Saturday, January 12, 2019

আমেরিকান শাট ডাউন

আমেরিকাতে এখন গর্ভনমেন্ট শাটডাউন। সরকার চালানোর জন্য বরাদ্দ টাকা পাশ না হওয়ার জন্য, সরকারই বন্ধ! সরকারি কর্মচারীদের ও কাজ মাইনা বন্ধ। তবে সরকার খুললে তারা বকেয়া মাইনা পাবেন। কিন্ত গর্ভমেন্ট কনট্রাক্টররা টাকা পাবেন না। তারাই আবার এদেশে সংখ্যাধিক। আর আমাদের এই ওয়াশিংটন ডিসি এরিয়াতে ৯০% চাকরি সরকারি নইলে সরকারি কনট্রাক্টর। বলাই বাহুল্য এই গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে, এখানে রাস্তা ঘাট রেস্টুরেন্ট সব ফাঁকা থাকে।

আমেরিকাতে আসার পরে এটা চতুর্থ শাটডাউন। এর আগে একটা তিনমাসের শাট ডাউন দেখেছি ২০১১ সালে।

এবার শাট ডাউনের হেতু ট্রাম্প ওয়াল। ট্রাম্প বলছেন মেক্সিকান বর্ডারে প্রাচীর তোলার জন্য ৬ বিলিয়ান ডলারের বাজেট কংগ্রেসকে দিতে হবে। নইলে তিনি নতুন বাজেট পাশ করবেন না। ডেমোক্রাটরা তাকে মেক্সিকান ওয়াল বানানোর পয়সা দেবে না। এই নিত্য ন্যাস্টি ঝগড়া চলছে।

স্বৈরাচার ঠেকাতে আমেরিকাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা তিনটি বিভাগে বিভক্ত- প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং সেনেট। যদ্দিন এই তিনটি একই পার্টির হাতে থাকে, শাট ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা কম ( ট্রাম্পের জমানায় তাও হয়েছে একদিনের জন্য)। কিন্ত এর একটি, বিশেষত কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট দুই হাতে গেলে, শাট ডাউন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হতে পারে।

শাটডাউন মানে কিন্ত এই না, যে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি। তাদের কাজে আসতে হবে, কিন্ত বেতন পাবেন সরকার খুললে। কিন্ত কিছু কিছু কর্মচারি যাদের বেতন খুব কম ( আমেরিকান সরকারি চাকরি, ভারতের মতন জামাই আদরের না ) , তাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। তারা ছুটি নিয়ে অন্য কাজে ইনকাম করছেন। এর মধ্যে আছে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির লোকজন। ফলে সিকিউরিটি চেকিং এ এখন লম্বা লাইন।

আমাদের রাজধানী এরিয়াতে অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। রেস্টুরেন্ট গুলো মাছি তাড়াচ্ছে। মলে, দোকানে লোক নেই। রাজধানী এরিয়াতে অধিকাংশ লোকই সরকারি চাকরি নির্ভরশীল।

ট্রাম্প বিজনেসম্যান হওয়ার জন্য আর্ট অব নেজোশিয়েন ভাল করেই জানেন। ট্রাম্প সাপোর্টারদের একটা বড় অংশ সরকার সর্বদা বন্ধ রাখতে পারলেই খুশি। ফলে এই বন্ধে ট্রাম্পের পোয়াবারো। চাপ ডেমোক্রাটদের ওপর। তারা ট্রাম্পের দাবি না মেনে বেশী দিন টিকবে না-কারন ডেমোক্রাটদের বেস গরীবরা। যাদের অনেকেই সরকারি সাহায্যে খাবার পায়। সরকারন বন্ধে সেসব এখন বন্ধ। সরকারি চিকিৎসা সাহায্য ও বন্ধ। বয়স্ক লোকেদের যা অপরিহার্য্য।

আমেরিকার জন্মই হয়েছিল বৃটিশ ট্যাক্সের বিরোধিতা করে। এই জন্যে এই দেশটা বড় গর্ভমেন্ট, ট্যাক্স এসব পছন্দ করে না। গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে খুশি হওয়ার লোক এদেশে অনেক।

আমেরিকান রাজনীতি পুরো ডামাডোলে। এর মূল কারন, গত দশ বছরে ডেমোক্রাট পার্টি চলে গেছে উগ্র বামেদের দখলে, আর রিপাবলিকান পার্টি গেছে উগ্র দক্ষিনপ ন্থীদের হাতে। এরা সবাই মাই ওয়ে অর হাইওয়ে, নীতিতে বিশ্বাসী। কোন আপসে এরা রাজী না।
আগে বাইপার্টিসান এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ দুই দলই অধিকাংশ নীতির ক্ষেত্রে এক হত। এখন নতুনরা সংঘর্ষে বিশ্বাসী বেশী। সেটাই নাকি পলিটিক্যাল রাডিক্যালিজম।

আমেরিকাতে মধ্যপন্থী কোন নতুন দলের উত্থান না হলে , আর দুদিন বাদে এদেশে বছরের অধিকাংশ সময় সরকার বন্ধ থাকবে।

No comments: