Thursday, November 10, 2022

বিজ্ঞান এবং ধর্ম ঃ সমন্বয় না সংঘাত ?

                                                                            (১)
বিজ্ঞান এবং ধর্ম কি ১৮০ ডিগ্রি আলাদা? নাকি হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলতে পারে মানবতার উত্তরনে?  বিজ্ঞানমনস্ক হতে গেলে কি ধর্মকে আঘাত করতে হবে? 

 এটি প্রবাহমান বিতর্ক যার উদ্ভব উনবিংশ শতাব্দির শেষে। এবং কমবেশী যেখানেই যুক্তিবাদি উদার সমাজের উদ্ভব হয়েছে সেই সময় (ইনক্লুডিং বাংলা),  এই বিতর্ক হয়েছে সর্বত্র।  আজকের দিনেও এই বিতর্ক গুরুত্বপূর্ন।  যদি একজন বিজ্ঞানমনস্ক হয়, সেকি সামাজিক লৌকিক ধর্মাচারন থেকে ১০০ মাইলদূরে থাকবে?  নাকি ল্যাবেরটরির গবেষনা এবং পূজোয় কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া একই সাথে সিদ্ধ? 

                                                                         (২)
 আমাদের যাবতীয়   প্রশ্ন/সৃজন/ চিন্তাধারা/জ্ঞান-বিজ্ঞান-যুক্তি- অর্থাৎ সামগ্রিক দর্শন দুইভাগে বিভক্ত।

ন্যারারালিজম/বিজ্ঞান  এবং নীতি/এথিক্স। 

 ন্যাচারালিজম কি?  যেসব প্রশ্নের  উত্তর বিজ্ঞানে আছে বা বিজ্ঞান থেকে পাওয়া সম্ভব। এটি হচ্ছে বিজ্ঞান থেকে পাওয়া জ্ঞান। প্রশ্ন এবং উত্তর। 

মানে যা পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব ( টেস্টেবিলিটি)। এটাকে বলব বিজ্ঞানের ডোমেন বা বিজ্ঞানের বলয়।  যার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন স্যার কার্লপপার। 

 সংজ্ঞাটি অতি সাধারন কিন্ত পাওয়ারফুল। মোদ্দা ভাষায় বিজ্ঞানে পরম সত্য নেই।  সবসত্যই ত্রুটিপূর্ন। এবং এই ত্রুটিকে কমাতে গেলে- সেটির মেথডিক্যাল কন্ট্রোল দরকার।  সেইজন্য দরকার ফলসিফিকেশন। অর্থাৎ নেগেটিভ ডেটা যা প্রমান করবে সেই তত্ত্বের মধ্যে/সত্যের মধ্যে ত্রুটি আছে। বিজ্ঞানের গবেষনাতে এটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন। কারন কোন তত্ত্বে ত্রুটির কত % আছে- সেটির সঠিক নির্নয়ের মাধ্যমেই তত্ত্বটির নির্মান হয়। 

 বিজ্ঞানের যাবতীয় জার্নাল, স্যার পপারের সংজ্ঞা মেনেই নির্নয় করেন কোন কাজ বিজ্ঞানের সংজ্ঞাভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না। 

 এস্ট্রোলজি, হোমিওপাথি, মার্ক্সবাদ কেন বিজ্ঞান না-তা এই সংজ্ঞা নিয়ে সহযে বোঝা যায়। 

 দ্বিতীয় চিন্তা/প্রশ্নের ধারাটি হচ্ছে নীতি বা এথিক্স।  জীবনে  কি করিতে হইবে। কি করা উচিত টাইপের প্রশ্ন। যে প্রশ্নের টেস্টেবিলিটি হয় না। যেমন  আপনি কাউকে ভালবাসেন। এবার তাকে ভালোবাসা উচিত না উচিত না- তা পরীক্ষা করা বার করা সম্ভব না। 

আপনি বলতেই পারেন। দূর মশাই। হাগা উচিত না উচিত না- এটা কোন প্রশ্ন হল? পেটে বেগ দিলেই হাগা উচিত। কিন্ত যদি রাস্তায় পায়খানা চাপে? আসলে ব্যক্তিগত জীবনে কি করা উচিত-আর কি করা উচিত না-এগুলির পরীক্ষা সম্ভব না। এগুলি নির্নয়ের জন্য সাধারনত পাশ্চাত্য দর্শনের দুটি ভাগ আছে- একটি ইমানুয়েল কান্টের ক্যাটেগরিক্যাল ইম্পারেটিভ। যেখানে মোদ্দা কথা, যা আপনার আমার সবারজন্য ভাল, তাই শুধু ভাল। শুধু আমার জন্য ভাল, আপনার জন্য খারাপ-এটি হলে মুশকিল আছে। আবার ওই রাস্তায় পায়খানার বেগ পেলে কি করা উচিত- সেই প্রশ্নে ফিরে আসি।  হাগা পেয়েছে বলে আপনি রাস্তায় নিশ্চয় হাগতে বসে যান না। কেন? সেটা করলে আপনার ভাল হত। কিন্ত রাস্তার লোক আর হাঁটতে পারত না। অর্থাৎ আপনার জন্য ভাল, কিন্ত রাস্তার লোকেদের জন্য গেরো। তাই সেটি উচিত না। আর আপনি তা করেন ও না! পরকীয়ার প্রশ্নেও ক্যাটেগরিক্যাল ইম্পারেটিভ আসে।  পরকীয়াতে আপনি এবং আপনার প্রেমিকা না হয় স্ফূর্তি করলেন। কিন্ত আপনাদের কমিটেড পার্টনারের কি হবে? এক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে, যারা ওপেন রিলেশনশিপে, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রশ্নই না। সুতরাং সার্বিক এবং সার্ব্জনীন -বা ইউনিভার্সাল উত্তর নেই। সব স্থান-কাল-ক্ষেত্র বিশেষে বদলাচ্ছে ।

দ্বিতীয় নীতির প্রশ্নটি দেশ এবং সমাজের নীতি কি হবে? কারন এর ওপর নির্ভর করে দেশের আইন। এক্ষেত্রে প্রায় সব ধর্মনিরেপেক্ষদেশ বৃটিশ আইনের অনুশীলন করে। যার ভিত্তি জেরেমি বেন্থামের ইউলিটারিনিজম -বা যে আইন যাতে সর্বাধিক লোকের সর্বাধিক উপকার হয়।  ইসলামিক দেশগুলি শরিয়া আইন নির্ভর।  ধর্মীয় আইন কোন বৈজ্ঞানিক সার্ভে বা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্মিত না। যেমন আমেরিকাতে এই মিডটার্মে মেরীল্যান্ডে মারিজুয়ানা সেবন আইনসম্মত হল।  এবং তা হয়েছে ব্যালটে। কোন ধর্মীয় নেতা বা বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিতে তা হয় নি। 

 মোদ্দা কথা নীতির প্রশ্নগুলির অধিকাংশই বিজ্ঞানের বলয়ের বাইরে। এবং আজ পর্যন্ত অধিকাংশ লোক নীতির প্রশ্নে ধর্মের অনুসারী। যদিও সেই সক্রেটিসের দিন থেকে দার্শনিকরা বলে এসেছেন ধর্ম থেকে আগত নীতিমালা-টেরিবল। দেশ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। যার জন্য যেকোন সভ্য ধর্ম নিরেপেক্ষ রাষ্ট্রে আইনের ভিত্তি ধর্ম নয়। 
  
                                                                         (৩)

 তাহলে ধর্ম আসলে কি? মানুষের কোন কাজে আসে? 
 
 ধর্ম মানেই ঈশ্বর না। ইহুদি, মুসলমান, খ্রীষ্ঠানদের ঈশ্বর আছে। হিন্দু ধর্মের কিছু সেক্টে ঈশ্বর আছেন-যারা দ্বৈতবাদি। আবার অনেক সেক্টেই নেই। বৌদ্ধ জৈনদের ঈশ্বর নেই। জাপানের সিন্টো, চীনের কনফুসিয়াসিজম-এগুলি ইশ্বর বিহীন ওয়ে অব লাইফ। কমিউনিজম হচ্ছে লেটেস্ট ধর্ম-এখানেও মন্দির ( পার্টি অফিস), ক্যানন বা ধর্মগ্রন্থ ( দাস ক্যাপিটাল), ধর্মগুরঢ়, স্বর্গ ( শ্রেনীমুক্ত সমাজ)  -ইত্যাদি ধর্মের সব লক্ষনই আছে। 

সুতরাং ঈশ্বর উপাসনা কুসংস্কার ইত্যাদি দিয়ে ধর্মকে বোঝা সম্ভব না। পৃথিবীর সব দেশের সব ধর্মকে বুঝতে একটা সামগ্রিক দার্শনিক ফ্রেমওয়ার্ক দরকার। আর এটি দিয়েছিলেন জার্মান দার্শনিক ফ্রেড্রিক নিৎসে। তার ব্যকগ্রাউন্ডটাও বোঝা দরকার। 

 উনবিংশ শতাব্দির শেষে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির জন্য, মানুষ তাদের বহুদিনের প্রশ্ন, আমি কোথা হইতে আসিলাম, পৃথিবী এবং সূর্য্যের জন্ম-ইত্যাদি নিয়ে জানতে শুরু করেছে। ডারুইনের বিবর্তনবাদ প্রতিষ্ঠিত। ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্সে অধিকাংশ কার্যকারনের ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।   ধর্মগ্রন্থের জেনেসিস-উৎপত্তি তত্ত্ব সম্পূর্ন ভাবেই বাতিল। নিৎসে [ এবং হাইডগার] বললেন ঈশ্বর না হয় মরিলেন। কিন্ত ঈশ্বর এবং ধর্ম ছাড়া মানুষ বাঁচবে কি করে? কারন এদ্দিন পর্যন্ত মানুষকে ভাবতে হয় নি তার জীবনের কর্তব্য কি।  চার্চের অনুশাসনে সে জন্ম থেকে বিবাহ, বিবাহ থেকে সন্তানপালন, সামাজিক কর্তব্য, ইত্যাদি করে এসেছে। 

 এখন হঠাৎ করে আপনি বল্লেন ধর্মীয় অনুশাসন অর্থহীন। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এসবের মানে নেই। 
 
  তাহলে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জীবনের উদ্দেশ্য কি? সমস্যা হচ্ছে এই প্রশ্নটি সেই নীতির প্রশ্ন। বিজ্ঞানের বলয়ের অন্তর্ভুক্ত না। কারন যদি বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখি- এই মহাবিশ্বের বিপুল আয়তন এবং বিশাল সময়ের সামনে আমরা অতি ক্ষুদ্র এক উপস্থিতি। আমাদের বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়াতে এই মহাবিশ্বের কিছু হোলদোল হবে না। একদিন সূর্য্য, পৃথিবী-সবই ধ্বংস হবে।  তাহলে বাঁচার উদ্দেশ্য কি?

 বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সত্যিই কোন উদ্দেশ্য নেই। একেই বলে নিহিলিজম। উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি।
 
  কিন্ত মানুষকে বাঁচতে হবে।  প্রতিটা মুহুর্তে আমরা যা করি, তার পেছনে জীবনের সার্থকতার উদ্দেশ্য আছেই বলে আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।  এটি এক্সিস্টেন্সিয়ালিজমের  [অস্তিত্ববাদ] মূল সমস্যা। আসলেই জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই। লক্ষ্য নেই। তবু বেঁচে থাকতে হবে। এবং তা করতে গেলে একটি উদ্দেশ্য লাগবে! 

 নিৎসে ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মের ইতিহাস পর্যবেক্ষন করে সিদ্ধান্তে এলেন-আসলে এই উদ্দেশ্যহীন বিশ্বে ধর্মগুলি মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য রূপকথা শোনাচ্ছে- আশা ভরসা দিচ্ছে-ভাল কাজে উৎসাহিত করছে ( আবার খারাপ কাজেও করছে)।  স্বর্গ, পরের জন্ম এসব ধারনা ধর্মে এসবের জন্যই এসেছে যাতে সাধারন জনগন বেঁচে থাকার জন্য রসদ পায়। কারন জীবন বিরাট কঠিন এক পথ।  রোগ, শত্রু, দারিদ্র, অনিশ্চয়তা,  ফ্যামিলি, রাজনীতি-কতকিছুর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করে মানুষ বেঁচে থাকে।  এই কঠিন জীবনের মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছা তখনই থাকে-যখন আমরা একটা বড় কিছু দ্বারা অনুপ্রানিত হয়!  

 এটিকে বলা হল পজিটিভ নিহিলিজম। উদ্দেশ্য আসলেই নেই-তাই মানুষের সামনে ভাল উদ্দেশ্য তৈরী করতে হবে। কেন তারা বেঁচে থাকবে এবং বেঁচে থেকে মানুষের জন্য ভাল কাজ করবে। ধর্ম, ন্যাশানালিজম, কমিউনিজম, সমাজসেবা, আন্তারপ্রেনারশিপ-এসব কিছুই ওই পজিটিভি নিহিলিজমের বৃত্তে। 

                                                   (৪)
তাহলে  ধর্মের  ভবিষ্যত কি? 

 পজিটিভ নিহিলিজম মানুষের জীবনের একটি মৌলিক চাহিদা। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এদ্দিন সেটা ধর্ম মিটিয়েছে। কমিউনিজম, ন্যাশানালিজম-ইত্যাদি নানান রাজনৈতিক আদর্শও সেটি দিতে পারে। যারা সমাজসেবী-তারা মানুষের উপকার করে তার মধ্যে দিয়ে, জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য খুঁজছেন। যারা আন্তারপ্রেনার, নতুন সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে অনুপ্রানিত করছেন। 

 ইদানিং নানান গুরুকুল এই "পজিটিভ নিহিলিজম"  প্রোডাক্টটি সাপ্লাই করছে।  স্যোশাল মিডিয়া সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছে।  আমেরিকা, ভারত, ইউরোপে প্রচুর আধুনিক গুরু। আমেরিকাতে একার্ট, জর্ডন পিটারসন। ভারতে সদগুরু,  রবিশঙ্কর। ইস্কন, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রচারকরাও আছেন।  এর মধ্যে জর্ডন পিটারসন ছাড়া বাকীদের দর্শন এবং বিজ্ঞানে জ্ঞান বেশ দুর্বল। অনেক ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ন। 

  উল্লেখ্য আমেরিকা এবং ইউরোপের নতুন প্রজন্ম ধর্ম থেকে দ্রুত সরে আসছে। এর মূল কারন এসব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা- যা ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীন চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। আমেরিকাতে ১৯৮০ সালে নিধার্মিকদের সংখ্যা ছিল ৯%। বর্তমানে তা প্রায় ২৫% ছাড়িয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের সব দেশেই এই সংখ্যাটি ৫০% এর বেশী।  ভারত এবং মুসলমান দেশগুলিতে এমনটি হচ্ছে না। কারন স্কুলে মুখস্থ করিয়ে কিছু যন্ত্র তৈরী হচ্ছে। যারা স্বাধীন চিন্তায় অক্ষম। 

  তবে পৃথিবী বিশাল পরিবেশ বিপর্যয়ের সামনে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে খাদ্যের উৎপাদন এখন ক্রমাগত কমবে। খাবারের দাম বাড়তেই থাকবে।  ফলে রাজনৈতিক চাপে, বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ বিজ্ঞানমুখী হবে। আর বিজ্ঞানমুখী হলে তার পজিটিভ নিহিলিজমের চাহিদা বদলাবে।  সব ধর্মের সেরা প্রোডাক্ট গুলি নিয়েই হয়ত আরো উন্নত ধার্মিক চেতনার জন্ম হবে- যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। 

       কিন্ত পজিটিভ নিহিলিজমের মৃত্যু নেই।  ওটি ছাড়া এই কঠিন জীবনে  মানুষ বেঁচে থাকতেই পারবে না।



                                                               

Saturday, September 24, 2022

আশেপাশের নারীবাদি ইতিহাস-

 আশেপাশের নারীবাদি ইতিহাস----

বিপ্লব পাল, ২৩শে সেপ্টেম্বর
#১ মাশা আমিনির হিজাবের মাপ----
ফ্যাশন পুলিশের লাঠির ঘা খেয়ে মাশা আমিনির মৃত্যুতে ইরান জ্বলছে। ইরানে মোল্লাতন্ত্র বনাম নারীবাদিদের লড়াই ইসলামিক বিপ্লবের শুরু থেকেই। ১৯৭৮ সালে শাহ রেজা পল্লভীকে সরানোর লড়াই একসাথে লড়েছিলেন মোল্লা এবং নারীবাদিরা ( পড়ুন বামেরা)। তারাই মোল্লাদের আদর করে এনেছিলেন । কারন বামেদের কাছে শাহ ছিলেন পশ্চিমের প্রতিনিধি! মোল্লারা ১২ মাসের মধ্যে প্রায় লাখ খানেকের বেশী কমিনিউস্ট হত্যা করে, সহবিপ্লবীদের আগেই সঠিক জন্নতে পাঠিয়েদিয়েছিলেন। নারীবাদিদের কয়েদ করা হয়েছিল। জঘন্য শরিয়া আইন চাপিয়ে দেওয়া হয় মেয়েদের বিরুদ্ধে। যার একটি হচ্ছে, সন্তানের ওপর একমাত্র বাবার অধিকার স্বীকৃত। অর্থাৎ ডিভোর্স আইনে ছেলেমেয়েদের ওপর মায়ের কোন অধিকার নেই। পাঁচ মাসের শিশু হলেও নেই। শরিয়া আইনে মেয়েরা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন।
এর বিরুদ্ধে আজ না, গত চল্লিশ বছর ধরেই ইরানের মহিলারা লড়ছেন। প্রচুর মহিলা নেত্রীকে কয়েদ করে মেরে ফেলা হয়েছে ইরানে।
ইরানের নারীবাদি আন্দোলন নিয়ে, গত দুই দশক মুক্তমনাতে অনেক লিখেছি। এসব লিখতে গেলে আপনি বাংলার বামেদের কাছে হবেন সিয়ার এজেন্ট। আর মুসলমানদের কাছে মোদির এজেন্ট।
এইসব বাম, ইসলামিস্ট, হিন্দুত্ববাদিদের কাছে শত্রু হচ্ছে পশ্চিম-ওয়েস্ট! ওয়েস্টার্ন কালচার। যদিও শাহ পল্লভীর আমলে ইরান ইউরোপের প্রায় সব রাষ্ট্রগুলির থেকেই শিক্ষা এবং সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। বাম এবং মোল্লাদের বিপ্লব তাকে উৎখাত করে, কারন শাহ ছিলেন "পশ্চিমের" এজেন্ট! পশ্চিম ঘেঁসা কোরাপ্ট নেতা। তার নেতৃত্বে ইরানের মহিলারা স্বাধীন জীবনের স্বাদ পাচ্ছিল-ইসলামিক সমাজে তা ছিল কোরাপশনতুল্য!
শাহ অন্যান্য শাসকের মতন ফাইন্যান্সিয়ালি কোরাপ্ট ছিলেন বটে-কিন্ত ইরানকে ইংল্যান্ডের সমকক্ষ করে তুলেছিলেন। এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল নারীশিক্ষার ব্যপক প্রসারের জন্যই। কিন্ত মুসলমান সমাজে তা পাপের কাজ!
পশ্চিমের বিরুদ্ধে একাধারে বাম-ইসলামিক-হিন্দুত্ববাদিদের জিহাদ ব্যপারটা আমার ব্যপক লাগে। যদিও আমি গত বাইশ বছর আমেরিকা প্রবাসী, পশ্চিমা সংস্কৃতির আলাদা কোন অস্তিত্ব আমি খুঁজে পাই নি। মানুষ এবং তার চাওয়া পাওয়া পৃথিবীর সব দেশেই এক। কিন্ত মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা না থাকলে, তার মানসিক বিকাশ সম্ভব না। ব্যক্তি স্বাধীনতা= পশ্চিমা সংস্কৃতি, এটা হাস্যকর দাবী। ভারতের ইতিহাস বলে, আজ থেকে ২৫০০ বছর পূর্বে ব্যক্তিস্বাধীনতা না থাকলে, এই আর্য্যভূমে একই সাথে জৈন, চার্বাক, বৌদ্ধ, অভাজিকার মতন নাস্তিক্য ধর্মের বিকাশ অসম্ভব ছিল।
ইতিহাস পড়ে আমি নিশ্চিত, অতীত ভারতে যে চিন্তার স্বাধীনতা, আচরনের স্বাধীনতা মানুষ ভোগ করত-তা উনবিংশ শতাব্দির ইউরোপেও ছিল না। উনবিংশ শতাব্দির ইউরোপে ইমানুয়েল কান্ট থেকে ফ্রেডরিক নিৎসে-সবাই দর্শন চর্চা করেছেন, বা করতে বাধ্য হয়েছেন পর্দার আড়ালে। সেখানে আড়াই হাজার বছর আগে, এই ভারতভূমে বুদ্ধ এবং মহাভীর নির্ভয়ে তাদের বৈপ্লবিক চিন্তা প্রচার করেছেন। রাজানুগ্রহও পেয়েছেন। বুদ্ধের শেষযাত্রায় ভারতের ৭২ জন রাজা অংশ নিয়েছিলেন। আর ব্যক্তিস্বাধীনতার রাজনৈতিক দাবী প্রথম তোলেন লাউৎসে-চীনের দার্শনিক যিনি প্রায় বুদ্ধের সমসাময়িক।
সুতরাং এই ব্যক্তিস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, আচরনের স্বাধীনতা, নারীর স্বাধীনতা মোটেও ওয়েস্টার্ন কালচার না। এ আমাদের প্রাচ্যের ঐতিহ্য। ভারতের ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন বিদেশী শাসকের পায়ের তলায় থাকার জন্য, চিন্তার স্বাধীনতার এই ঐতিহ্য এ অঞ্চলের লোকজন ভুলে গেছে।
#২ বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ান মহিলা ফুটবল টিম
যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে প্রাক্টিস করে বাংলাদেশের মহিলা টিম সাফ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে নেপাল এবং ভারতকে দুরমুশ করে-তার জন্য কোন প্রসংশাই যথেষ্ট না। একদিকে তৃতীয় বিশ্বের সীমাহীন দারিদ্র, অন্যদিকে মোল্লাদের রক্তচক্ষু- এইদুই সাঁড়াশি আক্রমনের সামনে কৃষ্ণারানীদের টি্মের পারফর্মান্স শুধু হলিউড বা বলিউডের সিনেমাতেই দেখেছি। বাস্তবে না।
ইরান এবং বাংলাদেশ-দুটি ক্ষেত্রেই লড়াই নারীবাদি বনাম মোল্লাতন্ত্র। আমি একথা বহুদিন থেকেই লিখে আসছি-আসলে মোল্লাতন্ত্র বলে কিছু নেই। পুরুষতন্ত্রের অনেক রাবনমুখের একটি হচ্ছে মোল্লাতন্ত্র। সুতরাং মেয়েদের সাথে মোল্লাদের গৃহযুদ্ধ অনিবার্য্য। মেয়েদের ঝাঁটা ছাড়া মোল্লাদের মৃত্যু নেই। বাম রাজনীতি বরাবর নারীবাদিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে- সে সোভিয়েত, ইরান বা বাংলাদেশ- যেদেশের ইতিহাসই আপনি দেখুন না কেন। সুতরাং বাম রাজনীতির স্পর্ষে অহল্যার শাপমোচন হবে, মেয়েরা মোল্লাদের কাছ থেকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার পাবে, তা কোন দেশে হয় নি। হবেও না। ওই লড়াইটা মেয়েদের নিজেদেরই করতে হবে!
# ৩ রাধাতত্ত্ব ইসলামিক ষড়যন্ত্র!
এটা হোয়াটসাপ ইউনিভার্সিটির লেটেস্ট পিএইচডি থিসিস যা হোয়াটসাপে বাঙালী হিন্দুদের গ্রুপগুলোতে খুব জনপ্রিয় হয়েছে!
এর মোদ্দা কথা- মহাভারতে কৃষ্ণের কোন রাধা উপাখ্যান নেই! তাহলে কৃষ্ণের নাম কেন এই পরকীয়ার "পাপের" সাথে জড়ালো? কে বাজারে আমদানী করেছে রাধাকৃষ্ণের এই অবৈধ প্রেমকাহিনী? নিশ্চয় সুলতানী আমলের হিন্দু পন্ডিতরা! সুতরাং নিশ্চয় এটাও সেই ইসলামিক চক্রান্তের ফসল---
যাকগে, হিন্দু মোল্লারা যে এদ্দিন বাদে আবিস্কার করেছে রাধাচরিত্র মহাভারতে নেই- সেটাই আশ্চর্য্য। তবে আরেকটু রিসার্চ করলে উনারা জানতে পারতেন, রাধা বৈষ্ণব ধর্মের সাধনমার্গ এবং বৈষ্ণব ধর্মটাই ১০০% বৈদিক না! সুতরাং বৈদিক সমগ্রে রাধাকাহিনী থাকার কথা না!
যারা বৈষ্ণব তারা ভালোই জানেন, রাধা রূপক। সব ভক্তই রাধারূপে কৃষ্ণকে ভালবাসে-কারন এ ভক্তিমার্গ। আর এপ্রেম পরকিয়া। পরকিয়া প্রেমে যেমন সমাজ সংসারকে তুচ্ছ করে, প্রেমরসে ডুবতে হয়-রাধাভাব মানেই সেই গভীররস -ভক্ত যেন সমাজ সংসারের বাঁধন ভুলে কৃষ্ণপ্রেমে ডুবে যায়! আর বৈষ্ণব দর্শনে কৃষ্ণ হচ্ছে সুপার কনসাসনেস বা বিশ্বচৈতন্য।
বৈষ্ণব ধর্মের উৎপত্তি নিয়ে হাজার হাজার গবেষনাপত্র আছে। এর উৎপত্তি ইসলাম আসার অনেক আগে। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দি। মূলত দাক্ষিনাত্যে। আর্য্য অনার্য্য ধর্মের সব থেকে বড় সিন্থেসিস বৈষ্ণব ভক্তিবাদ।
গোটা বিশ্বের হিন্দুদের ৬০% বৈষ্ণব। বাংলায় সেটা ৯০% হবে। দাক্ষিনাত্যেও তাই। আর বিদেশী হিন্দুদের মধ্যে প্রায় ৯৯% ইস্কনের বৈষ্ণব-বা গৌড়ীয় বৈষ্ণব।
বৈষ্ণব ধর্ম আসলে উত্তরের জাতপাত সম্বলিত ব্রাহ্মন্য ধর্মের বিরুদ্ধে দক্ষিন এবং পূর্বভারতের প্রতিবাদি আন্দোলন-যেখানে জাতপাত নেই। সংস্কৃত মন্ত্রর বদলে হৃদয়ের ভালোবাসার মন্ত্রে কৃষ্ণ পূজিত হন। শ্রী চৈতন্য গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রতিষ্ঠা না করলে, আজকে সব বাঙালীই মুসলমান হত।
সুতরাং অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিজেপির লোকজন এখন বৈষ্ণব ধর্মের পেছনে লেগেছে। এটা হওয়ারই ছিল। ব্রাহ্মন্য ধর্মের প্রতিনিধিরা একদিন না একদিন বৈষ্ণবদের পেছনে লাগতই। এটা কেন এত দেরীতে হল, সেটাই ভাবছি।
বিজেপির হিন্দুত্ববাদি লোকজন হিন্দু দর্শন , প্রাচীন ভারতীয় দর্শন কি বোঝে আমি জানি না। তাদের এবং ভারতের লোকেদের দুটো জিনিস জানা উচিত।
১) ভারতে ইসলাম এবং খৃষ্ঠান রাজশক্তি ৮০০ বছর থাকা সত্ত্বেও, হিন্দু ধর্ম টিকে গেছে। আফ্রিকা বা ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়াতে কিন্ত স্থানীয় ধর্মের লোকেরা টেকে নি। তারা মুসলমান বা খৃষ্টান হয়ে গেছে। এই হিন্দু ধর্ম ভারতে টিকে যাওয়ার মূল কারন বৈষ্ণব ধর্ম। তার ভক্তিরস, তার অহিংসা এবং মানবতার তীব্রতাই হিন্দুধর্মকে টিকিছে বিদেশী রাজশক্তির বিরুদ্ধে। তারজন্য কোন হিন্দুত্ববাদি রাজশক্তি লাগে নি। আজ ইস্কন গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়। তারজন্য কোন মোদি-আমিত শায়ের পেশী শক্তির দরকার লাগে নি।
২) ধর্মকে রাজনীতির সাথে জড়ালে, সেই ধর্মের কি হাল হয়, তা মুসলমানদের দিকে তাকালে বোঝা যায়।
ইসলামে বিশ্বাস করে লোকে বিন লাদেন ও হয়, আবার দাতা আগাখান ও হয়।
ইসলামের ইতিহাস পড়লে বোঝা যায়, একদা সব থেকে প্রগতিশীল ধর্মটি কিভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভীদের হাতে নষ্ট হয়েছে-কারন তারা ইসলামের জনপ্রিয়তা বেচে রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন।
হিন্দুত্ববাদি রাজনৈতিক শক্তিও ঠিক এই কাজটিই করছে।
জীবনে কঠিন মুহুর্তগুলোর মোকাবিলায় আমি নিজেই উপনিষদের স্বরণ নিই। আবার পাশ্চাত্য দর্শনের আলোতেই হিন্দু এবং বৌদ্ধ দর্শনকে বুঝেছি। এ একান্তই ব্যক্তিগত- একান্তই নিজের রিয়ালাইজেশন। এগুলিকে রাজনীতিতে ঢোকালে, তা পচতে বাধ্য।

Friday, September 9, 2022

রাণীকাহিনী

 রাণীকাহিনী

-বিপ্লব পাল, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২২

(১)

বৃটেনের রানীকাহিনীর সব থেকে আকর্ষক দিক-অন্যান্য দেশে রাজা, বৃটেনে রাণী কেন? আরো খোলসা করে বললে, একটা দেশের রাজকন্যা-তার বাবার রাজত্ব পাচ্ছেন- এটা বৃটেনেই দেখা যায়। ভারতের ইতিহাসে মাত্র চার বছর রিজিয়া সুলতানা শাসক ছিলেন। মহাভারতে শিখন্ডী সব থেকে ভাল এবং অভিজ্ঞ সেনানায়ক হওয়া সত্ত্বেও তিনি দ্রুপদ রাজ্যের দাবিদার ছিলেন না। বা তাকে তখন পান্ডব পক্ষের সেনাপতি নির্বাচন করা হয়, কৌরবরা মেনে নেয় নি।

পৃথিবীর সব দেশেই রাজকন্যাদের ভবিষ্যত বাপের রাজত্ব ছেরে, অন্য রাজ্যের রাণী হওয়া। সে রাণী কিন্ত শাসক নন। বৃটেনে "রাণী" অফিশিয়াল শাসক। তার পিতা বা মাতা যদি বৃটেনের কিং বা কুইন হন, তবেই তিনি, কুইন পদের দাবিদার। রাজপরিবারে বিয়ে করে কুইন হওয়া যায় না। রাজা যদি বৃটেনের শাসক হন, যেমন এখন হলেন চার্লস (৩), তার স্ত্রী ক্যামিলা কিন্ত কুইন নন। কুইন কনসর্ট।

কুইন এলিজাবেথ ও কিন্ত বৃটিশ রাজপরিবারের বিবাহিত স্ত্রী না। তিনি ছিলেন রাজা জর্জ-৬ এর কন্যা। জর্জ-৬ এর তিন কন্যা। তার মধ্যে এলিজাবেথ-২ বড়বোন। তাই বৃটেনের সিংহাসন গেছে তার কাছে। তার স্বামী ফিলিপ বরং রাজপরিবারে বিয়ে করেছেন। তাই কুইনের স্বামী-কিং নন। ফিলিপকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল ডিউক অব এডিনবরা। শুধু তাই না। পাবলিক সমক্ষে ফিলিপকে মাথা নত করতে হত কুইন এলিজাবেথের সামনে। চলতে হত তার পেছনে পেছনে। অবশ্যই রাজ সিংহাসনে এলিজাবেথ বসার পর। ফিলিপ এসব মেনে নিতে পারেন নি। মনের দুঃখে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে এক বছর বৈরাগী হয়ে পৃথিবী ঘুরেছেন। আবার ফিরে এসেছেন তার ভালোবাসার নারীর কাছে। যাইহোক ঠিক একই কারনে ডায়না কোন দিনই বৃটেনের রানী পদের দাবীদার ছিলেন না। তিনি হতেন কুইন কন্সর্স্ট । যিনি কিন্ত শাসক নন।

এতটা কিচ্ছার দরকার ছিল না। আমার লেখাটা ছিল রানীর শাসন নিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বৃটেন আর রাশিয়ার রোমানভ বংশের জারের ফ্যামিলিতেই রানীর শাসন ছিল।

আর কোথাও পুরুষতন্ত্রের জন্য, রাজকন্যা বা রানীরা শাসক হতে পারতেন না। হ্যা ঝাঁসির রানী লক্ষীবাই বা চীনের কুইন মাদার দোগের কি- এরাও শাসক ছিলেন। কিন্ত স্বীকৃত শাসক না। নিজের নাবালক পুত্রকে নামেমাত্র রাজা করেই এরা পর্দার পেছনে শাসন করেছেন। কারন পুরুষতন্ত্র নারী শাসককে মেনে নেয় নি। প্রায় কোন দেশেই না। বাংলার ইতিহাসই দেখুন। কোন নারী শাসক নেই। শেখ হাসিনা না মমতা ব্যানার্জি এরা আধুনিক গণতন্ত্রের ফসল। কিন্ত রাজতন্ত্রে রাজকুমারী রাজা হচ্ছেন- এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোথাও ছিল না। ব্যতিক্রম শুধু বৃটেন এবং রাশিয়া-বা আরো বিস্তারিত বললে পূর্বের শ্লাভ রাজ্যগুলির মধ্যে।

কিন্ত কেন? শুধু তাই না। আমার ইংল্যান্ডের ইতিহাস পড়ে এটাই মনে হয়েছে- বৃটেন যে গোটা পৃথিবী শাসন করেছে-এর মূল কারন বৃটেনের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। যেখানে মেয়েরা শাসক হতে পারে। যার জন্য ১০০,০০০ বৃটিশ, ৩০ কোটি ভারতীয়কে শাসন করেছে। কেন? এটা আমার নিজস্ব মতামত। আমি পরে ব্যখ্যা করছি।

(২)
বৃটেনের ইতিহাসে রানীর শাসন বহুপুরাতন। যেই যবে থেকে রোমান ঐতিহাসিকরা ইংল্যান্ডের ইতিহাস লিখছেন। প্রথম শতাব্দিতে বৃটেন ছিল রোমের অধীন। ইংল্যান্ড বিভক্ত ছিল অসংখ্য করদ রাজ্যে। তারা প্রায় রোমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত। এমন এক করদ রাজ্যের রাজা ছিলেন কসুতোগাস। আসিনি উপজাতিদের সর্দার। তার স্ত্রী বোদিকা। তার দুই কন্যা। পুত্র ছিল না। রাজা কসুতোগাস রোমের সাথেই ছিলেন। তিনি উইল করে যান তার মৃত্যুতে তার বড় কন্যা হবে, সেই রাজ্যের শাসক। রোমের লোকাল কনসাল তা মানে নি। উলটে তার দুই কন্যাকে ধর্ষন করা হয়। রানী বোদিকাকে চাবুক মারা হয়। বোদিকা আত্মসমর্পন করেন নি। এই ঘটনায় বৃটেনের সব রাজ্যের শাসকরাই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে রোমের বিরুদ্ধে। তারা বোদিকার নেতৃত্বে প্রথম বারের মতন ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহী সেনাবাহিনী গঠন করে। সেটিই ছিল ইতিহাসের প্রথম ইংলিশ সেনাবাহিনী। বোদিকা রোমের সাথে যুদ্ধে পরাস্ত হোন ('৬১ খৃষ্টাব্দ) ।

কিন্ত এই বিদ্রোহের ঘটনা সুদূরপ্রসারী। ইংল্যান্ডের জনমানসে, রোমান পিতৃতান্ত্রিক শাসকদের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের বিদ্রোহী জনগনের কাছে "মাতৃতান্ত্রিক শাসন এবং রাজকুমারীদের উত্তরাধারিকার" একটা বড় ইস্যু ছিল। ফলে ইংল্যান্ড যখন রোমান সাম্রাজ্য থেকে মুক্তিপেল- ইংল্যান্ডের আদিবাসী আইনে রাজকুমারীদের শাসক হওয়া কিন্ত ট্রাডিশন হয়ে গেছে। সেটা বোদিকার ওই বিদ্রোহকে স্বরণ করেই। এবং তারপর ও ইংল্যান্ডে ভাইকিং দের রেইড চলতেই থাকবে। এবং ভাইকিং রাজারাও রাজকুমারীর উত্তরাধিকার মেনে নেয়। যদিও ভাইকিংদের মধ্যে এই চল ছিল না।

কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে সেক্ষেত্রে ঝাঁসির রাণী লক্ষীবাইএর ক্ষেত্রে বৃটিশরা উলটো পথে গেল কেন? এত সেই বৃটেনের বিরুদ্ধে রোম যা করেছিল, তারই ফ্ল্যাশব্যাক। কেননা ঝাঁসির রাজা আমৃত্য বৃটিশ অনুগতই ছিলেন। সেক্ষেত্রে ঝাঁসির রানীর শাসন কোম্পানীর লোকের মানে নি কেন? সোজা উত্তর হচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সেই রাজ্য বেচে আরো বেশী লাভের আশায় ছিল। যাইহোক ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এসব দুরাচারের কারনেই রাণী ভিক্টোরিয়া কোম্পানীর হাতে আর ভারতের শাসনভার রাখেন নি। নিজের হাতে নেন।

এবং একটা হার্ড ট্রুথ হচ্ছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনে ভারতের জিডিপি ছিল নিম্নগামী। যবে থেকে ভারতের রানীর শাসন শুরু হয়, তবে থেকে ভারতের লোকেরা অনেক বেশী আইন সুরক্ষা পেয়েছে এবং জিডিপি গ্রোথ ও এই সময় আবার পজিটিভ হয়। ভারতের বৃটিশ কলোনিয়াল ইতিহাসের দুটো অধ্যায়। একটা রানীর শাসনের আগে। কোম্পানীর শাসন। যে সময় লুঠ হয়েছে অবাধে। ভারতের জিডিপি নেগেটিভে ছিল। অন্যটা রাণীর শাসন। যেখানে জিডিপি গ্রোথ ছিল। আইনি সুরক্ষা ছিল অনেক বেশী। ডেটা থেকে খুব পরিস্কার আলাদা করা যায় এই দুই অধ্যায়। মনে রাখবেন ওই সুরক্ষা থাকার কারনেই, রানীর শাসন শুরু হওয়ার পরেই একমাত্র টাটা বা বিড়লারা শিল্পপতি হিসাবে উঠতে থাকেন। যদিও অর্থের সোর্স ছিল চীনে আফিম বেচা।

আপনি বলতেই পারেন তাতে কি? ভারতীয়দের কি অধিকার ছিল রানীর শাসনের বিরুদ্ধে কিছু বলার? কিন্ত সেই প্রশ্ন ত আজও উঠবে। বর্তমানেও দিল্লী বা কোলকাতার শাসকদের সমালোচনা করা বিপজ্জনকই বটে!

তবে কলোনিয়াল শাসন ভাল না খারাপ এটা এই প্রবন্ধের আলোচ্য না। আমার একটা উত্তর দেওয়া বাকি আছে। কেন বৃটেনে এই রানীর শাসনের ঐতিহ্য, এই জাতটিকে মাস্টাররেস করে তোলে।

বৃটেনে রাজকুমারী এবং মেয়েদের প্রায় ছেলেদের সমানই শিক্ষা দেওয়া হত। তলোয়ার খেলা, ঘোড়ায় চড়া বা শিক্ষা। প্রায় সবক্ষেত্রেই মেয়েরা ছেলেদের সমকক্ষ ছিল। সেটা বৃটেনের সেই আদিবাসী সমাজ থেকেই চলে আসছে।

যে দেশে মায়েরা শিক্ষিত এবং যুদ্ধবিদ্যায় স্কিল্ড হবে, সেই দেশে বীর এবং নেতার সংখ্যাও বেশী হবে। যার জন্য ইংল্যান্ডে নেতার অভাব কখনো হয় নি ইতিহাসে ( তবে আজ হচ্ছে! )। বৃটিশরা যে বীরত্ব এবং নেতৃত্বে অনেক এগিয়েছিল-সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারন ক্লাইভ যখন ৩০০০ সৈন্য নিয়ে সিরাজকে আক্রমন করেন-তখনো তিনি জানেন না মীরজাফর কোন দলে। আদৌ গদ্দারি করবে কি না। ফলে পলাশী যুদ্ধের দুপুর বেলা থেকে, তার সৈন্যরা মীরজাফরের সৈন্যদলকেও আক্রমন করে ছত্রভঙ্গ করে। মীরজাফর গদ্দারি করবেই এই ভরসাই ক্লাইভ আক্রমন করেন নি। করেছিলেন নিজেদের উন্নত কামান এবং যুদ্ধবিদ্যার জোরেই। ক্লাইভের সমকক্ষ স্ট্রাটেজিস্ট এবং সেনাপতি-সেই সময় ভারতে কেউ ছিল না। পলাশীর যুদ্ধের আগে দাক্ষিনাত্যে ক্লাইভ আরো দুটো যুদ্ধ জিতেছেন। যেখানে তার সেনা বাহিনী ছিল নবাবাদের থেকে অনেক ছোট। এবার প্রশ্ন করুন লর্ড ক্লাইভের মা কে ছিলেন?

তার মায়ের নাম রেবেকা। যদিও ক্লাইভ ম্যাঞ্চেস্টারে তার মাসি এবং মেসোমশাইএর কাছে বড় হয়েছিলেন। তিনি তার মাসীর কাছ থেকেই প্রাথমিক যুদ্ধবিদ্যার পাঠ নেন। এবং সমস্ত স্কুল জীবনে মারপিট করতে অভ্যস্থ ছিলেন। যাকে বলে এডিটেক্ট টু ওয়ার । এটি এসেছিল, তার মাসীর কাছ থেকেই।

আমি জানি ভারতে বৃটিশ উপনিবেশের ইতিহাস যেভাবে পড়ানো হয়, তাতে ভারতীয়রা লর্ড ক্লাইভ ইত্যাদি চরিত্রগুলিকে ঘৃনা করতে শেখে। তার নিশ্চয় সঙ্গত কারন আছে। কিন্ত কেউ একবার ও ইতিহাসে খোঁজ নেয়-কি করে ১০০,০০০ বৃটিশ ৩০ কোটি ভারতীয়কে দাবিয়ে রেখেছিল? কি করে ক্লাইভ প্রায় সব যুদ্ধে অনেক কম সেনানী নিয়ে নবাবদের বিরাট বিরাট বাহিনীকে হারিয়েছেন?

ক্লাইভ এবং তার সমসাময়িক বৃটিশ জেনারেলদের যুদ্ধকুশলতা বুঝতে ইতিহাসের অনেক গভীরে যেতে হবে। কিন্ত মনে রাখা দরকার এইসব যুদ্ধ বিশারদ ক্লাইভদের জন্যেই গোটা বিশ্বে বৃটিশ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে যায় । কারন দেশীয় রাজারা বা নবাররা যুদ্ধে বা রাজনীতিতে ক্লাইভদের সমকক্ষ ছিলেন না। কিন্ত কেন ?

কারন ক্লাইভ সহ বৃটিশ জেনারেলরা আসতেন বৃটেনের এলিট ফিউডাল পরিবারগুলি থেকে। যেখানে তারা বীরত্বের শিক্ষা, যুদ্ধের শিক্ষা মা বা মাসী পিশীদের কাছ থেকে পেতেন। মেকস এ লটস অব ডিফারেন্স।

ইতিহাসের গভীরে গেলে অনেক কিছুই শেখা যায়। আর শুধু স্কুলের বই পড়লে কিছু কিছু লোকের প্রতি একগাদা ঘৃনা তৈরী হবে-যা সম্পূর্ন সিস্টেম ম্যানুফাকচারড। 

Sunday, August 14, 2022

স্বাধীনতার ৭৫ বছর - "ভারত" বিশ্বের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পরীক্ষা

 যখন ছোট ছিলাম, ভারতে ছিলাম, ভারতের ইতিহাস বই পড়তাম, তখন এক ভারতকে চিনতাম। 

  এখন বয়স হল, ভারতের বাইরে আছি দীর্ঘদীন। পৃথিবীকে যত চিনছি, যত বিশ্বের ইতিহাস আর ভূগোলকে জানার সুযোগ হচ্ছে, অন্য ভারতকে আবিস্কার করছি প্রতিদিন।  হতে পারে সেটা আমেরিকার লেন্সে, দর্শনের  মাইক্রোস্কোপে আর ইতিহাসের দূরবীক্ষনে ।  কিন্ত প্রতিনিয়ত এক অদ্ভত দেশকে আবিস্কার করি! সত্যিই,  এমন দেশটি কোথাও গেলে পাবে নাকো তুমি!

ভারত বা যেকোন দেশই একটা "স্যোশাল কনট্রাক্ট"- বিবাহের মতন জুটি বাঁধা। বিয়ে টেকাতে যেমন প্রতিনিয়ত সবাই কিছুটা  নিজেদের  ব্যক্তিস্বাধীনতা বিসর্জন দিই, নিজস্ব স্বত্ত্বা বিসর্জন দিচ্ছি,  নানাবিধ কম্প্রোমাইজ করে থাকি-  এবং তার বিনিময়ে বিবাহ থেকে অনেক কিছুর নিরাপত্তা পাই।   দেশের সাথে তার জনগনের সম্পর্ক ও তাই। কিন্ত আরো অনেক জটিল স্কেলে।  একটা দেওয়া নেওয়ার সম্পর্কের চুক্তি।  দেশের জন্য সবাইকেই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। বিনিময়ে দেশ দেবে। কিন্ত এই দেওয়া নেওয়ার সম্পর্কে ফাঁকিবাজি বড্ড বেশী। 

ঐক্যবদ্ধ অখন্ড ভারতের ধারনা মহাভারতে বারংবার উচ্চারিত। কেন? কারনটা মহাভারতের লেখক বারংবার বলেছেন। এক, তাতে রাজ্যগুলির মধ্যে যুদ্ধ হবে না। শান্তি বজায় থাকলে,  দেশে সমৃদ্ধি আসবে। বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে ভারত নিরাপদ থাকবে। এই প্রয়োজনেই ভারতের উৎপত্তি এবং বর্তমান অস্তিত্ব। ভারতের মিলিটারি বাজেট জিডিপির ২%।  আজ ভারতের প্রতিটা রাজ্য যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়, তাহলে প্রতিটা রাজ্যকে আলাদা মিলিটারি রাখতে হবে। এবং তাতে সামরিক বাজেট হবে জিডিপির ১০%+ । কিন্ত তাতেও নিরাপত্তা অনেক অনেক বেশী কমবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রমান করে দিয়েছে, বড় শক্তিশালী দেশের নাগরিক না হলে, ছোট দেশের নাগরিকরা নিরাপদ না।  ইউ এন এক ঠুটো জগন্নাথ দর্শক। কোন ছোট রাষ্ট্রকে বড় রাষ্ট্রের আগ্রাসন থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। 

কিন্ত মহাভারত এক উপন্যাস। অখন্ড ভারত ইতিহাসে প্রথম বার তৈরী হল আলেক্সান্ডারের আক্রমন থেকে শিক্ষা নিয়ে।  আলেক্সান্ডারের আক্রমন প্রমান করে দিল, বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে বাঁচতে অখন্ড ঐক্যবদ্ধ ভারত দরকার। ফলে গোটা এশিয়াতে গ্রীক সাম্রাজ্য রাজত্ব করেছিল আলেক্সান্ডারের মৃত্যুর পরও দুশো বছর। কিন্ত ভারতে রইল ভূমিপূত্রদের মৌর্য্য সাম্রাজ্য। কারন চানক্য বা বিষ্ণুগুপ্ত বুঝেছিলেন ভারত নিজে "সাম্রাজ্য" না হলে, এই ভূখন্ড অন্য সাম্রাজ্যের অধীন হবে। 


চানক্যের রাজনৈতিক শিক্ষার আরেক সফল প্রয়োগ দেখায় চীনের কুইন সাম্রাজ্য। ২৪৭ খৃঃপূর্বাব্দে তারা বাকি পাঁচটি রাজ্যকে হারিয়ে গোটা চীনকে একটি অখন্ড রাষ্ট্রের আওতায় আনে।  ফলে চীন দীর্ঘদিন পর্যন্ত-  ইউরোপিয়ানদের আগমনের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সব থেকে সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকে। এবং তারা আবার পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসাবে নিকট ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। 

কিন্ত ভারত ভুলে যায় বিষ্ণুগুপ্তকে। ফলে চানক্যের ভবিষ্যতবানী সফল করে উত্তর-পশ্চিমের দুর্ধ্বষ্ব পাহাড়ি যোদ্ধারা  ইসলামের ধর্মজয়ে ধ্বজ্জা উড়িয়ে ভারত আক্রমন করে। সফল ভাবে তারা ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে।  বিচ্ছিন্ন ভারতের ক্ষমতা ছিল না-সেই শক্তিকে রুখে দেওয়ার। ফলে প্রথমে মধ্য এশিয়ার উপজাতি, পরে ইউরোপিয়ান বনিকদের হাতে এই অঞ্চলের লোকেরা দীর্ঘদিন পদানত ছিল।  যেমন অধিকাংশ মুসলমান শাসকরা  বিদ্রোহের ভয়ে স্থানীয় লোকেদের ঘোড়া, অস্ত্র এবং সৈনিক রাখতে দিত না। বা দিলেও অনুমতি সাপেক্ষে দিত। বৃটিশরা ভারতের লোহ শিল্পকে ধ্বংস করে যাতে অস্ত্র তৈরী না হয়। আর স্থানীয় রাজরাজাদের সেনাবাহিনী তুলে দেওয়া হয় প্রোটেক্টারেট স্টেটের নামে।  

বলতে গেলে বর্তমান এই ভারতের শুরু মুঘলদের হাত দিয়ে যারা মধ্য এশিয়ার থেকে আগত। বৃটিশরা মুঘলদের ভারত নামক পরীক্ষাটাই এগিয়ে নিয়ে গেছে।  সাথে যোগ হয়েছে ইউরোপিয়ান লিব্যারাল ডেমোক্রাসির আদলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

মুঘল আমলেই ভারতের স্থানীয় সংস্কৃতিগুলি- যেমন বাংলা বা তামিল বা মারাঠি জাতিগোষ্ঠিগুলি দিল্লীর অধীনে আসে। দিল্লী থেকে আগত গর্ভনররা ভারতের রাজ্যগুলি শাসন করতে থাকেন। বৃটিশ আমলে সেই ট্রাডিশনই বজায় ছিল-শুধু দিল্লীর বদলে লন্ডন থেকে গর্ভনর আসত।  স্বাধীনতার পর, স্বয়ত্ব শাসনের পরিধি বাড়াতে রাজ্যগুলির হাতে "কিছু" ক্ষমতা দেওয়া হয়-গর্ভনরের পজিশনটা টিটুটেলার হেড হিসাবে থেকে যায়। 

একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। এই শতকে পৃথিবীর যে তিনটে দেশ বৃহত্তম এবং সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে চলেছে- ইউনাইটেড স্টেটস, চীন এবং ভারত- তাদের ভিত্তি বিশাল দেশের বিপুল অর্থনীতি।  জাপান, জার্মানী, বৃটেন, ফ্রান্সের মতন উন্নত দেশগুলিও ভারতের সাথে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পেরে উঠবে না। 

এটা এক ধরনের মির‍্যাকল। ম্যাজিক।  ১৯৪৭ সালে ভারত ছিল গরীব একটা দেশ। এখনো তাই আছে। কিন্ত এখন দেশে গরীবের সাথে সাথে বিরাট বড় বড় পুঁজি রয়েছে। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি আছে।  বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে শিক্ষিত দ্বিতীয় বৃহত্তম মানব সম্পদ রয়েছে। এখন মার্ক জাকারবার্গ বা জেফ বেজোসকেও ভারতে আসতে হয়। ভারতের কথা ভাবতে হয়। ভূরাজনীতি ভারত ছাড়া ভাবা যায় না। 

কোন সন্দেহ নেই, এ এক উদীয়মান ভারত। অদ্ভুত দেশ। এত জাতি, এত ভাষা, এত ধর্ম সত্ত্বেও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। 

 কিন্ত আমি সম্পূর্ন নিশ্চিত না। স্কেপ্টিক্যাল। কারন একটাই। 

 একটা দেশকে ধ্বংস করতে আজকাল পরমানু বোমার দরকার হয় না। ট্যাঙ্ক গোলাবারুদ, বায়োওয়েপন, ভাইরাস কোন কিছুই ভারতকে ধ্বংস করতে পারবে না। বিচ্ছিন্নবাদি আন্দোলন ও পারবে না। 

তাও ভারত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে মানুষের শিক্ষা সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হতে চলেছে।  শিক্ষা বিষয়টি ভারতের শাসকেরা কখনোই সিরিয়াসলি নেয় নি। ভারতের স্কুলে যে মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর শিক্ষা চলছে- তা বর্তমানে সম্পূর্ন অকার্যকরী। অদরকারি। এতে এক বিকালঙ্গ নাগরিক সমাজ তৈরী হচ্ছে, যারা চিন্তা করতে জানে না।  এরা দেশ দেশ বলে লাফাতে পারবে, কিন্ত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।

ভারতকে যদি কোন কিছু ধ্বংস করে, সেটা হবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবহেলা। উদাহরন দিই? গরমকালে ভারতের সব শহরে জল কষ্ট।  পাম্প খারাপ হয়। ভূগর্ভে জল থাকে না। অথচ ভারতে এখনো বহুতল বানানোর পারমিশন অকাতরে দেওয়া হচ্ছে।  বহূতল মানেই খুব অল্প জায়গায় বিপুল জল মাটি থেকে টেনে, সেখানকার ভূর্গভস্থ জল সম্পূর্ন ধ্বংস করবে। যা ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, পুনেতে হয়েছে। বহুতল বানানোর পারমিশন শুধুমাত্র কোন অশিক্ষিত জাতিই দিতে পারে। 

আরো উদাহরন দিচ্ছি। ভারত পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতা। এখানে বহুদিন ধরে জনগন যেসব ফসল ফলাত-যেভাবে সেই ফসল থেকে খাদ্য হত-তা আজ লুপ্ত।  বহুদিনের এই সুস্থ থাকার শিক্ষা আজ লুপ্ত। তার বদলে ভারতের মেনুতে ঢুকেছে অগুন্তি অস্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা।  সুস্থ থাকার শিক্ষাটাই স্কুলে পড়ানো হয় না ঠিক করে। 

 আমি নানাবিধ বিষয়ে পড়াশোনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি- ভারতকে তার হৃদ্গৌরব ফিরে পেতে গেলে, সুস্থ এবং বুদ্ধিমান জনগোষ্ঠির দরকার। ১৪০ কোটি অসুস্থ, নাবালক নাগরিক নিয়ে সবার সেরা আমার সে দেশ হবে না।  আর সেটা করতে গেলে, অতীতে তাকানো প্রয়োজন। যখন ভারতে একটি বাড়ি বানালে, সে বাড়ির পেছনে একটা পুকুর থাকত।  একটা শহর বানাতে গেলে একাধিক হ্রদকাটা হত।  ভোগ না, ত্যাগই ছিল পরম আদর্শ। লোভ না, সেবাই ছিল পরম ধর্ম।  প্রকৃতি ছিল পরম গুরু এবং মাতা।  এসব ভারত থেকে হারিয়ে গেলে,  সে শুধু নামেই ভারত হবে। পৃথিবীর শিক্ষক এবং গুরু হতে পারবে না। 







Thursday, August 11, 2022

ভারতীয় আইনে বাকস্বাধীনতা নেই!

 ভারতীয় আইনে বাকস্বাধীনতা নেই!


-বিপ্লব পাল, ১২ই আগষ্ট, ২০২২

বাংলাপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা নেতা গর্গ চ্যাটার্জি, আসাম সরকারের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এখন ট্রান্সিট জামিনে। তার অপরাধ -তিনি তার টুইটে একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন । বিজেপি যদি বাবর সহ মুঘলদের বহিরাগত তকমা দেয়, তাহলে অহম সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সুকাপাকে কেন বহিরাগত বলা হবে না?

কারন সুকাপা চীনের মং মাও (বর্তমানে উন্নান প্রভিন্সের) রাজ্যের রাজকুমার ছিলেন। আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় তিনি এসেছিলেন পাটকাই পর্বত পেরিয়ে ১২২৮ সালে। প্রায় ন হাজার সৈন্য নিয়ে।

এটা খুব সহজ একটা ঐতিহাসিক প্রশ্ন। এর জন্য আসামের জনগোষ্ঠির অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে-এই ধারাতে গর্গ কেস খেয়েছেন, এবং গ্রেফতার হয়েছেন। যেকেউ এটা শুনলেই অবাক হবেন যে   স্বাধীন ভারতে ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আপনি গ্রেফতার হতে পারেন। কিন্ত কেন?

এখানে চারটি পয়েন্ট বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ন। আমি সেগুলো ব্লগে লিখছি। কারন ইদানিং ফেসবুকে এসব যতই তথ্যসহকারে লিখিনা কেন, ফেসবুকের ডিজফাংশনাল এই আই প্রযুক্তি আমাকেই ধরে ব্যান করে দেবে। ভারতের আইনের থেকেও গোলমেলে ফেসবুকের তথা কথিত এই আই রিভিউ!

 যে বেসিক প্রশ্নগুলো সবার তোলা দরকার --

(১)  ভারতের সংবিধানে কি তাহলে বাক স্বাধীনতা নেই? আছে এবং যদি গর্গ কেসটা লড়েন, সংবিধানের সেই রক্ষাকবচের জন্য জিতে আসবেন। কিন্ত   এই কোর্ট থেকে ওই কোর্টে দৌড়ে তার ভোগান্তি হবে বিশাল। আসামের বিজেপি সরকার সেটাই চাইছে। এটার মূল কারন, ভারতের সংবিধান রচনা হয়েছে ১৯৪৯ সালে। কিন্ত ভারতের সংবিধান অনুসারে ভারতের পেনাল কোডের আইন বদলায় নি।  ভারতের পেনাল কোডের আইন বৃটিশ আমলের। যেখানে এইসব ব্লেস্ফেমি ( ধর্মীয় অনূভূতির অবমাননা), সিডিশন (দেশদ্রোহী) ধারায় কেস চলে। যা কোন উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্রে নেই। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ীও থাকা উচিত না। কিন্ত ভারতীয় পেনাল কোডে এই ধারা গুলি রয়ে গেছে। কারন ১৯০৯ সালের পর ভারতের পুলিশ আইনে বিশেষ সংশোধন হয় নি। ফলে ভারতের যেকোন রুলিং পার্টি, খুব বিধিবদ্ধ রুটিন ঐতিহাসিক প্রশ্ন তোলার জন্যও যাকে খুশী, তাকে গ্রেফতার করতে পারে এইসব ভুল্ভাল আইনি ধারায়। 


(২) সুকাপা কিভাবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই ইতিহাস বাবরের মতন পরিস্কার না। স্থানীয় উপজাতিদের সাথে তার যুদ্ধের শুধু দুটো ইতিহাস পাওয়া যায়। কিন্ত অহম সাম্রাজ্য যে দীর্ঘ ৬০০ বছর টিকে ছিল-তাদের নিজেদের ঐতিহাসিক ভাষ্য হচ্ছে সুকাপাকে স্থানীয় লোকজন ভালবেসে রাজা হিসাবে গ্রহন করেছিল। কারন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বানভাসি জমিতে কিভাবে ধান চাষ করতে হয়, সেই চাষের প্রনালী সুকাপা চীন থেকে এনেছিলেন। ফলে তাদের চৈনিক প্রযুক্তিতে স্থানীয় অধিবাসীরা খুব উপকৃত হয় এবং তারা সুকাপাকে রাজা হিসাবে গ্রহন করে।

 কোন সন্দেহ নেই এই অহম রাজ্য একটি উন্নত প্রজাপালক রাজ্য ছিল। নইলে ৬০০বছর টেকার কথা না। আর তারা মুঘলদের প্রায় ১৭ বার পরাজিত করে। 
 
 কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে অহম রাজ্যের ঐতিহাসিকদের লেখা ভাষ্য কতটা ঐতিহাসিক সত্য? মনে রাখবেন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে যে ইতিহাস পড়ানো হয়, সেখানে বাবর, মহম্মদ ঘোরি, বখতিয়ার খিলজি- এরা উন্নত সভ্যতার বীর। পাকিস্তান বাংলাদেশের ইতিহাসে ইসলাম ভারতে আসার আগে স্থানীয় হিন্দু সংস্কৃতি এবং সভ্যতা ছিল নিম্নমানের। তার উদাহরন হিসাবে তারা দেন যে মুঘল আমলে যে এডমিনিস্ট্রিটিভ এবং ল্যান্ড রেভিনিউ স্ট্রাকচার তৈরী হয়েছিল-সেটাই কিন্ত বৃটিশ আমলেও রয়ে গেছিল। সুতরাং বিজয়ীদের ঐতিহাসিক ভাষ্যে সর্বদা এটাই থাকে, তারা উন্নত সভ্যতা এনেছিল বল, এই জাতিটা বেঁচে গেছে!

 যেমন ইংল্যান্ডে যে ভারতের ইতিহাস পড়ানো হয়, তাতে ছাত্ররা এটাই শেখে, বৃটিশদের আগে ভারত ছিল বর্বর অসভ্য লোকেদের সভ্যতা। বৃটিশরা এসে ভারতীয়দের পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি দিয়ে সভ্য করেছে! 
 
অহম রাজ্যের নিজস্ব ইতিহাস ও সেইভাবে লেখা-যাতে সুকাপা সেই জাতির পিতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

 সেই ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করলে, ভারতে জেলে যেতে হবে?  তাহলে সংবিধানে বাক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ কোথায়?

(৩)  বাংলাপক্ষের সবাই এটাকে বিজেপির প্রতিহিংসা হিসাবে দেখছেন। কিন্ত আরো গভীরে ভাবা উচিত। বিজেপির নুপুর শর্মাও  ক্রিমিন্যাল কেস খেয়েছেন একটি ঐতিহাসিক সত্যকে টিভিতে বলার জন্য। 

গর্গ হার্ভাড, এম আই টির প্রাত্তনী। নুপুর শর্মা লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের প্রাত্তনী। এদের মতন প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা ভারতীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে-এটা অত্যন্ত আশার কথা।  গণতন্ত্রে মতের বিরোধ থাকবেই। গর্গের সাথে আমি কোলকাতায় আড্ডা মেরেছি অনেক। ওর সাথে অনেক ব্যপারে আমি একমত। আবার উগ্র জাতিয়তাবাদের প্রশ্নে আমি ওর সাথে দ্বিমত পোষন করি। নুপুর শর্মার হিন্দুত্ববাদের ভার্সনের সাথেও আমি তীব্রভাবেই দ্বিমত। কিন্ত এদের মতন উন্নত মেধার ছেলে মেয়েরা  ভারতীয় রাজনীতিতে এসেছেন। জন আন্দোলন করছেন।  এ বড় আশার কথা।  

প্রশ্ন হচ্ছে,  ভারতের আইন যদি, আসল অপরাধি রাজনীতিবিদ-যারা জনগনের হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়-খুন করে ভোটে জেতে-তাদেরকে বিলকুল ছাড় দেয়- আর গর্গ বা নুপুর শর্মার মতন মেধাবী ছেলেমেয়েদের জেলে ঢোকাতে তৎপর হয়-  যে শুধু তারা ঐতিহাসিক সত্যটাকে তুলে ধরেছেন ! 

 তাহলে ভারতের মেধাবী ছেলেরা কেন রাজনীতিতে যোগ দেবে? ভারতের রাজনীতি সেক্ষেত্রে শুধুই চোর ডাকাত ধান্দাবাজদের আখড়া হয়ে যাবে। 

 আমি বিজেপি-কং-তৃনমূল এসব পাঁকে ঢুকব না। কারন শাসক শ্রেনীর চরিত্র সর্বত্র এক। ভারতের দুর্বল আইনি কাঠামোকে কাজে লাগিয়ে বিরোধিদের হেনস্থা করা।  এর কারন ও আমি আগেই বলেছি। ভারতের সংবিধান এবং পুলিশি আইনকে অত্যাধুনিক করতে হবে।  বৃটিশ আমলের আইন কারা চালাচ্ছে? কাদের দ্বায়িত্ব ছিল বৃটিশ আইন বদলে ভারতকে নতুন পুলিশ আইন দেওয়ার? 

কংগ্রেস সেটা করে নি। কারন তারা বরাবর বৃটিশ আইনের সুবিধা নিয়ে বিরোধিদের দমন করেছে। তার জন্যই ১৯৭৭ সালে জনতা সরকার, প্রথম, ভারতের পুলিশ আইন বদলানোর জন্য , স্বাধীন ভারতের প্রথম পুলিশ কমিশন বসায়। কিন্ত তদ্দিনে তারাও ক্ষমতা স্বাদ পেয়েছেন।  প্রবাদ, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। ফলে সেই কমিশন যে সুপারিশ করেছিল-সেগুলি তারা বদলানোর জন্য উদ্যোগ নিল না। এদিকে জনতা সরকারের পতন হয় ১৯৮০ সালে।  ফলে কমিশন চলেগেল হিমঘরে। 

 ১৯৮৯ সালের ভিপি সিং সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী  ইন্দ্রজিত গুপ্ত ভারতের পুলিশ কমিশনের সুপারিশ গুলি চালু করার শেষ চেষ্টা করেন। উনি সব মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখলেন, যে একটা সর্বভারতীয় ঐক্যমত দরকার পুলিশ কমিশনের সুপারিশ গুলি চালু করার জন্য।  স্বয়ং জ্যোতিবসু সেই চিঠির উত্তর দেন নি। কোন মুখ্যমন্ত্রীই দেন নি। কেন দেবেন? ভারতের আইন শাসক শ্রেনীর স্বৈরাচারের বড় সহায়!

ফলে ভারতে সেই বৃটিশরাজ বা তার থেকেও আরো বেশী জঘন্য অপ্রেসিভ পুলিশ এডমিস্ট্রেশন চলছে।  যাদের কাজ শাসক শ্রেনীর লাঠিয়াল হয়ে, বিরোধিমতকে জেলে ঢোকানো।  বৃটিশ আমলেও বোধ হয়, বৃটেনের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য কেউকে জেলে যেতে হয় নি। 

Tuesday, August 2, 2022

ক্ষুধিত ড্রাগন ---

 ক্ষুধিত ড্রাগন ---

বিপ্লব পাল, দোশরা আগষ্ট , ২০২২
তাইওয়ান। কেরালার মতন আয়তনের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র। আড়াইকোটি লোকের বাস। পৃথিবীর ৫৪% সেমিকন্ডাক্টর চিপ এখানেই তৈরী হয়, শুধু একটি কারখানায়। জনপ্রতি ইনকামে দেশটি ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের ওপরে।
এখন গোটা পৃথিবীর প্রশ্ন, ইউক্রেনের পর কি তাইওয়ান?
তাইওয়ান স্বাধীন রাষ্ট্র কি না- সেটা কেউ ঠিক করে বলতে পারবে না। কারন তাইওয়ান এবং চীন-দুটি দেশের সংবিধান বলে চীন আসলে একটিই! তাইওয়ান বলে বৃহত্তর চীন আসলে আমাদের অংশ। চীন বলে তাইওয়ানের অস্তিত্ব নেই-তারা আমাদের অংশ। শুধু তাই না। ভারত, আমেরিকা-বা যেকোন বহুজাতিক কোম্পানি-যারাই চীনের সাথে ব্যবসারত সবাইকে এই মর্মে সাইন করতে হয়-তারা ওয়ান চীন পলিসি স্বীকার করতে বাধ্য!
এত জটিল পরিস্থিতি কি করে হল? ১৮৯৪ সালের আগে তাইওয়ান ছিল, চীনের চেং সাম্রাজ্যের অংশ। ওই বছর জাপান দ্বীপটি দখল করে, নাম দেয় ফরমোসা আইল্যান্ড। কিন্ত ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হারার পরে, জাপান দ্বীপটি আবার চীনকে ফিরিয়ে দেয়। তখন চীনের জেনারেল চিয়াং কাইসেক। মাও এবং চিয়াং কাইসেক দুজনেই চীনের পিতা সান ইয়াত সেনের শিষ্য। মাওএর রেড আর্মি, চীনের ন্যাশানাল আর্মিকে কোনঠাসা করা শুরু করলে, চিয়াং কাইসেক তাইওয়ানে আশ্রয় নেন (১৯৪৯) এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটিকে শাসন করেন। চিয়াং কাইসেক এবং আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের দেশগুলি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দাবী করে এসেছে, এই তাইওয়ানই হচ্ছে আসল রিপাবলিক অব চাইনা। কিন্ত সোভিয়েতের সাথে চীনের সম্পর্ক খারাপ হতেই, আমেরিকা সুযোগ বুঝে, চীনকেই আসল রিপাবলিক অব চাইনা বলে স্বীকৃতি দেয়। ভারত এই কাজটি করে সিকিএমের অন্তর্ভুক্তির সময়। সিকিমের অন্তর্ভুক্তি কে চীন মেনে নেয়। বিনিময়ে ভারতকে স্বীকার করতে হয় ওয়ান চিন পলিসি।
কিন্ত আমেরিকা, তাইওয়ান্কে মিলিটারি প্রোটেকশন দিতে থাকে। কারন সাউথ চাইনা সি। দক্ষিন চীনের এই সমুদ্র দিয়ে ৩০% গ্লোবাল বানিজ্য চলে। তিন ট্রিলিয়ান ডলারের। তার সাথে সেমিকন্ডাক্টর চীপ। যার লিডার তাইওয়ানের ন্যাশানাল সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানী বা টি এস এম সি। পৃথিবীর সব স্মার্টফোনের চিপ এখানেই তৈরী হয়। ফলে তাইওয়ান চীনের হাতে হাতছাড়া হলে, আমেরিকার দুকুল যাবে। গোটা পৃথিবী চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে।
চীন হঠাত করে এত তাইওয়ান নিয়ে লাফাচ্ছে কেন? কারন তাইওয়ানের বর্তমান লিডার- তাই জেন ওয়াং। এই মহিলা, বলে দিয়েছেন, এই ওয়ান চাইনা খেলা বন্ধ করতে হবে। তাইওয়ান আলাদা দেশ, চীন আলাদা দেশ। তাইওয়ানের কোন ইচ্ছা নেই নিজেদের আসল রিপাবলিক অব চাইনা বলে দাবী করার ( যা তাইওয়ান পাসপোর্টে লেখা থাকে)। মুশকিল হচ্ছ ১৯৯৪ সালে চুক্তি অনুযায়ী তাইওয়ান এবং চীন- অহিংসভাবে, চুক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে মিশে যাওয়ার কথা-কারন উভয় দেশের নেতৃত্ব স্বীকার করত- তারা এক এবং অখন্ডচীনে বিশ্বাসী। এই ভদ্রমহিলা বলছেন-ঐতিহাসিক রোম্যান্টিসিজম বাদ দিয়ে বাস্তবে নেমে আসুন। তাইওয়ানের কোন অখন্ড চীনের খোয়াব নেই।
তাই জেন ওয়াং হচ্ছেন তাইওয়ানের জেলেনাক্সি। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার পিতা- ভ্লাদিমির দ্য গ্রেট। তাতে কি? দুটো দেশ এখন আলাদা, সেটাই বাস্তব। তাই জেন ও তাই বলছেন। দুই দেশের পিতা সান ইয়াত সেন। কিন্ত দুটো দেশ এখন আলাদা।
এই অখন্ড চীন ব্যপারটা গোলমেলে। এর মানে চেং সাম্রাজ্যের সময় চীনের সীমানা। যার মধ্যে লাদাখ, অরুনাচল-ইত্যাদি ভারতের অঞ্চলগুলোও আসে। সুতরাং অখন্ড চীনের এই খোয়াব ভারতের জন্যও ভাল না।
আমেরিকা চীন যুদ্ধ কি লাগবে? লাগতে পারে। তাইওয়ান ইউক্রেন না। আমেরিকাকে প্রোটেকশন দিতেই হবে। চীনের মিলিটারি ক্ষমতা বেড়েছে অপ্রতিরোধ্য ভাবে। কিন্ত এখনো চীন আমেরিকার সমান না। আজ না হলে কাল, চীন যুদ্ধে যাবে। কিন্ত এখন না। আমিরিকাও সেটা জানে। সুতরাং চীনকে থামাতে হলে এখনই থামাতে হবে। কিভাবে? যদি চীন উস্কানিতে পুতিনের মতন স্টেপ নিয়ে বসে। সুতরাং এখন ন্যান্সি পলোসি গেছেন। কাল বাইডেন যাবেন। উস্কানি আনলিমিটেড চলতে থাকবে। চিন ও পেশী দেখাবে।
সব মিলিয়ে জিওপলিটিক্স গোলমেলে। ড্রাগন এখন ক্ষুদার্থ। সে অরুনাচল থেকে তাইওয়ান-যা কিছু চেং ডাইন্যাস্টির ছিল-সব কিছু খেতে চাইছে। ভারত, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া-এই রাষ্ট্রগুলির একসাথে চীন বিরোধি জোট করা ছাড়া উপায় নেই।
আশা ভরসা আছে। চীন কোরাপ্ট অলিয়ার্গিতে চলে না। কমিনিউস্ট পার্টির নেতারা সাধারন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা। নীল রক্তের বাহক নন। এরা যুদ্ধ চান না। নিজেদের সন্তানরা ব্যবসা বানিজ্য করে বিলিয়ানার হলেই এরা খুশী। সেটাই এদের মোক্ষ। যুদ্ধবাজ এরা নন। এরা ধান্দাবাজ কমিনিউস্ট। সুতরাং ফোঁস করবে। কিন্ত কামরাবে না।

Friday, July 22, 2022

ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়-- অভুক্ত লোকেদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

 ২০১৭। ইউ এন  খুব গর্ব করে ঘোষনা করেছিল, এই প্রথম পৃথিবীতে যত না লোক না খেতে পেয়ে মরেছে-তার থেকে অনেক বেশী লোক মারা গেছে বেশী খেয়ে। অবেসিটি থেকে।  মানে বেশী খেয়ে মোটা হয়ে। 

 এটা ঠিক ২০১৩ সালে পৃথিবীতে অভুক্ত লোকেদের সংখ্যা নেমে আসে ২০০ মিলিয়ান বা কুড়ি কোটির কম। যাদের অধিকাংশই আবার ভারত আর আফ্রিকাতে। 

 ২০২২। প্যান্ডেমিক   গ্লোবাল ওয়ার্মিং  এবং যুদ্ধের  ত্রিফলায়   বর্তমানে ৮০ কোটির বেশীর লোক অভুক্ত। যার মধ্যে আছে পাকিস্তান, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ। ভারত ত পার্মানেন্ট মেম্বার।  ইউক্রেন থেকে গমের সাপ্লাই বন্ধ। 

মধ্যবিত্তরা খেতে পারছে। কিন্ত খাবার কেনার জন্য, অন্য খরচের অনেক কিছু ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা শুধু ভারতে না, আমেরিকার জন্য আরো বেশী সত্য। ফলে দুটো দেশেই কনজিউমার ইন্ডেক্সের অবস্থা খারাপ। আমেরিকা রিশেশনের সম্মুখীন। 

গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে খাদ্য সংকট। সমস্যা একটাই। বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে ঠিক যায়গায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারন পুঁজির ধর্ম। ওই দু জায়গায় পুঁজি ঢাললে রিটার্ন কম। এখন বরং খাদ্য ব্যবসায় তাও একটু জোয়ার এসেছে।  ভারতে যা জমির পরিমান এবং আবহাওয়া, তাতে বর্তমানে যা প্রোডাকশন, তার তিনগুন উৎপাদন হওয়া উচিত।  কিন্ত হবে না। কারন সবার এক লপ্তে ছোট জমি-তাতে অটোমেশন আধুনিক কৃষি সম্ভব না। আর ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। না সম্ভব কৃষি সংস্কার। না স্টালিনের মতন ডিক্টেটর এসে কোয়াপরেটিভে বাধ্য করবে।  আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্যও একই সত্য। ওখানে পুঁজি ঢেলে রিটার্ন নেই। নেহাত কিছু বিলিয়ানার কয়েকশো মিলিয়ান ডলারের ফান্ড তৈরী করেছে ক্লাইমেট ক্লীনটেকের জন্য। তাতে কিস্যু হবে না। 

ভারতে গত বছর ১০৬ টা স্টার্টাপ  নাকি ইউনিকর্ন হয়েছে। যদিও এগুলোর সবই ডুববে- সব থেকে বাজে দিক হল এর মধ্য একটি স্টার্টাপ ও ছিল না - যা কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। অথচ ভারত সব থেকে বেশী অভুক্তরা থাকে। খাবারের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাহলে পুঁজি এখানে আসছে না কেন? কারন কৃষি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে যদি কেউ মেশিন বানায়-কিনবে কে? ছোট ছোট জমির জন্য অধিকাংশ চাষীই  নতুন প্রযুক্তি কিনতে পারবে না।  ফলে অনেক কিছু করা সম্ভব -কিন্ত বিজ্ঞান প্রযুক্তি এখানেও ঠুঁটো জগন্নাথ। 

এই অচল অবস্থা আর কদ্দিন চলে দেখি। 





Thursday, July 21, 2022

সত্য বনাম মিথ্যে ইসলাম

 তালিবানদের ক্ষমতা দখলে ভারতের হিন্দুত্ববাদিরা উল্লাসিত। ইসলাম কত বাজে তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার "শোকেস" তালিবান। আর সেই ধারনাই স্টাম্পিং করছে অনলাইন উপভারতীয় মুসলমানরা। যারা কিন্ত বাংলাদেশে তালিবান শাসন কায়েম হলে ঢাকা বিমানবন্দরে সবার আগে লাইন দেবে। বা পশ্চিম বঙ্গে লাফিয়ে চলে আসবে। ঠিক বঙ্গজ কমিনিউস্টদের মতন। এরা কিউবা নিয়ে বগল বাজায়। কিন্ত কিউবার ফিদেলের মতন কোন শাসক ক্ষমতা দখল করলে, এরা কিন্ত সবার আগে বোটে চড়ে পালাবে।

আমি আগের দিন লিখেছি, আজও লিখছি, ভারতের হিন্দুত্ববাদিদের রাজনীতির সাথে যেমন ভারতীয় দর্শনের সংশ্রব নেই- ঠিক তেমনই তালিবানদের সাথে ইসলামের সংযোগ নেই।
আর যে যুক্তিতে তালিবানদের সাথে ইসলামের যোগ হিন্দুত্ববাদিরা পেতে পারে- ঠিক সেই যুক্তিতে হিন্দুত্ববাদিদের সাথে হিন্দু ধর্মের যোগ ও অনেক মুসলমানরা পেয়ে থাকে। সেই যোগসূত্রতা হচ্ছে ধর্ম নিয়ে অজ্ঞতা। কোন হিন্দুত্ববাদি নিজেকে হিন্দু ধর্মের ঘোষিত রক্ষক বললেই যেমন ধর্মটা তার হবে না-ঠিক তেমনই তালিবানরা ইসলামের নামে নারী বিরোধি কীর্তি কলাপ করলেই, সেটা ইসলামিক কুকীর্তি হয় না।
আসলে একটা ধর্ম বুঝতে যতটা ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন জানতে হয়, সেই চেষ্টা কেউ করে না । ফলে অধিকাংশ লোকই ধর্মের বিষ্ঠার সাথেই বেশী পরিচিত। কারন ওই বিষ্টার সার দেশের শাসককূলের জন্য উৎকৃষ্ট। ফলে জালালুদ্দিন রুমি বা মৌলা বাখাসের কবিতা সমগ্র ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। তালিবানদের নৃশংসতা ইসলাম হয়ে ওঠে।
***বাকিদের জন্য ইসলামের ইতিহাসের একটা বেসিক ফুটনোট ***
যেকোন ধর্মের ইতিহাসকে ট্রেস করলে একটা সত্য খুবই পরিস্কার। এগুলি ছিল, সেযুগের প্রগতিশীল আন্দোলনের ধারা। সেই জন্যেই জনপ্রিয় হতে থাকে। ইসলাম তার ব্যতিক্রম না। কিন্ত সেই প্রগতিশীল ধারাটিকে হাতিয়ার করে যারা ক্ষমতায় বসে, তারাই সেই ধারাটিকে রিয়াক্টিভ এবং বিশাক্ত করে তোলে। ইসলাম মক্কার আলোকিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হানিফদের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন ছিল - যার জন্য ইসলামে স্যোশাল কনট্রাক্ট গুলি- সে বিয়েই হোক বা ব্যবসা- সব কিছুতেই চুক্তিপত্রের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর থেকেই বোঝা যায় ইসলামের উত্থানের পেছনে ছিল মক্কার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়-যাদের ক্যারভান অবাধে লুঠ হত-ব্যবসার জন্য মারামারি হানাহানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেসব কাটিয়ে উঠে এক চুক্তিভিত্তিক সমাজ-আরবকে দিয়েছিল ইসলাম। যার জন্য উত্তরে ইস্টার্ন রোমান এম্পায়ার, পূর্বে শক্তিশালী সেসানিড, গেসানিডরা। তাদের তুলনায় আরবদের শক্তি কতটুকু ছিল সেসময়? অধিকাংশ সময় যুদ্ধে ১ঃ১০ এই রেশিওতে তারা যুদ্ধ করে জিতেছে? কেন? কারন দেখা গেছে, বিপক্ষের যোদ্ধারাই ইসলামের আইন মেনে নিতে চেয়েছে যেহেতু- সেখানে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সাধারন মানুষের অনেক সুরাহা ছিল। কিন্ত এই প্রগতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে রাশিদুন খালিফা থেকে একের পর এক খালিফারা ক্ষমতায় ফুলে লাল হলেন। অন্যদিকে ইসলামের মধ্যে থেকেই অনেক নতুন ধর্ম আন্দোলন উঠে আসছিল-যা আরো প্রগতিশীল।এইখানেই নবম-দশম শতক থেকে ইসলামের বিকাশ সম্পূর্ন বন্ধ করে দেন খালিফারা কারন ইসলামের নতুন ধর্ম আন্দোলন গুলিতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ ব্যহত হচ্ছিল। ফলে সেই সময়ের সব থেকে প্রগতিশীল ধর্মকে অন্ধ মধ্যযুগীয় ধর্ম হিসাবে তুলে ধরা হতে থাকে একাদশ শতাব্দি থেকে। যেটা আজও তাই চলে আসছে। ফলে সবার মনে হতেই পারে ইসলাম খুব বাজে। কিন্ত আমি ইসলামের ইতিহাসে গভীরে গিয়ে দেখে অবাক হই- সেটি সেই সময় সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল- যেখানে সব স্যোশাল কনট্রাক্টকে চুক্তির মাধ্যমে আনার চেষ্টা-যা একটি আধুনিক পুঁজিবাদি রাষ্ট্রই বর্তমানে ভাবতে পারে।

Thursday, July 7, 2022

ভারত এবং আমেরিকার গণতন্ত্র আর কদিন টিকবে?

 ভারত এবং আমেরিকার গণতন্ত্র আর কদিন টিকবে?

৭ই জুলাই, ২০২২, বিপ্লব পাল
(১)
গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্র- ডেমোক্রাসি বনাম ডিক্টেটরশিপ, এটা নিয়ে আমার বহুদিন ভুল ধারনা ছিল। আমি নিশ্চিত, আমার মতন আরো অনেকেই ভাবেন, ডেমোক্রাসি এবং ডিক্টেটরশিপ দুটো ১৮০ ডিগ্রি আলাদা পলিটিক্যাল সিস্টেম। ডেমোক্রাসিতে জনগনের মতে সরকার চলে। কারন নির্বাচন হয়। ডিক্টেটরশিপে, ডিক্টেটরের মর্জিতে।
ভুল। খুব ভুল রাজনৈতিক ধারনা এটা। আসল সত্য হচ্ছে এই --একটা সফল পলিটিক্যাল সিস্টেমে- তা গনতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক যাইহোক না কেন- মানুষের অনেক কিছু স্বাধীনতা খর্ব করা হয় জনগণের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের সিস্টেম মসৃন ভাবে চালানোর জন্য। এবং মানুষকে কিছু লিমিটেড স্বাধীনতা দেওয়া হয়, উৎপাদনশীলতার বিকাশের জন্য। উৎপাদন, অর্থাৎ প্রোডাকশন বৃদ্ধির জন্য লাগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-শিল্পে সৃজনশীলতা। প্রোডাকশন সাব সিস্টেমগুলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা। এখন প্রোডাকশন সাব সিস্টেম কি? সেটা ফ্যামিলি, মুদির দোকান, কারখানা ইত্যাদি।
রাজনৈতিক ( অর্থনৈতিক) বিজ্ঞানী ফ্রেড্রিক হায়েক প্রথম একটি থিসিস দেন ( যা খুব সমালোচিত ও বটে) -যদি কোন রাষ্ট্র মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা-অর্থাৎ মার্কেটের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তির মৌলিক অধিকারকে মেনে নেয় -কিন্ত যদি রাজনৈতিক ভাবে স্বৈরতন্ত্রী হয়- অর্থাৎ যেখানে ভোট হয় না- মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই- সেই স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্র, গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের থেকে আরো দ্রুত বিকাশ করবে। এবং জনগন যদ্দিন, ঠিকঠাক ভাবে খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসার নিরাপত্তা পাবে-গণতান্ত্রিক অধিকার গুলো নিয়ে কোন চিন্তা করবে না। হায়েক খুব সমালোচিত ছিলেন। কিন্ত চীনের অভূতপূর্ব সাফল্যে দেখা যাচ্ছে, হায়েক খুবই নির্ভুল এবং নির্মম ছিলেন তার বৈজ্ঞানিক বোদ্ধায়।
অর্থাৎ হায়েকের দৃষ্টিতে সব স্বৈরতন্ত্র এক না। কিউবা, ভেনেজুয়েলা এবং উত্তর কোরিয়ার স্বৈরতন্ত্রের সাথে দুবাই, রাশিয়া, বাংলাদেশ এবং চীনের স্বৈরতন্ত্রের পার্থক্য আছে। কিউবা, ভেনেজুয়েলা, উত্তর কোরিয়াতে ব্যবসা বানিজ্য মার্কেট স্বাধীন ভাবে চলে না। আর রাজনৈতিক অধিকার বলতে কিছু নেই।
অন্যদিকে দুবাই, বাংলাদেশ, চীন বা রাশিয়াতে রাজনৈতিক অধিকার শুন্য হলেও সরকার বানিজ্য এবং মার্কেটের স্বাধীনতা খর্ব করে নি । বরং এইসব স্বৈরতন্ত্রী সরকার প্রো বিজনেস। তারা বরং মার্কেটের বিকাশের পক্ষেই কাজ করেছে। ফলে এইসব দেশগুলি অর্থনৈতিক ভাবে অনেক ভাল অবস্থানে।
হায়েকের থিসিসে কিউবা, ভেনেজুয়েলা বা উত্তর কোরিয়ার পলিটিক্যাল সিস্টেম জনগণের দাবীদাওয়া পূরনে ব্যর্থ হবে ( যা সত্য বটে) এবং তা টিকবে না। তাসের ঘরের মতন একদিন না একদিন ভাংবেই। সাথে পাওনা রইবে সীমাহীন দুর্ভিক্ষ এবং দারিদ্র। জেনোসাইড।
অন্যদিকের স্বৈরতন্ত্র- যা মার্কেটের বিকাশের সহায়ক- মার্কেটের স্বাধীনতা, ব্যক্তি সম্পত্তির স্বাধীনতাকে খর্ব না করে, স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে- সেইসব দেশগুলি গণতান্ত্রিক দেশগুলির থেকেও বেশী উন্নতি করবে। পাশের বাংলাদেশ, চীন উজ্জ্বল উদাহরন।
অর্থাৎ সব স্বৈরতন্ত্র এক না। সেটা রোমান থেকে সব সাম্রাজ্যেই ছিল। যেমন জুলিয়াস সিজার বা অগাস্টাস বা মার্কাস অরেলিয়াস-এরা প্রজাপালক সম্রাট ছিলেন। জুলিয়াস সিজার প্রথম রাষ্ট্রের টাকায় সব সিটিজেনদের খাদ্য, বস্ত্র এং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। যা ওয়েলফেয়ার স্টেটের আদি উদাহরন। আবার টিবেরিয়াস, ক্যালিগুলা বা কমোডিয়াস-এদের আমলে এই পাবলিক রেশন সিস্টেম ভেঙ্গে যায়। ফলে সম্রাট জনপ্রিয়তা হারান। এবং এই সব স্বৈরাচারী সম্রাটরা প্রায় প্রত্যেকেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে নিহত হোন। বিদুর মহাভারতে যুধিষ্টিরকে যে রাজনীতির পাঠ দিয়েছিলেন, তার নির্যাস হচ্ছে-কোন রাজাই স্বৈরাচারি শাসক হয়ে টিকতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রজাবিদ্রোহে, না হলে সেনা বিদ্রোহে, না হলে প্রাসাদ বিদ্রোহে তার উৎখাত হবেই।
সুতরাং স্বৈরতন্ত্রের ব্যাপারটা অতটা ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট না।
(২)
আবার গণতন্ত্র মানে তাতে স্বৈরতন্ত্র থাকবে না, সেটাও ভুল।
ভারতের সংবিধানে, নির্বাচিত সরকারকে স্বৈরাচারি হওয়ার অনেক ক্ষমতাই দেওয়া আছে। নইলে সেই সরকার , এডমিনিস্ট্রেশন চালাতেই পারবে না।
আমেরিকাতে বরং ক্ষমতার বিভাজন এত ব্যপক, এখানে কোন নির্বাচিত রাজনীতিবিদের স্বৈরাচারি হয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। আসলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিশ্বপ্রেসিডেন্ট-খোদ আমেরিকাতে তার কোন ক্ষমতাই নেই! শুধু কিছু বেয়াইনি ডিক্রি ইস্যু করা ছাড়া। সেগুলোও সুপ্রীম কোর্টে প্রায় ধাক্কা খায়।
কিন্ত ক্ষমতার এত বিভাজনের জন্য, আমেরিকাতে আসল ক্ষমতা ব্যবসায়ী গোষ্ঠিগুলোর হাতে। গণতন্ত্রের জন্য আমেরিকা এত শক্তিশালী হয় নি। আমেরিকা শক্তিশালী হয়েছে-এর মূল কারন দেশটা চালাচ্ছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠিগুলো। অর্থাৎ পাওয়ার স্ট্রাকচার, ক্ষমতার পিরামিডের শীর্ষে বুদ্ধিমান লোকেরা আছে। ব্যবসা টু গণতন্ত্র সেটাই করে দিচ্ছে।
তাহলে আমি আমেরিকার স্বৈরতান্ত্রিক যাত্রানিয়ে ভাবছি কেন? যা গত ২৫০ বছরে সম্ভব হয় নি?
ওয়েল, এখানে চীনের দিকে তাকাতে হবে। একটা দেশ কতটা সফল হবে, তার অধিকাংশ নির্ভর করে পাওয়ার স্ট্রাকচার বা ক্ষমতা কাদের হাতে। কারা দেশ চালাচ্ছে। চীনের রাজনীতি চালাচ্ছে কমিনিউস্ট পার্টি- কিন্ত দেশটার এডমিনিস্ট্রেশন চালাচ্ছে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনোক্রাটরা। সিনহুয়া পৃথিবীর শীর্ষবিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্যতম। ভারতের আই আই টির থেকে অনেক এগিয়ে। যারা চাইনিজ মিনিস্টার বা সেক্রেটারি-তাদের বায়োডেটা গুলো দেখবেন। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের ফিল্ডে বিরাট কৃতবিদ্য। এদের রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হয় না। এদের ভাবতে হয়, নিজেদের পজিশন টেকাতে এরা দেশকে নির্ধারিত কর্মসূচী দিতে পারছে কি না। অর্থাৎ চীনে, তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা, তাদের শ্রেষ্ঠ মেধাবী লোকগুলো সেই দেশ চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। ভারতেও তাই। তবে তারা চৌর্য্যবৃত্তি এবং দুর্নীতিতে মেধাবী। দুর্নীতি অবশ্য চীনেও আছে।
এর উলটো দিকে আমেরিকার পাওয়ার স্টাকচার ব্যবসায়ী, আইনজীবি এবং এক্টিভিস্টদের খিচুরি। আমেরিকান সেক্ট্রেটারিরা ও কম্পিটেন্ট-কিন্ত তাদের হাত বাঁধা থাকে সেনেটের আইনজ্ঞদের কাছে! আর ভারত নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইছি না। কংগ্রেসের আমলে মনমোহন সিং এবং অন্যান্য টেকনোক্রাটদের আনা হয়েছে। বিজেপির আমলে এই চেষ্টাটা হয়েছে অনেক পরে। কিন্ত মুশকিল হচ্ছে এটা খুব আংশিক। এবং এদের ও অনেক হাত পা বাঁধা।
ফল হচ্ছে এই যে, ভারত জাতি ধর্ম দাঙ্গা ইনফ্লেশন নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। ইনফ্রাস্টাকচারে উন্নতি হচ্ছে না। আর আমেরিকা গর্ভপাতের গর্ভশ্রাব নিয়ে ব্যস্ত। উন্নত ইনফ্রাস্টাকচার ভেঙে পড়ছে। ইনফ্লেশন এখন লাগাম ছাড়া। আমেরিকার অনেক অংশ এখন তৃতীয় বিশ্বের সাথে তুলনীয়।
এর ফল হবে এই যে রাষ্ট্রের কাছে মানুষে যেগুলো নুন্যতম পাওনা, তা দিতে খুব শীঘ্রই ব্যর্থ হবে দুই দেশের গণতান্ত্রিক সরকার। ভারতে এটা কিছুটা গা সওয়া ব্যপার। আমেরিকাতে তা নয়। ফলে অলরেডি আগুন জ্বলছে।
রাষ্ট্রের সাথে জনগনের একটা স্যোশাল কনট্রাক্ট আছে। গণতন্ত্র যদি সেগুলো মেটাতে ব্যর্থ হয় -তা টেকার কথা না। ইতিহাস সাক্ষী। ইনফ্লেশনে লাগাম লাগাতে ব্যর্থ হলে সেই দিন হয়ত খুবই কাছে।

Wednesday, July 6, 2022

মত প্রকাশের অধিকার যখন বিড়ম্বনা-

 মত প্রকাশের অধিকার যখন বিড়ম্বনা-


৬ই জুলাই, ২০২২ / বিপ্লব পাল

গত দশদিন লিখব লিখব করেও কিছু লিখিনি। কিছুটা ভয়ে। আসলে নুপুর শর্মা এবং মহুয়া মৈত্রের অবস্থা দেখে পরিস্কার বুঝতে পারছি, আজকাল ধার্মিকদের থেকে ধর্মের ষাঁড়ের দল অনেক বেশী ভারী। শুধু নুপুর শর্মাকে সমর্থন করার জন্য রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে নৃশংস ভাবে খুন করা হল! এই সব খুনীরা ধার্মিক ? রিয়ালি? প্লিজ বলবেন না এর সাথে মুসলমানদের নাম জড়ানো উচিত না। যারা খুনী, তারা খুনী! মুসলমান সমাজের খুব ক্ষুদ্রাংশ! কিন্ত বাস্তব হল, ওইসব ধর্মান্ধ কল্লাকাটাদের বিরুদ্ধে মুসলমান সমাজের কোন বিক্ষোভ নেই। ভারতের তথাকথিত সেকুলার পার্টিদের ও বিক্ষোভ নেই! মুসলমান সমাজের মৌনতা ওইসব খুনীদের হিরো করে দিচ্ছে। রাজস্থানের ওই ধর্মান্ধ খুনীরা দাওয়াত ই ইসলামি গোষ্ঠিভুক্ত। যারা না কি অহিংস ভাবে ইসলামে আসার জন্য দাওয়াত দেয়! এই গোষ্ঠি পারভেজ মুশারেফের সৃষ্ট। তালিবান কট্টর পন্থীদের বিরুদ্ধে "মডারেট" মুকাবিলা! এরাই পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমন তাসিরের খুনীর সমর্থনে বিশাল মিছিল বার করে ছিল! এরা কোন বিচ্ছিন্ন ধর্মান্ধ নন। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট খুনখারপি করা গুন্ডা। যাদের পেছনে বৃহত্তর মুসলমান সমাজের নির্বাক মদত আছে।

মহুয়া মৈত্র মাকালী নিয়ে তার মত প্রকাশ করেছেন। হিন্দু ধর্মে যে কেউ দ্বিমত করতেই পারেন। কারন হিন্দু ধর্মে প্রত্যেকের ঈশ্বর তার একান্ত নিজের কল্পনা। শ্যামা সঙ্গীতের ব্যঞ্জনা এই জন্যেই সার্বজনীন। মা কালী, আমাদের নিজেদের মা হয়ে যায়! যার কাছে এই ব্যর্থ জীবনের সব অভিযোগ, অনুযোগ, হতাশা উজার করে সন্তান স্নেহ দাবী করা যায় ---কমলাকান্ত , অতুলপ্রসাদের মা-কালী সেই সার্বজনীন মা। তারা তাদের স্নেহময়ী মাকেই কালী রূপে কল্পনা করেছেন। তাতে হিন্দু ধর্মে কোন জোর চলে না। মহুয়া মৈত্র আধুনিকা। তিনি যদি তার মাকে সিগারেট ধুম্রপানরত হিসাবে দেখতে চান- হিন্দু ধর্মে সেই কল্পনার স্বাধীনতা সব ভক্তর আছে। মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসাতে কোন জোর চলে না! এই ধর্মে কৃষ্ণ কারুর সখা, কারুর প্রেমিক, কারুর শিশু সন্তান, কারুর পিতা। এবং সবাই ঠিক। বড়ু চন্ডীদাসের কামুক কৃষ্ণ থেকে বিদ্যাপতির প্রেমিক কৃষ্ণ- যা মানব কল্পনায় প্রেমের এক বিরাট বিস্তার-
সবই এ ধর্মে গ্রহনযোগ্য।

তাহলে হিন্দু ধর্মের নামে মহুয়া মিত্রর বিরুদ্ধে দল পাকিয়ে চোখ রাঙানো হচ্ছে কেন? হিন্দু ধর্ম নিয়ে ভক্তদের অজ্ঞতা? নাকি রাজনৈতিক কারনে হিন্দু ধর্মকে ইসলাম -২ বানানো হচ্ছে?

তবে আমেরিকাও নিরাপদ না। সুপ্রীম কোর্ট প্রগতিশীলতার ক্ষেত্রে নিরেপেক্ষ থাকবে জানানোর পর এখন এদেশে খৃষ্ঠান ধর্মান্ধদের লাফালাফি! তারা নাকি গর্ভনিরোধক ও বন্ধ করে দেবে! আমেরিকা উইথদাউট কন্ডোম! এরা ইদানিং ভার‍তের ধর্মান্ধদের ও ছাড়িয়ে গেছে!

আসলে এরা কেই ধার্মিক না। ধর্মকে আশ্রয় করে দল পাকিয়ে এই গুন্ডামো করার বিশেষ কারন আছে। আপনাদের নিশ্চয় সিপিএম জমানা মনে আছে। পার্টির বিরুদ্ধে গেলে দল পাকিয়ে আপনাকে গুঁতাতে আসত। এসবই সাধারন বঞ্চিত মানুষের মনস্তত্বের একটা প্যাটার্ন। আসলে সাধারন মানুষ ব্যক্তিগত , সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে এত অসহায়, এত ক্ষমতাহীন- তারা ভাবে কোন একটা দলে ভিড়লে যদি তাদের কিছুমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্তি হয়। ঐক্যবদ্ধ গুন্ডামো সাধারন মানুষের ক্ষমতায়নের একটা পথ। বাই দ্য ওয়ে-এটা আমার তত্ত্ব না। এটা বিশ্ববরেন্য মনোবিদ এডলারের তত্ত্ব- যিনি নাৎসি জার্মানির উত্থানের পেছনে, হিটলারে্র উত্থানের পেছনে সাধারন মানুষের জনসমর্থন নিয়ে গবেষনা করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন।

আমি দূরের কথাও ভাবছি। চীন এসব থেকে দূরে-বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর, তাদের সাধারন মানুষের কর্ম সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৮ সালে ভারতের জনপ্রতি ইনকাম চীনের থেকে বেশী ছিল। ১৯৬৪ সালে ভারতের জনপ্রতি ইনকাম সাউথ কোরিয়ার থেকে বেশী ছিল।

আর আজ ? চীনের জনপ্রতি আয় ভারতের ৫ গুন । দক্ষিন কোরিয়ার জনপ্রতি আয় ভারতের ১২গুন। চীন সব কিছুতেই আমেরিকাকে টেক্কা মারছে।

গণতন্ত্র ( ভারত, আমেরিকা দুই দেশই) যদি এই ঢালাও ভাবে ধর্মান্ধতার পারমিশন দেয়, গণতন্ত্র টিকবে না। কারন বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে, অনেক উন্নত এক সমাজ এবং রাষ্ট্র চীন গড়ছে। যার ফলে মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে আজকে যা কিছু ইলেক্ট্রনিক্স, যন্ত্রাংশ-যা কিছু কিনতে যান, চীন ছাড়া গতি নেই।

মাত্র ৩০ বছরে! ১০০ বছর এইভাবে চললে পার্থক্য কোথায় যাবে? বোধ হয় আর ১০০ বছর ওইভাবে চলবে না। চীনকে কাউন্টার করতে আমার ধারনা ভার‍ত এবং আমেরিকাতে চীনের মডেলেই স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এসে যাবে। না হলে, চীনই ছলে বলে ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে এই দুটো দেশ অধিকার করে , চৈনিক মডেল চালাবে।

এত ধর্মান্ধদের মাঝে , তার সাথে দুই দেশের বিজ্ঞান যুক্তিবাদি মানুষদের সুবিধাবাদি নীরবতার মধ্যে, আর কোন ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি না। 

Tuesday, March 29, 2022

বাংলার বুদ্ধিজীবি !

 অনেকদিন আগে একটা জোক্স শুনেছিলাম। কুকুরের থেকে বেশী  প্রভুভক্ত প্রানী চান? 

 তাহলে বাঙালী বুদ্ধিজীবি পুষে দেখতে পারেন। প্রায় গ্যারান্টি! 

 রাজকবির রামপুরহাট বেদনা কাব্য পড়ে সেটা আবার কেন যেন মনে হল। কবি কিসুন্দর নিরেপেক্ষ অরন্যে রোদন করতে পারেন! ঠিক যেমন ভারত রুশো-ইক্রেন যুদ্ধে বলছে এত রক্ত, এত হিংসা বন্ধহোক! ভারত এবং রাজকবি-কারুর অবস্থানই আমি বুঝতে পারি নি! তবে মহাভারতে কৃষ্ণ বুঝেছিলেন। ভ্রাতা বলরামকে বকেছিলেন-ধর্মযুদ্ধে অমন যুদ্ধ চাইনা শান্তি চাই টাইপের সুবিধাবাদি অবস্থান আসলে কাপুরুষ সুবিধাবাদের সহস্রলক্ষণ। 

ইউক্রেন রাশিয়া আক্রমন করে নি। রাশিয়ার একটা লোককেও মারে নি। পুতিন ইউক্রেনে তান্ডবযজ্ঞ চালাচ্ছে। নিরীহ লোক মেরেই চলেছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে যুদ্ধ না শান্তি চাই বলা- আর সুবিধাবাদ একই জিনিস। ঠিক একই কথা বলা চলে রামপুরহাট প্রসঙ্গে।  গত ৪০ বছরে পশ্চিম বঙ্গে এই ধরনের নির্মন রাজনৈতিক এবং সামাজিক খুনোখুনী ভারতে সব থেকে বেশী? কেন? কারন অর্থনীতি বসে গেছে। বামপন্থায় বিশ্বাস করে যেভাবে ভেনেজুয়েলা থেকে গ্রীস ভোগে গেছে, বাংলাও তাই। ফলে ইঁট সুরকি বালির তোলাবাজি এবং তার থেকে নেতা পুলিশের বাটোয়ারা হচ্ছে জনসাধারনের বেঁচে থাকার অন্যতম পথ। দিদি আসার পর বাংলার অর্থনীতিতে কিছুটা রক্ত সঞ্চার হলেও , উনি এই সিন্ডিকেটকে ধ্বংস করতে পারেন নি-বা চান নি। 

আমি চাই দিদি আরো ভাল করে বাংলা চালান। কারন তার পার্টীই বাংলার একমাত্র স্বাধীন পার্টী। বাকি সবাই তাদের দিল্লীর নেতাদের কথায় ওঠবোস করা নন্দকিশোর। আর সেটা চাই বলেই মনে করি রামপুর হাটের ঘটনা থেকে এটা পরিস্কার হওয়া উচিত, পুলিশ-সিন্ডিকেট-পার্টি, এই নেক্সাস দিদি ভাংতে না পারলে, আরো রামপুরহাট ঘটবে। এবং এটা উনার প্রশাসনের ব্যর্থতা।  এটা যত দ্রুত স্বীকার করে, সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে দেওয়া যায় তত উনার ভাল। উনি এমনিতেই জিতবেন। ২৯৩-০ করে লাভ নেই।  সেটা পশ্চিম বঙ্গ, উনার নিজের, তৃনমূলের সবার জন্য খারাপ। 

 কবির নির্মল হৃদয় কাঁপবে, কিন্ত অন্নদাত্রীকে সিন্ডিকেট ভাংতে ডাক দেওয়ার দম তার নাই! 

 আরো খারাপ লাগে আনন্দবাজারের আপ্রান প্রচেষ্টা বাংলার বুদ্ধিজীবিদের জাতে তোলার জন্য! আজ সকালে অভিনেত্রী ঋতুপর্নাকে ইন্ডিগো ফ্লাইটে উঠতে দেয় নি বলে ( নির্ধারিত সময়ের পরে গেটে পৌছালে একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া বাকি কোন এয়ার লাইন্সই ছাড়বে না) তার ফেসবুক পোষ্টের ওপর আনন্দবাজার খবর করেছে!  যদিও স্যোশাল মিডিয়াতে পাবলিকই ওই ভুলভাল ইংরেজিপোষ্টের বিরুদ্ধে সঠিক উত্তর দিয়েছে-যে এরপরে তারা ইন্ডিগোর ওপর আরো বেশী ভরসা রাখবে।  ডিসিপ্লিনের জন্য যারা সেলিব্রিটিদের রিজেক্ট করতে পারে, তাদের কম্যান্ড এন্ড কন্ট্রোল অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এই ঋতুপর্নাই যখন তার প্রেমিক রোজভ্যালির কর্নাধার গৌতম কুন্ডুর সাথে জনগণের কোটিকোটি টাকা মেরেছে, আনন্দবাজার চুপ ছিল।  

 অভিনেত্রীর কান্না এবং তার আনন্দবাজারীয় এমপ্লিফিকেশন জনগন যেভাবে রিজেক্ট করল, সেটা থেকে আশাকরি অভিনেত্রী এবং আনন্দবাজার দুই পক্ষই বুঝবেন দিনকাল বদলাচ্ছে।  বুঝবেন কেন প্রেসিডেন্ট  জেলেনাক্সি সাধারন টিশার্ট পরে, সব থেকে জনপ্রিয় নেতা হয়ে গেলেন। কারনে উনি অভিজ্ঞ কৌতুকনেতা এবং জানেন মিডিয়াকে কিভাবে ম্যানুপুলেট করতে হয়। তার উপায় একটাই। আজকের দুনিয়াতে সবাই কমন ম্যানের মধ্যেই এক্সট্রাওর্ডিনারি ম্যান দেখতে চাইছে !  লোকে সেলিব্রিটিদের থেকে দূরে থেকে সাধারন মানুষের অসাধারন হয়ে ওঠার গল্প শুনতে চাইছে। 



Saturday, March 19, 2022

কাষ্মীর ফাইলস-ন্যারেটিভের যুদ্ধ

 কাষ্মীর ফাইলস-ন্যারেটিভের যুদ্ধ


-বিপ্লব পাল, ২০শে মার্চ, ২০২২

একটা বলিউডি সিনেমা যেটা বুক ফুলে দাবী করছে, যা দেখাচ্ছি-তা ফিকশন না! ঘটনা সত্য! এটাও দাবী করছে, বর্তমান বিশ্বের সবথেকে চলমান যুদ্ধ ইনফর্মেশন ওয়ার। ন্যারেটিভের দখল নিতে হবে। এটা খুব ঠিক। তবে চেপে গেছে, যে ১৯৯০ সালে ক্ষমতায় ছিলেন ভিপি সিং। যার সমর্থনে ছিল বিজেপি সরকার। পন্ডিতদের সেই সময় বাঁচাতে বিজেপি, ভিপি সিংকে চাপ দিয়েছিল ? এমনটা যে না-সেটা কিন্ত এই সিনেমাই দেখিয়ে দিচ্ছে!

জেনোসাইড মুভি আমি প্রচুর দেখি। আর্মেনিয়ানরা , তুর্কীদের হাতে জেনোসাইড ভুলতে দেয় নি পৃথিবীকে। প্রচুর সিনেমা তৈরী হয়েছে আর্মেনিয়াম জেনোসাইড নিয়ে। যতগুলো দেখেছি- আরারত, নেহাপত, মেরিগ, প্রতিটা সিনেমাই অসাধারন। ইহুদিরাও ভুলতে দেয় নি। গোটা ইউরোপে নাৎসিদের হাতে ইহুদি নিধন নিয়ে সব থেকে বেশী জেনোসাইড সিনেমা তৈরী হয়েছে। ইউক্রেনিয়ানরাও স্টালিনের হাতে হল্ডোমারে তাদের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠির মৃত্যু ভুলতে দেয় নি পৃথিবীকে।

কিন্ত ভারতবর্ষ একটা অদ্ভুত দেশ। এখানে ইতিহাসের সবকিছু চেপে দেওয়াই রীতি। সর্দার উধম সিং সিনেমাটির আগে জালিওনাবাগ হত্যাকান্ড পর্যন্ত সিনেমাতে দেখায় নি! ভারতভাগ এবং পার্টিশনের দরুন পাঞ্জাব এবং বাংলায় যে জেনোসাইড চলেছে- সেটাও সরকারি ঐতিহাসিকরা চেপে দিয়েছেন।

সুতরাং একদিন না একদিন, এইসব কালোসত্য গর্ত থেকে বেড়োবেই। বিজেপির ন্যারেটিভ জেতার দায়ে এটলিস্ট কাশ্মীরের পন্ডিত গণহত্যার সত্য সবার সামনে এল। কালযদি ভারতের লিব্যারেলরা ক্ষমতা জেতে, তারা গুজরাত গণহত্যা সামনে আনবে। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে বাঙালীদের মধ্যে ঘটা গণহত্যা- গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, নেলি গণহত্যা, নোয়াখালি গণহত্যা-এগুলোর সত্য সামনে আনার ক্ষমতা কি বাঙালী ফিল্ম মেকারদের আছে?

আমি আশাকরি কাষ্মীর ফাইলস যে ট্রেন্ড তৈরী করে দিল- যেভাবে ভারতের লিব্যারল রাজনীতির কাষ্মীর ন্যারেটিভকে ধ্বংস করল, ঠিক সেইভাবেই এবার নোয়াখালি, নেলি গণহত্যার সিনেমাও তৈরী হবে।

কাষ্মীর ভারতের অংশ , না স্বাধীন অঞ্চল- এসব প্রশ্নের উত্তর ওই ঈশ্বর মহাশয় আছেন না নাই-ঐটাইপের এবস্ট্রাক্ট। কারন দেশ, ঈশ্বর, ধর্ম -এসব কিছুই মানব কল্পনার সৃষ্টি। কিন্ত এই কল্পনার ওপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় ন্যারেটিভ-যার ওপর চলে রাজনীতি- কিছু মানুষ দখল করে ক্ষমতা। আর কিছু মানুষ হচ্ছে বোরে। যাদের খেয়ে, গণহত্যা করে রাজাউজিরা খেলে থাকেন!

কাষ্মীর পন্ডিত, হিন্দু বাঙালী -এরা হচ্ছে সেই বোরে। রাজাউজিরদের চালে টস্কানো হচ্ছে এদের ভবিতব্য। ভারতের পার্টিশন কে চেয়েছিল ? মূলত বৃটিশরা। ভারতের মুসলমানরা মোটেও ভারতভাগ চায় নি। আপনি ইতিহাস পুরো খুলে দেখে নিতে পারেন মুসলীম লীগ ৫% ভোট ও পেত না-আর জিন্নাও আমেরিকার ধাঁচে ফেডারাল ভারত চেয়েছিলেন। কিন্ত নেহেরুর ক্ষমতার লোভ এবং বৃটিশদের এন্টিসোভিয়েত এজেন্ডার জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল বৃটিশ-আমেরিকান অক্ষের। এত বড় দেশ ভারত। এতগুলো ভাষাগোষ্ঠি। এত ধর্ম। এমন দেশের ভাগ হলে শুধু ১৯৪৭ সালের জেনোসাইডেই থামবে না- এটা চলতেই থাকবে। হিন্দু-মুসলমান সমস্যার সমাধান সেইদিন ও হয় নি। আজকেও হবে না।

কিন্ত আস্তে আস্তে হবে। তারজন্যই দরকার ইনফর্মেশন ওয়ার। তথ্যের যুদ্ধ। কাষ্মীর ফাইলের পর, নোয়াখালি, নেলি, গুজরাত -সব আসুক। সব সত্যকে বাজারে নগ্ন করে দেখানো হোক। ঠিক কাশ্মীর ফাইলের মতন। আমার ধারনা সাধারন লোকে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে, তারা যে নিজেদের হিন্দু মুসলমান ইত্যাদি ভাবে- ভেবে আবার গর্বিত হয়- এইসব ফলস আইডেন্টি এফিলিয়েশন বা নিজেদের ধর্মীয় গোষ্ঠির প্রতি আনুগত্য থেকে তারা মুক্ত হবে। কাশ্মীরে শুধু কাশ্মীর পন্ডিতদের গণহত্যা হয়েছে তা না- ধারাবাহিক ভাবে কাশ্মীরের গত ৫০০ বছরের ইতিহাসে হিন্দু মুসলমান শিখ-সব জাতিগোষ্ঠির ওপরই কোন না কোন সময় অত্যাচার চলেছে।

সমস্ত গণহত্যা ঘটিত সিনেমা দেখতে গিয়ে একটাই সত্য উপলদ্ধি করেছি। ইহুদি, আর্মেনিয়ান, পন্ডিত, বাঙালী হিন্দু- এদের একটা "ফলস সেন্স অব সিইকিউরিটি" ছিল-যে প্রতিবেশী বন্ধুরা বাঁচাবে-অন্য ধর্মের হলেও। কিন্ত সেটা হয়ে ওঠে না। কারন সাধারন মানু্ষ খুনীদের সামনে রিস্ক নেয় না। আগের নিজের প্রান, তাররপর না আপনার প্রান! একমাত্র ইস্রায়েলে ইহুদিদের এটা ছিল না। তারা জানত বৃটিশরা চলে গেলে, ৯৫% প্যালেস্টাইনরা তাদের কি হাল করবে। তাই বৃটিশরা প্যালেস্টাইন ছাড়ার কুড়ি বছর আগে থেকে কোন রাজনীতি না মাড়িয়ে অস্ত্র হাতে নিজেদের মিলিটারি তৈরী করেছিল। ফলে মাত্র ৫% ইহুদি, ৯৫% প্যালেস্টাইন আরবদের যুদ্ধে হারিয়ে প্যালেস্টাইনদের নিজেদের স্বভূমি থেকেউৎখাত করেছে! এটা পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র উদাহরন, যেখানে সংখ্যালঘুরা মিলিটারি ফর্মেশনে সংগঠিত হয়ে সংখ্যাগুরুদের তাড়িয়েছে! বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠির মধ্যে দেশভাগের আগে কংগ্রেসি, বিপ্লবী এবং কমিনিউস্ট বাতেলা নেতাদের বদলে বেনগুরিয়ানের মতন ভবিষয়ত দ্রষ্ট্রা নেতা জন্মালে-যেখানে দেশভাগের অনেক আগে থেকে যদি এরা হিন্দুদের মিলিটারি ফোর্সে পরিনত করতে পারতেন-তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষদের দেশ ছাড়তে হত না।

ভিটেমাটি রক্ষা করতে গেলে বন্দুক হাতে যুদ্ধ করতে হয়। ওটা কোন রাজনীতিবিদ-কোন ইতিহাস, কোন কাল আপনাকে ভিক্ষে দিতে পারে না। ইউক্রেনিয়ানদের দেখে শিখুন।










Thursday, March 10, 2022

উত্তরপ্রদেশ পাঞ্জাবের রেজাল্ট -কি কি সিগন্যাল পাওয়া গেল

 (১) ভোটে জাতিয়তাবাদ খুব গুরুত্বপূর্ন হয়ে  উঠছে-রুটিমোকামের থেকেও বেশী-অনেক বেশী। সেই উভাল নোয়া হারারির প্রতিধ্বনিই দেখছি- আদর্শবাদের লড়াইটাই মুখ্য হচ্ছে। এবং এক্ষেত্রে বিজেপি দুই ধাপ এগিয়ে। কারন তারা ভারতীয় জাতিয়তাবাদ এবং হিন্দু জাতিয়তাবাদ দুটোই কব্জা করেছে। 

(২) বিজেপির ডবল ইঞ্জিন আদর্শবাদ রুখে দিতে সক্ষম কেবল মাত্র ভাষাভিত্তিক  রাজ্য জাতিয়তাবাদ-যেমন বাঙালী, তামিল, মালইয়ালি, উড়িষ্যা, তেলেগু, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি।  ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদের ফেডারেল জোট ছাড়া বিজেপিকে ২০২৪ সালে আটকানো অসম্ভব। 

(৩) নোটবন্দী, জিএসটিতে, কৃষিবিলে যতই দুর্দশা বাড়ুক-জনগণ তাও বিজেপিতে ভরসা রেখেছে-কারন ধরে নেওয়া হচ্ছে মোদি দেশটাকে বদলাতে চাইছেন-তাই ওইটুকু যন্ত্রনা সহ্য করতে হবে! 

(৪) লড়াইটা হচ্ছে কোন পার্টি সরকারি পরিশেবা, সরকারি স্কিম/টাকা জনগনের মধ্যে ভাল করে বিলিয়ে দিতে সক্ষম। সব পার্টিই এখন স্কিমে বিশ্বাসী। 

(৫)  পৃথিবীর সবদেশে বামেরা ১০-৩০% ভোটপান। আমেরিকাতেও বামেদের ভোট ১৫-২০%। কিন্ত ভারতে বামেরা সম্পূর্ন ভাবে ডাইনোসোর গোত্র ।  পাঞ্জাবে একদা বামেরা ৮-১২% ভোট-সিট পেতেন। এখন কোথাও কোন  সিট নেই।  কেন? কারন পৃথিবীর সর্বত্র বামেরা পরিবেশ, সাসটেনেবিলিটি কোয়াপরেটিভের ওপর ভিত্তি করে নতুন পৃথিবীর আদর্শ তৈরী করেছে। ভারতের বামেরদের থেকে অপদার্থ রাজনীতিবিদ পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া  অসম্ভব। এরা এখনো লেনিন-স্টালিনের হেগোপোঁদ চেটে যাচ্ছে-একে ওকে দোষদিচ্ছে। নিজেদের প্রোডাক্টটা যে এক্সপায়ারড সেটা এরা কেউ বুঝছে না। এতটাই  বুদ্ধিহীন ভারতের বাম!

(৬) তৃনমুল জাতীয় রাজনীতিতেব গুরুত্ব নিতে চাইলে #২ এর ওপর ফোকাস করতে হবে- ২০২৪ সালে বিজেপিকে হারানোর ওটাই একমাত্র সরুপথ। এই ওই রাজ্যে গিয়ে তিনোপার্টি খুলে লাভ নেই। তবে ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসামে কংগ্রেসের বিকল্প তৃনমূল। কংগ্রেস এই রাজ্যগুলো থেকে উঠে যাবে। 

 (৭) আপ - হিন্দি হার্টল্যান্ডে কংগ্রেসকে ফেলবে আগামী পাঁচ বছরে।  ইউপিতে সপাকেও খাবে। সপার ভোটব্যাঙ্ক বেশীদিন টিকবে না। কারন বর্তমানে এর অধিকাংশই বিজেপি বিরোধি ভোট। গোটা ভারতে আপ বিজেপির অলটারনেটিভ হলে, ঐ ভোট আপেই যাবে। সপাতে না।   ইনফ্যাক্ট সপার দিকে ভোট পোলারাইজড হওয়া বিজেপিকে ২০২৪ সালে বাঁচিয়ে দিল।  কিন্ত আপের দুর্বলতা অনেক। ওটা কেজরিভিত্তিক দল। দিল্লী থেকে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। ফলে এদ্দিনে এত পোটেনশিয়া থাকা সত্ত্বেও শুধু পাতা ফেলে গেছে।  কেজরি যদি বোঝে রাজ্যের আপ ইউনিটগুলিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত-তবেই আপ এগোবে। যেখানে রাজ্যভিত্তিক দল শক্তিশালী-সেখানে আপের সময় নষ্ট করা উচিত না।