Tuesday, January 19, 2021

মুক্তচিন্তার চর্চা ছাড়া উন্নত বিশ্ব, বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব না

 

মুক্তচিন্তার চর্চা ছাড়া উন্নত বিশ্ব, বিজ্ঞান চর্চা  সম্ভব না

-       ১/১৯/২০২১

 

গত সপ্তাহে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাতের জন্য পুলিশে এফ আই আর, গ্রেফতারি, গ্রেফতারের হুমকির সামনে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত । প্রথম জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শিবলিঙ্গে কন্ডোম পড়ানো মিম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। শিবলিঙ্গ পুজো করলে ধর্ম, আর লিঙ্গে কন্ডোম চাপালে অধর্ম- এসব আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে মাথায় ঢোকে নি কোনদিন। এটাও আমার ঘিলুতে ঢোকে নি বিশ্বজুরে ধর্মপ্রান খ্রীষ্ঠান, মুসলমান, হিন্দু -এদের সব্বাই দেখি ঘোরতর কন্ডোম বিরোধি। ধর্মপ্রান লোকেদের কন্ডোম বিরোধিতা এবং রাস্তার পাগলদের ষাঁঢ় দেখলে ইঁট ছোড়া-কেমন যেন সব গুলিয়ে যায়। দেবলীনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নবমীর দিন গরু খাওয়া “প্রোমট” করেছেন, তার টকশোতে।  

 

রাজস্থানের কমেডিয়ান মুনওয়ার ফারুকি আঠারোদিন জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ  তিনি হিন্দুদেবদেবীদের নিয়ে ঠাট্টা করেছেন!

উত্তরপ্রদেশে সইফ আলি খানের বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হয়েছে ওয়েব সিরিজ তান্ডবের জন্য। অভিযোগ -হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত। তাকে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।

 

যা দিনকাল, এরা  মাইকেল মধুসূদন দত্তকে জেলে পাঠাত লক্ষনকে ভিলেন বানানোর অভিযোগে। বড়ু চন্ডীদাস থেকে মধ্যযুগের একাধিক কবি, যাদের কাব্যেমাত্রই  হিন্দু দেবদেবীদের আদিরসাত্মক কাহিনী-তাদের কাব্যগ্রন্থগুলিও নিশিদ্ধ হয় নি কেন কে জানে! হয়ত নিশিদ্ধ হয় নি-কারন এখনো হিন্দুত্ববাদিরা সেগুলো পড়ে ওঠার মতন শিক্ষিত নয়। নইলে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে ধর্ষকাম শ্রীকৃষ্ণ চরিত্রর অভিযোগে তথাগত রায় সম্ভবত বড়ু চন্ডিদাসের বিরুদ্ধে মরোনোত্তর ফাঁসির দাবী জানাতেন!

 

 যেসব হিন্দুরা যারা বিজেপিকে ভোট দেন বা দেওয়ার ইচ্ছা আছে, একটু ভাবুন। আপনারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমি কোন রাজনৈতিক আদর্শের জায়গা থেকে এই কথাগুলি লিখছি না। কারন ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি গণতন্ত্রে সব ধরনের  রাজনৈতিক আদর্শই থাকা উচিত। কিন্ত  কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করলে, ভারত দেশটা পচে গিয়ে পাকিস্তান হতে বাধ্য।

 

হিন্দুত্ববাদিদের প্রথম যুক্তি -আপনারা পারবেন নবী মহম্মদ বা বিবি আয়েশাকে নিয়ে এই ধরনের ঠাট্টা ব্যাঙ্গ করতে? 

 

আমি এই প্রশ্নের উত্তর আগে অনেকবার দিয়েছি । মুসলমানরা ন্যাংটো হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলে, আপনি ফাটা প্যান্ট পরে রাস্তায় ঘুরবেন? মুসলমানরা বাজে খাদ্যাভাসের জন্য ডায়বেটিক্স হাইপ্রেসারে ভুগলে, আপনি মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস নকল করবেন? এটা যুক্তির ছিরি???

 

এখানে খেয়াল রাখার উচিত যে ইসলামিক সমাজ যে সময় পৃথিবীতে জ্ঞান বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে-সেই সময়ে ইসলামে মুক্তচিন্তা চর্চা ছিল। ইসলামের জন্ম থেকে দশম শতাব্দি পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম নবী সবাইকে অপমান করা যেত। কিন্ত ইসলামের বর্তমান কট্টর রূপ এসেছে দশম-একাদশ শতাব্দি থেকে। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম যেই মুক্তচিন্তা ছেড়ে কট্টর হয়েছে, মুসলমানদের পতন হয়েছে সর্বত্র। তাদের সেই পতন এখনো আটকানো যায় নি। ইস্রায়েলের মতন একটা পুঁচকে দেশ যত নোবেল বিজেতা দেয়, যে পরিমান প্রযুক্তি তৈরী করে, ৫১ টা মুসলমান দেশ মিলে একত্রে তার  ৫% ও করতে অক্ষম। পার্থক্য এতটাই।

 

ইসলামে উদারনৈতিক চিন্তার অভাবে ভুক্তভোগী কারা ? মুসলমানরা নিজেরা। তারা পিছিয়ে গেছে। মনে রাখবেন সপ্তম-দশম শতাব্দিতে পৃথিবীর সব আবিস্কার এসেছে এই আরব মুসলমানদের থেকে। আর বর্তমানে  আরবে এত তেল থাকা সত্ত্বেও , তারা সারাক্ষন নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে-কারন ওই ধরনের রেজিমেন্টেড ধর্মীয় সমাজে গণতন্ত্র বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব না।  উদারনৈতিক স্বৈরতন্ত্রও অসম্ভব। আপনারাও কি চান ভারত বর্ষেও তাই হোক? ভারতে গণতন্ত্র লোপ পেলে, গৃহযুদ্ধ বাধবেই। ভারতে গণতন্ত্রের সাফল্যের মূল কারন উদার নৈতিক হিন্দু ধর্ম। হিন্দু ধর্ম থেকে উদারতা সরে গেলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। সাথে সাথে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখা সহজ হবে না।

 

 হিন্দু ধর্মকে ইসলামের মতন কট্টর বানিয়ে, কিছু কিছু হিন্দু কট্টর মুসলমানদের মতন আচরন করতে ইচ্ছুক। বা করছেন। তথাগত রায়ের আচরন দেখে তাই মনে হচ্ছে। তাদের মতে এছাড়া নাকি ভারতে ইসলামের আগ্রাসন আটকানো যাবে না।

এর ফল হবে ঠিক উলটো। ভারতে বহুদিন ধরে উদারনৈতিক হিন্দুধর্মের পাশে থাকায় ইসলামের উগ্রতা অনেক কম ছিল। পেট্রো ডলারে উত্থানে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ সর্বত্র ওয়াহাবি ইসলামের দৌলতে সেই উগ্রতা বেড়েছে। কিন্ত বর্তমানে পেট্রোডলারের পতনে, ওয়াহাবি ইম্পোর্ট কমতে বাধ্য। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।  বলিউডের উদারনৈতিক হিন্দুত্ব কিন্ত বাংলাদেশ , পাকিস্তান সহ এই উপমহাদেশের বৃহত্তর মুসলমান সমাজের উগ্রতা কমানোর সব থেকে বড় ফ্যাক্টর ছিল। সেটা উঠে গেলে, এই উপমহাদেশে ইসলামের উগ্রত্ব বাড়বে। কমবে না।

 আমরা কোন ধর্মীয় যুগে বাস করি না। বর্তমানের এই সময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বত্র অভূতপূর্ব আবিস্কারের যুগ। যে জাতি এই আবিস্কারের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, তারাই ভবিষ্যতে মাস্টার রেস।  আবিস্কার কিন্ত বদ্ধ মনের বদ্ধ জলাশয়ে হয় না। চীন এটা বুঝেছে বলে, ওখানে ছেলেমেয়েরা যখন ছোট থাকে তাদেরকে এটা করো না, ওটা করো না বলা হয় না। বাচ্চাদের মনকে ইনডক্ট্রিনেশন থেকে বাঁচানোর প্রয়োজনিয়তা এদ্দিনে চীন ও বুঝেছে। যে সমাজে বাচ্চাদের স্বাধীন চিন্তার স্বাদ দেওয়া হয় না, সেই সমাজ আবিস্কারের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে যাবে।  কোন ধর্মীয় সমাজে শিশু ব কিশোর মনের মুক্তবিকাশ সম্ভব না। ফলে সেই সব সমাজ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের সাথে পেরে উঠবে না।

ধর্মীয় অনুভূতি থাকতেই পারে, যেহেতু অনেকেই তাদের জীবনটা ধর্ম দিয়েই বেঁধেছেন। কিন্ত ধর্ম যেহেতু বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক সেহেতু ধর্মানুভুতি ব্যক্তিগত পরিসরের বাইরে গুরুত্ব দেওয়া উচিত না।  ধর্মানুভূতি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক হলে, সেই রাষ্ট্র পিছিয়ে  যাওয়া দেশের কাতারে যোগ দেবে। যেমন ধরুন ডারুইনের বিবর্তন তত্ব ইসলামিক থিওলজী এবং খ্রীষ্ঠান থিওলজি-দুই ধর্মতত্বের সাথে সাংঘার্ষিক। ফলে ৫১ টি মুসলিমদেশে ডারুইন হয় পড়ানো হয় না, বা সংক্ষিপ্ত ভাবে পড়ানো হয়। আমেরিকাতে খ্রীষ্ঠানরা স্কুল সিলেবাসে বিবর্তন তত্ত্ব পড়ানোর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। কিন্ত হেরে গেছে। এইজন্য পাশ্চাত্যের খ্রীষ্ঠীয় সমাজে এগিয়ে গেছে যে তাদের ধর্মানুভুতি প্রোটেক্ট করার কোন দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র বা সেই দেশের আইনে নেই।

 

 ভারত এমনিতেই শিক্ষা এবং রিসার্চে বহু পিছিয়ে থাকা একটি দেশ। অঙ্ক বিজ্ঞানে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলিং এ  ভারতের স্থান ৭০-৮০ নাম্বারে ঘোরাফেরা করে। মোদ্দা কথা পিছিয়ে থাকা দেশের কাতারে।  প্রথম ২০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং এ কখনো ইন্ডিয়ান ইন্সটীঊট অব সায়েন্সের নাম থাকে , কখনো থাকে না। আই আই টি গুলোর রাঙ্কিং ২০০-৫০০ এর মধ্যে।  ১% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট পেশাদার কাজের যোগ্য। এই হচ্ছে বাস্তব অবস্থা।

এমন একটি দেশে, শিক্ষা এবং রিসার্চের পেছনে আরো অনেক বেশী টাকা ঢালা উচিত। শিক্ষা এবং রিসার্চের বুনিয়াদ আরো শক্ত হওয়া দরকার। কিন্ত বর্তমানে আই আই টির অধ্যাপকরা     শুধু গোমূত্র এবং গো রিসার্চের জন্য প্রোজেক্ট লিখলে টাকা পান!  এগুলো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা!

No comments: