Sunday, November 1, 2020

ইসলাম বনাম ওয়েস্ট-আপনি কোন পক্ষে?

(1) 

ইসলাম বনাম ফ্রান্সের যুদ্ধ বর্তমান সময়ের কালচারাল কুরুক্ষেত্র। এই ধর্মযুদ্ধে নিরেপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই। নিরেপেক্ষ থাকা মানে, আপনি সমস্যাটা বোঝেন নি।


খুব সংক্ষেপে বোঝালে- ধর্ম পালনের অধিকার যে মৌলিক অধিকার সেটা বিশ্বের সব সভ্য সংবিধানেই স্বীকৃত।

কিন্ত ধর্মপালন না করার অধিকার ও সব সভ্য সংবিধানে স্বীকৃত। ভারতে ও স্বীকৃত। কিন্ত অধিকাংশ মুসলমান দেশগুলির সংবিধানে অস্বীকৃত। এর মধ্যে চারটি মুসলমানদেশে ইসলাম ছাড়া ( এবং ইসলামের শুধু স্বীকৃত শাখা ) অন্য সব ধর্ম পালন নিশিদ্ধ। এইসব দেশগুলি এখনো মধ্যযুগীয় বর্বর চিন্তাধারা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে নি।

সুতরাং এইসব মুসলিম দেশথেকে পাশ্চাত্যে আগত মুসলমান অভিবাসীরা তাদের নবীকে নিয়ে কার্টুন ঠাট্টা হচ্ছে এসব দেখতে অভ্যস্থ না। তারা জানে তাদের ধর্ম নিয়ে হাসিঠাট্টা মস্করার শাস্তি মৃত্যু। তারা জানে ধর্মের জন্য অন্যের গর্দান নিলে তারা তাদের কমিউনিটিতে তারা সন্ত্রাসবাদি না মহানায়ক হিরো। শহীদ।

মধ্যযুগে ধর্মররক্ষার্তে বিধর্মীকে গলাকাটার ব্যাপারে ইসলাম, খ্রীষ্টভক্ত, ভাইকিং প্যাগান, হিন্দুধর্মের কিছুকিছু সেক্ট-সবাই প্রায় সিদ্ধহস্থ ছিল। তারা বদলেছে। তারা সবাই বদলেছে। কিছু ঐতিহাসিক কারনে মুসলমানরা সভ্যতার আলো থেকে পিছিয়ে গেছে-

(২)

মূলত তিনটি ঐতিহাসিক কারন -কেন ইসলামে প্রগতিশীল আলো ঢোকা বন্ধ হয়ে গেল। শুরুতে এমন ছিল না।

(১) আবসিড খালিফা আবদুস কাদের প্রথম ইসলামে মুক্ত চিন্তা বন্ধ করার জন্য আইন পাশ করেন। সেটা কিন্ত দশম শতাব্দিতে। প্রফেটের মৃত্যুর প্রায় তিনশো বছর বাদে । ইসলামের প্রথম তিনশো বছরে ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ হাসি ঠাট্টা সবই চলত এবং প্রথম দিকের খিলাফতে ধর্ম নিয়ে ব্যাঙ্গ নিশিদ্ধ ছিল না। ফলে এই সময় প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যাবে ইসলামের সমালোচনার।

যেমন আরবের আবু ইসা আল ঔয়ারক। যিনি আল্লার অস্তিত্বকে কাল্পনিক, এবং প্রফেট মহম্মদকে সাধারন জ্ঞানী মানুষ হিসাবে ধরতেন। তার গলা কেউ কাটেনি। তার ওপর কোন অত্যাচার ও হয় নি।

পার্সিয়ান দার্শনিক ইবন-আল-হাসান ইসলামের যাবতীয় রীতিনীতি ( নামাজ, জাকাত, হজ ইত্যাদি) সব কিছুই হাস্যকর বলে লিখে গেছিলেন। তার মতে প্রফেট মহম্মদের জীবনীই প্রমান করে, জাঁকজমক করে ধম্মোচর্চা অর্থহীন। কারন প্রফেট ইসলামের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্যাগান জাকজমকপূর্ন আচরন থেকে ধর্মকে রক্ষা করতে।

আমি আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার উল্লেখ করতে পারি। আসলে ইসলামের উৎপত্তির আদিতে ছিল মক্কার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। যারা ব্যবসার কারনে রোমান, গ্রীস, সিরিয়া, ভারতের দর্শনের সাথে পরিচিত ছিল। পরিচিত ছিল নানান রাষ্টবিজ্ঞানের সাথে। ফলে কোরানে যা লিপিবদ্ধ আছে, তা মূলত সেই সময়ের নানান দেশ এবং দর্শন থেকে সংগ্রহ এবং সংশ্লেষন করে একটি একেশ্বরবাদি প্রগতিশীল ( তখনকার সময়ের তুলনায় ) ধর্ম আন্দোলন। প্রায় কয়েক শতাব্দি ধরে এই সংশ্লেষন পক্রিয়াটি চলেছে। সেই সময় প্রফেট মহম্মদ এবং তার বাণী আনচ্যালেঞ্জড মিথ হয়ে যায় নি। বরং অনেক বিরোধী ধারনারই সংশ্লেষন হয়েছে, এবং তাতে ইসলাম সমৃদ্ধ হয়েছে। যেটা হিন্দু ধর্মে সব সময় হয়। যা ধর্মটাকে যুগোপযোগী করে রাখে। ইসলাম অপরিবর্তনীয় শিলাপাথর, এই ব্যপারটা প্রথম তিন শতাব্দিতে ছিল না। ইসলামের প্রথম তিনশো বছর, যখন তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ, তখন ইসলামে সংশ্লেষন হয়েছে। সে নদী ছিল প্রবাহমান । বদ্ধ জলাশয় হয়ে ওঠে নি।

কিন্ত তাহলে প্রফেট মহম্মদের মিথ মিশ্রিত জীবন এবং বানীকে অভ্রান্ত এবং তা না মানলে কল্লা কাটা শুরু করল কারা এবং কেন? এটা শুরু হয়েছে খালিফা আবদুস কাদেরের সময় থেকে। এবং কারন রাজনৈতিক। মূলত খালিফার গদি বাচানো। এর কারন শিয়াদের মধ্যে ইসমাইলদের উতপত্তি এবং জনপ্রিয়তা খিলাফতের একছত্র ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দি হয়ে উঠছিল। ইসমাইলিরা আড়ম্বরহীন নিরাকার আল্লার সাধনায় বিশ্বাসী-যা মসজিদ, খিলাফত ইত্যাদি বাহ্যিক আড়ম্বর থেকে ইসলামকে উদ্ধার করার আন্দোলন। ইসমাইলিরা যে বিশুদ্ধ মুসলমান না-সেটা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিপন্ন করার দরকার হয়ে ওঠে খালিফা আবদুল কাদেরের। এছাড়াও পূর্বদিকে মহম্মদ ঘোরি তখন পশ্চিম ভারত দখল করার অভিযানে নেমেছেন। এরা ছিল তুর্কী উপজাতি এবং ইসলামের প্রতি এদের লয়াল্টি ছিল দুর্বল। এরাও খালিফাকে মানছিল না। ফলে ইসলামের মধ্যে থেকে উঠে আসা নানান সেক্টের ধর্মীয় মতবাদকে প্রশয় দিলে খালিফার কেন্দ্রীয় শক্তি দূর্বল হত।

ভারতে নানান হিন্দু সেক্ট উঠে এসেছে কেন? কারন কোন রাজবংশই ধর্মের কারনে সাম্রাজ্য স্থাপন করে নি। খালিফার শাসন কিন্ত তা না । তাদের অস্তিত্বই ইসলামের কারনে। ফলে ইসলামের নানান সেক্ট, উপসেক্ট তৈরী হলে খালিফার ভিত্তিই দূর্বল হত। এইজন্য আব্দুল কাদের আইন করে ইসলামকে বিশুদ্ধ রাখার দিকে মন দিলেন। পুরো কারন রাজনৈতিক। ফলে একাদশ শতাব্দিতেই ইসলামের বিকাশ বন্ধ হয়ে, তা এক বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়। সুতরাং সেখানে মশার চাষত হবেই!!

(২) ইসলামকে বদ্ধ জলাশয় বানানোর ফলে গোটা বিশ্বজুরেই মুসলমানদের মিলিটারি শক্তি হ্রাস পায়। কারন তাদের ইনোভেশন বা আবিস্কার করার ক্ষমতা কমে যায়। মুক্তচিন্তা ছাড়া জ্ঞান বিজ্ঞান সম্ভব না, আর তা না হলে মিলিটারি দুর্বল হবে। ফলে সপ্তদশ শতকে যখন ইউরোপ জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র হয়ে উঠল, তখন ইসলামের বিজ্ঞান সূর্য্য অস্ত গেছে। এর পরের শতাব্দিতে ইউরোপিয়ান কলোনিয়াল শক্তিগুলি ( ডাচ, ফ্রান্স, বৃটিশ ) আস্তে আস্তে সমস্ত ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিকে পরাস্ত করে, তারা ইসলামিক বিশ্বের নতুন মাস্টার হলেন। প্রফেট বা ইসলামকে অপমান করলে শাস্তি হবে-এই ব্লেসফেমী আইন বৃটিশদের তৈরী। কেন বৃটিশরা মুসলমানদের সেকুলার বা প্রগতিশীল বানানোর চেষ্টা করে নি? বৃটিশরা বরাবর চেয়েছে হিন্দু মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় অন্ধকারে থাকুক। কারন সেক্ষেত্রে তাদের প্রভুত্ব টিকিয়ে রাখার সুবিধা। শিক্ষিত মানুষেরা বিদ্রোহ করে। অন্ধত্ব দাসত্ব টিকিয়ে রাখার সহায়। এটাই ছিল বৃটিশ স্ট্রাটেজী। এটা তারা ভারতের হিন্দুদের মধ্যেও চালু রাখার চেষ্টা করে। কিন্ত হিন্দুদের মধ্যে একটা বিদ্যাসাগর, একপিস রামমোহন থাকায়, এবং গর্ভনর জেনারেলদের অনেকেই লিব্যারাল ট্রাডিশনে মানুষ হওয়ায়, বৃটিশরা লিব্যারাল হিন্দুদের পক্ষ নেয়। লর্ড বেন্টিঙ্ক প্রিভি কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গিয়েই হিন্দু ধর্মের সংস্কারকদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। ফলে বৃটিশ শাসনে মুসলমানরা আরো অন্ধত্বে ডুবে যায়।

(৩) স্বাধীনতা দেওয়ার পর, বৃটিশরা তাদের অনুগত রাজবংশ বা পলিটিক্যাল ক্লাসদের মুসলমান বিশ্বে বসিয়ে যায়। এইসব মুসলিম দেশগুলিতে কোন স্বাধীনতা আন্দোলন হয় নি। জাতীয়তাবাদি আন্দোলন ছিল। এখন এইসব দেশগুলিতে তেলের সন্ধান থাকায় এবং কোল্ড ওয়ারে সোভিয়েত ইউনিয়ানের বিরুদ্ধে জোট বাঁধার জন্য, আমেরিকা গোটা মুসলিম বিশ্বের ধর্মান্ধতাকে প্রশয় দিয়েছে। সেই ইতিহাস বিরাট দীর্ঘ। ৯/১১ নিজেদের পোষা বিষধর সাপের ছোবল। বেসিক্যালি ফর্মুলা সেই এক। ধর্মান্ধ লোকেদের "কন্ট্রোল" করা সুবিধা। ফলে মুসলমানদের অন্ধকারে রাখ। আমি দুটি উদাহরন দেব। এক আফগানিস্থান। দুই ইরান। এই ইতিহাস অনেকেই জানে না। আফগানিস্তানে ১৯৭৮ সালে পিডিপিএ ক্ষমতায় আসে। তারা ভূমি সংস্কার করে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে। সমস্ত চাকরি মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত হয়। সমস্ত রাজনৈতিক পজিশন থেকে মোল্লাদের সড়ানো হয়। কিন্ত তারা সোভিয়েত ইউনিয়ানের অনুসারী কমিনিউস্ট পার্টি ছিল। ফলে আমেরিকা বিরাট টাকার থলি নিয়ে, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে এদের বিরুদ্ধে মুজাহিদের ক্ষেপিয়ে তোলে। আফফানিস্থানে আবার ধর্মান্ধতা জাঁকিয়ে বসে।

দ্বিতীয়কেস ইরানে। শাহের ইরান শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছিল, অনুমান করা হচ্ছিল, তারা একবিংশ শতাব্দিতে ফ্রান্স এবং বৃটেনকে জিডিপি এবং সব সূচকেই হারিয়ে দেবে। ১৯৭৮সালে ইরানের মোল্লা বিপ্লবের সময় শাহকে বাঁচাতে আমেরিকা এগিয়ে এল না কেন? আমেরিকা সেনা পাঠালেই, বাকিটা শাহের পুলিশ বুঝে নিত । কিন্ত আমেরিকাই বলে দিল, শাহ তুমি গদি ছাড়? কেন অন্ধ মোল্লাদের হাতে ইরানকে ঢেলে দিয়েছিল আমেরিকা? যেখানে ইরান ছিল আমেরিকার সব থেকে বড় বন্ধু? এটা বুঝতে পরের দৃশ্যটি দেখুন। মোল্লা আসার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল ইরান ইরাক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সব থেকে বেশী অস্ত্র বেচেছে আমেরিকা। শাহের আমলে যুদ্ধ হওয়ার চান্স ছিল না। সাদ্দাম জানত শাহ আমেরিকা সমর্থিত। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে এক ইস্রায়েল ছাড়া অন্য অশান্তি ছিল না। ইচ্ছা করে আমেরিকা শাহের পতনের অনুমোদন দেয় যাতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ লাগে, এবং অস্ত্র বেচা শুরু হয়।

(৩)
কেউ মুসলমান হয়ে জন্মায় না। সবাই মানুষ হয়ে জন্মায়। পরিবেশ, সমাজ রাষ্ট্র তাকে ব্রেইন ওয়াশ করে ধর্মান্ধ মুসলমান বানায়। এটা একটা প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র চাইলেই এটাকে রিভার্স করতে পারে। কামাল আতার্তুক দেখিয়েছিলেন। আবার ভারতের কংগ্রেস -সিপিএম দেখিয়েছে কিভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থে ভারতের মুসলমানদের ধর্মান্ধ করে রাখা যায়। পাকিস্তানের জিয়া উল হক, তার নিজের স্বার্থে পাকিস্তানের পাঠ্যপুস্তকে উগ্র ইসলাম নিয়ে আসেন। যাতে পাকিস্তানিরা ধর্মান্ধ হয়। বাংলাদেশে এটা শুরু হয়েছিল এরশাদের সময় থেকে। রাষ্ট্রীয় মদতেই গোটা বাংলাদেশজুরে এক বিরাট ধর্মান্ধ মুসলমান জনগোষ্ঠি তৈরী হল। কেন হল ? কারন জন্ম থেকেই বাংলাদেশ প্রায় ডিক্টেটরশিপের কবলে। কন্ট্রোল করছে দুটি ফ্যামিলি। লোকজন শিক্ষিত সেকুলার হলে, এদের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। তার থেকে দেশের লোকজনকে ধর্মান্ধ করে রাখলে বাংলাদেশের রুলিং ক্লাসের শোষন এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা অনেক সহজ। এরা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মাঠে নামবে। রাস্তায় নামবে । কিন্ত রুলিং ক্লাস দু চারটে খুন ধর্ষন চুরি ডাকাতি করলে চুপ করে থাকবে।

এমন সোনার হাঁসকে কেউ কাটে? ফলে পাঠ্যপুস্তক, নিউজপেপার, রেডিও টিভি-বাংলাদেশের সর্বত্রই এখন ধর্মান্ধতার চর্চা। আসল কারন, এতে ক্ষমতাসীনদের হাতে আরো ক্ষমতা আসছে। অবারিত লুঠ তরাজের।

ভারতকে বাদ দিচ্ছি না। ভারতে হিন্দু ধর্মকে কেন্দ্রকরে একই জিনিস হচ্ছে। যে হিন্দু ধর্মের কোন লিখিত আইন নেই, লিখিত পথ নেই, নতুন ধারনা, নতুন দর্শনকে সংগ্রহ করে সে চিরকাল এগিয়ে গেছে-সেই হিন্দু ধর্মকে এখন ইসলাম বা খ্রীষ্টানদের মতন আরেকটা ধর্ম বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে অন্ধত্ব ছাড়া আর কিছুই পাবার নেই এই একবিংশ শতাব্দিতে।

(৪)

একজন ধর্মান্ধ মুসলমান কেন কার্টুনিস্ট লেখকদের গলা কাটতে যায়? কেন বোম ফাটায়? কেন আত্মঘাতি জঙ্গী হয়?

ছিয়াত্তরজন হুরের গল্প নেহাত গল্প। মূল সমস্যা বুঝতে মানব দর্শনের আরো গভীরে যেতে হবে।

ভেবে দেখুন। আমাদের জীবন কি কঠিন। প্রতি পদে সংগ্রাম বাচার জন্য। জীবনের কোন উদ্দেশ্য না থাকলে এত কঠিন পৃথিবীতে অনেকের বাঁচার ইচ্ছাই থাকবে না। অধিকাংশ মানুষ নিজের ছেলে মেয়েদের মানুষ করার জন্য বাঁচে। সে একটা ভাল জীবনের জন্য বাঁচে।

এবার ধরুন ছোটবেলা থেকে আপনাকে শেখানো হচ্ছে তুমি একজন বঞ্চিত কারন তোমার শত্রুরা তোমার এই অবস্থার জন্য দায়ী। ইসলামের শত্রুরা দায়ী। সহী ইসলাম কায়েম হলে তুমি স্বর্গরাজ্য পাবে। জাস্টিস পাবে। এইভাবে আস্তে আস্তে সে ইসলামের মধ্যে জীবনের বেঁচে থাকার রসদ পাচ্ছে। কারন ইসলাম তাকে জাস্টিস, মিনিংফুল লাইফ- বেঁচে থাকার রসদ জোগাচ্ছে। সে ইসলাম ছাড়া নিজের কোন অস্তিত্বই ভাবতে পারে না। এটাই তার এমপাওয়ারমেন্ট।

ওপরের এই পুরো ব্যাপারটা- রাষ্ট্রের ইন্ধনে হয়। রাষ্ট্র যদি চাইত, এইসব মুসলমান ছেলেমেয়েরা সেকুলার স্কুলে যাক, সেকুলার সিলেবাসে বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য ক্রিটিক্যালি শেখানো হোক, তাহলে এরা আরো উন্নততর জীবনে অর্থ খুঁজে পেত।

ভারতীয় ট্রাডিশনে কোন ধর্ম জীবনের পরম অর্থ বলে দেয় না। একজন মানুষকে তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজের পথ নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। প্রাচীন ভারতে এটাই ছিল রীতি। কিন্ত আব্রাহামিক ধর্মগুলো ক্যানোনিক্যাল। অর্থাৎ সেখানে জীবনে উদ্দেশ্য বিধেয় সব কিছুই ক্যানন অর্থাৎ আইন করে লিখে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ইসলাম এবং খ্রীষ্টান ধর্মের ইতিহাস মানুষের মুক্তিবুদ্ধির চর্চাকে রুদ্ধ করার ইতিহাস। রাষ্ট্র এবং সমাজের সব আইনই যদি কোরানে থাকে, তাহলে গণতন্ত্রের দরকার কি? কেন মানুষ আইন বানাবে? এই কথা আমার না। এটি বলেছিলেন ইরানের ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খেমেইনি।


(৫)
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য একজন কার্টুনিস্ট, এক শিক্ষকের গলা কেটে ফেলা যায়? বাংলাদেশ তুর্কী, পাকিস্তানের সব পত্রপত্রিকাতে, অধিকাংশ মুসলমান ধর্মীদের ফেসবুকীয় লেখাতে ইনিয়ে বিনিয়ে এর সমর্থন চলছে। কেন? কারন ইসলামিক ভাবাবেগকে আরো গাড় করে লোকজনকে ধর্মান্ধ বানিয়ে রাখার চেষ্টা। এতে শেখ হাসিনা, ইমরান খান এদের গুষ্টিদের লুঠেপুটে খাওয়ার সুবিধা আরো বেশী। ধর্মান্ধ হয়ে কেউ জন্মায় না। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ধর্মান্ধত্বতার চাষ করা হয়।

ভেবে দেখুন। চেচেন একসময় সোভিয়েত কমিনিউস্ট ব্লকে ছিল। সেখান থেকে ইসলামিক জঙ্গী তৈরী হচ্ছে কেন? বস্টনের ম্যারাথন বম্বার চেচেন অভিবাসী। স্যামুয়েল প্যাটির খুনীও তাই। দুটো ক্ষেত্রেই একটা মিল আছে। উভয় ক্ষেত্রেই ছেলেকে মুসলমান সন্ত্রাসবাদি হিসাবে গড়ে তোলার পেছনে তাদের বাবা-মায়ের ভূমিকা ছিল।

কেন এইসব ক্ষেত্রে একজন মুসলমান অভিবাসি ফ্যামিলি তাদের ছেলেমেয়েদের ইসলামিক সন্ত্রাসবাদে উস্কে দিচ্ছে? চেচেনের ইতিহাস দেখলে তা পরিস্কার হবে। রুশ চেচেন যুদ্ধে- চেচেনিয়াকে সাহায্য করেছে একমাত্র মুসলমান মুজাহিদরা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চেচেনে জেহাদি তৈরী করতে হয়েছে। পুরোটাই ম্যানুফাকচারড। এর পেছনে আর কাদের মদত ছিল সেই প্রশ্নে গেলাম না। মোদ্দা কথা একটা জাতিগোষ্টিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ধর্মান্ধ জেহাদি হিসাবে আমি ট্রেনিং দিচ্ছি-তারপরে ভাল মানুষের মতন প্রশ্ন করছি- এত জেহাদি কেন? এটা সম্পূর্ন বেয়াকুফি।

এবার আসা যাক ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের ভূমিকা নিয়ে। তিনি রাষ্ট্রীয় মদতে ফ্রান্সের সর্বত্র মহম্মদের কার্টুন বিলি করছেন। এথিক্যাল প্রশ্ন। এটি সমর্থনযোগ্য না সমর্থনযোগ্য না?

এর উত্তর আমি আগেই দিয়েছি। কান্টিয়ান ক্যাটেগরিগ্যাল ইম্পারেটিভ কাজে লাগালেই উত্তর পাবেন। যদি মহম্মদের কার্টূনের প্রচার সমর্থনযোগ্য না হয়, তাহলে ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরান ও বন্ধ করে দিতে হয় সেই যুক্তিতে। কারন কোরানে প্যাগানদের আচার আচরনের বিরুদ্ধে, বিধর্মীদের বিরুদ্ধে প্রচুর কটুক্তি আছে। তোমার ধর্মীয় অনুভূতির দাম আছে, আর আমার ধর্মীয় অনুভূতি খেলো-এই মামার বাড়ির আবদার ত অমুসলমান দেশে চলবে না। ওই পজিশন নিলে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে।

সুতরাং পজিশন দুটো। এক সব ধরনের অনুভূতিকে প্রোটেক্ট করার জন্য আইন হোক। যা এবসার্ড। কারন সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধিদের জেলে ভরা খুব সহজ।

দুই মত প্রকাশের স্বাধীনতা "এবস্যোলিউট"। সেখানে কোন কম্প্রোমাইজ না। তা পাশ্চাত্যে এদ্দিন হয়ে এসেছে। এবং এছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উপায় নেই।

অর্থাৎ এবার আপনিই ঠিক করুন, আপনি কোন দিকে।












No comments: