Saturday, April 3, 2021

বামপন্থী আমলের ট্যালেন্ট এক্সোডাস- কিভাবে বাম আমলে ধ্বংস হয়েছে কোলকাতার তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যত ?

 

বামপন্থী আমলের ট্যালেন্ট এক্সোডাস- কিভাবে বাম আমলে ধ্বংস হয়েছে কোলকাতার তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের  ভবিষ্যত ?



- বিপ্লব পাল, //২১



কোলকাতার বাম রাজত্বের ৩৪ বছরের সব থেকে বড় ক্ষতি, বাংলার সব "ইঞ্জিনিয়ারিং ট্যালেন্ট" ব্যাঙ্গালোর, পুনে ইত্যাদি প্রযুক্তির নয়া শহরে, নইলে বিদেশে চলে গেছে। বিশ্বযায়নের যুগে , গ্লোবালাইজেশনের নতুন সুযোগ নিতে, বাঙালীর এই বিদেশে বা অন্যরাজ্যে চলে যাওয়াটা খারাপ না। ভাল। কারন বিদেশে বা অন্যরাজ্যে গিয়ে তারা নতুন কর্মসংস্কৃতি, নতুন স্কিল শিখছে। টাকা উপার্জন করছে। কিন্ত খারাপের দিকটা?  কোন ট্যালেন্ট ফিরতে পারছে না। কারন কোলকাতায় উন্নত প্রযুক্তির কোম্পানী প্রায় নেই। ফলে টেকনোলজির  ইকোসিস্টেম তৈরী নেই। আর ইকোসিস্টেম না আসলে দক্ষ কর্মী বা নতুন প্রযুক্তির কর্মসংস্থান কোনটাই সম্ভব না।





সিলিকন ভ্যালি বা ব্যাঙ্গালোরের ইকোসিস্টেম কিভাবে তৈরী হল, সেটা জানলেই পরিস্কার হবে, কোলকাতায় কি হতে পারত -আর কি হয় নি। কেন হয় নি। বা কেন হচ্ছে না।



তার আগে "দক্ষ শ্রমিক" বা "ট্যালেন্ট" এই শব্দগুলির সেম্যান্টিক পরিস্কার হওয়া দরকার।

ট্যালেন্ট মানে পরীক্ষায় ভাল মার্কস, আই আই টি, আই এস আই এর ছাত্র-এসব ইন্ড্রাস্ট্রি মনে করে না। ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজ, কাজের গুনমান, উদ্ভাবনী ক্ষমতা- মোদ্দা কথা যারা ভাল কাজ শিখেছে, ইন্ডাস্ট্রিতে তারাই ট্যালেন্ট।  তারা প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আই আই টি, এন আই টি যেখান থেকে খুশি আসতে পারে।  প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি আই আই টিয়ান বা সরকারি কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের স্মবারি আছে। কিন্ত আমার অভিজ্ঞতায় যেটা দেখেছি, প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রীই কোডিং এবং প্রোগ্রামিং এ আই আই টিয়ান থেকেও অনেক এগিয়ে গেছে। এবং এদের মধ্যে যারা খুব  ভাল, তারা তাদের  কেরিয়ারের  ৫-১০ বছরের মধ্যেই ৯০% আই আই টিয়ানদের থেকে স্যালারি এবং পজিশনেও এগিয়ে যায়। সুতরাং ট্যালেন্টের প্রশ্নে- স্কুল জীবনে কে কটা সার্টিফিকেট আর জয়েন্টে  কি র‍্যাঙ্ক করেছে বা  কোন কলেজে পড়াশোনা করেছে, তা ইম্যাটেরিয়াল-অপ্রয়োজনীয়। নতুন আই টি শিল্পে যেটা দরকার হয়-- একজন ছেলে বা মেয়ে কাজে ঢুকে কতটা নতুন প্রযুক্তি, কতটা নতুন স্কিল শেখার স্কোপ পাচ্ছে-এবং সে সেই সুযোগের সম্পূর্ন সদ্বাব্যবহার নিতে পারছে কি না। ইন্ডাস্ট্রিতে ট্যালেন্ট এই ভাবেই তৈরী হয়। তার জন্যে দরকার হয় সেই সব কোম্পানীতে কাজ করা, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করার ভরপুর সুযোগ আছে। দরকার হয়, সেই কোম্পানীতে কাজ করা সিনিয়ার ট্যালেন্টদের মেন্টরশিপ, যারা কাজ শেখাবে বা কাজ শিখতে সাহায্য করবে।  সেই জন্যে কেরিয়ারের শুরুতেই যারা টি সি এস, ইনফোসিস বা আই বি এম ইত্যাদি বড় কোম্পানীর আই টির কাজে ঢোকে, তাদের অধিকাংশের ক্যারিয়ার গ্রোথ খুব স্লো।  কারন এইসব আউটসোর্সিং কোম্পানীতে অধিকাংশ কাজ প্রমানিত এবং পুরাতন প্রযুক্তির ওপর। এবং তাও অধিকাংশ সময় মেইন্টেটানান্স এবং টেস্টিং এ।  এইসব কাজ ও স্কিলের কাজ-কিন্ত লো আই টি স্কিল।

ঠিক  এই  জন্যেই যে কোন শহরের ট্যালেন্ট গ্রুমিং এর জন্য, সেই শহরের আধুনিক প্রোডাক্ট এবং স্টার্টাপ কোম্পানীগুলি গুরুত্বপূর্ন। কারন এরা সব সময় নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ওপর জোর দেয়। এইসব জায়গায় প্রচুর শেখার স্কোপ থাকে। ফলে অধিকাংশ ডিমান্ডিং স্কিলের লোকজন এই সব কোম্পানী থেকেই তৈরী হয়।

 

 এবার উদাহরনে আসি। কি ভাবে তৈরী হল আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি বা ভারতের ব্যাঙ্গালোর।  ১৯৫০ সালে সান ফ্রান্সিসকো, সান হোসে শহরগুলিতে ( যাকে বর্তমানের সিলিকন ভ্যালি বলে)  কোন প্রযুক্তি কোম্পানীই ছিল না। আমেরিকার সব প্রযুক্তি কোম্পানী ছিল বোস্টন, নিউয়ার্ক শহরে।  ১৯৫৬ সালে উইলিয়াম শকলে, প্রথম সিলিকন ট্রান্সিস্টর তৈরীর জন্য মাউন্টেন ভিউতে ( সিলিকন ভ্যালির আরেক শহরে ) খোলেন ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর,। ওই বছরই ট্রান্সজিস্টর আবিস্কারের জন্য ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন উইলিয়াম শকলে। কিন্ত মুশকিল হল,  তখন মাউন্টেন ভিউ ধবধবে গো্বিন্দপুর। তার সহযোগীদের কেউ ইস্টকোস্টের উন্নত টেক ইকোসিস্টেম ছেড়ে  ওয়েস্টকোষ্টের মাউন্টেনভিউতে  যেতে রাজী হল না। কিন্ত তিনি নোবেলজয়ী বিখ্যাত শকলে। তিনি তার আটজন তরুন গবেষক ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে এলেন মাউন্টেন ভিউর কোম্পানীতে। ইতিহাস বলে কালক্রমে এই আটজনই হবেন সিলিকন ভ্যালির ফাউন্ডিং ফাদার  ( যাদের বলাহয় ট্রেটারাস এইট)  । যারা ফেয়ার চাইল্ড সেমিকন্ডাক্টের কাজ শিখে আরো নতুন নতুন ইলেকট্রানিক্স কোম্পানী খুলবেন। তারপরে নিজেরা নতুন কোম্পানী খুলে প্রচুর ধনী হয়ে, নতুন ট্যালেন্টদের কোম্পানীতে ইনভেস্ট করে , গড়ে তুলবেন প্রযুক্তির স্বর্গরাজ্য সিলিকন ভ্যালি।

 

অর্থাৎ এই ইকোসিস্টেম তৈরীর খেলাটা এক চক্রে চলে।

 

প্রথম ধাপ >> উদ্ভাবনী নতুন প্রযুক্তির কোম্পানীতে কাজ শিখে তৈরী হয় “টেক  ট্যালেন্ট” যারা নতুন স্টার্টাপ খোলার সামর্থ রাখে

 দ্বিতীয় ধাপ >>> এই নতুন স্টার্টাপ খুলে, টেক ট্যালেন্টরা প্রচুর টাকার মালিক হয়।

 

 তৃতীয় ধাপ >> প্রচুর টাকার মালিক হওয়ার পর, তারা অন্য ট্যালেন্টদের স্টার্টাপে ইনভেস্ট করে।

 

 অর্থাৎ টেক   ইকোসিস্টেমের লাইফসাইকল গড়ে উঠতে তিনটে ধাপ লাগে।

 

 এবার খুব সংক্ষেপে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যায়—

 

কোলকাতায় আই বি এম বা টিসিএস আছে। তাহলে সেখান থেকে কেন  এই ট্যালেন্ট গ্রুমিং হচ্ছে না? উত্তর আগেই দিয়েছি। এইসব আউটসোর্সিং কোম্পানী কোলকাতায়  রিসার্চ ওরিয়েন্টেড নতুন প্রযুক্তির কাজ বিশেষ করে  না -পুরো স্কিলই তৈরী হচ্ছে মেইনটেনান্স বা ইমপ্লিমেন্টশনে। যা টপ টেক ট্যালেন্ট তৈরী করতে পারেনা।  সেইসব চাকরির মাইনেও বেশী না, স্কিল ও পুরাতন-ফলে টপ ট্যালেন্ট নেই। গুগুল, ফেসবুক আমাজন  সহ সিলিকন ভ্যালির ইন্ডিয়ান ইউনিটে যারা কাজ করছেন, সেখানে টপ ট্যালেন্ট গ্রুমিং পসিবল। কারন তারা মাইনে দেয় বিশাল। কাজ শেখার স্কোপ একদম টপ লেভেলে। ফলে সেখানেই সব টপ ট্যালেন্ট জড় হয়। একে বলে ট্যালেন্ট এট্রাক্ট মোর ট্যালেন্ট। আর এই সব কোম্পানীই বর্তমানে ব্যাঙ্গালোর, পুনে আর হাইদ্রাবাদে।

 

দ্বিতীয় প্রশ্ন -কেন টপ ট্যালেন্ট দরকার? কেন আমি প্রাইমারি স্কুলের চাকরি, হাইস্কুলের চাকরি নিয়ে ইস্যু তুলছি না? বা সাধারন আইটি জবের ব্যাপারে নিরুত্তর? 

 এই প্রশ্নের উত্তর এইভাবে  ভাবুন,

 ইকোসিস্টেম বানাতে টপ টেক লিডার দরকার। যা সিলিকন ভ্যালি তৈরীর উদাহরন থেকে দিলাম।  ৯৯% জাস্ট আসবে যাবে কাজ করবে। কিন্ত আমার দরকার ওই ১% যারা প্রযুক্তি তৈরীতে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে, যাদের জন্য নতুন আইডিয়াতে নতুন কোম্পানী তৈরী হবে- যাদের কোম্পানীতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা ইনভেস্ট করবে। পরে তারাই ইনভেস্টর হয়ে ইকোসিস্টেমকে সমৃদ্ধ করবে। যা এখন ব্যাঙ্গালোরে হয়েছে।

 

এইসব লিডার কেন গুরুত্বপূর্ন ? তাহলে ভাবুন চেঙ্গিস খানের আগে না মঙ্গোলদের কোন ইতিহাস ছিল, না চেঙ্গিস খান মারা যাওয়ার তিন প্রজন্মের পর কোন ইতিহাস রয়ে গেছে। অথচ চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মাত্র এক প্রজন্মেই পাহাড়ি আদিবাসি  মোঙ্গলরা হয়ে উঠেছিল গোটা পৃথিবীর প্রভু। যাদের কেউ চিনতই না!   অথবা আলেক্সান্ডার দি গ্রেট।  এথেন্সের জন্মেছে গ্রীসের সব মহান দার্শনিকরা। স্পার্টা গ্রীসের সব বীরের জন্মস্থান। ম্যাসেডোনিয়াকে গ্রীকরা বলত গন্ডগ্রাম। অথচ এখানে জন্মানো আলেক্সান্ডারের পিতা ফিলিপএর নেতৃত্বেই গ্রীস প্রথমবারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হল। গ্রীস গোটা বিশ্বকে জয় করল। গ্রীসের সভ্যতা ছড়িয়ে গেল গোটা বিশ্বে। সবটাই ম্যাসেডেনিয়ার জন্য যেখানে গ্রীসের কোন বিখ্যাত দার্শনিক জন্মায় নি। কিন্তু জন্মেছে লিডার। ফিলিপ এবং আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট।

ঠিক সেইভাবে আজ উইলিয়াম শকলি মাউন্টেন ভিউতে ফেয়ার চাইল্ড সেমিকন্ডার তৈরীর কোম্পানী না খুললে সিলিকন ভ্যালিই তৈরী হত না। সিলিকন ভ্যালি কোন সরকারি পলিসির দান না। এক বিখ্যাত  টেক লিডারের ( যিনি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জনক) একটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তের ফসল।

 

কিন্ত কোলকাতার এই দুর্দশার জন্য আমি বামেদের দুষছি কেন? কেন মমতা ব্যানার্জির দশ বছরে এই অবস্থার পরিবর্তন হল না? বিজেপি আসলে কি এই অবস্থার পরিবর্তন হবে?

যেহেতু এগুলো রাজনীতির প্রশ্ন, এড়িয়ে যেতে পারলেই ভাল হত। কিন্ত সাফ সাফ নিরেপেক্ষ উত্তর দেওয়া দরকার।

প্রথম কথা ব্যবসার জন্য পরিবেশ লাগে। কাজের পরিবেশ । ইনফ্রাস্টাকচার। বাকীটা ব্যবসা নিজের প্রফিটের স্বার্থেই  বুঝে নেয়।  সিপিএমের ৩৪ বছরে সব থেকে বড় সমস্যা—পার্টিটা মানুষ মার্কেটে ব্যবসা সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে গেছে-কালেক্টেভিজমে বিশ্বাস করে। সেই নিয়ন্ত্রনের প্রমান দিতে গিয়ে বন্ধ , মিটিং, মিছিল হয়ে উঠেছিল নিয়ম। ফলে অধিকাংশ ব্যবসা পুঁজি পশ্চিম বঙ্গে ছেড়েছে। ভারতের প্রথম কম্পিউটার ছিল আই এস আইতে। কোলকাতাতেই ভারতের প্রথম আই টি শিল্প গড়ে ওঠার কথা। কিন্ত হয় নি। কারন কেরানীদের চাকরি বাঁচাতে গিয়ে  জ্যোতি বসু এবং সিপিএম কম্পিউটার বসানোর বিরোধিতা করেছেন। ফলে ব্যাঙ্গালোর হয়ে উঠেছে আই টি হাব।  সিপিএমের এই ধারনা যে ভুল ছিল, তা  পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বাবুই স্বীকার করেছিলেন। যার জন্য তিনি সেক্টর ফাইভ গড়তে উদ্যোগ নেন। কিন্ত সেক্টর ফাইভ বিন্দুতে সিন্ধু। হায়দ্রাবাদ বা ব্যাঙ্গালোরের একটা বিল্ডিং এ ওর থেকে অনেক বেশী ভ্যালুয়েবল কোম্পানী আছে।  ২০১১-১২ সালে সিপিএম যখন ছেড়ে গেছে অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল, কোলকাতারতে পিসিবি তৈরীর সব কারখানাগুলো ( যা ইলেকট্রনিক শিল্পের খুব বেসিক) হায়দ্রাবাদে চলে গেছে। সিটুর ভয়ে। এগুলো বাস্তব। সেইসব মালিকদের অনেকেই কোলকাতায় থাকেন। আমি নিজেই কথা বলেছি। কোন মালিক শ্রমিকদের চোখ রাঙানি সহ্য করে কোলকাতাকে ভালবেসে কোলকাতায় পড়ে থাকবেন না। এগুলো সাধারন জনগনের বোঝা দরকার। পুঁজি এসব পোঁচে না। মিনেসোটা, পিটসবার্গের মতন আমেরিকান শিল্পাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে শ্রমিক আন্দোলন এবং বামেদের উৎপাতে। পুঁজি আমেরিকার উন্নত শিল্পাঞ্চলগুলিকেই ছেড়ে পালিয়েছে শ্রমিক আন্দোলনের ভয়ে- সেখানে কোলকাতা ত বিশ্বমানচিত্রে একটা বিন্দুও না।

 

সিপিএম নেতৃত্বের মূল সমস্যা ভারতের সফটোয়ার ইঞ্জিনায়ারদের মতন। এরা জানে না, এরা কি জানে না। ফলে এরা যে ভুল করছে, সেটা বোঝার অভিজ্ঞতা বা প্রজ্ঞা এদের নেই। কারন সিপিমের নেতৃত্ব চলে সোকোল্ড সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষিতদের নিয়ে। যাদের ব্যবসা বা কোম্পানী চালানোর অভিজ্ঞতা নেই।  ফলে কম্পুউটার তুলে দেওয়ার আন্দোলনই বলুন, আর ক্লাস সিক্স থেকে ইংরেজি শেখানোর প্রকল্পই বলুন-সবই কিন্ত এই উচ্চশিক্ষিত সিপিএম নেতৃত্বের মাথা থেকেই এসেছে! এই জন্যেই আগেরদিন লিখেছিলাম একজন চালচোর জোচ্চর রাজনীতিবিদ যা ক্ষতি করতে পারে - অশোকমিত্রর মতন একজন উচ্চশিক্ষিত  বাম মৌলবাদি তার থেকে বেশী ক্ষতি করতে পারে। সেই জন্যে দেখুন ফেসবুকে সিপিএম শুধু তাদের পার্থীরা কত উচ্চশিক্ষিত, সেটাই প্রচার করছে!! কিন্ত বাস্তব হচ্ছে এই সব উচ্চশিক্ষিত সিপিএম নেতাদের অশিক্ষিত সিদ্ধান্তেই পশ্চিম বঙ্গ গাড্ডায় গেছে। কারন এই সব উচ্চশিক্ষিত সিপিএম নেতারা আসলেই অশিক্ষিতের ও অশিক্ষিত। নইলে সিপিএমের মতন বাতিল আদর্শের পথে জনগনের সেবা করতে যায় না। যারা নিজেদের ভাল বোঝার ক্ষমতাটুকুই নেই-তারা অন্যের , রাজ্যের কি ভাল করবে ?

 

প্রশ্ন হচ্ছে মমতা ব্যানার্জি গত দশ বছরে কি করেছেন?  না উনিও এস ই জেডের গোঁ ধরে অনেককিছুই পলিসিগত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে রাজ্যের এখনো ক্ষতি হচ্ছে। কিন্ত উনি দুটি গুরুত্বপূর্ন কাজ করেছেন। যার জন্য প্রায় নেগেটিভ দশা থেকে একটু একটু করে হলেও পশ্চিম বঙ্গে আধুনিক শিল্প আস্তে আস্তে বাড়ছে। উনার প্রথম ভাল সিদ্ধান্ত, শ্রমিক ইউনিয়ান ভেঙে দেওয়া। কোলকাতার কোন শিল্পই এখন শ্রমিক ইউনিয়ানের সমস্যা ফেস করে না। যার জন্য হাওড়া, উলুবেড়িয়ার শিল্পগুলোতে সামান্য হলেও রক্ত সঞ্চার হয়েছে। তারা আস্তে আস্তে প্রোডাকশন বাড়ানোর সাহস পেয়েছেন।  আমার কথাকে বিশ্বাস করবেন না। প্লিজ নিজে গিয়ে দেখে আসুন। আমি এসব শিল্পাঞ্চলে ঘুরেছি।  এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, অবস্থা দশ বছর আগের থেকে অনেক বেশী ভাল। তারা আস্তে আস্তে এক্সপ্যানশন করেছেন। সেক্টর ফাইভে অনেক প্রবাসী বাঙালীরা ছোট ছোট কোম্পানী খোলার সাহস পেয়েছেন। কারন রাজ্যের পরিবেশ যথেষ্টই শিল্প বান্ধব। শুধু ট্যালেন্টের অভাব। লিডার পাওয়া যায় না। বাঙ্গালোর পুনে থেকে কোন বাঙালী ট্যালেন্ট কোলকাতায় ফিরতে চায় না। এটাই যে বিশেষ সমস্যা এখনো কোলকাতায়।

 

 বুদ্ধবাবু শিল্প আনতেন, এইসব অনেক শুনছি ফেসবুকে। কিন্ত কেউ লিখছে না- আসলে অনেক ছোট ছোট শিল্প মালিক হায়দ্রাবাদ গুজরাতে মহারাষ্ট্রে পালিয়ে গেছিল বাম জমানায়। কারন বাম আমলে একজন ক্লাস এইট পাশ টেকনিশিয়ান মালিককে ধমক দিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত। মালিকরা এই বিশ্বায়নের যুগে তাহলে কেন কোলকাতায় পড়ে থাকবে ? সবাই ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বা ইনভেস্টরদের পয়সাতেই ব্যবসা চালায়। টাকা ফেরত না দিতে পারলে, কোন ব্যবসা চলে না। বুদ্ধর শিল্পায়ন ছিল শ্রেফ গিমিক। আসলে ছোট ছোট শিল্প, ইউনিয়ানের চাপে তার অনেক আগেই অন্যরাজ্যে চলে গেছে। আর আজ এই বামেরাই নাকি যুবকদের চাকরি কথা শুধু ভাবছে।  কশাইদের ছাগলপ্রেম দেখে হাঁসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না।

 

দ্বিতীয় যে জিনিসটা দিদির শিল্পের পক্ষে করেছেন। সেটা হচ্ছে বন্ধ বন্ধ খেলা বন্ধ করা। বাম জমানায় পশ্চিম বঙ্গে গড়ে ১৭-২৫ টা করে বছরে বন্ধ হয়েছে। এই বন্ধের সিদ্ধান্ত কারা নিত? ওই সিপিএমের উচ্চশিক্ষিত নেতারা। কারা ভুগত? সাধারন শ্রমিকরা-যারা কারখানায় না গেলে মজুরী পায় না। হকাররা, যাদের একদিনের ইনকাম লস ছাড়া ওইসব বন্ধ আর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করে নি। ফলে পশ্চিম বঙ্গের সাধারন জনগন এখন এইসব উচ্চশিক্ষিত বামপার্থীদের ভোট দিচ্ছে না। দেওয়া উচিত না। কারন এই সব উচ্চশিক্ষিত বামপার্থী, বামনেতারা এতটাই নির্বোধ, এরা রাজ্যবাসীর ক্ষতি করা ছাড়া, অন্যকিছু করার ক্ষমতা রাখে না। সেটা সাধারন জনগন ভালোই বুঝে গেছে।  

 

বিজেপি আসলে কি ভাল কিছু হবে? আমি জানি  না। কারন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বর ফোকাস মূলত সাম্প্রদায়িক মেরুকরনে।   তারা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেবেন-এমন আশা করা কি ঠিক? সেটা সময় বলবে। বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্য যে পশ্চিম বঙ্গ থেকে অনেক ভাল কিছু করছে এমনটা ডেটা বলে না। দক্ষিনের রাজ্যগুলো পশ্চিম বঙ্গের থেকে অনেক ভাল করছে। কারন যেখানকার রাজ্যবাসী এবং নেতারা অনেক পেশী পেশাদার। বেসিক্যালি বাংলার নেতারা সিপিএম থেকে তৃনমূল সেখান থেকে বিজেপিতে গেছেন। নেতার কোয়ালিটি এক থাকলে, বেশী ভাল কিছু হবে এমন ভাবার মধ্যে  অন্ধ আশা আছে, যুক্তি নেই।

তবে বিজেপি বামেদের মতন ব্যবসার জন্য ক্ষতিকারক হবে না , এটা বলা যায়। কিন্ত তৃনমূলের চেয়ে ভাল কিছু করবেন কি না,  সেটা বলার মতন ডেটা আমার হাতে নেই। শুধু এটা বলতে পারি, বিজেপি তখনই তৃনমূলের চেয়ে রাজ্যে ভাল কিছু করতে পারে, যদি সেই ক্যালিবারের নেতা তাদের হাতে থাকে।  সেই উচ্চতার নেতা রাজ্য বিজেপিতে এখনো দেখছি না। সুতরাং এখনই আশার কোন কারন দেখছি না।


No comments: