Tuesday, March 1, 2022

পুতিনকে কি রূপে বুঝিব?

 এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার খুন খারাপি  , যুদ্ধাপরাধ -একান্তভাবেই পুতিনের যুদ্ধ।  রাশিয়ার সাধারন জনগণ এবং রাশিয়ান অলিয়ার্গ [ যে ২১ টি ফ্যামিলি রাশিয়ার সমস্ত ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে ]-এরা মোটেও যুদ্ধের পক্ষে নেই। যেমন জার্মানরা যুদ্ধের পক্ষে ছিল না। কিন্ত হিটলারের মতন উম্নাদ ডিক্টেটরের জন্য সমগ্র জাতি যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিল। 


 সুতরাং এই যুদ্ধ কেন- এটা বুঝতে গেলে ব্যক্তি পুতিন, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বুঝতেই হবে। পুতিনের পারসোনালিটি কাল্ট না বুঝলে এই যুদ্ধ কেন- কি করে পুতিনের এত সাহস হল গোটা পৃথিবীর বিরুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেনে মিলিটারি পাঠালেন-এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না।


   #১ পুতিন কেজিবির স্পাই হিসাবে কেমন ছিলেন -   উনার সার্ভিস ফাইলে  দেখা যাচ্ছে উনি তিনটে ব্যপারে খুবই সফল  --

                  - শত্রুকে ধোঁকা দিতে-কোনদিন তার আগামী স্টেপ কাউকে জানতে দেন নি

                 - সিক্রেসি মেইন্টেইন করতে- উনি যে প্রেসিডেন্ট হবেন, উনার স্ত্রীও প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের দিন জানতেন না 

                  -  রিস্ক নিয়ে সবার আগে আঘাত দিয়ে শত্রুকে আঘাত করতে ভয় পান নি কোন দিন 


   কিন্ত কেজিবি ফাইল এটাও বলছে, পুতিনের থ্রেট পারসেপশন কম- অর্থাৎ কোথায় কত ক্ষতি হতে পারে-সেই ব্যপারে উনি খুব কম চিন্তা করেন। ইউক্রেনে সেটা পরিস্কার। 


  # ২   পুতিন পাশ্চাত্যকে এত ঘৃনা করেন কেন? রাশিয়া কি ইউরোপের অংশ না? 

 কেন পুতিন  ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান এবং ইউরোপের প্রগ্রেসিভ সংস্কৃতিকে এত ঘৃনা করেন? প্রায় মুসলমানদের মতন ?? রাশিয়াতে সমকামীতা অপরাধ। এবর্শন আইন ও কঠিন। রাজনৈতিক বিরোধিদের খুন করা কোন ব্যপারই না!  ইনফ্যাক্ট রাশিয়ান পারিবারিক আইন বর্তমানে ভারতের মতনই রক্ষনশীল। ইউরোপের মতন উদার না।  

 এই ইতিহাস বুঝতে হবে। না হলে এই যুদ্ধ বোঝা অসম্পূর্ন থেকে যাবে। 

আসলে পাশ্চাত্য ইউরোপিয়ান সভ্যতা বলতে আমরা যা বুঝি তা গ্রীক-রোমান সভ্যতা। রোমানরা যখন সাম্রাজ্যের অধীশ্বর- রাশিয়া-ইউক্রেন এসব অঞ্চলে বসতি প্রায় ছিলই না। মোঙ্গলরা প্রথমে রাশিয়ার নানান উপজাতিগুলিকে হারিয়ে-তাদের মোঙ্গল সাম্রাজ্যের মধ্যে নিয়ে আসে। মঙ্গলদের পতনের পর মস্কোভাইটরা বর্তমান রাশিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে। 

 ওখানে তখনো খ্রীষ্ঠান ধর্ম সেভাবে ঢোকে নি। ইসলামের লোকেরাও ধর্ম প্রচার করেছে। কিন্ত মদ্যপান ছিল এই অঞ্চলের লোকেদের জল খাওয়ার সামিল! মদ্যপান নিশিদ্ধ থাকায় ইসলামের প্রসার এখানে হয় নি।  আস্তে আস্তে এই মস্কোভাইট, কোসাক ফেডারেশন ( যা ইউক্রেনের পূর্বসূরী) এসব অঞ্চল গুলি অর্থডক্স চার্চের অধীনে আসে।  

ইউরোপিয়ান রেনেশাস বাংলায় যেমন ইংরেজদের হাত ধরে এসেছিল, রাশিয়াতে ইউরোপের শিক্ষার আলো এসেছে উনবিংশ শতাব্দির প্রথমে। নেপোলিয়ান রাশিয়ান শীতের কাছে হারলেন। কিন্ত ইউরোপের "লিবার্টির" ধারনা রাশিয়াতে রেখে গেলেন। ফলে বাংলার মতন রাশিয়াতেও উনবিংশ শতাব্দিতে জন্মালেন রাশিয়ার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবিরা-যা মধ্যে টলস্টয়, চেকভ, ডস্টভয়েস্কিরা আছেন। লেনিন ও সেই সময়ের ফসল। সমস্যা হল,  রাশিয়াতে পাশ্চাত্য ধ্যানধারনা বিশেষত জার্মান আইডিয়ালিজম ( মার্ক্সিজম, এনার্কিজম) দ্রুত ছড়াতে থাকে এবং ফল স্বরূপ ১৯১১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব। কিন্ত টলস্টয় এবং ডস্টভয়েস্কির মতন আরো অনেকেই রাশিয়ার এই পাশ্চাত্য টার্ন ভাল চোখে দেখেন নি,। তাদের কাছে রাশিয়ান রক্ষনশীল সংস্কৃতি রাশিয়ার পরিচয়ের ফাউন্ডেশন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ফেমিনিজম ইত্যাদি সমাজকে সংসারকে দুর্বল করে।  লেনিন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ফসল হলেও স্টালিন অর্থডক্স সংস্কৃতির। ফলে ক্ষমতা দখলের পর স্টালিন আবার রাশিয়ান অর্থডক্সিতে ফিরে গেলেন- লেনিন এবর্শন , লিভ টুগেদার, সমকামিতা আইনসিদ্ধ করেছিলেন, স্টালিন সব কিছুই আবার বেয়াইনী করে দেন।   সোভিয়েত বিপ্লবেও ও এই রাশিয়া বনাম পাশ্চাত্য দ্বন্দ ঘুচল না। বিশেষত ন্যাটোর জন্মের পর  সোভিয়েতের পাশ্চাত্য বিরোধিতা  অনেক বেড়ে গেল। পুতিন এই সময়ের ফসল। ১৯৭৫ সালে যখন উনি কেজিবিতে ঢুকলেন, তখন তার পোষ্টীং পূর্ব ইউরোপে। যেখানে সিয়ার চরেদের বিরুদ্ধে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। আমেরিকা পূর্ব ইউরোপে  উদার গণতন্ত্র স্বাধীনতা ফেরী করার চেষ্টা করছে ডিক্টেটরদের বিরুদ্ধে। পুতিনের কাজ ছিল, আমেরিকান এবং পশ্চিম ইউরোপের "গণতান্ত্রিক" ডি এন এ কে ধ্বংস করার। ফলে পুতিন বরাবরই পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং ইউরোপকে ভাল চোখে দেখেন না। ইনফ্যাক্ট রাশিয়ার গণতন্ত্র যখন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আস্তে আস্তে ফুলের মতন বিকশিত হচ্ছে,  পুতিন তার বস বরিস ইয়েসলিনকে বারবার বোঝাচ্ছেন, এই গণতান্ত্রিক প্রসেসে রাশিয়া আরো ডূবে  যাবে।  কারন ইয়েসলিন ামেরিকার কাছাকাছি যাচ্ছিলেন-কিন্ত তাতে রাশিয়ার কিছুই লাভ হচ্ছিল না। এতে পাশ্চাত্য এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে পুতিনের রাগ আরো বেড়ে যায়। পুতিন নিশ্চিত হন, রাশিয়ান রক্ষনশীলতাতে না ফিরলে রাশিয়ার উত্তরোন হবে না। যে দেশটা পাঁচ শতাব্দি ধরে জারের শাসনে ছিল, এবং অর্ধ শতাব্দি ধরে জারের বদলি সোভিয়েত শাসনে ছিল- তাদের জন্য জারের শাসন, রাশিয়ান অর্থডক্সই ভাল দিক।  পুতিন এটাই মনে করেন! 

 পুতিনের বদ্ধমূল ধারনা সোভীয়েত ইউনিয়ান ভেঙেছে আমেরিকা এবং ইউরোপ। এবং রাশিয়াকে আগের যায়গায় ফিরতে হলে ভূতপূর্ব সোভিয়েতের ২০টা দেশকে রাশিয়ার ছাতার তলায় আনতে হবে। 

  কিন্ত তারাত ১৯৯১ সাল থেকে স্বাধীন? তাহলে? 

পুতিনের এই ইচ্ছা মোটেও গোপন কিছু না। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ানের  ভূতপূর্ব অঙ্গরাজ্যদের অনেকেই ন্যাটোতে যোগ দিয়েছেন, এই পাগলা ডিক্টেটরের স্বপ্ন থেকে বাঁচতে। 

  যে শত্রুর বিরুদ্ধে একদা লড়েছেন, তারাই আস্তে আস্তে তাকে ঘিরে ধরছে। একে একে পশ্চিমের সব রাষ্ট্র ন্যাটোতে নাম লেখাচ্ছে। পুতিন অসহায় বোধ করলেন। কিন্ত তার হাতে অস্ত্র কি?  শুধু যুদ্ধ দিয়ে এসবের সমাধান হয় না, কেজিবির অভিজ্ঞতা থেকে ভালোই জানেন।  একটা আদর্শ ছাড়া এত গুলো রাষ্ট্রকে জোড়া যায় না।  

 এইখানেই একটা গভীর ব্যাপার আছে। পুতিন মনে করেন এইসব রাজ্যগুলিতে রাশিয়ান অর্থডক্স চার্চের প্রচুর সাপোর্টার আছে-যারা ফ্যামিলি লাভিং এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে, ইউরোপিয়ান সংস্কৃতিকে ভাল চোখে দেখে না। পুতিন এটা ভালোই বোঝেন ট্যাঙ্ক দিয়ে এই ইউনিফিকেশন হবে না। কমিনিউস্ট আদর্শ ও ডেড! তাহলে?   কোন আদর্শের বলে এতগুলো রাষ্ট্রকে জুড়বেন?   "রক্ষনশীল" ধর্মী রাজনীতিবিদদের নিয়েই উনি এইসব রাষ্ট্রে নিজের পাপেট নেতা তৈরী করার কাছে মন দেন। সফল ও হচ্ছিলেন। ইউক্রেনে ২০১০ সালে জেতেন ভিক্টর আনুকাভিচ-যিনি ছিলেন রাশিয়ার অনুগত। যাকে ইউক্রেন ২০১৪ সালে তাড়াবে। 

ফলে পুতিনের গ্রান্ড প্ল্যান এখানেই ডিরেইল্ড। পুতিন বুঝতে পারেন, তার ধারনা ভুল। আমেরিকার স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের স্বাদ যারা পেয়েছে, তারা তার কল্পিত জারের দুনিয়াতে  আর ফিরে যাবে না। তারা আমেরিকার কোলেই যাবে!  ফলে এবার পুতিন ট্যাঙ্কের পথে নামলেন।  ক্রিমিয়া দখল করলেন। আমেরিকা শুধু স্যাংশন করেই সাঙ্গ।  জার্মানী দ্রুত ভুলে আবার তেল গ্যাস নেওয়া শুরু করল।  ওটা ছিল এসিড টেস্ট। হিটলারের মতন।  পুতিনের ক্যালকুলেশন- ইউক্রেন মাত্র তিন দিনেই উনি জিতে যাবেন। কারন ইউক্রেনে রাশিয়ান অর্থডক্স রক্ষনশীলদের অনেক সাপোর্টার আছে।  হেরিটেজ। উনি বোঝেন নি, ইউক্রেনের লোকজন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে।  সেই কেজিবি ফাইল। উনার থ্রেট পারসেপশন কম। 

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকে এই যুদ্ধ আলাদা কিছু না। হিটলার মনে করেতেন ডেমোক্রাসি সার্কাস-ওইভাবে একটা বিদ্ধস্ত রাষ্টকে উন্নত করা যায় না। পুতিন ও তাই।  দুজনের চিন্তাধারায় একই ধরনের জাতিয়তাবাদি উন্মাদ্গামীতা। পুতিন নিউক্লিয়ার বোমের ভয় দেখাচ্ছেন। 

 আজ স্টেট অব ইউনিয়ানে বাইডেন ভাল কথা বলেছেন। ডিক্টেটরদের আগে ভাগে না থামাতে পারলে গোটা বিশ্বকে তার মূল্য চোকাতে হবে।  নইলে গোটা বিশ্বে যুদ্ধ ছড়িয়ে যাবে। 








No comments: