একটা ধার্মিক প্যাটার্নেই থাকতে হবে।  সমাজ তাকে চেপে ধরে একটা আইডেন্টি দিত। মোদ্দা কথা- সমাজ তাকে বলত এটাই তোমার জীবনের লক্ষ্য-লোকে সেটাই মানতে বাধ্য হত।

 ধণতন্ত্রের প্রসারের সাথে সাথে এই ধার্মিক আইডেন্টিটা আস্তে আস্তে ফিকে হচ্ছে, বা হয়ে গেছে।  কারন ধণতন্ত্রের দরকার "ক্রেতা"। ক্রেতা আর বিক্রেতার আইডেন্টি ধার্মিক হলে অনেক মুশকিল। ফলে এই মার্কেটের চাপেই নিউক্লিয়াল ফ্যামিলি তৈরী হল- সাথে মানুষের আর দায় রইল না তাকে ভাল হিন্দু বা ভাল মুসলমান হতে হবে। বা ভাল খ্রিষ্ঠান হতে হবে।

  মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশী  মুক্ত-  ইচ্ছা করলে, কমিনিউস্ট , এথিস্ট, সোশালিস্ট, হিউমানিস্ট, মাতাল , বোতল, ভোগবাদি যা খুশী হতে পারে।  মুশকিল হচ্ছে এই যে-  যখন কেউ কমিউস্ট হয়ে দেখল ----যেকারনে সে হিন্দু বা মুসলমান পরিচিতি থেক নতুন আর্শের টানে কমিনিউস্ট হতে গেছে, তার পুরোটাই ধাপ্পা, সে আবার নিজের রুটে সাংঘাতিক ভাবে ফিরে আসবে। এই রিবাউন্ড ফোর্স বেশ সাংঘাতিক। আগে হয়ত সে ছিল রুটিন হিন্দু। যখনই সে দেখে  " কমিউনিস্ট বা লিব্যারাল" ওই ধরনের  আইডিন্টি পেতে সে ব্যর্থ- কারন সেই আইডেন্টিটাই ধাপ্পাবাজি, বাপ ঠাকুদ্দার দেওয়া আইডিন্টিতে সে আরো প্রবল ভাবে ঢোকে ।

 এই আইডেন্টি ভ্যাকুয়াম এবং সেটা ভরাট করার ভাল কিছু না থাকায়, অনেকেই প্রথম যৌবনে বাম থেকে একটু বাদেই রামে ফেরে।  আগে এটা ছিল স্লো প্রসেস। এখন ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাতে দক্ষিন পন্থা অনেক বেশী শক্তিশালী। ফলে এই বাম টু ডান মেটামরফসিস -ভল্যুউম এবং ভেলোসিটি দুটোই দুর্বার।   বাংলাদেশের গুলশানের সেই সন্ত্রাসবাদি কিশোর ছেলেটিরো এই সমস্যাই ছিল। সে কিছুদিনের জন্য লিব্যারাল হতে গিয়ে দেখে যে কারনে, নতুন পরিচিতির টানে সে মুসলমান থেকে লিব্যারাল হতে গেছে, তার পুরোটাই তার কাছে ধাপ্পাবাজি । ফলে সে দ্রুত ইসলামে ফিরে মুসলমান আইডেন্টিটিটাই আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে।

 এর মূল কারন অবশ্যই দর্শনে দুর্বলতা। এদের সবাইকে বুঝতে হবে জীবন মানেই দুঃখ সমস্যা কঠিন সময় থাকবেই।  জীবনকে উপভোগ করা মানে এই কঠিন সময়, সমস্যাকে নিয়েই করতে হবে।  সমস্যা আছে বলেই বেঁচে থেকে সেই সমস্যার সমাধান করার ইচ্ছাটা থাকে! চ্যালেঞ্জ সামনে না থাকলে অনেকেই বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই হারিয়ে ফেলে।

সমস্যা আছে বলে তেড়ে গিয়ে নিহিলিস্ট সুইসাইড বোম্বার হওয়া- এর মানে "সমস্যা"টা জীবনের অবিচ্ছেদ্দ পার্ট হিসাবে এরা ভাবতে পারে না। তখনই বন্দুক হাতে সন্ত্রাসবাদির জন্ম হয়।

No comments: