ভারত বনাম আমেরিকার সংবিধান- দুই গণতন্ত্রের ভাল খারাপের সংলাপ
Monday, January 25, 2021
ভারত বনাম আমেরিকার সংবিধান- দুই গণতন্ত্রের ভাল খারাপের সংলাপ
Friday, January 22, 2021
ভারতের কৃষক আন্দোলন ঃ রামরাজ্য বনাম কর্পরেটরাজ
ভারতের কৃষক আন্দোলন ঃ রামরাজ্য বনাম কর্পরেটরাজ
Thursday, January 21, 2021
আমার ধর্ম, আমার ধর্মের অপমান ইত্যাদি
আমার ধর্ম,
আমার ধর্মের অপমান ইত্যাদি
-১/২১/২০২১
হিন্দুত্ববাদের
উত্থানের সাথে সাথে “আমার ধর্ম হিন্দু ধর্ম” -এই ধারনাটা বেশ ঘণীভূত এখন। চারিদিকে
সেটাই ঘিন ঘিন করছে । এই ধরনের উগ্রতা ইসলামে
দেখা যেত। খ্রীষ্ঠান ধর্মে আগে ছিল। ইসলামে এটা “কৌম”-কমিউনিটি বা সম্প্রদায়।
ভারতে যেভাবে
অতীতে ঐতিহাসিক ভাবে ধর্মাচরন হত ( বা এখনো হয়)- তা নিতান্তই ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম
যাত্রা। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের গুরু কৌটিল্য ব্রাহ্মন, কিন্ত তিনি বিয়াল্লিশ বছর বয়সে
জৈন সন্ন্যাসী হয়ে সব কিছু ত্যাগ করলেন। বিম্বিসার ছিলেন অভাজিকা নামে এক লুপ্ত নাস্তিক্য
ধর্মের লোক। সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম নিয়েছেন পরে-ছোটবেলায় ধর্ম নিয়ে কোন চিন্তা তার
মাথায় ছিল না।
অর্থাৎ ভারতের
সংস্কৃতি্র আদিতে মানুষের ধর্ম পরিচয়, যে আমি
হিন্দু আমি বৌদ্ধ এমন ছিল না। হিন্দুর সন্তান মানে সেও বাবার মতন হিন্দু হবে বা বৌদ্ধ
বাবার সন্তান বৌদ্ধ ধর্ম পালন করবে-এসব ছিল না। কারন ধর্ম সাধনাকে ভারতবর্ষ চিরকাল
ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক উপসনা হিসাবেই দেখেছে
। বৌদ্ধ, জৈনরা প্রথম সম্প্রদায় তৈরী
করে। কিন্ত তা ছিল সন্ন্যাসী সম্প্রদায়। কারন ভারতবর্ষের সাধারন মানুষ সংসার ধর্ম শেষ
করে বানপ্রস্থে আধ্যাত্মিক জীবনের সন্ধানে যেত।
প্রত্যেকের আধ্যাত্মিক জার্নি ছিল নিজস্ব। তার নিজের পথের সাথে পরিবারের ধর্মেরই
কোন সম্পর্ক থাকত না। রাষ্ট্রের ধর্ম অনেক দূরের ব্যপার।
খ্রীষ্ঠান ধর্মের উত্থানের সাথে সাথে রাষ্ট্রের “ধর্ম”
এবং “ধর্ম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা” এই দুটো জিনিস ইতিহাসে আমদানি হয়। ইসলামে “ধর্ম
এবং রাষ্ট্র” বা ধর্ম পরিচালিত রাষ্ট্রের ধারনা খ্রীষ্টান ধর্ম থেকেই নেওয়া এবং রাষ্ট্রের
ধর্ম সেখানে আরো মজবুত । ইসলামে যেহেতু ধর্ম এবং রাজনীতি একই সূত্রে বাঁধা সেহেতু মুসলিম
দেশগুলিতে ইসলাম রাজনীতির সেন্টাল থিম। তবে সেখানে ইসলামিক পার্টিগুলি ভোট নাও পেতে পারে। তার একটা কারন এই যে -সাধারন দলগুলিও ইসলামের নামেই
রাজনীতি করে। যেমন বাংলাদেশে জামাতিরা ভোট পায় না। তার কারন কি এই যে বাংলাদেশের লোকেরা
সেকুলার? আমার তা মনে হয় না। এর কারন এই যে আওয়ামি লীগ বা বি এন পি এতটাই ইসলাম মেনে
চলে যে , বাংলাদেশের সাধারন লোকেরা আলাদা কোন
ইসলামিক জামাতের প্রয়োজন অনুভব করে না।
আজকে হিন্দুরা
যে মুসলমানদের মতন সর্বত্র হিন্দু ধর্মের অবমাননা দেখতে পাচ্ছে-তা ইসলামের হনুকরন।
সঙ্গদোষ। ধর্মের হাত ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা পেলে, লোকে ওটা করে-যেমন মুসলমানরা এদ্দিন
করে এসেছে। কিন্ত পাশাপাশি এটাও ঠিক- ইসলামের জন্মের দুশো বছরের মধ্যে সুফী আন্দোলনের
জন্ম হয়েছিল ইসলামকে রাজনীতি মুক্ত করতে। কিন্ত সেটা হওয়ার না-কারন ইসলামের উত্থান
একই সাথে রাজনৈতিক-ধার্মিক শক্তি হিসাবে। ইসলামে থিওলজি রাজনীতির থেকে আলাদা করা যায়
না যেহেতু কোরানের ছত্রে ছত্রে রাজনৈতিক নির্দেশ, শাসন পরিচালনার নির্দেশ-অর্থাত একটি
পূর্নাঙ্গ রাজনৈতিক তত্ত্ব দেখা যায়।
কিন্ত ভারতের
কোন ধর্মই তা ছিল না। ভারতের ধর্ম সাধনার শুরুই হয় ইহজাগতিক সব কিছু থেকে মুক্ত হতে!
সংসার ত্যাগ করতে। ইসলামের ইতিহাসে কোন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য নেই -যিনি সিংহাসন ছেড়ে
জৈন সাধক সন্ন্যাসী ভিখিরি হয়েছেন। তার কাছে ধর্ম হচ্ছে “ব্যাক্তিগত সাধনা” যা সংসার
মায়া মোহ ত্যাগ করেই শুরু হয়। ফলে বিয়াল্লিশ বছর বয়সেই তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সংসার
ত্যাগ করেন। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর,
অনুতাপে নিজের খোদাই করা এডিক্টে নিজে বলে গেছেন, এত প্রানী হত্যার দায় নিয়ে তিনি অনুতপ্ত।
তাকে কলিঙ্গবাসী যেন ক্ষমা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজা রাজ্যজয়ের পর, সেই রাজ্যের
অধিবাসিদের কাছ থেকে ক্ষমা চান নি। ভারতের
দুই পৌরানিক গ্রন্থেও রাজনীতি এবং ধর্মের স্থান সুনির্দিষ্ট। রাবন বধের পর, লক্ষনকে
রাম বল্লেন যাও রাবনের কাছে গিয়ে রাজনীতির শিক্ষা নাও। লক্ষন প্রথমবার রাবনের মাথার
কাছে এলেন। রাবন কিছুই বল্লেন না। রাম লক্ষনকে বল্লেন-আচ্ছা শিক্ষাটা নিচ্ছে কে?? গুরুর
শিক্ষা পায়ের কাছে বসে নিতে হয়। এবার লক্ষন রাবনের পায়ের কাছে বসলেন। রাবন মৃত্যুর
আগে লক্ষনকে রাজনৈতিক শিক্ষা দিয়ে যান। আমি
যত রামায়ন মহাভারত পরেছি-ততই মুগ্ধ হয়েছি। কারন বর্তমানের রাজনীতিতে ওই লেভেলের মানবিক
গুনাবলির ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ভেনে দেখুন।
রামের মতন শক্তিশালী পরমবীর রাজাকেও প্রজাদের মান রাখতে স্ত্রী ত্যাগ কর্তে হয়েছে।
তিনি নিজের মত প্রজাদের ওপর চাপাতে পারেন নি-চেষ্টাও করেন নি।
অন্যদিকে আওরঙ্গজেব
ও ধার্মিক মুসলমান ছিলেন-কিন্ত তিনি ইসলামের সৈনিক হিসাবে ভারতজুরে ইসলামের প্রতিষ্ঠায়
সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন -জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করেছেন। ধার্মিক মুসলমান শাসকদের
কাছে ইসলাম মানেই রাজনৈতিক। কারন ইসলাম একই
সাথে আধ্যাত্নিক রাজনৈতিক মতবাদ। ফলে তাদের মধ্যে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী দেখা যায়
না- তারা সবাই যোদ্ধা-ইসলামের বিস্তারে যুদ্ধ করে গেছেন।
ইসলামের লক্ষ্য যেখানে রাজনৈতিক, ভারতের শ্বাস্বত
দর্শন, ধর্ম কিন্ত আধ্যাত্মিক এবং তার ভিত্তি ত্যাগ। দুটো সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রির আলাদা
সংস্কৃতি।
কিন্ত বর্তমানে
হিন্দুরা যেভাবে মুসলমানদের মতন কট্টর হিন্দুপনা শুরু করেছে, তাতে মনে হচ্ছে, তারা
আর হিন্দু নেই। তারা সবাই ইসলাম গ্রহন করেছে। কারন হিন্দু ধর্মপালনে এই ধরনের সাম্প্রদায়িকতা
নেই- অসহিষ্ণুতা নেই। সবটাই ব্যক্তিগত সাধনা।
পারসোনাল জার্নি।
বিজেপির সম্পূর্ন
ভারত জয় মানে, এই উপমহাদেশে ইসলামের বিজয় সম্পূর্ন। কারন এই ধরনের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা
ইসলামিক সংস্কৃতি। গোটা ভারতে এখন সেটাই প্রতিষ্ঠিত, এবং যা দেখছি হিন্দুরা সেই ইসলামি
সংস্কৃতিই চাইছেন।
বিজেপি মতালম্বী
হিন্দুদের বক্তব্য মুসলমানদের মতন কট্টরপন্থা
ছাড়া নাকি হিন্দু ধর্ম টিকবে না!
এই ব্যাপারে আমার মত খুব স্পষ্ট। কোন ধর্মই টিকবে
না। ইসলাম, খ্রীষ্ঠান, হিন্দু ধর্মের ব্রাঞ্চ-কোন কিছুই না। ইউরোপের অধকাংশ উন্নত দেশে
নিধার্মিকরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমেরিকাতে ১৯৮৯ সালে নিধার্মিকের সংখ্যা ছিল ৮%। ২০১০
সালে সেটা হয়েছে ২০%। ২০৩০ নাগাদ ৩৪% হবে। মুসলমানদের মধ্যেও প্রচুর শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা
ধর্ম ছেড়েছেন-কিন্ত ভয়ে প্রকাশ করেন না। ধর্মের কোন উপযোগিতাই এখন নেই-সবটাই অপকারিতা।
তাও ধর্ম টিকে আছে পলিটিশিয়ানদের জন্য। কারন ধর্মের আফিং না থাকলে, তারা খাবে কি? মানুষের
জন্য কাজ করা কঠিন। তার থেকে ধর্মের নামে দাঙ্গা লাগিয়ে, ভয় দেখিয়ে ভোটে জিতে তিনপুরুষের
ভবিষ্যত উদ্ধার করা সহজ। সেই জন্যেই ধর্ম টিকে আছে। রাষ্ট্র রাজনীতি জোর করে ছোট বেলা
থেকে এটা মাথায় ঢোকাচ্ছে। কোন বাচ্চা ধার্মিক হয়ে জন্মায় না। তাকে ধার্মিক করে গড়ে
তোলা হয়। পরিবার, স্কুল, স,মাজ, রাষ্ট্র এই
কাজটা করে।
সমস্যা একটাই।
এই উপমহাদেশের পুরোটাই পাকিস্তান হতে চলেছে। বিদ্যাবুদ্ধি প্রযুক্তির অভাবে এরা আস্তে
আস্তে সবাই চীনের ভ্যাসাল স্টেট হয়ে যাবে। পাকিস্তানে সেই প্রসেস সম্পূর্ন। বাংলাদেশ
পা বাড়িয়েছে। আমেরিকা হাত তুলে নিলে ভারতের একই হাল হবে।
ধর্মান্ধতা
এবং রাষ্ট্রের উন্নতি একই সাথে সম্ভব না। কোন উদাহরন নেই। ধর্মান্ধতা একটা দেশকে টেনে
নামাবেই।
Tuesday, January 19, 2021
মুক্তচিন্তার চর্চা ছাড়া উন্নত বিশ্ব, বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব না
মুক্তচিন্তার
চর্চা ছাড়া উন্নত বিশ্ব, বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব
না
-
১/১৯/২০২১
গত সপ্তাহে
হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাতের জন্য পুলিশে এফ আই আর, গ্রেফতারি, গ্রেফতারের হুমকির সামনে
অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত । প্রথম জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শিবলিঙ্গে
কন্ডোম পড়ানো মিম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। শিবলিঙ্গ পুজো করলে ধর্ম, আর লিঙ্গে কন্ডোম
চাপালে অধর্ম- এসব আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে মাথায় ঢোকে নি কোনদিন। এটাও আমার ঘিলুতে ঢোকে
নি বিশ্বজুরে ধর্মপ্রান খ্রীষ্ঠান, মুসলমান, হিন্দু -এদের সব্বাই দেখি ঘোরতর কন্ডোম
বিরোধি। ধর্মপ্রান লোকেদের কন্ডোম বিরোধিতা এবং রাস্তার পাগলদের ষাঁঢ় দেখলে ইঁট ছোড়া-কেমন
যেন সব গুলিয়ে যায়। দেবলীনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নবমীর দিন গরু খাওয়া “প্রোমট” করেছেন,
তার টকশোতে।
রাজস্থানের
কমেডিয়ান মুনওয়ার ফারুকি আঠারোদিন জেলে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি হিন্দুদেবদেবীদের নিয়ে ঠাট্টা করেছেন!
উত্তরপ্রদেশে
সইফ আলি খানের বিরুদ্ধে এফ আই আর করা হয়েছে ওয়েব সিরিজ তান্ডবের জন্য। অভিযোগ -হিন্দু
ভাবাবেগে আঘাত। তাকে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
যা দিনকাল,
এরা মাইকেল মধুসূদন দত্তকে জেলে পাঠাত লক্ষনকে
ভিলেন বানানোর অভিযোগে। বড়ু চন্ডীদাস থেকে মধ্যযুগের একাধিক কবি, যাদের কাব্যেমাত্রই
হিন্দু দেবদেবীদের আদিরসাত্মক কাহিনী-তাদের
কাব্যগ্রন্থগুলিও নিশিদ্ধ হয় নি কেন কে জানে! হয়ত নিশিদ্ধ হয় নি-কারন এখনো হিন্দুত্ববাদিরা
সেগুলো পড়ে ওঠার মতন শিক্ষিত নয়। নইলে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনে ধর্ষকাম শ্রীকৃষ্ণ চরিত্রর
অভিযোগে তথাগত রায় সম্ভবত বড়ু চন্ডিদাসের বিরুদ্ধে মরোনোত্তর ফাঁসির দাবী জানাতেন!
যেসব হিন্দুরা যারা বিজেপিকে ভোট দেন বা দেওয়ার ইচ্ছা
আছে, একটু ভাবুন। আপনারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমি কোন রাজনৈতিক
আদর্শের জায়গা থেকে এই কথাগুলি লিখছি না। কারন ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি গণতন্ত্রে সব
ধরনের রাজনৈতিক আদর্শই থাকা উচিত। কিন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করলে, ভারত দেশটা
পচে গিয়ে পাকিস্তান হতে বাধ্য।
হিন্দুত্ববাদিদের
প্রথম যুক্তি -আপনারা পারবেন নবী মহম্মদ বা বিবি আয়েশাকে নিয়ে এই ধরনের ঠাট্টা ব্যাঙ্গ
করতে?
আমি এই প্রশ্নের
উত্তর আগে অনেকবার দিয়েছি । মুসলমানরা ন্যাংটো হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলে, আপনি ফাটা
প্যান্ট পরে রাস্তায় ঘুরবেন? মুসলমানরা বাজে খাদ্যাভাসের জন্য ডায়বেটিক্স হাইপ্রেসারে
ভুগলে, আপনি মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস নকল করবেন? এটা যুক্তির ছিরি???
এখানে খেয়াল
রাখার উচিত যে ইসলামিক সমাজ যে সময় পৃথিবীতে জ্ঞান বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়েছে-সেই সময়ে
ইসলামে মুক্তচিন্তা চর্চা ছিল। ইসলামের জন্ম থেকে দশম শতাব্দি পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম নবী
সবাইকে অপমান করা যেত। কিন্ত ইসলামের বর্তমান কট্টর রূপ এসেছে দশম-একাদশ শতাব্দি থেকে।
ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম যেই মুক্তচিন্তা ছেড়ে কট্টর হয়েছে, মুসলমানদের পতন হয়েছে সর্বত্র।
তাদের সেই পতন এখনো আটকানো যায় নি। ইস্রায়েলের মতন একটা পুঁচকে দেশ যত নোবেল বিজেতা
দেয়, যে পরিমান প্রযুক্তি তৈরী করে, ৫১ টা মুসলমান দেশ মিলে একত্রে তার ৫% ও করতে অক্ষম। পার্থক্য এতটাই।
ইসলামে উদারনৈতিক
চিন্তার অভাবে ভুক্তভোগী কারা ? মুসলমানরা নিজেরা। তারা পিছিয়ে গেছে। মনে রাখবেন সপ্তম-দশম
শতাব্দিতে পৃথিবীর সব আবিস্কার এসেছে এই আরব মুসলমানদের থেকে। আর বর্তমানে আরবে এত তেল থাকা সত্ত্বেও , তারা সারাক্ষন নিজেদের
মধ্যে খুনোখুনি করছে-কারন ওই ধরনের রেজিমেন্টেড ধর্মীয় সমাজে গণতন্ত্র বিজ্ঞান চর্চা
সম্ভব না। উদারনৈতিক স্বৈরতন্ত্রও অসম্ভব।
আপনারাও কি চান ভারত বর্ষেও তাই হোক? ভারতে গণতন্ত্র লোপ পেলে, গৃহযুদ্ধ বাধবেই। ভারতে
গণতন্ত্রের সাফল্যের মূল কারন উদার নৈতিক হিন্দু ধর্ম। হিন্দু ধর্ম থেকে উদারতা সরে
গেলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। সাথে সাথে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ রাখা সহজ হবে না।
হিন্দু ধর্মকে ইসলামের মতন কট্টর বানিয়ে, কিছু কিছু
হিন্দু কট্টর মুসলমানদের মতন আচরন করতে ইচ্ছুক। বা করছেন। তথাগত রায়ের আচরন দেখে তাই
মনে হচ্ছে। তাদের মতে এছাড়া নাকি ভারতে ইসলামের আগ্রাসন আটকানো যাবে না।
এর ফল হবে ঠিক
উলটো। ভারতে বহুদিন ধরে উদারনৈতিক হিন্দুধর্মের পাশে থাকায় ইসলামের উগ্রতা অনেক কম
ছিল। পেট্রো ডলারে উত্থানে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ সর্বত্র ওয়াহাবি ইসলামের দৌলতে
সেই উগ্রতা বেড়েছে। কিন্ত বর্তমানে পেট্রোডলারের পতনে, ওয়াহাবি ইম্পোর্ট কমতে বাধ্য।
টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। বলিউডের উদারনৈতিক
হিন্দুত্ব কিন্ত বাংলাদেশ , পাকিস্তান সহ এই উপমহাদেশের বৃহত্তর মুসলমান সমাজের উগ্রতা
কমানোর সব থেকে বড় ফ্যাক্টর ছিল। সেটা উঠে গেলে, এই উপমহাদেশে ইসলামের উগ্রত্ব বাড়বে।
কমবে না।
আমরা কোন ধর্মীয় যুগে বাস করি না। বর্তমানের এই সময়
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বত্র অভূতপূর্ব আবিস্কারের যুগ। যে জাতি এই আবিস্কারের
ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, তারাই ভবিষ্যতে মাস্টার রেস। আবিস্কার কিন্ত বদ্ধ মনের বদ্ধ জলাশয়ে হয় না। চীন
এটা বুঝেছে বলে, ওখানে ছেলেমেয়েরা যখন ছোট থাকে তাদেরকে এটা করো না, ওটা করো না বলা
হয় না। বাচ্চাদের মনকে ইনডক্ট্রিনেশন থেকে বাঁচানোর প্রয়োজনিয়তা এদ্দিনে চীন ও বুঝেছে।
যে সমাজে বাচ্চাদের স্বাধীন চিন্তার স্বাদ দেওয়া হয় না, সেই সমাজ আবিস্কারের ক্ষেত্রে
অনেক পিছিয়ে যাবে। কোন ধর্মীয় সমাজে শিশু ব
কিশোর মনের মুক্তবিকাশ সম্ভব না। ফলে সেই সব সমাজ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের
সাথে পেরে উঠবে না।
ধর্মীয় অনুভূতি
থাকতেই পারে, যেহেতু অনেকেই তাদের জীবনটা ধর্ম দিয়েই বেঁধেছেন। কিন্ত ধর্ম যেহেতু বিজ্ঞানের
সাথে সাংঘর্ষিক সেহেতু ধর্মানুভুতি ব্যক্তিগত পরিসরের বাইরে গুরুত্ব দেওয়া উচিত না।
ধর্মানুভূতি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক হলে, সেই
রাষ্ট্র পিছিয়ে যাওয়া দেশের কাতারে যোগ দেবে।
যেমন ধরুন ডারুইনের বিবর্তন তত্ব ইসলামিক থিওলজী এবং খ্রীষ্ঠান থিওলজি-দুই ধর্মতত্বের
সাথে সাংঘার্ষিক। ফলে ৫১ টি মুসলিমদেশে ডারুইন হয় পড়ানো হয় না, বা সংক্ষিপ্ত ভাবে পড়ানো
হয়। আমেরিকাতে খ্রীষ্ঠানরা স্কুল সিলেবাসে বিবর্তন তত্ত্ব পড়ানোর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
কিন্ত হেরে গেছে। এইজন্য পাশ্চাত্যের খ্রীষ্ঠীয় সমাজে এগিয়ে গেছে যে তাদের ধর্মানুভুতি
প্রোটেক্ট করার কোন দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র বা সেই দেশের আইনে নেই।
ভারত এমনিতেই শিক্ষা এবং রিসার্চে বহু পিছিয়ে থাকা
একটি দেশ। অঙ্ক বিজ্ঞানে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলিং এ ভারতের স্থান ৭০-৮০ নাম্বারে ঘোরাফেরা করে। মোদ্দা
কথা পিছিয়ে থাকা দেশের কাতারে। প্রথম ২০০ টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং এ কখনো ইন্ডিয়ান ইন্সটীঊট অব সায়েন্সের নাম থাকে , কখনো
থাকে না। আই আই টি গুলোর রাঙ্কিং ২০০-৫০০ এর মধ্যে। ১% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট পেশাদার কাজের যোগ্য।
এই হচ্ছে বাস্তব অবস্থা।
এমন একটি দেশে,
শিক্ষা এবং রিসার্চের পেছনে আরো অনেক বেশী টাকা ঢালা উচিত। শিক্ষা এবং রিসার্চের বুনিয়াদ
আরো শক্ত হওয়া দরকার। কিন্ত বর্তমানে আই আই টির অধ্যাপকরা শুধু গোমূত্র এবং গো রিসার্চের জন্য প্রোজেক্ট
লিখলে টাকা পান! এগুলো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা!
Sunday, January 17, 2021
বাংলা পক্ষের রাজনীতি
বাংলা পক্ষের
রাজনীতি
-
বিপ্লব
পাল ১/১৭/২০২১
আজ বাংলাপক্ষের
সমাবেশ দেখলাম ভিডিওতে। ভাল লাগল। এটা ১৯৭০ নাগাদ হলে আরো ভাল হত। সিপিএম কংগ্রেসের
হাতে পশ্চিম্ বঙ্গকে এই ভাবে তিলে তিলে শেষ হতে হত না।
যারা ভূমিপুত্রদের অধিকারের আন্দোলনকে বিচ্ছন্নতাবাদি
ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে বাঙালীর আরো ক্ষতি করতেব চাইছেন, তাদের এই পাঁচটা পয়েন্ট অবশ্যই
জানা উচিত
(১) এই মুহুর্তে
অর্থনৈতিক এবং মানবিক উন্নয়নের দিক দিয়ে সব থেকে বেশী এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলো দেখুন –
তামিলনাডু, অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র , পাঞ্জাব ইত্যাদি। এই সব রাজ্যেই আঞ্চলিক দল, আঞ্চলিক
ভাষা জাতিয়তাবাদি দলগুলি শক্তিশালী। কারন এইসব রাজ্যের রাজনীতি বরাবর ভূমিপুত্রদের
চাকরি ব্যবসার দিকটা সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। তার ফল ও পাচ্ছে। তারা কি অন্যরাজ্যের
লোকেদের তাড়িয়ে দিয়েছে? মোটেও না। কিন্ত নিজের রাজ্যের ভূমিপুত্রদের দিয়ে অর্থনৈতিক
বেসটা তৈরী করেছে। সেটা বাংলায় নেই। বাংলার অর্থনীতি মারোয়ারীদের হাতে। আই এ এস, আই
পি এস, -টোটাল এডমিনিস্টেশন সেটাও অবাঙালীদের
হাতে যেহেতু বাঙালীরা শিক্ষায় পিছিয়ে গেছে এবং তারা এই এডমিনিস্ট্রেশনে যেতে অনিচ্ছুক।
২০২১ সালে হয়ত বাঙালীর রাজনীতিটাও দিল্লীর হাতে তুলে দেবে বাঙলারই সাম্প্রাদায়িক হিন্দুরা।
বাঙালীর হাতে নিজভূমেই আর কিছু থাকবে না। এই
পরিস্থিতিতে বাঙালীর প্রতিরোধ আন্দোলন হবেই-এবং সেটাই করছে বাংলাপক্ষ।
(২) কেন লিখলাম
এটা ১৯৭০ সালে হত ভাল হত? তাহলে মহারাষ্ট্রে
শিবসেনার ইতিহাস দেখতে হবে। শিবসেনা মহারাষ্ট্রে সব থেকে দুটো গুরুত্বপূর্ন কাজ করেছিল।
সিটুর ট্রেড ইউনিয়ান ধ্বংস করেছিল। আর স্থানীয় মারাঠীদের চাকরির জন্য বহিরাগত শিল্পপতিদের
বাধ্য করেছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল চালু করতে। যেখানে স্থানীয় বেকারদের ওয়েল্ডিং, ফিটিং
ইত্যাদিতে ট্রেনিং দেওয়া হত। এই ভাবে শিবসেনার চাপে মহারাষ্ট্র হয়ে ওঠে শিল্পভূমি,
আর পশ্চিম বাংলা সিটুর দৌড়াত্মে শিল্পের বধ্যভূমি। নইলে ১৯৬০-৭০ সালে ভারতে বাংলা এবং
মরারাষ্ট্রই ছিল শিল্পে সব থেকে উন্নত রাজ্য। কিন্ত মহারাষ্ট্র যেখানে এক নাম্বার পজিশন
ধরে রাখল, বাংলা পিছিয়ে গেল ২২ নাম্বারে। শেষের বেঞ্চে। পার্থক্য? শিবসেনা। যারা মারাঠি
ভূমিপুত্রদের জন্য লাগাতার আন্দোলন করেছে। বাংলার মারোয়ারী ক্যাপিটাল চলে গেল গোটা
ভারতে। কিন্ত মহারাষ্ট্রের সিন্ধ্রি, গুজরাতি ক্যাপিটাল মহারাষ্ট্রে আরো ইনভেট করল
। কেন? শিবসেনা।
(৩) বাঙালীর সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এদের মধ্যে যে বুদ্ধিজীবী
ক্লাসটা, মানে যারা একটু লিখতে টিখতে পারে, টকশোতে মুখ দেখায়-তারা হচ্ছে শ্রেফ অশিক্ষিত
এবং নির্বোধ। প্রথমে বাঙালী ন্যাশানালিস্ট বুদ্ধিজীবিদের কথায় আসি। এর মধ্যে আছে কংগ্রেস
এবং বিজেপির দিল্লীতে পাত্তা না পাওয়া রাজ্য নেতারা। এদের ধারনা যেকোন দিল্লী বিরোধি
আন্দোলনই বিচ্ছিন্নবাদি আন্দোলন। আমি শুধু তাদের একটা কথাই বলব। ইতিহাস পরিস্কার। ভারত
যদি টুকরো টুকরো হয়,তা কাশ্মীরের জঙ্গী, খালিস্থানি বা আলফা জঙ্গীদের জন্য হবে না।
তা হবে দিল্লীর কেন্দ্রীকতার জন্য। ভারতের ফেডারালিজম ধ্বংসের জন্য। কেন ? তাহলে সোভিয়েত “ইউনিয়ন” এবং ইউনাইটেড স্টেটস
এর ইউনিয়নের পার্থক্যটা দেখতে হবে।
আমেরিকার ১৭৭৫ সাল থেকে ২৫০ বছর একটা সাকসেস্ফুল
ইউনিয়ান। কিন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ান ৭০ বছরেই ভেঙে ২০ টুকরো হয়ে গেল। কেন?
কারন জোর করে
ওইভাবে জাতিয়তাবাদি ঐক্য চাপানো যায় না। সোভীয়েত ইউনিয়ানের রাজ্যগুলো অক্টবর প্রতিবিপ্লবের
আগে ছিল জারের রাশিয়ার কলোনী। তাদের আলাদা ভাষা। আলাদা সংস্কৃতি। বিপ্লবের সময় লেনিন
প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিটা কলোনী স্বাধীনতা পাবে বলশেভিক বিপ্লবের পর। কিন্ত উল্টোটা
হয়েছে। রাশিয়ান বিপ্লবের তিন বছরের মধ্যে রেড
আর্মি সৈন্য দিয়ে , প্রতিটা রাজ্যের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ধ্বংস করে সোভীয়েত
ইউনিয়ানের মধ্যে নিয়ে আসে। এগুলি লেনিন স্টালিনের নির্দেশেই হয়েছে ( অথচ বাঙালী বামেরা
এখনো মনে করে, লেনিন স্টালিন সাম্রাজ্যবাদি বিরোধি মূর্ত ভগবান। লেনিন সরনি এখনো বাংলায়
শোভা পায় !)
যদিও সোভিয়েত
ইউনিয়ান রাজ্যগুলির ভূমিপুত্রদের ভাষা এবং সংস্কৃতির বিকাশে দিল্লীর থেকেও অনেক বেশী
উদার ছিল। কিন্ত তবুও সেই ইউনিয়ান টেকে নি। কারন রাজ্যগুলির রাজনৈতিক প্রভু ছিল মস্কো। ফলে স্বাধীনতার আন্দোলনকে দমানো যায় নি।
আমেরিকাতে ওয়াশিংটন কোন রাজ্যের প্রভু না। প্রতি
রাজ্যের নিজস্ব আইন, নিজস্ব ট্যাক্স। ওয়াশিংটনের হাতে শুধু মিলিটারি, বৈদেশিক রিলেশন।
আভ্যন্তরীন শাসনের ক্ষেত্রে প্রতিটা রাজ্য স্বাধীন। ওয়াশিংটন চাইলেও রাজ্যগুলির ওপর কিছু চাপাতে পারে
না। ফলে আমেরিকার “ঐক্য” সব থেকে শক্তিশালী।
ভারতে যেভাবে
শক্তিশালী দিল্লী আবার ফিরে আসছে, তাতে বিচ্ছিন্নবাদি আন্দোলন আরো বাড়বে। কমবে না।
ভূমিপুত্রদের হাতে তাদের ভূমির রাজনৈতিক অধিকার না থাকলে, তারা বিদ্রোহ করবে না?
(৪) ভারতের
ধারনা বৃটিশদের দেওয়া। কলোনিয়াল। মুঘল আমলের আগে পর্যন্ত বাংলা মোটেও দিল্লীর অধীনে
কোনকালে ছিল না। আকবর বাংলাকে মুঘল সম্রাজ্যের
অন্তর্ভুক্ত করেন। এবং সেই সময় বাংলার জিডিপি ছিল ভারতে সর্বোচ্চ। কিন্ত কি হল আউরঙ্গজেবের
আমলে? তার দাক্ষিনাত্য অভিযানে সব টাকা এসেছে বাংলা থেকে। তারপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর
ভারত বিজয়ে সব টাকা এসেছে বাংলা থেকে। তার বিনিময়ে বাংলার নেমে এসেছে দুর্ভিক্ষ। দারিদ্র।
অশোকের ভারত,
অখন্ড ভার্তের ঐক্যের ধারনা, পাঠ্য পুস্তকের জাতিয়তাবাদি ইনডক্ট্রিনেশন। স্কুলে ভারত
ধারনা যে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে, তা নিয়ে আমৃত্যু বয়ে বেড়ায় অনেক বাঙালী। বর্তমান ভারতের উৎস বৃটিশ রাজের ভারত। অন্যকিছু
না। এবং সেটা একটা “ইউনিয়ান”। ইউনিয়ান ভাল
জিনিস। আমেরিকা তার প্রমান। কিন্ত তা কাজ করে যদি প্রতিটা রাজ্য যথেষ্ট স্বয়ত্বশাসন
পায়। ফেডারিলিজম থাকে। ভূমিপুত্রদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
ইতিহাসের রায়
স্পষ্ট। দিল্লীর অধীনে থেকে বাংলা শুধুই পিছিয়েছে। সেই মুঘল আমল থেকেই। বাংলাদেশের সৌভাগ্য তারা ১৯৭১ সালে একটা স্বাধীন
রাষ্ট্র হিসাবে আত্নপ্রকাশ করতে পেরেছে। ফলে তারা আজ অর্তনীতি , শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে
পশ্চিম বঙ্গের থেকে এগিয়ে গেছে।
অবশ্য পাশাপাশি
এটাও ভাবার দরকার গ্লোবালাইজেশন এবং ক্যাপিটালিজমের যুগে বড় রাষ্ট্রের অংশ হওয়ার সুবিধাও
আছে। কারন ক্যাপিটাল এবং মার্কেটের আরো এক্সেসেবিলিটি। ভারতের মধ্যে থাকার সেই সুবিধাটা মারাঠারা পেয়েছে। কারন তাদের শিবসেনা
আছে। বাঙালী পায় নি। কারন তাদের শিবসেনা ছিল না। ছিল পেছন পাকা অশিক্ষিত বাম এবং কংগ্রেসে
নেতা-একদল বিশ্বাস করে আন্তর্জাতিকতায়, আরেকদল জাতিয়তাবাদে। যেগুলোতে বাংলার ভূমিপুত্রদের কোন লাভ হয় নি। সেগুলো খায় না মাথায় দেয় বাঙালীর ভূমিপুত্ররা এখনো
জানে না।
৫) ভারতের সর্বত্রই হিন্দি চাপানো হচ্ছে। হিন্দি
ভাষাটা আজ থেকে দুশো বছর আগেও ছিল না। ভারতের ধারনার মতন, হিন্দিটাও বৃটিশদের দান ।
কলোনিয়াল লেগাসি। তারাই শুরু করেছিল হিন্দুস্তানী ভাষা। তুলসীদাস মৈথিলী কবি। মৈথিলো,
বুন্দেলী, ভোজপুরী ইত্যাদি সব কিছু শুষে তৈরী হিন্দুস্থানী-সেটাই আজকের হিন্দি। এর
সাথে কোন সংস্কৃতি নেই। আছে কলোনিয়াল ইতিহাস। যোগাযোগের তাগিদ। আর সংস্কৃতি ছাড়া কি
করে একটা ভাষার মাটির বুনিয়াদ তৈরী হয়? হিন্দি যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ঠিক আছে। কিন্ত
হিন্দি ভাষা কখনোই ভারতের অন্য ভাষাগুলির, যা মাটির ভাষা তারা প্রতিস্থাপক না। হিন্দির
আগ্রাসন বন্ধ না হলে বাঙলা ভাষাটাই পশ্চিম বঙ্গ থেকে উঠে যাবে। আর ভাষা বিনা সংস্কৃতি
টেকে না।
আমি এটা বারবার মনে রাখি, পাসপোর্ট পালটে আমি ভারতীয়
থেকে আমেরিকান হয়েছি। কিন্ত আমার ভাষাগত পরিচয়, বাঙালী- আমার মাতৃভাষা পালটানো সম্ভব
না। কারন ভাষাটা আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতীয় পরিচিতিটা একটা নির্মান। যা কাজের জন্য,
মাইগেশনের জন্য বদলাতে পারে।
“ভারত” বৃটিশদের
কৃত্রিম নির্মান। “বাংলা” কৃত্রিম নির্মান না-তা একটি ভূমি, একটি ভৌগলিক অঞ্চলের জনগোষ্টির বিবর্তন। এই পার্থক্যটা মাথায় রাখা দরকার।
Saturday, January 2, 2021
বিজ্ঞান এবং মানবমুক্তি
২০২০ কেমন গেল ? ধনী দরিদ্র বাম ডান বিজ্ঞানী ভক্ত
মুমিন-সবাই একমত হবেন, প্যান্ডেমিক, আক্কা ভাইরাস খুব বাজে জিনিস ভাই। দেশ, এডমিনিস্ট্রেশন,
চিকিৎসা বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সবাইকেই বেশ ফাটা প্যান্ট পরিয়ে ল্যাম্পপোষ্টে
টাঙিয়ে দিয়েছে।
এবার আমি যদি বলি, কোভিড-১৯ কোন সিরিয়াস বিপর্যয় না? করোনা প্যান্ডেমিক
১-১০ স্কেলে খুব বেশী হলে ১ বা ২/১০ পাবে।
২০২০ সালে
ভারতে কোভিড-১৯ এ কতজন মারা গেছেন? দেড় লাখ। আসল সংখ্যা ৩-৪ লাখ হবে। গত বছরে ভারতে
বায়ু দূষনের কারনে কত লোকের মৃত্যু? ১৪ লাখ।
আমি জানি অধিকাংশ লোক জানেই না।
হিমালয়ে আলরেডী কাঁপুনি ধরেছে। পৃথিবীর সব জিওলজিস্টরাই
বলছেন হিমায়য়ে খুব শীঘ্রই বিশাল ভূমিকম্প হতে চলেছে-যা রিক্টর স্কেলে ৮-৯ এর মধ্যে
হবে। প্রতি ৬০০ বছরে এমন কম্পন একবার হয়। প্লেট টেকটোনিকের এডজাস্টমেন্ট। কোথায় হবে বলা যাচ্ছে না। দিল্লীর কাছাকাছি হলে ২৫-৫০
লাখ লোকের মৃত্যু নিশ্চিত।
এখানেই শেষ
না। প্রতি সাড়ে চার লাখ বছরে পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড ঘুরে যায়। উত্তরমেরু দক্ষিনমেরুর
( ম্যাগনেটীক পোল) দিকে ঘুরে যায়। এই ঘুরতে প্রায় ২০-২১ হাজার বছর লাগে। এবং এই সময়টাতে
পৃথিবীর ম্যাগনেটীক ফিল্ড খুব দুর্বল থাকে-লোয়েস্ট পয়েন্টে ৯৫% হ্রাস পায়। শেষ এই রিভার্সাল হয়েছে সাড়ে ছলাখ
বছর আগে। অর্থাৎ ফিল্ড রিভারসাল টাইম আগত। এবং বিজ্ঞানীরা আচ করছেন তা হয়ত শুরু হয়ে
গেছে- ম্যাগনেটিক নর্থ পোল দ্রুত ঘোরা শুরু
করেছে। দক্ষিন আটলান্টিকে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আরো দুর্বল হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন-এসবই
ঘোরা শুরু হওয়ার পূর্বাভাস।
ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বক ক্ষেত্র ৯৫% শক্তি হারালে
কি হবে? সৌর ঝড় থামানো যাবে না। সূর্য্যের
( সোলার ফ্লেয়ার ) থেকে ধেয়ে আসা প্রচন্ড শক্তিশালী প্লাজমা এখন পৃথিবীকে
আঘাত করে না। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যায়। কিন্ত ওই ম্যাগনেটিক
ফিল্ড দুর্বল হলে, তারা আছড়ে পরবে পৃথিবীর বুকে।
পৃথিবীর ওপর থাকা যাবতীয় সেল টাওয়ার, ইলেক্টিক লাইন সব বিকল হবে। বিদ্যুৎহীন।
ইন্টারনেট ফোন বিহীন পৃথিবী আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
এরপর আছে সুপার
ভলকানো। ইয়োলোস্টোনের সুপার ভলকানো ইরাপশনের সময় ও ওভারডিউ। যেদিন হবে -একদিনের মধ্যে
গোটা আমেরিকা ৫০ ফুট ছায়ের তলায়। আমেরকা নামে দেশটাই থাকবে না।
ভূগর্ভে জলের অভাব বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর অতিরিক্ত
জলে কোলকাতা নিউয়ার্কের ডুবে যাওয়া-এগুলোকে ছেড়েই দিলাম- ওমনদিন আসা শুরু হলে পালানোর
জন্য অনেকদিন পাবেন। সুতরাং প্রানে মরবেন না।
এসব কিছুর একটিই সমাধান। যা মুছে দেবে সব রাজনৈতিক দ্বন্দও। গনতন্ত্র -না
স্বৈরতন্ত্র-কমিউনিজম না ক্যাপিটালিজম। আসলে আমাদের অস্তিত্বের বিপন্নতা বা নানান রাজনৈতিক
জাতিগত ধর্মগত বিভেদের কারন আমাদের দেহ। আমাদের দেহ টেকানো খুব কঠিন কাজ- ২৪/৭ বিশুদ্ধ
অক্সিজেন লাগে। মডারেট তাপমাত্রা লাগে। প্রতিদিন ২০০০-৩০০০ ক্যালোরি বিশুদ্ধ খাবার
লাগে। দেহের কন্টিনিয়েশন নিশ্চিত করতে রিপ্রোডাকশন, নতুন দেহের জন্ম লাগে। এই ৬০০ কোটি
দেহের থাকা খাওয়া বাঁচা নিশ্চিত করতে পৃথিবীতে
এত রাজনীতি। পরিবেশ ধ্বংসের মুখে।
আমাদের দেহ
টিকিয়ে রাখা-বায়োস্ফিয়ারের কি আর খুব দরকার আছে?? ভেবে দেখুন। রোবোটিক্স যেভাবে এগোচ্ছে- কোয়ান্টাম কম্পুটেশন
এগোচ্ছে- আর কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের ব্রেনের পুরো “ইমেজ” মান সফটোয়ারটাই যন্ত্রের
মধ্যে চালানো সম্ভব হবে।
ভাবুন মাত্র এক সেন্টিমিটারের চেয়েও অনেক ছোট চিপের
মধ্যে আপনার ব্রেইন, আপনার চেতনা সব ঢূকে যাবে। ক্লাউডে তার অনেকগুলো ব্যাকাপ ও থাকবে।
ওই চিপ নষ্ট হলেও কিস্যু যায় আসে না। ক্লাউড
থেকে টুক করে আরেকটা কপি অন্যচিপে ইন্সটল করে দেবে অন্য কোথাও। ভূমিকম্প , সোলার ফ্লেয়ার, ফ্লাডে তা নষ্ট হলেও আরেকটা
কপি যখন খুশী পাওয়া যাবে। আর ভাইরাস, জলের ক্রাইসিস, পল্যুউশন এগুলো ইস্যুই হবে না।
আমাদের এই চিন্তা
চেতনাকে বয়ে বেড়ানোর জন্য এই দৈনিক ২৪০০ ক্যালোরি খাওয়া মেশিনটা- যাকে আমরা দেহ বলি-যা
বেশ হেবি-এনার্জি ওয়েস্ট এবং যেকোন সময় দুর্ঘটনা, ভাইরাস সহ অনেক কিছুতেই টসকে যেতে
পারে। তার কি দরকার আছে? তার থেকে “সিন্থেটিক” জীবনই ভাল যেখানে খুব ছোট্ট চিপ সব চিন্তা
চেতনা বয়ে বেড়াবে। যারা ২০১৪ সালে রিলিজ হওয়া জনি ডিপের সাই ফাই ট্রান্সসেন্ডান্স সিনেমাটা
দেখেছেন, তারা বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি।
আমাদের আগামী
প্রজন্মের -ইন্টালিজেন্ট বিবর্তনের জন্য, এই দেহের কি আর দরকার নেই! এ আই, দেহের মৃত্যুঘন্টা অনেক আগেই বাজিয়ে দিয়েছে!
অহ কি আনন্দ- ধর্ম রাজনীতি দূষন রোগ বিপর্যয়- কোন কিছুই আর বইতে হবে না। বড্ড ভারী
ভারী লাগে আজকাল। এ মানবজীবন না হাওড়ার মুটে?
এত রোগ, এত ধর্ম , এত রাজনীতি, এত দূষন, এত ইনজাস্টিস আর পিঠে সইছে না। তার
থেকে একটা ছোট্ট চিপের মধ্যে ঢুকে কবিতা লিখতে পারলে, ছবি আঁকতে পারলে, চির আনন্দ।
চির অমৃত জীবন। চির নির্বান।