Saturday, March 21, 2020

করোনাতে আশার আলো--

করোনাসন্ত্রাসের সবটাই কি নেগেটিভ? আমি কিন্ত পজিটিভ সাইডই বেশী দেখছি।
১) প্রথমে রাষ্ট্রের হেলথকেয়ার সিস্টেম দেখুন। ভারত এবং আমেরিকা দুটো দেশেই এটি ডিফাংক্ট সিস্টেম। আমেরিকাতে উচ্চকোয়ালিটির চিকিৎসা আছে-কিন্ত দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফার্মা আর ইন্সিওরেন্স কোম্পানীগুলো রাজনীতিবিদদের পকেটে ঢুকিয়ে দিনে ডাকাতি করছে। ডাকাতরাও এত নির্লজ্জ হয় না।
ভারতে সমস্যা অন্য। সরকার চিকিৎসা খাতে খরচই করতে চায় না। বাজেটের ১-২% স্বাস্থ্যখাতে আসে। যেখানে আমেরিকাতে ওটা ২০%। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান বা অন্যান্যদেশ যেখানে সরকারই সমস্ত চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিচ্ছে, সেখানে ৩০%+।
কোভিড-১৯ কে এইজন্য ধন্যবাদ যে এই প্রথম আমাদের প্রজন্ম বুঝছে চিকিৎসা একটা কমিউনিটি সার্ভিস। আমার টাকা আছে, চিকিৎসার সামর্থ্য আছে, তা দিয়ে আমি সুস্থ থাকতে পারি না। আমার পাশের গরীবলোকটির ও নিরোগ থাকার দরকার। আমার নিজের স্বার্থেই। কারন তা না হলে-তার সংক্রামক রোগ আমার মধ্যেও আসবে।
অর্থাৎ চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য একটা মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের টাকা ফার্মা মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের মালিকদের পকেটে না গিয়ে, জনগনের সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় হওয়া উচিত।
প্রাইভেট হাসপাতাল, প্রাইভেট ইন্সিওরেন্স থাকাই উচিত না। কারন সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দর্শনটা হচ্ছে ফেল কড়ি নেও চিকিৎসা। এই মডেলে গরীবদের চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব না। আর তারা যদি চিকিৎসা না পায়, কোভিডের মতন মহামারীর সামনে ধনীরাও সুস্থ থাকবে না।
আমেরিকাতে করোনাক্রান্ত রুগীর সংখ্যা ১০০,০০০ ছাড়ালে সিস্টেম পুরো ধ্বসে যাবে। ভারতের অবস্থা আরো বাজে হবে।
(২) বহুদিন বাদে দেখছি লোকে রাম-রাহিমের ঝগড়া, মুসলমানদের প্রতি ঘৃনা থেকে উৎরে, কিভাবে করোনার হাত থেকে বাঁচা যায়, তাই নিয়ে একটু হলেও প্রাথমিক বিজ্ঞান শিক্ষাটুকু নিচ্ছে। যারা গোমূত্রকে মহৌষধি মনে করে, তাদের বোধবুদ্ধি যে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি ডিঙোয় নি-সেটা আমি আপনি বুঝি। তারা কিন্ত তাদের অন্ধত্বে বিভোর। কে হরি ভজনা করবে আর কে আল্লাকে আজান দেবে, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। সমস্যা এখানেই ভারতের শাসনভার এদের হাতে। আর ধর্মটাও ভাইরাসের মতন সংক্রামক রোগ। কাউকে হিন্দুত্বের ভাইরাসে ধরলে, অন্যপার্টিকে ইসলামিক ভাইরাসে ধরবেই। উল্টোটাও সত্য। একটা "আসল" সংক্রামক ভাইরাসের সামনে আলতো করে হলেও ধর্মের ভাইরাসের সংক্রমন একটু কমেছে। নিজেকে এবং ফ্যামিলিকে বাঁচাতে, বিজ্ঞান প্রযুক্তির স্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া এদের উপায় নেই। লোকে যে ধর্ম চেতনা থেকে বিজ্ঞান চেতনার দিকে সামান্য হলেও এগোল, এটাই যথেষ্ট।
(৩) করোনা অর্থনৈতিক বিপর্যয় আনবে। এটা মোটেও খারাপ না। দরকার ছিল। কারন জমি বাড়ির দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে, বাতাস ধোঁয়াতে ধুয়ে, শুধু জিডিপির নাম্বার বাড়ে। দেশের উন্নতির থেকে অবনতি হয় বেশী। এখন লোকে অন্যভাবে ভাববে। চিকিৎসা স্বাস্থ্যে, জনস্বাস্থ্যে উন্নতি হয় এমন স্টার্টাপের কথা ভাবতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের কথা আগে ভাববে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটের কথা ভাববে। রেগুলার এক্সারসাইজ, ঘুমের কথা ভাববে। ঠিক ঠাক খাবার কিভাবে পাওয়া যায় তার কথা ভাববে। কারন কোভিড-১৯ এর কোন চিকিৎসা নেই। ইমিউনিটি বাড়িয়ে রাখা ছাড়া আর কোন প্রতিরোধ নেই। ফলে লোকে অসুস্থ লাইফস্টাইল থেকে সুস্থ লাইফস্টাইলের দিকে যাচ্ছে। এর জিডিপি ভ্যালু অনেক অনেক বেশী।
(৪) আই টি কোম্পানীগুলো ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করেছে। আমরাও করে দিয়েছি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম এফেক্টিভ, আরো বেশী প্রোডাক্টিভ হতে পারে যদি কর্মীরা সৎ হয়। এতে কার্বন এমিশন, দূষন কমবে।
সঙ্কট সব সময় সম্ভবনার জন্ম দেয়। আমি আশাবাদি। করোনাত্তর পৃথিবী আরো ভাল সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্ম দেবে। কয়েক লাখ লোকের মৃত্যু হবে। কিন্ত মৃত্যুত নিয়তি। উন্নততর রাষ্ট্র এবং সমাজ কিন্ত নিয়তি না-সেটার জন্য এই ধাক্কাটা লাগে।

No comments: